জানি দেখা হবে শেষ পর্ব

0
1934

জানি দেখা হবে শেষ পর্ব
লেখা আশিকা জামান

নির্ঘুম সারা রাত আর চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছে রুপম আর অনিশা। কিন্তু ওপাশের মানুষটা কি জানে তারা দুজন একি বিরহে বালিশ ভিজাচ্ছে। এটাই কি নিয়তি ছিল।তাহলে আবার কেন দেখা হলো?
লুকিয়ে থাকা যন্ত্রনা টা এভাবে দাউ দাউ করে কেন জ্বলে উঠল ?
এইসবের কোন উত্তর দুজনেই ভেবে পায়না।
দরজা ধাক্কাচ্ছে রুপমের মা…
রুপম দরজা খুলে দিল,

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



” বাবা চেহারার কি হাল করেছিস? চোখগুলো এমন লাল কেনোরে বাবা?
রুপম তার মাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চা ছেলেদের মত কাঁদছে।
মা তার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
” ছিঃ বাবা ছেলেদের এইভাবে কাদতে নেই, যা হচ্ছে তোর ভালোর জন্যই হচ্ছে, মার উপর একটু ভরসা রাখ।”
” মা তুমিতো জান, আমি অনিশাকে কতটা ভালবাসি আমি কিভাবে ওর জায়গাটা অন্য কাউকে দিব? আমি পারব না কাউকে ভালবাসতে। তুমি জাননা আমার ভিতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।”
মুহুর্তেই মা রুঢভাবে বললো,

“দেখ এইসব এখন আর বলে লাভ নেই। আমি কি বলেছিলাম কালকে সেটা মাথায় রেখ। আর রেডি হও তোমার মামার বাসায় যাব, সেখান থেকে মেয়ের বাসায় যাব।”
“হুয়াট?”
” যা শুনেছ ঠিকি শুনেছ। ”
বলেই মা চলে গেল..।
রুপম কিছুতেই বুজতে পাচ্ছে না তার মা কিভাবে এতটা কড়া তার প্রতি হতে পারে। এই মা তো তার বড় অচেনা।
অনিশা মলিন মুখে বসে আছে।
” আপি দেখ এই মেরুন রঙের শাড়ীতে তোকে যা লাগবেনা। জামাই বাবু পুরা ফিদা হয়ে যাবে।”
‘” রিহা তুই সবটা জানার পরও আমার সাথে এই মজা গুলো করতে পারছিস?”

” ধুর আপি অইসব বাদ দাও। দেখতো এই গলার হার টায় আমাকে কেমন লাগছে। আমার শাড়ীটা কেমন হইছে পিংক কালার আমার খুব পছন্দ। ”
দরজায় অনিশার মা দাঁড়িয়ে ছিল, রিহার কথা শুনে ভিতরে আসে…
“সেই জন্যইতো আমার রিহামনির জন্যই এই শাড়ী আনলাম।”
চাচী বলেই রিহা কেঁদে দিল। অনিশাও তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল।
” এইভাবে কাদতে নেই। আজকে কাদলে সারাজীবন কাদতে হবে। তাই একটু হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করোনা।
— মা তুমি কিছু করো? আমি এই বিয়ে করতে পারব না।
বলেই অনিশা কাদতে লাগল আবার..

” অনিশা চুপ করো প্লিজ, যা হচ্ছে চুপচাপ মেনে নাও, তোমার ভালোর জন্যই হচ্ছে সব।
অনিশা, রিহা পার্লার থেকে মহিলা আসছে তোমরা সাজ আমি যাই।

অনিশা আর রিহা দুজনকেই খুব সুন্দর করে সাজানো হইছে।
ওইদিকে রুপম নীল রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে, নিহান ও বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে।
নিহান আজকে খুব খুশি মুখ দেখলেই বোঝা যায় সেটা। তাদের বাসার সবাই একসাথে অনিশাদের বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়…
অনিশার মা রুপম আর নিহানকে গাড়ি থেকে নামায়…
তারপর তাদের বসানো হয়…
এতক্ষণ রুপম চুপ ছিলো কিন্তু এইবার রুপম এর মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেলো।

“নিহান, তুই কার সাথে আমার বিয়ে দিচ্ছিস? , একি বাড়িতে একি সাথে অনিশার বিয়েটা আমাকে দেখাবি তুই? এত বড় শাস্তি তুই আমাকে দিতে পারলি??”

“হুমম পারলাম তুই আমার চরম শত্রু। তাইলে তোর সারাজীবন মনে থাকবে। এইবার চুপ চাপ বিয়েটা কর।”

একজন এসে নিহানকে অন্য রুমে বসাল।
অনিশা এক রুমে রিহা এক রুমে বসেছে কারন এক সাথে বিয়ে পড়ানোটা ঝামেলা।
কাজি আসছে বিয়ে পড়াতে।
আগে রুপম কে সাইন করতে বলল, রুপম তার সাথে থাকা পেন দিয়া সাইন করে দিল।
তারপর কবুল বলে দিলো। নিহানের প্রতি চরম রাগে বলার সাথে সাথে কবুল বলে দিল।
নিহান খুশি মনেই সাইন করল। রিহাতো আরো খুশি মনেই সব কিছু করল। একটু বিয়ে পাগলি কিনা।
অইদিকে অনিশার পালা…
অনিশা কোন কিছু না ভেবে সেও সাইন করে দেয়। যেহেতু আর কিছু করার নাই। তাছাড়া রুপমের অপমানটা সে একটু হজম করতে পারে নাই। তাই বিয়ে পড়ানোর জন্য কিছু ফর্মালিটি করতে হয় কাজি সেইগুলা করার সময় মাঝপথে অনিশা থামিয়ে দেয়…
“আপনাকে কষ্ট করে এইগুলা বলতে হবে না, কবুল, কবুল, কবুল।
এইবার এইখান থেকে যান।
বলেই অনিশা কাঁদতে লাগল।
সবাইওর আচরণে হতভম্ব হয়ে যায়।
অনিশা একা তার হৃদয়ের দহনে অংঙ্গার হতে লাগল

বিয়ে পড়াতে পড়াতে রাত হয়ে যায়। এই বাড়িতেই আজকে বাসর হবে।
অনিশা আর রিহার রুম আজকে নাহিয়ান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে..
রুপম বাসর ঘরে ঢুকতে চাইছিল না, কিন্তু নিহান জোর করে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে। রুপম প্রায় পড়ে যেতে লাগছিল, পরে ঘরের দেয়ালটা ধরে সোজা হয়।
রুপমের হৃদয়ে এতক্ষনে রক্তক্ষরন শুরু হয়ে গেছে, আর পারছে না এগুলা নিতে। রুপম রুমে কাউকেই দেখে না। হঠাৎ দেখে ব্যাল্কনিতে একটা মেয়ে বউ সেজে উলটো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
রুপম বুঝতে পারছে না কি করবে?
রুপম ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যায়….
মেয়েটি কাঁদছে…
কেন কাঁদছে সেটা রুপমের জানার দরকার নাই।
কিছু একটা বলে এখান থেকে যেতে পারলেই সে বাচে…।
রুপম একটু কাশি দিল মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য….।

“দেখুন আমি এই বিয়ের জন্য প্রিপেয়ারড ছিলাম না।
যা হইছে তা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হইছে, আমি আপনাকে স্রীর মর্যাদা দিতে পারবনা।
, আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে শুধু একজনই আছে, বাকী জিবনেও আমার মাইন্ড চেঞ্জ হবার কোন সম্ভাবনা নাই। সো বি কেয়ার ফুল। আমার থেকে এক হাত দূরে দূরে থাকবেন……
আর সব ঝামেলা মিটে গেলে ডিভোর্স এর জন্য রেডি থাকবেন।
আমার ইমারজেন্সি ওটি আছে আমি গেলাম।”
এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো রুপম।

চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় রুপম হঠাৎ…
অনিশার গলার স্বরটা খুব চেনা লাগছে।
এত নিহান নয়?

” এই কে আপনি?? দাড়ান কোথায় যান?”
বলেই পিছনে তাকায় অনিশা
“তুম ম মি!”
” তুমি??”
বলেই অনিশার হাতে চিমটি কাটে রুপম।
” উফফ লাগছে…
ছাড়…”
” সরি, লেগে যাবে বুঝি নাই। আসলে ভাবসিলাম হ্যালুসিনেশন।আমি কিছুই বোঝতে পারছি না?”
” তাইলে মুড়ি খাও। ”
মা, বাবা,
মা, ভাইয়া বলে অনিশা চিৎকার করছে।
আর রুপম নিহান, এই নিহান, নিহান….
বলেই চিৎকার করতে লাগল।
বাহির থেকে সবার হাসির আওয়াজ আসছে…
অনিশা আর রুপম দুজন দুজনের দিকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকায়, কী এমন করল তারা। সবাই হাসছে কেণ?
অনিশা ঘরের বাহিরে বের হয়, পিছনে রুপম ও ও…
সবাই তাদের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে, সাথে নিহান আর রিহা ও আছে….।
সবাই হাসছে…. তো হাসছেই.
অনিশা আর রুপম দুজন দুজনের দিকে তাকায় আবার।কী হল সবার। মাথায় কিছুই ঢুকছে না।<
অনশা এইবার কেদে দিল.
“এইসব কী হচ্ছে???”
রিহা প্রথমে বলে উঠল,
“আপি কেমন দিলাম। কালকে থেকে এই মুহুর্তটা দেখার জন্য ওয়েট করে ছিলাম। তোমাদের দুজনকে এক করার প্লান টা অবশ্য নিহান ভাইয়ার ছিলো।”
নিহান রিহার দিকে তাকায়
“কী আমি ভাইয়া??”
(রিহা লজ্জা পেয়ে)” সরি…”
রুপম নিহান কে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল..
নিহান ও কাদতে লাগল….
দুই ভাইয়ের এমন মিলন দেখে সবার চোখে জল এসে গেল…

‘তুই তোর অনিশাকে কতটা ভালবাসিস সেটা আমার থেকে ভালো আর কে জানে? তুই কি করে ভাবলি তোর ভাই তোর জন্য এইটুকু করবে না। সরাসরি তোকে বিয়ের কথা বললে তুই ভাবতি দয়া দেখাচ্ছি, তুই একটু উল্টো বুঝিস কিনা। তাই সবাই মিলে এই ছোট্ট নাটক টা করলাম। আর অবশ্যই সরি এতটা মানষিক চাপে রাখার জন্য।’

-“সরি নিহান। আমাকে ক্ষমা করে দে।আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম। তোর এই উপহার আমি কোনোদিন ভুলব না।”

” অনেক হইছে সবাই সবার রুমে যাও এইবার। ”
নাহিয়ান হেসে হেসে বলতে লাগলো।.
“মা, বাবা, ভাইয়া তোমারা সবাই সবটা জান্তা?”
“হুম সবটা জানতাম। আমার পিচ্ছি মেয়ের পেটে পেটে এত ভালবাসা লুকাই রাখছিলো সেটা জানতাম না।”
বলেই অনিশার মা অনিশাকে জড়িয়ে ধরল।
এরপর মেয়েকে তার রুমে দিয়া আসলেন, সবাই সবার রুমে গেলেন।

রুমে ঢুকেই ওয়ারড্রোব থেকে একটা থ্রি পিস বের করে ওয়াশ রুমের দিকে যেতে থাকে অনিশা।
পিছন থেকে একটা শক্ত হাতের টানে অনিশা রুপমের বুকে গিয়ে পড়ে…
“কই যাও”
” দেখছ না। ওয়াশরুমে যাই ফ্রেশ হতে।”
“আরে তুমি যাবা না। তোমাকে ভাল করেতো দেখলামই না আমার পিচ্ছি বউটাকে কেমন সুন্দর লাগছে?”

“এই তোমার না ওটি আছে, যাও যাও তাড়াতাড়ি যাও। রুপম অনিশার মুখে এমন কথা শুনা হাতটা সরিয়ে নেয়।”
” হুম যাবোতো অবশ্যই, তবে ওটি আজকে বাসর ঘরেই করব। কেমন?”
“যাহ, অসভ্য…”
” এখনোতো কিছু করলামই না…”

অনিশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুপম অনিশার ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিল।
অইদিকে নিহান বেচারা…
নিহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রিহা ফ্লোরে বিছানা করছে।
“মেম আপনি এখানে কি করেন..”
“ঘুমাবো।”
” এতবড় খাটে কি আপনার জায়গা হবে না?”
“আপনি তো আমাকে আর মন থেকে বিয়ে করেননি। ঠ্যাকায় পড়ে করেছেন, যেদিন মন থেকে চাইবেন, সেইদিন এক বিছানায় থাকব।”
” তোমার তাই মনে হয়। অনিশার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ার পর আমি তোমাকে দেখি, তখন প্রথম দেখায় তোমার প্রেমে পড়ে যাই, কিন্তু সামাজিক চাপে কিছু বলতে পারি নাই।বাট একবার সুযোগ যখন আসল তখন নো কম্প্রমাইস….”
নিহান হো হো করে হেসে উঠলো।
সহসাই রিহা কে কোলে উঠায় নিহান।
“আরে রে রে কি করেন..”
“মন থেকে চাইছিতো তাই বিছানায় উঠাই….”

ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে