Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তুমি এলে তাই পর্ব-০৫

তুমি এলে তাই পর্ব-০৫

#তুমি এলে তাই ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫
.
গুঞ্জন প্রচন্ড খুশি হয়ে জরিয়ে ধরলো সামনের ব্যাক্তিটিকে, সামনের ব্যক্তিটিও জাপটে ধরলো ওকে। গুঞ্জন আনন্দিত কন্ঠে বলল,

— ” জানো কতোটা মিস করেছি তোমায়?”

মেয়েটি গুঞ্জনকে ছাড়িয়ে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,

— ” আমিও খুব মিস করেছি তোকে।”

ব্যাক্তিটি হলো রাশেদ হোসেন আর মিসেস অনিলার একমাত্র মেয়ে মেঘলা। এতোদিন চট্টগ্রাম পড়াশোনা করতো ও তাই এখানে থাকতো না। তবে গুঞ্জন আর মেঘলা একেওপরকে খুব ভালোবাসে। গুঞ্জন মুখটা হালকা ফুলিয়ে বলল,

— ” মেঘুদি তোমার ফাইনাল এক্সাম তো আরো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে তাহলে এতো লেট কেনো করলে হুম?”

মেঘলা হেসে ঘাড় বাকা করে এক কান ধরে বলল,

— ” সরি গুটি তুই তো জানিস চাকরির জন্যে কয়েকটা ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে। বাট তবুও দুটো ইন্টারভিউ ক্যান্সেল করে শুধু তোর জন্যে চলে এসছি। শুনলাম কাল নাকি তোদের ভার্সিটির নবীন বরণ?”

গুঞ্জন একটা শ্বাস ফেলে সুর টেনে বলল,

— ” হ্যাঁ।”

মেঘলা এক্সিইটেড হয়ে বলল,

— ” এবার গান গাইবি না?”

গুঞ্জন বিরক্ত হয়ে হাটুর ওপর হাত রেখে বলল,

— ” বলেছেতো গাইতে। গাইতে হবে।”

— ” ওয়াও কোনটা গাইবি?”

গুঞ্জন ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে বলল,

— ” ঠিক করিনি। স্টেজে গিয়ে যেই গানটা সবার আগে মাথায় আসবে সেটাই গাইবো।”

মেঘলা একটা হতাশার নিশ্বাস ত্যাগ করে বলল,

— ” তুই আসলেই একটা এলিয়েন। বাট ইউ নো হোয়াট? আমার এই এলিয়েনটাকেই পছন্দ।”

গুঞ্জন হেসে দিয়ে মেঘলাকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” লাভ ইউ দি।”

মেঘলাও গুঞ্জনের পিঠ জড়িয়ে ধরে বলল,

— ” লাউ ইউ টু মাই বাচ্চা।”

গুঞ্জন মেঘলাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

— ” ব্রেকফাস্ট করেছো?”

মেঘলা গুঞ্জনের গাল টেনে বলল,

— ” তোর জন্যে ওয়েট করছিলাম। চল তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে আয়।”

গুঞ্জন হেসে দিয়ে বলল,

— ” তুমি যাও আমি আসছি।”

— ” তাড়াতাড়ি আয়। ”

কথাটা বলে মেঘলা মুচকি হেসে চলে গেলো। গুঞ্জন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে গুঞ্জন নিচে নেমেই দেখলো মেঘলা একটা প্লেটে খাবার সার্ভ করে ওর জন্যে ওয়েট করছে। গুজ্ঞন গিয়ে মেঘলার পাশে বসতেই মেঘলা খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে বলল,

— ” কতোদিন তোকে খাইয়ে দেইনা। চল আজ নিজের হাতে খাইয়ে দেবো তোকে।”

গুঞ্জন খুশি হয়ে হা করলো। মেঘলা খাবার মুখে দিতে গেলেই। মিসেস অনিলা এসে রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” মেয়েটা সারারাত এতোটা জার্নি করে এসছে কোথায় একটু শান্তিতে বসে খাবে তা না এখানেও ওকে জ্বালাতে হবে তোর? তোর হাতে কী হয়েছে? নিজে খেতে পারিসনা?”

গুঞ্জন কিছু বলার আগেই মেঘলা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” তোমার কীসে এতো প্রবলেম হচ্ছে বলবে মা? আমার কী দরকার কী না দরকার সেটাতো আমিই বুঝি নাকি। অসহ্য।”

মিসেস অনিলা নেকা কন্ঠে বললেন,

— ” হ্যাঁ হ্যাঁ এখন আমিতো অসহ্য হবোই। এই অপয়া মেয়েটা নিজেতো জাহান্নামে গেছেই সাথে আমার মেয়েটাকেও বিগড়ে দিচ্ছে।”

মিসেস নিলিমা চুপচাপ সোফায় বসে এদের কথা শুনছিলো এবার উনি উঠে দাঁড়িয়ে গুঞ্জনকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— ” এই তোর কী কমন সেন্স নেই? ও তো টায়ার্ড হয়ে এসছে নাকি? নিজের হাতে খেতে সমস্যা কোথায় তোর?”

মেঘলা অবাক হয়ে বলল,

— ” আজব তো তোমরা ওকে কেনো বোকছো? ও কী বলেছে আমাকে? আমি নিজেই খাইয়ে দিতে চেয়েছি। ও তো…”

এটুকু বলে পাশে তাকিয়ে দেখলো গুঞ্জন নেই। মেঘলা এবার রেগে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সমস্যা কী বলোতো তোমাদের? ওকে তো আর তোমরা খাইয়ে দিচ্ছিলে না দিচ্ছিলাম আমি। এতো কথা কেনো বললে?”

অনিলা বেগম কিছু বলবেন তার আগেই গুঞ্জন ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে এলো বাইরে যেতে নিলেই মেঘলা এসে আটকে বলল,

— ” কী রে কিছু না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস? আজ তো ভার্সিটিও বন্ধ।”

গুঞ্জন মুচকি হেসে বলল,

— ” আপু একটু কাজ আছে। তবে চিন্তা করোনা তাড়াতাড়ি চলে আসবো। আর হ্যাঁ আমি খাইনি বলে তুমি না খেয়ে থাকবেনা কিন্তু আমি বাইরে খেয়ে নেবো? প্রমিস করো?”

মেঘলা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” গুটি তুই…?”

মেঘলার কথা শেষ করতে না দিয়ে মেঘলা বলল,

— ” প্রমিস?”

মেঘলা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” ওকে ফাইন। তুই কিন্তু…”

মেঘলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো গুঞ্জন। মেঘলা বিরক্তি হয়ে বলল,

— ” এবার খুশি তোমারা। শুধু শুধুই এতোটা সিনক্রিয়েট করলে তোমরা। যত্তসব।”

এটুকু বলে খাবারের প্লেট নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো মেঘলা। মিসেস নিলিমা কিছু না বলে নিজের কাজে মন দিলে আর মিসেস অনিলা নিজের মতো করে বকতে বকতে চলে গেলেন।

_____________________

একটু পরে মিটিং আছে তাই স্পন্দন কেবিনে বসে সব রেডি করছে। ম্যানেজার এসে বললেন,

— ” মে আই কাম ইন স্যার?”

স্পন্দন ফাইল চেক করতে করতে বলল,

— ” কাম ফাস্ট।”

ম্যানেজার তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকে বলল,

— “ডেকেছিলেন স্যার?”

স্পন্দন ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে রাগী কন্ঠে বলল,

— “হোয়ার ইজ মিস দিয়া?

ম্যানেজার একটু ইতস্তত করে বললেন,

— ” স্যার উনি এখনো আসেননি।”

কথাটা শুনে স্পন্দন হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ওনাকে কল করে বলে দিন অফিসে আর আসতে হবেনা।”

ম্যানেজার অবাক হয়ে বললেন,

— ” কিন্তু স্যার মিটিং…”

স্পন্দন বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনি ওনার কাছ থেকে পেপারগুলো নিয়ে সোজা রেস্টুরেন্টে চলে আসবেন। আর আমার জন্যে নতুন পিএ এর সার্কুলার দিয়ে দিন। ”

ম্যানেজার অবাক হয়ে বললেন,

— ” স্যার মিস দিয়া?”

স্পন্দন ম্যানেজারের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

— ” সেটা আপনাকে ভাবতে হবেনা।”

ম্যানেজার আর কিছু না বলে চলে গেলেন ওখান থেকে। স্পন্দন এরকমি। ওর কাছে সবার আগে ডিসিপ্লিন। সেটা কেউ না ফলো করলে ওর সহ্য হয়না।

_____________________

স্পন্দন একটা রেস্টুরেন্টে বসে ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং করছে। আর কোইনসিডেন্টলি গুঞ্জন আর ওর বন্ধুরাও সেই একি রেস্টুরেন্টে গেছে সাথে সারাও আছে কারণ সারা গুঞ্জনের খুব ভক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু স্পন্দন বা গুঞ্জন কেউ কাউকে দেখতে পায়নি এখনো। স্পন্দন নিজের ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং করছে। গুঞ্জনরাও খেতে খেতে গল্প করছে। কথার মধ্যে সারা এক্সাইটেড হয়ে বলল,

— ” সত্যিই কালকে গান গাইবে তুমি?”

গুঞ্জন মুচকি হেসে বলল.

— ” যদি বেঁচে থাকি তো।”

সারা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কেনো থাকবেনা। বাট আমারতো ভাবতেই এক্সাইটেড লাগছে যে তোমার গান শুনবো।”

প্রাপ্তি হেসে দিয়ে বলল,

— ” তুমিতো গুঞ্জনের গান শোনোনি। শুনলে বুঝতে পারবে যে কত্ত ভালো গায় ও।”

গুঞ্জন একটু বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” এদের কথায় কান দিওনা তো। অতোটাও ভালো না।”

সারা দুই হাতের আঙ্গুল একজায়গায় করে বলল,

— ” হুমমম তাতো কালকেই দেখতে পাবো।”

গুঞ্জন হেসে দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা দেখে নিও।”

এরপর ওয়েটার কোল্ডড্রিংক দিতে এলো। সকলের কাছে কোল্ডড্রিংকটা দিয়ে গুঞ্জনের পাশে বসা প্রাপ্তির সামনে দিয়ে হাত ফিরিয়ে আনার সময় সুযোগ বুঝে গুঞ্জনের বডি টাচ করলো। সেটাও যে ইচ্ছাকৃত তা গুঞ্জন একজন মেয়ে হওয়ার কারণে বেশ ভালোই বুঝতে পারলো। যদিও কেউ ব্যাপারটা খেয়াল করেনি। তবে গুঞ্জনের রাগ চরম মাত্রায় চলে গেলো এই ঘটনায় । ওয়েটারটার দিকে তাকাত‍েই সে দাঁত বের করে একটা হাসি দিলো। গুঞ্জন কিছু একটা ভেবে চুপ করে রইলো। ওয়েটারটা যেই ফিরে যেতে নিলো তখনি গুঞ্জন পা বাড়িয়ে ওকে ল্যাং মেরে ফেলে দিলো। ওয়েটারটা হাতে রাখা ট্রে-সহ মুখ থুবড়ে পরলো। পরে যাওয়ার আওয়াজে পুরো রেস্টুরেন্ট এর পরিবেশটা থমথমে হয়ে গেলো। স্পন্দন কথা থামিয়ে দিলো, ওর ক্লাইন্ডরাও মিটিং ছেড়ে আওয়াজ হওয়া দিকে ফিরে তাকালো। স্পন্দন কাজের মধ্যে ডিসটার্বেন্স একদমি পছন্দ করেনা। তাই বিরক্ত হয়ে তাকালো ওদিকে। গুঞ্জনের বন্ধুরা আর সারাও অবাক হয়ে গেলো যে হঠাৎ কী হলো? স্পন্দন গুঞ্জনকে দেখে চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” এই মেয়েটা মানেই একটা ঝামেলা। রিডিউকিলাস।”

ঠিক তখনি ওর চোখ গেলো সারার দিকে। সারাকে দেখে স্পন্দন অবাক হলো সাথে রাগও হলো যে এই উশৃঙ্খল মেয়েটার সাথে ও কী করছে। গুঞ্জন উঠে দাঁড়িয়ে ওয়েটারটার কলার ধরে দাঁড় করিয়ে যেই হাত দিয়ে ওকে টাচ করেছে সেই হাত মুচড়ে ধরে আস্তে করে বলল,

— ” মেয়েদের দেখলেই ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করে তাইনা? হ্যাঁ?”

ওয়েটার পুরো চমকে গেলো। সাধারণত মেয়েদের সাথে এরকম করলে মেয়েরা চুপ করে থাকে। লজ্জায় কিছু বলেনা। ওর অভিজ্ঞতা এটাই বলে। কিন্তু কেউ যে পাবলিক প্লেসে ওকেই উলটে ধোলাই দেবে সেটা ওর চিন্তাতেও ছিলোনা। ব্যাপারটা ঘোরানোর জন্যে ওয়েটার বলল,

— ” সরি ম্যাম। ইচ্ছে করে দেইনি। বিশ্বাস করুন।”

গুঞ্জনের কথাটা কেউ শুনতে না পেলেও ওয়েটারটার কথা সবাই শুনতে পেলো। গুঞ্জন ওয়েটারটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলল,

— ” আমার পা টাও ভুল করেই আপনার সামনের চলে গেছে। নাও গেট লস্ট।”

ওয়েটারটা একপ্রকার দৌড়ে পালিয়ে গেলো ওখান থেকে। স্পন্দন ওর ক্লাইন্ডদের দিকে তাকিয়ে এক্সকিউস মি বলে উঠে দাঁড়িয়ে ওদিকে গেলো। গিয়ে সোজা গুঞ্জনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সারা নিজের ভাইকে এখানে দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলো। গুঞ্জন স্পন্দনকে দেখে ভ্রু কুচকে হাত ভাজ করে দাঁড়ালো। স্পন্দন রেগে বলল,

— ” এটা কোন ধরণের ব্যবহার?”

গুঞ্জনও ওর এস ইউসয়াল তেরা জবাব দিয়ে বলল,

— ” আমি যেই ধরণের মানুষ ঠিক সেই ধরণের ব্যবহার। এনিথিং ইলস?”

স্পন্দন পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,

— ” নো এক্চিউয়ালি। তোমাকে কিছু বলা ইজ ওয়েস্ট অফ টাইম এন্ড এনার্জি টু।”

গুঞ্জন একটু হেসে বলল,

— ” এক্সাক্টলি সো আই থিংক ইউ উড নট লাইক টু ওয়েস্ট ইউর টাইম এন্ড এনার্জি এস বথ আর ইম্পর্টেন্ট টু ইউ।”

স্পন্দন ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল গুঞ্জনের দিকে। তারপর একটা শ্বাস ফেলে গুঞ্জনের কাছ থেকে সরে সারার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তুই এখানে কী করছিস?”

সারা মাথা নিচু করে ফেলল এমনিতেই স্পন্দনকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ রেগে আছে। আর ও স্পন্দকে খুব ভয় পায়। সারার উত্তর না পেয়ে স্পন্দন ধমকে বলল ,

— ” কী হলো? কী করছিস এখানে?”

সারা হালকা কেঁপে উঠলো। সারাকে বকা খেতে দেখে গুঞ্জন নিজেই এবার এগিয়ে এসে বলল,

— ” আমিই ওকে ফোন করে ডেকে এনেছি।”

স্পন্দন গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” জাস্ট কিপ ইউর মাউথ সাট ওকে? আমি আমার বোনের সাথে কথা বলছি।”

— ” কিন্তু উত্তরটা আমার জানা ছিলো তাই দিয়ে দিলাম।”

সারাও এবার কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

— ” ভাইয়া আসলে গুঞ্জনকে বলেছিলাম যাতে কোথাও গেলে আমাকেও ডাকে। আসলে..”

স্পন্দন রাগী চোখে সাড়ার সারার দিকে তাকাতেই সারা চুপ হয়ে গেলো। তারপর গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এন্ড ইউ। তুমি যা খুশি করো। যতোটা উশৃঙ্খল হওয়া যায় হও। জাস্ট গো টু হেল, বাট এরপর জেনো আমার বোনের আশেপাশেও তোমাকে না দেখি। আমি চাইনা আমার বোনের ওপর তোমার মত মেয়ের এফেক্ট পরুক। গেট ইট?”

গুঞ্জন চুপ করে শুধু শুনছে। এগুলো তো নতুন নয় ওর কাছে। এসব সবার কাছ থেকে শুনতে শুনতে ওর অভ্যেস হয়ে গেছে। স্পন্দন সারার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ওখান থেকে আর মিটিংটাও ক্যান্সেল করে দিলো। গঞ্জনের বন্ধুরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কী হলো কিছুই বুঝলোনা ওরা। গুঞ্জন ওদের দিকে তাকিয়ে তুরি বাজিয়ে বলল,

— ” কী হলো? আমার সাথে কাউকে এভাবে কথা বলতে আজ প্রথম দেখলি মনে হয়? চল শুরু কর।”

সবাই একটা লম্বা শ্বাস ফেলে খাওয়ায় মন দিলো। গুঞ্জনও টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করলো যেনো কিছুই হয়নি।

______________________

রাতে বরাবরের মতো সোফায় বসে অফিসের কাজ সারছে আবির। হঠাৎ মেঘলাকে আসতে দেখে ও বলল,

— ” মেঘু শোন?”

আবিরের ডাক শুনে মেঘলা এসে আবিরের পাশে বসে বলল,

— ” কিছু বলবি?”

আবির কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ইতস্তত কন্ঠে বলল,

— ” গুঞ্জন ফিরলো না এখনো? ফোন করেছিলো তোকে?”

মেঘলা মুচকি হেসে তাকালো আবিরের দিকে তারপর বলল,

— ” তুই নিজেও তো ফোন করতে পারতি। যাই হোক, ও অনেক আগেই এসে গেছে। ওর রুম থেকেই এলাম ১০৩ জ্বর। জ্বরে কাঁপছে মেয়েটা।”

আবির অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,

— ” হোয়াট? এতো জ্বর কীকরে এলো? আর এতোক্ষণ বলিসনি কেনো?”

মেঘলা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” জানিনা তো কেনো। রাতে কিছুই খায়নি, আর কেউ তো নেই ওকে ডেকে বা জোর করে খাওয়ানোর।”

আবির উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

— ” তুই খাবার নিয়ে আয় আমি ওর রুমেই আছি।”

এটুকু বলে আবির চলে গেলো গুঞ্জনের রুমে। আর মেঘলাও খাবার আনতে গেলো। আবির গিয়ে দেখে গুঞ্জন গুটশুটি মেরে শুয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে। মাথায় জ্বরপট্টিও দিয়েছে মেঘলা। আবির গিয়ে ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলো। গুঞ্জন আবিরের হাত জরিয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো গুটিয়ে গেলো। সারাদিন কতো ছোটাছুটি, মারপিঠ, গুন্ডিপনা করে বেড়ায় অথচ এখন কেমন বাচ্চা হয়ে গেছে ভেবে মুচকি হাসলো আবির। এরমধ্যে মেঘলা খাবার নিয়ে চলে এলো। আবির গুঞ্জন ধরে উঠিয়ে একহাতে জরিয়ে ধরে ওপর হাতে আস্তে আস্তে খাইয়ে দিলো। জ্বরের ঘোরে থাকায় গুঞ্জন চুপচাপ খেয়ে নিলো। মেঘলা হাত ভাজ করে মুগ্ধ নয়নে দেখছে এই দৃশ্য। বোন যেমন ভাইকে ভালোবাসে ভাইও তার বোনকে ঠিক ততোটাই ভালোবাসে। অথচ অজানা কারণেই দুজনের কেউই সেটা প্রকাশ করেনা। আবির যেই গুঞ্জনকে শুইয়ে দিতে যাবে তখনি গুঞ্জন অাবিরকে ধরে ফুপিয়ে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে দিলো। মেঘলা চমকে উঠলো। আবিরের বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো গুঞ্জনের কান্নায়। এই কান্নায় হাজারো অভিযোগ, অভিমান মিশে আছে। আবির অনেক চেষ্টা করেও নিজের চোখের জল আটকাতে পারলোনা। ওও কেঁদে দিলো নিজের বোনকে জরিয়ে ধরে।

#চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ