জানি দেখা হবে পর্ব ১
#লেখা আশিকা জামান
বাহিরে পচন্ড ঝড় হচ্ছে, ঝড়ের বাতাসের বেগে ব্যালকনির পর্দাটা বার বার এদিক সেদিক আছড়ে পড়ছে। মাঝে মাঝে আবার বজ্রপাতো হচ্ছে।
এমনি সময় হলে অনিশা খুব ভয় পেত, আজকে অবশ্য সেই অবস্থায় নেইও..
বাড়ি ভরা আত্নিয়-স্বজন, আসবেই তো অনিশার বিয়ে বলে কথা। অনিশা এইবার গ্রেজুয়েশন কম্পলিট করল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
তাই বাবা মা বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগসে, বয়স বেড়ে যাচ্ছ কিনা। কালকে তার গায়ে হলুদ।
নিহান অনিশার উব বি হাজব্যান্ড। পেশায় একজন ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সরকারী চাকরী করছে। অনিশা ছাড়া অন্য কেউ হলে হয়ত তাকে ১০০ তে ১০০ দিত। হ্যান্ডসাম স্মার্ট, শিক্ষিত, সফল এমন ছেলে কে না চায়।
কিন্তু অনিশাতো অনিশাই,
এত মানুষের ভিড়েও অনিশা আজ খুবুই একা। জগতের সকল শুন্যতা যেন তাকেই ঘিরে রেখেছে। এক নিমেষ এর মধ্যেই সব শেষ করে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে। কি বলত ও বাবা মা ভাইকে যে, তার সেই রুপমকেই চাই। যার আদৌ কোন অস্তিত্ব নেই। কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে কিছুই সে জানে না। তবে এই ১০ টা বছর সে পাগলের মত রুপম কে খুজেছে, এফ বি তে কত খুজেছে তার ইয়াত্তা নেই। যে ফ্রেন্ডদের বাড়ি রুপমের বাড়ির আশে-পাশে , তাদের হাতে-পায়ে পর্যন্ত পড়েছে রুপমকে খুজে দেয়ার জন্য। সত্যিইকি কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খুজে পাওয়া যায়?
এই পশ্নের কোন উত্তর ওর কাছে নেই।
একা একটা মেয়ের পক্ষে আর কতটা সম্ভব। ২ ইয়ারস আগে ইউনিভারসিটি থেকে ট্যুরে তারা জামালপুর গিয়েছিল, সেখান থেকে অনিশা পালিয়ে একা রুপমকে খুজতে বেরিয়েছিল। চেনা কাউকেই খুজে না পেয়ে চলে যাচ্ছিল,অবশ্য ওর বিশ্বাস ছিলো ঠিক চেনা কাউকেই পেয়ে যাবে।
তখনি দৈবাৎ রপমের ফ্রেড মিহিরের সাথে দেখা। অনিশাকে দেখেই চিনে ফেললো। তারপর ও খুব করে মিহিরকে ধরেছিলো রুপমের খবর দেয়ার জন্য। ওর মনে হচ্ছিলো রুপমকে সে এখনি পেয়ে যাবে। মিহির কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে বলেছিল ,
“তুমাকে রুপম পাগলের মত ভালবাসত,
তোমার ভালবাসার প্রমান দেবার জন্যইতো ও হাত কেটে হস্পিটাল ছিল ৩ দিন তাইনা।
তুমি সব জানতা বাট এর পর ও তুমি তোমার ভাইকে দিয়ে ওকে অনেক মার খাইয়েছিলে।কত অপমান ওকে করতা, কিন্তু ছেছড়ার মত তোমার পিছে ঘুরতেই থাকত।ও সবসময় কি বলত জানো,
একদিন তুমি ওকে ঠিক ভালবাসবা।
ও হয়তবা সেদিন ঠিকি বলেছিলো।
তোমরা চলে গেলে আর রুপম কি যে পাগল হয়ে গেছিলো। সেটা যে না দেখসে সে বলতে পারবে না।
পড়াশোনা সব ছেড়ে দিয়েছিল, এক বখাটে যুবক হিসেবে ওর আবির্ভাব হয়েছিল।
তার কিছুদিন পর ওর বাবা এক্সিডেন্ট এ মারা যায়, তারপর রুপম পুরা পাথর হয়ে যায়। কারো ও সাথে কথা বলত না। তারপর ওরা এখান থেকে চলে যায় এরপর আর কোন খবর পাই নাই। ”
মিহির এক নিমিষে কথাগুলো বলে অনিশার ছলছল করা চোখের দিকে তাকায়।
তারপর আবার বলে উঠে,
”
কিন্তু আনিশা এত বছর পর ঠিকি তুমি রুপমের ভালবাসাটা বুঝলা, খুব দেরি করে ফেলেছ।”
আনিশা অঝর ধারায় সেদিন কেদিছিলো। চেনা সেই স্কুলের রাস্তা যেখানে রুপম তার পিছে পিছে সবসময় আসত। এই সেই মাঠ যেখানে তারা ক্রিকেট খেলত সবি আছে বাট রুপম নেই….
এরপর অনিশা কে খুজার জন্য সবাই হুলস্থুল বাজিয়ে দিয়েছিলো, আনিশা একাই বাড়ি চলে এসেছিল। তার একা একা বাড়ি ফেরার কাহিনি টা আজো সবার অজানা।
শুন্যতা ঘিরে রেখেছে অনিশাকে, কি করবে অনিশা যা হচ্ছে তা মেনে নিবে, নাকি সব শেষ করে দিবে….
আর কিছু ভাবতে পারছে না অনিশা। রুপমকে বড্ড মনে পড়ছে ওর সেই গগণবিদারী হাসিটা ওকে পাগল করে দিচ্ছে। চেহারা আবছা আবছা মনে আছে। এতোদিনে হয়তোবা অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে ও। আমাকে হয়তোবা আর মনে নেই। তাহলে আমি কেন মিছে ভাবছি।
মুহুর্তেই ওর মনের গহীন থেকে কেউ উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
পারবনা আমি সারাজীবন এই ভালবাসার বোঝা বয়ে বেড়াতে,
এর থেকে মরে যাওয়া অনেক ভাল। এতদিন একটা আশা ছিল একদিন রুপমকে ঠিক খুজে পাব। কিন্তু কালকের পর থেকে আমি চিরতিরে অন্যের হয়ে যাব। মিথ্যে মিথ্যে সারাজীবন অভিনয় করতে পারবোনা।
এলোপাথাড়ি প্রলাপগুলো বলে অনিশা মেডিসিন এর বক্সটা হাতে তুলে নেয়……
ঘুমের ওষুধ যতগুলো ছিল সব একবারেই গিলে ফেলে।
এর পর অনিশা বিছানায় শুয়ে পড়ে। একটু পরেই আজান দিয়া দেই। ভোরের আলো ফুটতে থাকে, সবাই উঠে পড়বে একটু পরেই বিয়ে বাড়ি বলে কথা।
অনিশার বাবা আনিস সাহেব খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে জগিং করতে যায়। যথারীতি আজকেও গিয়েছে। এরপর মেয়ের হাতের চা না খেলে সকাল টাই খারাপ যায়। জগিং শেষে অনিশা র বাবা তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম কে ডাকছেন,
”
রোকেয়া অনি কোথায়, আমার চা তো এখনও দিল ন।”
“মেয়েটা একটু ঘুমুচ্ছে ঘুমুতে দাও, দুদিন পরেইতো চলে যাবে।”
গম গম করে রোকেয়া বেগম কথাটা বললেন।
“কিন্তু ওতো এত বেলা ঘুমুও না
যাও ওকে ডাক?”
চিন্তিত মুখে আনিস সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকালেন।
অনিশার কাজিন রিহা দৌড়ে এসে সেখানে দাঁড়ায়। ওর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
”
চাচ্চি এত ঘুমের ওষুধের খালি পাতা ফ্লোরে কেন পড়ে আছে ?আর আপি যেন কিভাবে ঘুমুচ্ছে। ”
“কি বলছিস তুই?”
ভ্রু কুচকে রিহার দিকে তাকায় রোকেয়া বেগম।
”
কিছুই না তুমি আমার সাথে রুমে আস…”
কথা না বাড়িয়ে পা চালিয়ে রুকেয়া বেগম রিহার সাথে রুমে যায়।
“এত ওষুধের ছিড়া পাতা!!”
চমকে উঠে মেয়ের দিকে তাকায়।
“অনি, এই অনি ঘুম থেকে উঠ।”
কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর্ব চললো।
“আপি উঠ প্লিজ ঘুম থেকে উঠ।”
রিহা কাঁদতে লাগলো।
তাদের চিল্লাচিল্লিতে নাহিয়ান অনিশার ভাই রুমে আসে।
এতক্ষণে তার মা কান্না শুরু করে দিছে।
“মা প্লিজ শান্ত হও, আমাকে দেখতে দাও।”
নাহিয়ান আনিশা কে অনেক ধাক্কা দিল কিন্তু নো রেস্পন্স।
অনিশার অবস্থা সে ভালভাবেই বুঝতে পারল। এতক্ষণে সব আত্মিয় স্বজন এসে কানা ঘুষা শুরু করে দিলো।
“মনে হয় মত নাই আগে কইলেই হইত।”
“তাইত বলি এত পড়াশোনা শিখসে তাও প্রেম করে নাই কেম্নে সম্ভব। আগেই কইসিলাম এই বিয়েতে কি মেয়ের মত আছেতো?”
তখন সবাই তেলে বেগুনে জলে উঠল, মনে হয় আমি কি এমন বলে ফেলছি।
“আপনারা চুপ করবেন, বাবা আমি গাড়ি নিয়াসছি।”
নাহিয়ান দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।
অনিশার বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
”
প্লিজ আমার মেয়ে মরনের পথে, আপনারা দয়া করে এইগুলা বলবেন না।
“মা কোন অপরাধে তুই এই শাস্তি দিচ্ছিস একবার বলেও গেলি না বলেই কাদতে লাগল।”
অনিশার মা।
“মা অনিশাকে নিয়া আস এম্বুলেন্স আসছে…..”
নাহিয়ান দরজার ওপাশে দাড়িয়েই কথাটা বললো।.
চলবে…..
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/