Monday, October 6, 2025







বাড়িতিলোত্তমাতিলেত্তমা পর্ব ৮

তিলেত্তমা পর্ব ৮

তিলোত্তমা
পর্বঃ ৮

মা আজ ভীষণ তেতে আছেন। একে তো সকালে বাবার কারণে তার প্রিয়পাত্র, সুদর্শন উজবুক কাউসার আলীর ঢোল পেটাতে পারেননি, তার ওপর খানিকক্ষণ আগে কাউসার নাকি তাকে ফোন করে জানিয়েছে এই বিয়েটা আর করতে পারবেনা সে। মা বারংবার জিজ্ঞেস করলেও কোনো কারণ নাকি বলেনি সে, কেবল বলেছে -‘আপনার মেয়েকেই সেকথা জিজ্ঞাসা করে নেবেন!’

মনে মনে কাউসার আলীর গলায় কথাগুলি শুনতে পাই আমি- ‘আপ্নার মিয়েকেই সে কুসচেন করে দেখুন!’ দৃশ্যটা ভাবতেই ধপ করে হেসে ফেলি।

-‘তোর হাসি পাচ্ছে রাত্রি? কী এমন অযোগ্যতা আছে এই ছেলের? অনার্সে পড়ছে, পাশ করলেও তো তোর সমান ডিগ্রি হয়ে যাবে! দেখতে শুনতে কত ভালো… কী এমন রুপনগরের রাজকন্যা তুই যে রাজার ছেলের জন্যে বসে বসে আইবুড়ো হচ্ছিস? সিফুটার অমন সুন্দর চেহারা, তাও তো জামাই জুটেছে একটা কালো-কুলো, বেঁটে-ছোটো! একদিক পেতে হলে আরেকদিক ছাড় দিতেই হবে! আর আমাদের কাউসারের যেমন রুপ তেমনি হাইট! নাহয় তোর মত ডাক্তার নয় ছেলেটা, তাই বলে এত দেমাগ তোর?…’

এতদিন মায়ের এই কথাগুলি এক কানে শুনে আরেক কানে বের করে দিয়েছি, কোনোরকম লাগেনি। কিন্তু আজকে ঐ বাপ-বেটিকে দেখবার পর থেকে আমারো যে বড় শখ হয়েছে একটা পরিবারের…. একটা দুষ্টু-মিষ্টি, তুলতুলে ছোট্ট বাচ্চা আর বাচ্চার বাবার! গায়ের রং যেমনই হোক, ঘন পল্লব ঘেরা হিজল বনের মত চোখ থাকবে বাচ্চাটার- বাবার DNA থেকে ধার করা! একেবারে বাবার কার্বন কপি হবে বাচ্চাটা… ভ্যাবাচ্যাকা খেলে সেও চোখ পিটপিট করে তাকাবে, তর্জনীতে চুলকে নেবে ঘাড়ের পেছন…

হায় খোদা! কী যা তা ভাবছি আমি! ছিছিছি, একদিনের একবেলার পরিচয়ে এতদূর ভেবে ফেলা, তাও আবার কার না কার বিয়ে করা জামাই নিয়ে! ছিহ! নিজেকেই নিজে ধিক্কার দিই আমি, কিন্তু কী অদ্ভুত! ভেতর থেকে নড়েচড়ে ওঠে মিছিমিছি। ফিসফিসিয়ে বলে-

-‘এত ছিছি করার কিছু নেই মেয়ে! বিপরীত লিঙ্গের কাউকে ভালো লাগবে- এ প্রকৃতিরই নিয়ম!’

-‘তাই বলে বিয়ে করা, বাচ্চার বাপকে? না মিছিমিছি, তুই এবারে আবোলতাবোল বকছিস!’

-‘ছাই জানো তুমি রাত্রি! নিশার মা তো নেই, সে কোথায় চলে গেছে কে জানে… ‘

-‘বলেছে তোকে! অমন স্বামী-সন্তান ফেলে কোন পাষাণ চলে যায় রে?’

-‘আচ্ছা, যদি থেকেও থাকে তাতেই বা দোষ কোথায়? তুমি তো আর দিবসকেই চাচ্ছোনা, কেবল ওদের দু’জনকে দেখে অমন একটা ছোট্ট, সুন্দর পরিবার পাওয়ার বাসনা অনুভব করেছো! এ তো প্রকৃতিরই নিয়ম…এতে তো দোষ নেই রাত্রি! দিবস না হোক, দিবসের মতন কেউ? নিশা না হোক, নিশার মতন কোনো বাচ্চা তোমার জীবনে আসুক- এ চাওয়া তো দোষের নয়!’

-‘তাহলে আমি এসব ছাইপাশ ভাবছি কেনো? নিজের জন্য কাউকে কল্পনা করতে গেলে বারবার ঐ একই চোখ, ঐ অঙ্গভঙ্গি মনে আসছে কেনো?’

-‘সে তোমার ক্ষণিকের আবেগ, মুহূর্তের ভালোলাগা রাত্রি! সে কেটে যাবে দেখো! শুধু মনে রেখো, সেই সাত বছর আগে শোভনের মত অপদার্থের জন্যেও তুমি ছিলেনা, আর এখন এই কাউসারের মত উজবুকের জন্যে তুমি নও… তাতেই হবে!’

মা তখনো কীসব গজগজ করে চলছেন, সেসব আর আমার কানে ঢুকছে না! আমি ডুবে গেছি মিছিমিছির সাথে গভীর আলোচনায়।

-‘বাহ! বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে তো তোমাকে আজ মামনি! আগামী সপ্তাহেই অপারেশনটা করা যাবে আশা করি!’- নিশার রিপোর্টটা বেশ সন্তোষজনক লাগছে দেখে। ওটা হাতে নিয়ে মেয়েটার দুইগালে হালকা টিপে দিয়ে বললাম আমি।

-‘তারপর আমি তোমাকে আর বাবাকে দেখতে পাবো, মাম্মাম?’

নিশার বাবা পাশেই বসে ছিলেন, মেয়ের প্রশ্নে চমকে তাকান। আমি কী বলব বুঝতে না পেরে বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকি। দিবসই শেষে উত্তর দেন-

-‘হ্যাঁ নিশা! তারপর তুমি সবকিছুই দেখতে পাবে। তোমার টেডিবিয়ার পিংকুকেও!’

-‘আমার খালি তোমাকে আর মাম্মামকে দেখলেও চলবে… যদি চোখ বেশি ঠিক না হয় তাহলে অতটুকুই ঠিক করে দিও! শুধু তোমাদের দুইজনকে যাতে দেখতে পাওয়া যায়…’

বাচ্চারা যে কী অদ্ভুত কথা বলে একেকসময়! কী ভীষণ নিজেদের মত করেই না ওরা দুনিয়াটাকে দেখে! মেয়েটার কথাগুলি শুনে মনটা হঠাৎ খারাপ লাগে আমার, অজান্তেই চোখের কোণে দু ফোঁটা জল চলে আসে। চোখজোড়া আঙুলে মুছে নিশাকে কোলে নিয়ে বলি-

-‘একেবারে পুরোপুরিই ঠিক হয়ে যাবে তোমার চোখ মামনি! আর মাত্র কয়েকটা দিন…’

রাউণ্ড ডিউটি শেষে নিজের ডেস্কে এসে বসে ছিলাম, পরিচিত কণ্ঠটা কানে আসে ঠিক তখনই।

-‘আসতে পারি?’

দিবস!

-‘জ্বি অবশ্যই! হঠাত এখানে… নিশা ভালো আছে তো?’

-‘আরে না না, ওসব কিছু নয়! আমার মনে হলো আপনি আমার কাছে কিছু explanation পাবেন, সেগুলো জানাতেই…’

-‘মানে?’- দিবসের কথা শুনে অবাক লাগে আমার।

-‘উম…ম, মানে নিশার মাম্মামের ব্যাপারটা আরকি!’

-‘ওহ! সে তো আপনি বলেইছেন- ওর মায়ের সাথে আমার কণ্ঠটা মিলে যায় বলে আমাকে মাম্মাম ভেবে ভুল করছে নিশা…’

-‘না ওটা নয়! আসলে…এইযে ও হচ্ছে নিশার মাম্মাম, মিহির!’- পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে আমার দিকে এগিয়ে ধরেন দিবস। ছবি রাখবার জায়গাটাতে একটা স্ট্যাম্প সাইজের ছোট্ট ছবি, হাস্যোজ্জ্বল একটা মুখ। বড্ড সুন্দর… কিন্তু এই মুখটা তো আমার চেনা! কোথায় দেখেছি একে…

-‘চিনতে পেরেছেন?’

-‘দেখেছি বলে মনে পরছে কিন্তু ঠিক ক্লিয়ারলি মনে আসছে না… ‘

-‘তিষমা তিলোত্তমা? এবার চিনেছেন?’

-‘ওহ! হ্যাঁ তাইতো! এটা তো তিষমা তিলোত্তমার ছবি… মডেলিং এ ইদানিং খুব নামডাক হয়েছে মেয়েটার। এটা… এটা নিশার মায়ের ছবি! মানে… মানে…’- প্রচণ্ড বিস্ময়ে কথা হারিয়ে ফেলেছি বোধহয় আমি।

-‘ওর আসল নাম মিহির, আতিয়া মিহির হোসেন! ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম আমরা, বছর চারেক আগে। বিয়ের আগে থেকেই টুকটাক মডেলিং করতো সে শখের বশে, আমার পূর্ণ সমর্থন ছিলো তাতে। বিয়ের পরপর আবিষ্কার করলাম দুজনেই এতকাল বাপ-মায়ের ঘাড়ে বড় হয়েছি, বাস্তববুদ্ধি প্রায় শূন্য দু’জনেরই। বিয়ের পর সংসারের দায়িত্ব, রোজ তিনবেলা খাবারের আয়োজন এসবের চক্করে মিহিরের শখে ভাটা পড়ে… ওদিকে আমিও ব্যস্ত হয়ে পরি অফিসের কাজে ভীষণভাবে। জুনিয়র এমপ্লয়ি ছিলাম বলে বিভিন্ন বৈদেশিক ট্যুরগুলিতে আমাকেই যেতে হতো, মিহিরকে কখনো নিতে পারতাম কখনো পারতাম না। নিজের শখটাকে দূরে সরে যেতে দেখে মিহিরও আস্তে আস্তে কেমন হয়ে পরছিলো, আমিই ঠেলেঠুলে ওকে একটা এক্টিং স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিই। এরমধ্যেই নিশা চলে এলো। দিন দিন সংসারের ব্যস্ততা যত বাড়তে থাকলো, মিহির যেনো ততই বিরক্ত হতে লাগলো… কোত্থেকে কী করে কী হলো জানিনা- হঠাত একদিন ওদের মডেলিং স্টুডিওতে আমাকে ডেকে নিয়ে মিহির বললো- ‘এত ঝামেলা আর ভাল্লাগে না, আমি ডিভোর্স চাই!’ ওদিকে তখন কেবল আমরা জানতে পেরেছি নিশার চোখের অসুস্থতা সম্পর্কে, আর এদিকে মিহির এই কান্ড করে বসেছে। কতবার যে ওকে বোঝালাম, কতভাবে চেষ্টা করলাম! বারেবারে এক কথাই বলছিলো সে- এই গাধার বোঝা টেনে টেনে নিজের সব শখ, আহ্লাদ বিসর্জন দিতে পারবেনা ও! তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বলে বসলো- ‘এই প্রতিবন্ধী, কানা মেয়েকে পালতে পালতে আমি নিজের জীবন আর নিজের ক্যারিয়ার এভাবে ক্ষয় করতে পারবোনা!’।

নিজেকে খুব ভদ্রলোক দাবি করছিনা, তবে অন্তত মেয়েদের সম্মান করবার মতো পারিবারিক শিক্ষাটুকু আমার ছিলো। কিন্তু সেদিন আমিও নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি, আমায় যা বলছিলো বলছিলোই। নিশাকে নিয়ে যখন আবোলতাবোল বলতে শুরু করলো মিহির, আচমকাই চড় বসিয়ে দিয়েছিলাম ওর গালে!

ব্যস, আর যায় কোথায়! স্টুডিওতে থাকা বাকি লোকজন সবাই মিলে আমার ওপর চড়াও হলো… তারপর তো সেই পুরনো ঘটনা। আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনকারী হিসেবে প্রমাণ করে আদালতে ডিভোর্স চাইলো মিহির, সাক্ষী দিলো ওর বন্ধুবান্ধবেরা, এমনকি আমার শাশুড়িও! তার অমন সোনার বরণ মেয়ে আমার সংসারে কলুর বলদের মত খেটে খেটে কালি হয়ে যাবে- এ তার প্রাণে সইছিলো না।

এরপরের ঘটনা তো দেখছেন ই! আমি পড়ে রইলাম নিশাকে নিয়ে, নানা জায়গায় চেষ্টা করতে লাগলাম ওর চিকিৎসার জন্যে, শেষে আপনাদের হসপিটালে এলাম। আর আমার মিহির নাম পাল্টে হয়ে গেল তিষমা তিলোত্তমা! রাস্তায় বেরুলেই তিষমাকে দেখা যেতে লাগলো বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনগুলোতে…’

শেষের দিকে দিবসের গলাটা বড় ভারী শোনায়। কী বলবো বা কী করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না… আমি ভেবেছিলাম ছোটোখাট রাগ অভিমানের ব্যাপার হবে হয়তো! নিশা সুস্থ হতে হতেই ওর মাম্মাম ফেরত চলে আসবেন, বেচারি মেয়েটার অপেক্ষাও ফুরোবে। কিন্তু এখন তো দেখছি তার আর আসবার কোনো সম্ভাবনাই নেই!

বেশ অনেকটা সময় এভাবে চুপচাপই কেটে যায়।

-‘আচ্ছা, আপনার অনেকটুকু সময় নষ্ট করলাম! আসি তবে আমি…’- শেষমেশ দিবসই নিরবতা ভাঙ্গেন।

-‘আমার আবার সময়, তার আবার নষ্ট হওয়া! হাসালেন…শুনুন!’

প্রায় দরজা অব্দি পৌঁছে গিয়েছিলেন দিবস, পেছন ফিরে তাকালেন।

-‘নিশাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না একদম, সব ঠিকঠাক থাকলে ও একদম সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ! ততদিন নাহয় আমিই ওর মাম্মাম হয়ে থাকলাম!’

দিবসের মুখভঙ্গির পরিবর্তনটা চোখে পরে আমার। প্রথমে খানিকটা অবাক হয় চোখজোড়া, তারপর মিষ্টি একটা সরলরেখা হাসির সাথে সাথে কৃতজ্ঞতা মেশানো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঐ হিজল বনঘেরা চোখের তারাদুটো।

কারুর চোখ বুঝি এতটাও expressive হয়?

আচ্ছা, এই ঘরটার প্রত্যেকটা ইট-পাথর কি ঐ দৃষ্টিতে ঘায়েল হয়ে গেলো না?

বেয়াদব মিছিমিছিটা নড়েচড়ে বসে, বুকের ভেতর থেকে ফিসফিসিয়ে বলে-

-‘ইট-পাথরের জীবন নেই বোকা মেয়ে, ওরা ঘায়েল হতে জানেনা! শুধু শুধু ওদেরকে নিজের সাথে জড়াচ্ছিস কেনো রে?’

এই বেয়াদব মেয়েটা সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হয়ে সেই-ই কবে থেকে বুকের ভেতর আসন গেড়ে বসে আছে! ধুর! এর জ্বালায় একটু নিজের মনে কথাও বলা যায়না!

বাড়ি ফেরার পথে নিশা মেয়েটার মায়াভরা মুখটা বারবার মনের ভেতর উঁকি দিচ্ছিলো। আহারে বেচারি! বড্ড আশা করে বসে আছে মাম্মামকে দেখবে বলে, চোখজোড়া হয়তো ভালো হয়ে যাবে অপারেশনের পর, কিন্তু তারপর? মিথ্যে বলবোনা, শুধু নিশার কথাই ভেবেছি সেটাও নয়। হাজার চেষ্টা করেও একজনের হিজলচোখ থেকে একচুলও নড়াতে পারিনি নিজের মনকে। সবকিছু ভুলে যেতে চেয়ে যতবার নিজের চোখ বুঁজেছি, আরেকজনের আরেকজোড়া চোখ এসে হানা দিয়ে গেছে ততবার!

একরাশ ভাবনা দিয়ে মাথাটা জ্যাম হয়ে ছিলো বলে কিনা কে জানে, আশেপাশে একদমই খেয়াল ছিলোনা আমার। বাসায় ঢুকে সোজা নিজের ঘরে যেয়ে চুপচাপ শুয়ে ছিলাম অনেক্ষণ। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘোর কাটে আমার।

-‘ওমা রাত্রি! এখনো গোসল করিসনি? শরীর খারাপ লাগছে নাকি…’- বড়খালামনি এসেছেন!

-‘বড়খালামনি, তুমি? কখন এলে?’- উঠে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলাম।

-‘এইতো ঘন্টা দুয়েক। তুই এভাবে পড়ে আছিস কেনো?’

-‘হু, যাবো! গোসলে যাবো এখনই। তারপর বলো তোমাদের ওদিকের কী খবর? সিফু কেমন আছে?’

-‘সে তো ঐ দেশে ভালই আছে, আরামে-আয়েশে। জানিস ই তো জামাইয়ের বড় চাকরি, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেই রেখেছে বউকে। সে তো আবার বউ বলে অজ্ঞান…আচ্ছা, তুই ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে তোর মায়ের ঘরে আয়, কথা আছে!’

নির্ঘাত ঐ কাউসারালীর ব্যাপারে মা বড়খালামনিকে ডেকে এনেছেন! উফ, এখন আবার এই নিয়ে কথা শুনতে হবে কিছুক্ষণ! হিজল বনে ডুবে থাকা মনটাকে টেনেটুনে বাস্তবে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম, তারপর জামাকাপড় হাতে করে বাথরুমের দিকে যেতে যেতে ঠিক করলাম- ‘আর চুপচাপ সহ্য করে যাবোনা মা’র এসব কর্মকাণ্ড। দরকার হলে সত্যি সত্যি ঘরবাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে যেয়ে উঠবো…’

মায়ের ঘরে যেয়ে রীতিমত চক্ষু চড়কগাছ আমার… কেবল বড়খালাই না সাথে ফুপুকেও ডেকে এনেছেন মা! এই ফুপুই তো উজবুকটার সাথে বিয়ের প্রস্তাব এনেছিলো…

-‘দেখো মা, তুমি আমাদের বংশের গর্ব। ডাক্তার মেয়ে.. বংশে আর দ্বিতীয়টা নাই আমাদের! কিন্তু তাই বইলা এইভাবে বিয়েথা না কইরা একা একা তো আর জীবন কাটানো যায়না!’- প্রথম কোপটা তবে ফুপুই দিলেন! আমি কেবল চুপচাপ শুনে যাচ্ছি… দেখি কতক্ষণ ধৈর্য ধরে রাখা যায়!

-‘অত কথায় তো কাজ নাই শায়লাপা, ওরে জিজ্ঞেস করেন কাউসাররে ঠিক কী বইলা আর কেন সে ফিরায়ে দিসে ঐদিন। পোলাটা এত্ত কষ্ট কইরা সেই হসপিটাল পর্যন্ত গেসে…’

-‘আহ সোহেলী! আমারে বলতে দেও! তোমার মাথামুথা গরম, তুমি আর এর মধ্যে আইসো না তো…দেখো মা আমি বুঝতেসি সমস্যাটা কোনখানে! কাউসার পোলাডা ভালো, গ্রামের মধ্যে খুব ভালো ছাত্র! সবাই একডাকে অরে চিনে… হয়তো তুমার মতো অত মেধাবী না, হয়ত ডাক্তার না। কিন্তু সেও কিন্তু অনার্সে পড়তেসে! সেশন জট না কি কয়- সেইটায় আটকায়া যাওয়াতে এখনো পাশ করে বাইর হইতে পারেনি। এই এক্টুকুই খুঁত- এর বাইরে আর সবদিকে কিন্তু ছেলেটা ভালো… দেখতে শুনতে যেমন, আদব কায়দা, কথা-বার্তা সবকিছুই অতি উত্তম! কিছু দেনা-পাওনার বিষয়-আশয় আছে সে আমি জানি, কিন্তু ঐটুকু ত ছাড় দিতেই হবে মা!’

অন্য সময় হলে হয়ত যুক্তি দিয়ে ফুপুকে ঘায়েল করার চেষ্টা করতাম, কিন্তু আজকে কেনো জানি এসব কথার পিঠে আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে হচ্ছেনা! ফুপুর শেষ কথাগুলি শুনে চকিতেই একটা বুদ্ধি খেলে যায় মাথায়! কেশে গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে, ঠিক ঐ উজবুকটার উজবুকীয় ভাষায় সুর করে করে বলতে শুরু করলাম-

-‘অবশ্যই! কাউছারালী খুবোই ভালো পাত্রো ফুফু! যেমোন ওঁচা-লম্বা, তেমোন গায়ের রং! কাউছারালীকে পাওয়া তো আমার সৌভাগ্যো… আমিই ওর যোগ্য নই কেবল সেকথাটাই ওঁকে বলেচি! তারপর উনার কিছু কুসচেন ছিলো সেগুলুর আঞ্চার দিয়েচি…’

-‘এই সোহেলী! তোর মেয়ে এমন করে কথা বলছে কেনো? কী হয়েছে এর!’- বড়খালার বিস্মিত কণ্ঠ কানে এলো।

ফুপু আর মায়ের মুখ তখন থমথম করছে। উজবুকটার ‘অতি উত্তম’ কথাবার্তার নমুনা তো তাদের জানাই আছে, ঠিকঠিক ধরে ফেলেছেন কী বোঝাতে চাইছি আমি!

‘গয়লা যেমন ভালোবাসে, ডাস্টবিনের ঐ ময়লারে…
আমি তেমন ভালোবাসি, প্রাণ বন্ধুয়া তোমারে এ এ এ’- গুনগুন করতে করতে মায়ের ঘর ছাড়লাম। বড়খালা তখনো প্রশ্ন করে যাচ্ছেন- ‘ও সোহেলী! তোর মেয়ের কী হয়েছে? অ্যাঁ! কী বলে গেলো মেয়ে? অ্যাঁ!!’

মা যে অত সহজে হাল ছাড়বার পাত্র নন সে আমি জানি! ফুপু আর বড়খালামনিকে যখন ডেকে এনেছেন তখন বিয়ের ব্যাপারে একটা না একটা হেস্তনেস্ত এবার করে তবে ছাড়বেন। আমার পরিচিত যে মেয়েরা মেডিকেলের আশেপাশের আবাসিক হোস্টেলে আছে তাদের ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে রাখলাম, বাড়িতে বেশি যন্ত্রণা দেখলে টুপ করে সেখানে উঠে যাবো! এখনো ধৈর্যের বাঁধ ভাঙেনি আমার, দেখা যাক কতদিন পারা যায়…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ