#তবুও_তোমায়_চাই (arrogant lover)
#পর্ব_৩
#লেখিকা_নুসরাত
জলজ্যান্ত হিমেল দাড়িয়ে আছে বাইকে হেলান দিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা এটিটিউড নিয়ে৷ হিমু মুগ্ধ হয়ে হিমেলকে দেখছে আর ভাবছে এত দেখি বাস্তবে আরও বেশি সুদর্শন৷ হিমুকে হঠাৎ এভাবে হিমেলের দিকে থাকিয়ে তাকতে দেখে রিমু খুব বিরক্ত হলো আর বলল এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই উনি হলেন আমাদের ভার্সিটির ভিপি এন্ড ক্রাশ বয়৷ তাই এভাবে না তাকিয়ে চল বরং ক্লাসে যাই৷ রিমুর কথা মেইবি হিমুর কানেই যায়নি তাই সে যেভাবে তাকিয়ে ছিলো ঠিক সেইভাবে এখনো তাকিয়ে আছে৷ রিমু ধাক্কা দেওয়ার পর তার হুশ আসলো৷ তারপর বললো হুম আপু চলো৷
গেইট পেরিয়ে মাঠে পা রাখতেই,এই শুনো,,কথাটা শুনা মাত্রই হিমু আর রিমু থেমে গেলো৷ আর পিছনে তাকিয়ে দেখে হিমেল তাদের থামার কথা বলেছে৷ থামার মানেটা হিমু না বুঝলেও রিমু খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরে গেছে যে এইমুহূর্তে তাদের কি করতে হবে৷
হিমেল এগিয়ে আসলো৷ হিমুকে দেখেতো সে খুব খুশি৷ হিমুকে দিয়ে র্যাগিং করাবে সে ভাবছে (আসলে যখন রিমু আর হিমু আসছিলো তখনি হিমেল হিমুকে চিনে ফেলে আর এগিয়ে আসে)
হিমু আবারও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে হিমেলের দিকে এই প্রথম সে সামনা-সামনি হিমেলের কন্ঠ শুনছে৷
তারপর নিজেকে ঠিক করে বললো,,,,জী বলুন কী বলবেন?
র্যাগিং করতে হবে তোমাদের৷
র্যাগিং এর কথা শুনে হিমুর মেজাজ একেবারে বিগড়ে গেলো কারন সে এসব র্যাগিং একদম পছন্দ করেনা৷ তাই রাগি গলায় বললো,,,ভার্সিটি কী আপনার বাবার নাকি যে যাই বলবেন তাই করতে হবে৷ এসব র্যাগিং ট্যাগিং আমি করতে পারবোনা আর আমায় যেতে দিন৷ আমি ক্লাসে যাবো৷
হিমুর এই কথাগুলোই যথেষ্ট ছিলো হিমেলকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্যে৷ এখন পর্যন্ত কোনো মেয়ে বা ছেলে তার মুখে মুখে কথা বলেনি আর এই মেয়ে প্রথম দিন এসেই তাকে এভাবে কথা শুনালো৷ সেই দিনের ইগনোর আর আজকের অপমান কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা সে তাই বললো,,,হেই গার্ল ইউ হেভ এনি আইডিয়া হু আইএম????
আর কিছু বলতে পারছেনা হিমু কারন তার নিজেরও ভালো লাগছেনা হিমেলকে এভাবে কথা শুনাতে তাই সে মাথা নিচু করে আছে৷ হিমুর এরকম মাথা নিচু করে রাখায় হিমেলের আর বেশি রাগ উঠে গেলো তাই সে চিৎকার দিয়ে বললো,,, এ্যান্সার মি ড্যাম ইট৷
হিমু মাথা তুলে বললো আপনি যেই হোন না কেন এসব র্যাগিং আমার দ্বারা হবেনা৷ আমি করতে পারব না৷
হিমেলের চিৎকারের কারণ জেনে প্রিন্সিপাল চলে আসলেন তারপর বললেন একি কি হচ্ছে এখানে৷৷ আর হিমেল এদের যেতে দাও এরা আমাদের ভার্সিটির কমিটির মেয়ে আর ভাগ্নি৷ অতঃপর হিমু আর রিমুর দিকে তাকিয়ে ইশারায় যেতে বললেন৷ দ্রুত পায়ে চলে গেলো দুজন৷ ( ওপস বলাইতো হয়নি রিমু অর্নাস সেকেন্ড ইয়ার আর হিমু অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারে পরে)
ক্লাসে গিয়ে ধপ করে বসে পরলো হিমু৷ খুব কান্না পাচ্ছে তার যে ছেলেটিকে এতো ভালোবাসে সেই ছেলেটি তর সাথে এভাবে কথা বললো৷ ক্লাসের মেয়েরা কীরকম ভাবে দেখছে হিমুকে৷ অনেকে তো ভেংচিও কাটছে কেও কেও তো আবার ফিসফিস করে কথা বলছে হিংসার চোখে দেখছে তাদের ক্রাশের মুখে মুখে কথা বলেছে বলে কথা৷ এইমুহূর্তে এইসব কিছু পরুয়া করছেনা হিমু৷ একটু সময় যাওয়ার পর একটা মেয়ে এসে বসলো হিমুর পাশে৷ তারপর হিমুকে দেখে বললো,,,, হেই তোমাকে দেখেতো নিউ মনে হচ্ছে যাইহোক আমি ইশা সায়েদ৷ তোমার ক্লাসমেট৷ আমাকে নিজের বন্ধু ভাবতে পারো৷ হবেতো আমার বন্ধু৷
হিমুও হেসে মাথা নাড়লো৷ এইমুহূর্তে তার একটা বন্ধুর খুব দরকার ছিলো৷ আর সে সেটা পেয়েও গেছে৷ সেটা ভেবেই মনে মনে একটা হাসি দিলো হিমু৷
বায় দ্যা ওয়ে,,শুনলাম তুই নাকি হিমেল ভাইয়ার মুখে মুখে কথা বলেছিস৷ যদি বলেও থাকিস তাহলে আমি বলবো খুব ভালো করেছিস৷ জানিস ব্যাটার কতো গার্লফ্রেন্ড৷ তাছাড়াও সে নাকি রাত ২টা ৩টায় পার্টি থেকে বাড়িতে ফিরে৷ তাকে দেখে একসময় আমিও ক্রাশ খাইসিলাম তারপর যখন জানলাম এসব করে তারপর থেকে তাকাতেও জানি কেমন একটা লাগে৷ তার মাঝে কী এটিটিউড বাবারে৷ কথাটা একনাগাড়ে বলেই থামলো ইশা৷ আর এতক্ষন হিমুও তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো আর ভাবতে থাকলো কেমন মানুষকে ভালোবেসেছে সে৷ যদিও এই অবাধ্য মনকে মানানো যায়না৷
রাতে ডিনারে বসেছে হিমেল কিন্তু কিছুতেই তার গলা দিয়ে খাবার নামছেনা৷ কারন এরকম অপমানিত সে কোনোদিন হয়নি তাই সে মনে ভাবছে কিভাবে মিস অজানাকে এর শাস্তি দেওয়া যায়৷ কোনোরকমে খাবারটা গিলে রুমে চলে গেলো সে৷ ফোন নিয়ে ফেসবুকিং করতে থাকলো৷ হঠাৎ কি মনে করে হিমুর আইডিতে ঢুকল৷ কিন্তু না ওতো এক্টিভে কিছুদিন ধরেই নেই৷ মেয়েটা যেখানে আমায় প্রত্যেকদিন মেসেজ করতো আজ সেখানে এতটা দিন হয়ে গেলো আমায় একটা মেসেজও করেনি৷ আচ্ছা ওর কিছু হয়নিতো৷ এসব ভাবতেই ধক করে উঠল তার বুক৷ তারপর আবার নিজেই নিজেকে বকতে শুরু করলো যে সে এসব নিয়ে কেনো ভাবছে৷ বাট তবুও নিজের মনকে কিছুতেই মানাতে পারছেনা সে৷ কজ মেয়েটা যে তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো৷ প্রথমে বুঝতে না পারলেও এখন ঠিক বুঝতে পারছে সে কতটা মিস করছে হিমুকে৷ অন্যদের সাথে কথা না বললেও এমনটা হয়না
এদিকে হিমু রেগে ফেসবুক লগ আউট করে ফেলসে যাতে হিমেলের কোনো স্মৃতি না থাকে৷ না বুঝে ভালোবেসে ফেলেছিল তাকে৷ চাইলেই অস্বিকার করতে পারছেনা৷ এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো হিমু৷
পরেরদিন ভার্সিটির চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে হিমু৷ দেখতে দেখতে একটা ফাকা ক্লাসরুমের সামনে এসে দাড়ালো৷ চলে যেতে নিতেই একটা হাত এসে টান মেরে সেই ফাকা ক্লাসরুমে নিয়ে গিলে৷ হিমু চিৎকার দিবে এমনিই ছেলেটি হিমুর মুখ চেপে ধরলো যাতে তার চিৎকার কেউ না শুনে৷ হিমু মুখ তুলে তাকাতেই সামনের ব্যাক্তিকে দেখে কয়েক দফা শখ খেলো৷ কারণ সামনের ব্যাক্তিটি আর কেও না সে হলে হিমেল৷ কয়েক সেকেন্ড হিমুর দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে থেকে বললো এইরূপ নিয়েই এতো তেজ যদি অন্যদের মতো সুন্দরী হতে তাহলে তো আর মাঠিতে পা ই পরতো না৷ শ্যাম বর্নের হয়ে এতো এটিটিউড ভালো না৷ বায় দ্যা অয়ে,, যে কথাটা বলার জন্যে এসেছিলাম সেটা হলো আমি যাতে তোমাকে আর কোনোদিন আমার আসেপাশে না দেখি আর যদি কোনোদিন আমায় তোমার আসেপাশে দেখো তাহলে সেখান থেকে সাথে সাথে চলে যাবে কারন তোমাকে দেখলে আমার মাথার রক্ত গরম হয়ে যায়৷ কারন খুব ঘৃনা করি তোমায়৷ কথাটা বলে রেগেমেগে রুম থেকে চলে গেলো হিমেল৷
হিমেল যাওয়ার সাথে সাথেই রুমের ফ্লোরে বসে কাদতে থাকলো হিমু৷ কিছুক্ষণ কান্না করার পর চোখ মুখ মুছে ক্লাসে চলে গেলো আর খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করলো৷ এমুহূর্তে সে শুধু তার লেখাপড়াকে টাইম দিতে চায়৷ অন্য বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে সে এখন তার স্টাডি নিয়ে থাকবে মনে মনে প্রমিস করলো হিমু৷
রাতের বেলা,,,,
আজও হিমেল হিমুর আইডি চেক করছে মেসেজ করছে বাট রেজাল্ট জিরো৷ রেগে ফোনটা ছুরে মারলো হিমেল তারপর বিরবির করে বলতে থাকলো,,,এই মেয়েটা কি বুঝতে পারছেনা কতটা মিস করছি ওকে আমি৷ প্লিজ হিমু জাস্ট একটিবার কথা বলো আমার সাথে৷ আই সোয়ার আর কখনো তোমায় কষ্ট দিবোনা প্লিজ৷ আর কখনো তোমায় ব্লক দেবোনা আনফ্রেন্ড করবোনা এবারের মতো আমায় মাফ করে দাও৷ আমি ভাবতেই পারিনি তোমার সেই বোকা বোকা কথাগুলা আমি এত মিস করবো৷ আমি যে তোমার কথাগুলোর প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছি৷ দেড়িতে হলেও এখন বুঝতে পারছি,এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো সে৷
______________
এই ভাবেই কেঠে গেছে আরও এক মাস৷ এই একমাসে হিমেল হিমুকে নানান কথা শুনিয়েছে৷ প্রথমে হিমু এর প্রতিবাদ করলেও এখন করেনা৷ কারন এসব তার অভ্যাস হয়ে গেছে৷
হিমেল তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছিলো৷ হঠাৎ ওর চোখ পরে একটা মেয়ের ওপর যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গপাগপ করে ফুচকা গিলে যাচ্ছে৷ মেয়েটির শুধু পেছন দিক দেখা যাচ্ছে৷ হিমেল এক মনে তাকিয়ে আছে তার দিকে৷ রিয়াদ এগিয়ে এসে বললো হিমু আপু তোমার খাওয়া শেষ তো? হিমু নাম শুনে চমকে উঠলো হিমেল৷ আর ভাবতে থাকলো কোথায় শুনেছে এই নামটি৷ তারপর মনে পরল যে মেয়ের মেসেজের পাওয়ার জন্যে সে প্রতিদিন অপেক্ষা করে
তার আইডি চেক করে সেই মেয়ের নামই হিমু৷ এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকিয়ে দেখে হিমু চলে গেছে ততক্ষনে৷
চলবে,,,,,