তুমি এলে তাই পর্ব-০২

0
366

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০২
চৈতি লিফট থেকে নেমে বাসায় গিয়ে বিছানায় ফ্যান ছেড়ে শুয়ে পড়ল।আচ্ছা লোকটা নিশ্চয়ই লিফট ব*ন্ধ করার কথা বলছিল।অন্য কোন কথা বলার তো প্রশ্নই উঠে না।কারন লোকটাকে ও চিনে না।নির্ঘাত কোন জরুরি কাজ ছিল।নয়তো একটা মানুষ সামান্য লিফটের জন্য এভাবে দৌড়ায় না।দুর আমি কেন আগে বুঝলাম না।আর লিফটের দরজাটাও কিছু বুঝে উঠার আগেই ব*ন্ধ হয়ে গেল।লোকটা আমাকে নিয়ে কি ভাবল?আমি কোন কাজেরই না।কারোর জন্যই না।যাইহোক যা হবার হইছে। আমি তো আর ইচ্ছা করে এমন করি নাই।উনার সাথে দেখা হলে ক্ষমা চেয়ে নিব। তাইলেই তো সব সমস্যা শেষ।হুম! তাই করতে হবে।
এসব ভেবেই বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে চলে গেল।হাত মুখ ধুয়ার জন্য। হাত মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই দেখল মা বসে আছে।হাতে থাকা তোয়ালেটা চেয়ারের উপর রেখে মার পাশে বসে পরল।মা একটা ছবি চৈতিকে দিলেন।চৈতি ছবিটা রেখে দিয়ে বলল,

“আমার পছন্দে কি আসবে যাবে মা?আমি পছন্দ করলেই কি আর না করলেই কি?কেও তো আমাকে বিয়ে করবে না।শুধু শুধু এসব কেন করছ?এই কথা তুমিও জানো আমিও জানি।তাহলে কেন বারবার আমাকে ওদের সামনে মাথা নত করতে দাও?কেন ওদের সামনে আমাকে হাসির পাত্র বানাও?আমি ক্লান্ত। আমি আর পারছি না।এত তাড়া কিসের আমাকে তাড়ানোর?আমি এতটাই বোঝা হয়ে গেছি তোমাদের উপর?যে এখন কোনমতে বিয়ে দিতে পারলেই বাঁচো তোমরা?এইবার তো থামো!আমি সত্যিই আর পারছি না।তোমাদের যদি এতোই সমস্যা হয় আমাকে নিয়ে তাহলে বলে দিও।আমি চলে যাব কোথাও। তাও আমার উপর এভাবে মানসিক টর্চার করো না।”

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।রেহানা বেগম মেয়ের কথা শুনে চুপ হয়ে বসে রইলেন।
.
.
শুভ্র ছাদে এসে ফোনে কথা বলছিল।এমন সময় হঠাত কারোর ফোপানো কান্নার আওয়াজ শুনে ফোনটা রেখে ভ্রু কুচকে আশেপাশে খুজে দেখল লিফটের সেই মেয়েটা কান্না করছে ছাদের ফ্লোরে হাটু মুড়ে বসে।মেয়েটাকে এভাবে কান্না করতে দেখে আরও অবাক হলো সে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কেও নেই।শুভ্র কি করবে সেটাই বুঝতে পারছে না।এখানে থাকবে নাকি চলে যাবে?বরং চলে যাওয়াই ভালো। মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করার কোন মানেই হয় না।ও ওর মতো কান্না করুক।এসব ভেবেই ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে এসে বিছানায় বসে কি যেন ভেবে পাশের টেবিল থেকে টিস্যুর বক্স নিয়ে আবার ছাদে চলে গেল।মেয়েটার সামনে টিস্যুর বক্সটা রেখে দিয়ে পাশে বসে গেল।হুট করে সামনে টিস্যুর বক্স দেখে চৈতি চমকে পাশে ফিরে দেখল শুভ্র ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।চৈতিকে তাকাতে দেখে শুভ্র বলল,
এভাবে রাতের বেলা ছাদে এসে কান্না করবেন না।
চৈতি অন্ধকারে শুভ্রর লিপ রিডিং করতে পারল না।সামনে টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে নাক মুখ মুছল। অতঃপর বসা থেকে উঠে চলে গেল।শুভ্র চৈতির যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

“এই মেয়ে এমন কেন?আমাকে একটা ধন্যবাদও দিয়ে গেল না?আজব মেয়ে তো!এজন্যই মানুষ বলে নিজ থেকে উপকার করতে নেই।আমিও না!৫ টা মিনিট লস আমার।কিন্তু মেয়েটা কান্না কেন করতেছিল?যেই কারনেই কান্না করুক। আমার কি?আমার জেনে লাভ কি?”

ভেবেই বসা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেল।
পরেরদিন,
চৈতি সকাল সকাল উঠে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট খেয়েই কলেজে চলে গেল।নিজের সিটে বসতেই আশরাফ ক্লাসে প্রবেশ করল।চৈতি মনে মনে ভাবল এই লোকটাই কেন আমাদের ক্লাসে পরল?দুনিয়াতে কি স্যারের অভাব পরছিল?আশরাফ ক্লাসে প্রবেশ করেই চৈতির দিকে এক পলক তাকাল।দেখল চৈতি মাথা নিচু করে বসে আছে।আশরাফ হালকা কেশে বলল,

“সবাই সোজা হয়ে বসুন।স্পেশালি মিস চৈতি আপনি।নাকি সোজা হয়েও বসতে পারেন না?”

আরশি চৈতিকে বলল সোজা হয়ে বসতে।চৈতি সোজা হয়ে বসে ব্লাকবোর্ডের দিকে তাকাল।আশরাফ আর কিছু না বলে ক্লাস করানোতে মনযোগ দিল।ক্লাসে শেষে চৈতি আরশিকে বাই বলে রাস্তা দিয়ে হাটছিল।হঠাত শুভ্রকে সামনে দেখে দাড়িয়ে গেল।শুভ্রও চৈতিকে দেখে অবাক হয়ে গেছে।মনে মনে ভাবল,
“এই মেয়েকে সব জায়গাতেই দেখি কেন?”

চৈতি হঠাত দেখল শুভ্র দৌড়ে এসে চৈতির হাত ধরে রাস্তার পাশে নিয়ে আসল।চৈতি প্রথমে কিছু না বুঝল না।শুধু পাশে তাকিয়ে একটা ট্রাককে চলে যেতে দেখল।

“কানে শুনেন না নাকি আপনি?পিছনে ট্রাক আসছে খেয়াল নাই?নাকি সুসাইড করার জন্য দাড়িয়ে ছিলেন?”

চৈতি ব্যাগ থেকে একটা খাতা আর কলম বের করে কিছু লিখে শুভ্রের হাতে দিল।শুভ্র ভ্রু কুচকে খাতাটা নিয়ে দেখল,

“গতকালের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত।আসলে আমি বুঝতে পারিনি আপনি যে লিফট খোলা রাখার কথা বলছিলেন।আর যখন বুঝলাম তখন লিফট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।টিস্যু দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। সাথে এখনের জন্যও।আর হ্যা আপনি ঠিক বলেছেন আমি কানতে শুনতে পাই না।সাথে কথাও বলতে পারি না।নয়তো মুখেই আপনাকে ধন্যবাদ দিতাম।আসি।ভালো থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।”

শুভ্র লেখাটা পড়েই স্তব্দ হয়ে গেল।ও কিনা মেয়েটাকে কি না কি ভেবেছিল।নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে।চৈতি ততক্ষনে খাতা নিয়ে চলে গিয়েছে।
শুভ্র বাসায় গিয়ে ইউটিউবে সার্চ দিল কিভাবে সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলতে হয়।শাওন ওকে এসব করতে দেখে বলল,

“কিরে তুই হঠাত এসব শিখছিস কেন?”

“একজনের সাথে কথা বলব তাই।”

“অই একজন টা কে?কোন মেয়ে?”

‘তুই বেশি কথা বলিস।তোর কাজ তুই কর।আর আমার কাজ আমি করি”

“হ্যা হ্যা এখন তো এইসবই বলবি পুরান হয়ে গেছি না।নতুন বন্ধু পাইছো বলে কথা!”

“তুই কি যাবি এখান থেকে?নাকি আমি বের করব তোকে?”

“আরেকটা কথা।এটাই লাস্ট।”

“বল।”

“দোস্ত মেয়েরা কে রে?কেমন দেখতে?কিসে পড়ে?কই থাকে?”

শুভ্র শাওনের দিকে তাকাতেই শাওন দাত কেলিয়ে বলল,

“মজা করছিলাম দোস্ত।এমন করস কেন?যাইতাছি তো!”

বলেই রুম থেকে চলে গেল।শুভ্র শাওনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লেপটপে মনযোগ দিল।
বিকেলবেলা,
শুভ্র হাঁটতে বেরিয়েছিল।হঠাত চৈতিকে দোকানের সামনে দেখে থেমে গেল।অতঃপর কি একটা ভেবে দোকানে গিয়ে বলল,

‘মামা এক কেজি তেল দেন তো!”
দোকানদার ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘এক কেজি?নাকি এক লিটার?”
যে ছেলে কোনদিন দোকান থেকে তেল, ডাল কিনে নি সে কি করে জানবে তেল কেজি তে না বরং লিটারে মাপা হয়?বিড়বিড় করে শুভ্র কোনমতে হেসে বলল,

“অই তো অই আরকি!এক লিটার তেল দেন।”

বলেই চৈতির দিকে তাকিয়ে দেখল চৈতি মোবাইলেে নোটে কি যেন টাইপ করছে।শুভ্র উঁকি দিয়ে লেখাটা পড়ে বলল,

“আর ভাইয়া ওকে এক ডজন ডিম দেন।আমার তেল পরে দিলেও চলবে।”

দোকানদার এক ডজন ডিম চৈতির দিকে দিতেই চৈতি অবাক হয়ে পাশে তাকিয়ে শুভ্রকে দেখল।দোকানদারকে টাকা দিয়ে চৈতি দোকান থেকে বের হতেই শুভ্রও বের হলো।চৈতি মোবাইলে লিখল,

“আপনি কি করে জানলেন যে আমার ডিম লাগবে?”

শুভ্রকে লেখাটা দেখাতেই শুভ্র পকেট থেকে মোবাইল বের করে লিখল,

“আপনার লেখা দেখে।”

“অহ আচ্ছা।”

এইবার শুভ্র চৈতির সামনে দাঁড়িয়ে ইশারায় বলল,

“আমার নাম শুভ্র।আপনার?”

শুভ্রকে সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলতে দেখে চৈতি অবাক হয়ে তাকাতেই শুভ্র বলল মাথা চুলকে বলল,

“অই একটু আকটু পারি আরকি।আপনার নামটা কিন্তু বললেন না।”

“চৈতি আমার নাম।”
শুভ্র চৈতির ইশারা না বুঝে বলল,

“এটার মানে কি?আমি বুঝিনি।”

চৈতি মোবাইলে টাইপ করে শুভ্রকে দেখাল।নাম দেখে শুভ্র বলল,

“অহ আচ্ছা।”

লিফটে ঢু*কেই কিছুক্ষন চুপ থাকার পর শুভ্র বলল,

“কয়তলা থাকেন আপনি?”

“চারতলা।”

‘আমি পাঁচতলায় থাকি।কোন দরকার হলে বলিয়েন।”

চৈতি উপর নিচে মাথা নাড়ালো।
অতঃপর দুইজনের মাঝে আর কোন কথা হলো না।লিফট চার তলায় আসতেই শুভ্র বলল,

“বাই।ভালো থাকবেন।”
চৈতি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে লিফট থেকে নেমে গেল।শুভ্রও নিজের বাসায় চলে গেল।
#চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে