#তুই_আমারই_থাকবি?
#Esrat_Jahan?
#Part_36(প্রথম অংশ)
!
‘কাচ ভাঙ্গার শব্দটা প্রচন্ড জোরে কানে এসে লাগলো।চোখগুলো কেমন লেগে আছে,খুলতে কষ্ট হচ্ছে।মাথায় প্রচন্ড ব্যথা।তাও ধীরেধীরে কোনোমতে চোখ খুলে নিজেকে অন্ধকার একটা জায়গায় আবিষ্কার করলাম।নড়েচড়ে ওঠতেই বুঝতে পারলাম,আমি গাড়িতে।কিন্তু গাড়িটা অচেনা ঠেকলো আমার কাছে।
।
হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে উঠতেই সবকিছু মনে পড়ে গেলো।মাথাটা ঝাড়া দিয়ে সোজা হয়ে বসতেই সামনে কারো চিৎকার শুনতে পেলাম।গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ফ্লুরোসেন্ট আলোয় দেখলাম,আরহাম ভাইয়ার সেই বন্ধুটা!নামটা এ মুহূর্তে কিছুতেই মনে পড়ছে না আমার।পাশ ফিরতেই দেখি,হাতে ইয়া বড় একটা রড নিয়ে আবরার গুন্ডা ওর হাতে আঘাত করলো। আর রাফাত,, হুম মনে পড়েছে এই গুন্ডার নাম রাফাত ছিলো। যাইহোক, রডের আঘাত পেয়ে শয়তানটার হাত ভেঙ্গে গেলো, চিৎকার করে ব্যাটা নিচে বসে পড়লো।আবরার ওকে আবার একটা লাথি দিয়ে দুহাত দূরে ফেলে দিয়ে রড দিয়ে ইচ্ছামতো পায়ে আর পিঠে বারি দিতে থাকলো। রেগেমেগে উনি ফায়ার হয়ে গিয়েছেন।আমি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে উনাকে গিয়ে ধরলাম।বললাম, উনাকে এভাবে মারছেন কেন?
।
উনি কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে আবারও রাফাতটাকে মাটি থেকে তুলে গালে প্রচন্ড জোরে দু দুইটা থাপ্পড় মারলো,আর তাতে রাফাতটার গাল কেটে রক্ত বের হয়ে এলো। আমি এ অবস্থা দেখে রেগে উনাকে টেনে একপাশে এনে একটা থাপ্পড় মেরে বললাম,কি পাগল হয়ে গিয়েছেন নাকি?এভাবে কেউ মারে?ও তো মরে যাবে!!
।
মরে গেলেই ভালো, ওকে আজ মেরেই ফেলবো।
।
কিন্ত কেন?কি করেছে উনি?
।
উনি এবার অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।হতভম্ব গলায় জিজ্ঞেস করলেন,তোমার সাথে যা হয়েছে তার পরেও তুমি এসব বলছো?
।
অবাক হয়ে বললাম, কি হয়েছে আমার সাথে?
।
মানে?এই রাফাত তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছিলো আর তুমি আমায় জিজ্ঞেস করছো তোমার সাথে কি হয়েছে?
।
সিরিয়াসলি?
।
আজব!আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না?
।
হচ্ছে,আসলে আমি ভাবিনি এমনটা হবে!
।
ওকে আজ মেরেই ফেলবো।ওর লুচ্চামো স্বভাব যদি আজ না ছাড়াই তাহলে আমিও আবরার চৌধুরী না।বলতে বলতেই তেড়ে যেতে লাগলো ওর দিকে…….
।
আমি উনাকে পেছন থেকে টেনে ধরে বললাম, এসব না করে ওকে পুলিশের কাছে দিয়ে দিন।
।
উনি ভেবে বললেন, পুলিশকে তো বলেছিই,ওরা আসছে,বাট ওকে তো একটু পিটাতে হবে। নইলে রাগটা মিটবে না!বলেই উনি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন।
।
তারপর ঘুরে রাফাতটার কাছে গিয়েই দিলেন আরেকটা লাথি ওর পিঠ বরাবর।তাতেই ও লুটিয়ে পড়লো একটা পাথরের উপর, তাতে ওর মাথা ফেটে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো।
।
।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রাঙ্গামাটি থানা থেকে পুলিশরা এলো। এসে অজ্ঞান অবস্থায়ই রাফাত শয়তানটাকে ধরে নিয়ে গেলো।
।
এসব আজগুবি ঘটনায় আমি বেশ বিরক্ত হলাম।প্রায় মধ্যরাত হতে চললো।পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঘাপটি মেরে বসে আছে ঘন অন্ধকার। দু’চোখ ঘুমে লেগে আসছে।মাথায় একশো একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।ইচ্ছে হচ্ছে রাস্তায়ই ঘুমিয়ে পড়ি।কিন্তু তা আর হলো কই,,আমার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে আবরার গুন্ডা আমার হাত ধরে টানতে লাগলেন।
।
আরে,, কি হচ্ছেটা কি?
।
কিছু হচ্ছে না,তুমি এতো রাতে রিসোর্টের বাইরে এসেছো কেন?
।
আমার ইচ্ছে তাই,আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই।যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবো!
।
তুমি জানো,ও তোমায় কিডন্যাপ করতে এসেছিলো, বুঝেছ তুমি?গলা ফাটিয়ে বললো উনি,,,
।
বাই দ্যা ওয়ে আপনি এসব জানলেন কিভাবে? এখানে আসলেনই বা কিভাবে? আর আপু,ভাইয়া,আনিকা ওরা এসব জানে?
।
উনি একথা শুনে কিছুক্ষণ গুম মেরে বললেন, না ওরা কেউ জানে না।এতরাতে ওদের ডিস্টার্ব করার ইচ্ছে হয়নি!আর রাফাত নিজেই আমাকে ফোন করে বলেছে যে ও তোমাকে কিডন্যাপ করেছে।
।
আর আপনি নায়ক সেজে আমাকে বাঁচাতে চলে এসেছেন?
।
দেখো,বাজে কথা বন্ধ করো।এমনিতেই…. যাইহোক,,এখন চলো।বলেই আমার হাত ধরলেন।
।
আমি একবার উনার মুখের দিকে আর আরেকবার হাতের দিকে তাকিয়ে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলাম।উনার প্রতি আমার রাগ নেই,যেটা আছে সেটা অভিমান,এক আকাশ সমান অভিমান।উনার প্রথম করা খারাপ আচরণ গুলো আমার মনে দাগ কেটে দিয়েছে। দাগটা এতোটাই গভীর যে কোনো কারণ ছাড়াই আমি উনার সাথে খারাপ আচরণ করছি।এখনো ঠিক তাই হচ্ছে,অভিমান প্রচন্ড অভিমানে আমার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে।শিহরণ বয়ে যাচ্ছে সারা মনে।গলায় শান্তভাব এনে বললাম,হাতটা ছাড়ুন।
।
উনি আচমকা তাকিয়ে বললেন, কেন?
।
ভালো লাগছে না।তাই।রেগে রেগে বললাম।পাগল পেয়েছেন আমায়?
।
।
।
উনার উত্তর না পেয়ে আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি,উনি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন।গম্ভীর গলায় বললেন, ঠিক আছে,তুমি তো আমায় ভালোবাসো না,তাই তো?
।
কতবার বলবো?
।
উনি চোখমুখ শক্ত করে বললেন, আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই।তুমি ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো।আমি সেটা নই।যাও তোমাকে আমি মুক্ত করে দিলাম,যেখানে ইচ্ছা যাও।
।
চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে কাহিনী দেখছি।বাংলা সিনেমা যে আমার জীবনে ও ঘটবে, ভাবতে পারিনি।
।
কি হলো যাও?দাঁড়াবে না এখানে, আমার সামনে। যাও,,,,,যাও ফার্স্ট ফার্স্ট!
।
একথা বলতে বলতেই উনি উনার গাড়ির জানালার কাঁচে প্রচন্ড জোরে একটা ঘুসি দিলেন,তাতে কাঁচ ভেঙে উনার হাত কেটে যায়।
।
আমি দৌড়ে উনার কাছে যেতেই উনি মাঝপথে আমাকে থামিয়ে উনার কাছে যেতে নিষেধ করলেন।আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছি তাও উনি উনার হাত দিয়ে ইচ্ছেমতো গাড়িতে বারি দিতে লাগলেন।এতে হাত পুরো রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে।আমি উনাকে থামতে বললেও উনি থামছেন না।
।
আমি কেঁদে বললাম,প্লিজ থামুন এমন করছেন কেন?
।
তুমি আমাকে ভালোবাসো না,আমি মরে যাবো।
।
না না, আমি ভালোবাসি আপনাকে প্লিজ থামুন এবার।কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লাম।
।
উনি একরাশ কষ্ট নিয়ে হেসে বললেন, আবরারকে মিথ্যে বলা?তুমি আমায় বোকা পেয়েছ ইউ ডাফার গার্ল।?
।
আমি সত্যি বলছি,প্লিজ বিলিভ মি!বলতে বলতে উঠে দাঁড়িয়ে উনার দিকে যেতেই উনি হাতে কাঁচের টুকরো নিয়ে অন্য হাতের শিরাতে ধরে বললেন, তুমি আমাকে, এই আবরারকে সান্ত্বনা দিচ্ছো?দয়া করছো?আমি কারো দয়া নিই না,বুঝেছ!আর আমি মরে গেলে তুমি আমাকে বুঝবে,আমার ভালোবাসাকে বুঝবে!গট ইট!
।
এই বলে হাতের শিরাতে কাচ লাগাতে যাবেন তার আগেই আমি উনার কাছে গিয়ে হাত থেকে ওটা ফেলে দিয়ে ঠাস করে উনার গালে চড় মেরে বললাম,কি করতে যাচ্ছিলেন? পাগল হয়ে গিয়েছেন?আমি তো বলেছিই আপনাকে ভালোবাসি,ভালোবাসিইই!তাহলে এরকম করছেন কেন!!
।
উনি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
।
আমি আবারও বললাম, শুধু একটু অভিমান করেছিলাম আপনার সাথে,আর আপনি এখানে হাত-পা কেটে বাজে সিচুয়েশন ক্রিয়েট করতে চাইছেন।
।
চুপ… করে দাঁড়িয়ে আছেন।
।
এখন মুখে তালা কেন?এতক্ষণ ধরে বলছি বিশ্বাস হয় না আমাকে? আমি তো ভালোবাসিই আপনাকে!
।
মিথ্যে!! আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছো?লাগবে না….তুমি,,,, আ
।
উনি কিছু বলার আগেই উনার ঠোঁটে চুমু খেলাম গভীর ভাবে।তারপর জড়িয়ে ধরে বললাম, সত্যিই বলছি।আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি।
।
তাহলে ওইসময় এরকম করেছিলে কেন?
।
অভিমান হয়েছিলো।
।
কিসের?
।
বলবো না,আপনার হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে।প্লিজ কিছু করুন……
।
উনি আমার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বললেন,কিছু করতে হবে না,তুমি আছো সেটাই অনেক।
।
আরে,,,ছাড়ুন আমায়।প্লিজ রক্ত মুছুন।’
।
চলবে…..