তুমি এলে তাই পর্ব-০৮

1
3346

#তুমি এলে তাই ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৮
.
রাত বেশ অনেকটাই হয়েছে। নাইট ক্লাবে চারপাশে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ তৈরী হয়ে আছে সকলের হৈ হুল্লোড়ে । যদিও ক্লাবের চারপাশে আরো নানারকমের মানুষ আছে। কেউ ড্রিংক করতে করতে উশৃঙ্খলভাবে ডান্স করছে, কেউ নিরিবিলি টেবিলে বসে ড্রিংক করছে, কেউ কেউ ভদ্রভাবেই বসে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে আর সফটড্রিংক জুস খাচ্ছে, কেউ নিরব দর্শকের মতো চারপাশ দেখছে। গুঞ্জনরাও নিজেদের মতো ইনজয় করছে। ওরা নিজেদের মতো ডান্স করলেও কোন হার্ডড্রিংক নিচ্ছে না ওরা। সারাও বেশ ইনজয় করছে। ও সাধারণ এরকম হৈ হুল্লোড়, পার্টি এসবের সাথে অভ্যস্ত নয়। তবে আজ এই নতুন পরিবেশকে খুব ইনজয় করছে ও। তবে এই নাচ গান হৈ হুল্লোড় এর মধ্য দিয়েও গুঞ্জন সারাকে চোখে চোখে রাখছে। কারণ ও জানে মেয়েটা এরকম পরিবেশ‍ে অভ্যস্ত নয়। আর এখানেও নানারকমের মানুষ আছে। সারা ডান্স করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পাশে গিয়ে বসলো, গুঞ্জন সারার কাছে গিয়ে বসে বলল,

— ” এখানেই থাকবে কিন্তু। এদিক ওদিক যাবেনা হুম?”

সারা হেসে হালকা হাফাতে হাফাতে বলল,

— ” থ্যাংকস আ লট। জানো আজকের মতো মজা এর আগে কোনোদিন করিনি আমি।”

গুঞ্জন মুচকি হেসে বলল,

— ” তা কীকরে করবে? যার ওরকম গম্ভীর টাইপ একটা বড় ভাই থাকে এসব তার কপালে জোটে না।”

সারা হেসে দিলো গুঞ্জনের কথায়। হাসতে হাসতেই বলল,

— ” এটা কিন্তু সত্যিই।”

দুজনেই হেসে কথা বলছে এদিকে ওপাশের কিছু ছেলে সারা দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা জানে যে গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আগে একবার সেই সাহস করে ভীষণ পস্তাতে হয়েছে ওদের। তাই এখন সারাকেই দেখছে। এটুকু বুঝেছে সারা এখানে নতুন আর ও খুব সহজসরল। গুঞ্জন না হোক সারাকে নিয়েই কিছু একটা চিন্তা করছে ওরা।

______________________

স্পন্দন ডিনারের জন্যে নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলে বসে চারপাশে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সারা কোথায়? এখনো খেতে নামেনি?”

আরহান চৌধুরী আর মিসেস চৌধুরী দুজনেই একটু ঘাবড়ে গেলেন কারণ ওনারা জনেন যে স্পন্দন যদি জানতে পারে যে সারা গুঞ্জনের সাথে গেছে তাহলে ভয়াবহ কিছু হবে। আর ওনারা নিজেরাও জানেনা যে সারা কোথায় আছে। শুধু এটুকুই জানে যে গুঞ্জনের সাথে আছে। ওনাদের চুপ থাকতে দেখে স্পন্দন ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী হলো? কোথায় সারা?”

মিস্টার এন্ড মিসেস চৌধুরী দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক বলল। আরহান চৌধুরী ইতস্তত গলায় বলল,

— ” আসলে সারা এখোনো ফেরে নি।”

স্পন্দন অবাক হয়ে গিয়ে বলল,

— ” ফেরেনি মানে?”

তারপর হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” রাত ন’টার বেশি বাজে। তোমারা বলেছিলে কোন ফ্রেন্ডের বাসায় গেছে। কোন ফ্রেন্ডের বাসায় এতো রাত অবধি আছে ও? নাম বলো?”

মিসেস চৌধুরী কোনরকম হাসার চেষ্টা করে বললেন,

— ” আরে এতো ভাবছিস কেনো? দেখিস ঠিক চলে আসবে। আর তাছাড়াও ও তো এখন আর ছোট নেই তাইনা?”

স্পন্দন শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” ও এতোটাও বড় হয়ে যায়নি। তাছাড়া এতো রাত অবধি বাইরে থাকার মানে কী? আজকাল কী হয়ে চলেছে চারপাশে ডোন্ট ইউ নো? কোন ফ্রেন্ডের বাসায় আছে নাম বলো।”

ওনারা দুজনেই চুপ করে আছেন। বলার মতো কিছুই খুজে পাচ্ছেন না। স্পন্দন ওনাদের মুখ দেখেই বুঝে গেলো যে কিছু গন্ডগোল আছে। স্পন্দন চোখ ছোট করে ওনাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তারমানে তোমরা জানোই না যে ও কোথায় আছে?”

মিস্টার আর মিসেস চৌধুরী দুজনেই চুপ করে আছেন। স্পন্দন চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” আনবিলিভএবল। মেয়েটা কোথায় আছে সেটাই জানোনা? এতো রাত হয়ে গেছে অথচ খোজ নেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করছোনা? ওয়াও!”

এটুকু বলে পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে সারার নাম্বারে ট্রায় করলো। কিন্তু বেশ কয়েকবার ফোন করার পরেও সারা ফোন রিসিভ করলোনা। স্পন্দন এর তো এবার মাথা প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আরহান চৌধুরী উঠে এসে বললেন,

— ” কী হলো কী বলল সারা?”

স্পন্দন বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” ফোনটাই তো ধরছেনা।”

এবার ওনারাও টেনশনে পরে গেলেন। স্পন্দন কিছু একটা ভেবে তাড়াতাড়ি সারার ফোনের লোকেশনটা ট্রাক করতে দিলো। বেশ টেনশনে পরে গেছে ও। ওর বোন ওর কাছে কী সেটা শুধু ওই জানে। সারার কোন ক্ষতি হয়ে গেলে ও নিজেকে সামলাতে পারবেনা।

____________________

এদিকে প্রাপ্তির বার্থডে কেক কাটার জন্য ওরা সবাই একজায়গায় হলো। কেক কাটার পর্ব শেষ হতেই মজা করা একে ওপরকে খাইয়ে দেওয়া এসবের মধ্যেই সারার ওপর থেকে গুঞ্জনের এটেনশন অনেকটা হটে গেলো। আর ঐ ছেলেগুলো এই সুযোগটারই অপেক্ষা করছিলো। ওদের মধ্যে একজন সারাকে পেছন থেকে হালকা করে ডেকে যথেষ্ট ভদ্রভাবে বলল,

— ” এক্সকিউসমি ম্যাম। একটু শুনবেন?”

সারা এমনিতেই এতো প্যাচ বোঝেনা। এসব জায়গায় কী হতে পারে সেটা নিয়েও ওর খুব বেশি কোনো আইডিয়া নেই। আর চারপাশে এতো মানুষজন তারমধ্যে ওর সাথে কেউ উল্টোপাল্টা কিছু করতে পারবেনা বলেই ওর ধারণা। তাই কিছু না ভেবেই লোকটার সাথে এগিয়ে গিয়ে বলল

— “হ্যাঁ বলুন?”

এদিকে স্পন্দন লোকেশন ট্রাক করেই এই ক্লাবের কথা জানতে পারে, আর এতেই ও বুঝে যায় যে কার সাথে যেতে পারে ও। স্পন্দন খুব স্পিডে ড্রাইভ করছে। রাগে চোখ মুখ সব লাল হয়ে আছে ওর। আজ যদি ওখানে গিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু দেখে তো আজ ও কী করবে সেটা ও নিজেই ভাবতে পারছে না।

এদিকে হঠাৎ করেই গুঞ্জনের সারার কথা মাথায় আসতেই ও চমকে গিয়ে আশেপাশে তাকালো। আশেপাশে তাকিয়ে গুঞ্জনকে দেখতে না পেয়ে বেশ ঘাবড়ে গেলো। আবাক হয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখতে শুরু করলো। প্রাপ্তি অঙ্কুর ওরা এসে বলল,

— ” কীরে কী হয়েছে?”

গুঞ্জন চারপাশে তাকিয়ে খুজতে খুজতে বলল,

— ” সারাকে খুজে পাচ্ছিনাতো।”

এটা শুনে ওরাও বেশ ঘাবড়ে গেলো। চারপাশে ভালোভাবে খুজতে খুজতে শুরু করলো।

আর স্পন্দনও ক্লাবের সামনে পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি থামিয়ে ভেতরে যেতে নিয়ে যা দেখলো তাতে ওর ওর কপালের রগ ফুলে ওঠছে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো ওর। কারণ ও দেখলো সারা প্রায় সেন্সলেস হয়ে আছে। কতোগুলো ছেলে মিলে ওকে ধরে বাইরে নিয়ে আসছে। সারা পুরো জ্ঞানে না থাকলেও ওদের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছ সেটা খুব ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে। ওদের উদ্দেশ্য বুঝতে একটুও দেরী হয়নি স্পন্দনের। এদিকে গুঞ্জনরাও সারাকে খুজতে খুজতে বাইরের দিকে এসে এই অবস্হা দেখলো। এই দৃশ্য গুঞ্জনের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো রাগে কটমট করে বলল,

— ” সেদিন এমন টাইট দিলাম তবুও শিক্ষা হয়নি এদের। আজতো এদের..অঙ্কুর হকিস্টিকটা নিয়ে আয়।”

স্পন্দন এগোতে নিলেই গুঞ্জনকে দেখতে পেলো। গুঞ্জন ‘ওই’ বলে চিৎকার করতেই ছেলেগুলো চমকে তাকালো। জিপটা কাছে থাকায় হকিস্টিক আনতে অঙ্কুরের সময় লাগলো না। ছেলেগুলো গুঞ্জনকে হকিস্টিক নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখেই বুজে গেছে যে এইমুহুর্তে না পালালে ওদের অবস্হা খারাপ হয়ে যাবে ওরা সারাকে ওখানেই ফেলে রেখে দৌড় লাগালো। প্রাপ্তি ওরা এসে সারাকে ধরল আর গুঞ্জন ” আব্বে দাঁড়া” বলে চেচিয়ে ওদের তাড়া করে ওদের পেছনে দৌড়ে গেলো কিন্তু গুঞ্জন পৌছনোর আগেই ওরা গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করে ফেলল। গুঞ্জন তবুও গাড়িটার পেছনে চারপাঁচ সেকেন্ড দৌড়ে একটা ইটের টুকরো ছুড়ে গাড়ির পেছনের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে চেঁচাতে চেঁচাতে বলল,

— ” একবার পাই তোদের। তারপর বুঝতে পারবি আমি কী জিনিস।”

আর স্পন্দন কিছুই করলোনা ঐ ছেলেগুলাকে ধরার চেষ্টাও করলোনা শুধু গাড়ি নাম্বারটা ভালোভাবে দেখে কোথাও একটা ফোন করে গাড়ির নাম্বার আর কোনো রোড দিয়ে গেছে সেটা জানিয়ে দিয়ে বলল,

— ” কাল সকালে যাতে ওদের পুলিশ স্টেশনে দেখতে পাই আমি।”

এটুকু বলে ফোনটা রেখে সারার ওখানে গেলো। সারাকে প্রাপ্তিরা ভেতরের একসাইডে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়েছে। সারা এতোটাই নেশার ঘোরের মধ্যে আছে যে চোখ খুলে তাকাতেও পারছেনা। প্রাপ্তি ধরে রেখেছে ওকে। চোখ বন্ধ করেই বিড়বিড় করে আবলতাবল বকে যাচ্ছে। স্পন্দন সারাকে ধরবে তখনি হাফাতে হাফাতে গুঞ্জন এসে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সারা ঠিক আছে তো? ভুলটা আমারই ছিলো, আমার ওকে আরো…”

কথাটা শেষ করার আগেই স্পন্দন গুঞ্জনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। থাপ্পড়ের আওয়াজে হৈ হুল্লোড় এর পরিবেশটা মুহূর্তের মধ্যেই শান্ত হয়ে গেলো। মিউসিক ও বন্ধ হয়ে গেলো। চারপাশটা অদ্ভুতভাবে খুব বেশিই নিরব হয়ে গেলো। গুঞ্জনের বন্ধুরা সবাই চমকে উঠল। গুঞ্জন গালে হাত দিয়ে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে স্পন্দনের দিকে তাকাতেই স্পন্দন ওর বা হাতের বাহু চাপ দিয়ে ধরে নিজের দিকে এগিয়ে এনে রাগী কন্ঠে বলল,

— ” বলেছিলাম না ওর কাছ থেকে দূরে থাকতে কী হলো বলেছিলাম?”

গুঞ্জন কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছে স্পন্দনের দিকে। অঙ্কুর অবাক কন্ঠে বলল,

— ” আরে ও তো আনতে চায়নি। আপনার বোনই প্রাপ্তির বার্থডে তে থাকবে বলে বায়না করেছিলো।”

স্পন্দন এবারেও রাগী কন্ঠে বলল,

— ” ও আসতে চাইলো আর তোমরা নিয়ে এলে? জানতেনা ও কেমন?”

তারপর আবার গুঞ্জনকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— ” আর হ্যাঁ তুমি? তোমার কী নূন্যতম সেল্ফরেস্পেক্ট বলতে কিচ্ছু নেই? সেদিন এভাবে বললাম তবুও ওকে এখানে নিয়ে এসছো এই জায়গায়? হ্যাঁ মানছি ও বলেছিলো তাই বলে তুমিও নিয়ে আসবে? ভুলে গেছো আমি কী বলেছিলাম?”

স্পন্দন বেশ জোরে জোরেই বলছে কথাগুলো।আর বাকি সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে ফ্রিতে সিনেমা দেখছে। আর গুঞ্জনও কিছু বলছেনা শুধু শুনছে। স্পন্দন ঝাড়া দিয়ে গুঞ্জনকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল,

— ” আর মনে থাকবেই বা কীকরে? মনে মধ্যে তো এসব চলে যে কীকরে আরো উশৃঙ্খল হওয়া যায় আর অন্যকে করা যায়। একেতো আমার বোনকে এরকম বাজে একটা জায়গায় নিয়ে এসছো যেখানে তোমার মতো বাজে মেয়েদেরই আসা সম্ভব। আর নিয়ে যখন এসছোই মিনিমান রেসপন্সিব্লিটি তো থাকে তাইনা? জানো ও এসবে অভ্যস্ত নয় ওর খেয়াল রাখার রেসপন্সিব্লিটি তো তোমার ছিলো, যদি আরেকটু দেরী হতো কী হতো কল্পনা করতে পারছো ইউ ইডিয়ট? ”

শেষের কথাটা বেশ জোরেই বলল স্পন্দন। সবাই হা করে তাকিয়ে দেখছে ওদের। গুঞ্জনের বন্ধুরাও মাথা নিচু করে আছে কী বলবে বুঝতে পারছেনা। স্পন্দন একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” সেসব কেনো বুঝবে? তোমার মতো মেয়েদের কাছে তো এসব নরমাল ? এসবই করে বেড়াও হয়তো এসব ক্লাবে এসে। আর তাছাড়াও কার কী হলো সেটা নিয়ে তোমার কী যায় আসে? তুমিতো তোমার এসব বন্ধুবান্ধব নাচ গান ফুর্তি এসব নিয়েই মেতে থাকো। বাকি সব জাহান্নামে যাক। তোমার ভাগ্য ভালো যে আমার বোন সেফ আছে। আজ যদি ওর কোনো ক্ষতি হতো না তোমাকে আজ নিজের হাতে খুন করতাম আমি । যেটুকু করেছো তাতেই তো ইচ্ছে করছে…”

এটুকু বলে গুঞ্জনের দিকে হাত উঠিয়েও নিজেকে সামলে হাত নামিয়ে নিলো স্পন্দন। উপস্থিত সবাই কেঁপে উঠলো। অদ্ভুতভাবে গুঞ্জন কোনো শব্দও করলোনা। প্রতিবার একটু হলেও জবাব দেয় কিন্তু আজ যেনো একটু বেশিই শান্ত ছিলো ও। স্পন্দন একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” তোমাকে এসব বলে লাভ নেই। কারণ তোমার মতো মেয়েরা বদলায় না। আই হোপ তোমার এই চেহারা আমায় আর কখনো দেখতে হবেনা।”

এটুকু বলে সারাকে কোলে তুলে নিয়ে কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো স্পন্দন। ক্লাবের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে গুঞ্জনের দিকে, জেনো এখন ও একটা এলিয়েন। গুঞ্জন কিছুক্ষণ স্হিরভাবে ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ করেই ব্যাগটা কাধে নিয়ে সোজা বেড়িয়ে গেলো ক্লাব থেকে কারো দিকে ফিরেও তাকালো না। ওর বন্ধুরা হ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো যখন বুঝতে পারলো গুঞ্জন বেড়িয়ে গেছে তখন ওরাও ছুটলো গুঞ্জনের পেছনে কিন্তু বেড়িয়ে গুঞ্জনকে আর খুজে পেলোনা।

_____________________

গুঞ্জনদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে বিভিন্ন কথা বলছে। গুঞ্জন বাড়িতে এসে ড্রয়িং রুম পাস করার সময় অনিলা বেগম বলে উঠলেন,

— ” কী মহারানি? আজ এতো তাড়াতাড়ি যে ফুর্তি করা শেষ?”

গুঞ্জন ওনার গলায় আওয়াজ শুনে থেমে গেলেও কথাটা শেষ হতেই কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে নিলে গুঞ্জনের বাবা বলে উঠলেন,

— ” কী ব্যাপার? চুপ কেনো? আজ আবার কী ঘটিয়ে এসছো?”

কিন্তু গুঞ্জন কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলো। সবাই বড়সড় ঝটকা খেলো। গুঞ্জনকে ওনারা কিছু বললেতো গুঞ্জন অক্ষরে অক্ষরে জবাব দিয়ে দেয় আজ হঠাৎ কী হলো যে ওর কাকী এমন ঠেস মেরে কথা বলল অথচ একটা শব্দও করলোনা? আবির মেঘলার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় ওকে গুঞ্জনের ঘরে গিয়ে ব্যাপারটা দেখতে বলল। মেঘলাও মাথা নেড়ে গুঞ্জনের রুমে চলে গেলো। মেঘলা গুঞ্জনের রুমে দরজা ফাঁক করে ঢুকে দেখে শান্তভাবে গুঞ্জন উপোড় হয়ে শুয়ে আছে। মেঘলা গুটিগুটি পায়ে গুঞ্জনের কাছে গিয়ে বসে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই গুঞ্জন সোজা মেঘলার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো। দরজার কোণে আবিরও দাঁড়িয়ে আছে গুঞ্জনের কী হয়েছে জানার জন্যে। মেঘলা খেয়াল করলো গুঞ্জন কেঁপে কেঁপে উঠছে আর ওর চোখ দিয়ে নিরবে জল পরে যাচ্ছে। সেটা দেখে মেঘলা আবির দুজনেই অবাক হলো। কারণ গুঞ্জন কারো সামনে কাঁদেনা। হ্যাঁ সেদিন জ্বরের ঘোরে আবিরে জরিয়ে ধরে কাঁদলেও সজ্ঞানে ও নিজের ইমোশন, কষ্ট, কান্না এগুলো কাউকে কখনো দেখায় না। আবির ইশারায় মেঘলাকে বলল কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতে। মেঘলা গুঞ্জনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

— ” কী হয়েছে আমার গুটিরাণীর?”

গুঞ্জন কিছুক্ষণ চুপচাপ চোখের জল ফেলে।তারপর হালকা ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় টেনে টেনে প্রায় বাচ্চাদের মতো করে বলল,

— ” আমাকে কেউ ভালোবাসেনা মেঘুদি। দেখো আমার সবাই আছে অথচ দিন শেষে আমি কেমন আছি এটা জিজ্ঞেস করার তুমি ছাড়া কেউ নেই। কেউ জানতেই চায়না আমি কী চাই। কেউ কখনো শুনতেও চায়না আমার কথা। সবাই নিজের মতো আমাকে কথা শোনায়, জাজ করে। কেউ বোঝেনা আমাকে, আর বুঝতে চায়ও না। আমি কী সত্যিই এতোটাই খারাপ মেঘুদি? বলোনা? আমি এতোটাই খারাপ?”

#চলবে…

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে