#তুমি এলে তাই ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩৬
.
স্পন্দন আর গুঞ্জনকে এতো কাছাকাছি দেখে আহিলের সহ্য হচ্ছে না। স্পন্দন আর গুঞ্জন একে ওপরকে এখনো জরিয়ে ধরে আছে। আহিল গঞ্জনের সাথে কথা বলতে, কিন্তু রুমে গিয়ে গুঞ্জনকে না পেয়ে ভেবেছিল ছাদে আছে। কিন্তু ছাদে এসে যেটা দেখলো তাতে ওর মাথা গরম হয়ে গেলো। আহিলের এই দৃশ্য সহ্য হলো না। স্পন্দন গুঞ্জনকে ছেড়ে এক হাত ওর কোমরে রেখে ওপর হাত দিয়ে কপালের চুলগুলো কানে গুজে দিতেই আহিল আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা রাগে গজগজ করতে করতে ওখান চলে গেলো। স্পন্দন গুঞ্জনকে আরও কাছে টেনে নিয়ে বলল,
— ” আজ আর ঘুমাতে যেতে হবেনা। দুজন সারারাত ছাদেই কাটিয়ে দেই।”
গুঞ্জন ভ্রু কুচকে বলল,
— ” পাগল তুমি? কেউ দেখে ফেললে কী ভাববে?”
গুঞ্জন দুষ্টু এক হাসি দিয়ে বলল,
— ” যা খুশি ভাবুক। তুমি আবার কবে থেকে লোকের বলা কথা কানে নিতে শুরু করলে?”
গুঞ্জন চোখ নামিয়ে বলল,
— ” আসলে..”
স্পন্দন মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
— ” আসলে তুমি আমার কাছ থেকে পালাতে চাইছো?”
গুঞ্জন ভ্রু কুচকে বলল,
— ” আমি কেনো পালাতে যাবো? ”
স্পন্দন হেসে বলল,
— ” তাহলে থাকো?”
গুঞ্জন স্পন্দনের গলা জরিয়ে ধরে বলল,
— ” কী করবো এখানে সারারাত?”
— ” সেটা আমার ওপরেই ছেড়ে দাও।”
বলে গুঞ্জনকে নিয়ে ছাদের পাশে পা ঝুলিয়ে বসে এক হাতে জরিয়ে ধরল।
ওদিকে আহিল নিজের রুমে গিয়ে রুমের সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। সব তছনছ করে দিচ্ছে। ছোটখাটো তান্ডব চালিয়ে খাটে ধপ করে বসে পরে বলল,
— ” এটা ঠিক করোনি তুমি গুঞ্জন। একদম ঠিক করোনি। আমায় রিজেক্ট করে তুমি তোমার ঐ স্পন্দনের সাথে। না না না। তুমি আমার আর তোমাকে আমার হোতেই হবে। এট এনি কষ্ট।”
এদিকে গুঞ্জন স্পন্দনের কাধে মাথা রেখে বসে আছে, আর স্পন্দন ওকে এক হাতে জরিয়ে রেখেছে। বেশ অনেক্ষণ ধরেই দুজনে চুপচাপ আছে। নিরবতা ভেঙ্গে স্পন্দন বলল,
— ” খুব মিস করো বাবা মা কে?”
গুঞ্জন একটু চুপ থেকে তারপর বলল,
— ” মিস করার কী আছে? ওনারা তো আমার সাথে আমার বাড়িতেই থাকেন।”
স্পন্দন অপর হাতে গুঞ্জনের মুখের চুলগুলো সরাতে সরাতে বলল,
— ” গুঞ্জন আমরা কিন্তু একে ওপরকে কথা দিয়েছিলাম যে কখনো কিছু লুকোবো না।”
গুঞ্জন এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্পন্দনের দিকে তাকালো তারপর বলল,
— ” খুব মিস করি। আব্বুর খাইয়ে দেওয়া, আম্মুকে জরিয়ে ধরে ঘুমানো। সব খুব মিস করি খুব। কেনো ওরা আমাকে বোঝেনা বলোতো? কেনো?”
স্পন্দন কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলল,
— ” হয়তো কেউ ওদের তোমাকে বুঝতেই দেয়নি।”
গুঞ্জন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
— “মানে?”
স্পন্দন একটু হেসে বলল,
— ” কিছুনা। আচ্ছা যদি সব আবার আগের মতো হয়ে যায় তাহলে?”
গুঞ্জন একটু মলিন হেসে বলল
— ” সেটা আর হওয়ার নয়। আমার ভাগ্যে বাবা মার ভালোবাসা নেই।”
স্পন্দন কিছু বললো না কিন্তু গুঞ্জনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ভাবল। তোমাকে আর কোনো কষ্ট পেতে দেবোনা কথা দিয়েছি আমি । কিন্তু যেই চরম কষ্টটা ছোটবেলা থেকে মনে পুষে রেখেছো সেটাকে মুছে না দেওয়া অবধি শান্তি পাবোনা আমি। আর না আমার দেওয়া কথার মান থাকবে। আর স্পনদন চৌধুরী নিজের কথার খেলাপ করেনা।
_____________________
রেহান আর মেঘলার রিসিপশনের জন্যে পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে। সমস্ত অতিথিরা চলে এসছে। মেঘলার বাড়ি থেকেও সবাই চলে এসছে। গুঞ্জন আজ আবার শাড়ি পরেছে। শাড়িটা মেরুন রং এর। যেই স্পন্দন মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে শপিং করা পছন্দ করে না সেই স্পন্দন পুরা দুই ঘন্টা মার্কেটে খুজে গুঞ্জনের জন্যে এই শাড়িটা বেছে নিয়েছে। স্পন্দনও আজ মেরুন রং এর পাঞ্জাবী পরেছে। ফর্সা গায়ে রংটা ফুটে উঠেছে। তবে গুঞ্জনকে দেখে স্পন্দনের চোখ গুঞ্জনের ওপরেই লক হয়ে গেছে। কাজের চেয়ে বেশি গুঞ্জনের দিকেই মন ওর। বিভিন্ন কাজের বাহানায় গুঞ্জনের পেছন পেছন ঘুরছে। গুঞ্জন সেটা বুঝতে পারছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে। আর এই নিয়ে সারা তিতলি ওরা স্পন্দনের পিঞ্চ করেই যাচ্ছে। তবে এতে স্পন্দন বা গুঞ্জনের বিশেষ কিছু যাচ্ছে আসছে না ওরা ওদের কাজ করে যাচ্ছে। আর অথিতিদের মধ্যে যারাই গুঞ্জন সম্পর্কে জানতে চেয়েছে তাদেরকে মেঘলার ছোট বোন হিসেবে পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে স্পন্দনের হবু বউ হিসেবেও পরিচয় দেওয়া হচ্ছে। তবে এ সবকিছু দেখে একজন জ্বলে পুরে যাচ্ছে সে হলো আহিল। ওর কিছুতেই এসব সহ্য করতে পারছেনা। ও শুধু গুঞ্জনকে একা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
রিসিপসনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর এবার রেহান আর মেঘলার মেঘলাদের বাড়িতে যাওয়ার পালা ওনাদের সাথে তো গুঞ্জন নিজের ব্যাগ নিতে রুমে গিয়ে ব্যাগ হাতে নিতেই দরজা বন্ধ হওয়ার আলাপ পেয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখে আহিল। আহিলকে দেখেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। কালকে এতো করে বোঝানোর পরেও আবার এসছে। গুঞ্জন বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” আপনি এখানে কেনো এসছেন? আপনাকে কালকে এতো করে বোঝালাম যে দূরে থাকুন আমার থেকে। বাট আপনি..”
আহিল একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ সেতো বলবেই। এখনতো স্পন্দনকে পেয়ে গেছো তাইনা?”
গুঞ্জন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— ” এটা আমার ব্যাপার। আপনাকে জবাবদিহি করবোনা আমি।”
বলে চলে যেতে নিলেই আহিল আবারও গুঞ্জনকে ধরে কাছে এনে বলল,
— ” অনেক দেখেছি তোমার দেমাগ। স্পন্দনকে ভালোবাসো? দুবছর ধরে তোমাকে ভালোবেসে যাচ্ছি সেটার কী হবে? তোমার কী মনে হয় আমি তোমাকে অন্যের হতে দেবো? কখনো না।”
বলে গুঞ্জনকে কাছে টেনে নিতে গেলে গুঞ্জনের রাগ এবার চরম সীমায় পৌছে গেলো। গুঞ্জন হাটু দিয়ে আহিলের পেটে আঘাত করলো। আহির চেঁচিয়ে পেট ধরে বসে পরল। গুঞ্জন গিয়ে ওর কলার ধরে টেনে তুলে বলে জোরে একটা থাপ্পড় মারলো ওর গালে। তারপর দুই কলার ধরে বলল,
— ” কী ভেবেছিল? এটা দুই বছর আগের সেই গুঞ্জন? যাকে তুই বারবার হিউমিলেট করবি আর সে সব চুপচাপ সহ্য করে যাবে? ফুঁপিয়ে কাঁদবে আর সেই কান্না শোনার জন্যে কেউ থাকবেনা? কাল তোকে ছেড়েছিলাম কারণ বিয়ে বাড়িতে কোনো গন্ডগোল চাইনি আমি। তাই তুই ভেবেছিলি যে আজও তোকে আমি ছেড়ে দেবো? সিরিয়াসলি? ”
বলে গুঞ্জন আহিলকে আরো কিছুক্ষণ মারলো আহিলতো অবাক। ও গুঞ্জনের এই রুপটা ভুলেও আশা করেনি। এদিকে স্পন্দন গুঞ্জনের আসতে দেরী হচ্ছে বলে ওকে ডাকতে এসে ঐ রুমে ওমন গন্ডগোলের আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি এসে দরজাটা ধাক্কাতে লাগলো। দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে গুঞ্জন আহিলকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলতে যেতে নিলেই আহিল একটা শোপিচ দিয়ে গুঞ্জনের মাথায় জোরে আঘাত করলো। মৃদু চিৎকার করে মাথা ধরে বসে পরলো গুঞ্জন।
#চলবে..