#তবুও_তোমায়_চাই (arrogant lover)
#পর্ব_৫ (অন্তিম পর্ব)
#লেখিকা_নুসরাত
ভার্সিটি থেকে জানানো হয়েছে আগামীকাল অনুষ্টান আছে৷ ছেলেরা পাঞ্জাবি আর মেয়েরা যেনো শাড়ি পরে আসে৷
হিমু তো বাসায় এসেই শাড়ি দেখা শুরু করে দিয়েছে৷ একটা একটা করে শাড়ি পরছে আর আয়নার সামনে গিয়ে ট্রায়াল দিচ্ছে৷ অবশেষে তার পছন্দ হলো হাল্কা অরেঞ্জ কালারের মধ্যে হাল্কা ক্রিম কালার মিক্স করা শাড়ি৷সাথে মেচিং করে চুড়ি আর অর্নামেন্টসও রেখে দিয়েছে৷ কাল পরে যাবে৷ সব গুছিয়ে রেখে শাওয়ার সেরে দুপুরের খাবার খেয়ে রিমুর সাথে গল্প করায় ব্যাস্ত হয়ে পরলো৷
এদিকে হিমেল ভাবনায় আছে কি করে হিমুকে শায়েস্তা করবে৷ আগামীকাল ভার্সিটির সব রুম বন্ধ থাকবে৷ এটাই মোক্ষম সুযোগ৷ তাই হাত ছাড়া করতে চাইছেনা৷ এসব ভাবনার মাঝেই ফোন আসলো রোহানের৷ হিমেল ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রোহান বলল,,,কিরে হিমেল কি প্ল্যান করলি? তারাতাড়ি বল ইয়ার আমি যে খুব এক্সাইটেড হয়ে গেছি তোর প্ল্যান কি জানার জন্যে৷
হিমেলও একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,,আরে আরে আবুল থামবি তো আগে৷ আর শুন এখন আমি প্ল্যান সম্পর্কে কিছু বলতে পারবোনা৷ জাস্ট এটুকু জেনে রাখ ওকে আমি মানসিক ভাবে আঘাত করবো৷ যাতে পরবর্তীতে আমার দিকে তাকাতেও ভয় পায়৷ এখন রাখছি৷বায়৷ ৷৷৷৷
রাতে,,,,
লিভিং রুমে বসে আছেন মিস্টার চৌধুরী আর উনার স্ত্রী মিসেস লায়লা৷ টিভিতে নিউজ দেখছেন উনারা৷
হিমেলকে এত রাতে বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখে দুজনেই তাকিয়ে আছেন৷ এটা নতুন না সে সবসময়ই রাত ১১টায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় আর রাত ২টা ৩টায় বাড়িতে ফিরে৷ হিমেলের দিকে একবার তাকিয়ে নিজেদের কাজে মন দিলেন তারা৷ হিমেলকে বুঝিয়েও কোনো লাভ নেই৷
সকালে খুব পরিপাটি হয়ে সাজলো হিমু৷ আয়নায় নিজেকে দেখছে আর ভাবছে,,,আরে বাহ আমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে এই শাড়ি আর অর্নামেন্টসে৷ তারপর আয়নার সামন থেকে সড়ে গিয়ে রিমুর কাছে গেলো৷ রিমুকেও খুব সুন্দর লাগছে৷ সে এমনিতেই সুন্দর লাল শাাড়িতে যেন আরও সুন্দর লাগছে৷ হিমু মুগ্ধ হয়ে দেখছে রিমুকে তারপর জড়িয়ে ধরে বললো,,,,, আপু জানো তোমায় কতটা সুন্দর লাগছে৷৷ রিমুও হিমুর গাল টেনে বললো,,,তকেও খুব সুন্দর লাগছে মেরি বেহেন৷
অতঃপর তারা বাসা থেকে বেড়িয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে৷ খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ভার্সিটিকে আজ৷ ফুল আর বেলুন দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে৷ হিমু ঘুরে ঘুরে ডেকোরেশন দেখতে থাকলো রিমুকে নিয়ে৷ রিমুর শাড়ির কুচি খুলে যাওয়াতে সে ওয়াশরুমে ডুকে পরলো৷ হিমু আস্তে আস্তে করিডোর দিয়ে হাটছে ঠিক তখনি একটা হাত এসে হিমুকে টেনে নিয়ে একটা খালি রুমে ছুরে মারলো৷ হিমু তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে ছিটকে পরলো৷ তারপর তাকিয়ে দেখে হিমেল চোয়াল শক্ত করে দাড়িয়ে আছে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে রেগে৷ ভালো করে তাকিয়ে দেখল হিমেলের সাথে কতগুলো ছেলে আর একটা মেয়ে আছে৷ মেইবি এরা হিমেলের ফ্রেন্ড হবে৷ এসব ভাবতে ভাবতে দাঁড়িয়ে গেলো হিমু৷ মেয়েটি এগিয়ে আসলো হাতে একটা পানির বোতল৷ তারপর বললো,,,তুই নাকি আমার বেবিকে কাল চড় দিয়েছিস৷ এত সাহস তোর৷ একবারও ভাবলি না যে এর পরিনতি কি হতে পারে৷ আমি ওর গার্লফ্রেন্ড আলিশা৷ আমি একটু দোষ করলেই ও আমায় মাফ করেনা৷ আর তুই তো ওকে চড় মেরেছিস তাও সব জুনিয়রদের সামনে তোকে কিভাবে ছেড়ে দিবে ভাবলি৷ এটা বলে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে হাতে থাকা বোতলের সব পানি ছুরে মারলো হিমুর উপর৷ হিমুর শাড়ি পাতলা ছিলো তাই বিজে গিয়ে তার পিট আর পেঠ দেখা যাচ্ছে৷ হিমুর সেদিকে কোনো খেয়াল নেই স্ট্যাচুর মতো দাড়িয়ে আছে সে৷ আর এক ধ্যানে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ওকে এভাবে দাড়িয়ে তাকতে দেখে হিমেল এগিয়ে গিয়ে ঠাসসস করে চড় মেরে দিলো হিমুর গালে৷ হিমু গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে হিমেলের দিকে৷ হিমুকে এভাবে তাকিয়ে তাকতে দেখে হিমেল বললো,, আরে বাহ তুমি তো সে লেভেলের হট৷ এই বেজা শাড়িতে তোমাকে এত হট দেখাচ্ছে ইচ্ছতো করছে,,, না থাক কি ইচ্ছে হচ্ছে সেটা নাহয় না ই বললাম৷ কথাটা বলে একটা চোখ টিপ দিলো হিমেল৷ হিমু ঘৃনার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে হিমেলের দিকে আর চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে৷ মানছে সে সেদিন না বুঝে হিমেলকে চড় দিয়েছিলো তাই বলে ওকে ফাকা একটা রুমে নিয়ে গিয়ে এভাবে অপমান করবে৷ এসব ভাবতে ভাবতে কাদতে কাদতে দৌড়ে চলে গেলো হিমু৷ রিমু করিডোর দিয়েই আসছিলো তখনি দেখলো হিমু চোখ মুচতে মুচতে দৌড়ে চলে যাচ্ছে অনেকবার ডাকার পরেও থামেনি সে৷ আশ্চর্য হিমুর এই অবস্থা কেনো আর এভাবে দৌড়েই বা গেলো কেনো৷ তখনি রিমুর চোখ পরলো হিমেল আর ওর ফ্রেন্ডের উপর৷ তারা বসে বসে হাসাহাসি করছে৷ রিমুর আর বুঝতে বাকি নেই যে হিমেলই হিমুর সাথে কিছু একটা করেছে (হিমু একদিন হিমেলের ব্যাপারে সব খুলে বলেছিলো রিমুকে৷)
রিমু রেগে এগিয়ে গিয়ে বললো,,,,আপনারা কি করেছেন হিমুর সঙ্গে৷ মেয়েটা কয়েকদিন হলো মাত্র ঢাকায় এসেছে৷ আর আপনারা এখনি তার সাথে এমন ব্যবহার শুরু করে দিলেন ৷ তারপর হিমেলের দিকে তাকিয়ে বললো,,আপনি এটা না করলেও পারতেন৷ বলে হনহনিয়ে চলে গেলো রিমু৷
হিমেলের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই সে তো শুধু ভাবছে এই মেয়েই কি তাহলে সে যাকে আমি এভাবে খুজতেছি৷ হিমেল শিওর হওয়ার জন্য চলে গেলো প্রিন্সিপালের কাছে৷ সে হিমুর কলেজ আর বাবার নাম আগে থেকেই জানে৷ তাই খুজে পেতেও কষ্ট হলোনা৷ হিমেলের সন্দেহই ঠিক৷ এই মেয়েই তার হিমু৷
এদিকে হিমু কাদতে কাদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলসে৷ দুপুরে কোনো রকমে লাঞ্চ করে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে সে ভাবতেই পারছেনা হিমেল এতটা নিচু৷
রাতে,,,,,,,
হিমেল গিটার নিয়ে ব্যালকনিতে বসে আছে আর ভাবছে,,,আমার এত গার্লফ্রেন্ড আছে সবাই খুব সুন্দর তবুও আমি ওর প্রতিই কেনো এত দুর্বল৷ সবার সাথেই আমি ব্রেকআপ করে ফেলসি কিন্তু তাদের মধ্যে একজনকেও তো মিস করছিনা৷ আমি কি শুধুই ওর প্রতি দূর্বল নাকি ওকে আমি ভালবাসি ৷হ্যা ভালবাসি আমি ওকে ভালবাসি তাইতো এতো মিস করছি ওকে৷ তারপর গিটারে সুর তুলল,,,,,,
Kal raste me,ghum mil gaya tha
Lag ke gale main kho diya..
Jo sirf mera,tha sirf mera
Maine usse kyun kho diya..
Haan woh aankhehin jinhein choomta tha bewajah
Pyar mere liye kyun unme baki na raha..
Humnava mere tu hai toh meri sansein chale
Bata de kaisi mein jyunga tere bina…..
গানটা গেয়ে এক ফোটা চোখের জল ছাড়লো হিমেল৷ গানের প্রতিটি লিরিক্স যে তার জিবনের সাথে মিলে গেছে৷
কেটে গেলো একমাস৷ এই একমাসে হিমু হিমেলের দিকে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখেনি৷ দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়৷ একপ্রকার ইগনোর করেই চলে৷ হিমুর এরম ইগনোর হিমেল আর মেনে নিতে পারছেনা৷ হিমেল কথা বলার জন্য অনেকবার হিমুর কাছে গিয়েছে কিন্তু হিমু সাথে সাথে চলে যায় সেখান থেকে৷
কয়েকদিন পর,,,,,,
হিমু মাঠে বসে আছে ইশা কে নিয়ে৷ হঠাৎই হিমেল হিমুর সামনে এসে হাঁটু ভেঙে বসে পরলো৷ হিমেলের এরকম আচরণ দেখে হিমু ইশা দুজনেই খুব অবাক৷ তারপর হিমেল ছলছল চোখে হিমুর দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে বললো,,,,, প্লিজ হিমু আমাকে আর কষ্ট দিয়োনা৷ আমাকে তুমি অন্য শাস্তি দাও আমি মাথা পেতে নিবো৷ কিন্তু তোমার কথা না বলা যে আমি মেনে নিতে পারছিনা৷ আমি জানি আমি যা করেছি সব অন্যায় তাই তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিব৷ তাও আমার সাথে কথা বলো৷ তোমার কথার উপরেই যে আমি প্রথমে প্রেমে পরেছিলাম তখন বুঝতে না পারলেও এখম বুঝতে পারছি৷ প্লিজ হিমু৷ দেখো তোমার জন্য আমি আমার সব গার্লফ্রেন্ডদেরও ছেড়ে দিয়েছি৷ তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্যে আমার কোনো আপসোস হয়না৷ কারন ওরা শুধু মাত্র আমার টাইম পাসের কারন ছিলো৷ ওদের সবাইকে ছাড়তে পারলেও তোমাকে ছাড়তে পারবো না খুব ভালবাসি তোমায়৷ হ্যা ভালবাসি, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি হিমু৷ বলেই মাথা নিচু করে কাদতে থাকলো৷ হিমু তাকালো ইশার দিকে৷ ইশা ইশারায় বললো যেন এবারের মতো মাফ করে দেয়৷ হিমু আস্তে আস্তে হিমেলের মাথায় হাত রাখল৷ হিমেল মাথা তুলে তাকালো এবার হিমুর দিকে৷ হিমু বললো,,,আমি জানি আপনি সেদিন যা করেছেন সেটা অন্যায় ছিলো৷ কিন্তু এখন যখন ক্ষমা চাইছেন তাই আমার উচিৎ আপনাকে ক্ষমা করে একটা শেষ সুযোগ দেওয়া৷ হিমু তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে কথাটা শুনে হিমেল এতটাই খুশি হয়েছে উঠে হিমুকে জড়িয়ে ধরলো সে৷ ভার্সিটির সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে৷ এসব দেখে হিমুর অস্বস্তি হলেও হিমেল এসব তোয়াক্কা করছেনা৷ হিমুর কানে কানে ফিসফিস করে বললো,, আই লাভ ইউ হিমুপাখি৷
হিমুও একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,, at last এই শ্যামলা মেয়ের প্রেমেই পরলেন৷ বায় দ্যা ওয়ে, আই লাভ ইউ টু হিমেল৷
হিমেল বললো,,প্রেমেতো আমি তোমার সেদিনই পরেছিলাম যেদিন তোমায় ওই নীল শাড়ি পরা দেখেছিলাম৷ বাট সেদিন ভালো লাগার ছেয়ে রাগ বেশি হয়েছিলো৷
হিমু কিছু না বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷
হিমুর এভাবে তাকিয়ে তাকা দেখে হিমেল হেসে বললো সেটা নাহয় অন্যদিন বলবো এখন আপাদত ক্লাসে যাও বলে হিমুর কপালে একটা কিস করলো৷
হিমুও হেসে চলে গেলো৷ হিমেল সেখানেই দাড়িয়ে আছে আর হিমুর চলে যাওয়া দেখে মিটিমিটি হাসছে৷
আজ তাদের দুজনেরই ভালবাসা পুর্নতা পেলো৷
সমাপ্ত!