Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"ছোটঘরের ভালোবাসা সিজন ২ছোটঘরের_ভালোবাসা সিজন_২পর্বঃ ০৭(শেষ পর্ব)

ছোটঘরের_ভালোবাসা সিজন_২পর্বঃ ০৭(শেষ পর্ব)

ছোটঘরের_ভালোবাসা সিজন_২পর্বঃ ০৭(শেষ পর্ব)
– আবির খান

 

এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। বিয়ের আয়োজন সব শেষ। কাল রিয়া আর আবিরের বিয়ে। কিন্তু হঠাৎ রিয়া সবাইকে একসাথে হলরুমে ডাক দেয়। মানে আবির, মায়া আর রিয়ার বাবাকে। এরপর রিয়া যা সবাইকে বলে তা শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলনা।

আবিরঃ সবাইকে এভাবে ডাকলে যে রিয়া?? কোনো সমস্যা??

মায়াঃ কি হয়েছে আপু??

বাবাঃ হ্যাঁ রে মা কোনো সমস্যা হয়েছে??

রিয়াঃ হুম অনেক অনেক বড় সমস্যা হয়েছে।

আবিরঃ কিহ?? কি সমস্যা?? (চিন্তিত হয়ে)

রিয়াঃ আমার কিছু কথা আছে। যদি এতে সবাই রাজি থাকো তাহলে কাল বিয়ে হবে না হলে হবে না।

আবিরঃ কি বলছো কি??

বাবাঃ কি কথা মা??

রিয়াঃ আবিরকে শুধু আমাকে না সাথে আরেক জনকেও বিয়ে করতে হবে।

আবিরঃ কিহ!!!!মানে???কাকে??

রিয়াঃ মায়াকে। আমার এই অসহায় বান্ধবীকে।

মায়া এ কথা শুনে আকাশ থেকে পরে। মায়া স্বপ্নে কিংবা কল্পনাতেও ভাবেনি রিয়া এমন কিছু বলবে। ও রিয়ার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।

বাবাঃ তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস?? কি আবোলতাবোল বলছিস??

আবিরঃ রিয়া তুমি এসব কি বলছো?? ভাবতে পারছো?? এ কোনদিনই সম্ভব না।

রিয়াঃ অবশ্যই সম্ভব। কারণে ইসলামে একজন পূরুষ চাইলে দুটো বিয়ে করতে পারবে। আর আমার যেহেতু এতে কোনো সমস্যা নেই তাহলে তোমাদের সমস্যা কোথায়??

আবিরঃ রিয়া বুঝার চেষ্টা করো। তুমি তোমার ভালোবাসাকে ভাগাভাগি করছো। আর আবেগের বসে এখন বলছো কিন্তু পরে তুমি মেনে নিতে পারবে না। নাহ রিয়া এ সম্ভব না। না মানে না।

মায়াঃ হ্যাঁ আপু প্লিজ আপনি এসব বলবেন না। আমার জন্য আপনার বিয়ে এভাবে ভাঙতে পারে না। তার চেয়ে আমি এখনই চলে যাচ্ছি।

মায়া দরজার দিকে যাওয়া শুরু করতেই রিয়া ওকে থামায়।

রিয়াঃ দাড়াও মায়া তুমি কোথাও যাবে না। আবির তুমি কবে থেকে এমন হলে?? তোমার চোখে কি কিছু পরে না??তুমি কি বুঝোনা??

আবিরঃ….

রিয়াঃ আরে তোমরা একটি বার এই অসহায় মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখো। মেয়েটা আমার চেয়েও কত সুন্দরী। কিন্তু ওর মুখ আজ ফ্যাকাসে হয়ে আছে। ওর জীবনের প্রথম ভালোবাসা ও নিজ হাতে অন্যজনের কাছে তুলে দিচ্ছে। আমি ওকে অনেক বার পরীক্ষা করেছি, যে ও আমাকে আবির থেকে আলাদা করতে চায় কিনা। কিন্তু না মেয়েটার মন এত্তো বড় যে একটিবারও বলে নি আমি আবিরকে চাই। বার বার শুধু আমাকে বলেছে আবির আপনাকে ভালোবাসে। নিজের সীমাহীন ভালোবাসাকে বিসর্যন দিয়ে হাসি মুখে আমার সাথে কথা বলেছে। কিন্তু মেয়েটা ভিতরে ভিতরে কষ্টে ঠিকই কেদেছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি। তাও একটিবার বলেনি আমি আবিরকে ভালোবাসি। শুধু বলেছে আবির আমাকে(রিয়া) ভালোবাসে। আজ যদি ও ওর ভালোবাসাকে না পায় তাহলে সারাটাজীবন নিজেকে সার্থপর লাগবে। তার চেয়ে আমি মায়াকে নিয়ে আমার বান্ধবীকে নিয়ে তোমার সাথে আমরা সংসার করবো। আমার যদি ওকে নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে মায়ার ও কোনো সমস্যা হবে না। আমরা দুজনে মিলে আবিরের ভালোবাসা ভাগাভাগি করে একসাথে থাকবো।

বাবাঃ এ হয় না মা।

আবিরঃ রিয়া….

রিয়াঃ আবির সব কিছু বাদ দেও। ওর দিকে তাকাও। ওকে যে অন্য কারো কাছে তুলে দিবে সে কি ওকে ভালো রাখবে তার কোনো নিশ্চয়তা আছে?? আর ও কি সেই লোকটাকে আর ভালোবাসতে পারবে?? ওরা কি সুখী থাকবে?? বা ওই লোকটা যদি খারাপ হয়?? ওরতো তোমাকে ছাড়া কেউ নেই।

রিয়ার কথা শুনে মায়া রিয়াকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেদে দেয়। ও ভাবতেও পারেনি রিয়া এতো ভালো।

মায়াঃ আপু তুমি আমার আপন বোন। সত্যিই কেউ যে এতো ভালো হতে পারে আমি জানতাম না।

রিয়াঃ দেখেছো এই হলো মায়া। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল।

রিয়ার কথাগুলো সবার মনেই আঘাত করেছে। আবির চুপ হয়ে গিয়েছে। আবিরের মন চাচ্ছে একটা কিন্তু ব্রেইন বলছে আরেকটা।

আবিরঃ বাবা আপনি এ বাড়ির সবচেয়ে বড় গুরুজন। আমি আজ যে বেচে আছি তা শুধু ওই উপরওয়ালা আর আপনার জন্য। এখন আপনি যা বলবেন আমি তা মাথা পেতে নিবো। বলুন আমি কি করবো??

বাবা কিছুক্ষন ভাবলেন।

বাবাঃ আমি যদি শুধু রিয়ার বাবা হয়ে ভাবি তাহলে মায়াকে আমি বিয়ে করতে না করবো। কিন্তু আমি যদি ভাবি রিয়ার মতো মায়াও আমার আপন মেয়ে তাহলে আমি অবশ্যই রিয়া আর মায়ার বিয়ে আবিরের সাথে দিবো। কারণ ওরা দুজনেই আবিরকে ভালো বাসে।

রিয়াঃ তার মানে বাবা??

বাবাঃ হ্যাঁ বাবা আবির আমি তোমাকে বলছি তুমি ওদের দুজনকেই সারাজীবনের সঙ্গী করে নেও। আমার এতো সয় সম্পত্তি দিয়ে কি হবে যদি কেউ খেতেই না পারে। আমি কিন্তু আগেই বলে দি। আমার এক হালি নাতি নাতনি লাগবে। হা হা।

রিয়া আর মায়া একে অপরকে জড়িয়ে ধরে লজ্জায়। আর এদিকে আবির আছে অন্য টেনশনে। বাসর কিভাবে হবে। দুজন একসাথে?? ছি ছি। একি বলছি। তাহলে??

রিয়া মায়ার সাথে কি যেন কথা বললো।

রিয়াঃ আবির তুমি টেনশন করো না। কাল তোমার আর আমার বিয়ে আর পরশু মায়ার সাথে।

আবিরঃ যাক বাচালে। হায় হায় এ কি বললাম।

বাবাঃ সত্যিই আবির বেচে গেলো। হাহা।

আবির অনেক লজ্জা পেলো। আর রিয়া আর মায়া প্রাণ খুলে হাসছে।

বিয়ের দিন,

খুব ধুমধামে আবির আর রিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো। মায়া নিজ হাতে ওদের বাসর ঘর সাজিয়ে দিয়েছে।

আবিরের জীবনে প্রথম বাসর রাত। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষন ধরে। হঠাৎ মায়া এসে বলল,

মায়াঃ একি আপনি ভিতরে যাচ্ছেন না কেনো?? তারাতারি যান। আপু সেই কখন থেকে বসে আছে আপনার জন্য। যান তারাতারি।

আবিরঃ তোমারা দুজন পারো বটে। কাল যে তুমি ওর জায়গায় থাকবে মনে আছে??

মায়া আবিরের কথা শুনে এমন লজ্জা পেলো যে দৌড়ে কোথাও গেলো আবির আর দেখেনি।

আবির অনেক সাহস নিয়ে আস্তে করে ভিতরে ঢুকলো। আবির দেখে রিয়া ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। রিয়া উঠে আবিরকে সালাম করে আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসলো।

আবির রিয়ার কাছে গিয়ে বসলো। আস্তে করে ওর ঘোমটাটা উঠালো। আবির রিয়াকে দেখে তার জ্ঞান হারাবার উপক্রম। আবির মুগ্ধ হয়ে রিয়াকে দেখছে। মনের অজান্তেই রিয়ার ঠোঁটদ্বয় আবির দখল করে নেয়। অনেকটা সময় পর আবির রিয়াকে ছেড়ে যখন আরো ওকে আপন করে নিতে চায় ঠিক তখনই রিয়া আবিরকে বাধা দেয়। আবির অবাক হয়ে যায়।

রিয়াঃ আমাকে মাফ করবা। কিন্তু আজ না। আমার ইচ্ছে তুমি কাল মায়াকে তার অধিকার বুঝিয়ে দিবে তাকে আপন করে নিবে একদম। তারপর আমাকে আপন করে নিবে।

আবিরঃ একি বলছো!!!

রিয়াঃ হ্যাঁ। আমি চাই তুমি আগে মায়াকে আপন করে নিবে। তাহলে আমি খুশি হবো। কারণ ওর গুরুত্ব আমার কাছে অনেক। আগের ওর অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে তার পর আমার।

আবিরঃ রিয়া তুমি কি সত্যিই এতো ভালো?? নাকি অভিনয় করো?? কেউ এত্তো ভালো কিভাবে হয়?? ওর জন্য আজ তোমার রাতটা বির্সজন দিবে??

রিয়াঃ হুম। কারণ ও অসহায়। তাই ওকে আপন করে নেওয়াটা বেশি জরুরি আমার কাছে। তাহলে আমি নিশ্চিন্ত হবো।

আবিরঃ আচ্ছা যাও তোমার কথাই রাখলাম।

ঠিক এর পরের দিন,

মায়া বধু সেজে বসে আছে ওর রুমে। আজকে আবিরের নার্ভাস আরো বেশি লাগছে। কারণ মায়াকে তার ভালো লাগতো। কিন্তু এভাবে ও ভাবে নি। বিষয়টা এখন দাঁড়িয়েছে এমন, যে গত কাল ছিলো লাভ ম্যারেজ আর আজ এরেঞ্জ ম্যারেজ। হঠাৎ রিয়া এসে বলল,

রিয়াঃ ও তোমাকে সেই আমার আগ থেকে ভালোবাসে। যখন তুমি শহরে নতুন। একবার ভেবে দেখো সে সময়টার কথা একবার ভেবে দেখো সেই ডাইরির প্রতিটি কথা। বলেই রিয়া চলে গেলো।

আবির ভাবছে, ঠিকইতো এই মেয়েটাই আমাকে সেই প্রথম থেকে মেন্টালি সাপোর্ট দিয়ে আসছে। যখন আমি ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরতাম অনেক রাত করে, এই মেয়েটাই খাবার নিয়ে বসে থাকতো। অনেক সময়তো খাইয়েই দিতো। হ্যাঁ ডাইরির প্রতিটি পেইজে ছিলো আমার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা। কিন্তু মেয়েটা একবারও আমায় বলেনি ভালোবাসি। যেদিন ওকে ছেড়ে আসছি সেদিনও বলতে পারেনি। কিন্তু এই মেয়েটাই আমাকে সেই প্রথম থেকে ভালোবেসে আসছে নিস্তব্ধে। আর সেই আমি ওকে মেনে নিতে পারছি না। সত্যিই আমি হয়তো বুঝতে পারিনি এসব কিন্তু রিয়া সবই বুঝেছে তাই ও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। না হলে ওর মতো মেয়ে কোনোদিন তার ভালোবাসার মানুষকে ভাগাভাগি করতে চাইবে না। সত্যিই আমি বুঝতে পারিনি। ধন্যবাদ রিয়া।

আর সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ জানাই আল্লাহ তোমাকে। সত্যিই তোমার লীলার সামনে আমরা কিছুই না। মায়ার আমার জন্য যে সত্যিকারের ভালোবাসা ছিলো। যা আল্লাহ তুমি কোনো ভাবেই হারতে দেওনি। ওর ভালোবাসাকে তুমি পূর্ণ করে দিয়েছো। ওকে নিস্ব করোনি। ওকে হারানোর কষ্টটা দেওনি। ওর হয়তো আমাকে পাওয়া অনেক ইচ্ছা ছিলো। আর এই ভালো মনের মেয়েটার ইচ্ছে তুমি পূরণ করে দিলে। আমি সব বুঝেছি আল্লাহ। আজ থেকে রিয়া আর মায়া দুজনই আমার কাছে সমান ভাবে সীমাহীন ভালোবাসা পাবে। তুমি যে ওদের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে বিশেষ করে মায়ার তা আমি বুঝেছি। আল্লাহ তোমার কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া জানাই। আল্লাহ আমাদের এই ৩ জনের সংসার যেন তোমার রহমতেই সারাজীবন চলে।

আবিরের মনে এখন আর কোন সংশয় কিংবা দোটানা নেই। আবির এখন সব বুঝেছে আর সবটাই ফিল করতে পারছে। আবির আস্তে করে রুমে ঢুকে।

আবির দেখে মায়া ঘোমটা দিয়ে চুপ করে বসে আছে। আবির একটু সামনে আগাতেই মায়া এসে ওকে সালাম করে। মায়াকে থামিয়ে,

আবিরঃ মায়া তোমার জায়গা ওখানে নয়, আজ থেকে রিয়ার মতো তোমার জায়গাও আমার বুকে।

বলেই আবির মায়াকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। মায়াও আবিরকে জড়িয়ে ধরে। এই প্রথম মায়া আবিরের স্পর্শ পেলো। তাও ভালোবাসার।

আবিরঃ মায়া চলো ওযু করে এসে ২ রাকাত নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।

মায়াঃ অবশ্যই চলুন।

আবিরঃ আজ থেকে শুধু তুমি করে বলবে।

মায়াঃ চলো। মুচকি হেসে।

এরপর ওরা ফ্রেশ হয়ে ২ রাকাত নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করে। মায়া আবার তার যথা স্থানে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।

আবির আস্তে আস্তে করে মায়ার কাছে গিয়ে বসে। মায়ার ঘোমটা উঠিয়ে মায়ার দিকে তাকায়। সত্যি মায়া যে এতো সুন্দরী তা আবির কল্পনাও করেনি। মায়াকে আগে দেখেছে। কিন্তু আজ মায়ার মুখে এক অন্যরকম সৌন্দর্যতা ফুটে উঠেছে। ওকে অনেক মায়াবতী লাগছে। সত্যিই রিয়া ঠিকই বলে ছিলো মায়া রিয়ার চেয়ে অনেক সুন্দরী। এ যেন আরেকটা পরী।

মায়া আড়চোখে একবার আবিরের দিকে তাকালো। মায়া দেখে আবির মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া আবিরের ওই চোখে ওর জন্য সীমাহীন ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে। ওর জন্য অনেক সম্মান, শ্রদ্ধা দেখতে পাচ্ছে। হঠাৎই আবির মায়াকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে খুব শক্ত করে। আর মায়াতো লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

আবিরঃ মায়া আমাকে মাফ করে দিও। আসলে আমার মনে ছিলনা, তোমার সেই যত্ন, আমার জন্য অপেক্ষা করা, আমাকে ভালোবাসা দিয়ে খাইয়ে দেওয়া আর আমার প্রতি তোমার এত্তো ভালোবাসা। সত্যিই আমি সব ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু রিয়া আমাকে সব মনে করিয়ে দিয়েছে। ও আমাকে বুঝিয়েছে তুমি আমাকে কতটা বেশি ভালোবাসো। সত্যিই তোমাকে না মেনে নিতে চেয়ে আমি অনেক বড় ভুল করতে নিয়েছিলাম। আমায় মাফ করে দিও প্লিজ। আজ থেকে তোমাকেও রিয়ার মতো অনেক অনেক বেশি ভালোবাসবো। তুমিতো শুধু একটু ভালোবাসাই চেয়েছিলে আমার কাছে। যাও কথা দিচ্ছি আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার এই ভালোবাসার কোনো কমতি তুমি পাবে না। আমি হয়তো তোমাদের মাঝে ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছি কিন্তু আমার ভালোবাসা সবসময়ই তোমাদের দুজনের জন্য সমানই থাকবে। ভালোবাসি আমার এই মায়াবতী মায়াকে। তুমি কি আমাকে সেই আগের মতো ভালোবাসবে?? সেই প্রথম দিনগুলোর মতো???

মায়া আবিরের কথা শুনে কেদে দেয়। কারণ ও যা চেয়েছিলো ও তাই পাচ্ছে। মানে আবিরের ভালোবাসা। ওতো ভেবে ছিলো, আবির ওকে মেনে নিবে না। কিন্তু আবিরও যে ওকে ভালোবাসবে তা ও ভাবতে পারেনি। খুশিতে মায়ার অশ্রু অবিরাম ঝরছে।

মায়াঃ আমিও তোমাকে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি। (কেদে কেদে বলল)

আবির দেখে মায়া কাদছে। তাই মায়ার মাথাটা তুলে ওকে সামনে এনে মায়ার সব অশ্রু শুষে নেয় আবির ওর ঠোঁট দিয়ে। মায়া প্রথম এই স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠে। ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে ওকে বলে,

আবিরঃ জানো মায়া রিয়া তোমাকে কতটা পছন্দ করে?? কতটা গুরুত্বপূর্ণ তুমি ওর কাছে??

মায়া প্রশ্নসূচক ভংগীতে আবিরের দিকে তাকায়।

আবিরঃ গত রাতে রিয়া ওকে আপন করে নিতে দেয়নি। কি বলেছে জানো, বলেছে আগে তোমার অধিকারটুকু তোমাকে বুঝিয়ে দিতে, তোমাকে আগে আপন করে নিতে। কারণ ওর ভয় আমি যদি ওকে আপন করে নিয়ে তোমাকে তোমার অধিকার না দি তোমাকে আপন করে না নেই। তাই ও ওর বাসর রাতকে বিসর্যন দিয়েছে তোমার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

মায়া আবিরের কথা শুনে অবাক হওয়ার পাশাপাশি কেদে দেয়। কারণ ও ভাবতেই পারছে না রিয়া আপু এতো বড় ত্যাগ করবে ওর জন্য।

মায়াঃ আমি একটু রিয়া আপুর কাছে যেতে পারি??(কাদো কণ্ঠে)

আবিরঃ অবশ্যই।

মায়া উঠে রিয়ার কাছে ওর রুমে চলে যায়। দেখে রিয়া কি যেন লিখছে ডাইরিতে। রিয়া মায়াকে এসময়ে ওর রুমে এভাবে দেখে ঘাবড়ে যায়। মায়া কাদতে কাদতে রিয়াকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

মায়াঃ আপু তুমি এতো ভালো কেন?? তুমি আমার জন্য এতো বড় ত্যাগ করলে?? সত্যিই তুমি আমার আপন বোন।

রিয়াঃ এই ত্যাগ যে আমি তোমার কাছ থেকেই শিখেছি বোন। এখন তারাতারি যাও নাহলে জামাইয়ের মুড নষ্ট হয়ে যাবে। হাহা। আর শুনো।

এরপর রিয়া কি যেন মায়াকে কানে কানে বললো আর মায়া লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।

রিয়াঃ লজ্জা পেলে হবে না। যাও তারাতারি আর যা বলেছি তা করো।

মায়াঃ আচ্ছা আপু।(অনেক লজ্জা পাচ্ছে)

মায়া রিয়াকে বিদায় দিয়ে আবার আবিরের কাছে ফিরে আসে। এসেই দরজাটা লাগিয়ে আবিরের খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। খুব লজ্জা লাগছে মায়ার।

আবির দেখছে মায়ার মুখে কেমন এক লজ্জা লজ্জা ভাব। লাল হয়ে আছে। হঠাৎই মায়া আবিরের ঠোঁটে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আর আবিরও বুঝে যায় এই লজ্জার কারণ। এ নিশ্চিত রিয়ার বুদ্ধি। আবিরও যখন মায়ার সম্মতি পেয়ে যায় তখন মায়াকে সে রাতে একদম আপন করে নেয়। এতোটা ভালোবাসা দেয় মায়াকে যে মায়া ভাবতেও পারেনি। আর সেই সাথে মায়ার ভালোবাসাও পূর্ণতা পায়।

এরপর আবির রিয়াকেও আপন করে নেয়। রিয়ার ভালোবাসাও পূর্ণতা পায়। এরপর অনেকটা সময় কেটে যায়। রিয়া আর মায়া দুজনই একইসাথে একইদিনে দুটো ছেলে সন্তান জন্ম দেয়। একদম বাবার মতো দেখতে হয়েছিল দুজন। মায়া আর রিয়া দুজনেই অনেক খুশি। কারন আবির ওদের সবসময় সমান ভালোবাসা দিয়েছে। আগলে রেখেছে এই ৪ জনকে সব কিছু থেকে। আর ভালোবেসেছে অবিরাম। আর এভাবেই কেটে গিয়েছে ওদের বাকি জীবনটুকু।

জন্ম, মৃত্যু আর বিয়ে এই তিনটে জিনিস মহান আল্লাহর হাতে। তিনি যখন যা চাইবেন তাই করবেন। মায়ার সত্যি কারের ভালোবাসাই হয়তো ওকে আবিরকে পাইয়েদিয়েছে হাজার বাধা অতিক্রম করে। পূর্ণতা দিয়েছে ওর ভালোবাসার। আর রিয়ার মতো বুদ্ধিমতী মেয়ের জন্যই মায়া আজ সুখে শান্তিতে বেচে আছে। তাই রিয়াও পেয়েছে তার ভালোবাসার পূর্ণতা। রিয়ার সেদিনের সঠিক সিদ্ধান্তে আজ রিয়া আর মায়া দুজনেই অনেক খুশি আর সুখী। রিয়া হয়তো পারতো নিজের সার্থকে গুরুত্ব দিয়ে মায়াকে অন্যের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু কে জানতো মায়া যদি খারাপ কোনো লোকের হাতে পরে যেতো। ধ্বংস হয়ে যেতো ওর জীবন। রিয়া একজন মেয়ে হয়ে এরকম মা বাবা হারা অন্য মেয়ের ক্ষতি ও সেদিন করতে পারে নি। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ভাগাভাগি করে নিয়েছে দুই প্রেমিকার মাঝে। আর রিয়ার সেদিনের সিদ্ধান্তে আজ সবাই সুখী। মানে একটা সুখী পরিবার।

– সমাপ্ত

“”আমাদের উচিৎ, সবসময় একতরফা না দুতরফা চিন্তা করা। নিজ সার্থ না দেখে অন্যের সার্থকে গুরুত্ব দেওয়া। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। কাউকে কষ্ট দিয়ে কোনো কিছু না করা। কারণ এতে কোনোদিন সুখ আসে না। তাই হয়তো আজ আবির, রিয়া আর মায়া তাদের পরিবার নিয়ে সবাই একসাথে সুখে আছে। আর হ্যাঁ সত্যিকারের ভালোবাসা সবসময়ই যে পূর্ণতা পাবে এমন নাহ। মাঝে মাঝে ভাগ্য আর পরিস্থিতির কাছে সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না।””

সমাপ্ত

– ধন্যবাদ সবাইকে।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

1 মন্তব্য

  1. হয়ত রিয়া বাকি দের থেকে আলাদা কিন্তু কো মেয়ে তার স্বামীকে ভাগাভাগি তো দূরের কথা কেউ ছুলেও সহ্যকরতে পারে না। এটা গল্পটাকে অন্য গল্প থেকে আলাদা করেছে,মন ছুয়েছে কিন্তু তবুও কেউ এটা মেনে নিতে পারে না।
    রিয়ার মতো মেয়ে কি হয়? স্বামীকে ভাগ করা কেউ ভাবতেও পারে না। এই গল্পটা একজন পুরুষ লিখেছেন। হয়ত MR. ABIR KHAN আপনি জানেন না এটা একটা মেয়ে কখনো ভাবতে পারে না।
    ???
    এটা পুরো আপনার ব্যাপার যে আপনি গল্পটা কিভাবে লিখবেন ?????
    VERY VERY SORRY FOR THIS COMMENT.

    যদি এখানে যে ডাক্তারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই ডাক্তার মায়াকে বিয়ে করে একটা ভালোবাসাপূর্ণ জীবন দিত তাহলে কি খুব খারাপ হতো
    ভেবে দেখবেন
    ???? এগুলো বলার জন্য ক্ষমা করবেন Please……….
    Please…………………………..
    Please…………………………………………………..

    ????Again…. SorrY…..Please don’t mind?????????????????

    I think apni biya koran ni hoyto ba korachan. Kora thakla wife k gigrash korben J sha ki
    apna k karo shata vag korta parba!!!!! DON’T
    mind.

    Piz kichu mona korban na.
    Valo na lagla moja heshaba niban

    ?????????????????? I AM SORRY.PLEASE DON’T MIND…SORRY……
    ??????????????????

    পাঠক হিসাবে comment korta pari
    তবু্ও খারাপ লাগলে দুঃখিত
    ???????????????

    .sorry………….?????????????

Leave a Reply to Engel...pori....❤❤ (★❤T★❤❤ উত্তর বাতিল

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ