জোরপূর্বক ভালোবাসা পর্বঃ ০৭

0
2560

জোরপূর্বক ভালোবাসা পর্বঃ ০৭
– আবির খান

এরপরের দিন ভারসিটিতে…
তমা আর তিশা ভারসিটিতে ঢুকে ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো….

তমাঃ দোস্ত তোকে কিছু বলতে চাই…
তিশাঃ বল…(কাল রাতের জন্য এখনো রেগে আছে)
তমাঃ আমিওনা…
তিশাঃ তুইওনা কি???
তমাঃ আবিরকে….
তিশাঃ আবিরকে????
তমাঃ যাহ লজ্জা লাগে…বলতে পারবো না…
তিশাঃ ওএমজি…মিস তমা চৌধুরীর দেখি আবার লজ্জাও পায়..বল না কি???
তমাঃ তাকে ভালোবেসে ফেলেছি…
তিশাঃ একরাতের মধ্যেই তাকে ভালোবেসে ফেললি!!!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


এরপর কাল রাতে ঘটে যাওয়া সব তিশাকে বলল তমা..তিশা শুনে খুব খুশি হয়েছে..

তিশাঃ যাক দোস্ত বলছিলাম না…আবির ভাইয়া ঠিকই তার প্রেমে তোকে ফালাবে..
তমাঃ হুম..আচ্ছা বাই দা ওয়ে…তোকেও আজ কিছুটা অন্যরকম লাগছে…ব্যাপারটা কি বলতো হুম??
তিশাঃ যাহ আমারও লজ্জা লাগে…
তমাঃ কি শুভ ভাইয়া সামথিং সামথিং হুম…গুতো দিয়ে…
তিশাঃ পাগলটা কাল রাত ১ টার সময় আমাকে প্রোপোজ করেছে…জানিস আবির ভাইয়াই নাকি ওকে বলেছে কাল আমাকে প্রোপোজ করতে…
তমাঃ হুম…দেখেছিস..তোকে প্রোপোজের মজাটা দিলো আর আমাকে এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি..
তিশাঃ কেন পাপ্পি টা…
তমাঃ ধুহ..আমি প্রোপোজের কথা বলছি…
তিশাঃ চিন্তা করিস না…করবে করবে…হয়তো কোন বড় প্লান করছে..

তমাঃ হুম হয়তো… ভয় হচ্ছে রে..
তিশাঃ কিসের ভয়??
তমাঃ জীবনে কোনদিন কাউকে ভালোবাসি নি মানে প্রেম করি নি..কত ছেলের প্রোপোজ পেয়েছি সব ফিরিয়ে দিয়েছি শুধু একজনের জন্য…যে নিজের থেকেও আমাকে বেশি ভালোবাসবে..
তিশাঃ তো ভয় কিসের..আবির ভাইয়াতো তোকে অনেক ভালোবাসে..কাল দেখলি না সবার সামনে কিভাবে বলল..
তমাঃ হুম বলেছে..কিন্তু আমার ভয়টা হলো সেখানে যে তার এই ভালোবাসা যদি মিথ্যা হয়…আমার সবটা পাওয়াই যদি তার একান্ত উদ্দেশ্য হয়??আর বাকি ১০টা ছেলের মতো…
তিশাঃ তমা তুই একটু বেশিই ভাবছিস…আবির ভাই বাকিদের মতো কোনদিনই না..সে সবার থেকে অনেক আলাদা… সেটা তুইও ভালো করে জানিস..
তমাঃ হুম তাতো জানি…..
তিশাঃ প্রথম ভালোবাসাতো তাই একটু ইন্সিকিউর ফিল হচ্ছে..
তমাঃ ও আর তোমারটা কত নাম্বার শুনি….
তিশাঃ কেন ১ নাম্বার… আমার ওর প্রতি বিশ্বাস আছে….
তমাঃ বাবাহ…কত ভালোবাসা…হাহা..

এরপর তমা তিশা এরকম কিছু মিষ্টি মধুর কথা বলে উঠে চলে আসছে…হঠাৎই তমা খেয়াল করলো…

তমাঃ তিশা দেখতো ওটা উনি না??
তিশা তমার কথায় ওইদিকে তাকায়…আর যা দেখে তা তিশারো বিশ্বাসই হচ্ছেনা..

তিশাঃ হ্যাহহ দোস্ত…কিন্তু তুই ভুল ভাবছিস.….এখানে কোন মিসআন্ডেস্টেন্ডিং হচ্ছে..
তমাঃ এই তোর সবার থেকে আলাদা আবির??দেখ এটাই তার আসল রূপ…

তমার চোখ জলে ভরে গিয়েছে…হাত পা অসর হয়ে আসছে..সে এই মানুষ..যাকে ভালোবাসতে নিয়েছিলো… যার কাছে শুধু মেয়েদের মন নয় তাদের দেহই সব…তমা আর একমুহূর্তও ওখানে দাড়াতে পারলো না…তিশাকে ফেলেই গাড়ি নিয়ে চলে গেলো বাসায়…তিশা সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো…

আসলে তমা তিশা যা দেখেছিলো তাহলো…
আবির একটা মেয়ের খুব ক্লোজে বসে তাকে জরিয়ে ধরে তার সাথে হেসে কথা বলছিলো..তার হাত ধরে রেখে ছিলো এসব…

আসলে একটা মেয়ের কাছে তার ভালোবাসার মানুষটা এভাবে অন্য কারো কাছে দেখলে সে স্বাভাবিকই তা মেনে নিতে পারবে না…যেখানে তমারতো এটা প্রথম প্রেম ছিলো.. আসলে প্রেমটা শুরু হওয়ার আগেই সে বিশাল বড় এক ধোকা খেলো…তমার কাছে এটা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন…

আসল কাহানী…
রিয়াঃ ভাইটু আমার তোকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো..তুই না থাকলে তোর বন্ধু রনিকে কোন ভাবেই আমার করে পেতাম নাহ..থ্যাংকস ভাইটু আমার…জরিয়ে ধরে…(রিয়া আবিরের কাজিন)
আবিরঃ আরে ছাড় পাগলি…কি করছিস…কেউ দেখলে কিভাববে..
রিয়াঃ কি আর ভাববে ভাই বোন…আবিরের হাত ধরে..
আবিরঃ হুম এখন আর কেউ এমন ভাবে নারে বোন…
রিয়াঃ আচ্ছা ভাই উঠি তাহলে ওর ক্লাস শেষ আজ ঘুরতে যাবো…
আবিরঃ আচ্ছা যা…বাই..
রিয়াঃ বাই আমার কিউট ভাইটু..আর এগেইন থ্যাংকস ইয়ার..
আবিরঃ যাতো…

রিয়া চলে গেলে…আবির তমাকে ফোন দেয়…কিন্তু ফোন ধরছে না…অনেক বার ফোন দিচ্ছে…এবার কেটে দিলো..আবার ফোন দিলো..এখন ফোন বন্ধ… আবির টেনশনে পরে গেলো তাই উঠে ওর খবর নিতে যাবে ঠিক তখনই দেখে তিশা একা দাঁড়িয়ে আছে…আবির তিশার কাছে তারাতাড়ি এগিয়ে যায়…

আবিরঃ হায় তিশা.. তুমি একা কেনো তমা কই??ওকে ফোন দিচ্ছি..ধরছে না..আবার কেটে দিয়ে এখন ফোন অফ করে দিলো…ব্যাপারটা কি বলোতো??
তিশাঃ তার আগে আপনি বলুন ওই মেয়ের সাথে আপনি কি করছিলেন??
আবির তিশাকে সব বুঝিয়ে বলল…
তিশাঃ আমি তমাকে বারবার বলেছিলাম, তমা তোর ভুল হচ্ছে ও তাও শুনলো না…
আবিরঃ কেনো কি হয়েছে???
তিশা এরপর আবিরকে সব বলল…আবির সবটা শুনে নিরব হয়ে গেলো…
আবিরঃ তুমি বাসায় যাও…বলেই আবির চলে গেলো…

আসলে আবির ভাবছে…তমা ভুল বুঝতেই পারে…তাইবলে তার ভালোবাসার প্রতি সে অবিশ্বাস করবে…আবিরের ভালোবাসা কি এতোই দুর্বল ছিলো… তমা একটা বার কি আমার সাথে কথা বলতে পারতো না…তা না করে এভাবে নিজেকে সরিয়ে ফেললো…এর শাস্তি ওকে পেতেই হবে…

তমা বাসায় গিয়ে নিজেকে রুমে বন্দী করে বিছানায় শুয়ে বালিসে মুখ গুজে অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পরে…এভাবে কয়েকদিন কেটে গেলো…চোখ মুখ ফুলিয়ে একাকার অবস্থা…তমা কারো সাথেই কথা বলে না…ভারসিটিতেও যায়না..ফোনও অফ..বাবা-মায়ের সাথেও ঠিক মতো কথা বলছেনা..তমার বাবা মেয়ের এই আচরণে খুব কষ্ট পাচ্ছে তাই তিনি একটা সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললেন…এরমাঝে তিশা একবার এসে তমাকে আসল ঘটনা সব বলেছে কিন্তু তমা কোন ভাবেই তা বিশ্বাস করেনি..তমা ভেবেছে হয়তো তিশা এসব মিথ্যা বলে আবিরকে ভালো বানানোর চেষ্টা করছে তমার সামনে….আসলে তমা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না…তমা একটু জেদি হওয়ায় তার রাগটা তাকে ভুল পথে নিয়ে গেলো…

আবির কোন ভাবেই তমার ট্রেস পাচ্ছেনা….আবিরের মন দিন দিন অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে…অনেক বার ইচ্ছে ছিলো তমার বাসায় গিয়ে ওর সাথে কথা বলবে কিন্তু তমার বাবা মার সামনে যদি তমা কিছু খারাপ বলে বসে তাহলে আর কোন দিন তমার বাবা মায়ের সামনে আবির দাঁড়াতে পারবে না…তাই সেই ভয়ে যেতেও পারেনা..খুব বিষন্ন লাগছে আবিরের..নিজেকে অন্ধকার রুমের মাঝে বন্দী করে ফুসফুসে ঢুকাচ্ছে বিষাক্ত ধোয়া…

হঠাৎ তমার বাবা একদিন তমার রুমে গিয়ে খুব গম্ভীর কণ্ঠে তমাকে ডাক দেয়..
বাবাঃ তমা…
তমা ভরকে যায়..কারণ তমাকে সবসময় প্রিন্সেস বলেই ডাকে…
তমাঃ জ্বি পাপাই..

তমার বাবা পাপাই ডাকটা শুনে মনটা একটু নরম হয়ে গেলো… আর রাগ করে থাকতে পারলেন না..

বাবাঃ আমার প্রিন্সেস তোমার সাথে একটা জরুরি কথা আছে উঠোতো…
তমা উঠে বসে বলল…
তমাঃ জ্বি পাপাই বলো..
বাবাঃ মা তোর জন্য আমি আর তোর মা মিলে একটা সুন্দর দেখে প্রিন্স ছেলে দেখেছি..ছেলে আমিরিকায় থাকে…এখন তুই যদি দেখে রাজি হোস তাহলে নেক্সট উইকেই তোদের বিয়ে দিয়ে দিবো…আর তোর বাকি পড়ালেখা তুই আমিরিকায়ই কম্পলিট করতে পারবি এতে তাদের কোন সমস্যা নেই…
এরমাঝেই তমার মাও আসে…
মাঃ ছেলেটা কিন্তু অনেক ভালো মা…

বাবার কথাটা শুনেই তমার বুকটা এক অজানা কষ্টে কেপে উঠে… কিন্তু আবিরের ওই আচরণে রাগ করে তমা বলে…

তমাঃ পাপাই তোমাদের পছন্দ হয়েছে মানে আমারও পছন্দ… ছেলে দেখতে হবে না তুমি হ্যা বলে দেও…
মাঃ যাক আল্লাহ বাচালো..কি বলো…আমরাতো ভেবে ছিলাম তুই কাউকে ভালোবাসিস..না বলে দিবি..
বাবাঃ না আমার মেয়ে মোটেও এমন না…
তমাঃ হুম…পাপাই মা আমি একটু একা থাকতে চাই..
বাবা-মাঃ আচ্ছা তাহলে আমরা সব রেডি করছি..তুই কিছুই চিন্তা করিস না…
তমার বাবা-মা চলে যায়…এরপর তমা প্রচুর কাদে…

কিছুদিন পর…
তিশাঃ হ্যালো আবির ভাইয়া…
আবিরঃ হ্যা তিশা বলো??তমার কোন খবর আছে??
তিশাঃ আসলে ভাইয়া কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা..
আবিরঃ আরে বলো..কষ্টেইতো আছি..আরো না হয় একটু পেলাম…বলো…
তিশাঃ ভাইয়া প্লিজ কিছু একটা করেন..তিশার আজ বিয়ে….
আবিরঃ ও বিয়েতে রাজি??
তিশাঃ হ্যা ভাইয়া…আস্তে বলল…
আবিরঃ তাহলে আরকি করুক…
তিশাঃ ভাইয়া আপনি না ওকে ভালোবাসেন…আটকাবেন না ভালোবাসার মানুষটাকে??
আবিরঃ মানুষটা কি আদও আমার ছিলো তিশা???
তিশাঃ….
আবিরঃ ওর যা ইচ্ছা করুক…আমি আর নাই..নাই মানে নাই…
তিশাঃ ভাইয়া ও রাগের বসে এসব করছে…একটু বুঝুন…
আবিরঃ তিশা বোন আমার ভালো থেকো রাখি..
বলেই আবির ফোনটা রেখে দিলো…

আবির ভাবছে…
আবিরঃ তমা একি করলে তুমি…নিজের এতো বড় ক্ষতি করলে..এর ক্ষতিপূরণ যে কি হবে….

দেখতে দেখতে সব অনুষ্ঠান শেষ আজ তমার বিয়ে… তমা লাল শাড়ি পরে বউ সেজে একা রুমে বসে আছে…তবে বিয়ের আনন্দের ছিটে ফোটাও যেন তার মধ্যে নেই..মুখে বিষন্নতার একরাশ ছাপ পরে আছে…তমা ভাবছে..

তমাঃ আমি কি ঠিক করছি…তিশা কি ওইদিন সত্যিটাই বলেছিলো..মিথ্যা বললে অবশ্য বিয়েতে আসতো… কিন্তু আসেনি…তাহলে কি আমিই ভুল…এখনতো আমি অনেক দূর চলে এসেছি তাহলে পিছে কিভাবে যাবো… নাকি আমি ঠিকই করছি…এসব ভাবতে ভাবতেই নাকে একটা সুন্দর ঘ্রাণ আসছে… ঘ্রাণটা এতোই মধুর যে তমার ঘুম চলে আসছে…
শেষ মেস তমার বিয়েটা হয়েই গেলো…তমা বউ সেজে বসে আছে বাসর ঘরে…

চলবে….?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে