গুমোট অনুভুতি পর্ব-৩৮ + বোনাস পার্ট

0
2391

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩৮

চন্দ্রিকা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে আর সায়ান এখনো রুশির দিকে তাকিয়ে!ঠোঁট জোড়া শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে,ঠোঁট জুড়ে বিরাজমান গোলাপি আভা অনেকটা হাল্কা হয়ে আছে। সায়ান নিজের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে আলতো করে ছুয়ে দিলো তারপর শান্ত স্বরে বললো

“সেটা তো তোমার খুব ভালো করে জানার কথা চন্দ্রিকা! আমি কি বিষয়ে কথা বলছি তা তোমার থেকে ভালো আর কে জানে?”

“আমি জ্ জানি মানে কি?সায়ান তুমি যা শুনেছো তা ভুল শুনেছো, কেউ হয়তো আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে! সব মিথ্যে বিশ্বাস করো সব!”

“তুমি এখনো জানোই না আমি কি নিয়ে কথা বলছি কিন্তু তুমি বলছো সব মিথ্যে! আচ্ছা কোনটা মিথ্যে?সেদিন স্ক্যান্ডাল এর বিষয়টি নাকি সেখানে রিপোর্টার পাঠানোর বিষয়টি?নাকি আমার বাড়িতে আমার বউকে দিনের পর দিন ড্রাগস দেয়ার ঘটনাটি মিথ্যে? আর সবচেয়ে বড় কথা আমার স্ত্রী আর অনাগত সন্তানের ক্ষতি করার চেষ্টা সব মিথ্যে?”

“তুমি স্ সব জানতে তাইনা?”

“হাহ কি মনে হয় তোমার?তুমি আমার নাকের নিচে দিয়ে সব করে যাবে আর আমি জানবো না?ভুলে গেছো আমি কে?সায়ান জামিল খান! তুমি সব করে যাবে আর আমি কিছুই জানবো না সেটা তোমার বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে তুমি এমন কাজ করলে কি করে?একসময় আমার মনে হতো যে চন্দ্রিকা আর যাইহোক খারাপ কিছু করবে না বাট আই ওয়াজ রং! তোমার থেকে জঘন্য কাজ আর কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। মাঝেমাঝে মনে হয় আমি তোমাকে চিনিনা, খুব অচেনা কেউ তুমি!তুমি আমার ছোট্ট পরী হতেই পারো না, তুমি অন্যকেউ!অপরিচিত কেউ!কারণ সেই মেয়েটি অবুঝ থাকা সত্ত্বেও অন্যকারো প্রাণ বাঁচানোর মতো পদক্ষেপ নিয়েছিলো কিন্তু তুমি?তুমিতো বুঝদার হয়েও মানুষের ক্ষতি ছাড়া অন্যকিছু করলে না, তুমি আর সে একই মানুষ কি করে হতে পারো। মাঝেমাঝে মনে হয় আমি হয়তো সঠিক জনকে খুঁজেই পায়নি আর যদিও পেয়েছি তবে সে আর আমার ছোট্ট পরী ছিলো না, ততদিনে সে অন্যকেউ হয়ে গিয়েছো!”

“কি বলতে চাইছো তুমি সায়ান আমি মিথ্যে বলছি?আমার সে নই যাকে তুমি খুঁজছিলে? এখন ওই মেয়েটিকে পেয়ে আমার অস্তিত্বকেও অস্বীকার করবে তুমি?ও আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলেছে আর তুমি বিশ্বাস করেছো। সায়ান তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো না কেনো? তোমার মনে হয় আমি এমন কিছু করতে পারি?”

“বিশ্বাস! এই শব্দটার সাথে আদোও তোমার কোন সম্পর্ক আছে চন্দ্রিকা?তুমি এই শব্দটার মানে বুঝ?তুমি জানো কখন একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে বিশ্বাস করে?জানোনা তাই এই শব্দটা তোমার মুখে মানায়না আর রুশির কথা বলছো তো!ও বানিয়ে মিথ্যে বলবে আমায়?হাসালে আমাকে যেখানে ও নিজেই নিজের হুশে ছিলো না এন্ড থ্যাংকস টু ইউ। তুমি কোনটাকে মিথ্যে বলবে?তুমি রুশির বিষয়ে স্ক্যান্ডাল ছড়াও নি?তাকে হেনস্তা করার জন্য ভার্সিটিতে রিপর্টার পাঠাওনি? আর সবথেকে বড় কথা হচ্ছে তুমি আমার আর রুশির ঘনিষ্ঠ ছবি দেয়ালে লাগিয়ে দিয়েছো যাতে সবাই ভাবে রুশি অন্যের সংসার ভাঙছে!”

সায়ান হাত মুঠ করে ফেললো তারপর উঠে দাঁড়িয়ে চন্দ্রিকাকে নিয়ে বারান্দায় চলে এলো, এই মুহুর্তে রুশির রেস্টের প্রয়োজন আর সায়ান যতোটা হাইপার হয়ে গেছে! ওইখানে থাকলে চেঁচামিচি হবে যা রুশির জন্য খারাপ। ও চন্দ্রিকার হাত ছেড়ে ওর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাঁকালো কিন্তু ঠোঁটের কোনায় বাঁকা হাসি ঝুলছে যাতে ওকে ভয়ংকর দেখাচ্ছে। ও দাঁতে দাঁত চেপে বললো

“একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর সম্মানে আঘাত করতে তোমার এইটুকু বাধেনি? হাউ কুড ইউ?একটা মেয়ের জন্য মিস্ট্রেস শব্দটা শুনা কতোটা কষ্টের তা নারী হিসেবে তোমার থেকে ভালো আর কে জানবে?তোমাকে সাহস দিয়েছে কে এমনটা করার?”

“তুমি কি করে জানলে এসব?কে বলেছে তোমাকে?”

“যাদের তুমি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিলে তারা বলেছে তাও খুবই অল্প সময়ের মাঝে। কি বলোতো পাওয়ার আর প্রপার্টি দুটোয় আমার বেশি তাই সায়ান জামিল খান পারেনা এমন কিছু নেই তা তুমিও জানো!”

“তারমানে তুমি সবই জানতে! তাইতো এতো হট নিউজ হওয়া সত্ত্বেও সেটা দুদিনের মাঝেই গায়েব হয়ে গেলো! নো ওন্ডার ইউ ডিড দেট”

“তো আর কি আশা করছিলে?আমার স্ত্রীর অপমান আমি মুখ বুঝে সহ্য করবো? ভাবলে কি করে তুমি?আনফর্চুনেটলি আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে বলে ওই স্ক্যান্ডাল দুদিন পর্যন্ত ছিলো নাহয় ওইটা বের হওয়ায় আগেই শেষ হয়ে যেতো!আমার স্ত্রীর দিকে আঙুল তুলার সাহস পেতো না কেউ”

“স্ত্রী?বাহ সে তোমার স্ত্রী হয়ে গেলো এখন সায়ান?তবে আমি কি তোমার?ওই দুদিনের মেয়ের জন্য আমি এখন পর হয়ে গেলাম?ওই কেরেক্টারলেস মেয়ের জন্য এতো দরদ তোমার?যে কিনা নিজের পুরোনো প্রেমিকের সাথে এখনো সম্পর্ক রাখে!তুমি জানো পুরোনো প্রেমিক কে?তোমার বোনের হবু জামাই ইনান! এক ছাদের নিচে থেকেও কিভাবে মানুষ স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে?নিশ্চিত সম্পর্ক এখনো আছে আর তাইতো এমন ভান করতে পারছে যেনো চিনেই না।হাহ হোয়াট আ ট্যালেন্ট! ঘরের টাও ঠিক রাখছে আর বাইরের টাও সামলা…”

আচমকা শব্দে চন্দ্রিকা চমকে উঠে নিচে তাকালো আর দেখলো সায়ানের ফোন ভেঙে চৌচির হয়ে আছে আর সে চোখ বন্ধ করে হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছে। ও বুঝতে পারছে যে ওই ফোনের স্থানে ও থাকতো হয়তো! চন্দ্রিকা চুপ হয়ে গেলো আর সায়ান চোখমুখ শক্ত করে বললো

“আমার মা আমাকে নারীদের অসম্মান করতে শিখায় নি নাহয় যে মুখ দিয়ে তুমি আমার স্ত্রীকে ইন্সাল্ট করেছো তা ছিড়ে ফেলতে আমার এক সেকেন্ড সময় লাগতো না, ট্রাস্ট মি একসেকেন্ডও না! তবে আর একটা শব্দ বললে আমি ভুলে যাবো তুমি একজন নারী! আর কেরেক্টার নিয়ে বলছো তো?কেরেক্টারের কি জানো তুমি?তোমার নিজের কেরেক্টার দেখেছো? আচ্ছা সেটা বাদ দাও এটা বলতো দুইমাস পুর্বে তুমি হসপিটালে কেনো গিয়েছিলে?”

“নর্মাল চেকয়াপ ক্ করানোর জন্য আর ক্ কি জন্য?”

“হাহ নর্মাল চেকয়াপ? নাকি অন্যকিছু! আমিই বলছি কেনো গিয়েছিলে,আচ্ছা তোমাকে একটা গল্প শুনাই! একটা মেয়ে একটা ছেলেকে বারবার ভালোবাসি ভালোবাসি বলতো আর ছেলেকে মেয়েটিকে ভালোবাসতে না পেরে খুব গিল্টি ফিল করতো! হঠাৎ একদিন সেই মেয়েটি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো আর চারমাস পর্যন্ত মেয়েটা বুঝতেই পারেনি! যখন বুঝতে পারলো তখন মেয়েটা ওই বাচ্চাটিকে মেরে ফেললো কিন্তু অপারেশন সাকসেসফুল না হওয়াতে মেয়েটি সারাজীবনের জন্য মা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললো! ঘটনা চেনা চেনা মনে হচ্ছে না?জানতে চাইবে না মেয়েটা কে?সেই মেয়েটি হচ্ছো তুমি! এম আই রাইট?”

“তুমি ক্ কি বলছো আ্ আমি বুঝতে পারছিনা”

“বুঝতে ঠিকই পারছো কিন্তু মানতে পারছো না, ভাবছো আমি কি করে জানলাম এইসব! মনে আছে আমি একদিন বাসায় গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম হসপিটালে কেনো গিয়েছিলে?তুমি বলেছো নর্মাল চেকয়াপ কিন্তু আমি ওইদিনই সব জানতাম তবে কিছু বলিনি কারণ অপমান করতে চাইনি তোমায়। তবে আজ বলেছি কারণ আমার স্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছো! ইনান আর রুশির মাঝে যা সম্পর্ক ছিলো তা শুধু বন্ধুত্বের! আর যদি অন্যকিছু থেকেও থাকতো তবে সেটা অতীত আর অতীত নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। আমি ওর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ তাই ও যতোদিন আমার সাথে থাকতে চাইবে ততদিন শি ইজ মাইন!”

সায়ান এই টুকু বলে থামলো তারপর আবারও বলা শুরু করলো

“আর রইলো তোমার কথা! তুমি খুব বলো আমায় ভালোবাসো? তাহলে যখন অন্যের সাথে সম্পর্কে জড়াচ্ছিলে তখন সেই ভালোবাসার কথা মনে পড়েনি?মনে পড়েনি আমি চিট করছি?তারউপর কি করলে প্রেগন্যান্সির খবর জানার সাথে সাথে তুমি সেটা এবর্শন করাতে গেলে, ডাক্তার বললো এটা রিস্কি তবুও তুমি করালে নিজের স্বার্থের জন্য! আর অপারেশন সাকসেসফুল হলো না, তুমিও আর মা হতে পারবে না। তাই তুমি একটা গেম খেললে! তুমি একটা মেয়েকে আমার রুমে পাঠালে যাতে সে আমার বেবি ধারণ করে এজ আ সারোগেট মাদার! যাতে আমি সারাজীবন গিল্টি ফিল করি আর তুমি আমার জীবনে সারাজীবনের জন্য জায়গা করে নাও। আর শুরুতে তাই হয়েছিলো!আমি গিল্টি ফিল করেছি আর তাই রুশিকে ভালোবাসা সত্ত্বেও তাকে নিজের থেকে দূরে রেখেছি তোমার কথা ভেবে যে তোমাকে হয়তো ভালোবাসি না কিন্তু তাই বলে ঠকাতে পারবো না কিন্তু ওইযে ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যার থেকে দূরে থাকা যায় আর আমিও থাকতে পারিনি। আই ফল ইন লাভ উইথ রুশি আর আমি তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি!”

সায়ান এবার চন্দ্রিকার দিকে ঝুকে বললো

“ভাগ্য ভালো আমি তোমার মতো মেয়েকে ভালোবাসিনি নাহয় তোমার এই রুপ দেখে বড্ড কষ্ট পেতাম। ভাগ্য ভালো যে আমার রুমে ওইদিন রুশি ছিলো যে তোমার মতো স্বার্থপর নয়। থ্যাংকস টু ইউ, আমি আমার লাইফে সত্যিকারের মানুষটাকে পেয়েছি!আম গ্ল্যড দেট শি ইজ মাই ওয়াইফ!”

“সে তোমার ওয়াইফ হলে আমি কি?তুমি তোমার ওয়াদার কথা ভুলে গেছো সায়ান?তুমি আমাকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারো না”

“প্রথমত শুরু থেকেই তুমি আমার দায়িত্ব ছিলে আর কিছুই না আর ওয়াদার কথা বলছো তো? একটা ওয়াদার উপর ভিত্তি করে সারাজীবন থাকা যায়না। আমি আমার বাবা নই যে নিজের ঘরে স্ত্রী রেখে অন্যনারীর সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত হবো!তাই এই ওয়াদার কোন মুল্যেই নেই যেখানে তুমি সেই মানুষই না যাকে আমি চিনতাম। আর ধোঁকা তো তুমি আমাকে দিয়েছো! আমি তো ঠিকই ছিলাম কিন্তু রুশিকে তুমি আমার জীবনে এনেছো আর আমি তার জন্য শুকরিয়া আদায় করি। আর তোমার প্রেগন্যান্সি?এটা তুমিও জানো আর আমিও জানি যে তোমাকে আমি কিস পর্যন্ত কোনদিন করিনি, ছোয়া তো অনেক দুরের কথা!তুমি জোর করে দুই একবার জড়িয়ে ধরলেও আমি ছাড়িয়ে নিয়েছি নিজেকে। তাই বেবিটা আমার তো নয়ই তাহলে বেবিটা কার?তোমার ওই প্রেমিকের নাকি অন্যকারো?”

চন্দ্রিকার মুখটা চুপসে গেলো, জবাব দেয়ার মতো কিছু নেই ওর! সায়ান যা বলেছে সব সত্যি! কিন্তু বেবির ব্যপারটা?ও নিজেও চাইনি বেবিটাকে মারতে কিন্তু এ ছাড়া কোন উপায় ছিলো না ওর কাছে! ও বাধ্য ছিলো সম্পুর্ণটা সময়!চন্দ্রিকার চোখদুটো টলমলে করে উঠলো তা দেখে সায়ান ওর দিকে ঝুঁকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো

“এবার বলুন মিস চন্দ্রিকা! আসলে কেরেক্টারলেস কে?আমি তোমাকে এসব বলে অপমান করতে চাইনি কিন্তু বাধ্য করেছো আমাকে। আমি তারপরোও সবকিছু ক্ষমা করে দিতাম কিন্তু রুশি তখন আমার লাইফে ছিলো,তাই ওকে ছেড়ে আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিলো না তাই অনেকদিন দোটানায় ছিলাম!পরে যখন বুঝতে পারলাম রুশিকে ছাড়া আমার চলবে না তখন চেয়েছিলাম তোমার দায়িত্ব নিতে কিন্তু তুমি কি করলে আমার স্ত্রীকে ড্রাগস দেয়া শুরু করলে যাতে সবাই ওকে ভুল বুঝে আর আজকে? তুমি তাদের মেরে ফেলতে চেয়েছো?যদি আমি এটা আগে জানতাম তবে তোমাকে বাঁচাতে লোক পাঠানো তো দুরের কথা আই উইশড তুমি মরে যেতে!”

“আমি ম্ মরে গেলে তুমি খুশি হতে?”

“অবশ্যই খুশি হতাম!তুমি স্ত্রী আর অনাগত সন্তানকে মারতে চেয়েছো তোমাকে যে আমি এখনো মেরে ফেলিনি সেটাই অনেক!তুমি যে আমার সামনে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে আছো তা নিয়ে শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ নয়?বাট নাউ উই আর ইভেন। তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলে আর তাই আমি এখন তোমার প্রাণ নিবোনা, কিন্তু আজকের পর থেকে তোমার আর আমার কোন সম্পর্ক নেই, দায়িত্বেরও না। আজকের পর যদি তোমাকে আমার সামনে দেখি তবে তোমাকে খুন করতে আমার হাত কাঁপবে না। ট্রাস্ট মি একটুও না! নাউ গেট আউট।”

পরের কথাটা চিল্লিয়ে বললো সায়ান যাতে চন্দ্রিকা কেঁপে উঠলো আর চোখের কোনে থাকা জল গড়িয়ে পড়লো। ও সায়ানকে ভালো বাসেনা এটা ও জানে কিন্তু এতোগুলো বছরে সায়ানের প্রতি মায়া জমে গেছে তাইতো সায়ানকে মরতে দেয়নি, সকল কিছু ভেস্তে দিয়েছিলো। সায়ান সবসময় ওর ভরসার জায়গা ছিলো তাইতো আজ ওই ফায়ারে আটকে পড়ার পর সবার আগে সায়ানকে কল দিয়েছিলো কিন্তু সে উঠায়নি। সায়ানের এই ব্যাবহারে অনেক কষ্ট লাগছে ওর, বুকের মাঝে তীব্র ব্যথা হচ্ছে। মায়া জিনিসটা হয়তো এমনি বড্ড কষ্ট দেয়, এইযে ও ভাবতেই পারছেনা সায়ানের সাথে আজকের পর থেকে আর দেখা হবে না! কিন্তু ও বুঝতে পারলো এখানে থেকে লাভ নেই, আগে হোক আর পরে হোক একসময় না একসময় সায়ানের জীবন থেকে ওর যেতেই হতো কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি হচ্ছে বলে হয়তো মানতে পারছে না। চন্দ্রিকা সায়ানের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো

“আমি জানিনা তুমি বিশ্বাস করবে কিনা তবে সকল ঘটনার সাথে আমি জড়িত থাকলেও আজকের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না!আমি কখনোই রুশি বা তার সন্তানের ক্ষতি করতে চাইনি। সেই ড্রাগস শুধু ওকে খিটখিটে করে দিবে এ ছাড়া আর কিছুই না বাকি ওদের ক্ষতি করার ইচ্ছে আমার কোনদিনই ছিলো শুধু চেয়েছি তারা তোমার জীবন থেকে চলে যাক। আজকের ঘটনায় আমার কোন হাত নেই!”

“যে নিজের সন্তানকে মারতে পারে সে সব করতে পারে, তুমি নিজের সন্তানকেই রেহাই দিলে না অন্যের সন্তানের প্রতি তোমার দরদ কাজ করবে কি করে। এর আগে আমি আমার কথা ফিরিয়ে নেই আর তোমাকে এখানেই শেষ করে দেই প্লিজ গো ফ্রম হেয়ার!দ্বিতীয়বার দেখলে আমি সত্যিই তোমাকে বাঁচতে দিবো না এন্ড ট্রাস্ট মি এই উইল ডু ইট”

চন্দ্রিকা আর দাঁড়ালো না, পিছনে ফিরে চলে গেলো। খুব ইচ্ছে ছিলো শেষবারের মতো সায়ানকে আরো একবার দেখবে কিন্তু সাহস জুগিয়ে উঠতে পারে নি। সায়ান সেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,ও নিজের রাগ থামানোর চেষ্টা করছে!

পাশেই দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুশি, চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি পড়ছে। ও অনেক আগেই উঠে গিয়েছিলো যখন চন্দ্রিকা দরজা বাড়ি দিয়েছিলো কিন্তু ও কিছু বলেনি বরং চোখ বন্ধ করে ছিলো। সায়ান বেরিয়ে আসাতে ও দরজার পাশে দাঁড়ায় আর সব শুনতে পেয়েছে কিন্তু তাতে ওর বিশেষ মাথা ব্যথা নেই। ও শুধু এইটুকু ভাবছে যে সায়ান! ওর আর ইনান সম্পর্কে সব জানতো কিন্তু ওকে কোনদিন প্রশ্ন করেনি বরং ওকে কাঁদতে দেখে সেদিন শান্তনা দিয়েছিলো আর এমন ভান করেছিলো যে কিছু শুনেই নেই।সায়ান ওর ব্যক্তিত্বকে সম্মান করেছিলো আর আজও করছে! রুশি সায়ানকে ভালোবাসে অনেক আগে থেকেই কিন্তু কোনদিন সাহস করেনি বুঝানোর কারণ ও ভাবতো সায়ান চন্দ্রিকাকে ভালোবাসে! আজ যখন জানতে পারলো যে সায়ান ওকে ভালোবাসে তখন ও ঠিক কতোটা খুশি ও বুঝাতে পারবে না, ও কারো জীবনে তৃতীয় ব্যাক্তি নয় বরং সায়ানের জীবনের ফার্স্ট প্রায়োরিটি!

রুশি আস্তে করে চোখ মুছে নিজের স্থানে গিয়ে শুয়ে পড়লো। সায়ানকে বুঝতেই দিবেনা ও সব শুনেছে, এতোদিন ভালোবেসেও প্রকাশ করেনি এর শাস্তিতো পেতেই হবে। যতোদিন না সায়ান নিজের অনুভুতি প্রকাশ করবে ততদিন ও সায়ানকে নিজের অনুভুতির জানান দিবে না। রুশি বিড়বিড় করে বলতে লাগলো

“দেখি জনাব কতোদিন না বলে থাকতে পারে!আমাকে তো চিনেনা?মনের কথা যদি মুখ পর্যন্ত না এনেছি তবে আমার নামও রুশানি আনাম নয়!”

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_Extra

সায়ান কেবিনে ঢুকে ঘুমন্ত রুশির দিকে তাকিয়ে,আঁখিপল্লব হাল্কা কাঁপছে। কিছুক্ষণ পুর্বেই ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে! তারা বলেছেন তেমন গুরুতর কিছু হয়নি বিধায় আজকেই বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে তবে সাবধানে থাকতে হবে। যেহেতু ব্লিডিং হয়েছে তাই সাবধানে চলাফেরা করতে হবে আর প্রায় বেবি হওয়া পর্যন্ত রেস্টে থাকতে হবে।রুশির সামনে পরিক্ষা কিন্তু সায়ান ওকে নিয়ে রিস্ক নিতে চায়না তাই অলরেডি ভেবে নিয়েছে রুশিকে বলবে এই সেমিস্টার ড্রপ দিতে। আর যাইহোক বেবির মুল্য বেশি আর এই বেবির কারণেই রুশির ওর জীবনে আসা নাহয় ও কোথায় খুজে পেতো রুশিকে?ওতো ভাবতেই পারছেনা রুশিকে ছাড়া থাকার কথা।

সায়ান রুশির কপালে হাল্কা ঠোঁট ছোয়ালো তারপর হাত চেপে ধরে বসলো হঠাৎ ওর মাথায় কিছু আসলো। ও ফোন বের করে বিভিন্ন এংগেলে ছবি তুলতে লাগলো, কখনো চোখে তাকিয়ে থেকে কখনো, কখনো হাতে হাল্কা ঠোঁট ছুইয়ে কখনো বা কপালে। যখন কেমেরার দিকে তাকিয়ে রুশির গালে কিস করার জন্য এগুচ্ছিলো ঠিক সেই মুহুর্তে রুশি চোখ মেললো আর সায়ান আঁৎকে উঠে হাত থেকে ফোন ফেলে দিলো আর রুশির দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো, অপরদিকে রুশি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বললো

“কি করছিলেন আপনি?”

“ক্ কিছু না, হে হে আমিতো জাস্ট ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করেছিলাম। আ্ আর কিছু না!”

“আপনার ব্যাবহার কেমন যেনো সুবিধার ঠেকছে না, মনে হচ্ছে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন!”

“হোয়াট! তুমি আমাকে চোর বলছো?কোন এংগেলে আমাকে চোর মনে হয়?এতো হ্যান্ডসাম ছেলে কখনো চোর হয়?”

“আমি কিন্তু আপনাকে চোর বলিনি শুধু বলেছি চোরের মতো করছেন কিন্তু আপনিতো দেখছি স্বিকার করে নিচ্ছেন। ব্যাপারটা হলো না “ঠাকুর ঘরে কে?আমিতো কলা খাইনি!” আর আপনার অবস্থা দেখে বর্তমানে সব এংগেল থেকেই আপনাকে চোর মনে হচ্ছে। আর রইলো হ্যান্ডসাম হওয়ার বিষয়!মশাই আপনি নিজের একটু ওভার প্রশংসা করছেন না?আপনি হ্যান্ডসাম এটা কে বলেছে আপনাকে?”

“আমি তাহলে হ্যান্ডসাম নই?তুমি বলতে চাইছো আমি বাজে দেখতে?”

“নাহ তাওতো বলিনি! আপনি হ্যান্ডসাম না আবার বাজেও দেখতে না। ওই মোটামুটি কিছুটা কিউট দেখতে এর বেশিনা”

সায়ান রুশির মুখভঙ্গি দেখে হাসলো, তারপর কিছু একটা ভেবে বললো

“তাহলে তোমার কেমন ছেলে পছন্দ? সামওয়ান হু ইজ হ্যান্ডসাম অর কিউট”

“ইট ডিপেন্ডস আমি তাকে আমার লাইফে কিভাবে চাই। ধরুন যারা হ্যান্ডসাম দেখতে তাদের দেখে সবাই ফিদা হয়ে আর তাদের প্রতি এট্রাকশন কাজ করাও স্বাভাবিক। আর যারা কিউট দেখতে তাদের দেখলে আদর পায় হয়তো মায়াও যাগে!দেখলেই মনে হয় গাল টেনে ধরে বলি ‘অওওও সো কিউট’!”

রুশি হাত নিজের গাল টেনেই দেখালো যাতে সায়ানের হাসি পেলেও সামলে নিলো তারপর মৃদু স্বরে বললো

“ওহ আচ্ছা তার মানে আমাকে দেখলে তোমার আদর পায়?”

কথাটা শুনে রুশির কাশি উঠে গেলো, আমতা আমতা করে বললো

“সেটা আমি কখন বললাম?”

“একটু আগেই বললে আমি হ্যান্ডসাম না কিউট দেখতে, আর কিউট ছেলেদের দেখলে তোমার আদর পায়। এর মানে তো এটাই দাঁড়ালো যে আমাকে দেখলে তোমার আদর পায়”

কথাগুলো বলতে বলতে সায়ান রুশির দুপাশে হাত রেখে ওর দিকে অনেকটা ঝুকে গেলো। রুশির হার্টবিট বেড়ে গেলো ইনহিউমেন স্পিডে, ও কয়েকটা ঢোক গিলে বললো

“আপনি একটু সরে বসুন, আমার অস্থির লাগছে!”

সায়ান আরেকটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো

“কেনো অস্থিরতা কেনো কাজ করে তোমার? এখন আদর পাচ্ছে না?”

“নাহ, কারণ এই মুহুর্তে আপনাকে কিউট লাগছেনা”

“তাহলে কি হ্যান্ডসাম লাগছে যা দেখে তুমি এট্রাকটেড ফিল করছো?”

“আমি ক্ কবে বললাম সেটা?”

“ও তাহলে কাজ করছে না?কিন্তু আমিতো বড্ড এট্রাকটেড ফিল করছি!”

বলেই রুশির দিকে ঝুঁকে পড়লো আর রুশি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। অনুভব করলো কেউ ওর চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিচ্ছে,হঠাৎ করে গরম নিশ্বাস না পড়াতে রুশি চোখ খুললো আর দেখে যে সায়ান ওর পেটে দিকে তাকিয়ে আছে, রুশি ভ্রু কুচকে তাকালো, কি ভেবেছিলো আর কি হলো?ছিছিছি কি ভাবছিলি তুই রুশি আবার কিছু না হওয়াতে ডিজেপয়েন্টেডো ফিল করতেছিস?শেম অন ইউ!

“আর ফিলিং হট বেবি? তোমার মাম্মামের শরীরের তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে তোমার গরম লাগারই কথা”

বলেই রুশির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো আর রুশি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। কি বলছে এই ছেলে?ও নিজের মাথায় হাত দিয়ে দেখলো নাহ তাপমাত্রাতো ঠিকই আছে! রুশি সন্দিহান দৃষ্টিতে বললো

“কই শরীর তো গরম নয়?”

“আমি কি তোমাকে বলেছি? আমি বেবির সাথে কথা বলেছিলাম।ব্যাপারটা এমন না?’ঠাকুর ঘরে কে?আমিতো কলা খাইনি!”

“আমার কথা আমাকে ফেরত দিচ্ছেন?”

“যদি ভাবো তাহলে তাই!আমিতো…”

সায়ান কিছু বলার আগেই কেবিনের দরজা খুলে গেলো আর সাহিল খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাহিল থতমত খেয়ে বললো

“স্যরি বস আমি বুঝতে পারিনি,আমি আসছি ইউ গাইজ কেরি অন”

রুশির যেনো নাক কান সব কাটা যাচ্ছিলো কিন্তু সায়ানকে সরানোর চেষ্টা করেও সরাতে পারছে না। কেমন ভাবলেশহীন ভাবে ওর দিকে ঝুঁকে আছে। লজ্জায় ও কোথাও লুকিয়ে যেতে চাইছে। সায়ান সাহিলকে উদ্দেশ্য করে বললো

“সাহিল! আগামী একবছর তুমি ওভারটাইম করবে আর তিনমাসের বেতন কাটা হলো”

সাহিলের যেনো মাথায় হাত!কেনো যে এই সাইকো বসের রোমান্টিক মুমেন্ট ও স্পয়েল করতে গেলো? ও জানে বস বেতন কাটবে ঠিকই কিন্তু ওভারটাইম ঠিকই করাবে। ইশশ কি পোড়া কপাল আমার!

সাহিল যেতেই সায়ান রুশির দিকে তাকালো,তারপর বললো

“তো কি যেনো বলছিলাম আমি?

সায়ানের চেহারায় সে আগের মতো হাসি! অথচ মিনিট কয়েক পুর্বেও সেটাতে স্পষ্ট রাগ ছিলো। এই ছেলে দেখি গিরগিটির চেয়েও ফাস্ট রং বদলায়! রুশি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে