#জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ (রোজ)
#পর্ব- ১১
নিচে এসে বসতেই মামনি এসে বললো।”
—-” রোজ তোর মোবাইল কোথায়?”
আমি আস্তে করে বললাম,
—-” মোবাইল রুমে আছে, কেন মামনি?”
মামনি তার মোবাইল আমাকে দিয়ে বললো!”
—-” এই নে রাজিয়া ফোন করেছে,
মোবাইলটা নিয়ে আম্মুর সাথে কথা বললাম। এই ২মাসে বাড়িতে যাওয়া হয়নি। তাই আম্মুর মন খুব খারাপ। আগামীকাল ওরা এই বাড়িতে আসবে। কারন আগামীকাল বাবা আর মামনির বিবাহ বার্ষিকি। জানি এখন যদি পার্টি করতে চাই। তাহলে ওরা একদম না করে দেবে। কারনটাও আমি আমার মন খারাপ তাই। এরজন্য আজকে থেকে খুব হাসছি। যদিও সবটাই লোক দেখানো হাসি। প্রতিবছর এই দিনে বাড়িতে গ্র্যান্ড পার্টি রাখে। আমি চাই না এ বছর আমার জন্য সব ভেস্তে যাক। আর এরকমটা হলে শুভ্রও হাজারটা প্রশ্ন করবে। মামনি আমাকে দেখে যে অবাক হয়েছে। সেটা মামনির মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। একটুপর শুভ্র নিচে এসে বললো।”
—-” এই তুই এত হাসছিস কেন?”
আমি হাসতে হাসতেই বললাম,
—-” তাহলে কি কান্না করা উচিত ছিলো?”
শুভ্র বিরক্তি নিয়ে সোফায় বসে বললো!”
—-” আম্মু আমার হারমোনিকা কোথায়?” ওটা আমি রুমে খুজে পাচ্ছি না,
মামনি জানে না তাই বললো।”
—-” আমি তো জানিনা কোথায়,
শুভ্র কতক্ষণ চুপ থেকে বললো!”
—-” আচ্ছা আমিই খুজে নেবো,
আমি মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে বললাম।”
—-” ওটা কি স্পেশাল নাকি?”
শুভ্র রেগে বললো,
—-” দেখ রোজ সবটা নিয়ে মজা করবি না!”
আমি আর কিছু বললাম না। মামনি ব্রেকফাস্ট রেডি করে ডাকলো। চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। আমার সন্তানের জন্য আমাকে ঠিক থাকতে হবে। আল্লাহ চাইলে খুব তাড়াতাড়িই শুভ্রর সব মনে পড়বে। এই আশা বুকে নিয়ে ঠিক আছি আমি। ব্রেকফাস্ট শেষ করতেই শুভ্র বললো,
—-” রোজ একটু শোন।”
আমি চুপচাপ গিয়ে বললাম,
—-” কি?”
শুভ্র বড় একটা শ্বাস নিয়ে বললো!”
—-” শপিং মলে যেতে পারবি?”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—-” শপিং মলে কেন?”
শুভ্র ফিসফিস করে বললো।”
—-” আগামীকাল আম্মু আর বাবাইর এ্যানিভার্সেরী। আম্মুর জন্য শাড়ী কিনবো আমি। কিন্তুু আমি একা কি করে কিনবো বল? বাবাইর স্যুট আমি কিনতে পারবো। বাট শাড়ি আমি একা কিনতে পারবো না। তোর প্রবলেম না হলে আমার সাথে চল,
আমি মুচকি হেসে বললাম!”
—-” তুমি ওয়েট করো আমি আসছি,
রুমে এসে একটা সবুজ থ্রি পিচ পড়লাম। এরপর চুলগুলো ঠিক করে নিচে এসে বললাম।”
—-” আমি রেডি চলো,
মামনি পিছন থেকে বলে উঠলো!”
—-” এই তোরা কোথায় যাচ্ছিস?”
শুভ্র আমার বাম হাত ধরে বললো,
—-” আম্মু একটু কাজ আছে।”
বলে আমার হাত ধরে গাড়িতে ওঠালো। এরপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আমার খুব ভালই লাগছে এভাবে। অনেকদিন পর শুভ্রর সাথে কোথাও যাচ্ছি। গাড়ি চলতে চলতে শপিং মলে এসে দাড়ালো। আমি আর শুভ্র নেমে ভেতরে চলে এলাম। কয়েকটা দোকান ঘুরে দুটো শাড়ি কিনলো শুভ্র। আর বাবার জন্য স্যুট কিনলো। এরপর আমাকে নিয়ে ফুড কর্নারে এলো। এখানে আসতেই আমি বললাম,
—-” এখানে কেন এলে?”
শুভ্র আলসেমি ঝেড়ে বললো!”
—-” এখানে মানুষ নিশ্চয় ফুটবল খেলতে আসে না?”
বলে চেয়ার টেনে বসে আমাকে বললো,
—-” কি রে রেড রোজ? তোর কি দাড়িয়ে খেতে ইচ্ছে করছে?”
আমি চুপচাপ বসে পড়লাম। একটুপর ওয়েটার এসে অর্ডার নিয়ে গেলো। শুভ্র সব আমার পছন্দের খাবার অর্ডার করেছে। কিন্তুু এখন আমার ভাল লাগছে না এসব। ওয়েটার খাবার দিয়ে যেতেই শুভ্র খেতে শুরু করলো। আমি কোনরকম একটু খেতেই বাইরে চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। শুভ্রকে বলে তাড়াতাড়ি বিল দিয়ে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম এক জায়গায় অনেক মানুষ ভীর করে আছে। শুভ্র একজনকে ডেকে জিগ্যেস করলো।”
—-” ওখানে এত ভীর কেন?”
লোকটা চলে যেতে যেতে বললো,
—-” একটা ছেলে এক্সিডেন্ট করেছে!”
আমি আর শুভ্র ভীর ঠেলে এগিয়ে এলাম। এখানে এসে আমরা দুজনেই শকড। আমি শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম,
—-” ওহ গড এটাতো শুভ।”
একটা লোক আমাদের বললো,
—-” আপনারা চেনেন ওনাকে?”
শুভ্র চট করে বললো!”
—-” হ্যা আমার ছোট ভাই,
শুভ্র শুভকে নিয়ে গাড়িতে ওঠালো। আমিও গিয়ে বসে পড়লাম। শুভ্র ফুল স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে। দেখে মনে হচ্ছে ওর নিজের ভাই। হসপিটালে আনতেই ডক্টর শুভকে ভেতরে নিয়ে গেলো। আমি আর শুভ্র পায়চারী করছি। শুভ্রকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে। প্রায় ১ঘন্টা পর ডক্টর বেরিয়ে এলো। ডক্টরকে দেখেই শুভ্র এগিয়ে গিয়ে বললো।”
—-” ডক্টর শুভ কেমন আছে?”
ডক্টর মুচকি হেসে বললো,
—-” ডোন্ট ওয়ারী উনি ঠিক আছে। মাথায় খানিকটা চোট লেগেছে। পরশুদিন বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন!”
শুভ্রও হেসে দিয়ে বললো,
—-” থ্যাংক ইউ ডক্টর।”
ডক্টর শুভ্রর কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
—-” মাই প্লেজার!”
এখানে অনেকক্ষণ থাকলাম আমরা। শুভর বাড়ির লোক চলে এসেছে। ওনারা আমাদের ধন্যবাদ জানালো। শুভর আম্মু খুব কাঁদছিলো। শুভ নাকি ওনাদের একমাএ ছেলে। ভাগ্যিস শুভর ফোনটা ঠিক ছিলো। নয়তো আমরা ওনাদের জানাতে পারতাম না। ওনারা আসার পর আমরা বাড়ি চলে এলাম। পরেরদিন শুভ্র ডেকোরেশন করতে ব্যস্ত পুরো বাড়ি। মামনি বারবার জানতে চাইছে। যে বাড়ি কেন সাজানো হচ্ছে? আমরা কেউই কিছু বলছি না। মামনি এবার ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললো,
—-” এই রোদ এসব কি হচ্ছে?”
ভাইয়া না জানার ভান করে বললো।”
—-” আমিও কিছু জানিনা মামনি,
মামনি গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। সন্ধ্যায় মামনিকে অনেককিছু বুঝিয়ে। শুভ্রর আনা শাড়ি থেকে একটা শাড়ী পড়তে বললাম। আর বাবাকে স্যুট পড়তে বললো শুভ্র। এরপর আমরাও চলে এলাম রেডি হতে। রেডি হয়ে আমি নিচে চলে এলাম। নিচে আসতে না আসতেই সবাই গান গাইতে বলছে। এদিকে শুভ্রর ও ওর হারমোনিকার কথা মনে পড়লো। তাই ও স্টোর রুমে চলে গেলো। কিন্তুু স্টোর রুম তালা দেওয়া। আর চাবি আমি মামনির কাছে দিয়েছি। তাই শুভ্র মামনির রুমে এলো। মামনির থেকে চাবি নিয়ে আবার গেলো। স্টোর রুমের চাবি খুলে ভেতরে গেলো। গিয়ে নিজের হারমোনিকা খুজতে লাগলো। হঠাৎ ওর চোখ পড়লো ছবির ফ্রেমে। ছবির উপরে অলরেডি ধুলোবালি জমে গিয়েছে। আর একসাথে পাশাপাশি অনেকগুলো ছবি। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে বললো!”
—-” এগুলো কিসের ছবি? আর এখানে স্টোর রুমে কি করে এলো?”
বলে আবার নিজের হারমোনিকা খুজতে লাগলো। কিন্তুু কোথাও খুজে পেলো না। খুজে না পেয়ে রেগে বেরিয়ে এলো। কারন ওর ধারনা মামনি জানে ওটা কোথায়। তাই মামনির কাছে আবার এলো। কিন্তুু মামনির রুমের সামনে এসে। শুভ্র এরকম কিছু শুনবে ভাবতে পারেনি। মামনি চোখ মুছতে মুছতে বাবাকে বললো!”
—-” রোজটা ভাবছে আমরা কিছু বুঝিনি। ও যে মিথ্যে হাসি হাসছে এটা বুঝিনি। মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যায় না,
বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।”
—-” কি করে তাকানো যাবে? ওর সাথে যা, যা হচ্ছে। ওর নিজের স্বামী ওদের বিয়ের কথা ভুলে গিয়েছে। ওর নিজের স্বামী বলছে ওর সন্তানের বাবা কে?”
মামনি চুপ থেকে আবার বললো,
—-” শুভ্রকেই বা কি দোষ দেবো? শুভ্রর তো এসব কিছুই মনে নেই। ওরতো মনেই নেই যে রোজ আর কারো না। বরং ওর বিয়ে করা বউ। আর রোজের গর্ভে ওর সন্তান। ওর ব্রেইনে প্রবলেও হওয়ায় ও সব ভুলে গিয়েছে!”
শুভ্র এসব শুনে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। কি মনে করে দৌড়ে আবার স্টোর রুমে গেলো। স্টোর রুমে এসে ওই ছবিগুলো থেকে। নিজের হাত দিয়ে ধুলোবালি পরিষ্কার করলো। তখনি দেখলো আমার আর ওর ছবি। শুভ্র থমকে গিয়ে তাকিয়ে আছে। ভাবতে লাগলো আমি ওর রুমে গিয়েছিলাম। ও আমাকে কি, কি বলেছিলো। এভাবে শুভ্র সবগুলো ছবি দেখতে, দেখতে। আমাদের বিয়ের ছবিও দেখে ফেললো। যেটাতে আমরা দুজনেই বিয়ের ড্রেস পড়া। শুভ্র আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর আমি মুচকি হেসে রয়েছি। আরেকটাতে শুভ্র আমার গালে চুমু দিচ্ছে। শুভ্রর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। চোখের সামনে আবছা আবছা কিছু ভাসছে। শুভ্র দু হাতে মাথা চেপে ধরে বললো,
—-” রোজ আমার বউ? ওর সন্তার আমার সন্তান। তাইতো আমার ওর প্রতি এরকম টান কাজ করে।”
শুভ্র স্টোর রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এদিকে আমি এখনো গান গাইছি না। এবার মামনি আর বাবাও গাইতে বলছে। তাই ভাবলাম সেই গানটাই গাইবো,
?মনে রেখো আমার এ গান?
?শুধু মনে রেখো আমার এ গান?
?শুধু মনে রেখো আমার এ গান?
উপরে চোখ যেতেই দেখলাম, শুভ্র দৌড়ে আসছে!”
?কত যে কথা মনে লুকোনো?
?হয়নি তোমাকে আজও শোনানো?
?ওও হয়নি তোমাকে আজও শোনানো?
শুভ্র শিরির উপরে দাড়িয়ে আছে,
?বলে যায় আমার এ গান?
?আজ বলে যায় আমার এ গান?
?মনে রেখো আমার এ গান?
?শুধু মনে রেখো আমার এ গান?
?শুধু মনে রেখো আমার এ গান?
গান গাইতে গাইতে অনুভব করলাম। পেটে খুব ব্যথা করছে হঠাৎ করে কেন ব্যথা করছে? এসব ভাবতে ভাবতে ব্যথা বেড়ে গেলো। এবার সহ্য সীমার বাইরে ব্যথা করছে। আমি চিৎকার করে শুভ্রকে ডাকলাম। আমার চিৎকার শুনে শুভ্র দৌড়ে এলো। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো।”
—-” রোজ আমার সব মনে পড়ে গিয়েছে। আর তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো?”
আমি খুশিতে হেসে আবার কেঁদে দিলাম। কিন্তুু পেটের ব্যথায় সেন্সলেস হয়ে গেলাম। যখন সেন্স এলো নিজেকে হসপিটালে পেলাম। আমার পাশেই শুভ্র বসে আছে। আমি পেটে হাত দিয়ে বললাম,
—-” আমার বাচ্চা ঠিক আছে?”
শুভ্র আমার হাত শক্ত করে ধরে বললো!”
—-” আমাদের বাচ্চা, আমাদের বাচ্চা একদম ঠিক আছে,
বেড থেকে নেমে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলাম। কতদিন পর শুভ্রর মুখে তুমি শুনলাম। কতদিন পর ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ডক্টর বললো আমি বাড়ি যেতে পারি। শুভ্র বললো একবার শুভকে দেখে যাবে। তাই মামনিকে আর ভাইয়াকে গাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। এদিকে আমি আর শুভ্র কেবিনে গিয়ে থ। শুভর মাথায় ব্যান্ডেজ করা। আর সেই ছেলে বেড থেকে নেমে। কানে হেডফোন গুজে গান শুনছে। আর নিজে মুখ মেলাচ্ছে।”
?হি ইজ সো সেক্সি, সেক্সি?
?হি ইজ সো সেক্সি, সেক্সি?
?আই টোল্ড ইয়া?
শুভর গানের লিরিক্স শুনে। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। একাধারে গুনগুন করে আবার গাইলো,
?ম্যা তেরা ধারকান তেরী?
?ইয়ে দিন তেরা রাতে তেরী?
?আব বাঁচাকে হা, আব বাঁচাকে হা?
ওর গান শুনে এটা বুঝলাম। যে “আজাব প্রেম কি গাজাব কাহানী” মুভির। রনবীর কাপুর আর ক্যাটরিনা কাইফের গান শুনছে। শুধু যে গান শুনছে সেটা নয়। এ ছেলে চোখ বন্ধ হেলে দুলে ডান্স করছে। আমি আর শুভ্র চোখ বড়, বড় করে তাকিয়ে আছি। এরমাঝে শুভ ধপাস করে পড়ে গেলো। পড়ে গিয়ে চোখ খুলে আমাদের আবিষ্কার করলো। শুভ্রকে দেখে দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” ভাইয়া তুমি এসেছো? প্লিজ আমাকে ওঠাও,
বলে নিজের ডান হাত এগিয়ে দিলো। শুভ্র হেসে নিজের হাত বাড়িয়ে দিতে গিয়ে থেমে গেলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে। চোখগুলো ছলছল করছে, ঠোটগুলো কাঁপছে। আমি এবার শুভর দিকে তাকালাম। শুভ্রর দৃষ্টি শুভর হাতের দিকে। আমি ওর দৃষ্টি অনুসরণ করতেই দেখলাম। শুভর ডান হাতে এল সিস্টেম কাটা দাগ। কিন্তুু বুঝলাম না শুভ্রর কি হলো?”
#চলবে…