Monday, October 6, 2025







বাড়িতিলোত্তমাতিলেত্তমা পর্ব ৬

তিলেত্তমা পর্ব ৬

তিলোত্তমা

পর্বঃ ৬

–‘রাত্রিরে নিয়ে তো চিন্তা নাই, এই সুন্দুরীরে নিয়ে হইসে যত চিন্তা! কলেজে-কোচিং এ যাওয়া আসা, শহর এলাকা, নিরাপত্তার কোনো হাল-হদিস নাই! ঝিনাইদাতে যেমনে ছিলো ছিলোই, এইখানে সিফুর বোরকা-নিকাব পইরা চলাফেরা করাই ভালো!’- মায়ের কথায় বড়খালাও সায় দেন। সিফু মানে সাগুফতা বরাবরই মা-খালাদের লক্ষ্ণী মেয়ে, বাধ্য মেয়ে- তাই সে মেনেও নেয়। একত্রেই কলেজে আর কোচিং গুলিতে যাতায়াত করি আমরা এখন। প্রায় মাস দু’য়েক হয়ে গেছে আমরা কলেজে ভর্তি হয়েছি। এই দু’মাসের মধ্যেই পাড়ার একপাল ছেলে সিফুর পেছনে হত্যে দিয়ে পরেছে! কী অদ্ভুত, এই পাড়ায় এতো ছেলেপেলে ছিলো আমাদের বয়েসী? দিব্যি একলা চলে ফিরে বেড়িয়েছি, কই এদের তো দেখিনি এতদিন! এই প্রথমবারের মত আমি আবিষ্কার করলাম দেখতে অসুন্দর হওয়ার ও তবে কিছু সুবিধা আছে বৈকি! এইযে দিব্যি নিরাপদে, একেবারে আর দশটা ছেলের মত ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছি- এ তো এক মস্ত সুবিধে! চেনা নেই জানা নেই, রাস্তার ছেলে ছোকরারা প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা করলে কতদিন আর ভালোলাগে? মোড়ের মুদি দোকানী থেকে আরম্ভ করে ওপরতলার ব্যাচেলর ছোকরারা রাস্তা দিয়ে আসতে যেতে আমাদের বারান্দার দিকে চোখ ফেলে ফেলে যাচ্ছে আজকাল! আচ্ছা, সাগুফতার কি বিরক্ত লাগেনা এসব? নাকি আপামর জনসাধারণের এই অতি-সমাদর ওর ভেতরে আত্নতৃপ্তির বোধ জাগায়? কিজানি! আমি কেমন করে জানবো? আমি ত সাগুফতা নই। আমি তো রাত্রি।

আমি তাই হেসে মা’কে বলি- ‘হ্যাঁ মা, আমাকে নিয়ে চিন্তা নাই! আমার চেহারাটাই ত বোরকার কাজ করে, একবার দেখলে কেউ আর দ্বিতীয়বার তাকায়না! সিফুর জন্য বরং বোরকা বানাতে দিও।’

তো তাই-ই হলো অবশেষে। রাস্তা দিয়ে একজোড়া কালো মেয়ে আসা যাওয়া করে আজকাল- একজন কালো বোরকায় আপাদমস্তক ঢাকা বলে কালো আরেকজনের তো প্রতি কোষের DNA র ভাঁজে ভাঁজেই কালিমাখা! সিফুকে ঢেকেঢুকে নিয়ে মা খালারা তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, কিন্তু বাস্তবে তাতে ছাই লাভ হয়! এই দু’মাসে ওর রুপের খ্যাতি আনাচে কানাচে ছড়িয়ে গেছে, তাই ঐ কৃষ্ণকালো চারগজ কাপড়ের ভেতরে যে ধ্রুবতারা জ্বলজ্বল করছে তা জানতে দু’দিনও সময় লাগেনা পাড়াসুদ্ধ ছেলেপেলের! তাই তারা সব হত্যে দিয়ে পরে থাকে সিফুর পেছনে,অতি সাহসী কেউ কেউ প্রেম কিংবা বন্ধুত্বের প্রস্তাব ও পাঠায়। সিফুর তাকে ভালো লাগলে বন্ধু হয় নয়ত ফুঃ দিয়ে উড়িয়ে দেয়….

এভাবেই চলছে আজকাল। একই সাথে একই কলেজে যাওয়া আসা করছি আমরা রোজ। রাস্তায় বের হয়েই সাগুফতা কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গুজগুজ গুজগুজ করতে আরম্ভ করে দেয় আর আমি বাসে কিংবা রিকশায় বসে বসে ভাবতে থাকি গতকাল ফিজিক্সের যে অঙ্কটা করলাম, ওটা বোধহয় অন্যভাবেও করা যেতো! হয়তো একটা জটিল অঙ্কের সমাধান ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছি, গভীর রাতে সিফুর ফিসফিসানির শব্দে হঠাৎ হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে আচমকাই তার উত্তর মাথায় এসেছে! আমি উত্তেজনায় ছটফট করছি কখন সকাল হবে কখন সমাধানটা মিলিয়ে দেখবো, সকাল হওয়া পর্যন্ত আদৌ মাথায় থাকবে তো সমাধানটা? ওদিকে সিফুও হয়তো ফোনখানা কানে ধরে ছটফট করছে, এড্রেনালিন রাশের উত্তেজনায়! দিনে দিনে সিফুটা যত নরম, পেলব সিনেমার নায়িকাদের মত হতে থাকলো, আমি কেমন টমবয় টাইপ হতে শুরু করলাম! কোনো ছেলে ছোকরা সিফুকে ফোনে জ্বালাচ্ছে? ডাকো রাত্রিকে! কাউকে আচ্ছামত ঝাড়তে হবে? ডাকো রাত্রিকে! মোড়ের ফ্লেক্সিলোডের দোকানদার একবার সিফুর নাম্বারটা নিয়ে খুব যন্ত্রণা আরম্ভ করেছিলো, নিজেকে কিনা ইঞ্জিনিয়ার বলে পরিচয় দিচ্ছিলো সে ছোকরা! সিফুটা তো ইঞ্জিনিয়ার শুনেই সেই নরম গলায় ‘কে আপনি? কেনো ফোন দিচ্ছেন? বন্ধু হতে পারি তবে আর কিছু নয়’ করছিলো! আমার সন্দেহ হতে একটু খোঁজ নিতেই ছেলের আসল পরিচয় বেরুলো, তারপর তো সেই- ডাকো রাত্রিকে! এক দুপুরে দোকানে যেয়ে আচ্ছারকম তুলোধুনো করে এলাম ছোকরাকে, দ্বিতীয়বার যন্ত্রণা করলে বাবাকে বলে দেবো বলতেই ছেলে রীতিমত মাফমুক্তি চেয়ে কানে ধরলো।

যাহোক, সিফু আসবে শুনে যতটা অখুশি হয়েছিলাম আদতে ততটা অসুবিধে হয়নি আমার। মা যদিও কিছুটা তুলনা করছেন, সেসব আমি আর গায়ে মাখছিনা আজকাল! আর সেই শোভনের ঘটনাটার কারণে ইদানিং মনেমনে সিফুকে ধন্যবাদ ই বরং জানাই আমি! সেই ধাক্কাটুকু পাওয়া খুব জরুরি ছিলো আমার জন্যে, সেবার তো অল্পের ওপর দিয়েই গেছে! চেতন মনে না জানলেও অবচেতনে কী ভীষণভাবে মুখিয়ে ছিলাম আমি একটা প্রেম-প্রেম সম্পর্কের জন্য! দু’দিনের দু’খানা কথাতেই একেবারে শাড়িটাড়ি জড়িয়ে, রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান আওড়াতে আওড়াতে দেখা করতে চলে গিয়েছিলাম! এদিকে সবাইকে জ্ঞান বিতরণ করে শেষকালে নিজেই কীনা মোহের জালে আটকা পরতে গেছিলাম- ছিছিছি! ভালই হয়েছে সেবার ওরকম একটা শিক্ষা পেয়ে আমার, একেবারে সোজা পথে চলে এসেছি! আজকাল তাই আমিও সিফুর সাথে হাসতে হাসতেই গলা মেলাই-

‘কেউ কোনোদিন আমারে তো, কথা দিলো না…’

সিফু আজকাল পড়তে বসার খুব একটা সময় পায়না। বড় খালামনির ভয়ে এতদিন রুটিনমাফিক রোজ রোজ সকালে পড়তে বসতে হতো ওকে, ঘুম ঘুম চোখে ঘাড় দুলিয়ে বুঝে না বুঝে গাদাগাদা জিনিস মুখস্থ করতে হতো। আজকাল সেই ভয়টাও নেই! ক্লাস পরীক্ষাগুলিতে আমার পাশে বসে উতরে যায় আর টার্ম এক্সামগুলির আগে ইম্পর্ট্যান্ট টপিকগুলি মাসখানেক ধুমিয়ে গিলে নিয়ে পরীক্ষার খাতায় বমি করে দিয়ে আসে। এভাবে চলতে চলতে একদিন এইচএসসি পরীক্ষাও দিয়ে ফেললাম দু’জনে। মাঝের দুই বছরে তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। কেবল সুজনকে সিফুর কাছে গাঁইয়া গাঁইয়া লাগছিলো বলে ওর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে সিফুর, ঢাকারই বড়লোক ‘এক বাপের এক পুত্র’ জিহানের সাথে নতুনভাবে ‘স্পেশাল ফ্রেন্ডশিপ’ গড়ে উঠেছে ওর। আমি ভাল রেজাল্টের কারণে কলেজ থেকে দুটো স্কলারশিপ পেয়েছি- প্রায় বিনা বেতনেই পড়ছি আজকাল। আমার ছোট ভাইটা ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠেছে এবছর… এইতো!

সেই গোবেচারা রাত্রি মেয়েটা কীভাবে এইচএসসিতেও বৃত্তি পেলো, কেমন কেমন করে ঢাকার সেরা মেডিকেল কলেজটাতে চান্স পেলো আর কীভাবে কীভাবে এই কালো মেয়েটার হাসিমুখের ছবিই ঢাকার অলিতে গলিতে, আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পরলো- ‘অনিতা তাবাসসুম রাত্রি, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা- ২য় স্থান।’- সেকথা লিখতে গেলে ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে যাবে বোধকরি! আবার সিফু আর আমি দু’জনে দু’দিকে ছিটকে পরলাম। কোথাও চান্স না পাওয়ায় ওকে ঝিনাইদহ নিয়ে গেলেন বড় খালামনি, ফোন-টোন সব কেড়ে নিয়ে পাত্র দেখতে শুরু করে দিলেন ওর জন্যে। এদিকে ঢাকাতেও বিশাল গন্ডগোল করে রেখে গেছে মেয়ে! দু’দিন পরপর একেকজন এসে রীতিমত হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে আমাদের- সিফুর সাথে ‘বন্ধুত্ব’ ছিলো তাদের, ওর খোঁজ জানতে চায় এখন! নাহলে শান্তিতে থাকতে দেবেনা আমাদেরকে। উপায়ন্তর না পেয়ে সেই বাসাটা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যেতে হলো আমাদের, আমার মেডিকেলের কাছাকাছিই পলাশীতে একটা বিশাল বড়, পুরনো আমলের বাসা ভাড়া করলেন আব্বু। মা যদিও একেবারেই পছন্দ করেননি এই বাসাটা, আমার কিন্তু বেশ মনে ধরেছিলো! সেই ১৯৫৫ সালে বানানো হয়েছিলো এই তিনতলা বাসাটা! পুরনো হওয়াতে বিশাল বড় বড় সব রুম, টানা বারান্দা, শ্যাওলা ধরা সিঁড়ি, নোনাপানি মাখা ছাদ, ঘরের দেয়াল… ইশ! কী সুন্দর! কী ভয়ঙ্কর সুন্দর!

এভাবেই সবকিছু ছেড়েছুড়ে মাঝজীবনে এসে একেবারে নতুন একটা জীবন শুরু হলো আমাদের!

তখনও কি আমি জানতাম, কী ভীষণ চমক সাজিয়ে রেখেছে এই নতুন জীবনটা আমার জন্য?

নতুন জীবনে প্রায় বছর পাঁচেক কেটে গেছে! আমার পড়ালেখা আপাতত কিছুদিনের জন্যে থেমেছে, ইন্টার্নশিপ করছি এখন। সিফুটাকে বড়খালামনি ধরেবেঁধে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন এক প্রবাসী ছেলের সাথে। বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ওকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে গেছে সেই ছেলে, যতদূর জানি সেখানে ভালই আছে টোনাটুনি মিলে! মা’র কাছে শুনেছি সিফুর নাকি বাবু হবে, দু’মাস হলো খবর পেয়েছে। ভালোই চলছিলো সব ঠিকঠাক, কিন্তু ইদানিং এক যন্ত্রণা আরম্ভ হয়েছে- ঝামেলায় পড়েছি মা’কে নিয়ে! হাজার পড়ালেখা, হাজার ক্যারিয়ার হলেও নারীজন্ম নাকি সার্থক হবেনা বিয়েশাদী আর বাচ্চাকাচ্চা না হলে! যখন তখন, যেখানে সেখানে যাকে পাচ্ছেন তাকেই ধরে বসছেন মা- ‘রাত্রিটার জন্য একটা ছেলেটেলে খুঁজে দিন না! মোটামুটি ভালো বংশের হলেই চলবে, চাকরি বাকরি না থাকে তো আমরাই ব্যবস্থা করে দেবো- কেবল পাত্র চাই!’ মা’র ধারণা মেয়েরা নাকি কুড়িতেই বুড়ি, আর এদিকে তার মেয়ের তো ছাব্বিশ চলে! একে তো মেয়ের চেহারার এই হাল, তাতে বয়সের নেই গাছপাথর… ব্যস চিন্তায় চিন্তায় মা’র চুলে পাক ধরছে। কানা খোঁড়া, সকার-বেকার যেমন যা হোক, কেবল একটি পাত্র চাই! অশেষ খোঁজাখুঁজির পর গত মাসে এক ‘সুপাত্রের’ সন্ধান নিয়ে এলেন আমার ফুপু। ছেলের নাম কাউসার আলী, ঢাকারই একটা মেসে থাকে, তিন বছর ধরে চাকরির চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছেনা। হবেই বা কী করে? পড়ালেখা করেছে কেবল ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত! ফুপুর সেই সুপাত্র অনার্সে ভর্তি হয়ে বসে আছেন কোথাও একজায়গায়, কবে পাশ করবেন তারও ঠিক নেই! ছেলে নাকি আমার ছবি দেখেছে এবং অনেক ভেবেচিন্তে নিমরাজি হয়ে বলেছে- ‘একটা ভালো চাকরি আর সাথে ঢাকায় একখানা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিলে তবে এই মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব ভেবেচিন্তে দেখা যাবে!’ সাথে আরেকখানা শর্ত ছিলো- যেহেতু মেয়ে ডাক্তার এবং আয়-উপার্জন ভালই বলা চলে, তাই পাত্রের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব বউকেই নিতে হবে! বলা বাহুল্য, এই বিয়েতে কোনোমতেই রাজি ছিলাম না আমি। ওদিকে মা পারলে তখনই কাজী ডেকে এনে আমায় তিন কবুল বলিয়ে দেন! পাত্র সুদর্শন, লম্বায় ছ’ফুট, মধ্যবিত্ত পরিবারের হলেও ভাল বংশের… কালো মেয়েকে বিয়ে করছে এটুকু দাবি তো থাকবেই! তবু ডাক্তারি ডিগ্রীখানা ছিলো বলে আজ মেয়েকে পার করা যাচ্ছে, নাহয় কী যে হতো!

মা’কে পইপই করে বলে দিয়েছিলাম মরে গেলেও এই কুলাঙ্গাররটাকে আমি বিয়ে করবোনা! বাবাও একবাক্যে মানা করে দিয়েছেন, অথচ মা সেই গুনগুন গুনগুন করেই যাচ্ছেন! আজকে সকালে নাস্তার টেবিলেও সেই এক আলাপ-

‘রাত্রির বাবা, তোমার তো কোনো হেলদোল নাই! মেয়ে যে দিনদিন আইবুড়ো হচ্ছে সে খেয়াল আছে? ওর বয়সে আমি এক বাচ্চার মা ছিলাম, আর আমার কথা কী বলি? সিফুটাকে দেখো তো! দিব্যি বিয়েথা করে নিয়ে বাচ্চা হতে চললো!…’

-‘আহ সোহেলী! থামো তো! সিফুর সাথে আমার মেয়ের তুলনা যায়? সময় হলে সব ই হবে, আর না হলেই বা কি? রাত্রি আমার যোগ্য মেয়ে, যেন তেন গোবিন্দলাল ধরে এনে, যার তার হাতে তো ওকে তুলে দিতে পারিনা আমি! এ আমার মেয়ে নয়, এ আমার ছেলে! যদি কোনোদিন বিয়ে না ই করে রাত্রি, তবে তাই-ই সই, তবু এমন অপ্রস্তাব- কুপ্রস্তাবে আমি রাজি নই!’

ব্যস! আর যায় কোথায়! চিৎকার চেঁচামেচি করে, খাবার-টাবার ফেলে রেখে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন মা। এই এক বিষয় নিয়ে বারবার আলোচনা একদমই ভাল লাগছিলোনা আমার, কোনোমতে নাকে-মুখে একটু কিছু গুঁজে বাসা থেকে পালিয়ে বাঁচলাম! আজকে চিলড্রেনস ওয়ার্ডে ডিউটি আছে আমার। গোলগাল নাদুসনুদুস বাচ্চাগুলিকে দেখলেই মনটা শান্তিতে ভরে ওঠে আমার! আবার অসুস্থ হয়ে ভর্তি হওয়া বাচ্চাগুলির কষ্ট দেখলে বুকের ভেতরটায় উথাল-পাতাল করে ওঠে…

–‘এক্সকুজ মি? তুমি কি রাতরি না?’- প্রচণ্ড স্মার্টনেসের ঠ্যালায় শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে যেয়ে ঠিকঠাক বলতে না পারলে যেমন শোনা যায়, ঠিক সেই জগাখিচুড়ি ভাষাটা একেবারে কানে এসে লাগলো আমার। রোজকারের মত রাউণ্ড ডিউটিতে এসেছিলাম, আড়াই বছরের নিশা নামের বাচ্চাটার চেক-আপ করছিলাম ঠিক তখনই এই ঘটনা। ঘাড় ঘুরাতেই জগাখিচুড়ি ভাষার উৎসটা চোখে পরলো-

লম্বাচওড়া, সুঠামদেহী এক ‘সুপুরুষ’ দাঁড়িয়ে আছে সামনে! এই ভরদুপুরেও চোখে কালো সানগ্লাস লাগানো… কে এই উজবুক? চিনিনা, জানিনা প্রথম দেখাতেই আমায় ‘তুমি তুমি’ করে সম্বোধন করছে!

–‘জ্বি! আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না…’

–‘আই এম কাউছার! কাউছারালী…’

ইয়ামাবুদ! এই কাউ-সার কিনা শেষমেশ গরু খোঁজার মত আমায় খুঁজতে খুঁজতে এখানে পর্যন্ত এসে হাজির হয়েছে!

–‘আপনি! আপনি এখানে কেমন করে,কোত্থেকে…’

–‘তুমার আম্মু আমাকে এই এড্রেছ দিয়েচে! বলেচে এখানে দেখা কোড়তে…’

ইহ! কথার কী ছিরিরে বাবা! ওহ আচ্ছা! এইজন্যেই কি মা আজ সকালে এই প্রসঙ্গটা তুলেছিলো?

ভালো বিপদ হলো তো! এই উজবুকটাকে এবারে কী করে পাশ কাটাই?

–‘দেখুন কাউসার সাহেব! এটা তো একটা হসপিটাল, এখানে পারসোনাল বিষয়ে আলাপ আলোচনা না করাই বেটার! আমার মনেহয় আপনি…’

আমার কথা শেষ না হতেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে! নিশা নামের যে বাচ্চাটাকে আসা অব্দি ঘুমন্ত অবস্থায় দেখছিলাম, সে কখন জেগে গেছে কে জানে… আচমকাই লাফ দিয়ে আমার কোল বরাবর ছুটে আসে! যতদূর শুনেছিলাম জন্মগত একটা চোখের ত্রুটিতে ভুগছে বাচ্চাটা। প্রথম দিকে ওর বাবা-মা একদম ই টের পায়নি ওর সমস্যার কথা, তখন ঝাপসাভাবে কিছুটা দেখতেও পেতো সে। আস্তে আস্তে সমস্যা প্রকট হলে সেটা ধরা পড়ে এবং নানা জায়গায় নানারকম চেষ্টার পর গত সপ্তায় আমাদের হসপিটালে এনে ভর্তি করেছে। প্রায় পরে যাবার দশা হয়েছিল বাচ্চাটার, কোনোমতে জাপটে ধরি ওকে।

–‘মাম্মাম! তুমি এসেছো? কোথায় চলে গেছিলে, আমি কত্ত খুঁজলাম!’- দু’হাতে আমার গলা আঁকড়ে ধরে বলে নিশা।

এ আবার কেমন হলো! কীসব আজগুবি কাণ্ড ঘটছে আজ?

-‘অ্যাঁই মেয়ে? কে তুমি? কে তোমার মাম্মাম?’- কাউসার আলীর বিস্মিত কণ্ঠ কানে আসে আমার। সাথে সাথে বিদ্যুৎ এর মত একটা বুদ্ধি খেলে যায় মাথায়! যেন মাথার ভেতরের কথাগুলি পড়তে পারছে নিশা, একেবারে যুৎসই জবাব দেয় মেয়েটা!

-‘এটাই আমার মাম্মাম! চলে গেছিলো কোথায় জানি, আজকে এসেছে আবার! তুমি কে?’

উজবুকটার চেহারাটা হয়েছে দেখবার মতো!

নিশাকে কোলে জাপটে ধরেই ফিসফিসিয়ে কাউসার আলীর উদ্দেশ্যে বললাম আমি-

‘আপনি বাইরে ভিজিটরস রুমে যেয়ে বসুন, আসছি আমি!’

(চলবে)

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ