Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"গুমোট অনুভুতি পর্ব-৭+৮

গুমোট অনুভুতি পর্ব-৭+৮

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৭

রুশিদের ছোট্ট বসার ঘরটায় এখন মানুষে ভর্তি, কিছুক্ষণ পুর্বেও গুটিকয়েক মানুষ ব্যতীত কেউ ছিলো না কিন্তু এখন ঘর ভর্তি মানুষ কিছু বাইরেও দাঁড়িয়ে। আশেপাশের প্রতিবেশিরাও উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে ঠিক কি হচ্ছে এখানে।রুশি এই কালো পোশাকে থাকা একজনকেও চিনে না কিন্তু ধারণা করতে পারছে এরা কারো বডিগার্ড, প্রত্যকটা বডিগার্ড হাতে বিভিন্ন কিছু নিয়ে দাঁড়িয়ে যেমন শাড়ি, গয়না আরো কত কি!

রুশির পালক মায়ের চোখ যেনো কপালে, একসাথে এতোকিছু কখনোই দেখেনি সে। অতি খুশিতে তিনি পাথর হয়ে বসে আছেন। রুশির বাবাই ঠিক রুশির মতই সবকিছু বুঝার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। কিছুক্ষনের মাঝেই সকল বডিগার্ড সরে গিয়ে রাস্তা করে দিলো আর একজন সুদর্শন যুবক ধীর পায়ে হেটে আসলো ঘরে। চোখে সানগ্লাস, খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর ফর্মাল ড্রেস পরা সায়ানকে রুশির কাছে এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ছেলে মনে হলো। মনে কোন চিত্রকরের আঁকা শ্রেষ্ঠ চিত্র এটি যার দিক থেকে দৃষ্টি সরানো অসম্ভব। রুশির সেই ঘোরলাগা দৃষ্টির সাথে সায়ানের বাদামি চোখ জোড়ার মিলন ঘটলো, বিনিময়ে সায়ান হাল্কা মুচকি হেসে রুশির ঠিক পাশের খালি স্থানে বসে পড়লো।

রুশি এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, ওর আজকে বিয়ে এটা সায়ান জানলো কি করে?আর এতোকিছু নিয়ে আসারই বা মানে কি?পরে মনে পড়লো সায়ান কালকেই বুঝিয়েছিলো,,

“সায়ান জামিল খান পারেনা এমন কিছু নেই”

কিন্তু সায়ান সে দিকে তাকিয়ে নেই। সায়ান তাকিয়ে আছে সামনে থাকা মাঝবয়সী লোকটির দিকে, ঠিক মাঝবয়সী না তবে আবার নওজোয়ানও না। বয়স আনুমানিক চল্লিশের কাছাকাছি যা দেখে সায়ান ভারি খুশি, সারা রাস্তায় ভেবে এসেছিলো যদি ছেলেটি ওর থেকে বেশি হ্যান্ডসাম হয় তবে কি ওই মেয়েটি বিয়ে করে ফেলবে? তাইতো এতো আয়োজন যাতে যদি সুন্দর দেখতেও হয় ওর টাকা দেখে মেয়ের বাবা ওর হাতে তাদের মেয়েকে তুলে দেয়। কিন্তু ছেলেকে দেখে বুঝলো ছেলে ওর কাছাকাছি নেই তাই আরাম করে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসলো। বিজনেস ডিল হোক মেয়ে নেয়ার ডিল হোক, হি উইল নেভার লুজ!

সায়ানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে লোকটি দাঁত কেলিয়ে হাসলো, লোকটি সায়ানকে চিনতে পারেনি এটাই স্বাভাবিক কারণ সায়ান জামিল খান নামটা সবার মুখস্থ থাকলেও মুখ দেখে অনেকেই চিনে না। লোকটি কিছুটা ক্যাবলাকান্তের মতো বললো

“আপনি কি এদের আত্মীয় হন?আপনি মেয়ের কি হন?”

সায়ান ঠিক একই অবস্থায় থেকে গম্ভীর স্বরে বললো

“এর পুর্বে আমাকে এরা কখনো দেখে নি আর মেয়ের এখনো কিছু হইনা তবে…”

রুশির দিকে তাকিয়ে বললো

“ভবিষ্যতে হতে পারি”

লোকটির মাথার উপর দিয়ে সবটা গিয়েছে তা চেহারা দেখে বেশ বুঝা যাচ্ছে, কিছুটা হচকিত গলায় বললো

“মানে?তাহলে কি করতে এসেছেন আপনি এখানে?”

সায়ান প্রশ্নের জবাবে কিছুটা হাসলো তারপর পাল্টা প্রশ্ন করলো

“আপনি কেনো এসেছেন এখানে?”

“অবশ্যই মেয়ে দেখতে!”

সায়ান চেহারায় গ্রেট ইন্টারেস্ট ঝুলিয়ে বললো

“ওহ হোয়াট আ কো ইন্সিডেন্ট! আমিও মেয়ে দেখতে এসেছে, শুধু দেখতে আসিনি, বিয়ে করে সাথে করে নিয়ে যেতেও এসেছি”

লোকটি অবাক চোখে তাকিয়ে বললো

“মানে?কি বলতে চাইছেন আপনি?”

“যা বলেছি খুব সোজাসাপ্টা ভাবে বলেছি, বাঙালি হিসেবে বাংলা ভাষা বুঝা উচিৎ। যাইহোক, ইউ হ্যাভ টু অপশনস। ওয়ান, নিজে সম্মানের সহিত এখান থেকে বেরিয়ে যাবে আর টু,আমার বডিগার্ড আপনাকে উঠিয়ে নিয়ে বাইরে ফেলে রেখে আসবে।তাড়াতাড়ি একটা চুজ করুন, আমার এতো বেশি সময় নেই”

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো সায়ান, লোকটি কিছু বলতে গিয়েও বিশালদেহি বডিগার্ডদের দিকে তাকিয়ে বলার সাহস পেলো না তাই উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। যাওয়ার পুর্বে রুশির ফেমিলিকে আচ্ছামতো শাশিয়ে গেলো যে সে মানহানির মামলা করবে। কিন্তু তাতে কারো বিশেষ মনোযোগ নেই, সবার কৌতুহল সামনে থাকা সুদর্শন ব্যাক্তিটিকে নিয়ে। রুশির পালক বোন নিহা এই নিয়ে তিনবার মেকাপ চেক করেছে, যদি একটু এটেনশন পাওয়া যায়!

সবার মাঝে সবচেয়ে স্বস্তি নিয়ে বসে আছে রুশি ঠিক নিরব দর্শকের মতো। যেনো এখানে কি হচ্ছে তা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথাই নেই তার। বসার রুমের এই কঠিন স্তব্ধতা ভেঙে রুশির বাবাই কথা বলে উঠলেন

“তুমি কে বাবা? তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না!”

“আমাকে আপনার চিনার কথাও নয় আংকেল,তবে আমি আপনাকে খুব ভালো করে চিনি। আপনি খুব ভালো মানুষ আংকেল দেখেই বুঝা যায় তবে কেনো নিজের ঊনিশ বছর বয়সী বাচ্চা মেয়েটিকে এমন একজন লোকের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন?”

“তুমি যখন বিয়ের কোন এক পর্যায় আমার অবস্থানে আসবে তখন আমার পরিস্থিতি বুঝতে পারবে বাবা”

সায়ান আর কথা বাড়াতে চায়নি বরং সোজা কথা বলে দিলো

“আংকেল আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে এসেছি,আর সেটা আজ এখনি করে ওকে সাথে নিয়ে যেতে চাই। আমি চাইনা এই একইভাবে দ্বিতীয়বার কারো সামনে বসুক, আশাকরি আপনি বুঝতে পারছেন”

সায়ানের কথা শুনে নাহার বেগম মনে মনে বেশ রেগে গেলেন, যেখানে নিজের মেয়ের জন্য এমন রাজপুত্র আসলো না সেখানে এই অনাথ মেয়ে নাকি রাজরানি হবে! ক্ষোভের বসে বলেই ফেললো

“আমি আমাগো মাইয়ার বিয়া ওহন দিমু না”

“একটু আগেই তো দিচ্ছিলেন”

নাহার বেগম মুখ বাকিয়ে বললো

“দেখতে আইলেই তো বিয়া হইয়া যায় না, আমরা বড়জনরে রাইখা ছোট জনরে দিতাম নাহি?”

“তাহলে বড় জনকে রেখে ছোট জনকে কেনো সং সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছেন? এনিওয়ে আমি আপনার সাথে তর্কে জড়াতে আসিনি। কতো টাকা হলে রুশানিকে আমার সাথে যেতে দিবেন?”

নাহার বেগম যেনো চোখে সরষে ফুল দেখছেন, টাকার কথা শুনতেই তার চেহারার রঙ পালটে গেলো। খুশিতে গদগদ হয়ে বললো

“দশ লাক দিলেই হইবো, আমার আবার এতো টাহার লোভ নাইকা”

সায়ান মহিলাটির দিকে তাকালেন, আর যাইহোক এই মহিলার মাঝে মাতৃত্ব বলতে কিছু নেই, সামান্য কটা টাকার বিনিময়ে মেয়েকে অন্যের কাছে তুলে দিলো। নিজের মেয়ে না হোক এতোগুলা বছর এই মেয়েটিকে বেড়ে উঠতে দেখেছে, একসাথে থাকতে দেখেছে অথচ কখনো আপন ভাবতে পারেনি। সায়ান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বডিগার্ডকে ইশারা করে টাকা নিয়ে আসতে বললো। সায়ান বডিগার্ডের নিয়ে আসা স্যুটকেস দেখিয়ে বললো

“এতে পঞ্চাশ লাখ টাকা আছে, আশাকরি এতেই চলবে আপনার!ভবিষ্যতে রুশানিকে বিরক্ত করবেন না দয়া করে”

নাহার বেগম মুখ বাকিয়ে হাতে টাকার স্যুটকেসটা নিলো তারপর বললো

“এতোবছর যে আমরা টাকা খরচ করেছি তা কি মাত্র পঞ্চাশ লাখ নাকি?নিহাত আমার মন বড় তাই এর বেশি দাবি করিনি”

রুশির বাবা চড়া গলায় চিৎকার করে বললো

“নাহার! টাকাগুলো ফেরত দিয়ে দাও। রুশি আমার মেয়ে ওকে বিয়ে দেয়ার জন্য আমি টাকা নিবো এটা তুমি ভাবলে কি করে?”

“তোমার মেয়ে হতে পারে কিন্তু আমার নয়”

বলেই টাকাগুলো নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো সাথে নিহাও। রুশির বাবা অসহায় দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছেন। বউকে খুব বেশিই ভালোবাসতেন তিনি তাই তার সকল অন্যায় আবদার মেনে নিতেন কিন্তু পরে বুঝতে পারেন উনি দুধকলা দিয়ে সাপ পুষেছেন, তবে ততদিনে তার গলার জোর এই ঘরে কমে গিয়েছে!
উনি সায়ানের দিকে তাকিয়ে তৎক্ষণাৎ বউয়ের আচরণের জন্য ক্ষমা চাইলেন তারপর সায়ান আর রুশির বিয়ের সাক্ষী হিসেবে তিনি ছিলেন। আপাদত রেজিট্রির মাধ্যমে বিয়েটা হয়েছে,হুজুর ডেকে পরে বিয়ে করে নিবে বলে সায়ান কথা দিয়েছে। রুশি পুরোটা সময় চুপ ছিলো একটা কথাও বলেনি, হয়তো বলার মতো কিছুই নেই।

একে একে সবাই যখন ঘর ছাড়ছিলো তখন রুশি ওর পালক বাবাকে জড়িয়ে ধরলো, আর ধরে আসা কন্ঠে বললো

“তোমাকে খুব মিস করবো বাবাই! ভালো থেকো, বেচে থাকলে আবার দেখে হবে ”

বলেই ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো, রুশির বাবার খুব বলতে ইচ্ছে করেছিলো

“ধুর পাগলি, এমন কথা কেউ বলে নাকি!তুই চাইলেই আমি দেখা করে আসবো তোর সাথে”

কিন্তু বলা হয়নি, শব্দগুলো কেমন যেনো গলায় দলা পাকিয়ে গিয়েছে। চোখে টলমল জল নিয়ে রুশির যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার ছোট্ট রুশি যে কিনা প্রতিদিন সকালে হঠাৎ করে এসে জড়িয়ে ধরে বলতো “বাবাই কেমন আছো?” কাল সকাল থেকে নিজে হাতে কেউ আর চা বানিয়ে খাওয়াবে না আর বকার স্বরে বলবেও না

“বাবাই তুমি তোমার ঔষুধ খেয়েছো? নিশ্চই খাওনি! এতো ভুলে যাও কেনো তুমি?এই নাও খাও। আমি যদি না থাকি তবে এই রোজরোজ তোমাকে ঔষুধের মনে করিয়ে দিবে কে শুনি?বড্ড অবুঝ তুমি”

উনি কাঁপা পায়ে এগিয়ে গিয়ে সায়ানের হাত চেপে ধরলেন আর ধরা গলায় বললেন

“আমার মেয়েটা বড্ড কষ্টে এতোগুলা বছর পার করেছে ওকে কখনো কষ্ট দিওনা। খুব ভরসা করে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি, আমাকে নিরাশ করো না। খেয়াল রেখো ওর”

সায়ান তার হাত চেপে ধরে আশ্বাস দিয়ে বললো

“আপনি চিন্তা করবেন না আমি সবসময় ওর পাশে থাকবো, ওর খেয়াল রাখবো। জরুরি নয় স্বামী হিসেবেই পাশে থাকতে হবে বরং বন্ধু হিসেবেও পাশে থাকা যায়!”

পরের কথাগুলো সায়ান মনে মনে আওড়ালো, আর যাইহোক এই মেয়েটিকে ও কষ্ট পেতে দিবে না। ও যাতে সমাজে মাথা উঁচু করে বাচতে পারে সেটার জন্য ও সবকিছু করবে। স্বামী হিসেবে না হোক বন্ধু হিসেবে হলেও করবে!

রুশি গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে, সায়ান গাড়িতে চড়তেই গাড়ি নিজ গন্তব্যে চলা শুরু করলো। সায়ান রুশির দিকে তাকিয়ে গলা ঝেড়ে বললো

“মন খারাপ?”

রুশি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো

“আমার আর মন খারাপ!সেটাও সম্ভব নাকি?বরং আমার তো খুশি হওয়ার কথা। আমাকে কেউ পঞ্চাশ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে আর আরেকজন বিক্রি করে দিয়েছে। আমার জীবনের মুল্য পঞ্চাশ লাখ টাকা!এও বা কম কিসে?আমার তো খুশিতে ধেইধেই করে নাচতে ইচ্ছে হচ্ছে। আই এম সো হ্যাপি রাইট নাউ”

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_ ৮

বাংলার মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের প্রশাসনিক জেলা গাজীপুর,প্রাচীন যুগে এটি ঘন বনাঞ্চলে আবৃত ছিলো যার কিছু নিদর্শন বর্তমানেও দেখা যায়। চারদিকে সারি সারি গাছপালা,কিছু কিছু পুকুর,সকাল হলেই পাখির কিচিমিচির আওয়াজ! নগর জীবন থেকে একটু দূরে একটা শান্তির আবাস বলা চলে।

এখানে এখনো অনেক টিনের ঘর দেখা যায় সাথে কিছু দরিদ্র মানুষের আর্তনাদ। সমাজের উপস্তরের এবং নিম্নস্তরের মানুষগুলো একসাথে বাস করে এখানে। দেখা যায় পাশে কতোগুলো হাই প্রোফাইল বিল্ডিং এর পাশেই দোচালা টিনের ঘর যেন মাঝখানে একটা লাইন টেনে দেয়া হয়েছে হতদ্ররিদ্র আর সমাজের ততোকথিত উচ্চজাতের মানুষের মাঝে!যে লাইনটা ঠিক পাশাপাশি হলেও তাদের মধ্যকার দুরত্ব বিশাল। যেখানে কেউ হয়তো কেউ খেতে পায়না অথচ তার পাশেই ধনীদের বাস্কেট ভর্তি খাবারে ডাস্টবিন পুরে টইটুম্বুর!

এ অঞ্চলের এই বিস্তর ফারাকগুলো রুশির মন বড্ড নাড়া দিয়ে গেলো, জানালার কাচের বাইরে সারি সারি গাছপালার মোহনীয় দৃশ্যের সাথে সমাজের করুণ বাস্তবতা ওর চোখ এড়ায়নি।দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো রুশি,গাড়িতে ও সায়ান পাশাপাশি বসে আছে মাঝে সামান্য ফাঁকা জায়গা। তবে মনের দুরত্ব আকাশ সমান হয়তো যোগ্যতারও! কারণ এপারের নিচুজাতের মানুষগুলোর মধ্যে ও একজন, তাই ওপারের মানুষের সাথে যতই দিন পান করুক তাদের একজন হওয়া সম্ভব নয়। কারণ কাক যতই ময়ুর সাজুক, তার কখনোই ময়ুর হয়ে উঠা হয় না।

তাই রুশি যতই চেষ্টা সায়ানের মন অবদি পৌঁছানো সম্ভব নয়। নিজেকে পাতালপুরীর কোন কুৎসিত রাজকন্যা মনে হচ্ছে যার আকাশের ওই চাঁদ ধরার স্বপ্ন! কিন্তু চাঁদ এমন একটা সুদর্শন বস্তু যা রোজ দেখা যায়, তাকে নিয়ে হাজারো কাব্য, কলি আর রুপকথার গল্প সাজানো যায় কিন্তু সেটা ছোঁয়ার ক্ষমতা কারোই থাকে না,ওরো নেই!

কিন্তু মনের কোথাও একটা খুব মনোবল দিয়ে কেউ একজন বলছে পাশে বসে থাকা স্বল্প দুরত্বের মানুষটি ওর যাকে রেজিট্রির মাধ্যমে নিজের নামে লিখে নিয়েছে, সম্পুর্ণ তার নামে। এমন অদ্ভুত ভাবনা মাথায় চাপতেই রুশি চোখ বন্ধ করে ফেললো, গাড়ির কাচ কিছুটা নামানো থাকায় অবাধ্য চুলগুলো মুখের উপর ঝাপটে পড়ছে। রুশি অলস ভংগিতে ভ্রু কুচকে মাথা নেড়ে সেগুলো সরানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে। মাথার ঘোমটা সেই কবেই পড়ে গিয়েছে তার খেয়াল নেই তার।

লম্বা দীঘল চুলের সাথে রুশির খুনসুটি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে সায়ান, মেয়েটির মুখে মেকাপের লেশমাত্র নেই বললে চলে। হরিণির ন্যায় টানা চোখদুটিতে বেখেয়ালি ভাবে দেয়া কাজল লেপ্টে আছে, সাথে ঠোঁটের নিচের সেই তিল!সদ্য যৌবনে পদার্পণ করা এক আঠারো পেরিয়ে যাওয়া বাঙালি নারী, যেনো সদ্য ফোটা কোন গোলাপ যাতে শিশির বিন্দু জমে আছে! এই নারীকে ঘিরেই যেন হাজারো কবির লিখা কবিতা,লেখকের লেখা উপন্যাস আর চিত্রকরের হাতের চিত্রশিল্প! যেনো জীবন্ত কোন শ্যামল বর্ণের অপরুপা,,,

সায়ানের খুব ভয়ংকর একটা ইচ্ছে হচ্ছে এই মুহুর্তে, নিজের হাতে অবাধ্য চুলগুলো গুজে দেয়ার। হাত বাড়িয়ে রুশির অবদি নিয়ে গিয়েও ফিরিয়ে আনলো। কি করতে যাচ্ছিলো ও?চন্দ্রিকাকেও এমন গভীর ভাবে কখনো দেখেনি ও আর না কখনো ইচ্ছে জেগেছে তার দিকে তাকিয়ে থাকার! তবে কেনো এই মেয়ের মেয়ের দিকে তাকালে মনে হয় যুগ যুগ তাকিয়ে থাকলেও চোখের তৃষ্ণা মিটবে না! তবে কি ও মেয়েটিকে দেখে এট্রাকটেড হচ্ছে?নিজেকে জঘন্য পুরুষের কাতারে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে, তবে কি এক সাথে দুটো মেয়েকে ব্যবহার করছে?

নিজের দৃষ্টিতে সংযত করে বাইরে তাকালো, রুশির মুখের দিকে আরো একবার তাকানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগলেও সেদিকে আর তাকালো না। কোন একজনের কাছে ওয়াদাবদ্ধ ও, আর যাইহোক সেই ওয়াদার বরখেলাপ ও কখনোই করবে না। নিজেকে কয়েকদফা শাশিয়ে চুপটি মেরে বসে রইলো। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো

“একটা মেয়ে এতো সুন্দর কি করে হতে পারে?হাউ?মাথাই পুরো বিগড়ে দিবে আমার!মেয়েটি কি আসলেই সুন্দর নাকি আজ কালো শাড়ি পরেছে বলে সুন্দর লাগছে! আচ্ছা লাল শাড়িতে কেমন লাগতো তাকে?ঠিক এতোটাই সুন্দর নাকি তার থেকেও বেশি!”

নিজের উদ্ভট চিন্তায় নিজেই যেনো বোকা বনে গেলো সায়ান। ও এতো কেনো ভাবছে মেয়েটাকে নিয়ে?তবে কি মেয়েটির উপর বড়োশড় ক্রাশ খেয়েছে ও? কথাটা ভাবতেই হালকা কেশে উঠলো সায়ান। নিজের কলার ঠিক করতে করতে নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বিড়বিড় করে বললো

“সেটা কি করে সম্ভব? সায়ান জামিল খান কারো উপর ক্রাশ খাবে! ইম্পসিবল”

রুশি সায়ানের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে, কিছুক্ষণ পুর্বে চোখ বুঝে থেকে মৃদু আওয়াজ শুনতে পেলো। পাশে তাকাতেই দেখে সায়ান কিছু একটা বলছে আবার নিজেকেই যেনো বুঝাচ্ছে! কিন্তু তা স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে না। এই ভর দুপুরে লোকটিকে জিনে ধরলো নাতো??

রুশি হাল্কা স্বরে বলে উঠলো

“আপনি কি কিছু বলছেন?”

সায়ান চমকে উঠে ধরা খাওয়ার মতো মুখভঙ্গি করে বললো

“কই না্ নাতো! আপনি ভুল শুনেছেন”

“নাহ দেখলাম ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু একটা বলছেন,তাই ভাবলাম আমাকে কিছু বলেছিলেন কিনা!”

“নাহ নাহ তেমন কিছু না।এনিওয়ে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে, নাহ অনেক না একটু সুন্দর লাগছে। আই মিন শাড়ি পড়লে সকল নারীকেই সুন্দর লাগে”

বলেই ভ্রু চুলকিয়ে বাইরে তাকিয়ে গেলো যেনো কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছে। কান দুটো লাল হয়ে আছে,হয়তো লজ্জা পাচ্ছে! রুশি মুচকি হাসলো, হয়তো সচারাচর কারো প্রশংসা করার অভ্যস নেই তার তাই অস্বস্তিতে পড়েছে। রুশি গলা খাঁকারি দিয়ে বললো

“ধন্যবাদ”

এই ছোট্ট শব্দটি যেনো সায়ানের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিলো,পাশে ফিরে রুশির মুখটা প্রবল ইচ্ছে দমিয়ে রাখলো। আচ্ছা মেয়েটি কি লাজুক হেসে আচলে মুখ ঢেকে রেখেছে!এদিকে রুশির মনটা যেনো নিমিষেই ভালো হয়ে গেলো, এতো এতো খারাপ লাগার মাঝে এই সামান্য ভালো লাগার অনুভুতিকে প্রাধান্য দিতে ইচ্ছে করছে। সরাসরি ওকে আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি যে ও সুন্দর তাই এই মুহুর্তে খুব আনন্দ লাগছে ওর, যেনো চারপাশে ফুলের পাপড়ি উড়ে বেড়াচ্ছে, গিটারের সুর তুলে কেউ মৃদু স্বরে গাইছে

“তুমসে মিলনা, বাতে কারনা
বাড়া আচ্ছা লাগতাহে”

জীবন কোথা থেকে কোথায় চলে যায় কেউ বলতে পারে না, হয়তো পরের মুহুর্তে জীবনের শেষ প্রহর গুনতে হতে পারে বা কোন এক ঝড় এসে সবটা ছারখার করে দিবে। কিন্তু এই মুহুর্তটা সম্পুর্ণ বাচঁতে ইচ্ছে করছে, প্রতিটা অনুভুতির সমারোহ ঘটিয়ে নিজের মনের খাচায় বন্ধি করে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে। কেয়া পাতা কাল হো না হো!
_____________________

খান বাড়িতে এই মুহুর্তে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে, যেনো জাঁকজমক পুর্ণ বাড়িটি মুহুর্তেই মৃত্য পুরিতে পরিণত হয়েছে। আজ প্রায় দুদিন ধরে সামু নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছে। মিসেস খান বিজনেস ট্যুরে দেশের বাইরে ছিলেন কিন্তু মেয়ের অবস্থা শুনে সাথেসাথেই দেশে ফিরে এসেছেন। অনেক চেষ্টা করেও সায়ানের সাথে কন্টাক্ট করতে পারেননি তিনি, ফোন বেজে বেজে ক্ষান্ত হয়ে গেলেও ওপাশ থেকে থেকে কেউ ফোন তুলে নি, আর তিনি হয়তো আশাও করেননা যে সায়ান ফোন তুলবে। যে ছেলে তার কথা ব্যতীত একপাও এদিক সেদিক হতো না সে আজ এতোদিন হয়ে যাওয়ার পরেও মায়ের খোজ নেয় না,ফোন করে বলে না

“মাম্মা কেমন আছো তুমি?”

কারণ তার কাছে সে মাম্মা নয় বরং মিসেস সাবিনা জামিল খান।তার ছোট্ট সায়ান সত্যিই বড় হয়ে গেছে, মাকে ছাড়া চলতে শিখে গেছে। তিনি দ্রুত হাতে ইনানকে ফোন দিলেন, এই মুহুর্তে এই নামটি ব্যতীত কারো কথা মাথায় আসেনি। একটা রিং হয়ে কেটে গিয়ে দ্বিতীয়বারের সময় ফোন তুললো ইনান। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো

“হেলো আন্টি! কেমন আছেন? এতো রাতে হঠাৎ!”

“ইনান! তুমি একটু আমাদের বাসায় আসবে?”

“এতো রাতে?কিছু হয়েছি কি?”

“সামু আজ দুদিন ধরে দরজা খুলছে না, ভিতর থেকে সাড়া শব্দও পাচ্ছিনা। সায়ানকে ফোন করেছি কিন্তু ধরেনি তাই বাধ্য হয়ে তোমায় ফোন করলাম। তোমার কথাতো সামু খুব মানে, একটু কষ্ট করে আসবে?”

ইনান এতোক্ষন ঘুমের জড়ানো কন্ঠে কথা বললেও এবার ওর ঘুম পুরো ছুটে গেলো। দ্রুত উঠে বসলো

“আন্টি আমি আসছি, আপনি চিন্তা করবেন না”

ইনান দ্রুত বেরিয়ে পড়লো, সামায়রাকে ও হারে হারে চিনে। প্রচণ্ড জেদি আর এক ঘেয়ো টাইপ মেয়ে। ওর যা চাই তা ওকে পেতেই হবে আর না পেলে নিজের ক্ষতি করতে একবারো ভাবে না। ইনান রিতীমত ঘামছে, যদি এবারো উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেলে?ওর কিছু হলে ইনান নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না, কক্ষনো না!

“সামু! ফর গড সেক ডোন্ট ডু এনিথিং রাবিশ।”

#চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ