চোখের বিষ।পর্ব_৩।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
তোমার কাছে চলে এসেছি আমি,সবাইকে ছেড়ে।
প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিওনা।
প্লিজ আরাফ।
তৃপ্তির কথা শোনে প্রথমে অবাক হলেও
ওর চোখের জল আর আকুতি মিনতি আমাকে বুঝিয়ে দেয় ও আমাকে কত ট ভালবাসে।
-বিশ্বাস করো আরাফ,যখন সবাই আমাকে হলুদ দিচ্ছিলো তখন বার বার আমার তোমার কথা মনে হচ্ছিলো।
বুকের ভেতর অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছিলো।
বাবা মায়ের কথায় বিয়েতে রাজি হলেও আমি তোমাকে ভুলতে পারছিলাম না।
তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিওনা প্লিজ।
আমার তাহলে মরণ ছাড়া কোন পথ থাকবেনা।
আমি বাড়ী ফিরে যেতে পারবোনা।
-যার বিরহে আমি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি তাকে আমি ফিরিয়ে দেবো?
-তাহলে চলো আমরা পালিয়ে যাই।
প্লিজ চলো।
সেদিন আমি তৃপ্তিকে নিয়ে পালিয়ে দুজনের বাসা থেকে দূরে এক বন্ধুর বাড়ীতে চলে যাই।
রাস্তায় বন্ধুকে ফোন দেই।
বন্ধু বলে,কোন সমস্যা নেই তুই চলে আয়।
আমি বিয়ের ব্যবস্থা করছি এখনি।
কাজী নিয়ে আসছি।
আমি আর তৃপ্তি বন্ধুর বাসায় পৌছালে,
রাত ১.৩০ মিনিটে আমাদের বিয়ে পড়ানো হয়।
সব কিছু এত ইজিলি হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।
হয়ে যাই আমি আর তৃপ্তি স্বামী-স্ত্রী।
তৃপ্তি তৃপ্তির বাসায় ফোন করে জানিয়ে দেয় ও আমাকে বিয়ে করে নিয়েছে।
ওদের বাসার লোকজন জানিয়ে দেয় ও যেন ওর মুখ আর বাসার কাউকে না দেখায়।
আমিও বাসায় ফোন করে বলি।
তারাও আমাদের মেনে নেন না।
রাতটা তৃপ্তি কেঁদে কেঁদেই কাটায়।
আর আমি ওর চোখ,চোখের জল মুছে মুছে।
পরের দিন বন্ধুরা আমাদের বাসর ঘর সাজায়।
হয় আমাদের ভালবাসার মিলন।
আমাদের ফুল সজ্জা।
-আমি পড়াশোনার পাশাপাশি একটা ছোট খাটো জব করতাম।
তাই কিছুটা সাহস নিয়ে একটা রুম ভাড়া নেই।
গুছিয়ে নেই ছোট্ট একটা সংসার।
-মন খারাপ?
-আমার জন্য আজ তোমার পরিবারও তোমার উপর রেগে আছে তাইনা?
-ধুর পাগলী,ও কিচ্ছুনা।একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
সবাই আমাদের মেনে নিবে।
আপাতত আমাদের লেখা পড়া টা চালিয়ে যেতে হবে,নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে।সংসার টাকে গোছাতে হবে।
-তুমি পাশে থাকলে কোন ভয় নেই আমার আরাফ।
আমি তোমার সাথে যেকোন অবস্থাতেই থাকতে পারবো।
তৃপ্তি কয়েকটা টিউশনি জোগাড় করে নেয়।আর আমি জব করতে থাকি।
ওর টিউশনির টাকাতেই ওর পড়ালেখার খরচ চলে যায়।
আর আমার টাকায় চলছে সংসার।
এর মাঝে আমার প্রমোশন হয়।বেতন বাড়ে।
সুন্দর ভাবে চলতে থাকে আমাদের জীবন।
আমার পড়াশোনা শেষ হয়।
তৃপ্তি পড়তে থাকে।
দিন শেষে যখন বাসায় ফিরি তখন তৃপ্তির মুখ দেখলেই সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
মেয়েটার আমার ভালবাসা ছাড়া আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই।
মাঝে মাঝে ও ওর বাসায় ফোন দিলেও কেউ কথা বলেনা।
আমিও বাসায় ফোন দেই।
মা একটু আকটু কথা বলে।আর কেউ বলেনা।
খুব ভালো ভাবে চলছে আমাদের টুনাটুনির সংসার।
দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৩ বছর।একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরতেই তৃপ্তি আমাকে জড়িয়ে ধরে।
-বাহ্ আজ এত ভালবাসছে আমার বউ আমাকে।কোন কারণ আছে নাকি?কিছু লাগবে?হুম হুম?
-কানটা ঠোঁটের কাছে আনো।
-কেন?
-কানে মুখে কথা বলবো।
-হুম আনলাম,বলো এবার।
-তুমি বাবা হতে চলেছো।
-কি?আবার বলো আবার বলো।
-তুমি বাবা হতে চলেছো।
-ইয়াহু,আমি বাবা হতে চলেছি।
আমি খুশিতে তৃপ্তিকে কোলে তুলে নেই।
দেখতে দেখতে কেটে যায় নয়টি মাস।
তৃপ্তি প্রেগন্যান্ট এই কথা শোনে আমার এবং ওর পরিবার আমাদের সম্পর্কটাকে মেনে নেয়।
-আরাফ
-হুম,
-আমার খুব ভয় হচ্ছে।
-কেন পাগলী?
-কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের সন্তান টা জন্ম নিবে।আমার ডেলিভারি ডেইট কিছু দিন পর।যদি আমি মরে যাই?
-চুপ।এমন অলক্ষুণে কথা বলবেনা।কিচ্ছু হবে না তোমার।
-শোনোনা,আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
-আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি।
-আমার যদি কিছু হয়ে যায়,তাহলে আমাদের সন্তান টাকে তুমি মানুষের মত মানুষ করো।
-চুপ,আর একবার এমন কথা বললে আমি আর তোমার সাথে কথাই বলবোনা।
-আচ্ছা আর বলবোনা।
আজ সারারাত তোমার বুকে মাথা রেখে আমি ঘুমাবো।
-আচ্ছা ঘুমাও।
শুধু আজ না,সারাজীবন তুমি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে।
পরের দিন বিকেলের দিকেই তৃপ্তির পেইন ওঠে।তৃপ্তিকে আমরা ক্লিনিকে নিয়ে যাই।
তৃপ্তিকে যখন অ.টিতে নিচ্ছিলো তৃপ্তি আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলো।
আমার হাত যেন ছাড়তেই চাইছিলোনা।
-কিচ্ছু হবেনা।
তুমি টেনিশন ফ্রি থেকো।
আমি বাইরে আছি।
-লাভ ইউ আরাফ।শুধু এই জীবন না।পরের জীবনেও আমি তোমাকেই স্বামী হিসেবে চাই।কথা দাও আমারই হবে।
-আমি শুধু তোমার।শুধুই তোমার।
তৃপ্তিকে নিয়ে যাওয়া হলো।
আমার চোখ থেকে কেন যেন পানি পড়ছে।
ভয় হচ্ছে খুব।এমন ভয় আমার আর কোন দিন হয়নি।
বাবা হবার থেকে তৃপ্তিকে হারানোর ভয় টা বুকের ভেতর খুব আঘাত করছে।
ধুর কি সব ভাবছি আমি,
কিচ্ছু হবেনা আমার তৃপ্তির।
কিচ্ছু হবেনা।
চলবে।