Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"গুমোট অনুভুতি পর্ব-৯+১০

গুমোট অনুভুতি পর্ব-৯+১০

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৯

আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী,দীর্ঘ বরষ-মাস।
যদি আর-কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও,
আমি যত দুখ পাই গো
আমারো পরাণ যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাইগো॥

ক্ষীণ কন্ঠে গাওয়া রবিঠাকুরের প্রেমের গান কামরায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে,ফ্লোরে বসে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে একটি মেয়ে,পরনে খুব সুন্দর করে জড়ানো লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। দীর্ঘ আচল আশেপাশে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে। চোখে নিচে দেয়া কাজল হয়তো কোন ভারী বর্ষনে লেপ্টে আছে, চোখের জল শুকিয়ে আছে কপলে তবুও মোহনীয় লাগছে তাকে।

আজ আকাশটা বড্ড মেঘলা, খণ্ড খণ্ড মেঘের ভেলায় আকাশের ওই চাঁদটা হারিয়ে গেছে দূর অজানায়। আকাশ জুড়ে কালো মেঘের গম্ভীর এক নিস্তব্ধতা! চারপাশে সবকিছু অন্ধকার ঠিক সামুর জীবনের মতো! ছুরি হাতে বসে আছে ও, কিন্তু সাহস করে হাতে চালাতে পারছেনা। শুধু একটাই ভয় যদি ওর শেষ শ্বাসটুকু নেয়ার পুর্বে ইনানকে আরেকটি বার দেখা না হয়?তাকে দেখার এই প্রবল লোভ সে সামলাবে কি করে?

নিজেকে কেনো যেনো কাদম্বরী দেবি মনে হচ্ছে, যে রবিঠাকুরের প্রেমে বিলিন হয়ে আছে অথচ কোন এক অদৃশ্য দেয়ালের দোহায় দিয়ে তাদের এক হওয়া হলো না। তবে কি তার রবিঠাকুরের জীবনে কোন মৃণালিনীর আগমন ঘটেছে! নাকি তার পুর্বেই কেউ ছিলো যার ঘোরে সে এতোটাই মগ্ন যে ওর তীলে তীলে শেষ হয়ে যাওয়া তার চোখে পড়ছে না। খুব ইচ্ছে ছিলো তার লাল টুকটুকে বউটি হওয়ার তাইতো মৃত্যুর পুর্বে ও সেজেছে ঠিক সদ্য বিয়ে হওয়া বউয়ের মতো।খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে

“ভালোবাসি! বড্ড ভালোবাসি ঠিক যতোটা বাসলে তোমায় ছাড়া শ্বাস নিতে কষ্ট হয় হয়তো তার চেয়েও বেশি বাসি ইনান ভাই!”

“আমি তোমার স্মৃতিপটে নাই বা এলাম
এ জীবনে তুমি নামক বস্তুটা নাই বা পেলাম,
তাতে কী?রেখে দিবো তোমায় হৃদ মাঝারে
কতোগুলো আবেগ আর অনুভুতি দিয়ে মুড়ে
তুমি রবে পুরো এই আমিটা জুড়ে!”
~~লিজা~~

দরজায় খুব বড়োশড় তোড়জোড় চলছে,কড়াঘাতে জর্জরিত দরজা হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেলো! এটা নতুন কিছু নয় সামুর কাছে, আজ সারাদিন এই পরিস্থিতি অনেক বার হয়েছে কিন্তু ও এই দরজার সন্নিকটে একবারো আসেনি। নিজের স্থানে বসে আছে সেই কখন থেকে, এই মুহুর্তে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বিছানায় মাথা হেলিয়ে দিয়ে বসে আছে, মস্তিষ্ক জুড়ে হাজারো ভাবনা আর তার সমাপ্তি ঘটে তিনটা মাত্র অক্ষরে ইনান!
এই ওয়ান সাইডেড ভালোবাসা বড্ড কষ্ট দেয়, তুমি যানো সে তোমায় কোনদিন ভালোবাসবে না তবুও তার আশায় বসে থাকা!

দরজার অপার থেকে হাল্কা শব্দ আসছে, কেউ খুব ধীরে ধীরে কড়াঘাত করছে,মৃদু আওয়াজ ভেসে আসলো দরজার ওপার থেকে।কেউ অতি সহানুভূতিশীল কন্ঠে বলছে

“সামু!”

কন্ঠটা কানে আসতেই সামুর চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো, দীর্ঘ এক বছর পর এই ডাকটা শুনেছে ও। আগে প্রায়ই এই মানুষটি সামু বলে ডাকতো, তার আশা যাওয়া এই বাড়িতে বেশ হতো!এক বছর পুর্বে নিজের বার্থডে তে নিজের মনের কথা বলেছিলো ইনানকে, সেদিন ইনান ওকে কিছু না বলে চলে গিয়েছিলো। যেখানে সামু অধীর আগ্রহে বসে ছিলো জবাবের আসায় সেখানে ওপাশ থেকে কেউ টু শব্দও করে নি। তাই নিজের থেকেই ফোন দিয়েছিলো,আর মিষ্টি হেসে বলে উঠেছিলো

“ইনান ভাই!আমার অনুভুতির আত্মপ্রকাশের জবাব পেলাম না। নিরবতাই সম্মতির লক্ষন তবে আমি হ্যা ধরে নিবো?”

কিন্তু ওপাশ থেকে খুব চড়া কন্ঠে বলে উঠলো ইনান

“জাস্ট শাট আপ, ভুলে যেওনা আমি কে?তোমার বড় ভাইয়ের বন্ধু মানে তোমার আরেক ভাই। তাই নিজের ভাইকে প্রেম নিবেদন করতে বিবেকে বাধলো না?আমি তোমার থেকে এমন আচরণ আশা করিনি সামায়রা!”

সেদিনের পর থেকে ইনান কন্ঠে সামু ডাকটা শোনা হয়নি বরং সামায়রা শুনেছে। সামু এই একটা বছর ইনানকে নিজের করার জন্য অনেক পাগলামি করেছে। কখনো শাড়ি পড়ে ইনানের এপার্টমেন্টে চলে গেছে তো কখনো খাবার নিয়ে সোজা অফিসে গিয়ে বলেছে ও ইনানের হবু বউ। এমনকি পাশে থাকা সুন্দরি মেয়ে কলিগকে হুমকিও দিয়ে এসেছে। তাতে অবশ্য কম বকা খায়নি ইনানের কাছ থেকে!

রাত বিরাতে ফোন দিয়ে বকা খেয়েছে কিন্তু তাতে কি তার কন্ঠতো শুনতে পেরেছে ও! হাজারো বাহানায় তার সামনে গিয়ে থাকতো যদি একটু হলেও তার প্রেমে পড়ে!অন্য ছেলেদের দিয়ে জেলাস ফিল করাতেও চেয়েছিলো কিন্তু ইনানের থেকে কোন রিয়াকশন আসেনি, পুরোটা সময় জুড়ে সে খুব নিস্তব্ধ ছিলো। আজ সারাদিন এই পুরো এক বছরের হিসেব মিলালো ও, ও অনেক চেষ্টা করেছে ইনানকে নিজের প্রেমে ফেলার কিন্তু সে ব্যার্থ! কারণ জীবন কোন সিনেমা নয় যে শেষ অংশে হিরো প্রেমে পড়ে যাবে। এটা বাস্তবতা যা কোন মানুষের লিখা স্ক্রিপ্ট নয়,এখানে জোর করে কাউকে ভালোবাসানো যায়না। আর যাইহোক কারো মনের উপর জোর করা সম্ভব নয়।

দরজায় ইনানের ধীর কড়াঘাত আর মৃদু কন্ঠে সামু একটুও নড়েনি, এই একবছরের অনেক অভিমান জমেছে। সামান্য সহানুভূতিতে তা গলবে না, আজ কেন এসেছে সে?মরে গেছে কিনা তা দেখতে?”

দরজার অপরপাশে ইনান বসে আছে ফ্লোরে, ওর মন বলছে সামুর কিছু হয়নি হয়তো সামু ওকে শুনতে পাচ্ছে কিন্তু দরজা খুলছে না। তাই আবারও বলে উঠলো

“সামু! আমি জানি তুমি শুনতে পাচ্ছ আমায়।প্লিজ দরজা খোলো। তোমার সাথে কথা আছে আমার”

অপরপাশ পাশ থেকে সামুর দুর্বল কন্ঠ ভেসে আসলো

“আমি মরে গেছি কিনা সেটা দেখতে এসেছেন? তাহলে আম স্যরি আমি এখনো বেচে আছি, আমার শ্বাস এখনো চলছে যদিও বুকের বাঁ পাশে বড্ড চিনচিন করছে। তবে চিন্তা করবেন না, আই সামু আপনাকে আর বিরক্ত করবে না। আর যদি ভুলে আবেগের বসে দিয়েও ফেলে তার নাম্বারটা আপনি ব্লক লিস্টে ফেলে দিয়েন”

সামুর অভিমাণি কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনে ইনান চুপ করে রইলো,ছোট থেকে সামুকে বড্ড আদর করতো ও কিন্তু সামুকে অনন্যদৃষ্টিতে কখনো দেখা হয়নি।হয়তো ওর সামুর সাথে ফ্রি ভাবে মেলামেশা সে অন্যভাবে নিয়ে নিয়েছে। দোষ সম্পুর্ণ সামুর নয়, সামু অতীতে অনেক ভাবেই বুঝিয়েছিলো যে ও তাকে পছন্দ করে তবে ইনান পাত্তা দেয়নি। ভেবেছে হয়তো ও বেশি ভাবছে, কারণ ছেলেদের সিক্সথ সেন্স মেয়েদের মতো প্রখর নয়। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়তো বুঝতেই পারেনা তাদের আশেপাশের মানুষ তাদের সম্পর্কে কি ভাবছে!ইনান মৃদু গলায় বললো

“স্যরি সামু!এতোদিন কষ্ট দেয়ার জন্য। আই প্রমিস আমি আর এমন কাজ কখনো করবো না। একটা সুযোগ দিবিনা আমাকে?আচ্ছা গত বছরের সেই প্রোপোসালের জবাব দেয়ার সুযোগ কি এখনো…”

ইনানের সামনের দরজা কট করে খুলে গেলো, সামু বেরিয়ে এলো রুম থেকে। লাল পাড়ের সাদা শাড়ির লম্বা আচল ফ্লোরে গড়াচ্ছে, মলিন মুখটা জুড়ে ফুটে উঠেছে একরাশ অভিমান। তাইতো এতো কাছে থেকেও কাছে আসছে না, অন্যসময়ের মতো হাত জড়িয়ে ধরছে না। ইনান এগিয়ে গেলো কিছুটা সামুর দিকে, যা দেখে সামু দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলো। ইনানের সাথে তার অভিমান হয়েছে কিন্তু তাকে এক নজর দেখার লোভও সামলাতে পারেনি। ইনান হঠাৎ করেই বলে উঠলো

“আই এম স্যরি”

বলেই সামুকে জড়িয়ে ধরলো,খুব শক্ত করে নয় আলতো হাতে। সামু প্রথমে অবাক হলেও পরে নিজেকে সামলে নেয় আর ইনানের পিঠে হাত রাখে আলতো হাতে।ইনান মৃদু কন্ঠে বলে উঠে

“আম্মুকে বলবো এই সপ্তাহে তোমাদের বাসায় আসতে,তারপর তারা কথা বলে নাহয় বিয়ের ডেট পাকা করবে”

সামু লজ্জায় ইনানের বুকে মুখ লুকালো,বিয়ের কথা শুনতেই বড্ড লজ্জা লাগছে ওর। এতোদিন বেহায়াপনা করে ইনানকে প্রেম নিবেদন করলেও তার মুখ থেকে বিয়ের কথা শুনে ভারী লজ্জা পেলো! তা দেখে ইনান মজার ছলে বললো

“বাহ যে কিনা পুরো এলাকাকে আমাকে ভালোবাসার কথা জানাচ্ছিলো সে আজ নিজেই লজ্জা পাচ্ছে?এতো লজ্জা হঠাৎ কই থেকে ইন্সট্রল হলো মেডাম!”

“ইনান ভাই! ভালো হচ্ছে না কিন্তু”

সামুর শাসনের স্বর শুনে ইনান মৃদু হাসলো তারপর আর কিছু কথা হয়নি ওদের মাঝে। হয়তো নিশ্বাসে নিশ্বাসে কথা হচ্ছিলো তাদের যা এক হৃদয় থেকে অন্য হৃদয় বুঝে নিচ্ছিলো। ইনান মনে মনে বলতে লাগলো

“আমি চাওয়াটা আমি নাই বা পেলাম, কেউ তো তার ভালোবাসা পাক!একজন তো সুখে থাকুক!আমি নাহয় আমার চাওয়াকে মনের গহীনে লুকিয়ে রাখবো চিরকাল”

_____________________

গাজীপুরের এই দোতলা বাড়িটিতে রুশি এসেছে আজ তিনদিন। চারপাশে বাগান, পুকুর, বিভিন্ন খামার আর তরুতরকারির বাগান। মুলত বাড়িটি একটি খামার বাড়ি। প্রকৃতির আসল রুপ যেনো দেখা যায় এখানে।আজ তিনদিনে সায়ানের সাথে একবারো কথা হয়নি ওর আর না দেখা হয়েছে।সেদিন সায়ান ওকে এখানে পৌঁছে দিয়ে সবাই বুঝিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলো। শুধু যাওয়ার সময় ছোট্ট করে বলেছে

“ভালো থাকবেন, কোন দরকার হলে আমাকে জানাবেন”

তবে তা নিয়ে রুশির বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই বরং সে ভালোই আছে। এমন আলিশান জীবন ওর কল্পনাতীত ছিলো, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এসব কথাই ভাবছিলো ও। বাগানের ঠিক মাঝখানে চেয়ার টেবিল পাতানো, চারপাশে নাম না জানা ফুলের থেকে মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে! সবমিলিয়ে প্রকৃতিকে পুরোদমে উপভোগ করছে ও।

এই মুহুর্তে বাবাইকে মিস করছে ও, না জানি কি অবস্থায় আছে সে!সকালের ঔষুধটা ঠিকমতো নিয়েছে কিনা কে জানে?রুশি ফোনটা হাতে নিয়ে বাবাকে ফোন করবে তার পুর্বেই এ বাড়ির কেয়ারটেকার এসে বললো

“ছোট মেডাম! আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে। উনি হলরুমে অপেক্ষা করছে।”

রুশি বেশ অবাক হলো কথাটা শুনে, সায়ান আসেনি অবশ্যই নাহয় নিশ্চই বলতো

“ছোট সাহেব আপনাকে ডাকছে”

ওর পরিচিত বলতে এখানে কেউ নেই আর বাবাই এখানকার ঠিকানা জানে না।তবে কি সায়ানের পরিচিত কেউ ওর সাথে দেখা করতে এসেছে?কিন্তু সে কে হতে পারে?এমন কেউকি আছে যাকে ও চিনে!

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_১০

রুশি ধীর পায়ে বসার ঘরে এসে দাঁড়ালো, অদুরেই একজন নারী অবয়ব দেখা যাচ্ছে। শাড়ি পরিহিত, হাতে দামী ঘড়ি, চুল সুন্দর করে খোপা করা তবে কিছু চুল হাল্কা পাক ধরেছে। রুশি আন্দাজ করতে পারছে তিনি একজন মাঝবয়সী মহিলা বয়স হয়তো পঞ্চাশের কাছাকাছি।সেই ভদ্রমহিলার পোষাকে আভিজাত্যের ছোঁয়া, হয়তো বড় ঘরের কর্তী তিনি।
রুশি ধীর গলায় বলে উঠলো

“আপনি ডেকেছিলেন আমায়?”

মহিলাটি রুশির দিকে ফিরলো, বয়সের ছাপ একদমি পড়ে নি তার চেহারায়। চেহারায় যেনো এখনো তারুণ্য খেলে যায়, যৌবনে তিনি খুব সুন্দর ছিলেন তা তাকে এই বয়সে দেখলেই বুঝা যায়।চশমা পরিহিত এই নারীটির মুখে বিরাজ করছে একরাশ গাম্ভীর্য! তবে এতে যেনো তার সৌন্দর্যের ছিটেফোঁটাও নষ্ট হয়নি বরং বেড়ে গেছে। তিনি চশমাটা ঠিক করে সোফায় বেশ মার্জিত ভাবে বসলেন তারপর গম্ভীর কন্ঠে বললেন

“তুমিই তাহলে সেই মেয়ে?নামকি তোমার?”

“জি রুশানি আনাম”

প্রথম প্রশ্নের জবাব রুশির জানা নেই, তিনি কোন মেয়ের কথা বলছেন সেটা ওর জানা নেই।ভদ্র মহিলা কি ইংগিত করছে তাই বুঝতে পারছেনা ও। তাকে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ছেনা ওর।কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছে না, যদি কিছু মনে করে?তাই চুপ থাকা শ্রেয়! সেই মহিলা কিছুটা শীতল কন্ঠে বলে উঠলো

“ডাকনাম কি তোমার?”

“আলাদা ডাকনাম নেই তবে বাবাই রুশি বলে ডাকে”

“তো রুশি! তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো?”

“স্যরি আন্টি! আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারিনি। আগে কখনো আমাদের কথা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না”

মহিলার মুখ নিমিষেই গম্ভীর হয়ে গেলো, হয়তো রুশির বলা কথা উনি পছন্দ করেননি।পুর্বের ন্যায় গম্ভীর কন্ঠে বললো

“আমি সাবিনা জামিল খান!”

কথাটা শুনে রুশি কিছুটা অবাক হলো,নামটার বড্ড মিল…

“তুমি যা ভাবছো ঠিক তাই। তুমি যার সাথে তিনদিন পুর্বে বিয়ে করেছো অর্থাৎ সায়ান জামিল খান সম্পর্কে আমার ছেলে”

কথাটা শুনে রুশি চুপটি মেরে গেলো,সায়ান রুশিকে তার পরিবার সম্পর্কে কিছুই বলেনি আর না রুশি জানতে চেয়েছে। যেখানে সম্পর্কটাই মনের অবাধ্যে করা সেখানে এসব জেনে কি করবে ও? আর যাইহোক ওর মতো অনাথকে খান বাড়ির লোকেরা বউ হিসেবে কিছুতেই মেনে নিবেনা। কারণ বড় লোকদের কাছে মানুষের জীবন থেকেও স্ট্যাটাস এর মুল্য অনেক বেশি! এসব জীবনে নিজেকে না জড়ানোই ভালো। কিন্তু এই মহিলা কি করে জানলো ওদের বিয়ের কথা যেখানে অন্য কেউ জানেই না!

“হয়তো ভাবছো আমি কি করে জানলাম তোমাদের বিয়ের কথা! যাকে বিয়ে করেছো সে আমার ছেলে হয় আর তার প্রত্যেকটা খবর সবার আগে আমার কাছে যায়।আমি সবটাই জানি! এখন বলো তুমি ওকে কেনো বিয়ে করেছো টাকার জন্য!তাহলে বলো কতো টাকা দরকার তোমার? কতো টাকা হলে আমার ছেলের লাইফ থেকে চলে যাবা!”

কথাগুলো শুনে রুশি তেতে উঠলো, ওর আত্মসম্মানে তীব্র আঘাত করা হয়েছে তাই চুপ করে থাকার প্রশ্নই আসেনা। ও কখনোই কারো ব্যাংক ব্যালেন্স দেখে বিয়ে করেনি, করেছে নিজের সম্মান রক্ষার্থে আর অনাগত সন্তানকে বাবার ছায়ায় বড় করতে। কখনো যাতে ওকে শুনতে না হয় যে সে বাবা ছাড়া পৃথিবীতে এসেছে!রুশি যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে বললো

“আপনি আমার থেকে বড় তাই আপনাকে আমি সম্মান করি কিন্তু আমি আপনার ছেলের টাকা দেখে বিয়ে করিনি। যেহেতু বিয়ের খবর জানেন সেহেতু এটাও নিশ্চই জানেন যে আমাদের বিয়েটা কেনো হয়েছে! আমি এই ততোকথিত সমাজে নিজের সম্মান রক্ষার্থে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি কারণ আমার চরিত্রে কেউ আংগুল তুলুক তা আমি চাইনা। হ্যা আপনার ছেলে আমাকে বলেছে সে আমার পড়াশোনার খরচ উঠাবে আর আমি রাজি হয়েছি। হয়তো বলতে পারেন আমি তার কিছুটা ফায়দা উঠাচ্ছি কিন্তু আমি যদি চাকরি পাই তবে তার সম্পুর্ণ টাকা আমি ফেরত দিয়ে দিবো। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা তবে সত্যি বলছি যদি অন্য কোন উপায় থাকতো তবে এমন দাম্পত্য জীবনে আমি ঘুণাক্ষরেও আমি জড়াতাম না”

রুশি একটানা কথাগুলো বলে একটু থামলো তারপর আবার বলে উঠলো

“হয়তো আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিলং করি, আমার আপনাদের মতো টাকা নেই কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমার আত্মসম্মান! তাই আমাকে টাকার লোভ দেখিয়ে লাভ নেই। হ্যা আমি জানি আমি স্বার্থপর হয়ে নিজের কথা ভেবে আপনার ছেলের শর্তে রাজি হয়েছি তবে তার ঘাড়া সারাজীবন বোঝা হয়ে থাকার কথা আমি কোন কালেই ভাবিনি। আমি সময়মত আপনার ছেলেকে মুক্ত করে দিবো তবে এখন সেটা সম্ভব নয়, আমার কাছে এই মুহুর্তে যাওয়ার মতো কোন জায়গা নেই”

রুশি কথাগুলো বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো, ও জানেনা মহিলার মুখভঙ্গি এখন কিরুপ তবে তাই বলে চুপ করে থেকে অপমান সহ্য করার মেয়ে ও কখনোই ছিলো না। তাতে যে যাই ভাবুক না কেনো! হয়তো মহিলা এখন রাগ দেখিয়ে চলে যাবে কিন্তু তাতে ওর কিছুই যায় আসেনা।

“যদি আমি তোমাকে থাকার ব্যাবস্থা করে দেই আর পড়াশোনার খরচ চালাই তবে তুমি সায়ানকে ছেড়ে দিবে?”

“যদি আমি একা হতাম তবে ছেড়ে দিতাম কিন্তু আমার সাথে আমার সন্তানের জীবন জড়িত আর আমি চাই সে তার বাবার পরিচয় জানুক তার ভালোবাসা পাক”

কথাগুলো মনে মনে আওড়ালেও মুখে বললো না রুশি,যেখানে কোন অনুভুতিই নেই সেখানে থেকে কি লাভ। আর তিনবছর পর নিজের সন্তানকে সায়ানের কাছে দিয়ে চলে যাবে এটা ও ভাবতেই পারছেনা। তাই ও নাহয় একা নিজের সন্তানকে নিয়ে থাকলো। ওর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওর সন্তান আর কিছুই চাইনা। পেটে হাত রেখে রুশি দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো তারপর সায়ানের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো

“হুম! যদি আপনি আমার জীবনের নিশ্চয়তা নেন তবে আমি রাজি। আমি আপনার ঋণ শোধ করে দিবো নাহয় পরে”

মিসেস খানের চেহারায় এখন আর গাম্ভীর্যের ছোঁয়া নেই বরং ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছে। সামনে থাকা মেয়েটির দিকে তাকালেন উনি। মেয়েটি অনেক বেশি সুন্দর নয় তবে মুখ জুড়ে একরাশ মায়া বিরাজ করছে। উজ্জ্বল শ্যামল বর্ণের গোলগাল মুখখানা দেখে যে কেউ বলবে “আস্ত এক মায়াবিনী”

তিনি মৃদু কন্ঠে বলে উঠলেন

“কেনো জানিনা তোমার থেকে এমন জবাবই আশা করছিলাম। তুমি ঠিক বলেছো একজন নারীর নিকট সবচেয়ে মুল্যবান বিষয় তার আত্মসম্মান যেটা কখনো খোয়াতে নেই। আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে!”

ভদ্রমহিলার হঠাৎ সুর পরিবর্তনে রুশি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লো। ও ভেবেছিলো মহিলা রেগে চলে যাবে কিন্তু মহিলা উল্টো মিষ্টি ভাষায় কথা বলছে!

“আমি অনেক খুশি হয়েছি যে তুমি আমার ছেলের বউ, আমার ছোট্ট সায়ানের অর্ধাঙ্গিনী। সত্যি বলতে তোমার মাঝে আমি নিজেকে দেখতে পাই, আমিও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিলং করি তবে কখনো নিজের আত্মসম্মান হারাই নি। তাই তোমার শশুর যখন প্রস্তাব দিয়েছিলো সোজা নাকচ করে দিয়েছিলাম। পরে যখন বুঝতে পেরেছি সে আসলেই আমার প্রতি সিন্সিয়ার তখন পারিবারিক ভাবে আমাদের বিয়েটা হয়। সে যাইহোক তুমি আজ থেকে আমার বউমা না বরং আমার মেয়ে। আর আমার মেয়েকে আমি আমার কাছে নিয়ে রাখতে চাই তাতে তোমার কোন আপত্তি আছে?”

রুশি কিছু বলতে যাবে তার পুর্বেই দরজার কাছ থেকে চড়া গলায় একজন বলে উঠে

“তার আপত্তি আছে কিনা জানিনা তবে আমার ঘোর আপত্তি আছে”

রুশি তাকিয়ে দেখে সায়ান দাঁড়িয়ে আছে, পুরো মুখ জুড়ে একরাশ ক্লান্তি।মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি উঠেছে হয়তো অবহেলার ফসল!রুশি চোখ সরিয়ে নিলো সায়ান থেকে, কেনো যেনো ওই বাদামি চোখ জোড়ায় বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা হয়ে উঠে না ওর। মনে হয় ওই চোখের মায়ায় ডুবে যাবে ও, যা ও চায়না!

সায়ান গম্ভীর চেহারায় ঘরে ঢুকে সোফায় বসলো তারপর বলে উঠলো

“মিসেস খান আপনি এখানে কি করছেন?আর আপনি ওর সাথে কেনো দেখা করতে এসেছেন?”

“সায়ান! ভুলে যেওনা আমি তোমার মা। তুমি আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছো তা আমি নাহয় মেনে নিলাম কিন্তু তুমি ভাবলে কি করে আমি খান বাড়ির বউকে এখানে থাকতে দিবো?তাছাড়া ও এখন একা নয় ওর মাঝে খান বংশের বংশধর বেড়ে উঠছে!ওর পাশে এখন মানুষ দরকার”

“সেটা নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, ওর খেয়াল রাখার জন্য মেইড আর কেয়ারটেকার আছে”

“তুমি আর কতোকাল এরুপ থাকবে সায়ান?তুমি আমার সাথে এমন ব্যাবহার করে যাবে আজীবন? তাও আবার চন্দ্রিকা! ওই সেই দুদিনের মেয়ের জন্য?”

“ওই দুদিনের মেয়েটাকেই আপনি মারতে চেয়েছিলেন মিসেস খান যেখানে জানতেন আমি তাকে বিয়ে করতে চাই”

“আমি কতোবার বলবো আমি তাকে মারতে চাইনি, শুধুমাত্র ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম”

“আমি হয়তো বিশ্বাস করে নিতাম কিন্তু নিজের চোখকে তো অবিশ্বাস করা যায়না মিসেস খান। আমি স্বচক্ষে সবকিছু দেখেছি!”

সায়ান অন্যদিকে ফিরে বললো, চেহারায় ক্রোধ স্পষ্ট! মিসেস খান আর কথা বাড়ালেন না। সোজাসাপ্টা ভাবে বললেন

“এখনো সেই মেয়ের পক্ষেই আছো তবে রুশিকে কেনো বিয়ে করেছো?এতোই যদি তাকে ভালোবাসো তবে আরেকজনকে কেনো জড়ালে নিজের সাথে?”

“সেটা আমার ব্যাপার,আপনার মাথা ঘামানোর দরকার নেই।আপনি এখন আসতে পারেন”

মিসেস খান ছেলের জেদের সামনে ঠিকতে পারলো না, তিনি উঠে দাঁড়ালেন তারপর পা বাড়ালেন যাওয়ার জন্য কিন্তু কি মনে পেছনে তাকিয়ে বললেন

“তোমার চন্দ্রিকা জানে তুমি বাবা হতে চলেছো তাও সেই মেয়ের সন্তানের যাকে তুমি বিয়ে করেছো তিনদিন পুর্বে। নাকি সবার মতো তাকেও জানাও নি!”

রুশি সায়ানের চোখে স্পষ্ট ভয় দেখতে পেলো যেনো কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়। রুশির মাথায় শুধু একটা জিনিসই ঘুরপাক খাচ্ছে ‘কে ওই চন্দ্রিকা?’
তবে এটা সেই যার কাছে সায়ান ওয়াদাবদ্ধ!

সায়ান চড়া কন্ঠে বললো

“ইউ কান্ট ডু দিস! চন্দ্রিকে এই ব্যাপারে কিছু জানাবেন না।ও যাতে জানতে না পারে আমি বিয়ে করেছি”

মিসেস বিনিময়ে কিছু না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন!সেই হাসি যেনো অনেককিছু বলে দিচ্ছিলো!

#চলবে

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ