জানি দেখা হবে পার্ট ০২

0
1952

জানি দেখা হবে পার্ট ০২
লেখা_আশিকা জামান

একজন মধ্যবয়স্কা নার্স দৌড়িয়ে আসে ডিউটিরত ডাক্তার এর কেবিনে। হাপাতে হাপাতে বলে,

“স্যার একজন ইমারজেন্সি পেশেন্ট আসছে, সুইসাইড এটেম্পট করার চেষ্টা করেছিলো। কাইন্ডলি একটু তারাতারি আসেন।

“আমার ডিউটি আওয়ার শেষ, নেক্সট যে ডাক্তার আসবে সে দেখবে।”
বলেই ইয়াং সার্জন চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



নার্স দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তারের পথের দিকে তাকিয়ে থাকতে লাগলো
এ কেমন ধারা ডাক্তার সে ভেবে পায়না। এত বছর ধরে এখানে আছে এইরকম আর কাউকেই সে দেখেনি। এত ইমার্জেন্সি পেশেন্ট ফেলে কেউ এভাবে যেতে পারে?

হস্পিটাল এর বারান্দায় গিয়ে ডাক্তারের কলিজাটা কেমন যেন ধক করে উঠল।
সে ফিরে এল, কেন এল সে নিজেও জানে না।

“এই যে , দাঁড়িয়ে থাকলে হবে।”ইমিডিয়েট ওটি রেডি কর আমি আসছি ”
নার্সকে ভ্রুকুচকে কথাটা বলেই ডাক্তার ওটি ড্রেস পড়তে গেল……

আনিস সাহেব অত্যন্ত মানসিক চাপে বিক্ষিপ্তভাবে এদিক সেদিক তাকান।
একটা ছেলে বেশ লম্বা গোছের, ফরসা গালে খুচা খুচা দাড়ি , মাথায় কুকড়ানো চুল, যুক্ত ভ্রুযুগল, কপালে একরাশ চিন্তার ছাপ নিয়ে এদিকেই আসছে। কেমন চেনা চেনা লাগছে..
সে যাই হোক।ব্লু কালার ওটির ড্রেস, হাতে সাদা এপ্রোন, মাস্ক দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই ডাক্তার..
ডাক্তারকে দেখেই উনার চোখে জল এসে গেল।
কান্নাকাটি করে বলতে লাগল,
“বাবা তুমি আমার মেয়েকে বাচাও,আমার একটাই মেয়ে,ও ছাড়া আমার পুরো দুনিয়া অন্ধকার ”
অনিশার মা,ভাই সবাই এসে একি কাহিনি শুরু করে দিল।
কি বলবে সে??
নিজেই তো কনফিউজড!! কি হচ্ছে এইসব??
এতগুলো বছর যার অপেক্ষায় ছিলো, সে আজ সামনে আসবে তাও এভাবে, এতো ও স্বপ্নেও ভাবেনি। তার এই অবস্থা ও কি করে নিজের চোখে দেখবে। কাছে পেয়েও কি চিরতরে তাকে হারিয়ে ফেলবে??
উনারা কেউ না চিনলেও রুপম ঠিক এনাদের চিনে ফেলে।
নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বললো,
“চিন্তা করবেন না, আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব,বাকিটা আল্লাহ জানে”।
ডাক্তার হুরমুড় করে ওটিতে ঢুকলো।
আজ যে তার বড্ড তাড়া।
সেই একি চেহারা, ফরসা গাল ক্লান্তিতে কালচে বর্ন ধারণ করেছে, চুলগুলো সব এলোমেলো, কেমন নিস্তেজ দেহ…….
এত অগুছালোতো অনিশা কখনো ছিল না??
সময় কি না পারে…??
ডাক্তার রুপম অনিশার হাত ধরে কাঁপতে কাঁপতে ।
এই হাত ধরায় আজ কোন ফিলিংস নেই??
কেবল হৃৎপিন্ডের ধুকপুকুনি শোনাা যাচ্ছে…
কেবল হারানোর ভয় কাজ করেছে….
রোগীর স্টমাক ওয়াস করা হল, ১৪ টা ঘুমের ওষুধ পাওয়া গেল!!
ডাক্তার নার্সকে বলল,
” আপনি যান আমি পেশেন্টকে দেখসি
অনিশার অবস্থা এখন বেটার……”
অনিশার চোখের মাঝে ডাক্তার হারিয়ে গেছে, তর আর সরছেই না।
এই কি তার অনিশা??যার জন্য পুরা দুনিয়া একদিন ছাড়তে বসেছিল।
এত কাছে অনিশাকে দেখবে সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারে নাই।
চোখের দেখাটা যে দেখতে পেরেছে এই খুশিতে তার চোখে জল গড়িয়ে পড়ল.
তার চোখের জল অনিশার গাল বেয়ে পড়ছে।
অনিশার সেন্স ফিরেছে, চোখ মেলে হা করে ডাক্তার এর দিকে তাকিয়ে আছে, সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে….
ডাক্তার আর তার দিকে তাকাতে পারছে না। তাই চলে যাচ্ছিলো..
কিন্তু হঠাৎ অনুভব করলো পিছন থেকে তার হাত টা যেন কেউ ধরে টানছে।
ঘাড় ঘুরাতেই অনিশা বলে উঠে,
” রুপম প্লিজ আর একটু থাক….”

অনিশার মুখে এমন কথা ও হয়তবা রুপম আশা করেনি।
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল,
“তোমার বাবা-মা বাহিরে ওয়েট করছেন, তারা অনেক টেনশান করছে, আমার এখন ওখানে যাওয়াটা জরুরী, তাছাড়া আমার ডিউটি আওয়ার শেষ”।

” ওও তাহলেতো, আপনি এতক্ষণ ডিউটি পালন করলেন। আচ্ছা।”

” তা নইতো কি??
আচ্ছা ম্যাম, আপনার মত সুখি মানুষের হঠাৎ ঘুমের ওষুধ খাওয়ার সখ হইছিলো ক্যান??
কি এক্সপেরিমেন্ট করতে মন চাইছিলো?? তাও ১টা ২টা না
ওরে বাবা ১৪ টা ঘুমের ট্যাবলেট।
হো হো হো!!

এইরকম সিচুয়েশনে কেউ মজা করতে পারে কিনা তা অনিশার জানা নেই।

আমাকে ক্ষেপিয়ে খুব মজা নিচ্ছ তাই না,
লিসেন, আমি মরতেই চেয়েছিলাম কেন বাচিয়েছো??
তাহলে অন্তত সবার এই টাইপের কুয়েশ্চেন থেকে বেচে যেতাম….।
বলা শেষ আর রুপমের হাতের আংগুল অনিশার ঠোটে।

“চুপ, যা বলেছ একবারেই বলেছ, নেক্সট টাইম এই চিন্তা ও মাথায় আনবানা”
বলেই দরজার দিকে যেতে থাকে রুপম…
পিছন থেকে অনিশার গলা
বারিয়ে বলতে লাগলো,
” আমার কিছু বলার আছে”
পিছন না তাকিয়েই রুপম গমগম গলায় বলে উঠলো,
“আমারও
তোমাকে কেবিনে শিফট করে দিচ্ছি, বিকেলে আসব,এখন আসি”।

ওদের আচরণ দেখে মনে হলোনা এতোটা ডিসটেন্স ওদের মধ্যে ছিলো।

রুপম বের হওয়ার পর অনিশার বাবা দৌড়ে আসলো,
–“আংকেল ভিতরে যান, আপনার মেয়ে ঠিক আছে”।

— থ্যাংকস ডাক্তার, অনিশার ভাই বলল।

— এটা আমার ডিউটি, থ্যাংকস বলার কিছু নাই…..

— বাই দ্যা ওয়ে ডাক্তার আপনাকে আমার চেনা চেনা লাগছে, মনে হচ্ছে পরিচিত।

— দুনিয়ায় কত মানুষ, কত মানুষের সাথে দেখা হয়…

হবে হয়তো।, এইগুলা মনে রাখার সময় আছে নাকি??
বলেই রুপম চলে গেল…”

অনিশার ভাই নাহিয়ান মনে মনে ভাবল
ছেলেটা কেমন যেন।
কিন্তু কোথায় যে দেখেছি ঠিক মনে করতে পারছি না। হন্তদন্ত হয়ে নাহিয়ান অনিশার কাছে যায়।
–“মা আমরা কি তোর কেউ না, তুই এই রকম একটা স্টেপ নিতে পারিস আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি, আমাদের কথা তুই একবারি ভাবলি না, তোর কিছু হয়ে গেলে…………
বলেই রোকেয়া বেগম কাদতে লাগলো।

অনিশা ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে লাগলো।
” মা প্লিজ শান্ত হও আর এইগুলা বলো না, অনিশা কষ্ট পাচ্ছে, আগে ওকে বাসায় নিয়া যাই”
বলেই বোনকে জড়িয়ে ধরল।
“লক্ষী বোন আমি আছি তো, তুই যা চাইবি তাই হবে”
অনিশা এখনো কেদেই চলেছে….
নাহিয়ান অনিশার কান্না সইতে পারে না
” বাবা তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে, একটু বাহিরে আসো” বলেই রুমের বাহিরে চলে গেল…..
আনিস সাহেব ছেলের পিছু পিছু বাহিরে আসলেন
” বল কি বলবা?”
“বাবা নিহান অনিশার ফোনে বারবার কল দিচ্ছিল, অনিশা পিক আপ করেনি কাল রাত থেকে,
নিহান আমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছিল আর আমিও টেনশানে পিক আপ করি নাই
একটু আগে আমিই ওকে ফোন করছিলাম”

“তা কি বলছ তুমি??”

” আমি বলছি অনিশা খুব অসুস্থ হসপিলে আছে” সে আমাক বলছে কোন হসপিটাল??
আমি ঠিকানা দিছি, সে বলছে আসবে”

‘আসতে চাচ্ছে আসুক বাকিটা পরে দেখা যাবে, এ নিয়ে এত মাথে ঘামানোর দরকার নাই”

চলবে।।।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে