গুমোট অনুভুতি পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0
2598

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩২

হসপিটালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রুশি, আকাশে ছোট্ট একটা চাঁদ আর তার পাশে হাজার তারার মেলা।সমস্ত আকাশ জুড়ে নক্ষত্রগুলো জ্বলজ্বল করে উঠছে সাথে রুশির চোখগুলোও। অনেকদিন হয়ে গেলো তারাদের সাথে কথা হয়না, আর তারাদের মাধ্যমে তার সঙ্গে কথা হয়না।সে তো হয়তো তাকে ভুলেই গেছে! কই কথাতো বলে না ওর সাথে, বললে তো শুনতে পেতো তাইনা?

সেতো ভুলেই গেছে তাকে, তার অস্তিত্বকে তার কন্ঠ তার সবকিছুকে। মানুষের মন অন্যথায় মযে গেলে সে আর পুরোনো জিনিস নিয়ে কি ভাবে?কিন্তু ও তবুও ভাবে, পুরোনো সব স্মৃতিগুলো আকড়ে ধরে বেঁচে আছে। পিছুটান ওকে চেপে ধরে আছে, না সামনে এগুতে পারছে না পেছনে। পেছনে এতোদিন যাওয়ার খুব ইচ্ছে থাকলেও এখন আর সেই ইচ্ছেটা নেই বললেই চলে কিন্তু সামনের দিকে! সে দিকে ও এগুতে চায়না। আবেগ, অনুভুতি যদিও বলে ওকে সামনের দিকে যেতে কিন্তু মাঝে মাঝে নিজের অবাঞ্ছিত আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। নাহয় বড্ড ক্ষতি হয়ে যায়, নিজের নারীত্ব আর আত্মসম্মানের!

রুশি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো, তারাদের সাথে ও আর কথা বলবে না। বড্ড অভিমান হয়েছে তাদের সাথে আর সেই মানুষটির সাথেও। কি করে পারলো ভুলে যেতে ওকে?ওকি এতোই ফেলনা?রুশি আকাশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর সায়ানের কেবিনের দিকে হাটা ধরলো। হাল্কা শীতশীত লাগছে, বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে যা বেবির জন্য ক্ষতিকর। রুশির সায়ানের কেবিনে যাওয়ার উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে চন্দ্রিকাকে দেখা যে ও এখনো কেবিনে আছে কিনা! যদি থাকে তবে নিজের গায়ের চাদর নিয়ে বেরিয়ে পড়বে আর না থাকলে কেবিন থেকে যাবে।

কেবিনের দরজা আস্তে খুলে ভেতরে উঁকি মারলো রুশি, সারা কেবিনে চোখ বুলালো। নাহ কোন এক কোনেও চন্দ্রিকার দেখা মেলেনি, যদি মিলতো তাহলে ও একমুহুর্তও থাকতো না। রুশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কেবিনে ঢুকলো,সায়রাকে চুপচাপ ঘুমোতে দেখলো আর ঘুমোবেই না কেনো?ব্যাথা যাতে কম অনুভুত হয় সেজন্য যে হাই ডোজের মেডিসিন দেয়া হয়েছে!

রুশি কয়েকমুহুর্তের জন্য চিন্তা করলো যে ও কোথায় শুতে পারে, ছোটখাটো সোফায় শুলে সকালে নিজেকে নির্ঘাত নিচে পাবে! এসব ভাবতেই সায়ানের দিকে তাকালো আর দেখলো সায়ানের পাশে অনেকখানি জায়গা ফাঁকা। তাতে একজন আরামসে শুতে পারবে এবং এটা ইচ্ছেকৃত রাখা হয়েছে বুঝাই যাচ্ছে কিন্তু কেনো? সায়ান কি জানতো যে ও আবার ফিরে আসবে এই রুমে?নাকি এই স্থান চন্দ্রিকার জন্য ছিলো? কিন্তু চন্দ্রিকার হলেতো সে এখানে থাকতো তাইনা?

রুশির মাথা কনফিউশনের উপর কনফিউশন চলছে কিন্তু তার জবাব খুজতে ইচ্ছে না। যদি অপ্রিয় কিছু শুনে যেটা শুনার ক্ষমতা বা ইচ্ছে কোনটিই তার নেই। তার থেকে বরং থাকুক না কিছু অব্যাক্ত! যার স্থানই হোক না কেনো, এই মুহুর্তে এই স্থান ওর খুব দরকার। তাই সাত পাঁচ না ভেবে সুয়ে পড়লো সায়ানের পাশে খুব সাবধানে, একদম গায়ের সাথে ঘেঁষল না। সকালে নাহয় সায়ানের চোখ খোলার আগেই উঠে চলে যাবে!

এই প্রথম সায়ানের পাশে শোয়াতে কিছুটা অস্বস্তি লাগছে তবে যতোটা খারাপ লাগবে ভেবেছিলো ততটা লাগছে না একদম অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। রুশি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো, এমনিতেই কান্না কাটি করে ভীষণ মাথা ব্যথা করছে। তাও সেই সময় যা একটু ঘুমাতে চেয়েছিলো কিন্তু সায়ানের জন্য হয়ে উঠেনি। এখন একটা প্রপার ঘুম দরকার যাতে সকল চিন্তা দূর হয়ে যায়। রুশি অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পর ধীরেধীরে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো,যাতে থাকে হাজারো স্বপ্ন আর কল্পনার বহিঃপ্রকাশ!



সকালে মৃদু আলো চোখে পড়ায় রুশি চোখ মেলে তাকালো,হঠাৎ আলো আসায় ভ্রু কুচকে তাকানোর চেষ্টা করলো। নিজের গায়ে কম্বল দেখে রুশি বেশ অবাক হলো, ওর স্পষ্ট মনে আছে রাতে ও সায়ানের গায়ে ছিলো এইটা আর ওর এটাকে ধরে পর্যন্ত নি তাহলে ঘুমের ঘরে টেনে নিলো? কি বিচ্ছিরি ব্যাপার! তার থেকে বড় কথা হলো ও সায়ানের বাম হাতের উপর শুয়ে ছিলো! রুশি সায়ানের দিকে তাকালো, নাহ সে এখনো চোখ বন্ধ করেই আছে মানে ঘুমোচ্ছে। রুশি আলতো করে কম্বল সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো, তারপর সায়ানের তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। ওর কপালে পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো আলতো করে ছুয়ে দিলো তারপর দ্রুত পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়লো যেনো আর কিছুক্ষণ থাকলেই সায়ানের কাছে ধরা পড়ে যেতো।

রুশি যেতেই সায়ানের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো, ও আলতো করে চোখ মেললো তারপর বাম হাত নিজের ঠোঁটে বুলালো। রুশির কান্ড দেখে ওর খুব হাসি পাচ্ছিলো, বেচারি তাড়াহুড়ায় বেরিয়ে গেছে। সত্যি বলতে খুব কষ্টে হাসি আটকে রেখেছিলো সায়ান, সায়ানের হাতে শুয়ে আছে দেখে ওর এমন রিয়াকশন ছিলো যদি জানতে পারে সেই রাত থেকে সায়ানের বুকে ঘুমাচ্ছে তাহলে কি করবে তা ভেবেই সায়ানের হাসি পাচ্ছে।প্রায় ভোর রাতের দিকে সায়ানের হঠাৎ ঘুম ভেংগে যায়,পাশে তাকাতেই দেখে রুশি গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে হয়তো শীত লাগছে তাই! এমনকি কেবিনের বেড ল্যাম্পও অফ করা হয়নি। সায়ান আস্তে আলতো করে বাম হাত দিয়ে রুশিকে নিজের কাছে নিলো তারপর কম্বল দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিলো ওকে। ও পুরোটা সময় ভয় পাচ্ছিলো যে রুশি হয়তো জেগে যাবে আর ওকে কথা শুনাবে যে ও সুযোগের সৎ ব্যাবহার করেছে কিন্তু রুশি যা ঘুম কাতুরী! কাল বুঝতে পারলো ও, রুশিকে নাড়ানোর পরও ও ঘুমেই ছিলো। যেহেতু যথেষ্ট ঘুমিয়েছে তাই আর ঘুম আসছিলো না ওর, রুশির দিকে তাকিয়েই সারারাত কাটিয়ে দিলো।ভোর হওয়ার পর ওকে হাতের উপর শুইয়ে দিলো যাতে বুঝতে না পারে।রাতে কিছুক্ষণ পর পর রুশির কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছিলো আর ভাবছিলো
ওর জীবনে রুশির মুল্য কত! এইযে দুইমাস আগেও হয়তো ও রুশিকে চিনতো না, কখনো ভাবেও নি এই রুশি নামক মেয়েটি ওর জীবনে এতো গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠবে।ভাবতেই পারেনি ওকে ছাড়া একসময় নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ মনে হবে, ওকে নিজের কাছে রাখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগবে!

ওর মাথায় হঠাৎ একটা প্রশ্ন আসলো যে ওর রুশিকে দেখে কখন ভালোলাগা শুরু হয়েছিলো?সেইদিন গাড়িতে খোলাচুলে দেখে?নাকি প্রথম যেদিন দেখেছিলো! সায়ানের হুট করে মনে পড়লো রুশির সাথে যেদিন কোম্পানিতে দেখা হয়েছিলো সেদিন রুশি হঠাৎ ভয় পাওয়াতে ওকে ও জড়িয়ে ধরে ছিলো আর ওর তেমন অস্বস্তি হয়নি। সেটাই ছিলো মা-বোন ব্যতীত সজ্ঞানে থাকা অবস্থায় কোন নারীকে প্রথম জড়িয়ে ধরা, ও এতো সহজে কেনো ধরতে পেরেছিলো সেদিন তাও কারণ কোন প্রকার বিরক্তি ছাড়াই!কারণ ওর মন কোথাও একটা জানতো এই মেয়েটি সেই মেয়ে যাকে ও খুজছিলো মন উজাড় করে ভালোবাসবে বলে, এই সেই মেয়ে যাকে ছাড়া একসময় ওর বাঁচা অসম্ভব হয়ে যাবে!এতো অল্প সময়ে কারো প্রতি এতোটা আসক্ত হয়ে যাবে ও ভাবতে পারেনি।ভালোবাসা বোধহয় এমনি হয়! কোন কারণ ছাড়াই হুট করে হয়ে যায় যেটা নিজেও হয়তো টের পায়না। সায়ান আনমনে হাসতে লাগলো আর ইনান ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো!

এই পর্যন্ত কয়েকবার ডাকা হয়ে গেছে কিন্তু সায়ানের কোন সাড়াশব্দ নেই।গভীর মনযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছিলো, এখন আবার হাসছে! মাথায় আঘাত পেয়ে কি পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি?ইনান সায়ানকে আলতো করে ধাক্কা দিলো তাতে সায়ান বিরক্ত হয়ে তাকালো আর বললো

“কি সমস্যা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিয়েছিস কেনো? নিরবে বলা যায় না?”

“সেই! নিরবে বললে তুই শুনোস কই শালা আবার বলিস ধাক্কা দিচ্ছি কেন? কি এমন ভাবছিলি যে তোর কান পর্যন্ত আমার আওয়াজ যায়নি?”

“ভাবছিলাম কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা তোর ওসব জেনে কাজ নেই।”

“আমার কাজ থাকবেই বা কেনো?আমি যা বলি তা শুন, কাল যে স্টেপ উঠিয়েছিস তা আর ভুলেও নিবিনা। তুই জানিস আন্টির কি অবস্থা হয়েছিলো?একে উনি নিজের হাজবেন্ডের শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারপর তোর শোক কি করে কাটিয়ে উঠবে বল?যদি তোর কিছু হয়ে যেতো?আর রুশি? ওর কথা ভেবেছিস? তোর কিছু হলে ওর কি…”

ইনান বুঝতে পারলো সায়ান ওর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাই ঢোক গিলে হাসার চেষ্টা করে বললো

“মানে আমি বলেছিলাম রুশি ভাবির কি অবস্থা হতো আরকি। যদি তোর কিছু হয়ে যেতো তবে সে কি করে নিজেকে সামলাতো বল?তোর তো তার ব্যাপারে ভাবা উচিৎ!এর পর থেকে ভুলেও এমন কাজ করবি না, নাহয় আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না বলে দিলাম!”

ইনান প্রায় অনেকক্ষণ ধরে এটা সেটা বলে যাচ্ছে আর সায়ান হু হাঁ করছে।ইনানের কথার মাঝেই সায়ান উঁকিঝুঁকি মারলো দরজার দিকে কয়েকবার। ইনানের কথায় বিশেষ গুরুত্ব নেই ওর, ইনান ওর দৃষ্টি খেয়াল করে সেদিকে তাকাতেই কিছু একটা বুঝতে পারলো আর সায়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো

“যার জন্য বারবার দরজার দর্শন করছো সে এখানে নেই। আন্টি তাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন আর কড়া নির্দেশ জারি করেছেন যাতে সে আজ আর হসপিটালের চৌকাঠে পা না রাখে। তাই আজ আর তার দর্শন হচ্ছে না আপনার!”

ইনানের কথা শুনে সায়ান যেনো আকাশ থেকে পড়লো, একটা দিন রুশিকে না দেখে থাকতে হবে?অসম্ভব! ও তাড়াহুড়া করে বললো

“আমি এখানে থাকবো না, তাড়াতাড়ি ডিসচার্জ এর ব্যাবস্থা কর।আমি এক্ষুনি বাড়ি যাবো”

“সায়ান! আর ইউ ম্যাড? মাথা ঠিক আছে তোর? ডাক্তার বলেছে কমপক্ষে পনেরো দিন থাকতে হবে সেখানে একদিন না হতেই যাবি মানে?এসব পাগলামো বন্ধ কর”

“তুই ব্যাবস্থা করবি নাকি আমি নিজেই উঠে চলে যাবো?”

বলেই সেলাইনের পাইপ ধরে টান শুরু করে দিলো, ইনান বুঝতে পারলো একে বুঝিয়ে লাভ হবে না,যা মাথায় এসেছে তা করেই ছাড়বে। ও “আচ্ছা ঠিক আছে ” বলে ডাক্তারের কাছে ছুটলো তারপর অনেক্ষন কথা বলার পর ডাক্তার বাসায় নিতে দিতে রাজি হলো। সাথে নার্স পাঠিয়ে দিলো আর প্রয়োজনীয় সব কিছু।শেষপর্যন্ত সায়ান খান বাড়িতেই এসেই ছাড়লো! এতো জেদি ছেলে ইনান আর দুটো দেখেনি, হঠাৎ বাড়ির জন্য এতো উতলা কেনো হলো সেটাই বুঝতে পারছে না ও,,,

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩৩

রুশি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিলো, মাত্রই ব্রেকফাস্ট করেছে। হাল্কা শীত শীত লাগছে তাই গরম কফি খেতে বেশ লাগছে ওর। সায়ানের এখন কি অঅবস্থায় আছে সেটাই ভাবছে ও, ওর শাশুড়ি মা জোর করে ওকে পাঠিয়ে দিয়েছে বাড়িতে আবার বলেও দিয়েছে যাতে আজ আর ফেরত না যায়। যদিও ও থাকতে চেয়েছিলো সেখানে কিন্তু শাশুড়ি মায়ের উপর না বলতে পারেনি তাই ও আর সামু বাসায় চলে এসেছে প্রায় ঘন্টা দুয়েক হয়েছে।রুশি একটা কথা ভেবে অবাক হচ্ছে যে আসার সময় চন্দ্রিকাকে কোথাও দেখেনি ও, নিজের ভালোবাসার মানুষকে এভাবে একা ফেলে চলে যাবে এটা রুশির কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে!

রুশি খুব মনোযোগ সহকারে কফি খাচ্ছিলো কিন্তু কিছু একটার আওয়াজ শুনে থেকে গেলো। ও স্পষ্ট এম্বুলেন্স এর আওয়াজ শুনছে কিন্তু এখানে এম্বুলেন্স আসবে কেনো?সায়ানদের বাড়ি রাস্তার পাশে নয় বরং ভেতরে তাহলে নিশ্চই এ বাড়িতেই এসেছে এম্বুলেন্স। রুশি নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারলো না,আদো খাওয়া কফি সেল্ফের উপর রেখে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসলো। নিচে নামতেই শাশুড়িকে চিন্তিত চেহারা নিয়ে বাসায় ঢুকতে দেখলো, রুশি খানিকটা অবাক হলো সাথে ভয়ও পেলো। কার কি হলো আবার?

ও মিসেস খানকে প্রশ্ন করেই বসলো

“মা আপনি হঠাৎ চলে এলেন যে?আপনি বললেন যে আজ আপনি উনার কাছে থাকবেন তাহলে?আর এম্বুলেন্সের আওয়াজ শুনলাম! কে এসেছে?”

মিসেস খান দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো তারপর বললো

“আর বলো না আমার বুড়ো ছেলের ভিমরতি হয়েছে, এই বয়সে সে বাচ্চাদের মতো বায়না করা শুরু করে দিয়েছে। এতো সিভিয়ার একটা এক্সিডেন্ট হলো কই হসপিটালে থাকবে তা না করে বাসায় আসবে বলে জেদ দেখানো শুরু করে দিলো নাহয় নাকি ডাক্তারদের কোন ট্রিটমেন্ট সে গ্রহন করবে না। এই বয়সে এমন করলে চলে বলো! বাসায় কি মধু আছে কে জানে?”

রুশিদের কথার মাঝেই সায়ান আর ইনান এসে পৌঁছালো, সায়ানের ডান হাতে গুরুতর ব্যাথা পেয়েছে সাথে ডান পায়ে হাল্কা চাপ পড়েছে তাই হাটতে অসুবিধা হচ্ছে বলে ইনান ধরে ধরে ঘরে ঢুকাচ্ছে।সায়ানের চোখমুখ কুঁচকানো হয়তো ব্যাথা অনুভুত হচ্ছে তাই!রুশির বিষয়টি খারাপ লাগলো দেখতে, কে বলেছিলো একদিনের মাঝেই হসপিটাল ছেড়ে চলে আসতে! আসলেই বুড়ো হয়ে যাওয়ার পরেও বাচ্চা সাজার শখ হয়েছে।

রুশি দ্রুত পায়ে সায়ানকে দেখার জন্য ছুটে আসছিলো, প্রায় কাছাকাছি চলেও এসেছে কিন্তু রুশি এতো দ্রুতই হাটছিলো যে সামনে ফ্লোর হাল্কা ভিজা ছিলো ক্লিন করার কারণে তা খেয়াল করেনি, হুট করে পিছলা খেয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলো। রুশি নিজের পেট চেপে ধরে চিৎকার করে উঠলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুভুত হলো যে ও ফ্লোরে পড়ে যায়নি। বরং কারো বুকে ও ঠেকে আছে আর একটা হাত ওকে চেপে ধরে আছে!

রুশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো,কি করতে যাচ্ছিলো ও? যদি পড়ে যেতো তাহলে কি হতো,ভয় বাসা বেধে গেছে ওর শরীরে। ও সামনের মানুষটির শার্ট খামচে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ালো আর তাকাতেই দেখলো সায়ান ওর দিকে তাকিয়ে মিশ্র চাহনিতে। তার চাহনিতে রাগ, চিন্তা, ভয় সব একসাথে দেখা যাচ্ছিলো আর একটা হাত এখনো রুশিকে চেপে ধরে আছে। সায়ান চিন্তিত গলায় বললো

“তুমি ঠিক আছো?কোথাও লেগেছে কি তোমার? এতো কেয়ারলেস কেনো হুম!দেখে শুনে হাটতে পারো না? যদি পড়ে যেতে তাহলে কি হতো একবার ভেবে দেখেছো?”

সায়ানের এতোগুলো প্রশ্নের জবাবে রুশির একটাই জবাব ছিলো, রুশি মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো

“স্যরি!”

কথাটা শুনেই সায়ানের মাথা যেনো ধপ করে গরম হয়ে গেলো, দাঁতে দাঁত চেপে বললো

“লাইক সিরিয়াসলি! স্যরি!এটা বললেই সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে? তুমি ভাবতে পারছো আজ কি হতে পারতো!”

“বললাম তো স্যরি! আর হবে নাতো!”

রুশি বেশ আদুরে গলায় বললো কথাগুলো, সায়ান রুশির আদুরে গলা শুনে থমকে গেলো। পুরো বাচ্চাদের মতো লাগছে এই মুহুর্তে রুশিকে, ওর রাগ নিমিষেই পানি হয়ে গেলো। রুশিকে আর কিছু বলতে পারলো না, ও গলা পরিষ্কার করে সার্ভেন্টদের উদ্দ্যেশ্যে বললো

“এরপর যদি ফ্লোর আর ভিজা থাকে তাহলে আপনাদের আর কাজে আসার দরকার নেই, আজকে অনেক বড় কিছু হতে পারতো। নেক্সট টাইম থেকে কেয়ারফুল্লি কাজ করবেন”

ইনান সায়ানকে আসতে করে সোফায় বসিয়ে দিলো, এতোক্ষন ধরে ও সায়ান আর রুশির সবগুলো কথাই শুনেছে। রুশির আদুরে কন্ঠ আর সায়ানের রিয়াকশন সবই দেখেছে, সত্যি বলতে সায়ান আগের থেকে অনেক শান্ত হয়েছে গিয়েছে। আগের মতো এখন কথায় কথায় রেগে যাওয়ার অভ্যাসটা কমে গিয়েছে হয়তো রুশির জন্য!কিন্তু এসব দেখে ওর যতোটা কষ্ট হবে ভেবেছিলো ততটা কষ্ট হচ্ছে না হয়তো এমন কিছু দেখবে আশা করে ছিলো তাই!রুশিকে ভুলা ওর জন্য এতো সহজ নয় আবার অসম্ভবও নয় তাই চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?একসময় হয়তো আর বুকের চিনচিন ব্যথাটা করবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে আগের মতো। জীবন তো আর থেমে থাকে কারো জন্য তাই বাস্তবতা যতো তাড়াতাড়ি মেনে নিবে ততই ভালো। তাছাড়া ওর জীবনের সাথে অন্যকেউ জড়িত আর ও তাকে হারাতে চায়না। রুশি হারিয়ে সেই ব্যথা সামলে উঠতে পারলেও আরেকজনকে হারানোর সামর্থ্য ওর নেই!

রুশি সায়ানের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো হঠাৎ সায়ানের ডান হাতের দিকে নজর গেলো। বেন্ডেজের উপর দিয়ে তাজা রক্ত দেখা যাচ্ছে, রুশি দ্রুত হাত ধরে বসলো। নিশ্চই ওকে ধরতে গিয়ে এই হাতে আবার ব্যথা পেয়েছে, রুশি দ্রুত নার্সকে এটা দেখালো আর সে বেন্ডেজ খুলে আবার বেন্ডেজ করে দিতে লাগলো।পুরোটা সময় সায়ান রুশির দিকে তাকিয়ে আছে আর রুশি সায়ানের হাতের দিকে তাও চিন্তিত ভঙ্গিতে। সামু নিচে এসে এমন দৃশ্যই দেখলো আর মুচকি হাসলো তারপর গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলো

“ভাই তুই নাকি বাসায় আসার জন্য উতলা হয়ে যাচ্ছিলি?একদম সেলাইনের পাইপ টাইপ খুলে টুলে ব্যাপক অবস্থা!কেনো রে বাসায় কি মধু আছে যা হসপিটাল থেকে বাসায় চলে এসেছে বলে তোর আর সেখানে মন টিকছিলো না?”

“সামু মুখ সামলে কথা বল, বড় ভাই তোর আমি।
এসব কি কথা বলছিস তুই?”

“যা সত্যি তাইতো বললাম, বুঝি বুঝি সব বুঝি।প্রাণভোমরা যে বাসায় চলে এসেছে হসপিটালে কি আর মন টিকবে?”

বলেই সামু রুশির দিকে তাকালো তারপর গাওয়া শুরু করলো

“আমি একদিন তোমায় না দেখিলে
তোমার মুখের কথা না শুনিলে
পরান আমার রয়না পরানে।।
প্রেমের ধরণ কেন গো এমন
কাছে না পেলে তোমায় লাগে যে কেমন।।
বিরহে পুড়িয়া অন্তর খাঁটি করিয়া।।
পাবে যে সুখ মিলনে
তুমি আমার সুখগো জীবনে,,,”

সামুর ইঙ্গিত শুনে রুশির কেনো জানি লজ্জা লাগলো, যদিও জানে সায়ান ওর জন্য আসেনি তবুও এই মুহুর্তটা ওর কাছে বেশ লাগছে। লজ্জায় নিজের গালদুটোর গরম হয়ে যাওয়া নিজেই ফিল করতে পারছে। সামু সেই লাজুক চেহারা দেখে বললো

“কি প্রেম! কি প্রেম!ভাবিগো ভাবি এতো প্রেম কই রাখবা তুমি?”

সায়ান এবার খানিকটা লজ্জা পেলো, এতোক্ষন সামু ইন্ডিরেক্টলি বললেও এখন সরাসরি রুশিকে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ও রুশির জন্যই চলে এসেছে। সায়ান রাগ করার ভান করে বললো

“একদম বাজে বকবি না, গেলি তুই এখান থেকে?”

সামু হিহি করে হেসে সেখান থেকে দৌঁড়ে চলে এলো। ভাই বেশ ক্ষেপেছে ওর!এখন আর ক্ষেপানো যাবে না।ও হাসতে হাসতে নিজের রুমের দিকে আসছে আর বলছে

“ইশ চারদিকে কি প্রেমগো!এমন একটা প্রেমে যদি করা যেতো!”

বলেই বুকের মাঝে দিলো আর খালি গলায় গান ধরলো

“এই বুকের মাঝে আগুন জ্বলে
নিভে নারে জ্বল ছিটালে
কবে দিমু গলায় মালারে
আরে কবে কবে কবে আইবে পালারে
আরে দিমু গলায় মালারে মালা…”

শেষ করার আগেই কেউ একজন ওকে টেনে রুমের ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো আর পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে থুতনি রেখে বললো

“তুমি রাজি হলে তো এখনি গলায় মালা পরিয়ে দিতে পারি, তুমি রাজি হচ্ছোনা বলেই তো সব মাঝ পথে আটকে আছে। তুমি রাজি হয়ে যাও তাহলে এক্ষুনি কাজি ডেকে বিয়ে করে ফেলি আর তোমায় তোমার শশুর বাড়ি নিয়ে যাই”

বলেই গালে হুট করে কিস করে দিলো তারপর সামুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে হাল্কা নাক টেনে দিয়ে গানের সুরে বললো

“যাবো তোমায় শশুর বাড়ি নিয়ে”

বলেই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো আর সামু এখনো সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। গালে হাত দিয়ে ভাবছে ও কি স্বপ্ন দেখছে? মি.নিরামিষ ওকে কিস করে চলে গেলো?এটা কি সেই বোরিং ইনান যাকে ও এতো বছর ধরে চিনতো!

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩৪

রুমে আসার পর থেকে সায়ান এক ধ্যানে রুশিকে দেখে যাচ্ছে কিন্তুর রুশির সেদিকে খেয়াল নেই। ও নার্সের সাথে আলোচনায় ব্যাস্ত, কখন কোন মেডিসিন নিতে হবে, কখন ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করবে আরো কতো কি!সায়ান রিতীমত মন খারাপ করে বসে আছে, ও অসুস্থ সেদিকে রুশির কোন খেয়ালই নেই অথচ মেডিসিনের দিকে কি মনোযোগ! এই মেডিসিন গুলোর দাম ওর থেকে বেশি,হিংসা হচ্ছে মেডিসিনগুলো কে দেখে। সায়ান ভ্রু কুচকে সেই মেডিসিন গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে এই মেডিসিনগুলোকে আছড়ে আছড়ে ফেলা কল্পনা করছে!

রুশির কথা শেষ হতেই নার্স বেরিয়ে গেলো আর রুশি মেডিসিন গুলো গুছিয়ে রাখতে লাগলো। এর মাঝে আড়চোখে সায়ানের দিকে তাকালো, সায়ানকে মনযোগ সহকারে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুশি গম্ভীর গলায় বললো

“এখানে এতো বেশি মেডিসিন নাই তাই অমন মুখ বানানোর দরকার নাই। যদি হেলথের ইম্প্রুভ হয় তবে কমে যাবে এর থেকে কতোগুলো”

সায়ান এটাই চাচ্ছিলো যে রুশি ওর সাথে কথা বলুক নিজ থেকে, কারণ রুশির প্রতি এখনো কিছুটা হলেও অভিমান রয়ে গেছে। ও রুশির জীবনে নিজের ইম্পর্টেন্স খুজছিলো কিন্তু রুশির গম্ভীর কন্ঠ শুনে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। রুশি মেডিসিন গুলো ছিড়ে সায়ানের সামনে ধরলো তারপর পানি এগিয়ে দিলো। সায়ান বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে নিলো মেডিসিন গুলো তারপর আবারও নিরবতা। রুশি সায়ানকে রেখে বারান্দায় চলে যাওয়াতে সায়ানের মনটা যেনো আরো খারাপ হয়ে গেলো। মুখটা ভার করে বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলো কিন্তু অনেকক্ষণ পার হওয়ার পরও রুশি এলোনা। তখন সায়ান নিচে নামার চেষ্টা করলো উদ্দ্যেশ্যে রুশির পাশে গিয়ে দাঁড়াবে কিন্তু ব্যথায় ‘আহহহ’ করে উঠলো।

রুশি আওয়াজ শুনে দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকে দেখে সায়ান ডান হাত ধরে চোখমুখ কুচকে বসে আছে ব্যথায়। রুশি কাছে এসে শান্ত গলায় বললো

“কি হয়েছে? চুপচাপ শুয়ে থাকতে পারেন না? নড়চড়া করছেন কেনো?”

“তো একাএকা শুয়ে থাকতে কারো ভালো লাগে বুঝি?”

“কাজই এমন করেছেন যে শুয়ে থাকা ছাড়া আপনার আর কোন কাজ নেই। যান না যান আরো গাড়ি চালাতে যান তাও ফুল স্পিডে। বিনা টিকিটে পুরো মহাকাশ ঘুরে আসতে পারবেন, চাইলে ওইখানে বাসা বাড়িও করে নিয়েন।”

“এই একটা সামান্য জিনিসের জন্য এতো কথা শুনাচ্ছ কেনো?আমি কি ইচ্ছে করে করেছি!”

“আপনার এটা সামন্য জিনিস মনে হচ্ছে?আপনি জানেন আপনি কি করেছেন? ইউ নো হোয়াট আমার আপনার সাথে কথা বলতেই ইচ্ছে হচ্ছে না। আপনি এখনো বুঝতেই পারছেন না আপনার ভুলটা ঠিক কোথায়!”

“তোমার কি আমার জন্য চিন্তা হয়?”

“নাহ হয়না, তবে এবাড়িতে অঅনেকেই আছে যারা আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছে বিশেষত আপনার মা”

“আমার কিছু হলে তোমার কি আসে যায় না?ওহ তুমি তো বলেছো তুমি নাকি আমার বউ না,তাইতো আমি সেটা ভুলে গেলাম কি করে!তাহলে আমার জন্য এসব করছো কেনো দয়া করে নাকি দায়িত্ব থেকে?”

“ঠিক তাই! আমি আপনার বউ না তবে সমাজের কাছে আমি আপনার স্ত্রী আর আইনের কাছেও। আর স্ত্রী হিসেবে আমার কিছু দায়িত্ব আছে যার থেকে আমি পিছপা হতে পারিনা”

রুশি গম্ভীর কন্ঠে বললো আর সায়ান ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। এরই মাঝে হুট করে চন্দ্রিকা রুমের ভিতরে ঢুকলো আর রুশি তাকে দেখতেই অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। এই মুহুর্তে সব বিষাদ লাগছে ওর, চন্দ্রিকাকে এক মুহুর্তের জন্যও সহ্য হয়না ওর। স্ত্রী হিসেবে স্বামীর প্রেমিকাকে সহ্য করার মতো মহান নারী ও হয়ে যায় নি, অন্যসব স্ত্রীদের মতো ও এই বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না যদিও ও জানে ও রিয়েল ওয়াইফ নিয় তবুও নিজের ভেতরের জেলাসি ও দমিয়ে রাখতে পারেনা আজকাল। সায়ানের প্রতি কেমন যেনো পসেসিভ হয়ে যাচ্ছে যদিও প্রকাশ করে না। এদিকে চন্দ্রিকা কিছু বলার আগেই সায়ান বলে উঠলো

“দায়িত্ব! হাহ তাহলে তুমি মহান স্ত্রী প্রমাণ করার জন্য আমার প্রতি দায়িত্ব পালন করছো? দরকার নেই তোমার এই দয়ার। সায়ান জামিল খানের কারো দয়ার প্রয়োজন নেই, তুমি আসতে পারো। আমার এখনো এমন দুর্দিন আসেনি যে আমি অন্যের দয়ায় বেঁচে থাকবো। আই ডোন্ট নিড ইট মিস রুশানি আনাম। যেহেতু আপনি আমার বউ নন তাই আমার প্রতি আপনার দায়িত্ব পালনের কোন দরকার নেই”

বলেই মুখ ফিরিয়ে নিলো, রুশি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো তারপর রুম থেকে বেরিয়ে আলতো করে দরজা লাগিয়ে দিলো। চন্দ্রিকা এই দৃশ্য দেখে বেশ খুশি, ও খুশিমনে সায়ানকে বললো

“বাইরের কেউ তোমার সেবা করার দরকার নেই আমি আছিতো। তুমি ভালোই করেছো ওই মেয়েকে…”

“গেট আউট”

“সায়ান আমি…”

“ডিডেন্ট ইউ হেয়ার মি?আই সেইড গেট আউট।আমার মন মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ তাই এমন কোন বাজে বিহেভ করতে চাইনা যেটা তোমার খারাপ লাগবে। যদি রুশির দয়ার দরকার নাহয় এরমানে কারো দয়ারও দরকার নেই আমার।প্লিজ গো”

সায়ান রক্তচক্ষু নিয়ে কথাগুলো বলেছে, চন্দ্রিকা বুঝতে পারলো যে সায়ানকে আর কিছু বলে লাভ নেই তাই বেরিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। আস্তে করে ‘টেক কেয়ার’ বলে বেরিয়ে পড়লো। রুশি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মুচকি হাসছে, রুমের বলা সবগুলো কথাই ও শুনেছে। ও দেখতে চেয়েছিলো সায়ান ওকে যেতে বলে চন্দ্রিকাকে কি বলে, কিন্তু সায়ানের ব্যবহারে রুশি বেশ সন্তুষ্ট। আর যাইহোক ওর থেকে চন্দ্রির প্রতি রুড ব্যাবহার বেশি ছিলো তাই সায়ানকে এমন ওতো খারাপ লাগছে না ওর কাছে। রুশি আরেকপা এগুতেই হাতে টান পড়লো, পিছনে ফিরে দেখে চন্দ্রিকা দাঁড়িয়ে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ রেগে আছে তাই রুশি মুচকি হাসলো আর এতেই চন্দ্রিকা আরো চটে গেলো

“ইউ…তোমার জন্য সব হয়েছে। তোমাকে তো আমি!”

বলেই রুশিকে থাপ্পড় মারতে নিলো কিন্তু রুশি হাত চেপে ধরে ফেললো। আর দিগুণ শক্তি দিয়ে হাত মুচড়ে ধরে বললো

“একবার সুযোগ পেয়েছেন বলে বারবার পাবেন এমন ভাবার কিন্তু কারণ নেই। আমি কোন অবলা নারী নই যে আপনি অত্যাচার করবেন আর আমি কিছু বলবোনা।হাত আমারো আছে আর সেটা আমিও উঠাতে পারি তাই পরেরবার কিন্তু ভেবেচিন্তে হাত চালানোর চেষ্টা করবেন নাহয় আপনার এতো সুন্দর হাত গুড়িয়ে দিতে দু সেকেন্ড লাগবেনা আমার”

“তুমি কি ভাবো নিজেকে? তুমি জানো আমি কে?সায়ানের বাগদত্তা যেটা পুরো দুনিয়া জানে। তুমি কি ওর?”

“আমি তার বিয়ে করা বউ আর তার আইনগত স্ত্রী। তাহলে আমার গুরুত্ব বেশি না আপনার? আপনি নিছক তার দুদিনের প্রেমিকা ছাড়া আর কিছু নন। যতোদিন আমি এই বাড়িতে বউ হিসেবে আছি ততদিন আপনি তার জীবনে কিছু না তাই নেক্সটাইম বুঝে শুনে হাত তুলতে আসবেন নাহয় আমি যদি এখন বলি আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে সবাই হাজির হয়্র যাবে বের করে দেয়ার জন্য। খান বাড়ির বউ হিসেবে এতোটুকু পাওয়ার তো আছেই আমার! এন্ড নেক্সটাইম দিজ উইল ট্রুলি হেপেন”

“তোমাকে তো আমি দেখে নিবো, আজকের জন্য তুমি অনেক পস্তাবে”

“আমি অপেক্ষায় রইলাম পস্তানোর জন্য। বাই!”

চন্দ্রিকা রাগে যেনো বম হয়ে গেলো, হাত ছাড়িয়ে নিলো। নিচে নামতেই মিসেস খানের হাসিমাখা মুখ দেখতে পেলেন যা জানান দিচ্ছিলো যে ‘আমি জিতে গেছি আর তুমি হেরে গেছো’ চন্দ্রিকা বেরিয়ে সেখান থেকে কারণ সায়ানের কাছে যদি ওর দাম না থাকে এরমানে এ বাড়ির কারো কাছে ওর দাম নেই। রুশি খুশিমনে কিচেনে গেলো তারপর স্যুপের বাটি নিয়ে সায়ানের রুমে এলো, সায়ান চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় বুঝলো রুশি এসেছে কারণ ওর হাটার মৃদু শব্দ ও চিনে। ও সেই অবস্থায় বললো

“কেনো এসেছো আবার?ফেলে যাওয়া দায়িত্ব পালন করতে?”

“উহুম সেটা না”

“তাহলে কেনো দয়া দেখাতে এসেছো আমি অসুস্থ বলে?”

“সেটাও না”

সায়ান এবার চোখ খুললো তারপর রুশির দিকে তাকিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে বললো

“তাহলে কেনো এসেছো এখানে”

“আমার ভালো লাগে আসতে তাই এসেছি। আপনার কোন সমস্যা আছে?”

নিজের হাতের শাহাদাত আঙুল সায়ানের দিকে পয়েন্ট করে। সায়ান রুশির কথা শুনে মুচকি হাসলো তারপর মৃদু কন্ঠে বললো

“হঠাৎ ভালো লাগে কেনো?”

“উমম ভালোলাগা এমনিই কাজ করে, সকল ভালোলাগার পেছনে যে কারণ থাকতে হবে এমন কিন্তু নয় মিস্টার খান!কিছু ভালোলাগা কারণ ছাড়াই হুট করেই হয়ে যায়, মানুষ টেরই পায়ন”

সায়ান রুশির দিকে তাকালো, এই সামান্য ভালোলাগার কথাশুনেও ওর প্রশান্তি লাগছে। আসলেই সবকিছুর কারণ থাকে না, কিছু কিছু কারণ ছাড়াই হয়। যেমন এই যে এই মেয়েটিকে ও কারণ ছাড়াই ভালোবাসে যা শেষ হবার নয়!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে