ঝগরাটে ভালবাসা পার্টঃ৩
লেখাঃতামান্না খান
এস এস সি পরিক্ষা শুরু হল।দুইটা পরিক্ষা দিলাম,অনেক ভাল হয়েছে।দুপুরে পড়তে বসেছি এমন সময় কারেন্ট চলে গেল।সন্ধ্যা হয়ে গেল কারেন্ট এখনো আসেনি।পরে দেখা গেল সবার বাড়িতেই কারেন্ট আছে।শুধু আমাদের বাড়িতেই নেই।কারেন্ট এর লাইনে কিছু সমস্যা হয়েছে সকাল না হলে ঠিক করা যাবে না।এদিকে চার্জার লাইটে চার্জ নেই,আমি মোমের আলোতে পড়তে পারি না।কালতো ইংরেজী পরিক্ষা।কিভাবে যে পড়ি।আমার পড়ার যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য আয়ান রাস্তার পাশ থেকে চোরাই লাইনের ব্যবস্থা করলো।ভোরে সবার ওঠার আগেই লাইন খুলে ফেললো।আমি তো অবাক হচ্ছি,যে আয়ান আমাকে ইচ্ছে করে ঝামেলায় ফেলে সে কিনা আমার জন্য এই কাজ করলো।যাই হোক, একটা ধন্যবাদ না দিলেই নয়।
আয়ান…..
কি বলবি বল?
ধন্যবাদ
এটা কি শুনছি আমি!এতো দেখি ভুতের মুখে রাম রাম।তুই কি ভাবছিস তোর জন্য আমি এগুলো করেছি?তোর পরিক্ষা খারাপ হলে আমার কিছু যায় আসবে না কিন্তু আমার আব্বু আম্মু অনেক কষ্ট পাবে।যা আমি কখনোই চাইনা।এজন্যই একাজ করা।হয়েছে হয়েছে, আর বলতে হবে না।আমার বুঝতে ভুল হয়ে গেছে।তবুও ধন্যবাদ।তোর মতো বাদর ছেলে যে আব্বু আম্মুর কথা ভেবেছে তাইতো অনেক।
দেখ একদম বারর বলবি না।একশ বার বলবো।বাদর বাদর বাদর।তোর পরিক্ষাই ভাল হবে না।শকুনের কথায় গরু মরে না বুঝলি।কি তুই আমাকে শকুন বললি,দারা।এক দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।।
পরিক্ষা শেষ হয়েছে আজ রেজাল্ট দিবে। রুমে বসে আছি,খুব টেনশন হচ্ছে।কেমন যে হলো।ওই তুহি….কি হইছে ডাকছিস ক্যান?তোর কাছে এটা আশা করি নাই,এরকম রেজাল্ট আমার বংশেও কেউ করেনি।আব্বু আম্মুর মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলি।আবার বলিস ডাকি ক্যান।
আয়ানের কথা শুনে কেদে দিলাম।আমিতো ভালই পরিক্ষা দিলাম তবে?কিরে তুহি কাদছিস কেন(বড় মার এন্ট্রি)
বড় মা আমাকে ক্ষমা করে দাও।বুঝতে পারছিনা কিভাবে এমন হল।
বুঝেছি,আয়ান তুহিকে কি বলেছিস?কই আমি কিছু বলিনাইতো।
জানিস তুই পুরো জেলাতে টপ করেছিস।তবে যে আয়ান বললো…..তুই তো অকে চিনিসই।আয়ান হাসছে।আমাকে কাদাতে তোর খুব ভাল লাগে তাই না ।শয়তান কোথাকার।বলে বালিস দিয়ে ঠিল মারলাম।অই বান্দুন্নী আমি একবারও বলিনি তুই ফেল করছস।কুত্তা থামবি।আম্মু তোমার সামনে আমাকে গালি দিচ্ছে।তুই কেনো অর সাথে এরকম করস।আম্মু তুমিতো অর পক্ষই ধরবে।বাদ দে এখন তোর আব্বুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিষ্ট কিনে আন।
বড় মার একটা আবদার আয়ান আমাকে কলেজে নিয়ে যাবে।আয়ানের কলেজেই ভর্তি হলাম।বড়মার কথা ভেবে দুজনেই রাজি হলাম।
কই তুই কি আসবি?
এইতো আসছি,
ওই তুই কি কলেজে পড়তে যাবি নাকি বিয়ে বাড়ির দাওয়াত খেতে যাবি?এত সময় লাগে রেডি হতে।
প্রতিদিন বক বক করতে তর কেমন লাগেরে
তাও তো প্রতিদিন দেরি করিস।আম্মু বলেছে,তাই প্রতিদিন এই জ্বালা পোহাতে হয়।
তোর কি মনে হয়,তোর সাথে কলেজ যাওয়ার জন্য আমি নাচতেছি।আমিও বড় মার জন্যই এই অত্যাচার সোয্য করছি।
আয়ান ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।প্রতিদিন আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে তারপর অ ভার্সিটিতে যায়।আয়ানের সাথে বাইকে করে যাই।এমন কোন দিন নেই যে আমাদের ঝগরা না হতো।মাঝে মাঝে অ আমাকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিত।আবার মাঝে মাঝে আমি নিজেই নেমে যেতাম।ছোট বেলার ঝগরা নাকি বড় হলে কমে যায় কিন্তু আমাদের ওল্টো।যতই বড় হচ্ছি ঝগরার পরিমান ততোই বাড়ছে।
এইস এস সি পাস করার পর…..
বড়মা আমি ভর্তি হবো না।কেনরে মা রেজাল্টতো ভাল হয়েছে তবে?বুঝলে না আম্মু তুহির বিয়ের ব্যবস্থা কর।বড়মা আয়ানকে চুপ করতে বল।ভর্তি হবো কিন্তু এবার থেকে আমি একাই ভার্সিটিতে যাব।হ্যা মা, আমিও ওকে নিয়ে যেতে পারবো না।এই প্রথম তুই কোন ভাল কথা বলছিস।কিন্তু তোরা তো এখন এখন এক ভার্সিটিতেই পড়বি (বড়মা)
তবুও আমরা আলাদাই যাব(দুজনে একসাথে)
আয়ান শুধু ঝগরা করে ।না মা তুহি আমার সাথে ঝগরা করে।তুই করিস
না তুই করিস
থামবি তোরা,যেতে হবে না তোদের একসাথে।
আমি এখন থার্ড ইয়ারে পড়ি।আয়ান অনার্স পাস করে ভাল একটা চাকরি করছে।