#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩৫
দেখতে দেখতে কেটে গেলো পাঁচ মাস আর এই পাঁচ মাসে অনেক কিছু বদলে গেছে।সায়ান এখন সম্পুর্ণ সুস্থ হয়তো মানসিক ভাবে নয়। রুশি আর সায়ান স্বামী স্ত্রীর কম বন্ধু বেশি হয়ে উঠেছে, সায়ান অফিস শেষে বাসায় আসলে রুশি সারাদিনের ঘটে যাওয়া সবকিছু সায়ানকে বলে আর সায়ান মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনে। যদি কোনদিন রুশি কিছু না বলে তাহলে সায়ান বুঝে যায় যে রুশি ক্ষেপে আছে। সায়ান অনেক চেষ্টা করেও রুশিকে বলতে পারেনি যে ও রুশিকে ভালোবাসে, সত্যি বলতে রুশি বলার সুযোগই দেইনি। কিছু বলার পুর্বেই কথা ঘুরিয়ে ফেলে অথবা বলার সুযোগ দেয়না, সায়ান আজকাল খুব বিশ্বাস করে যে রুশির জীবনে ও বন্ধু ছাড়া আর কিছুই নয় যা ওকে বড্ড কষ্ট দেয়। আগের মতো রুশি আর আবেগি নেই কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে গেছে, এই রুশি মেন্টালি খুব স্ট্রং!
সায়ান প্রথম প্রথম খুব চেষ্টা করেছে বলার কিন্তু রুশির মেজাজ কেমন যেনো খিটখিটে আজকাল। কিছু বলার পুর্বেই চড়ে যায়, এইতো সেইদিন কাজের মেয়ে ভুল করে ওর গায়ে পানি ফেলে দিয়েছিলো আর সেই কারণে রুশি ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বসে। সায়ান খাবার ছেড়ে হতবাক হয়ে বসে ছিলো, এই রুশিকে ও চিনে না। এতোটা রুড আর এরোগেন্ট! নিজের মাকে জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারলো আজকাল রুশি প্রায় এমন ব্যবহার করে এবং বেশিরভাগ সময় একা একা থাকতে চায়। তিনি আরো বললেন যে প্রেগন্যান্সির সময় এমন মুডসুইং হতেই পারে পরে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আজ প্রায় তিনমাস ধরে একই রকম চলতেছে।
রুশির প্রেগন্যান্সির বর্তমানে ছয়মাস চলে, পেট ফুলে উঁচু হয়ে গেছে। তবে হাটা চলায় তেমন কষ্ট হয়না তাই রুশি প্রায়ই বাইরে চলে যায় তাও আবার কাউকে না বলে। যদি সায়ান বলে যে কোথায় গিয়েছিলে একটাই জবাব দিবে
“প্রয়োজন বোধ করছিনা বলার”
ব্যাস আর যাই প্রশ্ন করুক অপরপাশ থেকে নিরবতা ছাড়া আর কোনকিছু পাওয়া যায়না।সায়ান তাই আর প্রশ্ন করেনা কারণ রুশির নিজের লাইফ নিজের অনুযায়ী লিড করার সম্পুর্ণ অধিকার আছে। সেখানে সায়ান হস্তক্ষেপ করতে পারবে না কিন্তু স্বামী হিসেবে জানার অধিকার তো অবশ্যই আছে তবে রুশির ইদানীং এর ব্যাবহারে মনে সায়ানকে স্বামী হিসেবে মানেই না, সায়ান রুশির কাছে সামান্য একজন বন্ধু ছাড়া আর কিছুই নয়। সায়ানের খুব কষ্ট হয়, বলতে ইচ্ছে করে কেনো করছো আমার সাথে? কিন্তু ভয় যদি কিছু বললে রুশির বা বাচ্চার ক্ষতি হয়!
এটলিস্ট বেবি আসা পর্যন্ত রুশিকে কিছু বলবে না বলে ভেবে নিয়েছে, বেবি আসার পর ঠান্ডা মাথায় সুস্থভাবে কথা বলা যাবে। তখন রুশির মুডও হয়তো ভালো হয়ে যাবে, কারণ সায়ান চায়না কোনকিছু বললে রুশি এখন যে ওর সাথে কথা বলে সেটাও বলা বন্ধ করে দিক। এটা তো আরো সহ্য করতে পারবে না,তাই যা যেভাবে চলছে আপাদত সেভাবে থাকুক। অনেক সময় আছে সবকিছু সলভ করার আপাদত কিছু না করাই বেটার। তাই একই ঘরে দুজন অপরিচিত ব্যাক্তির মতো আছে যেমন এই এখন এই মুহুর্তে আছে। এতোটা কাছে থেকে প্রাণখুলে কথা বলতে পারছে না বরং হিসেব করে কথা বলতে হয়। হঠাৎ কি বললে রুশি আবার চটে যায়!
এইতো সেইদিন সায়ান ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ করেছিলো, এখন খুব একটা দরকার ছাড়া কোম্পানিতে যায়না। ও ইম্পর্টেন্ট মিটিংয়ে ছিলো কিন্তু রুশি ডাক দিলো, ও কথার মাঝখানে থাকায় খেয়াল করেনি। রুশি হুট করে এসে ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয় যাতে সায়ান প্রচুর বিরক্ত হয়, তবুও তা চেহারায় প্রকাশ না করে শান্ত স্বরে বলে
“রুশি মিটিংয়ে ছিলাম, কি লাগবে একটু পরও তো বলা যেতো!”
তাতে রুশি বেশ চটে গেলো আর তিনদিন সায়ানের সাথে কথা বলেনি আর না ওকে এই রুমে থাকতে দিয়েছে। হাজার চেষ্টা করার পরও কথা বলেনি তারপর আবার নিজ থেকেই কথা বলেছে তাও কোম্পানিতে গিয়ে!মিটিং রুমে ঢুকে সবাইকে বের করে দিলো ধমক দিয়ে তারপর হুট করে এসে সায়ানের কোলের উপর বসে পড়লো। আর সায়ানের চুল নিয়ে খেলতে শুরু করলো এরপর কোম্পানির ত্রিশ এর নিচে থাকা সকল নারী এমপ্লয়িকে ফায়ার করে দিলো, যেহেতু রুশি নিজ থেকে এসে কথা বলেছে তাই সায়ান এ ব্যাপারে ওকে কিছু বলেনি বরং যা করতে চেয়েছে তা হতে দিয়েছে।
রুশির হঠাৎ ইন্সিকিউরিটি ওর মাথায় ঢুকে নি,রুশি কেমন যেনো সারাক্ষণ ওর সাথে লেপ্টে ছিলো সেইদিন আবার কতোক্ষণ পর পর ছবি তুলেছে আর কি যেনো করেছে! রুশির কড়া নির্দেশ সায়ান ব্লাক কিছু পড়তে পারবে না, এমনকি চন্দ্রিকার নাম্বার ব্লাক লিস্টে আছে প্রায় দুমাস হলো, ব্লুক করার রুশি শাসিয়েছে যদি এটা আনব্লক করলে সারাজীবন কাউচে ঘুমাতে হবে। সায়ান এমনিতেও আনব্লক করতো না তবে সেদিনের পর আবার আগের মতো হয়ে গেছে। ইদানীং সায়ানের বেশ সন্দেহ হয় হচ্ছেটা কি?
ওর মনে হচ্ছে সামথিং ইজ নট রাইট কিন্তু বুঝতে পারছে, কোনকিছু হওয়ার আশংকায় সায়ান এইপর্যন্ত অনেকগুলো মেইডকে ফায়ার করে নতুন করে হায়ার করেছে। বাড়ির সিকিউরিটি ব্যাবস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে এমনকি ঘরে সিসিক্যামেরা ইন্সট্রল করেছে কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েনি। সায়ান এখন আগের থেকে আরো বেশি সাবধান থাকে আর প্রয়োজন ছাড়া বের হয়না রুশিকে রেখে। সিসিকেমেরা পর্যবেক্ষন করে প্রায়ই।
তবে আজ জরুরি মিটিং থাকায় বাইরে যাচ্ছে,বাসায় সার্ভেন্ট ছাড়া আর কেউ নেই। রুশিকে দেখলো বারান্দার গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে। ও রুশির দিকে কতোক্ষণ তাকিয়ে রইলো, কতো বদলে গেছে এই কয়মাসে। ও গলা খাকারি দিতেই রুশি বললো
“এতোসকালে রেডি হচ্ছো যে কোথাও যাচ্ছো?”
“মিটিং আছে একটা জরুরি তাই যাচ্ছি! তুমি সাবধানে থেকো আর আমায় ফোন দিও ঠিকাছে!”
“মিটিংয়ে যাচ্ছো ভালো কথা এভাবে কেনো যেতে হবে?তোমার কোথাও যাওয়া লাগবে না। তুমি ঘরে বসে থাকো!”
“রুশি রিল্যাক্স জাস্ট মিটিংয়ে যাচ্ছি আর কোথাও না,বি আ গুড গার্ল আর ঘরেই থেকো। আমি দেড় ঘন্টার মাঝে ফিরে আসবো ঠিকাছে!”
বলেই রুশির কপালে ঠোঁট ছোয়ালো তারপর বেরিয়ে পড়লো রুম থেকে। যথাসাধ্য দ্রুত যেতে ওকে তাহলে দ্রুত ফিরে আসতে পারবে!
সায়ান মিটিং রুমে ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলছিলো হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো কিন্তু ও এতোগুরুত্ব দিলো না। অনাবরত কয়েকবার বাজার পর ও তুললো আর যা শুনলো তা শুনার জন্য ও প্রস্তুত ছিলো না। দ্রুত বাসায় পথে রওনা দিলো, ওর হাত পা কাঁপছে। এটা কি করে হতে পারে??
বাসায় পৌঁছাতেই ও হদদন্ত হয়ে ঢুকলো আর রুশিকে নিচে পড়া অবস্থায় দেখলো। রুশি এখনো হুশে আছে কিন্তু ফ্লোরে রক্ত দেখা যাচ্ছে। সায়ান রুশির দিকে আগাবে তখনি একজন দ্রুত পায়ে এসে বললো
“স্যার চন্দ্রিকা মেম যে ফ্লাটে ছিলো সেইখানে আগুন লেগেছে। অবস্থা ভালো নয়, ফায়ার সার্ভিস আগুন কন্ট্রোলে আনতে পারছে না”
রুশি সায়ানকে থমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ করে পেট ধরে বসে পড়লো, উঠতে পারছে না।আহহহ শব্দ করে উঠলো। সায়ান রুশির দিকে কয়েক কদম এগিয়ে আসলো,তারপর অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হয়তো ভাবছে দায়িত্ব আর ভালোবাসার মাঝে কাকে বেছে নিবে কিন্তু হুট করে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। রুশি ভুল ছিলো সায়ান ওকে ভালোবাসে না তার ভালোবাসা চন্দ্রিকা! ও কি করে ভাবলো ছয়বছরের ভালোবাসা ছয়মাসের দায়িত্ব থেকে মুল্যবান হবে?চন্দ্রিকা ঠিক ছিলো! সায়ান শুধুমাত্র বেবির জন্য ওকে সাথে রেখেছে আর এখন বেবি থেকেও বড় হচ্ছে চন্দ্রিকা তাইতো ওকে এখানে ফেলে চলে গেলো! আর যাই হোক না কেনো দিনশেষে ভালোবসারই জয় হয়!
রুশি সায়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো, ও সায়ানকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু সায়ান তো ওকে চুজ করেনি তাই ও সায়ানকে ক্ষমা করতে পারবে না।কক্ষনো না! ও বহুকষ্টে উঠে দাঁড়ালো, আর যাইহোক ওর সন্তানকে ওকে বাঁচাতে হবে যেকোন মুল্যে হোক না কেনো!
#চলবে
#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩৬
রুশি অসহায় ভাবে সায়ানের চলে যাওয়া দেখলো, তারপর বহুকষ্টে উঠে দাঁড়ালো। পা জোড়া অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে, ফ্লোরে উপর হাল্কা রক্ত দেখে ওর মাথা ঘুরা শুরু করে দিয়েছে। সামনে এক কদম এগোতেই আর ব্যালেন্স রাখতে পারলো না, ও ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। এই বুঝি সব শেষ!কিন্তু একজোড়া বলিষ্ঠ হাত ওকে ধরে ফেললো তারপর হুট করেই কোলে তুলে নিলো। রুশি ভয়ে কাঁপা হাতে তাকে তার শার্ট চেপে ধরলো। এই অবস্থা দেখে সেই ব্যাক্তি কড়া গলায় বললো
“একটু অপেক্ষা করতে পারলে না?গাড়িটা তো বাড়ির ভেতর আনতে দিবে!যদি পড়ে যেতে আর কিছু হয়ে যেতো? আমাকে একটু বিশ্বাস করে অপেক্ষা করতে পারতে না?”
রুশি আলতো করে চোখ খুললো তারপর একজন সুদর্শন পুরুষকে দেখতে পেলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে! ভয়ে নাকি ওর ভারে ঠিক ঠাউরে উঠতে পারলো না। আর যাইহোক ওর বর্তমানে ছয়মাস চলে, অনেকটাই মুটিয়ে গেছে তাই ওকে কোলে নিয়ে হাটা চারটি খানি কথা নয় আর সে রিতীমত দৌড়াচ্ছে! রুশি নিজের মাথা তার বুকে এলিয়ে দিলো তারপর কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো
“সা্ সায়ান! তোমাকে বিশ্বাস করতে না পারার জন্য স্যরি তবে আমি খুব করে চেয়েছিলাম করতে!”
সায়ান পর্যন্তই রুশি উচ্চারণ করতে পেরেছে বাকিটুকু উচ্চারণ করার শক্তি ওর ছিলো না।সায়ান ওর কাঁপা কন্ঠে থমকে গেলো আর ওর গালে আলতো করে হাত রেখে বললো
“কিচ্ছু হবে না দেখো!আমি তোমাদের কিচ্ছু হতে দিবো,আমি আছিতো তুমি প্লিজ চোখ বন্ধ করোনা”
বলতে বলতেই সায়ান রুশিকে গাড়ির সিটে বসিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো আর নিজে বসে গাড়ি চালাতে লাগলো। রুশির এক হাত সায়ানের হাতের মুঠোয়, সামনের দিকে তাকিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত ড্রাইভিং করলেও রুশিকে বারবার চোখ বন্ধ না করার জন্য বলছে। সায়ানের অজান্তেই ওর চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, রুশিকে এই অবস্থায় দেখে ওর কলিজা ফেটে যাচ্ছে!
হসপিটালে পৌঁছাতেই ও রুশিকে কোলে করে ঢুকে পড়লো আর ডক্টর নার্স বলে চিল্লাতে লাগলো। সবাই সায়ান জামিল খানকে এভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে গেলো, ওরা দ্রুত এগিয়ে আসলো তারপর রুশিকে বেডে শুইয়ে ওটির রুমে নিয়ে যাওয়া শুরু করলো। সায়ান রুশির চেপে রাখলো তারপর বেড থামিয়ে রুশির সামনে হাটু গেড়ে বসলো আর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
“ইউ আর নট এলাউড টু লিভ! আমি তোমাকে সেই পার্মিশন দেইনি।তোমাকে ফিরে আসতে হবে আমার জন্য ফিরে আসতে হবে।”
রুশির তখনো আধখোলা চোখে সায়ানকে দেখেছিলো কিন্তু ওর সম্পুর্ণ হুশ নেই।সায়ানকে দেখতে পেলেও সায়ানের কথা ওর মাথায় ঢুকছেনা কিন্তু শব্দগুলো কানে আসছে ঠিকই। রুশিকে ওটির রুমে নিয়ে যেতেই সায়ান ধপ করে বসে পড়লো, দুইহাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে। ধীরেধীরে সময় যাচ্ছে কিন্তু ওটির দরজা খুলছে না। একেকটা সেকেন্ড ওর কাছে একযুগ মনে হচ্ছে, ও দম খিঁচে বসে আছে!বুকের বাঁ পাশে তীব্র ব্যাথা হচ্ছে, মনে মনে দোয়া করছে যেনো সব ঠিক হয়ে যায়। সায়ান মাথা নিচু করেই বসে ছিলো তখন কেউ একজন পাশে এসে দাঁড়ালো, সায়ান মাথা তুলে তাকাতেই সাহিল মানে ওর এসিসট্যন্ট দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান শান্ত গলায় বললো
“এসবের পিছনেও সে দায়ী তাইনা?”
“জি স্যার আসলে…”
“কি হয়েছিলো বাড়িতে আজকে?”
“স্যার আমি সিসিকেমেরা চেক করেছি, প্রায় এগারোটা পর্যন্ত মেমে রুমে ছিলো কিন্তু এরপর হুট করেই প্রায় আধ ঘন্টার মতো সকল ক্যামেরা ডিএক্টিভেট ছিলো, আমি বুঝতে পারছিনা এতো হাই সিকিউরিটির মাঝে এটা কি করে হলো কিন্তু যখন খুলেছে তখন আমি দেখি যে মেম নিচে পড়ে যাচ্ছে তাই আমি আপনাকে দ্রুত বলেছি!আর আপনি গিয়ে তো তাকে নিচে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো কোন সার্ভেন্ট ওই মুহুর্তে বাসায় ছিলো না, সবাই বাগান বাড়িতে গিয়েছিলো কারণ সেখানে কিছুসংখ্যক বডিগার্ড পড়ে ছিলো অজ্ঞান রত অবস্থায় তাই তারা সেখানে ছিলো। কিন্তু এই কাজ কে করেছে তা সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া যায়নি কারণ সিসিক্যামেরা অফ ছিলো।আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে সিঁড়িতে ওয়েল ছিলো যার কারণে মেম পড়ে গিয়েছিলো আর আশ্চর্যজনক ভাবে তার পুর্বেই মেমের ফোনে কল আসে আর এটা সেই ছিলো! আমার ধারণা এসবের পিছনে তার হাত আছে”
“ওয়েল! শুনো বাড়ির সকল সার্ভেন্টদের এক জায়গা জড়ো আর তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেও। তারা নিশ্চই ঘরের তেল ইউজ করেছে তারমানে তাতে আঙুলের ছাপ পাওয়া যাবে। আমি এক ঘন্টার মধ্যে কালপ্রিটকে দেখতে চাই। আমারো জানার দরকার কার এতো বড় কলিজা যে সায়ান জামিল খানের কলিজায় হাত দেয়!”
সাহিল মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো, এই এতোবছরেও নিজের বসকে এতো রাগতে দেখেনি। যদি আসল কালপ্রিটকে খুজে পাওয়া যায় তাহলে তার কতটা ভয়াবহ পরিণতি হবে তা ভেবেই ওর আত্মা কেঁপে উঠছে! সাহিল যেতেই সায়ান দুহাত দিয়ে চুল চেপে ধরলো আর বিড়বিড় করতে লাগলো
“আই স্যয়ার আমি তাকে জিন্দা পুতে রেখে দিবো শুধু পেয়ে নেই একবার”
দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে আসে আর সায়ান শব্দ পেয়ে দ্রুত তার কাছে যায়। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে কাঁপাকাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলো
“রুশির কি অবস্থা এখন?ইজ শি ওকে!”
“আমি ভেবেছিলাম তুমি বেবির কথা জিজ্ঞেস করবে আগে অন্তত অন্যরা এমনটাই করে।”
“কে কি করে জানিনা তবে আমার কাছে আমার বউ বেশি ইম্পর্টেন্ট। বেচে থাকলে আবারও বেবি নেয়া যাবে আর না নেয়া গেলেও সমস্যা নেই। শুধু আমার বউ বেঁচে থাকলেই হবে”
“সি ইজ লাকি টু হ্যাভ ইউ ইয়াং ম্যান”
“নো আম লাকি টু হ্যাভ হার! হাউ ইজ শি?”
“ওয়েল শি ইজ ফাইন, চিন্তার কোন কারণ নেই। তবে বেবিকে নিয়ে আমরা প্রথমে টেনশনে ছিলাম, ভেবেছিলাম হয়তো মিসক্যারেজ হয়ে গেছে কিন্তু আমরা ভুল ভেবেছিলাম। আল্টাসোনোগ্রাফিতে বেবিকে হেলদি দেখাচ্ছিলো পরে বুঝলাম প্লাসেন্টা বা সার্ভিক্সের সমস্যার কারণে এমনটা হয়েছে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। নিশ্চিন্তে থাকুন মা এবং বেবি দুজনেই সুস্থ আছে, পায়ে কিছুটা কেটে গিয়েছিলো সেই স্থানে বেন্ডেজ করে দিয়ে। এখন ঘুমের মেডিসিনের কারণে ঘুমাচ্ছে।আশাকরি রাতে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।খেয়াল রাখবেন যাতে এরপর এমন ভাবে না পড়ে নাহয় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।”
বলেই ডাক্তার কয়েক কদম এগিয়ে গেলো তারপর থমকে গিয়ে পিছনে ফিরে তাকালো আর চিন্তিত গলায় সায়ানকে বললো
“আমি আসল কথাতো বলতে ভুলেই গেছি, আপনার ওয়াইফের পেটে ড্রাগস পাওয়া গেছে যা কয়েকটি কেমিকেলের মিশ্রণ ছিলো তবে বেশি পরিমাণ ছিলো না।তাকে বহুদিন ধরে দেয়া হচ্ছিলো খুবই স্বল্প পরিমাণে তাই ক্ষতি হয়নি তেমন একটা। তবে সেটার সাইড ইফেক্টে উনি অস্বাভাবিক আচরণ করার চান্স আছে, আমরা ওয়াশ করে দিয়েছি কিন্তু এটা যাতে আর না নেয়। বেবির জন্য অনেক ক্ষতিকর এটা, ধীরেধীরে এটি বেবিকে দুর্বল করে দিবে আর একসময় বেবি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্লিজ বি কেয়ারফুল!”
বলেই ডক্টর চলে গেলো আর নার্স রুশিকে কেবিনে শিফট করার কাজ করছে কিন্তু সায়ান ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজ সকল কিছুর হিসাব মিলছে, রুশির এতোদিনের আচরণ মুড সুইং ছিলনা বরং এইসব কেমিকেলের সাইড ইফেক্ট ছিলো। ও যা করতো সব হুশে থাকা অবস্থায় করতো না বরং ও জানতই না ও কি করছে।একটা মানুষ কতটা নিকৃষ্ট হলে এমন জঘন্য খেলায় মেতে উঠতে পারে!ওর ভাবতে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে। একটা নিষ্পাপ প্রাণকে পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেনা! সায়ান ধপ করে বসে পড়লো সেই স্থানে, বিড়বিড় করে বলতে লাগলো
“আম স্যরি রুশি!আমি স্বামী হিসেবে ব্যার্থ, তোমাকে আর বেবিকে প্রোটেক্ট করতে পারিনি!আমি চেয়েও তোমাদের এই হিংস্র খেলা থেকে বাচাতে পারিনি। আম সো স্যরি!”
সায়ান কেবিনে ঢুকে রুশির দিকে তাকিয়ে আছে,মুখ শুকিয়ে এইটুকুন হয়ে আছে রুশির।ও চুপচাপ বসে আছে মুখ গম্ভীর করে, বাসার সবাই বাসায় ফিরে জিজ্ঞেস করেছিলো ওরা কোথায়? ও বলেছে রুশিকে নিয়ে ঘুরতে এসেছে, কারণ এই মুহুর্তে সবাই টেনশনে ফেলতে চায়না। সামনে সামুর বিয়ে,ও এঞ্জয় করুক নিজের বিয়ে। সায়ান বসে থাকার মাঝেই ঠাস করে দরজা খুললো আর সায়ান সেদিকে চেয়ে আছে…সম্পুর্ণ অনুভুতি শুন্য হলে মানুষের দৃষ্টি যেমন হয় ঠিক তেমন!
#চলবে
গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩৭
সায়ানের এই অনুভুতি শুন্য দৃষ্টি দেখে সামনের মানুষটি ক্ষেপে গেলো তারপর খুব জোরে দরজা ভেতর থেকে আটকালো। সায়ানের এবার মাথা গরম হয়ে গেলো,রুশির বর্তমানে হুশ নেই কিন্তু ভারী শব্দ আর চেঁচামেচি ওর শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“এই রুমে যদি আর একটুও শব্দ হয় তবে আমি বাধ্য হবো তোমাকে এই রুম থেকে বের করে দিতে। সো প্লিজ বি কোয়াইট!”
সায়ান কঠোর শব্দ শুনে চন্দ্রিকা দমে গেলো, এতোটা কর্কশ ভাষায় সায়ান ওর সাথে কোনদিন কথা বলেনি অথচ আজ!চন্দ্রিকা না চাইতেও হচকিয়ে গেলো। সায়ানের মুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছে যে ও যা বলছে তা করে ছাড়বে কিন্তু সায়ান ওর উপর ক্ষেপে আছে কেনো? যেখানে ওর রেগে যাওয়ার কথা!
সকালের ঘটনা!আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে ওর, তাই ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই আওয়াজ শুনতে পায়। কিসের আওয়াজ তা প্রথমে বুঝে উঠতে না পারলেও পরে বুঝতে পারে যে এই বিল্ডিং এ আগুন লেগেছে! কিছু সময়ের জন্য ও পুরা ব্ল্যাংক হয়ে যায় আর কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা। দ্রুত দরজার কাছে গিয়ে তা খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু অদ্ভুত ভাবে তা খুললো না। কয়েকবার চেষ্টা করতে বুঝতে পারলো কেউ ইচ্ছে করে ওর ফ্লাটের দরজা বাইরে থেকে লক করে দিয়েছে। ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে পড়লো, এখান থেকে হতে না পারলে ওর মৃত্যু নিশ্চিত! হাতের ফোন খোঁজা শুরু করলো আর একসময় পেয়েও গেলো, কাঁপা হাতে সায়ানকে ফোন দেয়া শুরু করলো কিন্তু যথারীতি নাম্বারটা ব্যস্ত দেখালো অর্থাৎ ব্লক লিস্টে আছে। এই কয়মাসে সায়ানকে ও ফোন করেনি কারণ দরকার পড়েনি, নিজের মতো ভালোই ছিলো! আজ এই সময়ে সায়ানকে পাশে পাবে না এটা ও ভাবতেই পারেনি, ওই মেয়েটার জন্য সায়ান ওকে ছেড়ে দিলো! ও আর উপায়ন্তর না দেখে শাহেদের ফোনে ফোন দিলো, যদিও শাহেদ ওর ফোন ধরেনা যখন নিজের দরকার হয় শুধু তখনি ফোন দেয়।তবুও একটা শেষ চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?
ও কাঁপা হাতে শাহেদকে ফোন দেয়ার পর তা রিং হতে থাকলো, ঘরে ততক্ষণে ধোয়া ঢুকে পড়েছে। চন্দ্রিকা রিতীমত খুকখুক করে কাশছে।কিছু সময় রিং হওয়ার পর আশ্চর্যজনক ভাবে সে ফোন পিকাপ করলো! চন্দ্রিকা কাঁপা গলায় বললো
“শা্ শাহেদ আ্ আমি…”
“যেখানে আছো সেখানেই থাকো, রুম থেকে বের হয়োনা। ভরসা রাখো আমার উপর তোমার কিচ্ছু হবে না, আমি আসছি!”
চন্দ্রিকা না চাইতেও শাহেদের কথা দরজা আর নক করলো না, ধোয়ায় ওর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কোনরকম সেই অবস্থাতেই পড়ে রইলো সেখানে, ধীরেধীরে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াতে নুইয়ে পড়ে একদম! শরীরের সমস্ত শক্তি যেনো অসাড় হয়ে গেছে, ও নেতিয়ে পড়লো ফ্লোরে। আচমকা বুঝতে পারলো কেউ একজন ওকে টেনে তুলে নিজের কোলে নিয়ে নিলো আর কিছু একটা দিয়ে তার সাথে বেঁধে নিলো। ধোয়া থেকে দূরে সরতেই চন্দ্রিকা চোখ মেলে তাকালো আর দেখলো ও অলমোস্ট হাওয়ায় ভাসছে! নিচে নামিয়ে ওকে রাস্তার পাশে বসানো হলো, সবমিলিয়ে বুঝতে পারলো যে ওকে ফায়ার সার্ভিসের রেসকিউ গাড়ি দিয়ে জানালা দিয়ে বের করে আনা হয়েছে আর শাহেদ ওকে বের করে এনেছে।
ও কিছুক্ষণ সেখানে চুপচাপ বসে থাকলো তারপর শাহেদের দেয়া পানি খেলো, তারপর গাড়িতে এসে এলিয়ে দিলো। শাহেদ সম্পুর্ণটা সময় চুপ ছিলো, একটা টু শব্দও করেনি। ও ভাবতেই পারেনি এই কঠোর মনের ছেলেটি ওকে বাঁচাতে আসবে তাও নিজের জীবন রিস্কে ফেলে! সব থেকে বড়ো কথা শাহেদ এতো দ্রুত ওর কাছে পৌঁছালো কি করে?ওকি আগে থেকেই এই আগুনের খবর জানতো? আর এটাও জানতো যে চন্দ্রিকা ফ্লাটে ফেসে আছে?চন্দ্রিকা আর কিছু ভাবতে পারছেনা, প্রচণ্ড মাথায় যন্ত্রণা করছে! ও সেই অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লো। যখন চোখ খুলে তখন নিজেকে গাড়িতে পায়, গায়ে একটা কোর্ট দেয়া। ও আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো যে ওরা একটা ব্রীজের উপর আছে। পাশে শাহেদকে না দেখে ও খুঁজতে লাগলো আর অদুরেই দেখতে পেলো। ব্রীজের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে আর চারপাশে ধোঁয়া উড়ছে হয়তো সিগারেট খাচ্ছে!
চন্দ্রিকা গাড়ি থেকে বেরিয়ে শাহেদের পাশে দাঁড়ালো কিন্তু ধোঁয়ায় আবারও খুকখুক কেশে উঠলো যা দেখে শাহেদ বিরক্ত হয়ে সিগারেট ফেলে দিলো নিচের পানিতে কিন্তু ভুলেও চন্দ্রিকার দিকে তাকায়নি!চন্দ্রিকা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো তারপর আলতো করে বললো
“আজকের জন্য থ্যাংকস! আমি ভাবতেও পারছিনা আপনি না থাকলে আজ আমার কি হতো!”
“থ্যাংকস দেয়ার মতো কিছু করিনি আমি, যা করেছি করার দরকার ছিলো তাই করেছি। এনিওয়ে কোথায় যাবে এখন?”
চন্দ্রিকা জবাব দিলো না, কোথায় যাবে এখন? সায়ান ব্যতীত ওর যাওয়ার কোন জায়গা নেই। ফ্লাটের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে এমনকি পুরো বিল্ডিং হয়তো! তাই সায়ানের সাথে যোগাযোগ না হওয়া পর্যন্ত ওর যাওয়ার কোন স্থান নেই। চন্দ্রিকার স্তব্ধতা দেখে শাহেদ হাসলো তারপর বললো
“ওই ফ্লাটে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় তোমার আর দেখে বুঝা যাচ্ছে আপাদত যাওয়ার জায়গা নেই। তাই কিছুসময়ের জন্য আমার ফ্লাটে আসতে পারো তারপর নাহয় তোমার সায়ান তোমার ব্যাবস্থা করে দিবে!”
চন্দ্রিকা প্রত্যকটা শব্দে তাচ্ছিল্য খুজে পেলেও রেগে গেলো না,যা বলেছে তাতে যে একদণ্ডও মিথ্যে নেই। ও আকাশের দিকে তাকালো, ওর জীবনে সায়ান ছাড়া আর কিছুই নেই যেনো চন্দ্রিকার জন্মই সায়ানের জন্য!সায়ানের জন্যই ওর বেঁচে থাকা আর সায়ানের সাথে থাকতে না পারলে মরে যাওয়া! যেমন আজকে…মৃত্যুর সাথে প্রায় সাক্ষাৎ হয়ে গিয়েছিলো ওর, শাহেদ না আসলে হয়তো…কিন্তু ওকে বেঁচে থাকতে হলে সায়ানের কাছে ফিরে যেতে হবে, তার সাথে থাকতে হবে এবং একসাথে বাঁচতে হবে!সায়ান ছাড়া ওর জীবনের আর কোন লক্ষ্য নেই, ওর শুরু সায়ানকে দিয়ে না হলেও শেষটায় সায়ানকে থাকা চাই!
চন্দ্রিকা মাথা নিচু করে বললো
“আমি আপাদত সায়ানের খোঁজ জানিনা, আপনি কি জানেন সে কোথায় থাকতে পারে?আমার তার সাথে কথা বলা প্রয়োজন”
শাহেদ এইবার চন্দ্রিকার দিকে তাকালো, চোখদুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে যেনো ভয়ংকর রেগে আছে তবে ঠোঁটের কোনায় অদ্ভুত হাসি। যে কেউ কনফিউজড হয়ে যাবে যে ওকি রেগে আছে নাকি নেই!শাহেদ চন্দ্রিকার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো
“অবশ্যই,আমি জানি সে কোথায় আছে কারণ জানতাম কেউ একজন ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে সায়ান জামিল খানের নাম নিবে। তোমার সায়ান বর্তমানে হসপিটালে আছে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর পাশে।গেস হোয়াট! তুমি ফায়ার প্লেসে আটকে পড়েছো জেনেও সে আসেনি তোমার কাছে কারণ প্রয়োজন বোধ করেনি, তার স্ত্রী আর তোমার মধ্যে সে কিন্তু তাকে চুজ করেছে!অবশ্য তাতে তোমার কি যায় আসে?সায়ানকে তো তোমার চাই!”
সায়ানের এমন আচরণে চন্দ্রিকার না চাইতেও খারাপ লাগলো,ওর প্রতি সায়ানের সিমপ্যাথিও কাজ করেনি?যেখানে ওর সবকিছুর খেয়াল রাখতো আজ মাঝপথেই ছেড়ে দিলো! অন্য কাউকে পেয়ে?এর জবাব তো ওর পাওয়া দরকার তাইনা?ও শাহেদকে বললো
“আমাকে একটু হসপিটালে দিয়ে আসুন, দরকার আছে খুব”
শাহেদ সেই আগের মতো তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো তারপর গাড়িতে উঠে বসলো। হসপিটালে আসা পর্যন্ত তাদের মাঝে কোন কথা হয়নি, চন্দ্রিকা গাড়ি থেকে নেমে ছোট্ট করে থ্যাংকস বলে চলে এলো। চেয়েছিলো একবার পিছনে তাকাবে কিন্তু সাহস হয়ে উঠেনি, কেবিনে এসেই সায়ানকে রুশির হাত ধরে বসে থাকলে দেখলো যাতে ওর মাথা গরম হয়ে গেলো, সায়ানকে ভালোবাসে কিনা ওর জানা নেই তবে শুরু থেকেই এতোটুকু জানতো সায়ান শুধু ওর আর কারো নয়। সময়ের সাথে সেই পসেসিভনেস বেড়েছে তাই আজ সায়ানের পাশে রুশিকে একদম সহ্য করতে পারছে না ও।
বর্তমানে ও সায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে আর সায়ানের চোখের কঠোরতা বুঝার চেষ্টা করছে। ও সায়ানের দিকে কিছুটা এগিয়ে বললো
“আমাকে বেঁচে থাকতে খুশি হওনি মনে হচ্ছে!ভেবেছিলে মরে গিয়েছি তাইনা? আর তুমি ফ্রি হয়ে গেছো?আর কিছু না হোক তোমার যে জীবন বাঁচিয়েছি তার জন্য কি আমার জীবন বাঁচানোর কথা মাথায় আসেনি?”
“নাহ আসেনি, কারণ তুমি যা করেছো তা ক্ষমার যোগ্য নয়। প্রাণের বদলে প্রাণ কথাটা নিশ্চই জানা আছে?তুমি ঠিক ভাবতেও পারছো না এই মুহুর্তে আমার তোমাকে ঠিক কিভাবে মারতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি মারবো না কারণ একসময় তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছো।আর তাছাড়া আমি তোমাকে বাঁচানোর জন্য লোক পাঠয়েছি তবে তার পুর্বেই তোমার প্রেমিক তোমাকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। সো ইউ আর সেফ”
“বাহ লোক পাঠয়েই তোমার দায়িত্ব শেষ?নিজে এসেছো বাঁচাতে আমাকে?যে তোমার প্রাণ বাঁচিয়েছে তার প্রাণের কোন মুল্য নেই তোমার? তুমি কি সেই সায়ান যার কাছে ওয়াদার মুল্য অনেক বেশি ছিলো অথচ নিজেই ওয়াদা রক্ষা করলে। কি বিচার তোমার!”
“যার কাছে আমার সন্তান আর অনাগত বাচ্চার জীবনের মুল্য নেই তার জীবনের মুল্য আমার কাছে থাকবে তুমি ভাবলে কি করে?আমার সন্তানের যে ক্ষতি করতে চেয়েছে তাকে যে আমি খুন করে ফেলিনি সেটাই তো অনেক মিস.চন্দ্রিকা!
বরং আমার জীবন বাচানোর জন্য তার উপর আমি বড্ড দয়া করেছি তাইনা?”
চন্দ্রিকা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো,ও ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে আছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
“মা্ মানে?”
#চলছে