#জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ (রোজ)
#পর্ব- ৪
শুভ্র রাগে ফোস ফোস করতে করতে উপরে এলো। আমি ভয়ে চুপসে এক কোনায় দাড়িয়ে আছি। শুভ্র আমার কাছে এসে চেঁচিয়ে বললো।”
—-” এটা কি করলি তুই? তুই ইচ্ছে করে আমাকে দেখে কলার খোসা ফেলেছিস তাই না? এইযে আমি কালকে তোকে পিটিয়েছি তার জন্য। হ্যা রে তোর কলিজা কাঁপলো না? আমাকে ফেলে দেওয়ার সাহস কোথায় পেলি?”
আমি শুকনো ঢোক গিলে মিনমিন করে বললাম,
—-” আমি ইচ্ছে করে ফেলিনি। আসলে আমি দেখিনি তুমি আসছো। আমি না দেখেই খোসাটা ফেলেছি!”
শুভ্র জোড়ে এক ধমক দিয়ে বললো,
—-” জাস্ট সাট আপ রোজ। একদম মিথ্যে কথা বলবি না। তুই চল আমার সাথে নিচে চল।”
বলে আমার কান ধরে নিচে নিয়ে এলো। কলেজের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। আর আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছি। সবাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র বললো,
—-” কি হচ্ছে এভাবে কি দেখছো? যাও সবাই ক্লাসে যাও, গো!”
শুভ্রর ধমক খেয়ে সবাই চলে গেলো। শুভ্র আমাকে নিয়ে কলেজের পিছনে এলো। এখানে ইয়া বড় একটা পুকুর আছে। আল্লাহ আমাকে আবার চুবানি না দেয়। শুভ্র আমার ব্যাগ থেকে কলা নিলো। আমি হা করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। সম্পূর্ণ কলা খেয়ে খোসা নিচে ফেললো। নিচে ফেলে আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিলো। টান দিয়ে হাত ছেড়ে দিতেই। আমার পা গিয়ে পড়লো কলার খোসার উপর। ওমনি আমি ধপাস করে নিচে পড়ে গেলাম। আল্লাহ গো আমার কোমর শেষ। শুভ্র হো হো করে হেসে দিয়ে বললো,
—-” কি এবার কেমন লাগলো? তখন আমিও ব্যথা পেয়েছিলাম।”
ইচ্ছে করছে ওর চুল টেনে ছিড়তে। আমি আস্তে করে উঠে বললাম,
—-” তুমি আমাকে ভালবাসো না শুভ্র!”
বলতেই দেখলাম ওর মুখ কালো হয়ে গেলো। আমি সে সব উপেক্ষা করে ওর পিঠে কিল দিলাম। ওমনি শুভ্র অস্ফুট আওয়াজে আহহ করে উঠলো। আমি থতমত খেয়ে গেলাম এইটুকু কিলে ব্যথা পেলো? কোমরে দু হাত রেখে বললাম,
—-” নাটক করছো?”
শুভ্র দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” তোর মতো নাকি রে পেত্নী?”
ভেংচি কেটে হাটা ধরলাম। আজকেও আর ক্লাস করা হলো না। শুভ্রকে বলে আমি বাড়ি আসতে চাইলাম। শুভ্র একা আসতে দিলো না। ওর গাড়িতে করে আমাকে বাড়ি দিয়ে গেলো। গাড়ি থেকে নামার সময় দেখলাম। ওর চোখ মুখ কেমন যেন লাগছে, তাই বললাম,
—-” শুভ্র আর ইউ ওকে?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো!”
—-” হ্যা জাস্ট মাথাটা একটু ব্যথা করছে। বাসায় গিয়ে মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে,
আমি গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে এলাম। আমাকে দেখেই আম্মু এসে ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” ক্লাস এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো?”
আমতা আমতা করে বললাম,
—-” না ভাল লাগছিলো না তাই চলে এসেছি!”
বলে তাড়াতাড়ি রুমে চলে এলাম। এদিকে শুভ্র বাড়ি যেতেই ওর মা বললো,
—-” এত তাড়াতাড়ি এলি?”
শুভ্র সোফায় বসতে বসতে বললো।”
—-” মাথায় পেইন হচ্ছে তাই চলে এসেছি,
উনি মেডিসিন এনে শুভ্রকে দিলো। শুভ্র মেডিসিন নিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। পরেরদিন কলেজে এলাম আজকে ক্লাস করতে হবে। আমি কলেজে যেতেই সামির এসে বললো!”
—-” রোজ তোমার সাথে কথা আছে,
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম।”
—-” কি কথা?”
সামির আমতা আমতা করছে। তখনি শুভ্র এসে আমার হাত ধরলো। শুভ্রর চাহনিতে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। শুভ্র আমাকে টেনে ছাদে নিয়ে এসে ধাক্কা দিলো। তবে আমি নিজেকে সামলে নিলাম। ছাদের বাউন্ডারি অনেক দুরে। শুভ্র চিৎকার করে বলে উঠলো,
—-” তোকে বলেছি না আমি? তুই কোন ছেলের সাথে কথা বলবি না!”
তোতলাতে তোতলাতে বললাম,
—-” ওই এসেছিলো কথা বলতে।”
শুভ্র ঠাস করে এক থাপ্পর মেরে বললো,
—-” তো তুই বললি কেন?”
থাপ্পর খেয়ে ফুপিয়ে কেঁদে দিলাম। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো!”
—-” আর যদি কথা বলতে দেখি। এই গালটা আর গাল থাকবে না,
মনে মনে বললাম।”
—-” গাল এমনিতেও আর গাল নেই। তোর থাপ্পর থেরাপির মাঠ হয়ে গিয়েছে। সুযোগ পেলে তোকে আমি ডিম থেরাপি দেবো শালা,
শুভ্র আমাকে নিয়ে নিচে এসে বললো!”
—-” যা ক্লাসে যা,
ভেংচি কেটে ক্লাসে চলে এলাম। এভাবেই কয়েকদিন কেটে গেলো। শুভ্রর এসব চলছেই প্রতিদিন। এখানে যাবি না, ওখানে যাবি না। এটা করবি না, ওটা করবি না। কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলবি না। এরমাঝে আমাকে মামনি ও বাড়ি যেতে বললো। শুভ্রর ভয়তে প্রথমে রাজী হইনি আমি। পরে আম্মুর আর মামনির জন্য রাজী হয়েছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে বেলকনিতে এলাম। সকালের মিষ্টি বাতাসে মনটা শান্ত হয়ে যায় একদম। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই মামনি কফি দিলো।”
—-” এটা কি করবো মামনি?”
মামনি কিচেনে যেতে যেতে বললো,
—-” এটা একটু শুভ্রকে দিয়ে আয় সোনা!”
হয়ে গেলো পা টিপে টিপে শুভ্রর রুমে এলাম। ওমা ইনিতো ঘুমিয়ে পানি পান্তা। শুভ্রর গায়ে একটা ব্লাক টি শার্ট। আর ধুসর কালার থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। কপালের উপর কিছু চুল এসে পড়েছে। জানালা ভেদ করে মুখে সূর্যের আলো। সবমিলিয়ে আরেক দফা ক্রাশ খেলাম আমি। তবে এই মুহূর্তে কিছু শয়তানি চাঁপলো আমার ছোট মাথায়। অনেক জ্বালিয়েছো চান্দু তুমি আমাকে। আজ আমি সব শোধ তুলবো বেদ্দপ। যেই ভাবা আমার রুম থেকে মেকাপ বক্স নিয়ে এলাম। এরপর আস্তে ওর পাশে বসে সুন্দর করে মেকআপ করে দিলাম। চোখে আইশেড দিলাম আগে। এরপর এক এক করে সব দিলাম। মেকআপ রুমে রেখে আবার আসতেই দেখলাম। শুভ্র বসে বসে কফি খাচ্ছে ফন্দি আটলাম। শুভ্রকে যেভাবেই হোক নিচে নিতে হবে। আমাকে দেখেই ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” চোরের মত উকি, ঝুকি মারছিস কেন?”
এটা কেমন বয়ফ্রেন্ড ভাবছি রাগটা সামলে বললাম।”
—-” মামনি নিচে ডাকে তোমাকে,
শুভ্র মগটা নিয়ে আমার সাথে এলো। নিচে আসতেই মামনি, আঙ্কেল, দিদা হেসে দিলো। সার্ভেন্টরাও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শুভ্র কিছু বুঝতে না পেরে বললো!”
—-” হোয়াট হ্যাপেন্ড গাইস? আম্মু তোমরা হাসছো কেন?”
দিদা হাসতে হাসতে বললো,
—-” গিয়ে আয়না দেখ বুঝে যাবি।”
শুভ্র দৌড়ে রুমে গেলো। এদিকে আমি ভাবছি আজকে আমি শেষ। শুভ্র ঠিকই বুঝে যাবে এটা আমার কাজ। এরমাঝে শুভ্রর চিৎকার কানে এলো,
—-” রোজের বাচ্চা তুই আজকে শেষ!”
আল্লাহ দড়ি ফালাও উপরে উঠে যাই। শুভ্র একটু পর হনহন করে নিচে এলো। এসেই আমার হাত ধরতে গেলে। দৌড়ে মামনির পিছনে লুকোতেই মামনি বললো,
—-” শুভ্র রোজকে কিছু বলবি না।”
শুভ্র রাগে ফোস ফোস করতে করতে বললো,
—-” রোজকে কিছু বলবো না নয়। বরং রোজকে আমি ছাড়বো না আজ!”
আমি শুকনো ঢোক গিলছি। এখন আমার কি হবে? শুভ্র আমার হাত ধরে উপরে এনে বললো,
—-” যা তোর রুম থেকে মেকআপ বক্স নিয়ে আয়।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—-” তুমি আরো মেকআপ করবে?”
শুভ্র দাতে দাত চেপে বললো!”
—-” আই সেইড গো রোজ,
এক দৌড়ে রুমে চলে এলাম। রুম থেকে মেকআপ বক্স নিয়ে শুভ্রর রুমে এলাম। শুভ্র আমার হাতে মেকআপ বক্স দেখেই বাঁকা হেসে বললো।”
—-” এবার আমাকে যেভাবে সাজিয়েছিস। ঠিক সেভাবে তুই নিজে সাজবি। নাহলে আমি কি করবো তুই ভাল করেই জানিস,
শুভ্রর কথা শুনে নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে। মানে আমি নিজেই নিজেকে এরকম বাজে করে সাজাবো? এখন নিজেকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে? সোনা রোজ তুই কি উল্টো লগ্নে জন্মেছিলি? নয়তো সবসময় উল্টো কাজ কেন করিস?”
#চলবে..