#তুই_আমারই_থাকবি?
#Esrat_Jahan?
#Part_28
!
‘আপু কার সাথে যেন ফিসফিসিয়ে কথা বলছে।দেখে মনে হচ্ছে কাকে যেন কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কান পেতে শোনার চেষ্টা করছি।তখন মনে পড়লো উনি পানি চেয়েছিলেন। পানি আনার জন্য যেই ঘুরবো অমনি ফিরে দেখি উনি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে! দুহাত পকেটে ঢুকিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।পরণে টিশার্ট আর হাফ-প্যান্ট।পায়ে স্পঞ্জের জুতো। বুঝিনা সারাদিন পায়ে জুতো পরে রাখার কি দরকার!!ঘরে হোক, বাইরে হোক ঘুমানোর সময় বাদে সারাক্ষণ উনার পায়ে জুতো থাকবেই।আজব!
।
-আমাকে দেখেই উনি বললেন, মানুষের ঘরে আড়ি পাতা তোমার স্বভাব!
।
-শুনুন, আমার বোনের ঘর এটা।আর আমার বোনের ঘরে আড়ি পাতলে আপনার সমস্যা থাকার কথা নয়!
।
-অফকোর্স প্রবলেম।খুশির ও তো একটা প্রাইভেসি আছে।সে কি করছে না করছে,কার সাথে কথা বলছে না প্রেম করছে সেটা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার।কেউ তাতে আড়ি পাতবে আর একজন সচেতন নাগরিক হয়ে আমি সেটা বসে বসে দেখবো তা তো হতে পারে না!
।
-আসছে সচেতন নাগরিক। ব্যাটা ব্রিটিশ আসছে…..
।
-আমি মোটেও ব্রিটিশ না!কিন্তু সচেতন থাকার ট্রাই করি।আর জানিয়ে রাখি,তোমার বোন খুশি আমার ভাইয়ের সাথে প্রেম করছে,বুঝলে! সো এখন পানি নিয়ে রুমে আসো, আড়ি পাতার দরকার নেই।বলেই রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন…..
।
-উনার কথা শুনে আমি অবাকের সপ্তম পর্যায়ে পৌঁছলাম।রেশ কাটতেই তাড়াহুড়ো করে ডাইনিং থেকে পানি নিয়ে রুমে এলাম। পানির গ্লাস উনার হাতে দিয়ে বললাম,আপনি কীভাবে জানলেন?
।
-উনি তিন ঢোকে পানিটা শেষ করে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লেন। হাতে মোবাইলটা নিয়ে স্ক্রল করতে করতে বললেন,সেটা তোমার না জানলেও চলবে!
।
-প্লিজ প্লিজ বলুন না…..
।
-উহু….
।
-প্লিজ ভাই আপনার দুই পায়ে ধরি….প্লিজ বলুন না…কাঁদোকাঁদো ইনোসেন্ট ফেস করে বললাম!
।
উনি মোবাইলটা রেখে বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল।আই এম সো হ্যাপি!তোমাকে ডেফিনেটলি বলবো।বাট পায়ে ধরতে হবে না।একটা ছোট্ট শর্ত আছে….
।
ছোট্ট শর্ত যখন তাই ভাবলাম সোজাসাপটা কিছু। তাই আমিও ঠুসঠাস রাজি হয়ে গেলাম।
।
-উনি বললেন,ওকে….
।
তারপর উনি যা বললেন,তাতে চক্ষুচড়ক গাছ আমার।
।
….বললেন,উনার সব কথা শুনতে হবে।উনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুতে হবে।উনার অবাধ্য হলে থাপ্পড় খেতে হবে।উনার সব কথায় সায় দিতে হবে। আরো নানাকিছু যেগুলো বলা যাবে না….
।
এসব শর্ত শুনে আমি শুধু একটাই কথা বললাম,না না না।
।
-উনি বললেন,ডাফার মেয়ে!তোমার এসব কথা কে শুনবে?তুমি নিজেই শর্তে রাজি হয়েছো।হা হা করে বাঁকা হাসি দিলেন উনি।
।
আমার নিজের কপালে নিজেই থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে হলো। নিজেকে উনার গিনিপিগ মনে হচ্ছে। আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললেন,
।
-শুনো,খুশিকে আমার ভাই প্রথম দেখায়ই পছন্দ করে ফেলে।তারপর থেকে সে তোমার বোনের পিছনে লেগেছে। একপ্রকার জোর করেই তোমার বোনকে দিয়ে ভালোবাসি বলিয়ে ফেলেছে।সারাদিন পিছু পিছু ঘুরে তোমার বোনকে একপ্রকার থ্রেট দিয়ে রাজি করিয়েছে! বলেছে ও যদি রাজি না হয় তাহলে ওকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে…..এতেই তোমার বোন ভয়ে চুপসে গিয়েছে!আসলে তোমরা দুইবোনই ভীতু!
।
-আরহাম ভাইয়ার কান্ড শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম।এতো ইনোসেন্ট ফেইস নিয়ে ঘুরে যে কেউ কিছু বুঝবেই না।আর তলে তলে দেখি,আবরার গুন্ডার চেয়েও শয়তান। এজন্যই আসার সময় এমন সাজগোজ করেছিলো।কেমন তাড়াহুড়ো করছিলো। উনার সাথে আমাকে আসতে দিতে চাইছিলো না…..এবার সব ক্লিয়ার হলো।
।
আমি কনফিউশান নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছি।তখনি উনি বললেন, দেখতে হবে না ভাইটা কার!!!
।
-হুহ…তো আপনারা দুভাই কি দুনিয়ার আর কোনো মেয়ে পাননি?আমাদের দুইবোনকেই ধরতে হলো?যত্তসব…..
।
-কি করবো বলো?এতো সুন্দর দুইবোন থাকতে আমরা দুইভাই অন্য মেয়েদের ধরবো কেন?
।
-যত্তসব বেলাজ! সরুন আমি ঘুমুবো!
।
-তাই?
।
-মানে? আমি ঘুমুবো, সরুন!
।
-সরতে হবে না গো।তুমি আমার সাথে ঘুমুবে গো….
।
-কিহ?পাগল আমি?আপনার সাথে ঘুমুলে সকালে উঠে দেখবো আমি ঢেড়সের মতো কাঠি হয়ে গিয়েছি।
।
-উনি রেগে বললেন, কিহ?
।
-কিছু না।ঘুমাবো….
।
-উনি একটানে আমাকে উনার পাশে শুইয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।বললেন,একবার যদি নড়েছ তাহলে একটা করে চুমু ফ্রি!!
।
-আরে ছাড়ুন… ছাড়ুন বলছি…..
।
-পকপক বন্ধ না করলে কাল সকালেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাসায় নিয়ে যাবো। আর যদি থাকতে চাও তাহলে চুপ করে ঘুমাও বলেই ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসলেন।
।
আর আমি ওনার ফিসফিসিয়ে কথা বলার ধরণ দেখে ফ্রিজড হয়ে গিয়েছি।আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে আছি।উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে সেই কখন ঘুমিয়ে গিয়েছেন।
।
।
মাথার কাছের জানালাটা খোলা।রুমের বাতি নিভানো থাকায় চাঁদের আলোতে পুরো রুম ভরে গিয়েছে।একেমন এক মায়াবী আলো, যার কাছে পৃথিবীর সব আলো হার মানতে বাধ্য!সারা আকাশ জুড়ে কোটি কোটি তারাদের মেলা,বাতাসের ফুলগন্ধী গন্ধে সারা রুম ভরে গিয়েছে।চাঁদের আলোতে আমার রুমের দেয়ালে সাজানো সব পাতা,ফুল এবং ছবিগুলোকে লাগছে রুপকথার এক রাজ্য।যেখানে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার পাশে শুয়ে আছি,তার সাথে আছি।হঠাৎ করেই একঝাঁক জোনাকিপোকা দল বেঁধে আমার রুমে ঢুকলো…পুরো রুমে টিমটিম করে আলো দিচ্ছে।আমার রুমে সব পূর্ণিমার রাতেই একঝাঁক জোনাকিপোকা আসে।সেই ছোট থেকে দেখে আসছি।কাকতালীয় ভাবে আজও পূর্ণিমা!সোনালী আলোয় স্বর্ণরাজ্য বানিয়ে আমার ছোট ঘরটাকে একটা ছোট পৃথিবী বানিয়ে দিয়েছে।এমনই তো চেয়েছিলাম আমি!
।
যত যাই হোক!আমি তো এই গুন্ডাটাকে ভালোবেসে ফেলেছিই।উনিও হয়তো আমাকে ভালোবাসে…..যদিও বলেননি তাও ভালোবাসার মানুষটির অনূভুতি বোঝা যায়।
।
উনি যদিও রাগী তাও বেশ চাপা।আরহাম ভাইয়ার মতো নিজের ভালোবাসার কথাটা কাউকে বোঝাতে পারেন না। এই চাপা মানুষটার সাথে আমিও চাপা,আমিও কাউকে নিজের মনের কথাটা বলতে পারি না… যতটা না আপু আর ভাইয়া পারে!
।
এই স্বপ্নময় সোনালী রাতে উনার গা থেকে আশ্চর্য সুন্দর একটা খুশবু পাচ্ছি।এর আগে যা আমি অনুভব করিনি আজ তা মন -মস্তিষ্কের সাহায্যে খুব গভীরভাবে অনুভব করছি।উনার আত্মায় আত্মায় হয়তো মিশে আছে এই সোনালী খুশবুটা।যেটা শুধু সব সোনালী রাতেই পাওয়া যায়!’
!
চলবে….