Monday, October 6, 2025







বাড়িতিলোত্তমাতিলেত্তমা পর্ব ৯

তিলেত্তমা পর্ব ৯

তিলোত্তমা
পর্বঃ ৯

নিশার অপারেশনের ডেট ফিক্সড হয়ে গেছে, আগামী মঙ্গলবার সকালে। আজ শুক্রবার… মাঝে কেবল তিনটা দিন বাকি! প্রতি শুক্রবার নাকি নিশাকে নিয়ে বেড়াতে যাবার অলখিত নিয়ম রয়েছে বাপ-বেটির চুক্তিতে, পাকেচক্রে এবারে আমিও ওদের মাঝে ঢুকে গেছি! গতকালই নিশা বারবার বলেছে মাম্মামকে ছাড়া এবার বেড়াতে যাবেনা সে, দিবস অনেকবার চেষ্টা করেও মেয়ের মন গলাতে পারেননি! হাঁদারামটা যদি বুঝতো ওদের সাথে দুটো মুহূর্ত বেশি কাটাবার জন্য ভেতরে ভেতরে মরে যাচ্ছি আমি! এই রুটিন করা একঘেয়ে জীবনটা একটা সমতল রাস্তার মতো চলছে বহুদিন, বহু বছর ধরে… এক টুকরো পাহাড়ি ঢাল হয়ে এসেছে এই দু’জন, কাঙাল মনটা তাই দুটো মুহূর্ত হলেও বেশি থাকতে চায় এদের সাথে। জন্ম জন্মান্তর ধরে আমি যে একটুখানি ভালবাসার, একটুখানি মানবসঙ্গের বড় কাঙাল!

সে যাইহোক, শেষমেশ আজ বেরিয়েছি তিনজনে মিলে। গন্তব্য শিশুপার্ক, আমাদের হসপিটালের একেবারে কাছাকাছিই জায়গাটা। বেছে বেছে নিরাপদ রাইডগুলিতেই উঠানো হলে নিশাকে, বাধ্য মেয়ের মত শক্ত করে রাইড ধরে বসে ছিলো প্রতিবারই সে। ধীরগতির টয় ট্রেনে নিশাকে বসিয়ে দিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, দিবস হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলেন-

-‘ আচ্ছা,আমায় তো আর আপডেট জানালেন না! আপনার সেই কাউসারালীর পরে কী হলো?’

-‘ওহ! আমার ঘাড় থেকে সে ভূত তো আপনি নামিয়ে দিলেন! কিন্তু মা’র ঘাড় থেকে এখনো নামেনি, উলটে আরো দুচার’জন সঙ্গী জুটিয়ে নিয়েছেন মা! সবাই মিলে মাথার পোকা নাড়িয়ে দিচ্ছে এখন!’

-‘অদ্ভুত সমস্যা! এই ছেলের মধ্যে আপনার মা ঠিক কী খুঁজে পেলেন…’

-‘সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায়। মা’র মূল চিন্তাটা হচ্ছে তার কালো মেয়েকে যেভাবেই হোক পাত্রস্থ করা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর এই একজন পাওয়া গেছে… তাকেও হেলায় হাতছাড়া করলে হয়তো আজীবন আইবুড়ো থাকতে হবে আমার। এই ভয়েই…’

-‘বিয়ে করতেই হবে, এমন দিব্যিই বা কে দিয়েছে? নাইবা করলেন বিয়ে!’

-‘সে গিয়ে আমার মা’কে বুঝিয়ে আসুনগে যান! আর সত্যি বলতে…’

দিবসের প্রশ্নাকুল চোখজোড়ায় এক ঝলক তাকাই। পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে মাটির দিকে নিয়ে যাই। নাহ! বেশি সময় ঐ চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে বরবাদ হয়ে যেতে হবে!

-‘সত্যি বলতে, একটা ছোট্ট, সুন্দর, একেবারে নিজের একটা পরিবারের শখ তো সব মেয়েরই থাকে। এই প্রকাণ্ড পৃথিবীটার বুকে একেবারে নিজের একটা ঘর, নিজের কয়েকটা আপনজন থাকবে- প্রাণী মাত্রই এইটুকু চাওয়া, এই প্রবৃত্তি- এটা তো প্রকৃতির ই নিয়ম। এবারে, কারো কোষে কোষে মেলানিন বেশি কি কম, তা দেখে তো আর এই প্রকৃতি তার নিয়ম বদলাবে না…’

আমি টের পাই ঐ চোখজোড়া কিছুটা চমকে গেছে। সেদিকে তাকিয়ে থাকার আপ্রাণ ইচ্ছেটাকে গলাটিপে ধরে দাঁড়িয়ে রই।

-‘যদি কিছু মনে না করেন, একটা প্রশ্ন করতে পারি?’

-‘হ্যাঁ! অবশ্যই!’

-‘আপনার নিজস্ব কোনো পছন্দ-অপছন্দ আছে? মানে, ঐ প্রেম-ট্রেম আরকি…’

-‘হাসবো না কাঁদবো বলেন দেখি! জীবনে সর্বসাকুল্যে এসেছে দু’জন- একজন তো সেই সাত বছর আগে দু’দিনের জন্য এসে জন্মের মত শিক্ষা দিয়ে গেছিলো… আরেক নমুনাকে তো নিজের চোখেই দেখলেন সেদিন। প্রেম নামক ডেজার্টটার সবচেয়ে crucial ingredient কী বলেন দেখি?- মেলানিন! আপনার গায়ের ভেতর এই ingredient যত কম, আপনার প্রেম হবার সম্ভাবনা তত বেশি!’

দিবস খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে কী একটা ভাবেন। আড়চোখে তাকিয়েও ঐ চোখজোড়া দেখা যাচ্ছেনা আর…

-‘যদি কিছু মনে না করেন তো, আমি আপনার মায়ের সাথে কথা বলতে চাই এই ব্যাপারটা নিয়ে… মানে অবশ্যই আপনার পারমিশন নিয়ে!’

-‘হাজার বোঝালেও মা বুঝবেন না! মায়ের চোখে কাউসারালী যোগ্য সুপাত্র…’

-‘যদি তারচেয়েও যোগ্য, সুপাত্রের সন্ধান পান আপনার মা, তখন?’

হৃদপিণ্ডটা ধপাস করে আধাহাত লাফিয়ে গলার কাছে চলে আসে। ঢোঁক গিলে সেটাকে জায়গামতো বসিয়ে নিয়ে বললাম-

-‘বেশতো… কিন্তু আপনি কেন শুধু শুধু এত খাটনি করতে যাবেন?’- ততক্ষণে নিশা নেমে এসেছিলো। ওকে নিয়ে হালকা গতিতে হাঁটছিলাম।

-‘আপনি যেজন্যে নিশার জন্য “শুধুশুধু খাটনি” করে যাচ্ছেন সেজন্যে! আর, তাছাড়া এতে আমারো কিছু লাভ আছে বলেই…’

-‘বাপি, আইস্ক্রিম খাবো!’- নিশার আবদারে বাকি কথাটুকু চাপা পড়ে যায়।

আচ্ছা? যে অবিশ্বাস্য সম্ভাবনার কথা মনের ভেতর উঁকি দিচ্ছে, তাও কি কখনো সম্ভব?

‘হতেও তো পারে!’- মিছিমিছি ফিসফিস করে বলে।

-‘না মিছিমিছি! একদমই না! অনেক দিন আগে একবার ইট, বালু, সিমেন্টের যোগাড় না করেই খেলাঘর বানাতে বসেছিলাম, মনে নেই কী হলো সেবার? আর না! কপালে যা আছে তাইই হবে এবার! সে যদি কাউসারালী হয়, তবে তাই! তবু একলা একলা নিজের মনে খেলাঘর পেতে বসবোনা আর, এই বিষয়টা নিয়ে আর একটা শব্দও ভাববোনা…’

কিন্তু মনের ওপর বুঝি কারো নিয়ন্ত্রণ থাকে? দুরন্ত, অবাধ্য মনটা যখন খুশি যেখানে খুশি উড়ে বসে যা খুশি তাই কল্পনা জুড়ে দেয়… তারে বাঁধবার মতো খাঁচার সন্ধান তো আমার জানা নাই!

তবু মনটাকে চেপেচুপে বেঁধে রাখবার মিছে চেষ্টা করে করে দিনটা কাটিয়ে দিলাম। আজকের দিনটা বড় ভালো কাটলো আমার! জীবন মাঝে মাঝে এক-দু’মুঠো সুখের কণা মনের ভুলে আমার দিকেও ছুঁড়ে দেয় তবে!

-‘এ তো খুবই ভাল প্রস্তাব! ছেলে ব্যারিস্টার! চেহারাও মাশাআল্লাহ ভালো… তা এমন রাজপুত্র আছে বইলাই বুঝি ঐ কাউসাররে পছন্দ হয়নাই তোর মেয়ের!’- বাসায় ঢুকতেই বড়খালার গলা কানে এলো আমার।

হৃদযন্ত্রটা গুনে গুনে দুই সেকেণ্ডের জন্যে থেমে গেলো। এর মধ্যেই খুশিখুশি চেহারায় মা’কে এগিয়ে আসতে দেখলাম।

-‘হ্যাঁ রে রাত্রি! এত ভাল একটা প্রস্তাব আসবে জানলে আমিই কি ছাই ঐ কাউসারালীর জন্যে মাথার পোকা নাড়িয়ে দিতাম নাকি তোর! তা বেশ, আমাদের এদিক থেকে তো সব আলহামদুলিল্লাহ, তোর বাবাও মত দিয়েছেন। এবারে শুধু ফরমাল দেখা সাক্ষাতটাই বাকি। আমি বলি কী শুভ কাজে আর করতে নেই, কে কখন কোনদিক দিয়ে চোখ নাচানি, কান ভাঙানি দেয়! দিবসকে বলে দিয়েছি কালকেই আমরা দেখাসাক্ষাৎ পর্বটা শেষ করে ফেলতে চাই। কিন্তু, তা ছেলের ফ্যামিলি নাকি ঢাকার বাইরে থাকে, তাদের আসতে আসতে আগামী সপ্তাহ হয়ে যাবে… পরে ঠিক হলো কালকে কেবল তোরা-তোরা দেখা করে আয় গিয়ে, এরপর আমরা নাহয় আগামী সপ্তাতেই কথাবার্তাটা এগিয়ে নেবোখন…’

মা নির্ঘাত ভয় পাচ্ছেন কখন আবার ছেলেরা বিগড়ে বসে কিংবা অন্য কেউ তাদের সুন্দরী কন্যাটিকে সাজিয়েগুজিয়ে নিয়ে এসে মায়ের কালো মেয়েটার বিয়ে ভেঙে দেয়! তাই এর তাড়াহুড়ো করে একেবারে কালকেই তারিখ ঠিকঠাক করতে বসে যেতে চাচ্ছেন। ভালো প্রস্তাব পাওয়া গেছে এবারে যত দ্রুত সম্ভব আপদ বিদেয় করা আরকি!

-‘বড় মাছ জালে আটকাইছে, এখন কি আর কাউসার রে ভাল্লাগবে সোহেলী? তা একসময় আবার ঐ কাউসারই শেষ ভরসা ছিলো… যাকগা যা হইসে হইসেই। ভাল খবর, খুশির খবর শুনে খুশিই হইলাম। তা বলি কি যত তাড়াতাড়ি পারো জাল টেনে ডাঙায় তুইলা নেও, নায়তো পরে মাছে জাল কেটে বেরোয়ে গ্যালে তো আবার সেই গুঁড়াচিংড়ি কাউসারালীরেই সাধাসাধি কর‍তে হবে!’- ফুপুর ঠেস দেয়া কথাগুলিও আজ বড় মধুর শোনাচ্ছে! মা বোধহয় সেজন্যেই হেসে হেসে উত্তর করলেন-

‘হ্যাঁ শায়লাপা, রূপ না থাকলেও মেয়ের আমার কপাল আছে ভালো বলতে হবে! তা বড় মাছ ধরতে জালখানাও বড় হতে হয়, গুঁড়াচিংড়ির জাল তো আর আমার মেয়ে নয়! ডাবল গোল্ডেন পাওয়া, ডাক্তারি পাশ করা…’

মা তার মেয়ের গুনগান গেয়ে চলেন। আমি মনে মনে হাসি। এই মা-ই দু’দিন আগে কাউসারালীর জন্যে জানপ্রাণ দিয়ে দিচ্ছিলেন, কেবল একটা ডাক্তারি ডিগ্রির জন্যে আমার এত দেমাগ কেনো তাই বসে বসে ভাবছিলেন। আর আজ! সত্যি, মানুষ বড় অদ্ভুত! সময় আর পরিস্থিতি মানুষকে কতটা বদলে দেয়!

আচ্ছা, এভাবে একদিন দিবসও কী বদলে যাবে? মনে মনে মনকে প্রশ্ন করি।

ভেতর থেকে মিছিমিছি জোর গতিতে মাথা নাড়ায়।

-‘উহু! দিবস সেরকম নয়। চিরন্তন সত্যের মত কিছু চিরন্তন মানুষ থাকে জানিস তো? জীবনে পোড় খেতে খেতে সেরকম একেকজন মানুষ তৈরি হয়, দিবস সেরকমই একজন…’

-‘কিন্তু কাল যদি নিশার মা ফিরে আসে, তখন? ঐ তিষমা তিলোত্তমাকে ফেলে কে এই রাত্রিকে নিয়ে পড়ে থাকতে চাইবে?’

-‘সুন্দরের আগুনে ঝাঁপ দিয়ে যে পতঙ্গের ডানা পুড়েছে, সে ই তো জানবে অন্ধকারের কদর কী। দ্বিতীয়বার ভুল করে কেউ কি আগুনে ঝাঁপ দেয়?’

ভালো যুক্তি! এরপর আর কী সংশয়ই বা অবশিষ্ট থাকে? তবুও মনের খচখচানিটা যায়না আমার… ঘরপোড়া গরু তো, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় করে!

হঠাৎ করে সবকিছু একদম ঠিকঠাক হয়ে গেলো যেনো! মা আর সেই আগের মত নেই। সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষফোঁড়াটা নেমেছে তাই বেশ নির্ভার ঘুরে বেড়াচ্ছেন আজকাল। বড়খালা এরমধ্যেই সাগুফতাকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছেন- ভাল ঘর ভাল বর দুটোই জুটেছে রাত্রির কপালে। চোখ কপালে তুলে সাগুফতা দেশে আসার সমস্ত যোগাড়যন্ত্র করে ফেলেছে, এই বিয়ের পেছনে গূঢ় রহস্যটা জানার জন্যেই বোধহয়! ওদিকে বড়ফুপু বেশ তেতে আছেন, কিন্তু আঁচটা লোকসম্মুখে প্রকাশও করতে পারছেন না। কেবল মেঘ থমথম মুখে ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর বাবা তো সেদিন রাতে এসে বলেই গেলেন- ‘এমন যোগ্য পাত্রের জন্যেই এতদিন অপেক্ষা করে ছিলাম মা, এবার আর অমত করিস না যেনো!’ মা’কে নাকি মেসেঞ্জারে ছেলের ছবি পাঠিয়েছে তার বড়ভাই, তাই দেখে একেকজনের চক্ষু চড়কগাছ! তা অবশ্য হবারই কথা। কালীর সাথে কার্তিক কিংবা দাসীর সাথে রাজপুত্রের মিল হবে- এ তো সাতজন্মেও ভাবেনি কেউ!

সবার কথাই তো বললাম, আর আমি? আমার যতটা না খুশি লাগছে তারচেয়ে বেশি লাগছে নিশ্চিন্ত আর তারচেয়েও বেশি লাগছে ভয়! নিশ্চিন্ত লাগছে কারণ মায়ের এই সারাক্ষণ বিয়ে বিয়ে করে তৈরি করা বিষম যন্ত্রণার হাত থেকে সারাজীবনের জন্য মুক্তি পেতে যাচ্ছি বোধহয় এবার। আর ভয় হচ্ছে কেনো? একশো একখানা প্রশ্ন মনের ভেতর ঘুরেফিরে উঁকি দিচ্ছে বারবার- আদৌ কি সব ঠিকঠাক মত সমাধা হবে? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- মাত্র এক সপ্তাহের পরিচয়ে কেউ আমাকে কেনো বিয়ে করতে চাইবে? আমার জায়গায় সাগুফতা হতো তো মেনে নেওয়া যেতো! আমার মধ্যে যদি ভাল কিছু থেকে থাকে তো হয়তো সে আমার মন, তার খোঁজ পেতে তো কয়েক বছর সময় লাগার কথা! রুপে ভুলবার জন্যে এক সপ্তাহ কিংবা একদিনই যথেষ্ট, কিন্তু সে জিনিসে তো আমি ঠনঠন! তাহলে? আমার মধ্যে ঠিক কোন বস্তুর সন্ধান পেলেন দিবস?

নাহ! এই প্রশ্নগুলির ঠিকঠাক জবাব আগামীকাল ই চাইতে হবে।

নাতনির অপারেশনের খবর শুনে নিশার দাদী এসেছেন গ্রাম থেকে। আরও আগেই আসতেন, সব গোছগাছ করতে সময় চলে গেছে বলেই নাকি আসতে পারেননি। উনার কাছে নিশার দায়িত্ব দিয়ে আবার অফিস শুরু করেছেন দিবস। এদিকে আমারও ইদানিং বেশ কাজের চাপ যাচ্ছে হসপিটালে। তাই আজকে বিকেলে ডিউটি শেষে কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে বসবো বলে ঠিক হয়েছে। সেই কবে কোন বিকেলে একবার গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের মাঠে জবরজং সেজে গিয়ে অপমানের চূড়ান্ত হয়েছিলাম, আজ কেবল সেই দিনটার কথা মনে পরছে বারবার! শোভন বলে সেই ছেলেটা- ওর খবরও তো আর জানিনা! সিফুর সাথে তো আর হলোনা কিছু, কেবল লাটিমের মত ঘুরেই গেলো পেছন পেছন। এরপর আর কিছু জানিনা…

আজকে অবশ্য আর সেদিনের মত উত্তেজনা কিংবা মানসিক টেনশন কাজ করছে না। এই মাঝবয়সে এসে সেই কৈশরের হরমোনগুলিই বা কই পাবো…সেই টানটান সুতোর মত মুহূর্তগুলিই বা কীভাবে তৈরী হবে!

তাই আজকে আর আলাদা করে কিছু করিনা কিংবা বলা ভালো- করা হয়ে ওঠেনা! ডিউটি শেষে এপ্রনটা খুলে কেবল হাতেমুখে পানি ছিটিয়ে আর চুলগুলি সামান্য আঁচড়ে নিয়েই বেরিয়ে যাই। খুব একটা দেরি হয়নি আমার, ভেতরে ঢুকতেই দিবসের টকটকে মুখটা চোখে পরে। ফ্রেমলেস একটা চশমা পরে এদিক-ওদিক কাউকে খুঁজছে, বামহাতটা বারবার ঘাড়ের পেছনে নিয়ে যাচ্ছে আবার সামনে এনে রাখছে- বোধহয় নিজের অজান্তেই।

-‘দেরি করে ফেললাম? নাকি আপনি আগে এসেছেন?’- ওর সামনের চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে প্রশ্ন করলাম।

-‘আরে নাহ, কই দেরি করলেন! সাড়ে পাঁচটায় আসার কথা এখন বাজে পয়ঁত্রিশ। পাঁচ-দশ মিনিট তো এদিক ওদিক হতেই পারে।’- একটা ভদ্রতাসূচক হাসিসমেত বললেন দিবস। এখনো ইতিউতি এদিক-ওদিক তাকিয়ে যেন কাউকে খুঁজছেন। অথচ আমি তো এসে গেছি!

-‘কাউকে খুঁজছেন মনে হচ্ছে!’

-‘হ্যাঁ! দেখুন তো দিব্যটার সেই কখন চলে আসবার কথা এখনোও কোনো খবর পাত্তা নেই। ফোনটাও তুলছে না!’

দিব্য! এ আবার কে!

-‘কে… দিব্য?’

-‘আমার ভাই! দিব্য রাইয়্যান… ওর সাথেই তো আপনার বিয়ের কথা হচ্ছে!’

বোধহয় এই খটখটে রোদভরা বিকেলে ছাদটাদ ফুঁড়ে রেস্টুরেন্টটার মাঝামাঝি একটা বজ্রপাত হয়ে গেলেও এতটা অবাক হতাম না আমি! ফ্যালফ্যালিয়ে চেয়ে রইলাম কেবল সামনে বসা মানুষটার দিকে, বিয়ের পাত্র আসছে না বলে টেনশনে ছটফট করছেন। কয়েকটা মুহূর্ত মাত্র, সামনে বসা অবয়বটা অস্পষ্ট হয়ে আসে ক্রমশ… টের পাই কোত্থেকে হুড়মুড়িয়ে একগাদা জল এসে ভরে গেছে চোখজোড়া।

(চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ