Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"গুমোট অনুভুতি পর্ব-২৫+২৬+২৭

গুমোট অনুভুতি পর্ব-২৫+২৬+২৭

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_২৫

রুশি ছাদে পা ঝুলিয়ে বসে আছে, পাশেই মস্ত বড় তুলো গাছটার ঢাল পড়ে আছে ছাদে। যদিও তুলো গাছের শাখা এমনভাবে পড়ে থাকে কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই ছাদে গাছের ঢালটা। কেমন যেনো ওর জীবনের মতো অদ্ভুত! বড্ড অদ্ভুত। এইতো কিছুক্ষণ পুর্বেই ও নিজের রুমে ছিলো, হ্যা কিছুক্ষণ পুর্ব অবদি ওই রুমটা ওর নিজেরই ছিলো তবে এখনো আছে কিনা জানা নেই।

নিজের উপর যেনো নিজেরই হাসি পাচ্ছে, কিছুক্ষণ পুর্বেও সায়ানকে বড্ড আপন মনে হচ্ছিলো! মনে হচ্ছিলো ওর স্বামী সে কিন্তু এখন!

রুশি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, এই দোতলার ছাদ থেকে নিচটা কতো ছোট দেখা যাচ্ছে। বড়লোকদের কাছে মধ্যবিত্তদের ঠিক যেমন দেখায়। ও নীচ থেকে চোখ সরিয়ে আনমনে ভাবতে লাগলো কিছুক্ষণ পুর্বের ঘটনা,,,

সবেমাত্র ব্রেকফাস্ট করে ও এসেছিলো। ইদানীং বমি বেশি হয়, কোন কিছুর স্মেলই যেনো সহ্য হয়না তাই এসেই বমি করে দিলো।সায়ানও পিছু এসে ওকে ধরলো তারপর আস্তে ওর মুখ মুছিয়ে ঘরে নিয়ে আসলো। কয়েক পা এগুতেই সায়ান থমকে দাঁড়ালো, রুশি এতোক্ষন দুর্বল থাকায় চোখ বন্ধ করে ছিলো কিন্তু সায়ানের থেমে যাওয়া থেকে চোখ মেললো আর দেখে সায়ান সামনে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই দেখে চন্দ্রিকা বিছানায় বসা অবস্থায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। রুশির বুকটা কেঁপে উঠলো, ইদানীং চন্দ্রিকার কথা মনে হলেই অজানা ভয় খেলে যায়। মনে হয় খুব কাছের কিছু হারিয়ে ফেলবে!

কিন্তু যা ওর না তাতো জোর করে নিজের বলে দাবি করতে পারেনা,এই তিক্ত সত্যিটা ওকে মেনে নিতেই হবে। ও আলতো করে সায়ানের হাত সরিয়ে দিতে নেয় কিন্তু সায়ান ওকে শক্ত করে ধরে রাখে আর রুশির দিকে ভ্রু কুচকে বলে

“কি সমস্যা? এমন ছুটাছুটি করছো কেনো? এমনিতেই শরীর দুর্বল তার উপর আবার নড়াচড়া করে এনার্জি নষ্ট করছো কেনো?”

রুশি খানিকটা অবাক হয়, এই লোকটির কি আদোও জ্ঞান নেই যে সে কি সিচুয়েশনে আছে?তার প্রেমিকার সামনে অন্য একটা মেয়েকে ধরে আছে এটা কি সে বুঝতে পারছে না!এতোটা নর্মাল কি করে আছে যেনো কিছুই হয়নি, যা হচ্ছে সব স্বাভাবিক!রুশির চাহনি দেখে সায়ান বলে উঠলো

“কি এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?চলো ঔষুধ খাবে”

কি স্বাভাবিক লাইন অথচ রুশি হজম করতে পারছেনা আর চন্দ্রিকাও পারছে বলে মনে হচ্ছে না। বেচারি হয়তো শকে আছে এই ভেবে যে ও উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সায়ান ওকে ইনভিজিবল মি.ইন্ডিয়া ভাবছে।রুশি সায়ানের কথা মতো চুপচাপ মেডিসিন খেয়ে নিলো, এই মুহুর্তে ওর সন্তান থেকে বড় আর কিছুই নয় ওর থেকে। তখনি চন্দ্রিকা হুট করে সায়ানের হাত চেপে ধরলো আর বলে উঠলো

“আম স্যরি সায়ান, এইটুকু একটা ব্যাপার নিয়ে তুমি এভাবে ইগনোর করবে আমাকে?আমি জানি তুমি আমাকে শাহেদের সাথে দেখে রেগে আছো কিন্তু বিশ্বাস করো আমরা জাস্ট বন্ধু ছাড়া আর কিছুই নই। এইটুকুর কারণে তুমি আমাকে ইগনোর করোনা প্লিজ! তুমি আমাকে ইগনোর করলে আমার খুব কষ্ট হয়”

কথাগুলো বলতেই চন্দ্রিকার টলমলে চোখজোড়া থেকে জল গড়িয়ে পড়লো, রুশির খুব খারাপ লাগলো এই দৃশ্য দেখে। ওর মনে হলো ওর জন্য কারো সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে! আসলেই তো এটা খুব কষ্টকর যখন তুমি কাউকে ভালোবাসো আর সে তোমাকে ইগনোর করে।রুশি মাত্র কয়েকমাসের সম্পর্কেই যেনো সায়ানকে ছাড়া ভাবা যেনো দুষ্কর হয়ে গিয়েছে সেখানে এই মেয়েটি সায়ানকে এতোবছর ধরে ভালোবাসে তাহলে সে কি করে মেনে নিতে পারবে?

রুশির ভাবনার মাঝেই চন্দ্রিকা ওকে বলে উঠলো

“আমি সায়ানের সাথে আলাদা কথা বলতে চাই”

রুশি বুঝলো যে ওকে চলে যেতে বলছে, রুশি কিছু বলার পুর্বেই সায়ান বললো

“ও কোথাও যাবে না,ওর শরীর অনেক দুর্বল। তুমি যা বলার বলো”

“সায়ান আমি প্রাইভেট কথা বলতে চাই তোমার সাথে, এখানে ও থেকে কি করবে?”

“চন্দ্রিকা ও বাইরের কেউ নয়!তুমি যা বলার ওর সামনে বলতে পারো”

“সায়ান প্লিজ…”

চন্দ্রিকার দিকে তাকিয়ে রুশি উঠে দাঁড়ালো, ওর এই মুহুর্তে সায়ানকে প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে। অন্য সময় হলে হয়তো ভাবতো সায়ান ওর কেয়ার করছে, ও হয়তো অনেক খুশি হতো কিন্তু এই জিনিসটা ওর তিক্ত লাগছে এখন। সায়ান শুধুমাত্র চন্দ্রিকাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য রুশিকে ব্যাবহার করছে কারণ চন্দ্রিকাকে অন্য কারো সাথে দেখে সে জেলাস ছিলো। এই জন্যই হয়তো ওইদিন ওই কথাগুলো বলেছে আর ও কিনা ভেবেছে যে সায়ানের ওর প্রতি ফিলিংস আছে?এতো বোকা কি করে হতে পারে ও?

রুশি দাঁড়াতেই সায়ান বলে উঠলো

“তুমি উঠছো কেনো?শুয়ে থাকো”

রুশি প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না বরং চন্দ্রিকার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো

“আমি বাইরে যাচ্ছি,ইউ গাইজ কেরি অন”

বলেই একমুহুর্তও দাঁড়ালো না, ও জানে সায়ান হয়তো ওর দিকে কয়েককদম আসতে চাইবে কিন্তু তার ভালোবাসা নামক মানুষটা তাকে থামিয়ে দিবে। আর তার আর ওর দিকে আসা হবে না। ঠিকই আসা হয়নি। এইযে এতোক্ষন বসে আছে ছাঁদে তাতে কার কিইবা যায় আসে। রুশির ভাবনার মাঝেই কারো পায়ের শব্দ পেলো তাই কি ভেবে উঠে দাঁড়ালো আর দেখে সামনে চন্দ্রিকা দাঁড়িয়ে। ওর এই মুহুর্তে তার সাথে কথা বলার এক ফোঁটাও ইচ্ছে নেই তাই ও পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চাইলো কিন্তু চন্দ্রিকার কথায় থেমে গেলো

“ছেলেদের ভালোই বশে করতে পারো দেখছি!কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলো আবার কাউকে বাচ্চার ফাঁদে ফেলে জবরদস্তি তার জীবনে ঢুকে পড়েছো!অথচ সাজো এমন যেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারোনা”

“মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখুন। আমি কিছু বলছিনা তার মানে এই না যে আমি বলতে পারিনা। আগেও বলেছি আর এখনো বলছি আমি আর সায়ান দুজনেই পরিস্থিতির স্বিকার এর বেশি কোন সম্পর্ক নেই আমাদের মাঝে। আপনার এতো বড় মস্তিষ্কে যদি এই ছোট্ট কথা না ঢুকে তাহলে সেটা আপনার ব্যর্থতা!”

রুশির কথা শুনে চন্দ্রিকা প্রচণ্ড রেগে গেলো আর দ্রুত পায়ে রুশির দিকে এগিয়ে আসলো কিন্তু ছাঁদে থাকা পাইপের সাথে বেঁধে ছাদের নিচে পড়ে ছাঁদের নিচের দিকে পড়ে গেলো। রুশি ভয়ে বসে পড়লো,মুহুর্তের মাঝে কি হলো বুঝতে পারছেনা। ঠিক তখনি দেখলো দৌঁড়ে আসছে এদিকে, আচ্ছা সায়ান কি ওকে ভুল বুঝবে? কিন্তু ওতো চন্দ্রিকাকে ধাক্কা দেয়নি ও নিজেই পড়ে গিয়েছে।

এদিকে সায়ান দৌঁড়ে গিয়ে চন্দ্রির হাত চেপে ধরলো তারপর টেনে উঠালো, ভাগ্য ভালো ছিলো যে চন্দ্রিকা যে পাশে পড়েছে সে পাশে সেই তুলো গাছটার শাখা ছিলো আর চন্দ্রিকা সেটাই চেপে ধরে ছিলো। চন্দ্রিকাকে টেনে উঠিয়েই রুশির দিকে এগিয়ে আসলো আর রুশি ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বললো

“আ্ আমি কিছু করিনি…”

পিছন থেকে চন্দ্রিকা বলে উঠলো

“সায়ান আমি জাস্ট কয়েকটা কথা বলতে এসেছিলাম ওর সাথে, মানছি আমি একটু কঠোর ভাবে বলেছি কিন্তু এই জন্য রেগে ও আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।আমি…”

“ইনাফ চন্দ্রি! রুশি এমন মেয়েই না যে রেগে তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে। আমি সবটা দেখেছি, ড্রাইভারকে বলেছি সে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে ”

“সায়ান আমি আসলে…”

“প্লিজ গো”

চন্দ্রিকা সায়ানের কঠোর ভাষা দেখে উপায়ন্তর না দেখে সিঁড়ির দিকে হাটা ধরলো, যাওয়ার সময় রুশির দিলে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তারপর চলে গেলো। রুশি তখন সেদিকে তাকিয়ে তখনি গালে কারো হাতের স্পর্শ পেলো, তাকিয়ে দেখে সায়ান বেশ চিন্তিত স্বরে বলছে

“তুমি ঠিক আছো?তোমার কোথাও লাগেনি তো?আমি বুঝতে পারিনি যে চন্দ্রি এখানে আসবে,বুঝতে পারার সাথে সাথেই দৌঁড়ে এখানে এসেছি, আরেকটু দেরি হলে কি হতো?আজ চন্দ্রির জায়াগায় যদি তুমি থাকতে আমি… আম স্যরি রুশি!”

সায়ানের চোখে এই মুহুর্তে রুশি ভয়ের ছাপ দেখছে কাউকে হারানোর ভয় কিন্তু কেনো? কাকে হারানোর ভয়?ওকে নাকি ওর গর্ভে থাকা তার বাচ্চাকে হারানোর ভয়!রুশি সায়ানকে ঠিক বুঝতে পারেনা, এক মুহুর্তে মনে হয় তার চেয়ে আপন কেউ নেই, এতো কিছুর পরেও তার উপর রাগ করে থাকতে পারেনা ও কিন্তু পর মুহুর্তেই মনে হয় এই মানুষটি ওর না। কেনো এতো কেয়ার করে ওর, সে কি বুঝেনা ও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে তার প্রতি?এই দুর্বলতা আরো গভীর হয়ে গেলে ছেড়ে যেতে যে বড্ড কষ্ট হবে ওর। এই মায়া জিনিসটা বড্ড খারাপ, হুট করে জড়িয়ে গেলেও হুট করে ছাড়ানো যায়না!

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_২৬

চন্দ্রিকা হনহন করে নিজের এপার্টমেন্টে ঢুকলো আর হাতে থাকা নিজের ব্যাগ ছুড়ে মারলো। এতোক্ষন জমে থাকা সকল রাগ যেনো এখন বেরিয়ে এলো যা সায়ানের সামনে খুব কষ্টে সামলে রেখেছিলো। সায়ানের হঠাৎ এতোটা বদলে যাওয়া ও মেনে নিতে পারছে না, ওই দুইদিনের মেয়ের জন্য সায়ানের এতো দরদ দেখে চন্দ্রিকা রাগে থরথর করে কাঁপছে। সায়ান রুশিকে এতোটা বিশ্বাস কবে থেকে করে! আগে সায়ানের চোখে যে ভরসা ওর জন্য দেখতে পেতো আজকাল সেটা আর দেখতে পায়না, মনে হয় শুধুমাত্র দায় সারাতে সায়ান ওকে নিজের কাছে রাখছে নাহয় এতদিনেও সায়ান ওর খোঁজ নিলো না আর না ফোন দিলে ফোন ধরেছে।

তারউপর আজ ওকে নিজের এপার্টমেন্টে দিয়ে গেছে!কিছুক্ষণ পুর্বে ড্রাইভারকে যখন জিজ্ঞেস করলো ওকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছে? সায়ানের বাড়িতে কেনো নিয়ে যায়নি।তখন ড্রাইভার বলেছে যে সায়ান নাকি তাকে এখানে নিয়ে আসতে বলেছে এবং এটাও বলেছে যে চন্দ্রিকা যাতে এখন থেকে এখানেই থাকে। বিষয়টি চন্দ্রিকার আত্মসম্মানে লেগেছে, এর পুর্বে কখনোই সায়ান ও বাড়িতে যেতে না করেনি বরং বলেছে তুমি এখানে থাকতে চাইলে থাকতে পারো!

চন্দ্রিকার রাগের বশে চাদর খামচে ধরলো খুব জোরে, সায়ানের জীবনে রুশির আসাটা সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো আর সে ভুলটা ও নিজে হতে দিয়েছে। রুশির চেহারা দেখে সায়ান প্রেমে পড়েছে যেটা ও ভেবেছিলো পড়বে না। চন্দ্রিকার পাশে থাকা বালিশ ছুড়ে মারলো ও, রাগে ও থরথর করে কাঁপছে আর বলছে!

“সব জেনে গেছে সায়ান সব! যা এতোদিন লুকিয়ে রেখেছি সব জেনে গেছে”

চন্দ্রিকা কিছুক্ষণ পুর্বে সায়ানের সাথের কথোপকথন নিয়ে ভাবছে, রুশি যেতেই চন্দ্রিকা ইচ্ছে করেই শব্দ করে দরজা লাগিয়েছে যাতে রুশি বুঝতে পারে এই ঘরের মালকিন ও, রুশি শুধুমাত্র কয়েকদিনের মেহমান ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রয়োজন শেষে তাকে ফিরে যেতে হবে!চন্দ্রিকা সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে

“আমি জানি না রুশি মেয়েটা কেমন তবে আমার তাকে ভালো লাগে না, আমি তাকে তোমার সাথে একসাথে দেখতে পারিনা আমার বড্ড কষ্ট হয়, হিংসে হয় আমার। তোমাকে বড্ড ভালোবাসি সায়ান আমি, আমি জানি ও শুধুমাত্র তোমার দায়িত্ব কিন্তু আমি যে সহ্য করতে পারিনা ওকে, কোন নারিই পারবে না তার ভালোবাসার ভাগ কাউকে দিতে। আমি তারপরও ওকে মেনে নিয়েছি তোমার জন্য তবে তিনবছর পর্যন্ত তুমি ওকে রাখতে পারবে না আর তোমার বাচ্চা যদি তোমাকে বাবা বলে তাহলে আমি চাই সে মা আমাকে বলবে। তুমি বেবি হওয়ার পর সে বেবি আমাকে দিয়ে দিয়ো, আমি তাকে নিজের সন্তানের মতো বড় করে তুলবো। রুশি নামক মেয়েটার কোন প্রয়োজন নেই, আমি ভাববো সে শুধুমাত্র সারোগেট ছিলো এর বেশি কিছু না। তুমি কথা দাও আমায়”

চন্দ্রিকা করুণ চাহনিতে তাকিয়ে বললো, কতোটা অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে চেহারায়! সায়ান তার দিকেই তাকিয়ে আছে, আদোও এর কতোটুকু সত্যি? সায়ান গম্ভীর গলায় বললো

“আমি পারবো না, এটা কখনোই সম্ভব নয়। এই সন্তানের বাবা যেমন আমি তেমনি রুশি তার মা আর তার সন্তান থেকে তাকে আলাদা করার অধিকার আমার নেই।আমার সন্তানের মা রুশিই থাকবে আর কেউ না যেমন তার সন্তানের বাবা আমি। এই অন্যায় আবদার করার পুর্বে তোমার ভাবা উচিৎ ছিলো চন্দ্রি!”

“সেই কখন থেকে রুশি রুশি করে যাচ্ছো তুমি,সেই মেয়েটা তোমার লাইফে এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেলো?তাহলে আমি কে তোমার লাইফে? আমার কোন গুরুত্ব নেই তোমার কাছে?তার প্রতি তোমার এতো দরদ আর আমার প্রতি?তুমি ভুলে গেছো সায়ান যে তুমি আমাকে ওয়াদা করেছো তুমি শুধু আমার থাকবে?আমাকে ভালোবাসবে!তুমি নিজের দেয়া কথা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে?”

“আমি তা কখনোই বলিনি”

“কিন্তু আমি তো অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছি সায়ান! তুমি ওই মেয়েটার সাইড নিচ্ছো তার সাথে একই রুমে থাকছো আমি এগুলো কেনো মেনে নিবো বলতে পারো?তারউপর তুমি বলেছো তুমি নাকি এ বাড়িতে আর কখনো পা রাখবে অথচ গত একমাস এখানেই আছো, মিসেস খানের সাথে তোমার ভালো সম্পর্ক আর তাতে আমার কোন আপত্তিও নেই। কিন্তু তুমি ওই মেয়েটির সাথে জড়াচ্ছো কেনো?আমার বিশ্বাসের কি কোন মুল্যেই নেই তোমার কাছে?”

“আমার বিশ্বাসের মুল্য আছে তোমার কাছে?”

“মানে কি বলতে চাইছো তুমি?আমি কখন তোমার বিশ্বাস ভেঙেছি?”

সায়ান জবাবে কিছু বললো না, সরাসরি নিজের সাইডের ড্রায়ার খুলে তার থেকে কিছু ছবি বের করলো আর চন্দ্রিকার সামনে খাটে ছুড়ে মারলো।চন্দ্রিকা বুঝতে না পেরে সেগুলো দেখতে থাকলো,আর ওর আত্মা কেঁপে উঠলো। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সায়ানের দিকে তাকালো, তা দেখে সায়ান বললো

“এটা ওইদিনের ছবি যেদিন রুশি আর আমি একসাথে ওই হোটেল রুমে ছিলাম আর সেই একই হোটেলে, একই দিনে এবং কাছাকাছি সময়ে তুমি সেখানে ছিলে তাও এই ছেলে গুলোর সাথে যারা উইমেন ট্রাফিকিং এর সাথে জড়িত। কেন ইউ এক্সপ্লেইন হোয়াট অয়ার ইউ ডুইং দেয়ার?”

“সায়ান আই কেন এক্সপ্লেইন! তুমি যা ভাবছো এমন কিছুই নয়। আমি জাস্ট তাদের সাথে কথা বলছিলাম, আমি তো চিনিও তাদেরকে!”

“কিন্তু ওরা তো অন্য কিছু বলেছে চন্দ্রি!ওরা বলেছে তুমি তাদের টাকা দিয়েছো একটা মেয়ে দেয়ার জন্য যাতে তাকে আমার ঘরে পাঠাতে পারো। আরোও বলেছো যে মেয়েটি যাতে সুন্দর না হয় কিন্তু সেই ছেলেগুলোর কাছে ওই মুহুর্তে অন্য কোন মেয়ে ছিলো না বরং রুশি ছিলো যাকে তারা রুশির ফেন্ড থেকে কিনে নিয়েছে। তারা অনেক বেশি টাকা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে লাকিলি রুশিকে আমার রুমে পাঠিয়ে দেয়। এদিকে তুমি কৌশলে তাদের দিয়ে আমার ড্রিংকয়ে ড্রাগস মিশাও যাতে সেই মেয়েটার সাথে আমি…”

সায়ান হাত মুঠো করে ফেলে, রাগে ওর মুখ হয়ে আছে। সায়ান চন্দ্রির দিকে আবার তাকিয়ে বলে

“তারপর তুমি নিজে গিয়ে সেই মেয়েকে চেক করেছো আর যখন দেখেছো রুশি দেখতে বেশ সুন্দরি তুমি তখন রেগে গিয়েছিলে কিন্তু তোমার হাতে পর্যাপ্ত সময় না থাকায় তুমি আর রুশিকে রিপ্লেস করতে পারোনি। কারণ এমন সুবর্ণ সুযোগ দ্বিতীয়বার নাও পেতে পারো।তাই তুমি রুশিকে চেক করে সেই রুম থেকে বেরিয়ে পড়ো, আর ওই রুম আমার নামে বুক করা ছিলো। খারাপ লাগায় আমি সেখানে রেস্ট নিতে যাই আর তোমার কথায় কেউ একজন দরজা বাইরে থেকে লক করে দিয়ে চলে যায়।সব ঠিকঠাক মতো বলেছি তো?”

সায়ানের চাহনিতে চন্দ্রিকা ভয় পাচ্ছে, কারো শান্ত চাহনি এতোটা ভয়ংকর হতে পারে ওর জানা ছিলো না, চন্দ্রিকা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ও ভাবতে পারেনি সায়ান এভাবে সব জেনে যাবে। ওই ছেলেগুলোকে তো…

“কি আমি সত্য বলায় তোমার রাগ হচ্ছে?তাহলে আমার কেমন লাগছে বলোতো!এখন তুমি আমায় এটা বলো কেনো করেছো এমনটা, রুশির মতো নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নিয়ে কেনো খেলেছো?তুমি তো আমায় ভালোবাসো তাই না?তাহলে ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হাতে তুলে দিতে তোমার বাধলো না?নাকি শুধু মুখেই বলো!তোমার ধারণা আছে কতোটা গিল্টি ফিল করছিলাম আমি, বারবার মনে হচ্ছিলো আমি তোমায় ঠকাচ্ছি, জানলে তুমি বড্ড কষ্ট পাবে কিন্তু ঠকেছি তো আমি!তুমি জানতে আমি ধোকা সহ্য করতে পারিনা তবুও তুমি আমায় ধোঁকা দিলে। বলো কেনো করেছো এমন?”

সায়ান শেষ কথাটা এতোটাই জোরে ছিলো যে পুরো ঘর যেনো কেঁপে উঠেছে, চন্দ্রিকা ভয়ে আঁটসাঁট হয়ে আছে। সায়ানের এই ভয়ংকর রুপ আগে কোনদিন দেখেনি। চন্দ্রিকে কিছু না বলতে দেখে সায়ান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো! তারপর বললো

“এটার জবাবও আমি দিচ্ছি, কারণ তোমার একজন সারোগেট মাদার প্রয়োজন ছিলো কিন্তু আমাকে বললে আমি রাজি হতাম না তাই এতো সুন্দর প্ল্যান সাজিয়েছো আর আমাকে বোকা বানিয়েছো! একদিকে আমি গিল্টি ফিল করছিলাম অন্যদিকে তুমি সারোগেট মাদার পেয়ে গেলে নিজের জন্য।মানে এক ঢিলে দুই পাখি মারলে, মানতে হবে তোমার এক্টিং স্কিল দুর্দান্ত ছিলো। এক মুহুর্তের জন্যও আমার মনে হয়নি এই নিষ্পাপ চেহারার পেছনে এই রুপটা লুকিয়ে ছিলো”

সায়ানের কথা শুনে চন্দ্রিকা কেঁদে দিলো, তার ফুঁফাতে ফুঁফাতে বললো

“আমি কখনো মা হতে পারবো না সায়ান!আবার তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার ক্ষমতাও আমার নেই কিন্তু তোমাকে বাবা হওয়ার সুখ থেকে কি করে বঞ্চিত করি আমি?আমি চেয়েছি তুমি বাবা ডাক শুনো আর আমাকেও কেউ মা বলে ডাকুক।কিন্তু তোমাকে বললে তুমি রাজি হতে না আর যদি আমাকে ছেড়ে দাও!তাই এইভাবে এইসব কিছু করতে বাধ্য হয়েছি।আমি মা ডাক শোনার লোভ সামলাতে পারিনি সায়ান আর না তোমাকে অপুর্ণ রাখতে চেয়েছি। আমার অপুর্ণতার জন্য তোমাকে বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করতে চাইনি। আমি জানি আমি ভুল তবে আমার নিয়ত ভুল ছিলো না, আম স্যরি সায়ান ”

সায়ান চন্দ্রিকার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো তারপর শান্ত স্বরে বললো

“তুমি যদি আমায় বলতে যে তুমি মা হতে পারবে আমি খুশি খুশি মেনে নিতাম, দরকার হয় আমরা এতিমখানা থেকে বাচ্চা এডপ্ট নিতাম, অনেক বাচ্চা আছে যাদের বাবা মা দরকার। আমরা তাদের একজনকে নিয়ে সুখে থাকতাম কিন্তু এই সবের মাঝে রুশিকে জড়িয়েছো! ওর এতোসুন্দর জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছো, বিয়ের পুর্বে একটা মেয়ের মা হওয়াকে এই সমাজ কিভাবে দেখে তুমি জানো?একজন নারী হয়ে আরেকজনের সাথে কি করে এমন জঘন্য কাজ করলে?এখন আমার জীবনের সাথে রুশি জড়িয়ে আছে চন্দ্রি, সে আমার স্ত্রী, আমার সন্তানের মা! তার সম্পুর্ণ অধিকার আছে আমার সবকিছুর উপর আর সেই অধিকারের সুযোগ তুমি দিয়েছো তাকে। তোমার ভালোবাসায় তুমি অন্যকে স্বেচ্ছায় ভাগ দিয়েছো তাহলে এখন কেনো সহ্য করতে পারছো না?তুমি বড্ড অন্যায় করেছো।”

“আম স্যরি সায়ান, ওই মুহুর্তে আমার মাথায় আর কিছু আসেনি। আর রুশিতো এখানে ভালোই আছে,তুমি ভবিষ্যৎ ঠিক করে দিবে আর কি চাই ওর?ওর আমার ভালোবাসায় ভাগ বসানোর কি দরকার?”

“তোমার স্যরি সত্য বদলে যাবে না, তুমি যা করেছো তা ভুল করেছো তাই তার মাশুল তোমায় দিতে হবে। রুশি আমার জীবনের সাথে জড়িত, অন্য সব যদি বাদও দেই অন্তত আমার সন্তানের জন্য আমার ওকে চাই। ও আমার স্ত্রী আর এই সত্যিটা তোমাকে মেনে নিতে হবে,তোমার প্রতি আমার আর কিছু থাকুক আর না থাকুক সম্মান টা বড্ড বেশি ছিলো। আমি ভাবতেই পারছিনা তুমি এমন জঘন্য একটা কাজ করেছো। আমি তোমায় কোনদিন ক্ষমা করতে পারবো না চন্দ্রি, কোনদিন না”

“সায়ান প্লিজ আমি…”

“প্লিজ তুমি এখান চলে এখন, আমি এমন কিছুই এখন বলতে চাচ্ছি না যা শুনে তুমি কষ্ট পাবে কিন্তু নিজের প্রতি বেশিক্ষণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবো না।আই বেগ ইউ প্লিজ গো!”

বলেই সায়ান বারান্দায় চলে গেলো, চন্দ্রিকার দিকে এক মুহুর্ত তাকায়নি। চন্দ্রিকা কতোক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। এই মুহুর্তে বুঝতে পারছে ও কতো বড় ভুল করেছে, নিজের হাতে নিজের অধিকার হারিয়েছে।সায়ান কি তবে আর ওর দিকে ফিরে তাকাবে না? ওদের কাটানো সকল মুহুর্ত এক নিমিষেই ভুলে যাবে!

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_২৭

শীতের দুপুরের রোদ খুব মৃদু হয়,শরীরে আলাদা আরাম দেয়। গ্রাম বাংলার বাচ্চা থেকে বুড়ো মানুষগুলো গোসল সেরে সারি বেঁধে রোদ শুকাতে বসে পড়ে, কেউ বা সদ্য গোসল করে আসাতে রোদের মাঝেও কাঁপতে থাকে, চাদর মুড়িয়ে শীত কমানোর প্রচেষ্টায় থাকে। শহরের মানুষ শীতকাল সঠিকভাবে উপভোগ করতে পারে না, তারা হাড় কাঁপানো শীতের আনন্দ বা কষ্ট কোনটিই উপলব্ধি করতে পারে না। চারপাশে জনসমাগম এতোই বেশি যে প্রকৃত শীত ধরা যায়না, তবে কিছু ভেতরের দিকে গ্রামের মতো এলাকার দিকে এলে আর বাইরে থাকলে শীতের উপলব্ধি করা যায় কিছুটা হলেও।

এই যেমন এই মুহুর্তে সায়ান বুঝতে পারছে, পরনে কালো শার্ট খুব বেশি মোটা নয়, তাই পৌষ মাসের শীতের কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে ও। দুহাত দিয়ে নিজেকেই যেনো জড়িয়ে ধরার ব্যার্থ প্রচেষ্টা করলো তবে নিজের স্থান থেকে এক চুলও নড়লো না, আশেপাশে মিইয়ে যাওয়া কিছু কাশফুল গাছ দেখা যাচ্ছে, এখন কাশফুলের সময় নয় তবে এখানে কিছু অংশ দেখে সায়ান অবাক না হয়ে পাড়লো। এছাড়া পুরো মাঠটাই ফাঁকা, দূর দুরান্তে কিছুই চোখে পড়ছে না তবে কানে গাড়ির শব্দ ভেসে আসছে। সায়ান চুপচাপ বসে রইলো, নিজের জীবনের হিসাব মিলাচ্ছে।

ও কিছুতেই ভাবতে পারছে না চন্দ্রিকা এমন একটা কাজ করবে। ধীরেধীরে যেনো চন্দ্রিকা নামক মেয়েটির আসল চেহারা ওর সামনে ফুটে উঠছে! কতোগুলো জঘন্য কাজ ও করে ফেললো বিনা দ্বিধায়,এই চন্দ্রিকাকে ও চেনে না। ছয়বছর পুর্বে যখন সেই বাচ্চা মেয়েটাকে দেখেছিলো তখন সত্যি বলতে ওর খুব মায়া কাজ করেছিলো, জীর্ণশীর্ণ দেহ আর মলিন চেহারা দেখে ওর খুব দুঃখ হয়ে ছিলো। ওর খারাপ লেগেছিলো যে ওর প্রান বাঁচিয়েছে সে এতোটা শোচনীয় অবস্থায়! নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হচ্ছিলো যে ও আগে কেনো খুজে পায়নি এই মেয়েটিকে?প্রায় সাথে সাথেই নিজের সাথে নিয়ে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু সেই আশ্রমের প্রধান বেঁকে বসলেন, প্রশ্ন করে বসলেন যে কি পরিচয়ে তাকে নিয়ে যাচ্ছে!

সায়ান থমকে ছিলো কয়েক মুহুর্তের জন্য, কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। এটা নিশ্চই বলতে পারবে না যে ও চন্দ্রিকাকে এডপ্ট করে নিয়ে যাবে কারণ ওদের বয়সের পার্থক্য ছিলো মাত্র ছয় বছর। সায়ান ভেবে পাচ্ছিলো না যে কি বলে সে তার ছোট্ট পরিকে এখান থেকে নিয়ে যাবে যে তার জীবন বাঁচিয়েছে। ও বড্ড কৃতজ্ঞ ছিলো তার প্রতি, হুট করে বলে ফেললো যে ও মেয়েটিকে বিয়ে করবে যখন মেয়েটি প্রাপ্ত বয়স্ক হবে। বিশ বছর বয়সে বেশ সাহসিকতার সাথে জবাব দিয়েছিলো সেদিন, তারপর চন্দ্রিকাকে নিজের সাথে নিয়ে আসে। মেয়েটাকে সাথে করে নিজের বাসায় নিয়ে আসে, প্রায় অনেকদিন পর্যন্ত ভালোই ছিলো খান বাড়িতে। চন্দ্রিকার সাথে ঠিক মতো দেখা হতো না ওর, সে নিজের মতো থাকতো আর ও ওর মতো। কিন্তু বাঁধ সাধল মিসেস খান, হুট করেই চন্দ্রিকাকে মারার প্ল্যান করে যাতে সায়ান খুব কষ্ট পায় আর চন্দ্রিকাও খুব ভয় পেয়েছিলো সাথে হসপিটালে ছিলো অনেকদিন। নিজের যে জীবন বাঁচিয়ে তার শোচনীয় অবস্থা মেনে নিতে পারেনি ও তাই রাগের বসে ঘর ছেড়ে দেয়।চন্দ্রি সেদিন ভয়ে আঁটসাঁট হয়ে বলেছিলো

“আমি ভয়ে আছি সায়ান, ঠিক মতো ঘুমাতে পারছিনা। মনে হচ্ছে চোখ বন্ধ করলে কেউ মেরে ফেলবে, প্লিজ সেভ মি। আমার মতো অনাথকে সাহায্য করো।”

“আমি তোমার পাশে আছি চন্দ্রিকা, তুমি পেয়ো না। আমি থাকতে কেউ তোমার কিছু করতে পারবে না”

“কিন্তু আমি আপনার পাশে কি পরিচয়ে থাকবো? সবাই তো দিনশেষে আমার দিকে আঙুল তুলবে আর কোথাও আমি সেফ থাকবো না”

সায়ান চুপ হয়ে গেলো তারপর কিছুক্ষণ ভেবে বললো

“ইউ আর মাই ফিয়ন্সি ফ্রম নাউ অন। আমার বাগদত্তার গায়ে হাত দেয়ার সাহস কারো নেই। তুমি যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হবে এবং গ্রেজুয়েশন কম্পলিট করবে তখন আমরা বিয়ে করবো।”

সায়ান আর চন্দ্রিকার সম্পর্কের কথা পুরো দুনিয়া জানতো তাই এরপর কেউ চন্দ্রিকার দিকে আঙুল তুলে নি। তবে চন্দ্রিকা নিজেকে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকবার দাবি করলেও সায়ান এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায়নি, ও নিজেকে এবং চন্দ্রিকাকে সময় দিতে চেয়েছিলো কিন্তু তার মাঝেই হঠাৎ রুশি চলে ওর জীবনে। নাহ রুশি চলে আসেনি বরং চন্দ্রিকা ওকে ইচ্ছে করে নিয়ে এসেছে ওর লাইফে।আর সত্যি বলতে সায়ান খুব খুশি যে রুশি ওর লাইফে আছে, ও খুব খুশি যে ও বাবা হতে চলেছে আর তার থেকেও অনেক বেশি খুশি যে ওর বাচ্চার মা অন্য কেউ নয় বরং রুশি!

সায়ান চোখ বন্ধ করে নিলো,চন্দ্রিকার এই রুপটা ও কখনো আশা করে নি। সেই ছোট পিচ্ছি মেয়েটি যার একটা নিষ্পাপ চেহারা ছিলো তার সাথে এর যেনো কোন মিল নেই। এতোদিন যে চেহারা দেখে ওর মায়া হতো আজ সেই চেহারা দেখে শুধুমাত্র মনে হয়েছে ‘কি নিখুঁত অভিনয়!”
তাহলে আগের সেই কান্না,বারবার ভালোবাসা জাহির করা সব অভিনয় ছিলো না?

নারী সত্যিই রহস্যময়ী! এদের চেনা বড় দায়, সহজ সরল চেহারার পেছনে কতো শত রহস্য লুকিয়ে।আর রহস্যের মায়াজালে নিজেকে বোকা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না। আচ্ছা রুশিও তো নারী কিন্তু তার মাঝে এতো জটিলতার কোন আঁচ নেই নাকি ও সেই জটিলতা দেখতেই পায়না। রুশির মাঝেও কি এরুপ রহস্য বিরাজ করে?আর যদিও করেও তবে সায়ান খুঁজতে চায় কিন্তু বুঝতে চায়না কারণ রহস্য উদঘাটন হয়ে গেলে আগ্রহ নিতান্তই কমে যায় আর ও চায়না রুশিকে জানার, বোঝার ওর কাছে থাকার বিন্দুমাত্র আগ্রহ কমুক। ও আজীবন এই রহস্যে নিজেকে হারাতে চায়।

রুশির কথা ভাবতেই সায়ানের ঠোঁটের কোন হাসি ফুটে উঠলো,মেয়েটা বড্ড অদ্ভুত! সবার থেকে আলাদা, এই এতোদিন বিয়ের বয়স হলো ওদের কিন্তু কখনো সায়ানের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। নিজ থেকে সায়ানের সাথে থাকতে চায়নি, সায়ান খুব করে চায় রুশি ওর উপর অধিকার দেখাক। ওর কলার চেপে জোর করে বলুক

“ইউ আর মাই ম্যান!ওই সব চন্দ্রিকাকে যতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাবেন ততই মঙ্গল”

সায়ান আলতো হাসলো, রুশির বাঘিনী রুপ দেখতে ইচ্ছে করছে ওর। রাগলে রুশিকে ঠিক কেমন লাগে তা দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে, নিশ্চই সরু নাকটা লাল হয়ে যাবে! চোখগুলো বড় বড় হয়ে যাবে আর কপাল কুচকে যাবে। অসম্ভব সুন্দর লাগবে হয়তো!সায়ানের ভাবনার মাঝেই কেউ একজন ধপ করে পাশে বসলো তারপর সায়ানের গায়ে চাদর দিয়ে দিলো। সায়ান পাশে তাকিয়ে দেখলো ইনান, ও খানিকটা অবাক হলো। তা দেখে ইনান বললো

“অবাক হওয়ার কিছু নেই, আদিকাল থেকেই জানা যদি সায়ান জামিল খান হুট করে হারিয়ে যায় তাহলে তাকে এখানেই পাওয়া যাবে। কারণ তার মন খারাপ হলে তিনি দুনিয়াদারি ছেড়ে এখানে এসে দুঃখ বিলাশ করেন।কিন্তু দুঃখবিলাস করছেন ভালো কথা, আই এপ্রিশিয়েট ইট বাট ফোন কেনো অফ রাখেন? বাড়ির সবাই টেনশন করছে সেদিকে কি আপনার খেয়াল আছে? আন্টির টেনশনে বিপি হাই হয়ে গেছে আর সামু তাকে সামলাচ্ছে। এদিকে রুশি নাকি না খেয়ে…”

ইনানের কথার মাঝ পথেই থামিয়ে দিলো সায়ান আর শান্ত স্বরে বললো

“ভাবি! রুশি ভাবি হবে তোর। আমার বউ তো ভাবিই হবে তাইনা?”

উত্তরে ইনান কিছু বললো না,শুরু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কাউকে চাইলে এতো সহজেই ভোলা যায়না আর সে যদি হয় চার বছরের ভালোবাসা! শত চেষ্টা করলেও মনের কোন এক কোনে থেকেই যায় কিন্তুর সামুর সাথে খুব থাকলে খুব একটা মনে পড়ে না। ওর বিশ্বাস একসময় ও ভুলেই যাবে ওই পাগলির পাল্লায় পড়ে হয়তো ও নিজেও তাই চায়!ভুলে যেতে নিজের ফেলে আসা অতীতকে যার থেকে ও কিছুও পায়নি শুধুমাত্র অপুর্ণতা ছাড়া!

ইনান সায়ানের দিকে তাকালো, চেহারায় সিরিয়াস ভঙ্গি। ইনানের মনে হলো সায়ানকে কিছু কথা বলা উচিৎ, এটা হয়তো সবার ভবিষ্যতের জন্যই ভালো কারণ এতে তিন তিনটি মানুষের জীবন জড়িয়ে। এই বিষয়ে কথা বলা হয়তো আগেই প্রয়োজন ছিলো তবে এখনো বেশি দেরি হয়নি।ও শান্ত স্বরে বললো

“সায়ান! আমার কিছু বলার ছিলো তোকে অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম তোকে বলবো কিন্তু বলা হয়নি আজ সুযোগ যেহেতু পেয়েছি তাই বলেই দেই।”

#চলবে

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ