তুই আমারই থাকবি part-32

0
1922

#তুই_আমারই_থাকবি?
#Esrat_Jahan?
#Part_32
!
‘আপনাকে এতো বোঝতে হবে না।দেখতে চেয়েছিলেন দেখিয়েছি।এখন এতো রাতে আপনার গবেষণা বন্ধ করুন।আর বাসায় ফিরে গিয়ে ধন্য করুন!

কেন?

আরে আজব তো!ঢ্যাঙ্গার মতো লম্বা শরীর নিয়ে সারারাত কি কচুবাগানে বসে থাকবেন? যত্তসব।

এই পকপক বন্ধ করো তো।এত সুন্দর একটা রাতে হাওয়া খেতে বেরুলাম আর তুমি পকপক শুরু করলে?বিরক্তিকর।

ওহহ…আমি তো বিরক্তিকরই।থাক,আমি হাওয়া খান একা একা,স্যরি গার্লফ্রেন্ডকে ফোন করে দেখাতে ভুলবেননা কিন্তু।

বাট গার্লফ্রেন্ড তো অলরেডি দেখে ফেলেছে!

আমি উনার কথাটা ধরতে পারলাম না।আস্তে করে কিছু বলার আগেই আকাশে ঝিলিক দিলো বিদ্যুৎ!
আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেলো। আমি উনাকে বললাম, আসুন বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে!!

বৃষ্টি হলে আমি কি করবো?

মানে?বৃষ্টি হলে কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজবেন নাকি?

ভিজলে কি হবে?

মানে?

ভিজলে কি হবে?কিছু তো হবে না?তাহলে বাসায় গিয়ে কি করবো?এমনিতেই তোমাদের বাসায় একগাদা মানুষ! আমার তো দমবন্ধ হয়ে আসছিলো,মাই গড!
উনি জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন।

উনার অবস্থা দেখে আমার হাসি পেয়ে গেলো।আমি মিটিমিটি করে হাসছি।আর উনি তাকিয়ে আছেন।হঠাৎ করেই কচু পাতার সবচেয়ে বড় একটা পাতা নিয়ে আসলেন।

আমি ভ্রু কুঁচকে সন্দেহী গলায় বললাম, কি?এতে কি হবে?

কাজ হবে।

কিসের কাজ?

বৃষ্টি হলে ছাতার কাজ করবে,তুমিই তো বলেছিলে।এখন এক্সপেরিমেন্টটা করে ফেলি।

অসহ্য। এত রাতে ঢ্যাঙ্গা শরীর নিয়ে করবে নাকি এক্সপেরিমেন্ট। বলি,রাস্তাঘাট কি আপনার এসব ফালতু এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য তৈরি করা হয়েছে?

মোটেও আমায় ঢ্যাঙ্গা বলবে না।আমি যথেষ্ট ফিট।
জানি জানি।লম্বায় দশহাত,দেখলে মনে হয় বাঁশগাছের বাঁশ!

তুমি কিন্তু আমায় ইনসাল্ট করছো।রেগে বললেন!

ওকে বাদ দেন।এখন যাবেন কিনা বাসায়, বলুন।

উনি রেগে কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, না যাবো না।তোমাকেও যেতে দেব না।বৃষ্টি আসলে আসুক না আসলে নাই।এখানেই থাকবো।

আরে কি মুশকিল।

এই,পকপক বন্ধ না করলে এক থাপ্পড় দেব।

কচু!

উনার এসব আবালের মতো কাজকর্মে আমি ভীষণ বিরক্ত হলাম,কথা না বলে চুপ করে বসে আছি একটা বেঞ্চিতে।আর উনি পাশে বসে তাকিয়ে তাকিয়ে এদিক ওদিক দেখছেন।

হঠাৎ করে বাতাস বেশ জোরে বইতে লাগলো। গাছের পাতা উড়ছে অবিরাম।আমি বিরক্তি নিয়ে মাঠের সেই বেঞ্চিতেই বসে আছি।উনি খুশি খুশি গলায় বললেন,ওয়াও!কি সুন্দর ওয়েদার।ফ্যান্টাসটিক।

এমন করছেন কেন?জীবনেও দেখেননি নাকি?আজব!

আবার পকপক? বলতে বলতে আমার মুখের দিকে তাকালেন।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। বাতাসে উনার চুল উড়ছে অবিরাম।আমি মাথা নিচু করে চুটকি বাজিয়ে বললাম, কি মিয়া?ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেন?

উনি কিছু না বলে আবারও তাকিয়ে রইলেন।

ভূতে ধরলো নাকি?আমি মনেমনে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলাম।ভয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছি।ভাবছি উনাকে রেখেই সুযোগ বুঝে এক দৌড়ে বাসায় চলে যাবো।নইলে উনার ভূতটা আমার ঘাড়েও চাপবে!

আড়চোখে তাকিয়ে দেখি সেই, উনি তাকিয়েই আছেন।

আয়াতুল কুরসি পড়ে ভাবলাম দৌড় শুরু করি।যাই ভাবা সেই কাজ।চোখ খুলে দেখি উনি আমার মুখের কাছে এসে বসেছেন,আমার পাশে।আমি ভাবলাম এইবার শেষ!

উনি ধীরে ধীরে আমার চুলে হাত দিলেন।ভাবলাম শেষ, ঘাড় মটকে রক্ত খাবেন এবার।কিন্ত না, তা না করে হাতটা নিয়ে আসলেন সামনে।তাকিয়ে দেখি একটা পাতা,তাও শুকনো।হয়তো উড়ে এসে মাথায় লেগে গিয়েছিলো।

উনি হু হা করে হেসে বললেন,ভয় পেয়েছিলে বউ??

আমি মুখ কালো করে উনার চুল টেনে ধরে বললাম,এই ছিলো তোর মনে? আর আমি কি ভয়ই না পেয়েছিলাম।

কিহ বললে তুমি?তুইতুকারি করছো কেন?

ভয় দেখালি কেন?

আমি কাউকে ভয় দেখাইনি।তুমি নিজেই ভয় পেয়েছ।এখন তার দায় আমার উপর চাপাতে চাইছো।

তাহলে এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি?

আমার বউ!আমার যখন ইচ্ছা তাকাবো। তুমি বলার কে?চুল ছাড়ো আমার।

তাহলে শুনে রাখ!আমিও আমার বিলেতি বরের চুল ধরেছি।ছাড়বো না।

তুইতুকারি করছো কেন?

আমার ইচ্ছা।প্রথমদিন তুইও তো আমাকে তুইতোকারি করেছিলি।ভুলে গেলি?

না, অবশ্য তুইতোকারি করলেও প্রবলেম নেই।ইচ্ছে করলে তুমিও বলতে পারো!

আমি উনার চুল ছেড়ে দিয়ে রিল্যাক্স হয়ে বসলাম। বললাম, এই পাতাটার জন্য এতক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন আর আমি ভেবেছিলাম কি না কি,আপনাকে বোধহয় ভূতে পেয়েছে। বাবারে বাবা।

আর তুমি ভয় পেয়ে আমার থেকে পালাতে চেয়েছিলে।বলেই হা হা করে হাসতে লাগলেন।

আমি উনার হাসি দেখছি একমনে।এমন সময় আকাশ ভেঙ্গে নেমে এলো জল।উনি তাড়াতাড়ি কচুপাতা দিয়ে উনার মাথা আমার মাথা ঢাকলেন।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।উল্টো একটা দমকা হাওয়ায় কচু পাতা যে কোথায় উড়ে গেলো তার ইয়াত্তা পাওয়া গেলো না।

আমি রেগে কটমট করে তাকালাম।উনি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।ততক্ষণে দুজনেই ভিজে চুপচুপ।আমার সালোয়ার কামিজ,ওড়না সব ভিজে গিয়েছে।আর উনার পরণের পোলো শার্ট,হাফ প্যান্ট আর বিখ্যাত লুপার ভিজে চুপসে গিয়েছে।

কি হলো এটা?আপনার এসব ফালতু এক্সপেরিমেন্ট এর কবলে পড়ে সব হয়েছে।যত্তসব।

এখন তো সব আমারই দোষ, তাই না?আমি কি আটকে রেখেছিলাম তোমাকে?

আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। গিরগিটি বলে কি?এমন মিথ্যুক, নিজেই জোর করে আমায় বাসায় যেতে দেয়নি এখন বলে উনি নাকি আমায় আটকে রাখেননি।

আমি কটমট করে তাকানোর আগেই উনি তুলে নিলেন আমাকে উনার কোলে।তারপর হেঁটে চললেন বাসার দিকে।

আমি হাত পা ছুড়ে নামাতে বলছি,কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা। মুখ কালো করে বললেন, এত পাতলা কেন তুমি?আমার ডাম্বেলের ওজন ও তোমার থেকে বেশি।ইশ জুতো গুলো ভিজে পা কেমন করছে।ধুর….জুতো গুলো নষ্ট!

আমি হেসে বললাম, উচিৎ শিক্ষা হয়েছে।

দেখো…..’

!
চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে