#তুই_আমারই_থাকবি?
#Esrat_Jahan?
#Part_27
!
‘ উনি আমার সামনে চুটকি বাজিয়ে বললেন,কী? চোখমুখ এমন ফ্যাকাসে কেন?হিংসা হচ্ছে আমায় দেখে?দেখলে তো আমরা সবাই মিলে কত মজা করে গল্প করলাম,ফুপি আমার জন্য কত নিউ আইটেমের খাবার বানিয়ে খাওয়ালো আর কেউ তোমার কোনো খোঁজই নিলো না!হাউ?ইট’স ভেরি ব্যাড!
।
-ভালো।আমার আব্বু-আম্মু একটু বেশীই ভালো কি না তাই অভুক্তকে ভালো করে খাইয়ে দিয়েছে!
।
উনি রাগী গলায় বললেন,লিসেন,, আমি অভুক্ত নই।আমি এই বাসার জামাই ও তোমার মায়ের ভাইয়ের দুইমাত্র ছেলের একমাত্র ছোট ছেলে আবরার আগুন চৌধুরী আমি।তাই আমার রাইট আছে থাকার,খাওয়ার।তাই খাইয়েছে!
।
আমি মনে মনে একশো একটা উষ্ঠা দিলাম।কোনোকিছু বলার ভাষা খুঁজে না পেয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছি।ধুর….দুপুরেই তো গোসল করলাম।এখন আবার ভুলে বসে আছি।কাপড়ও আনিনি।ধুর…..
।
দরজা খুলে দেখি উনি মিটিমিটি করে হাসছেন,তাও আবার আমারই ব্যক্তিগত ডায়রী দেখে।ইয়া খোদা….এই ডায়রীতে আমার সব কাহিনী আমি লিখে রেখেছি।কিভাবে ছোটবেলায় চকলেট খাওয়ার লোভে খাতা বিক্রি করে দিতাম।কিভাবে পাশের বাসার সাল্লুকে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিয়েছিলাম,রাতে ফ্রিজ খুলে আইসক্রিম খেয়ে সকালে আম্মুর হাতের পিটুনি খাওয়া থেকে শুরু করে ঝালমুড়ি ওয়ালার টাকা মেরে দেওয়া সহ সব কাহিনী এই গোপন ডায়রীতে আমি লিখে রেখেছি। আর ব্যাটা উল্লুক আমার সব সিক্রেট জেনে গেলো!!
।
আমি আধাভেজা কাপড় নিয়ে তেড়ে এসে উনার হাত থেকে ডায়রীটা নিয়ে নিলাম।উনি হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হু হা করে হাসতে হাসতে বললেন, তোমার সব সিক্রেট এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে গেলো! তুমি এত পাজি ছিলে….হা হা হা…আমি এইসব খবর সবাইকে জানাবো।দরকার হলে নিউজ পেপারে ছাপাবো!উনার হাসি দেখে আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।
।
তবুও কোথায় গিয়ে যেন উনার এই হাসিখুশি মুখটা আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী বস্তু মনে হচ্ছে। বাতাসে উড়ন্ত সিল্কি লাল চুলগুলো এদিক-সেদিক অবাধ্যের মতো উড়ছে আর আমার বুকের ভেতরটা কেমন অদ্ভুত অনুভূতিতে ছেয়ে গেলো।আমি গভীর চোখে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।ভাবনায় মশগুল হয়ে আমি পাখিদের মতো উড়ছি এই সন্ধ্যার মেঘলা আকাশে।
।
কিন্তু এই রোমান্টিক মোমেন্টে উনার এই নজরকাড়া হাসিটা থেমে গেলো হঠাৎ করেই।কেমন নেশা লাগানো উনার চোখ!অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায় এই তাকানোতে।
।
উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের দিকে তাকাতেই যা দেখলাম তাতে নিজেকে আমার খুন করতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমি সেই আধভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে আছি ঠিকই কিন্তু গায়ে ওড়না নেই!
।
ইয়া খোদা!আমাকে তুলে নাও!এই অধম বান্দীর আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই।নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে আমার।আর উনি সেই তাকিয়েই আছেন।
।
আমি অন্যদিকে ঘুরে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দিতে যাবো ঠিক তখনই উনি আমার হাত চেপে ধরলেন।একটানে নিজের কাছে নিয়ে এসে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।আমি উনার কাছ থেকে নিজেকে কোনোভাবেই ছাড়াতে পারছি না।একসময় হাল ছেড়ে দিলাম আমি।
।
উনি বেশ কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমি শ্বাস নিতে নিতে বললাম,লুইচ্চা, গুন্ডা, অভদ্র। আমার মতো ভদ্র মেয়ের সাথে তুই এরকম আচরণ করলি!!!
।
উনি সোফায় আরাম করে বসতে বসতে বললেন, নো মিসেস আগুন! তুমি ভুল বলছো।তোমার মাথাটা ঠিক নেই!
।
-মানে? আমি পাগল?
।
-নাহ!তুমি পাগল নও!অন্যকিছু!
।
-অন্যকিছু মানে?
।
-মানে তুমি একটা অভদ্র মেয়ে!
।
-হুহ!সবই জানি।আমার ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট আপনার মতো লুইচ্চাকে দিতে হবে না।
।
-অফকোর্স দিতে হবে। বিকজ ইউ আর মাই অনলি ওয়াইফ!আই এম ইউর অনলি হ্যান্ডসাম হাজব্যান্ড!সো আমার রাইট আছে তোমার ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দেওয়ার!তুমিও তো আমার ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিয়েছ, আমি নাকি লুইচ্চা,অভদ্র! আমি তো কিছু বলিনি তখন!
।
-তো লুইচ্চাকে লুইচ্চা না বলে কী বলবো?হাউ?
।
-সেটা তোমার উপর ডিপেন্ড করে!বাট আমি এতটাও লুইচ্চা, অভদ্র না। তার চেয়েক বেশী অভদ্র,লুইচ্চা তুমি।
।
-আমি চমকে বললাম,মানে?
।
-তুমি কী কচি খুকী? সবকিছুতে এত মানে মানে করো কেন?ডাফার, ড্যাম ইট গার্ল!
।
-যাইহোক, বুঝিয়ে বলুন….
।
-তুমি যদি সত্যিই এমন ভদ্রমহিলা হয়ে থাকতে তাহলে আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের সামনে ওড়না ছাড়া আসতে না!বাঁকা হাসি দিয়ে।ইনফেক্ট তুমি এখনো ঠিক সেভাবেই আছো।
।
-আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি ওড়না নেই।ধুর…এই মুখ আমি কীভাবে দেখাবো….ছিহ নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে।
।
-উনি বাঁকা হেসে বললেন, তোমাকে এভাবেই সুন্দর লাগছে।নায়িকা জোলি…..হা হা হা….
।
উনার শ্রুতিমধুর হাসি শোনার জন্য আর একসেকেন্ডও দাঁড়ালাম না।কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে।প্রায় আধঘণ্টা যাবৎ একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরুলাম।
।
।
।
।
রাতেরবেলা খেয়েদেয়ে রুমে চলে এলাম আমরা।আমি বিছানাটা ঠিকঠাক করে আমার ড্রয়ার থেকে ফোনটা নিলাম।অনেকদিন পর নিজের ফোনটাকে ছুঁলাম। কেমন অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো যেন। এই ফোনটা আমার সন্তানের মতো।
।
ফেসবুকে ঢুকে আইডি এক্টিভ করে নিউজফিডটা স্ক্রল করলাম। ইনবক্সে অনেক ম্যাসেজ জমে আছে।দশ-পনেরোটা ছেলে প্রেমের প্রস্তাব পাঠিয়ে রেখেছে। আমি হাসলাম মাত্র….পুরনো ফ্রেন্ডদের অনেকেই কংগ্রাচুলেশনস জানিয়েছে নতুন জীবনের জন্য!
।
আমি এসব দেখাদেখিতে ব্যস্ত আর অন্যদিকে উনি নিজের মোবাইলে এক ইংরেজ বান্ধবীর সাথে কথাবার্তায় ব্যস্ত।উনার ইংরেজি বলার দক্ষতা দেখে আমি মনমরা হয়ে গেলাম।সারাজীবন টেনেটুনে ইংরেজিতে পাশ করা আমি পেলাম এক ইংরেজ জামাই!ভাবা যায়??
।
উনি যদি এভাবে আমার সাথে গড়গড়িয়ে ইংরেজিতে কথা বলেন তাহলে মাথামুণ্ডু না বুঝে আমি অজ্ঞান! মোটামুটি বলতে পারি।কিন্তু ইংরেজদের সাথে কথা বলার সময় একটা মান-সম্মানের ব্যাপার আছে না?
।
এই দুঃখ আমি কোথায় রাখবো। ভাবতেই ফেসবুকের কথা মনে হলো।ভাবলাম ফেসবুক থাকতে চিন্তা কী?একটা স্ট্যাটাস দিলেই হয়।সবাই একবালতি সমবেদনা জানাবে…..ভাবতেই দিলাম স্ট্যাটাস। লিখলাম,’তোমরা সবাই সুখে থাকো,আগুন জ্বলুক আমার বুকে!’কোথায় যেন শুনেছিলাম কথাটা মনে পড়লো না।
।
উনি ইংরেজ বান্ধবীর সাথে কথা বলে আমাকে বললেন এক গ্লাস পানি এনে দিতে।আমিও বিরক্তির ঠ্যালা নিয়ে পানি আনতে ড্রয়িংরুমের দিকে এগুতেই আপুর রুমে ফিসফিসানির শব্দ পেলাম।দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখি আপু কার সাথে যেন মোবাইলে কথা বলছে……’
।
চলবে…..