#তুমি এলে তাই ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩৫
.
লোকটা এখনো গুঞ্জনের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। গুঞ্জন কীরকম রিঅ্যাকক্ট করবে সেটাই বুঝতে পারছেনা। ওর সামনে আহিল দাঁড়িয়ে আছে। ওর জীবণের সব সমস্যার মূল কারণ এই লোকটা। ওর বাবা-মা ওকে গুরুত্ব না দেওয়ার মূল কারণ ও। কোনো দোষ না করেও নিজের বাবা-মায়ের কাছে দোষী ও শুধু এই লোকটার জন্যে। গুঞ্জন চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
— ” আপনি? আপনি এখানে কী করছেন?”
আহিল একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
— ” ‘আপনি’? ‘আপনি’ হয়ে গেলাম এখন? হ্যাঁ? আগেতো ‘তুমি’ ‘তুমি’করেই বলতে। মাত্র দুই বছরে এতো পর হয়ে গেলাম?”
গুঞ্জন হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— ” আপনাকে তুমি যেই সম্পর্কের ভিত্তিতে ডাকতাম সেই সম্পর্কের মর্জাদা আপনি রাখতে পারেন নি।”
আহিল এবার নিজেও রেগে গুঞ্জনের সাইড দিয়ে বারি মেরে দেয়ালে হাত রেখে বলল,
— ” কী সমস্যা কী তোমার আমাকে নিয়ে? ভালোবেসেছি তোমাকে আমি। হ্যাঁ প্রথমে আমার মনে হয়েছিল আমি মেঘলাকে ভালোবাসি কিন্তু তোমাকে দেখার পর তোমার সাথে চলার পর এটা বুঝতে পেরছি মেঘলা শুধুই আমার মোহ ছিলো কিন্তু ভালোবেসেছি তোমাকেই। তাইতো এই দুই বছরেও ভুলতে পারিনি। ভুলটা কী করেছি হ্যাঁ?”
গুঞ্জন অবাক এবং ঘৃণার দৃষ্টিতে আহিলের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” কতোটা নিচু মনের মানুষ হলে এরকম চিন্তাধারা থাকতে পারে। কতো সহজে বুক ফুলিয়ে কথাগুলো বলে ফেললেন তাইনা? আপনার থেকে এরচেয়ে বেশি কিছু আশাও করা যায়না। যাই হোক, কেনো এসেছেন এখানে?”
আহিল গুঞ্জনের গালে হাত ছোয়াতে নিলেই ঠেলে হাত সরিয়ে বলল,
— ” ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু।”
আহিল একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” ওকে ফাইন। আচ্ছা কথাটা শোনো।”
গুঞ্জন একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” দেখুন আর কিছু শোনার নেই আমার। আমার দি অনেক কষ্টে আপনাকে ভুলে নতুন করে জীবণটা শুরু করছে। এবার যদি আপনি আবার কোনো ঝামেলা করেন আমি কিন্তু আপনাকে ছাড়বোনা।”
আহিল একটু হেসে বলল,
— ” আরে মেঘলার কোনো ক্ষতি আমি কেনো চাইবো? আমিতো শুধু তোমাকে চাই। আচ্ছা দেখো মেঘলার জীবণে তো এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। ও রেহানকে নিয়ে ভালো আছে এখন।এখন তোমার আমাকে মেনে নিতে তো সমস্যা নেই তাইনা? ”
গুঞ্জন অবাক দৃষ্টিতে আহিলের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” মিনিমাম লজ্জা নেই আপনার? এসব কথা কীকরে বলছেন? ভাবলেন কীকরে এতো কিছুর পরেও আমি আপনার কাছে যাবো? আপনাকে মেনে নেবো? আপনি যেটা করেছেন তারপর আপনার মুখ দেখতেও আমার ঘৃণা করে।”
বলে চলে যেতে নিলেই আহিল ওর হাত ধরে নিজের কাছে এনে বলল,
— ” এতো দেমাগ কীসের তোমার হ্যাঁ? কোন দিক দিয়ে কম আমি? নাকি তোমার পেছনে পরে আছি বলে ভাব নিচ্ছো? কোনটা?”
গুঞ্জন এবার রাগে কটমট করে বলল,
— ” আপনি কিন্তু এই গুঞ্জনকে চেনেন না। অন্যসময় হলে এই হাতটা আমি আস্ত রাখতাম না। আমি চাইনা বিয়ে বাড়িতে কোনো গন্ডগল করতে সো প্লিজ আমার হাত ছাড়ুন।”
গুঞ্জন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আহিল হুট করেই ওকে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” প্লিজ আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো। আমি সত্যিই খুব ভালোবাসি তোমাকে। তোমাকে ছেড়ে থাকা সম্ভব না আমার পক্ষে।”
গুঞ্জনের ধৈর্যের বাধ এবার ভেঙ্গে গেলো। ও এবার আহিলকে কিছু করতে যাবে তার আগেই কেউ টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে নাক বরাবর ঘুষি মারলো আহিলকে। আহিল নিচে পরে গেলো। গুঞ্জন তাকিয়ে দেখলো স্পন্দন। আহিলের নাক দিয়ে রক্ত বেড় হয়ে গেছে। স্পন্দন রেগে আহিলের কলার ধরে দাঁড় করিয়ে বলল,
— ” তোর সাহস কীকরে হয় ওকে ছোঁয়ার? হ্যাঁ?”
আহিল নাক মুছতে মুছতে বলল,
— ” দেখ এটা ওর আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তাই আমাদের মধ্যে ঢুকিস না।”
স্পন্দন এই কথায় আরো রেগে গিয়ে বলল,
— ” তোকে তো..”
বলে ওকে মারতে শুরু করলো। গুঞ্জন এসে স্পন্দনের হাত ধরে আটকে দিয়ে বলল,
— ” স্পন্দন প্লিজ। ছেড়ে দাও ওকে। প্লিজ।”
স্পন্দন গুঞ্জনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আবারও মারতে নিলে গুঞ্জন ওর সামনে গিয়ে ওকে ধরে বলল,
— ” প্লিজ শান্ত হও। ছেড়ে দাও ওকে।”
স্পন্দন রাগী দৃষ্টিতে তাকালো গুঞ্জনের দিকে। গুঞ্জন চোখ নামিয়ে নিলো। তারপর আহিলের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” আমার প্রথমেই ডাউট ছিলো যে তুই সেই আহিল। বাট সিউর ছিলাম না। নেক্সট টাইম জেনো ওর আশেপাশেও তোকে না দেখি। বিয়ের প্রোগ্রামে এসছিস। সেটাতে কনসেন্ট্রেট কর অন্যদিকে না। নাউ গেট লস্ট।”
আহিল হাত দিয়ে নিজের নাকের রক্তটা মুছে হিংস্র দৃষ্টিতে একবার স্পন্দন আর গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। ও চলে যেতেই স্পন্দন রাগী চোখে গুঞ্জনের দিকে তাকালো। গুঞ্জন ইতস্তত করে বলল,
— ” আসলে..”
স্পন্দন গুঞ্জনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। টানতে টানতে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঠেলে দিয়ে দরজা লক করে ওর দিকে তাকালো। গুঞ্জনের এবার একটু ভয় করছে, স্পন্দন ভুল কিছু ভাবেনি তো? স্পন্দন ওকে ধরে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে বলল,
— ” খুব দরদ উতলে উঠছিলো ওর জন্যে তাইনা? খুব মায়া লাগছিলো বুঝি?”
গুঞ্জন একটু অবাক তাকিয়ে আছে স্পন্দনের দিকে। স্পন্দন আহিলের সাথে ওকে এভাবে ভুল কিছু ভাবছেনা তো? বাকি সবার মতো স্পন্দনও ওকে ভুল ভাববে না ত? সত্যিই যদি স্পন্দন ওকে ভুল বুঝে থাকে তাহলে সত্যিই অনেক দূরে চলে যাবে, সব ছেড়ে চলে যাবে, কোনদিন ফিরবে না। গুঞ্জন কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল,
— ” কী বলছো তুমি এসব?”
স্পন্দন একটু চেঁচিয়ে বলল,
— ” একদম ঠিক বলেছি। সাহস কীকরে হয় ওর তোমাকে ছোঁয়ার? আর তুমি ওকে ছেড়ে দিতে বললে? এতো মায়া?”
গুঞ্জন একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে বলল,
— ” স্পন্দন আমি..”
কিন্তু গুঞ্জনকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে স্পন্দন ধমক দিয়ে বলল,
— ” খবরদার নিজেকে আমার সামনে এক্সপ্লেইন করতে আসবেনা। তুমি কী আর কেমন আমি খুব ভালোকরে জানি। তাই এটা চিন্তাও করোনা যে আমি তোমাকে ভুল বুঝবো।”
গুঞ্জন এবার একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। তারপর স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল,
— ” তাহলে এরকম কেনো করছো?”
স্পন্দন গুঞ্জনের টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
— ” ওই আহিলকে কেনো মারতে দিলেনা? কেনো? ও তোমাকে ছুয়েছে, তোমার সাথে মিসবিহেভ করেছে। জাস্ট তোমার জন্যে ওকে আমার ছাড়তে হয়েছে, নইলে ওকেতো আজ আমি..”
স্পন্দন রাগে পুরো তেতে আছে, চোখ নাক সব লাল হয়ে আছে। ওকে শান্ত করার কোনো উপায় না পেয়ে গুঞ্জন শক্ত করে জরিয়ে ধরল স্পন্দনকে। স্পন্দন ছাড়াতে চাইলে গুঞ্জন আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” প্লিজ একটু শান্ত হও। আমি জানি তোমার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। বিশ্বাস করো আমারও হয়েছিলো। ইচ্ছে করছিলো হকিস্টিকের বারিতে ওর মাথা ফাটিয়ে দেই। কিন্তু ভেবে দেখো মেঘুদি আর জিজুর বিয়ে আজকে। সবাই কতো আনন্দ মজা করছে। এখন কোনো ঝামেলা হলে সবার আনন্দ মাটি হয়ে যাবে, মুড অফ হয়ে যাবে সবার। অনুষ্ঠানটা শেষ হতে দাও এরপরেও যদি ও কিছু করে তো তুমি যা খুশি তাই করো। বাট প্লিজ এখন না।”
স্পন্দন গুঞ্জনের কথাটা একটু মন দিয়ে ভাবলো। সত্যিই এখন এই বিয়ে বাড়িতে ঝামেলা করাটা ঠিক হবেনা। ওও গুঞ্জনকে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” আই এম সরি।”
গুঞ্জন কিছু বললোনা শুধু স্পন্দনের বুকে মুখ গুজে রইলো। স্পন্দন গুঞ্জনের চুলে আঙ্গুল দিয়ে নাড়তে নাড়তে বলল,
— ” রাগ করেছো?”
গুঞ্জন স্পন্দনের বুকে মুখ গুজে রেখেই না বোধক মাথা নাড়ল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
— ” আচ্ছা তুমি বললে ও নাকি ইনভেটেশনে এসছে। আমাদের বাড়ির কেউ তো ইনভাইট করবে না ওকে। তাহলে?”
স্পন্দন গুঞ্জনকে ছাড়িয়ে একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” চাচ্চুর বন্ধুর ছেলে। আমার ক্লাসমেট ছিলো।”
গুঞ্জন অবাক হয়ে তাকালো স্পন্দনের দিকে। স্পন্দন গুঞ্জনের কাধে হাত রেখে বলল,
— ” হ্যাঁ যেদিন মেঘলার মুখে ঐ ঘটনা আর আহিলের নামটা শুনলাম তখনই ডাউট হয়েছিলো। কারণ ঠিক দুবছর আগে আহিলেরও বিয়ে ঠিক হয়েছিল আর আমরা ইনভাইটেড ছিলাম। বাট বিয়ের আগের দিন রাতে বিয়েটা ক্যানসেল হয়ে গেছে। তাই দুই দুই এ চার করতে পেরেছি।”
গুঞ্জন একটু চিন্তিত হয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ কিন্তু মেঘুদি যদি ওনাকে দেখে কী হবে? দি এর তো মুডটাই অফ হয়ে যাবে।”
স্পন্দন মুচকি হেসে বলল,
— ” চিন্তা করোনা। আমি কথা বলে নেবো মেঘলার সাথে।”
গুঞ্জন নিচু কন্ঠে বলল,
— ” হুমম।”
স্পন্দন গুঞ্জনের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
— ” আজ সারাদিন কাছে আসতে পারিনি তোমার। বাই দা ওয়ে। লুকিং সো প্রিটি।”
গুঞ্জন মুখে ভাব নেওয়ার একটা এক্সপ্রেশন এনে বলল,
— ” থ্যাংক ইউ। বাট জানা ছিলো আমার।”
স্পন্দন ভ্রু কুচকে বলল,
— ” আমাকে কেমন লাগছে বললে না তো?”
গুঞ্জন মুখ কুচকে স্পন্দনের পা থেকে মাথা অবধি স্কান করে বলল,
— ” তোমাকে? তোমাকে আর কেমন লাগবে? এস ইউসিয়াল, যা ইচ্ছে টাইপ। তোমার ভাগ্য ভালো যে আমার মতো একটা সুন্দরী মেয়ে তোমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে। নইলে হাহ্”
বলেই ঠোঁট চেপে একটু হাসলো গুঞ্জন। স্পন্দন চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” তাই না?”
গুঞ্জন একটু সিরিয়াস হওয়ার ভান করে বলল,
— ” হ্যাঁ তাইতো।”
স্পন্দন এবার ওর পাঞ্জাবীর হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল,
— ” আচ্ছা? দেখাচ্ছি তোমাকে।”
বলে ধরতে গেলেই গুঞ্জন দৌড়ে পালিয়ে গেলো। স্পন্দনও ওর পেছন পেছন ছুটলো। কিন্তু গুঞ্জন ও সবার মাঝে চলে গেলো তাই স্পন্দন আর কিছু করতে পারলো না শুধু চোখের ইশারায় বোঝালো যে পরে দেখে নেবে। গুঞ্জনও একটা মুখ ভেংচি দিলো।
___________________
এদিকে দুই সকলের পরিচয় হওয়ার পালা শুরু হবে। স্পন্দন চায়না যে মেঘলা হঠাৎ আহিলকে দেখে মানসিক ধাক্কা পাক। তাই সকলের পরিচয়পর্ব শুরু করার আগেই স্পন্দন রেহান আর মেঘলার কাছে গিয়ে বলল,
— ” শোন একটু কথা আছে তোদের সাথে।”
ওরা দুজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। রেহান বলল,
— ” কী হলো কিছু বলবি?”
স্পন্দন এবার ওদের সবটা খুলে বলল। সব শুনে রেহান খুব একটা অবাক হয়নি কারণ ওও আগে থেকে সবটা গেইস করেছিলো। কিন্তু মেঘলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রেহান মেঘলার কাধে হাত রাখলো। স্পন্দন ভ্রু কুচকে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” এখনো ঐ ছেলেটার জন্যে কষ্ট পাচ্ছো তুমি?”
মেঘলা মাথা তুলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
— ” নাহ স্যার। ঐ লোকটার জন্যে আমার মনে আর কোনো জায়গা নেই। কিন্তু ও এসে আমার বোনের জীবনটা নরক করে দেবে।”
স্পন্দন মুচকি হেসে বলল,
— ” নিশ্চিন্ত থাকো, আমি থাকতে ওর জীবণে আর কোনো কষ্টের ছোঁয়া লাগতে দেবোনা। নরক তো দূরে থাক।”
রেহানও মেঘলাকে একহাতে জোরিয়ে ধরে বলল,
— ” আগে যা হবার হয়েছে। আর আমিও তোমার সাথে খারাপ আর কিচ্ছু হতে দেবোনা। কথা দিচ্ছি।”
মেঘলা কিছু না বলে মুচকি হাসলো। স্পন্দন বলল,
— ” আর হ্যাঁ অফিসের বাইরে আমাকে স্যার বলার দরকার নেই। আমি তোমার দেবর তার ওপর ছোট বোনের হবু স্বামী। নাম ধরে ডাকতে পারো।”
মেঘলা ইতস্তত করে বলল,
— ” কিন্তু..”
স্পন্দন একটু শক্ত গলায় বলল,
— ” আমি বলছি তো?”
এবার সবার সাথে পরিচয়পর্বে রেহানের বাবার বন্ধুর ছেলে আহিল সেটা দেখে সবাই অবাক। আবির তো রেগে তেড়ে যেতে নিলেই তিতলি হাত ধরে থামিয়ে দিলো। স্পন্দনের দিকে তাকাতেই স্পন্দন চোখের ইশারায় এখন শান্ত থাকতে বলল। মেঘলার সাথে পরিচয় করানোর সময় মেঘলা এমনভাবে রিয়াক্ট করলো যেনো আগে কখনো দেখেই নি। আহিল তো চরম অবাক হলো। ও যেই মেঘলাকে চিনতো তার তো এতোক্ষণে কেঁদে কেটে একেকার করে ফেলার কথা। তখন আহিলের একপালে গুঞ্জন আরেকপাশে স্পন্দন দাঁড়ালো। গুঞ্জন দিকে তাকিয়ে হাসি মুখেই দাঁতে দাঁত চেপে আহিলকে ফিসফিসিয়ে বলল,
— ” অবাক হচ্ছেন তাইনা? হওয়ার কথা। কিন্তু সময় সব বদলে দেয়। আপনি কী ভেবেছিলেন আপনার ওই একটা প্রতারণা আমার দি এর জীবনটা তছনছ করতে পারবে? তবে ভালোই হয়েছে। আপনার করা কাজের জন্যেই মেঘু দি জিজুর মতো কাউকে পেয়েছে আর আপনার মতো একটা ঠকবাজের হাত থেকে বেঁচে গেছে।”
স্পন্দনও একই ভঙ্গিতে বলল,
— ” আর আমাদের বাড়িতেও মেঘলার মতো ভালো, ভদ্র, সুশীল একটা মেয়ে আসছে। তাই ভালো এটাই হবে আগে যা হয়েছে সেসব ভুলে গিয়ে নিজের মতো থাক আর ওদেরকেও ওদের মতো থাকতে দে।”
এটুকু বলে চলে গেলো ওরা। আর আহিল দাঁড়িয়ে চোখ মুখ শক্ত করে কিছু ভাবতে লাগলো।
_____________________
ওয়েডিং হাউজ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা সবাই স্পন্দনের বাড়ি চলে এসছে। মেঘলার সাথে গুঞ্জনও এসছে। যদিও আবদারটা স্পন্দনের ছিলো। আসার সময় মেঘলা প্রচুর কেঁদেছে এটাই স্বাভাবিক।
রেহান বাসর ঘরে ঢুকতে নিলেই গুঞ্জন আর ঐ বাড়ির ইয়াং এজ এর কিছু মেম্বার মিলে পথ আটকে ধরলো। টাকা না দিলে ছাঁড়বেনা। ওদের একটাই কথা পঁচিশ হাজার টাকা না দিলে ওরা ছাড়বেনা। তখন ওখানে স্পন্দন এলো। স্পন্দনকে দেখে রেহান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,
— ” যাক ভাই তুই এসছিস এবার বাঁচা আমাকে।”
গুঞ্জনরা তো মুখ গোমরা করে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা ধরেই নিয়েছে সব প্লান ফেইল এবার। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে স্পন্দনও যোগ দিলো সবার সাথে। রেহান তো আরও অবাক। ও অবাক হয়েই বলল,
— ” এমন মীরজাফরের মতো কাজ করলি তো? আপনা টাইপ ভি আয়েগা।”
স্পন্দন মেকি হেসে বলল,
— ” সে যখন আসবে তখন দেখিস ভাইয়া এবার টাকা দে।”
কি আর করার রেহান বেচারাকে টাকাটা দিতেই হলো। এরকম হৈচৈ এর মধ্য দিয়েই সব কিছু কম্প্লিট হলো। গুঞ্জন রুমে শুতে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই স্পন্দন এসে ওকে ঝট করে কোলে তুলে নিলো। গুঞ্জন অবাক হয়ে বলল,
— ” কী হলো কী করছো?”
স্পন্দন কোনো উত্তর না দিয়ে গুঞ্জনকে নিয়ে সোজা ছাদে নিয়ে নামালো। গুঞ্জন ভ্রু কুচকে বলল,
— ” এখানে কেনো আনলে?”
স্পন্দন এবার গুঞ্জনের দিকে এগোতে এগোতে বলল,
— ” কী যেনো বলছিলে তখন? আমাকে যাচ্ছে তাই দেখতে?”
গুঞ্জন আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই একপা করে পেছাতে পেছাতে বলল,
— ” না আপনি ভুল শুনেছেন। আমি ওমন কিছু বলতে পারি?”
এটুকু বলে গুঞ্জন ছাদের রেলিং এ লেগে গেলো। স্পন্দন ওর দুই পাশে হাত রেখে বলল,
— ” আচ্ছা? আমি ভুল শুনেছি? ঠিক আছে। এবার ভুল কিছু করি?”
বলে গুঞ্জনের একদম কাছে এসে ঝুকতেই গুঞ্জন মুচকি হেসে স্পন্দনের দুই কাধে হাত রেখে বলল,
— ” হ্যাঁ করুন না। আমি তো অলওয়েস রেডি।”
বলে নিজেই স্পন্দনের আরেকটু কাছে এলো।স্পন্দন এবার নিচের ঠোঁট কামড়ে একটু হাসলো। তারপর গুঞ্জনের কোমর ধরে কাছে এনে বলল,
— ” ফাইন। দেন লেটস স্টার্ট?”
গুঞ্জন এবার চমকে গেলো ওতো ভেবেছিল আগের বারের মতো স্পন্দন পিছিয়ে যাবে বাট এটা কী হলো? নিজের জালে নিজেই ফেসে গেলো? যখন দেখলো স্পন্দন সত্যিই ওর খুব কাছে চলে এসছে তখন তুতলিয়ে বলল,
— ” অ্ আরে আমিতো মজা করছিলাম। আর আপনাকে একদমই যাচ্ছেতাই দেখতে না আপনাকে দেখতে খুব সুন্দর, পুরো ডেবিল প্রিন্স।”
স্পন্দন ভ্রু কুচকে বলল,
— ” কীসের মতো?”
গুঞ্জন চমকে গিয়ে হকচকিয়ে বলল,
— ” এঞ্জেল। এঞ্জেল প্রিন্স এর মতো। এবার তো ছাড়ুন প্লিজ।”
স্পন্দন একটু ভেবে বলল,
— ” ওকে ছাড়তে পারি একটা শর্তে।”
গুঞ্জন একটু অবাক হয়ে বলল,
— ” কী?”
স্পন্দন দুষ্টু হেসে বলল,
— ” তোমাকে আমায় কিস করতে হবে। গালে!”
প্রথমে ভয় পেলেও গালে শুনে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল গুঞ্জন। তবুও বলল,
— ” আমি পারবোনা।”
স্পন্দন এবারও মুখে সেই হাসি রেখে বলল,
— ” ফাইন। আমিই করছি তাহলে। আর আমি করলে কিন্তু..”
গুঞ্জন এবার স্পন্দনের গলার দুই পাশে হাত রেখে ও প্রথমে ডান গালে পরে বাম গালে কিস আলতো করে দিলো। স্পন্দন একটু অবাক হয়ে বলল,
— ” আরিব্বাস? একটার সাথে একটা ফ্রি?”
গুঞ্জন কিছু না বলে স্পন্দনকে জরিয়ে ধরলো আর স্পন্দনও হেসে জরিয়ে ধরে ওর মাথায় একটা চুপু দিলো। ছাদের দরজার আড়াল থেকে এসব দৃশ্য দেখে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেগে রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।
#চলবে…