ছায়া_পার্ট_5

0
1719

ছায়া_পার্ট_5

জামিয়া_পারভীন

মানুষের জীবনে কখন কি হয় তা কেউ ই জানেনা, এটা মেনে নিয়েই নয়ন আর মিরা ঠিক করে আজ রাত্রেই মাসুদের কবর খুড়বে । মিরা আমি আর নয়ন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, যে আমার দায়িত্ব নিতে চেয়েছে। তবে কবিরাজ খুব সাবধানে কাজ করতে বলেছে আর সেই জন্যই মাসুদ কে সকালে মনে মনে ডাকতে শুরু করি কিন্তু মাসুদ তো এখন আসতে পারবে না। কিন্তু মাসুদ কে যে ডাকতেই হবে যেভাবেই হোক যানা প্রয়োজন কিভাবে মাসুদ মারা গেছে। এটা ভাবতে ভাবতেই তন্দ্রা আসে, স্বপ্ন আসে মাসুদ সন্ধ্যায় দেখা করবে বলে জানায়। ঘুম টা ছুটে যায়, একটু আশ্বস্ত হই।

মায়ের ডাকে ঘোর কাটে, খেয়ে নিই, মা বলে কিরে এতো কিসের টেনশন বল আমাকে। আমি বলি তেমন কিছুই না মা, আজ একটা কাজে বিকেলে বাইরে যেতে হবে ফিরতে রাত হতে পারে। মায়ের টেনশন রাত হবে শুনে, বলে রাত না করলে হয় না। আমি বলি কাজ টা শেষ করেই চলে আসবো, বলেই বিকেলে বের হয়ে যায়। নয়ন আসবে সন্ধ্যায়, কেননা সন্ধ্যায় আসতে বলেছি আর কাজ শুরু হবে রাত ১০ টা তে। আগে ভাগেই গোরস্তানের দিকে যেতে হবে তার আগে যেতে হবে মাসুদ এর কাছে।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে, চারিদিকে আধার ছড়িয়ে পড়ছে এরই মাঝে মাসুদ এসে হাজির হয় বুঝতেই পারলাম না মাসুদ আসলো কখন। মাসুদ এসেই বলে ডাকছিলে যখন তাই তাড়াতাড়ি ই চলে আসলাম বলেই আমার গলা টিপে ধরে, আর বলতে শুরু করে কিরে তোর এতো সাহস আমাকে দুনিয়া থেকে মুক্ত করতে এসেছিস তুই। তোকে আজ মেরে ফেলবো, আর আমার করে রাখবো সব সময়ের জন্য। আমি চিৎকার করার চেস্টা করেও পারিনা। তখনই নয়ন এসে আমাকে ঝাকি দেয়, কি হয়েছে, এমন করছিস কেন, বলে নয়ন।

না তেমন কিছুই না, শোন তুই রিস্ক নিস না, বাসায় চলে যা। আমাকে একেলা ছেড়ে দে, আমি একাই সব কিছু পারবো।
না তা হয়না, কথা দিয়েছি তোকে রক্ষা করবো, কথা রাখবো আমি আমার। কিছুক্ষণের মাঝে মাসুদ আবার আসে, বলে আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো, সরি।

মানে কি বলছো তাহলে একটু আগে কে এসে আমার গলা টিপে ধরেছিলো। বুঝেছি তারা টের পেয়ে গিয়েছে, তোমার সাথে আমি শেষ মুহুর্ত ছায়ার মতো থাকবো। তোমার আর ক্ষতি হতে দিবোনা। শুনতে চাও না আমি কিভাবে মারা গেছি? হ্যাঁ বলো, সেই অপেক্ষা তেই বসে আছি এখানে।

তোমাকে তোমার স্বামী আসগর আর শ্বশুর আলতাফ হোসেন মিলে খুন করার নীল নকশা করে। কিভাবে , আহ এতো অধৈর্য হচ্ছো কেনো ? সরি, বলো…..
সেইদিন বাসাতে এক তান্ত্রিক ডাকে, আমি দেখে খুব অবাক হই আর সব টা জানার জন্য ওই ঘরে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকি, কি হয় না হয় সব জানতে খুব ইচ্ছে করছিলো।

তান্ত্রিক অনেক্ষণ মন্ত্র পড়ে, পাশে বসে আছে আসগর ভাই, আর আলতাফ হোসেন। মন্ত্রের এক পর্যায়ে তোমার নাম কানে আসে, বেশ অবাক হই। বুঝতে বাকি রইলো না, হয় তোমাকে খুন করবে না হয় তোমাকে পাগল বানিয়ে দিবে।

এবার তান্ত্রিক কথা বলা শুরু করে, বল, মেয়ের নাম বল। আসগর বলে, মিরা ওর নাম। সব কাজ হয়ে যাবে শুধু একটা লাশ লাগবে, এখুনি মৃত এমন লাশ। আসগর ভয় পেয়ে বলে, লাশ কোথায় পাবো তান্ত্রিক মহাশয়। কেনো এই ঘরের খাটের নিচেই লুকিয়ে আছে যেই জন তাকে হত্যা কর। তাহলেই ওই পুরুষের গলায় তাবিজ বেধে দিবো, আর তোর বউ মিরা কে ওই লাশের আত্মাই মেরে ফেলবে। এবার বেশ ভয়ে পেয়ে যায় আমি ( মাসুদ)। বুঝেছিলাম সেদিনই আমার শেষ দিন, আসগর ভাই এতোটুকুও মায়া করেনি আমার উপর, পশুর মতো আমার গলায় ফাস দিয়ে হত্যা করে। এরপর বুকের উপর তিনটা ছিদ্র করে, খুব কস্ট হচ্ছিলো যানো সেদিন। পরে সেই ছিদ্র দিয়ে তাবিজ গলায় বাধে, আর বলে দেয় এই তাবিজ যদি কেউ খুলে তো আসগরের মৃত্যু হবে , সাথে থাকা সেই জ্বীন টাও মারা যাবে, আর রাতের আধারেই দাফন করে দেয় আমায় । যাদের বাবা, ভাই বলে ডাকতাম, তাদের কাছে কতো টা নিষ্ঠুর মৃত্যু হয়েছে আমার বলতে পারো।

মিরা আর নয়নের চোখ দিয়ে জল পড়ছে। কিই বা করবে, একজন নিষ্পাপ মানুষের লাশ তার সামনে নিজের মৃত্যুর বর্ননা দিচ্ছে ???

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে