#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#সুচনা_পর্ব
২০ টা বিয়ে ভেং*গে যাবার পর ২১ নম্বর বিয়েটাও যে ভাং*বে তা নিয়ে নিশ্চিত ছিল চৈতি।আর হলোও তাই।পাত্রপক্ষ বাসায় এসে মেয়ে দেখতে চাইলেই চৈতিকে তার কাজিনেরা সাজিয়ে ড্রয়িংরুমে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো।যথারীতি আগেরবারগুলোর মতোই সবাই ওর সৌন্দর্যের প্রশংসা করল।তারপরই পাত্রের মা পান চি*বুতে চি*বুতে বললেন,
“তা মেয়ে তোমার নাম কি?”
উত্তর দিতে পারল না চৈতি।চৈতির মা বলল,
“ওর নাম চৈতি।”
-“বাহ্ বেশ সুন্দর নাম।শুনলাম সবে কলেজে উঠেছো।”
এবারও চৈতির মা-ই উত্তর দিলেন।
“বয়স তো কম।তা রান্না বান্না জানো তো?”
“হ্যা ও রান্না অনেক ভালো করেই জানে।”
“তা তো বুঝলাম।কিন্তু সব কথার উত্তর আপনি কেন দিচ্ছেন?আমি চৈতি মাকে জিজ্ঞেস করেছি।”
“আসলে ও একটু লজ্জাবতী তো।অপরিচিত মানুষের সাথে সহজে কথা বলে না।”
“হুম।লজ্জা থাকা ভালো।”
আরও কিছু বলতে যাবার আগেই চৈতি পাশ থেকে খাতা কলম নিয়ে কি যেন লিখে মহিলার হাতে দিলেন।মহিলা ভ্রু কুচকে তার ছেলেকে বললেন,
“কি লিখেছে দেখতো।আমি আমার চশমাটা আনতে ভুলে গিয়েছি।”
মার কথা শুনে আশরাফ খাতাটা নিয়ে লেখাটা পড়ে কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে বসে রইল।
“কি হলো কি লিখেছে?”
“আম্মু,উনি কথা বলতে পারেন না আর কানেও শুনতে পান না।”
“কিহ?আপনারা এই কথা আগে বলেন নি কেন?”
“আমরা বলতেই যাচ্ছিলাম।আমরা……”
“আপনার কাহিনি শুনতে আমি আসি নি।আমি আমার ছেলেকে এই মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারব না।আশরাফ আয়।”
“আমার কথাটা তো শুনুন…..”
কিছু না শুনেই পাত্রপক্ষরা চলে গেল।চৈতির মা দপ করে সোফায় বসে পড়লেন।অতঃপর উঠে মেয়ের কাছে গিয়ে স*জোড়ে দুইটা চ*ড় বসিয়ে দিলেন।
“শান্তি হয়েছে তোর?এইবারের বিয়েটাও ভেং*গে গেল।আমি তোকে নিয়ে আর পারিনা। তোকে জম্ম দেওয়াটাই আমার পাপ হয়েছে।জানিনা এই পাপের খে*শারত কতদিন দিতে হবে।”
চৈতি ওর মার কথাগুলো শুনতে না পেলেও লিপ রিডিং করে সবগুলো কথা বুঝল।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে ওর।কিন্তু একটা ফ্যামিলিকে কি করে ঠ*কাবে সে?আর সবচেয়ে বড় কথা ওরা তো পরে জানতে পারবেই।তখন কি উনারা মেনে নিবে?
কিছুতেই না।চৈতি কিছু না বলে চুপ করে নিজের রুমে চলে গেল।বিছানায় বসে আনমনে সামনে থাকা চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে রইল।নিজের এই অক্ষমতার কারনে ওর সব বন্ধুরা ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।এখন সবাই ওকে নরমাল মানুষ বলে না বরং এবনরমাল বলে।এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।রাতের খাবার না খে*য়েই ঘুমিয়ে পরল।
.
.
পরদিন,
চৈতি কলেজে গিয়ে রুমের শেষের বেঞ্চটাতে গিয়ে বসে পরল।এটাই ওর সিট।সবার শেষে।কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা মেয়ে এসে চৈতির পাশে বসলো।মেয়েটাকে দেখেই চৈতির মুখে হাসি ফুটে উঠল।
আরশি হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
“কিরে কেমন আছিস?”
চৈতিও হাত ইশারা করে বলল,”হুম ভালো।”
“তোর বিয়ের কি খবর?পাত্রপক্ষ রাজি হয়েছে?”
“নাহ।”
“আমি বুঝিনা ওরা কেন রাজি হয় না।কানে শুনতে না পারা, কথা বলতে না পারাটা কি অপরাধ?তুই তো ইচ্ছা করে এমন হসনি।”
“কেউই চায় না তার ছেলে বধির,বোবা মেয়েকে বিয়ে করুক।এতে ওদেরই বা দোষ কোথায় বল!”
“আমি যদি ছেলে হতাম তোকে নির্ঘাত বিয়ে করতাম।
চৈতিঃআবার শয়*তানি শুরু করে দিয়েছিস?”
“আরে শ*য়তানি না।সত্যি।তুই জানিস না তোকে ফ্রেন্ড হিসেবে পেয়ে আমি কত্ত লাকি।”
“হইছে।পা*ম দেওয়া লাগবে না।”
বলতে বলতেই ক্লাসে টিচার প্রবেশ করল।আরশি ইশারায় বলল,
“স্যার এসেছে।”
চৈতি সামনে তাকাতেই শক খেল।
“হ্যালো!আমি আশরাফ। আপনাদের নতুন ম্যাথ টিচার।সবাই নিজ নিজ পরিচয় দিন।”
সবাই একে একে পরিচয় দিতে দিতে চৈতির পাল্লা আসল। আরশি ওর হয়ে বলল,
“স্যার ওর নাম চৈতি।”
“কিন্তু আমি তো আপনাকে জিজ্ঞেস করিনি।ওর পরিচয় ও দিবে।আপনি কেন দিবেন?”
এরমধ্যেই একজন মেয়ে বলে উঠল,
“স্যার ও বোবা। সাথে কানেও শুনতে পায় না।”
“এই কলেজে যে এমন স্টুডেন্ট আছে জানতামই না।জানলে কোনদিন জয়েন হতাম না।”
“স্যার ও বোবা,বধির হতে পারে কিন্তু ও এতটাও খারাপ ছাত্রী না। আপনার পড়া বুঝাতে কোন অসুবিধা হবে না।”
“অহ, তাই নাকি?”
আশরাফ কিছু না বলে ব্লাকবোর্ডে একটা অংকের প্রশ্ন তুলে দিয়ে বলল,
“এই অংকটাকি কেও পারো?একচুয়ালি আমি পারি না।”
সবাই বলে উঠল, “নাহ স্যার।”
“চৈতি যেহেতু এত ভালো স্টুডেন্ট সেহেতু ও পারবে আমি সিউর।”
অতঃপর চৈতিকে উদ্দেশ্য করে আশরাফ বলল,
“মিস চৈতি। প্লিজ এই অংকটা করে আমাদের সবাইকে বুঝিয়ে দিন।”
আরশি অংক দেখে বলল,
“কিন্তু এই চ্যাপ্টার তো আমাদেরকে এখনো করানো হয়নি।”
“আপনিই তো বললেন ও অনেক ভালো স্টুডেন্ট।আমার বিশ্বাস ও এই অংকটা পারবে।ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টদের এত অংক করা লাগে না।ওরা সব অংকই পারে।কই মিস চৈতি আসুন।একটু পর ঘন্টা দিয়ে দিবে।”
চৈতি ব্লাকবোর্ডের দিকে এগিয়ে গেল। গিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল।
“কি হলো অংকটা করুন?আই থিংক কথা আর শ্রবনশক্তির সাথে সাথে উনার ব্রেনটাও আকাশে উড়ে গেছে।”
এই কথা শুনতেই সারা ক্লাসে হাসির রোল পরে গেল।চৈতি মাথা নিচু করে আছে।উনি কেন ওর সাথে এরকম বিহেভ করছে তা বুঝতে পারছে না।এই অপমানগুলো করার মানে কি?চোখ ফে*টে কা*ন্না আসছে চৈতির।কিন্তু ও ওর কা*ন্না কাওকে দেখাতে চায় না।
“যান।সিটে গিয়ে বসুন।অহ আপনি তো আবার কানে শুনেন না।মিস আরশি আপনার বান্ধবীকে সিটে বসতে বলুন।”
.
.
“আমি বুঝলাম না।উনি তোর সাথে এরকম ব্যবহার করল কেন?মানুষের অ*ক্ষমতা নিয়ে ঠা*ট্তা করতে মনে হয় উনার ভালো লাগে।বা*জে লোক কোথাকার।”
চৈতি হালকা হেসে ইশারায় বলল,
“উনিই গতকালকে আমাকে দেখতে এসেছিলেন।”
“কিহ?তারমানে উনি সবটা জেনেও তোকে এতগুলা কথা শুনালো?কি আজব লোক!”
“বাদ দে।আমি কিছু মনে করিনি।এসব শুনতে শুনতে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।”
“ভালোই হয়েছে তোর সাথে উনার বিয়েটা হয়নি।নয়তো ভবিষ্যতে তোকে উঠতে বসতে অ*পমান করত।”
চৈতি হেসে বলল,
“অ*পমান করলেও ভালো হতো।এটলিস্ট বিয়েটা তো হতো।আম্মুর চিন্তিত মুখ দেখতে আমার ভালো লাগে না।”
“দেখিস একদিন এক রাজপুত্র এসে তোর সব ক*ষ্ট দুর করে দিবে।”
“রাজপুত্র?আমাকে রিকশাওয়ালাও বিয়ে করবে না।রাজপুত্র তো দুরের কথা।”
“দেখ এবার কিন্তু তুই নিজেকে নিজে অপমান করছিস।আমার কথা ভবিষ্যতে মিলিয়ে নিস।বলব কথা ভবিষ্যতে।”
চৈতি হেসে দিল আরশির কথা শুনে।অতঃপর বলল,
“দেখা যাবে। ”
.
.
“লিফটের দরজাটা ব*ন্ধ করবেন না প্লিজ।”
লিফটে উঠতেই লিফটের বাইরে থাকা ছেলেটা লিফটের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে কথাটি বলে উঠল।চৈতি ছেলেটার কথা বুঝে উঠার আগেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।শুভ্র লিফটের গায়ে রাগে স*জোড়ে পা দিয়ে বা*রি দিল।
“আচ্ছা বেয়া*দপ মেয়েতো!আমি ওকে বললাম লিফটের দরজা খো*লা রাখতে আর ও কিনা ভ্যাব*লার মতো তাকিয়ে রইল?ইচ্ছা করে এমন করছে অই মেয়ে।ভ*দ্রতার ভ ও শিখেনাই।আর একবার খালি দেখা হোক ভ*দ্রতা শিখিয়ে দিব।”
চলবে….