তুই আমারই থাকবি part-35

0
2072

#তুই_আমারই_থাকবি?
#Esrat_Jahan?
#Part_35
!
‘এসব আপনি কি বলছেন,মাথা খারাপ নাকি?

নাহ!আসলে কিসি খেতে মন চাইলো আরকি।

তাহলে আপনার ওই গার্লফ্রেন্ড এর কাছে যান।

আমার গার্লফ্রেন্ড তো তুমিই।দাও না একটা…..

চুপ করুন।আমার বয়ফ্রেন্ড আছে!!!

উনি রেগে আমার গাল চেপে ধরে বললেন, শোনো তুমি শুধু আমারই, আমারই থাকবে।সবসময় থাকবে,আজীবন থাকবে।আর তোমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে মিথ্যা কথা বলবে না,আমি জানি এগুলো তুমি ইচ্ছে করেই বলো।তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।সো,তুমি আমারই থাকবে।

আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন,বাজে কথা বন্ধ করুন।আমি এসব পছন্দ করিনা।সবসময় আপনার জোরাজুরি ভালো লাগে না।

জোরাজোরি করছি না,জাস্ট তোমার হতে চাইছি।

আমি মুখ ঘুরিয়ে প্রচন্ড রেগে বললাম, ছাড়ুন আমায়।লাগছে….কষ্ট হচ্ছে!

তুমি আমার।আর আমার দেওয়া কষ্ট তোমায় সহ্য করতে হবে। কজ তুমি আমার।

আমি আপনার না।শুনুন, আপনি আমায় ডিভোর্স দিয়ে অন্যকাউকে ধরুন।আমিও আরেকজনকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে থাকি।এতদিনে নিশ্চয়ই আপনার থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গিয়েছে!তাহলে এবার মুক্তি দিন আমায়।

উনি এবার আমার গাল ছেড়ে প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে বললেন, তুই আমার।এবং তুই আমারই থাকবি সবসময়। কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।আমি দেবো না।আমি মরে যাবো তাও তোকে আমারই থাকতে হবে। থাকতে হবে মানে থাকতেই হবে।

আপনার বিহেভ ঠিক করুন আগে।নইলে কোনো মেয়েই থাকবে না।আমি তো থাকবোই না!জাস্ট পালিয়ে যাবো।

উনি নিজের চুল দুহাতে খামচে ধরে বিছানার একপাশে বসলেন। বললেন,ওকে ওকে।আমি আর খারাপ বিহেভ করবো না।বাট তুমি প্লিজ এসব কথা বলবে না।বিকজ আই লাভ ইউ,আই রিয়েলি লাভ ইউ খুশবু।তোমাকে ছাড়া কিন্তু আমি কিছু ভাবতে পারিনা।তুমি প্লিজ এসব ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না।

উনার কথায় আনমনা হয়ে আমি তাকিয়ে রইলাম। ফর্সা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। লাল হয়ে আছে চোখগুলো, যেন কি কষ্ট চেপে আছেন।চুলগুলো এলোমেলো ভঙ্গিতে হাওয়ায় দুলছে।হলুদ আলোয় উনাকে কেমন সুন্দর দেখাচ্ছিলো। হুম,অদ্ভুত সুন্দর, এর আগে এতোটা সুন্দর উনাকে লাগেনি।দুচোখের গভীরে ভালোবাসার ছাপ।অদ্ভুত ভাবে ওই চোখগুলো যেন বলছে,উনাকে ছেড়ে না যেতে।উনার পাশে থাকতে।আচ্ছা,ছেলেরা কাঁদলে ওদেরকে কি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর লোকটা মনে হয়?হয়তো হয়!নইলে আমার এরকম লাগছে কেন?

আমি অদ্ভুত ভাবে উনার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।উনার পাশে বসে মুখটা উঁচু করে চোখগুলো টিস্যু দিয়ে মুছতে লাগলাম।

তারপর ফিরে আসার জন্য উঠে দাঁড়াতেই উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন, প্লিজ আমাকে আর কষ্ট দিও না,আমি নিতে পারছিনা!

আমি উনার হাত কোমড় থেকে ছাড়িয়ে কাটাকাটা গলায় বললাম, নাটক বন্ধ করুন প্লিজ।বলেই উনাকে তাচ্ছিল্য করে ঘুরে দাঁড়াতেই উনি আমার ওড়না টেনে ধরলেন।বললেন, নাটক করছি না আমি।

তাহলে এসব বন্ধ করুন।রাতারাতি এতো প্রেম হয়ে গেলো আমার প্রতি আপনার? আমার তো ডাউট হচ্ছে।

কিসের ডাউট?

আমাকে কিস করার জন্য এইসব, তাইনা?

যা করার সবসময় কি আমিই করবো?তুমি কখনোই আমাকে….

দে..খুন…সবসময় আপনার……

চুপ….একদম… প্লিজ এক বার।জাস্ট একবার তুমি… কেমন ঘোর লাগা কন্ঠ উনার!

উনার নেশাভরা কন্ঠে আমি কাঁপতে লাগলাম।দুহাত দিয়ে ঠেলে উনাকে সরিয়ে দিয়ে গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। বেরিয়ে যাওয়ার আগে পেছন ফিরে দেখি উনি দুহাতে মাথা চেপে ধরে মুখ নিচু করে বসে আছেন।দেখলে মনে হবে যেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।উনি ছলছল চোখে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।



উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার কেমন লাগলো। একরাশ কষ্ট বুকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম ঘর থেকে।নিজের কাছে নিজেকেই অচেনা লাগছে।কেন উনাকে নিজের করে নিতে এতোবার ভাবতে হচ্ছে আমায়?উনাকে ভালোবাসা স্বত্বেও কেন বলতে পারিনা আমি?উনি তো নিজের ভালোবাসার কথাটা প্রকাশ করে ফেলেছেন,আমি নিশ্চিত যে উনার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই,যদিও উনার মুখেই শোনা!তাও কেন আমি সহজ হতে পারছিনা?এই সহজ হবার বিষয়টাতে সবসময় আমিই কেন পিছিয়ে থাকি?কি করবো আমি?উনার এতো কষ্ট আমি কেন মুছে দিতে পারছিনা?
খেয়াল করে দেখি আমার দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি।

দু’চোখ মুছে পা বাড়ালাম সাদাফ ভাইয়ার রুমে।গিয়ে দেখি ওরা ঘুমুচ্ছে,অবেলার ঘুম।এই সন্ধ্যারাতে কেউ ঘুমায় নাকি?আপুদের রুমে যাওয়ার ইচ্ছে হলো না।পা ঘুরিয়ে হাঁটতে লাগলাম বাইরের দিকে।একটু প্রকৃতির কাছে যাওয়ার ইচ্ছে হলো, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য মনটা আকুপাকু করছে।

ভাবলাম রিসোর্টের বাইরে গিয়ে একটু হেঁটে আসি।তার আগে রুমে একটু উঁকি দিয়ে আসলাম।দরজাটা হালকা ফাঁক করে দেখি,উনি আগের মতোই উস্কুখুস্ক মেরে বসে আছেন।চুল এলোমেলো, চোখ লাল,গড়িয়ে পড়ছে পানি।দেখে আমার বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম নিজের অজান্তেই। আমার অবচেতন মন হয়তো এটাই চেয়েছিলো।

উনি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমাকে ছেড়ে যাবে না প্লিজ,পাগল হয়ে যাবো আমি তাহলে।

আপনি চুপ করুন তো।সিরিয়াস মুডটা বাদ দিয়ে এখন ঘুমান।

তাহলে বলো আমাকে ছেড়ে পালাবে না?

আমি মজা করে বললাম, আমি আপ-
নার মতো লম্বুকে নিয়ে পালাবো নাকি?একা একাই পালাবো।

উনি অস্ফুট স্বরে কি যেন বললেন, তাকিয়ে দেখি উনি ঘুমিয়ে কাদা!!!

এটা কি হলো?ঘুমালো কখন গুন্ডাটা?ওহহহ,,বলেছিলো তো উনি ঘুমাবে, সেই ঘুম এখন?আমাকে তো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। তাই আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে উঠালাম।উনি আমার কোলে মাথা রেখে বললেন, ডিস্টার্ব করবেনা,আমি ঘুমাবো।

শুনুন, আমি আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি না।এসব ন্যাকামি বন্ধ করুন।আপনি ঘুমান আপনার মতো, আমাকে ছাড়েন,ভালো লাগছে না এসব ন্যাকামি।আর…

এটুকু বলতেই উনি আমার ওড়নাটা সরিয়ে পাগলের মতো গলায়, মুখে চুমু দিতে লাগলেন।

আচমকা আমি ফ্রিজড হয়ে গেলাম।হুঁশ ফিরতেই আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।ওড়নাটা গায়ে জড়িয় উঠে দাঁড়াতেই উনি একটান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলেন আমায়।।

উনার চোখের দৃষ্টি দেখে ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপাকাঁপি করছে।লাল টকটকে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে,বেশ সুন্দর লাগছে যদিও।আমার ওড়নাটা
আবারও সরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে উনার রাগ মেটাচ্ছেন।গলায়,গালে,মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছেন।

এবার আমি আর আমার রাগ চেপে রাখতে পারলাম না।প্রচন্ড এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম উনাকে।উনি আবারও এগিয়ে আসলে আমি প্রচন্ড জোরে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলাম।পুরো পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গিয়েছে। গাল জ্বলছে বোঝাই যাচ্ছে।

উনি হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।


আমি চিৎকার করে বললাম, এসবই জানেন আপনি। আপনার কাছ থেকে এসবই আশা করা যায়।আর ঠিক এই কারণের জন্যই আমি আপনার থেকে মুক্তি চাই।নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন এতদিন,আমি কিছু বলিনি, বাঁধা দিইনি।কিন্তু আজ আপনি সব লিমিট ক্রস করে ফেলেছেন।
এর জন্য আপনাকে চাইলেও ক্ষমা করতে পারবো না।

উনিও বললেন, তোমার ক্ষমা আমি চাই না।আমি শুধু তোমাকে চাই,আর কাউকে না।তোমাকে আমারই থাকতে হবে। সবসময়ের জন্য।নইলে বেঁধে রাখবো!!

এরকম লো ক্লাস মেন্টালিটির লোকের সাথে থাকতে আমার ঘৃণা হচ্ছে।বলেই আরও একটা ঠাস করে থাপ্পড় মারলাম।

উনি আমার হাত চেপে ধরে বললেন,আমাকে মেরে ফেললেও সমস্যা নেই,কিন্তু আমারই থাকতে হবে।বলেই ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলেন।

আমি উনাকে সরিয়ে একরাশ ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম উনার দিকে।তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম বাইরে।

সোজা রুম থেকে বেরিয়ে রিসোর্টের বাইরে চলে এলাম।দূরের পাহাড়গুলোর দিকে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।তখন বেশ রাত হয়ে গিয়েছে। আশেপাশে মানুষজন নেই।কুয়াশারা ধোঁয়ার মতো উড়ে বেড়াচ্ছে,অন্ধকার লেগে আছে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে।


রিসোর্ট থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি আমি।তাও ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।রাস্তার পাশের একটা কাঠের বেঞ্চিতে বসে পড়লাম।গলা শুকিয়ে কাঠ,হঠাৎ করেই প্রচন্ড পানি খাবার ইচ্ছে হচ্ছে।এরকম যে একটা আস্ত নদীর পানি খেয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।চুলগুলো হাতখোপা করে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।

হঠাৎ করেই কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা গাড়ি এসে থামলো আমার সামনে।অন্ধকারে কেউ আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো। কেউ একটা রুমাল আমার মুখে চেপে ধরায় আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।’

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে