#তুমি এলে তাই ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৫
.
গুঞ্জন বাড়িতে আসতেই মেঘলা সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বলল,
— ” কীরে তোর জামা কাপড়ে, মুখে এতো কালি কীসের?”
মিসেস নিলিমাও বললেন,
— ” কী ব্যাপার এই অবস্থা কী করে করলে?”
গুঞ্জন কিছু বলবে তার আগেই গুঞ্জনের কাকী বলে উঠলেন,
— ” এখানতো শুধু মুখে কালি মেখে এসছে। দেখবে একদিন এই পুরো বংশের মুখে কালি মাখবে এই মেয়ে।”
গুঞ্জন চলে যেতে নিয়েও থেমে গেলো। আজকে কেনো জানিনা কাকীর কথা শুনে ওর মাথা গরম হলোনা। তবে না রাগলেও একটা যোগ্য জবাব দেওয়ার ইচ্ছে ঠিকি হলো। তাই ও সোজা টি-টেবিলটা টেনে ওর মামীর বরাবর নিয়ে গিয়ে বসল। মিসেস নিলিমা আর মেঘলা তো অবাক হলেনই সাথে মিসেস অনিলাও অবাক হলেন। গুঞ্জন একটু হেসে বলল,
— ” হ্যাঁ ঠিকই বলেছো। আচ্ছা কাকী? তুমি আমার কাকাকে বিয়ে করেছো কতো বছর বয়সে?”
মিসেস অনিলা একটু অবাক হলো তবুও ইতস্তত করে বলল,
— ” কেনো? আঠারো বছর বয়সে।”
গুঞ্জন নিজের চেহারাটা একটু ভাবুক করে বলল,
— ” হুম আমার এখন বিশ। তারমানে আমার চেয়ে দুবছর ছোট বয়সেই তুমি আর কাকা বিয়ে করেছো?”
গুঞ্জনের মা একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” কীসব বলছো তুমি এসব? এগুলো জেনে তুমি কী করবে?”
গুঞ্জন মুখে একটু মেকি হাসি ফুটিয়ে বলল,
— ” আচ্ছা বাড়িতে সবাই যখন কথা বলে তখন তুমি চুপ করে শুনতে থাকো। একমাত্র আমি কথা বললেই সেই কথাটায় দোষ খুজে পাও তাইনা? এনিওয়ে, কাকী আমি ঠিক বলছিলাম তো?”
মিসেস অনিলা ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
— ” হ্যাঁ তো?”
গুঞ্জন এবার দুহাতের আঙ্গুলগুলো এক করে বলল,
— “তো। আমি যতোটা শুনেছি। তুমিতো তোমার বিয়ের দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে কাকাকে বিয়ে করেছিলে তাইনা?”
গুঞ্জনের কাকী চমকে উঠলো গুঞ্জন যে হঠাৎ এমন কিছু বলে উঠবে সেটা উনি ভাবতেও পারেন নি। গুঞ্জনের মা আর মেঘলাও অবাক হলো অনেকটা। মিসেস অনিলা ইতস্তত করে বলল,
— ” কীহ বলতে চাইছিস কী তুই?”
গুঞ্জন মুখে হালকা একটু বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
— ” নাহ মানে শুনেছি তোমার আঠারো বছর বয়সে তোমার বাবা তোমার বিয়ে ঠিক করেছিলো কিন্তু তুমি সোজা বিয়ের দিনই কাকার সাথে পালিয়ে এসছো?
মিসেস অনিলা একটু গলা ঝেড়ে তুতলিয়ে বললেন,
— ” হ্যাঁ? তো?”
গুঞ্জন একটু সোজা হয়ে বলল,
— ” যেই বংশের মেয়ে সোজা বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যায় আমার মনে হয় সেই বংশের মুখে কালি পরে। পাড়া প্রতিবেশী, পাত্রপক্ষ, সমাজ সবার কতো কতো অপমান সহ্য করতে হয় বলোতো? সো যেটা আমি ভবিষ্যতে করবো বলে তুমি মনে করছো? সেটা তুমি আমার চেয়ে দুবছর ছোট বয়সেই করে এসছো। মজার না?”
অনিলা বেগম আর কী বলবেন গুঞ্জনের প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই ওনার কাছে। তাই ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলেন। মিসেস নিলিমা কোনো পতিক্রিয়া না দেখালেও মেঘলা মিটমিটিয়ে হেসে যাচ্ছে নিজেরই মায়ের হেনস্তা দেখে। আবির এতোক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে শুনছিলো। গুঞ্জন উঠে রুমে যেতে নিলেই আবির আস্তে করে বলল,
— ” শোন।”
গুঞ্জন দাঁড়িয়ে গেলো। আবির একবার বাকি সবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবারও আস্তে করে বলল,
— ” মাথা গরম করে চেঁচামেচি না করে সবসময় এভাবেই সাইলেন্টলি মুখ বন্ধ করে দিবি কাজে দেবে।”
গুঞ্জন আবিরের দিকে তাকিয়ে টেডি স্মাইল দিলো তারপর ভেতরে নিজের রুমে চলে গেলো। আর আবির গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
_____________________
আরো তিনদিন কেটে গেছে। সবকিছু স্বাভাবিক চললেও স্পন্দন আর গুঞ্জনের মনের মধ্যে হঠাৎ করেই একে অপরের কথা মনে পরে যাওয়ার অসুখ দেখা দিচ্ছে। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎই অদ্ভুতভাবে স্মরণ করে একে ওপরকে। খেতে,শুতে,কাজের মধ্যে বিনা নোটিশে একে ওপরের মনের মধ্যে এসে ধাক্কা দেয়।
স্পন্দনরা সবাই মিলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করছে এমন সময় স্পন্দনের বাবা বলে উঠলেন,
— ” সারা তোদের ভার্সিটিতে আবার প্রোগ্রাম কবে হবে রে? ঐ মেয়েটার গান শোনার জন্যে মনটা ছটফট করছে।”
মিসেস চৌধুরীও সম্মতি দিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ কথা হয়না তোর মেয়েটার সাথে?”
সারা মুখ গোমড়া করে ‘না’ বোধক মাথা নাড়লো তারপর স্পন্দনের দিকে একপলক তাকালো। স্পন্দন একমনে খেয়ে যাচ্ছে। মিসেস চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন,
— ” কেনো?”
সারা নিচু কন্ঠে বলল,
— ” আসলে ভাইয়া..”
সবাই বুঝতে পারলো তাই কেউ আর কোনো কথা বাড়ালোনা। স্পন্দন কিছুক্ষণ চুপ থেকে গলা হালকা ঝেড়ে বলল,
— ” আব্ সেটা তখন বলেছিলাম, এখন যদি চাস তো কথা বলতে পারিস।”
তিনজনেই অবাক হয়ে তাকালো স্পন্দনের দিকে। সকলের এই দৃষ্টিতে স্পন্দন একটু আনইজি ফিল করলো তাই কোনোরকমে খাওয়া শেষ উঠে গেলো। ওনারা তিনজনেই স্পন্দনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে শুরু করলো । মিস্টার চৌধুরী বললেন,
— ” চিড়ে ভিজছে তাহলে।”
মিসেস চৌধুরীও সম্মতি জানিয়ে বললেন,
— ” তাইতো দেখছি।”
এরপর ওনারা আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়াতে মন দিলেন।
______________________
ভার্সিটির ক্লাস শেষ হওয়ার পর গুঞ্জন আর ওর বন্ধুরা মিলে বেড়োচ্ছে। তখন প্রাপ্তি বলল,
— ” আজ আমাকে এখন বাড়ি যেতে হবে রে। গেস্ট এসছে বাড়িতে ।”
অঙ্কুর বলল,
— ” আর আমারও আজ বাড়ি যেতে হবে।”
গুঞ্জন কিছু একটা ভেবে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” তাহলে আর কী? আজ ক্লাবে আর যাবোনা তাহলে চল সবাই বাড়িই যাই?”
এরপর ওরা যে যার মতো বেড়িয়ে গেলো। গুঞ্জন বেড়োতে নেবে কেউ ওকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো। গুঞ্জন ভ্রু কুচকে পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখে সারা। সারাকে দেখে গুঞ্জনও একটু হাসলো। সারা গুঞ্জনকে ছেড়ে বলল,
— ” কেমন আছো?”
গুঞ্জনও ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়েই বলল,
— ” ভালো। কী ব্যাপার হঠাৎ এতোদিন পর মনে পরলো আমার কথা?”
সারা বা চোখ একটু ছোট করে ঘাড়টা বাঁকিয়ে বলল,
— ” আসলে ভাইয়া বলেছিলো তাই..”
গুঞ্জন একটু হেসে ঘুরে হাটতে হাটতে বলল,
— ” তো এখন তোমার ভাই দিয়ে দিলো আমার সাথে কথা বলার পার্মিশন?”
সারাও গুঞ্জনের সাথে হাটতে হাটতে বলল,
— ” হ্যাঁ। কী ব্যাপার বলোতো? তোমাদের মধ্যে ঝগড়াও এমনি এমনি হলো আর সেটা এমনি এমনিই মিটেও গেলো।”
গুঞ্জন হাটতে হাটতে আপনমনে কিছুক্ষণ হাসলো তারপর বলল,
— ” এক্চুয়ালি ব্যাপারটা কী জানো? তোমার ভাইয়ার সামনে যেভাবে ঘটনাগুলো আসতো যেকেউ থাকলে সেটাই ভাবতো যেটা উনি ভেবেছেন। তুমি ব্যাপারটা জানো তাই তোমার মনে হতে পারে তোমার ভাইয়া একটু বিবেচনা করে দেখলোনা। তোমার ভাইয়ার সামনে ঘটনাগুলোও এভাবে এসছিলো যে বিবেচনা করার কোনো স্কোপই ছিলো। আর ঐমুহূর্তে আমারও মেজাজ খারাপ ছিলো তাই আমি ইচ্ছে করেই কিছু এক্সপ্লেইন করিনি জেদ করে। তাই ঝামেলাটা আরো বেড়েছে। যাকগে সবতো ঠিক হয়েই গেলো এখন আর এসব ভেবে কী লাভ বলো?”
সারা একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” হুমম ঠিকই বলেছো।”
এরকম নানা গল্প করতে করতে দুজনে হাটতে হাটতে এগোচ্ছে। গেইটের কাছে যেতেই দেখলো স্পন্দন দাঁড়িয়ে আছে। সারা খুশি হয়ে এগিয়ে গিয়ে বলল,
— ” ভাইয়া তুই?”
স্পন্দন চোখ থেকে সানগ্লাসটা নামিয়ে নিয়ে বলল,
— ” আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এসছি তাই ভাবলাম নিয়ে যাই তোকে?”
স্পন্দনের চোখ গুঞ্জনের দিকে পরতেই হালকা বাঁকা হেসে বলল,
— ” কী ব্যাপার ঝাঁসির রাণী ? আজ বাইক নেই?”
গুঞ্জন হেসে বলল,
— ” নাহ আসলে রিপেয়ারিং এ দিয়েছি।”
স্পন্দন আবারও সানগ্লাসটা পড়তে পড়তে বলল,
— ” তাহলে চলো ড্রপ করে দিচ্ছি?”
গুঞ্জন মুখে একটু সৌজন্যতার হাসি দিয়ে বলল,
— ” থ্যাংকস। বাট আমি চলে যেতে পারব।”
স্পন্দন কিছু বলবে তার আগেই সারা বলল,
— ” চলোনা। সমস্যা কী? একসাথে যাবো, ভালোই তো হবে বলো?”
গুঞ্জন বলল,
— ” কিন্তু..”
গুঞ্জন কথাটা কম্প্লিট করার আগেই স্পন্দন বলল,
— ” আরে বাড়িতেই তো পৌছে দেবো। এতে এতো কিন্তুর কী আছে?”
গুঞ্জন আর কী বলবে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,
— ” আচ্ছা ঠিকাছে চলুন।”
সারা খুশি হয়ে গুঞ্জনকে হালকা করে জরিয়ে ধরে তারপর তাড়াতাড়ি গাড়ির ব্যাক সিটে বসে পরলো গিয়ে। গুঞ্জন একটু অবাক হলো এই মেয়ে সামনে না বসে পেছনে কেনো বসলো? আর স্পন্দন গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো কে সামনে বসলো কে পেছনে সেটা নিয়ে ওর মাথাব্যথা নেই। গুঞ্জনও কথা না বাড়িয়ে সামনের সিটেই গিয়ে বসলো। মুভি বা সিরিয়ালের মতো পেছনে বসবে তারপর হিরো ধমকের সুরে বলবে “আ’ম নট ইউর ড্রাইভার” পরে ও মাথা নিচু করে সামনে এসে বসবে। এসব ন্যাকামো করার কোনো ইচ্ছে ওর নেই। ও যথেষ্ট প্রাকটিক্যাল মেয়ে তাই সব প্রাকটিক্যালি ভাবে। গুঞ্জনদের যাওয়া গাড়ির দিকে সেই ছেলেগুলো তাকিয়ে আছে যাদের ও মেরেছিলো। ওই ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বলল,
— ” এই গুঞ্জন খুব বেশিই উড়ছে ওকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে। কী ভাবে কী ও নিজেকে?”
আরেক কপাল চুলকোতে চুলকোতে বলল,
— ” তবে যাই বলি ওর সাথে এমনি এমনি পেরে ওঠা পসিবল না। অন্যকিছু ভাবতে হবে।”
ওদের টিম লিডার মুখে সিগারেট নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— ” চুপচাপ শুধু বসে বসে দেখতে থাক। কুকুর বলেছিলো না আমাদের ? ও হয়তো এটা জানেনা প্রত্যেক কুকুরের দিন আসে আর আমাদের দিনও আসবে সেই দিনটার অপেক্ষা কর।”
স্পন্দন মিডিয়াম স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। ওরা তিনজনেই টুকটাক কথা বলছে। হঠাৎ সারা বলে উঠলো,
— ” গুঞ্জন তোমার বি এফ আছে?”
প্রশ্নটা শুনে স্পন্দন আড়চোখে তাকালো গুঞ্জনের দিকে। গুঞ্জন ভ্রু কুচকে ফোন দেখতে দেখতে বলল,
—- ” আমার জোকার পালার শখ নেই।”
সারা ফিক করে হেসে দিলো। স্পন্দন হালকা হাসলো তবে ওদের দুজনের আড়ালে।
______________________
আরো কয়েকটা দিন কেটে গেলো। এরমধ্যে স্পন্দন গুঞ্জনের মাঝেমধ্যে দেখা হয়েছে টুকিটাকি কথাও হয়েছে। দুজনের সম্পর্ক এখন অনেকবেশি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। স্পন্দন ও গুঞ্জনের অনেকরকম দিক দেখেছে যা ও জানোতো না। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলো যে মেয়েটা চঞ্চল, বেপোরোয়া, কারো কথা শোনেনা। কিন্তু মনের দিক দিয়ে ভালো আর এমন কিছু করেনা যেটা খারাপ বা অনৈতিক। আবার গুঞ্জনেরও স্পন্দনকে নিয়ে অনেক ভুল ধারণা মিটেছে। একটু রাগী, মুডি, ইগোস্টিক হলেও মানুষটা ভালো।
গুঞ্জন আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসছে কারণ মেঘলা ওকে ডেকেছে। বাড়ি এসে দেখে মেঘলা সোফায় বসে আছে, আবির বাসায় নেই দুদিন আগেই অফিসের কাজে সিলেট গেছে। গুঞ্জন আসতেই মেঘলা হালকা চমকে গেলো। গুঞ্জন এগিয়ে এসে বলল,
— ” কী হয়েছে দি হঠাৎ এভাবে ডাকলে যে?”
মেঘলা কিছু বলছেনা শুধু হাত কচলাচ্ছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। গুঞ্জন বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” মেঘুদি চুপ করে কেনো আছো? কেনো ডেকেছো?”
তখন গুঞ্জনের মা মিসেস নিলিমা এসে বললেন,
— ” কারণ তোমাকে আজ দেখতে আসছে। তাই রেডি হয়ে নাও।”
গুঞ্জন ভ্রু কুচকে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” আমায় দেখতে আসবে মানে? আমি কী চিরিয়াখানার জন্তু নাকি?”
মিসেস নিলিমা শক্ত গলায় বললেন,
— ” চুপচাপ যা বলছি তাই করো। মেঘলা যা ওকে রেডি করে দে।”
গুঞ্জন ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
— ” তোমরা যা বলবে তাই করতে হবে নাকি? ”
বলে বেড়োতে নিলেই বাজার নিয়ে রিয়াদ আর রাশেদ হোসেন বাজার নিয়ে আসলো। গঞ্জন পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলেই রিয়াদ হোসেন বলে উঠলেন,
— ” চুপ করে ঘরে গিয়ে রেডি হয়ে নাও। আজ তোমার কোনো কথা শোনা হবেনা।”
গুঞ্জন এবার রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠল,
— ” আজব! হঠাৎ এভাবে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্যে উঠে পরে কেনো লাগলে। আমি থাকছিনা ব্যাস।”
এটুকু বলে গুঞ্জন কিছু না বলে বেড়িয়ে যেতে নিলেই কিছু লোক এলো তিনজন মহিলা আর দুজন পুরুষ। রাশেদ হোসেন চমকে উঠলেন এগিয়ে গিয়ে বললেন,
— ” আরে আপনারা এসে গেছেন? আসুন আসুন। আপনাদেরতো সন্ধ্যায় আসার কথা।”
পুরুষ একজন বললেন,
— ” হ্যাঁ রোডে যাম থাকে তাই আগে বেড়িয়েছিলাম কিন্তু থ্যাংকফুলি আজ যাম কম ছিলো।”
রিয়াদ আর রাশেদ আহমেদ মিলে ওনাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন। গুঞ্জন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ও বুঝতে পারলো এরাই ওকে দেখতে এসছে। মিসেস নিলিমা আর অনিলা রান্নাঘরে চলে গেলেন। রিয়াদ হোসেন আর রাশেদ হোসেন বার বার মেঘলাকে চোখের ইশারায় বলছে গুঞ্জনকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে রেডি করে নিতে। কিন্তু মেঘলা অনেক চেষ্টা করেও গুঞ্জনকে নিতে পারলোনা ও দেয়াল হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে তামাশা দেখছে। মিসেস নিলিমা আর অনিলাই খাবার আনলেন কারণ গুঞ্জন যে আনবে না সেটা জানেন। পাত্রের মা ইতস্তত করে বললেন,
— ” মেয়ে কোথায়?”
সবাই অস্বস্তিতে পরে গেছে গুঞ্জন একটা লং শার্ট, আর জিন্স পরে আছে। এই অবস্থায় যদি সামনে আনে তাহলে কী হবে? কেউ কিছু বলার আগেই গুঞ্জন হাত তুলে বলে উঠলো,
— ” প্রেজেন্ট প্লিজ।”
আওয়াজ শুনে সবাই তাকালো গুঞ্জনের দিকে। গুঞ্জন হেলতে দুলতে ওনাদের সামনে এসে বলল,
— ” হ্যাঁ আমি হাজির। এবার বলুন কে কী জানতে চান? মানে ইন্টারভিউ শুরু করুন। বউ নামক চাকরিতে জয়েন করতে চলেছি না?”
পাত্রের ফুপু গুঞ্জনের পা থেকে মাথা অবধি স্কান করে মুখ বাকিয়ে বললেন,
— ” এই তাহলে মেয়েকে।”
কেউ কিছু বলার আগেই গুঞ্জন হেসে বলল,
— “এভাবে কেনো বলছেন অান্টি পছন্দ হয়নি আমায়? দেখুন লম্বা আছি, গায়ের রং ফর্সা, দেখতে ভালো সবই ঠিক আছে।”
পাত্রের মা কপাল কুচকে বললেন,
— ” সারাদিন কী এসবই পরে থাকো নাকি?”
গুঞ্জন অবাক কন্ঠে বলল,
— ” কেনো এগুলো কী মানুষ পরে না? না পরলেও কিছু করার নেই আমি এসবই পরি।”
গুঞ্জনকে দেখে পছন্দ হলেও ওর এটিটিউট কারো পছন্দ হলোনা। গুঞ্জন প্রত্যেকটা প্রশ্নেরই ত্যারা ত্যারা জবাব দিলো। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে চলে গেলো। মেঘলা তো হাসতে হাসতে শেষ। গুঞ্জন হেসে চলে যেতে নিলেই রিয়াদ হোসেন এসে ওর হাত ধরে আটকিয়ে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দিয়ে বলল,
— “আর কত জ্বালাবি আমাদের? বাড়িতেতো জ্বালিয়ে মারিস বাড়ি থেকে বেড়িয়েতো শান্তি দে?”
মেঘলার হাসি থেমে গেলো। সবাই চুপ করে আছে। মিসেস অনিলা বললেন,
— ” এই মেয়ে যতদিন বেঁচে থাকবে ততোদিন জ্বালিয়েই মারবে কাউকে শান্তি দেবে না। এর মেয়ের জন্যে দুবছর আগে আমার মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গেছে। আমার মেয়েটা নিজের ভালোবাসার মানুষকে পায়নি। ও সবাইকে মেরে তবেই শান্ত হবে।”
মেঘলা রেগে গিয়ে বলল,
— ” মা ঐ ঘটনার জন্য ওকে কেনো দোষ দিচ্ছো? আর কীসের ভালোবাসা? আমি ঐ লোকটাকে ভালোবাসলেও ও বাসতোনা আমায় ভালো। যদি বাসতো তো আমাকে ছেড়ে ও.. যাই হোক গুঞ্জনের কোনো দোষ নেই এখানে।”
মিসেস নিলিমা শক্ত কন্ঠে বললেন,
— “অবশ্যই দোষ আছে ওর। কে বলেছিলো ওকে নিজের হবু দুলাভাইয়ের সাথে এতো মিশতে?”
মেঘলা কিছু বলতে গিয়েও বললনা। এদের বুঝিয়ে লাভ নেই। তবে গুঞ্জন কিছু বললোনা শুধু নিচের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো ।
শহর থেকে অনেক দূরের একটা গ্রামের নদীর পারে হাটু ভেঙ্গে বসে আছে গুঞ্জন। সূর্য ডুবে গেছে কিছুক্ষণ আগে। হালকা হাওয়া বইছে। সেই বাতাসে গুঞ্জনের খোলা চুলগুলো উড়ছে। একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ও। হঠাৎ করেই পেছনে কারো উপস্হিতি টের পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পেছন ঘুরতেই ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ কপালের সাইড বরাবর কিছু দিয়ে জোরে আঘাত করলো। কে সেটা দেখারও সুযোগ পেলোনা গুঞ্জন ‘আহ’ করে মাথা ধরে বসে পড়লো।
#চলবে..