#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_২২
সায়ানের পুরাতন বাড়িতে সায়ান সোফায় বসে আছে, চোখমুখ শক্ত করে কতক্ষণ পর পর মেইন দরজার দিকে তাকাচ্ছে ও। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে বসে আছে ওখানে কিন্তু চন্দ্রিকার আসার কোন খবর নেই!হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো আর সায়ান মেইডকে ইশারায় দরজা খুলে দিতে বললো। মেইড দরজা খুলতেই চন্দ্রিকা ধীর পায়ে ঘরে ঢুকলো আর ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো!
“চিন্তা করোনা আমি ঠিক আছি আর বাসার ভেতরে পৌঁছে গেছি। তুমি…”
সায়ানের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রিকা থমকে গেলো, আমি রাখছি বলে ফোনটা খট করে কেটে দিলো। প্রথমে চোখেমুখে আতঙ্ক ফুটে উঠলেও পরে তা হাসিতে পরিণত হলো। সায়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো
“তুমি কখন এসেছো?আমাকে বলোনি কেনো যে তুমি আসছো? তুমি এতোদিন ঠিক করে আমার সাথে কথা বলোনি আর না এখানে এসেছো আমি কতো রাগ করেছি জানো?স্যরি না বলা পর্যন্ত তোমার সাথে আড়ি”
সায়ান চন্দ্রিকার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কতোক্ষণ! কতো নিষ্পাপ চেহারা তার, চোখে মুখে মুহুর্তেই যেনো সরলতা ফুটে উঠেছে কিন্তু…
সায়ান নিজের চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো আর বললো
“ফোনে কে ছিলো?”
সায়ানের শক্ত কন্ঠ শুনে চন্দ্রিকা হচকিয়ে গেলো, আমতাআমতা করে বললো
“তেমন কে্ কেউ না, ওইতো ফ্রে্ ফ্রেন্ড”
“ফ্রেন্ড? আমার জানা মতে তোমার কোন ফ্রেন্ড ছিলো না এতোকাল যাবৎ। সবসময় বলো আমি তোমার ফ্রেন্ড, ভালোবাসা সবকিছু আর কারো দরকার নেই তোমার। হঠাৎ তোমার ফ্রেন্ডের দরকার হয়ে গেলো?কোথা থেকে পেলে এই ফ্রেন্ড?”
চন্দ্রিকা কিছুটা ভয় পেয়ে সায়ানের হাত চেপে ধরলো তারপর বললো
“তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো সায়ান?”
“আমি শুধু প্রশ্ন করেছি!সন্দেহের কথা কোথা থেকে আসছে এখানে?”
“আমি আসলে… তুমি তো এখানে আসো না আর আমিও খুব লোনলি ফিল করছিলাম তাই সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচয় হয় ওর সাথে। অনেক ভালো মানুষ ও”
“আসলেই অনেক ভালো ছেলে তাই নিজ দায়িত্বে তোমায় নামিয়ে দিয়ে গেলো আবার কপালে কিস করে গেলো। ইটস কমন ইন ফ্রেন্ডস! যাইহোক কোথায় ছিলে এতোক্ষন?”
চন্দ্রিকা সায়ানের কথা শুনে ওর হাত ছেড়ে দিলো তারপর ভয়ার্ত চোখে সায়ানের দিকে তাকালো। চন্দ্রিকার চাহনি দেখে সায়ান বলে উঠলো
“মেইড থেকে শুনলাম হসপিটালে গিয়েছিলে তাইতো? কেনো গিয়েছিলে?”
“রেগুলার চেক আপ এর জন্য, তুমি বিজি ছিলে তাই জানাইনি।আম স্যরি এরপর থেকে জানিয়ে যাবো!”
“হুম টেক কেয়ার”
বলেই সায়ান উঠে দাঁড়ালো তারপর বেরিয়ে পড়লো ঘর থেকে, চন্দ্রিকা কয়েকবার ডাকলেও সাড়া দিলো না সায়ান। চন্দ্রিকা হতাশ হয়ে বসে রইলো সেখানে, ও বুঝতে পারেনি শাহেদ মানে ওর ছেলে হুট করে ওর কপালে কিস করবে তাও এখানে!আর সায়ান তা দেখেও ফেলেছে, কি ভাবছে সায়ান?
___________________________
সামু আয়নার সামনে বসে চুল আচড়াচ্ছে, ছোট থেকেই ওর বড় চুল রাখার শখ ছিলো তাই লম্বা চুলগুলো হাটু অবদি ঠেকেছে!কোন একদিন ইনানকে বলতে শুনেছিলো যে ওর লম্বা চুল ওয়ালা মেয়েদের দেখতে ভালো লাগে, ব্যাস এরপর থেকে আর কখনো চুলে কাঁচি চালায় নি। খুব যত্নসহকারে বড় করেছে এগুলোকে। ভাবতেই দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো, সেই মানুষটি এখন আর ওর জীবনে নেই তাই তার সাথে জড়িত সকল কিছু ও নিজের থেকে আলাদা করে ফেলবে!
আজ তিনদিন হলো ইনানের সাথে ওর দেখা হয়েছে, সেদিন ও অনেক জায়াগায় ঘুরেছে। রোলার কোস্টারে উঠেছে, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেয়েছে,রমনার বড় গাছটায় নিজের আর ইনানের নাম লিখে এসেছে আর কতোকি!সেই এখন অতীত, বর্তমানে এর কোনকিছুই অবশিষ্ট নেই। ও ওর জীবনের বেশিরভাগ সময় ইনানকে নিয়ে ভেবেছে, কিন্তু আর ভাববে না। জীবনটাকে নিজের মতো করে সাজাবে আর কারো জন্য অপেক্ষা করবে না আর কারো জন্য কাঁদবে!মানুষ ভালোবেসে মরে যায়না,তাই ও মরবে না। হয়তো একটু কষ্ট হবে কিন্তু ঠিক নিজেকে সামলে নিতে পারবে ও। এখন থেকে একটু একটু করে নিজেকে ভালোবাসা শিখবে, নিজের আর তাদের জন্য বাঁঁচবে যারা ওকে ভালোবাসে। ও ওই সবকিছু করবে যা ওর ভালোলাগে, অন্যের ভালোলাগায় নিজের জীবন সাজাবে না!
কথাগুলো ভাবতেই সামুর চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো ধীর পায়ে ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করলো তারপর চুলগুলো ধরে কোমর অবদি কেটে ফেললো, অন্যের ইচ্ছায় থাকা কোন জিনিস ও নিজের কাছে রাখবে সেটা যতো শখেরি হোক না কেনো?চুলগুলো গুছিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে একটা লম্বা শাওয়ার নিলো তারপর ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিচে নেমে এলো। কয়েক সিঁড়ি বাকি থাকতেই সোফায় নজর গেলো, ইনানের আম্মু আন্টি বসে আছে। সামু ছোট থেকেই মিসেস চৌধুরীর সাথে খুব ফ্রি তাই তার পাশে গিয়ে তার সাথে গল্প করা শুরু করলো। ওর মনটা এখন বড্ড হাল্কা লাগছে, মনে হচ্ছে অনেকদিন পর প্রান খুলে হাসছে। এতো সব জঞ্জালের মাঝে নিজেকে খুজে পেয়েছে, হ্যা ও নিজেকে খুজে পেয়েছে!ও বিড়বিড় করে বললো
“আই নিডেড টু লুজ ইউ টু ফাইন্ড মি”
সামু মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখে ইনান খাবারের ডিশ হাতে রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছে আর মিসেস খান বারবার তার হাতে দিতে বলছে। এই দৃশ্য আগে প্রায়ই দেখা যেতো ওদের বাসায় কিন্তু হঠাৎ করেই ইনানের আনাগোনা কমে যায় খান বাড়িতে। ঠিক হঠাৎ করে নয়, সামু নিজের মনের কথা বলার পর। সামু সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, আর পেছমে ফিরে তাকাবে না ও। হুট করে উঠে ঘরে চলে এলো, দরজা চাপাতে যেতেই বাঁধা পেলো। তাকিয়ে দেখে ইনান দাঁড়িয়ে আছে, ও চেষ্টা করেও দরজা লাগাতে গিয়েও যখন লাগাতে পারলো না তখন হাল ছেড়ে দিলো আর সরে দাঁড়ালো। ইনান কি চায়? কেনো এসেছে এখানে? কোন কিছুই ওর কাছে স্পষ্ট নয় এখনো।
সামু সরে দাঁড়াতেই ইনান ঢুকলো ভেতরে আর ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। হুট করেই সামুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো
“তোর চুলের এই অবস্থা কেনো? এতো বড় বড় চুল এইটুকু করে ফেলেছিস কেনো তুই?”
সামু তাচ্ছিল্য নিয়ে বললো
“আমার চুলের দিকে আবার তোমার নজর গিয়েছিলো নাকি?নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আমার, দ্যি গ্রেট ইনান চৌধুরী আমার চুল নোটিস করেছে!”
“আমার উপর রাগ করে নিজের চুল কেটে ফেলেছিস? মায়া হয়নি তোর?”
“নিজেকে এতোটাও ইম্পর্টেন্স দিবেন না প্লিজ। আমি আমার জন্য কেটেছি অন্য কারো জন্য নয়!আমার চুল আমি যা ইচ্ছে করবো তাতে অন্যকারো যায় আসার কথা না”
ইনান সামুকে ছেড়ে দাঁড়ালো, এমন কঠিন কঠিন কথা কেনো যেনো অবিশ্বাস্য লাগছে ওর কাছে। সামু ইনানের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললো
“কেনো এসেছেন এখানে? বলেতো দিয়েছে বিয়ে করতে হবে না আপনাকে”
“আম্মুকে নিয়ে এসেছি যাতে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করে আজকে। আমি যথাসম্ভব দ্রুত বিয়ে করতে চাই”
“হঠাৎ?”
“আমি বাস্তবতা কে মেনে নিতে চাই”
“রুশি ভাবিকে এখনো ভালোবাসেন তাইনা?”
ইনান সামুর হাত নিজের হাতে নিলো তারপর শান্ত স্বরে বললো
“আমি জানি রুশির প্রতি আমার ফিলিংস ছিলো, এখনো আছে।অনেক বছরের সম্পর্ক এক দিনে ভুলা আমার পক্ষে সম্ভব নয় এটা যেমন সত্যি, তেমন এটাও সত্যি যে ও এখন অন্যকারো বউ আর তারউপর আমার কোন অধিকার নেই। আমি চাই সে ভালো থাকুক। আমি ওকে ভুলতে চাই!”
“ওহ তারমানে তাকে ভুলার জন্য আমাকে সাবস্টিটিউট হিসেবে নিতে চান!আর তাই যথাসম্ভব আমাকে বিয়ে করতে চান”
“আমি সেটা বলিনি”
“তাহলে আমাকে ভালোবাসেন?”
ইনান চুপ করে আছে,সামুর প্রতি ওর মায়া কাজ করলেও ওকে ভালোবাসে না, এটা ও জানে! সামু সেদিকে তাকিয়ে হাসলো তারপর বলল
“যেদিন আমাকে ভালোবাসতে পারবেন সেদিন আমাকে বিয়ের কথা বলতেন আসবেন। আমার কি মনে হয় জানেন আপনি আমাকে ডিজার্ভ করেন না, আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি। অনেক কষ্ট করে আপনাকে ভুলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,দয়া করে আমাকে আর বিরক্ত করবেন। আমি কারো রিপ্লেসমেন্ট হতে পারবো না স্যরি। আপনি আসতে পারেন!”
ইনান কিছু বললো না, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে পড়লো। সামু তার জায়াগায় হয়তো সঠিক, এই কয়দিন ও অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ও আর রুশিকে নিয়ে ভাববে না, ওকে যথাসাধ্য ভুলার চেষ্টা করবে কারণ সে এখন অন্যের স্ত্রী আর সেই মানুষটি ওর বেস্টফ্রেন্ড! ও তাকে ঠকাতে পারবে না তবে সায়ানের সাথে কথা বলে বুঝাবে যে ওর রুশিকে মেনে নেয়া উচিৎ। কিন্তু সামু ভুল ভাবছে ও সামুকে কারো পরিবর্তে বিয়ে করতে চায়নি বরং ওর সাথে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছে। কথায় আছে না
“আমাদের তার সাথেই থাকা উচিৎ যে আমাদের ভালোবাসে, তার সাথে নয় যাকে আমরা ভালোবাসি!”
যেখানে একটু একটু করে ওকে ভালোবাসার চেষ্টা করবে ও!ওর পুরো দুনিয়া জুড়ে সামু থাকবে। ও জানে সামু রাগ করেছে তাই বলে ও হার মেনে নিবে না বরং সামুর করা অভিমান ভাঙিয়ে ছাড়বে। এতোদিন সামু ওর জন্য অপেক্ষা করেছে এখন ওর অপেক্ষা করার পালা!
ইনান চলে যেতেই সামু ফিরে তাকালো,আবারও চলে গেছে সে! একটু তো থাকতে পারতো! নিশ্চই এখন গিয়েই সব কেন্সেল করে চলে যাবে। সেই যে যেতে চায় তাকে যেতে দেয়া উচিৎ,বেঁধে রেখে কি লাভ। দিনশেষে সে তোমার কখনোই নয়, তার চেয়ে নিজেকে ভালোবাসা উচিৎ। কেউ না থাকলেও তোমার সত্ত্বা তোমার সাথে থাকবে!
ও আকাশের দিকে তাকিয়ে মৃদু আওয়াজে গাইতে শুরু করলো
We’d always go into it blindly
I needed to lose you to find me
This dancing was killing me softly
I needed to hate you to love me, yeah
To love, love, yeah
To love, love, yeah
To love, yeah
I needed to lose you to love me…
“আমি আর তোমার দ্বারে যাবো না,
তুমি ফিরে আসলেই সই
নয়তো তোমার অপেক্ষায় দিন গুজার
আমার আর হবে না”
#চলবে
#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_২৩
দোতলার কর্ণারের কামরাটা মিসেস খানের, খুব শখ করে একসময় সাজিয়েছিলেন কামরার প্রত্যেকটা জিনিস। কামরা জুড়ে যৌবনের কতো ছবি তার আর প্রয়াত স্বামীর! এগুলো দেখলে যেনো সেই সোনালি দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়! ভালোবাসায় কতই না পাগলামো ছিলো তার কিন্তু হুট করেই চলে গেলো,,,তার মৃত্যু আজও যেনো মেনে নিতে পারেনি সাবিনা খান, আজও মনে এইতো সেদিনই তো পাশে ছিলো তার প্রান প্রিয় স্বামী জামিল খান।খুব আদুরে গলায় ডেকে বলছে সাবু এককাপ কড়া লিকারের চা করে দিবে?মাথাটা একটু ধরেছে! কিংবা বর্ষার দিনে দুজনের বৃষ্টি বিলাশের স্মৃতি,বারান্দায় একসাথে সুর্যের নিজ গৃহে ফিরে যাওয়া। সবই যেনো চোখের সামনে ভাসছে, আজ অনেকবছর মানুষটি নেই কিন্তু তার স্মৃতি হাতড়ে বেঁচে আছে সাবিনা খান।
জীবনের প্রথম প্রেম তার কি করে ভুলে যায়?খুব যত্নে মনের খাঁচায় সবকিছু বন্দি করে রেখেছে, কোন একদিন ওপারে গিয়ে সব জমানো কথা বলবে। রোজ সময়করে এই ফ্রেমেবন্দি ছবিগুলো মুছেন সে তারপর নিয়ম করে জানালার পাশটায় বসে উপন্যাস পড়েন, সাথে এক কাপ চা! আগে সামনে তার স্বামী উৎসুক হয়ে তার পড়া লাইনগুলো শুনতেন কিন্তু একসময় বিজনেসের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ায় শুনানো হয়নি। কিন্তু একা একা পড়তেন, বহুদিনের অভ্যস হুট করে বদলানো যায় নাকি?আবার তা যদি হয় ভালোলাগার অভ্যস! এই স্মৃতি গুলো নিয়েই তো বেঁচে থাকে এখন। বয়সের ভারে এখন নয়ন যুগল ঝাপসা হয়ে এসেছে, খালি চোখে অক্ষর গুলো ঠাউরে উঠেন না তবে চশমা পরে ঠিকই পড়তে বসেন। আজকে ” এবং হিমু ” পড়তে বসেছেন, এটা জামিলের প্রিয় উপন্যাস ছিলো! অনেকদিন যাবৎ পড়া হয়না, আজ ভাবলো আরো একবার পড়বে।
মিসেস খান যত্ন সহকারে বইটির পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়তে লাগলেন, সম্পুর্ণ মনোযোগ বইয়ের ভেতরি ছিলো কিন্তু হঠাৎ তিনি চমকে উঠলেন! হাতের বইটা পাশে রেখে অবাক চোখে নিজের কোলের দিকে চেয়ে আছে!বহুদিন হয়েছে তার ছেলে এইভাবে তার কোলে মাথা রেখেছে। আগে প্রায়ই এসে বলতো
“মাম্মা! মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো। ঘুম আসছে না আমার।”
মিসেস খান পরম যত্নে তখন ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন কিন্তু বহুদিনের ব্যবধানে সেই অভ্যস যেনো ভুলতেই বসেছিলেন। সায়ান মায়ের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে তার হাত নিজের মাথায় রাখলো তারপর বললো
“মাথা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে মাম্মা!একটু হাত বুলিয়ে দিবে?”
সাবিনা খান বেশ অবাকই হলেন, যে ছেলে তার সাথে ঠিকমতো কথাই বলতো না সে আজ এভাবে থাকবে ভাবতে পারেনি।ছেলের এই পরিবর্তনে তিনি বেশ খুশি হয়েছেন, সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়াও জানিয়েছেন মনে মনে। উনি ছেলের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন, সায়ান চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো। এতোক্ষন মনের মাঝে চলতে থাকা ঝড় নিমিষেই যেনো শান্ত হয়ে এলো,ও চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাই জিজ্ঞেস করলো
“কি করছিলে মাম্মা?আজ ছাদে যাওনি যে!”
“আজ যেতে ইচ্ছে করেছিলো না, অনেকদিন উপন্যাস পড়া হয়না তাই ভাবলাম আজ একটু পড়ি।বসে পড়ছিলাম আর তুই এলি!”
“রুশিও তোমার মতো উপন্যাস পড়ে, ঘরে দেখলাম কতোগুলো উপন্যাসের বই। এই উপন্যাস পড়ে তোমরা কি মজা পাও বুঝি না, আমার তো দেখলেই বিরক্ত লাগে।”
“তোর বাবাও ঠিক তোর মতো ছিলো বুঝলি, আমার উপন্যাস পড়া দেখলেই নাক ছিটকাতো। পরে যখন একদিন ধরে বেধে বসিয়ে পড়ে শুনাইলাম ওমনি জনাবের ভালো লেগে গেলো। আজ তোর বাবার প্রিয় উপন্যাসই পড়ছিলাম বুঝলি!”
সায়ান চোখ মুখ শক্ত করে বললো
“আমি তার মতো নই মা, আমি তার থেকে আলাদা”
বাবার কথা শুনতেই সায়ানের মুখের রঙ পাল্টে গেলো, ওই মানুষটিকে ওর বিশ্বাসঘাতক ছাড়া আর কিছু মনে হয়না।সায়ান নিজের মাকে যতো বেশি ভালোবাসে তার বাবাকে ঠিক ততো বেশিই ঘৃণা করে।লোকটি কারো বাবা হওয়ার যোগ্য নয় আর না কারো স্বামী হওয়ার কিন্তু ওর মাকে ও কিছু বলতে পারে না। কি করে বলবে যাকে তিনি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে, সেই মানুষটি পরকিয়ায় লিপ্ত ছিলো তা স্ত্রী হিসেবে কি করে মেনে নিবে উনি। প্রচণ্ড ভালোবাসেন তিনি সেই লোকটিকে, তাই তাকে ঘৃণা করে বেঁচে থাকতে পারবেন না। এরচেয়ে ভালো তাকে ভালোবেসেই বেঁচে থাকুক, যদিও লোকটি তার যোগ্য না কিন্তু তার মায়ের ভালোবাসা তো মিথ্যে ছিলো না। তাহলে সে কেনো কষ্ট পাবে?
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বরাবরের মতই সত্যিটা চেপে গেলো সায়ান, থাকনা ওর মা ওই জঘন্য লোকটিকেই ভালোবেসে বেঁচে থাকুক। যদিও মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় কিন্তু নিজেকে সামলে নেয় কারণ এতে ওর মা ভালো থাকবে আর ও চায় তিনি ভালো থাকুক!
তাই সায়ান প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো
“বাবাকে অনেক ভালোবাসতে তুমি তাইনা?”
মায়ের সামনে না চাইতেও বাবা বলেই ডাকে ওই লোকটিকে সায়ান, নাহয় মায়ের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে যে বাবাকে কেনো বাবা বলে না সায়ান?আর মাকে মিথ্যে কি করে বলবে?
সায়ানের মা ছেলেকে সরাসরি জবাব দিলেন না, কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
“জামিল চলে যাওয়ার পর ভেবেছিলাম বেঁচে থাকতে পারবো না কিন্তু তোদের জন্য আমি বেঁচে আছি। তোরা আছিস বলেই আমি আছি বুঝলি!”
সায়ান মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, এখনো কতো সুন্দর দেখতে ওর মা অথচ ওই লোকটি কাচের টুকরোর জন্য খাঁটি হিরেকে চিনলো না!সায়ান মনে মনে আওড়াতে থাকলো
“তোমার এতো সম্মান আর ভালোবাসা ওই লোকটি ডিসার্ভ করে না, ভালো হয়েছে সে মরে গিয়েছে নাহয় সে বেঁচে থাকলে সত্যিটা জেনে তুমি বড্ড কষ্ট পেতে মাম্মা!”
সায়ান কাছে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো, আজ অনেক হাল্কা লাগছে নিজেকে। আসলেই প্রিয় জনের সাথে কথা বলতে বেশি কিছু করতে হয়না বরং সামান্য কিছু কথায় তারা অনেক খুশি হয়ে যায়। ঘটা করে স্যরি বলতে হয়না বরং আগ বাড়িয়ে সামান্য কথা বললেই সম্পর্ক ঠিক হয়ে যায়, এটাই হয়তো পরিবার! এই সব কিছু রুশির জন্য সম্ভব হয়েছে, আসলেই বেঁচে থাকতেই সব অভিমান ভাঙিয়ে সম্পর্ক ঠিক করে নেয়া উচিৎ নাহয় একবার হারিয়ে গেলে হাজার খুজেও পাওয়া যায়না।
সায়ান রুমে আসতেই দেখে রুশি আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, সায়ান কি ভেবে যেনো ছুটে গিয়ে রুশিকে জড়িয়ে ধরলো আর কোন ভনিতা ছাড়াই বললো
“থ্যাংক ইউ!থ্যাংক ইউ সো মাচ। তোমার জন্যই আজকে মাম্মা আর সম্পর্ক ঠিক হয়ে গিয়েছে। ডু ইউ নো রুশি! ইটস আ ব্লেসিং টু হ্যাভ ইউ ইন মাই লাইফ। তুমি আমার লাইফে অনেকগুলো খুশি দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছো, তুমি জানো আমি কতো খুশি?যখনই মনে পড়ে আমি বাবা হতে চলেছি, আমাকে কেউ একজন বাবাই ডাকবে! ছোট ছোট হাতে আমার হাত ধরবে!আমি তাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরবো। থ্যাংক ইউ ফর বিং ইন মাই লাইফ!”
রুশি কিছু বললো না, বিনিময়ে হাসলো। আজকাল এই মানুষটির আনন্দ দেখবে নিজেরই আনন্দ হয়, ভালো লাগে। মনে হয় সারাক্ষণ তার হাসিমাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকুক, আচ্ছা ওকি সায়ানের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে?
#চলবে
#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_২৪
অনেকদিন ধরে সামুর পড়াশুনা তেমন একটা হয়নি তাই ভাবলো ওর ফ্রেন্ড সুপ্তির কাছে গিয়ে ওর সাথে গ্রুপ স্টাডি করবে।গাড়ি থেকে নেমে সুপ্তির ফ্লাটে ঢুকলো, ও আরেকটা মেয়ের সাথে এখানে শেয়ারে থাকতো কিন্তু মেয়েটা গ্রামে গিয়েছে তাই আপাদত সুপ্তি একাই আছে। সামু ঘরে ঢুকে দেখে সুপ্তি বইপত্র টেবিলে সাজিয়ে বসে বসে ফোন দেখছে আর হাসছে। সামু নিজের পার্স দিয়ে হুট করে সুপ্তির মাথায় বাড়ি দিলো তারপর পাশে বসে বললো
“কিরে কি দেখে এমন ফাটা বাশের মতো হাসছিস?মাই গড তোর হাসি দেখি আগের থেকেও ভয়ংকর হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে পেত্নীদের ট্রেনিং দিতে পারবি!”
“সেই পেত্নীদের একজন তো তুই, চিন্তা করিস না ফ্রিতে ট্রেন্ডিং দিয়ে দিবো”
জবাবে সামুর সুপ্তির পিঠে কয়েকটা কিল বসালো তারপর মুক বাকিয়ে বললো
“যখন পড়বিই না তাইলে এমন বইগুলোকে সং সাজিয়ে রেখে দিয়েছিস কেনো টেবিলে?গুছিয়ে রাখতে পারিস না?”
সুপ্তি সেদিকে তোয়াক্কা না সামুকে টেনে নিজের মোবাইলের দিকে মুখ করালো তারপর বললো
“আচ্ছা ওইসব বাদ দে তুই এটা দেখ। নিউ কোরিয়ান ড্রামা “ট্রু বিউটি”। ইশ দেখ ছেলেরা কতো কিউট! আই লাভ হিম ইয়ার!”
“এখন একে দেখে ফিদা হয়ে গেছিস? তাহলে তোর সিওজুন ওপ্পার কি হবে?আহারে বেচারাকে বিয়ের আগেই ডিভোর্স দিয়ে দিলি?”
“আরে ধুর, সে তো আমার পার্মানেন্ট ক্রাশ কিন্তু এদের উপর হুট হাট ক্রাশ খাই আরকি। তুই বল এতো সুন্দর ছেলেদের না দেখে থাকা যায়?”
সামু বিড়বিড় করে বললো “লুচু মাইয়া” তারপর ওর সাথে ড্রামা দেখায় মনোযোগ দিলো। এই রমক কেড্রামা পাগলির সাথে কি আর পড়াশোনা হয়? তবুও সামুর খুব হাল্কা লাগছে এখানে এসে, মনে হচ্ছে প্রান খুলে নিশ্বাস নিতে পারছে। ওই বদ্ধ ঘরে থাকতে থাকতে ওর দম যেনো ফুরিয়ে আসছিলো, এখন বেশ ভালো লাগছে।
সামু আর সুপ্তি সেই বিকাল থেকে ড্রামা দেখেই কাটিয়েছে,এখন প্রায় রাত নয়টার মতো বাজে। দুজন বসে বসে “হোটেল দেললুনা” দেখছে, যেহেতু হরর সিন আছে তাই লাইট অফ করে দেখছে যাতে মজা পাওয়া যায়। খুব গুরুত্বপূর্ণ সিন চলছিলো যেখানে সেই মেয়ে ভুতটা হুট করে সামনে আসে ঠিক এমন সময় সামুর সামনে একটা কাগজের টুকরো এসে পড়লো! আকস্মিক ঘটনায় সামুর আর সুপ্তি চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে ফেললো, এমন একটা মুহুর্তে এমন কিছু ঘটবে যেনো কল্পনাও করতে পারেনি। সামু দৌড়ে উঠে গিয়ে লাইট জালিয়ে দিলো তারপর ধীরেধীরে কাগজের টুকরো হাতে উঠালো! তাতে বড় অক্ষরে লিখা
“বারান্দায় আস যলদি!”
সামু যেনো অবাক হলো তারপর সুপ্তির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো
“তোর বয়ফ্রেন্ড ঠিক তোর মতো ভুত! সহজ ভাবে কিছু করতে পারেনা, এভাবে কাগজ ছূড়ে মারার কি ছিলো? ফোন করে বলতে পারতো না!আরেকটু হলে হার্ট এটাক হতো আমার।”
সামুর কথা শুনে সুপ্তি অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো তারপর বললো
“আসতাগফিরুল্লাহ! আমার আবার বয়ফ্রেন্ড আসলো কই থেকে?তোর কি আমারে চিটার মনে হয় যে আমি আমার সিওজুন ওপ্পারে চিট করমু!”
সুপ্তির কথা শুনে সামু চুপ হয়ে গেলো, সুপ্তির বয়ফ্রেন্ড নেই সেটা ও নিজেই জানে কারণ সুপ্তির এংগেজমেন্ট হয়ে আছে। আর যার সাথে হয়েছে তিনি একজন কলেজের প্রফেসর তাই এমন অশালীন কাজ কর্ম তিনি করবে না।কিন্তু ওর নিজেরও তো তেমন কেউ নেই, হঠাৎ কি মনে করে কাগজের লিখাটা আবার দেখলো আর সবকিছু জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। এমন তুই করে ওকে একজনই বলে, সামু রাগে বারান্দার দিকে ছুটলো। মন চাচ্ছে আস্তো পাথর ছুড়ে মারতে ইনানের উপর কিন্তু তাকে দেখেই মনটা শীতল হয়ে গেলো। সোডিয়ামের আলোতে কতোটা স্নিগ্ধ লাগছে তাকে?একটা টিশার্ট আর টাউজার পরা, চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে হয়তো শাওয়ার নিয়েই এখানে এসেছে!
সামু আরো বেশি অবাক হলো যখন দেখলো ইনানের হাতে একটা ইয়া বড় টেডিবিয়ার তাও ব্রাউন কালার। ওর মনে পড়ে গেলো দুবছর আগের কথা, সেদিন ওরা শপিংয়ে গিয়েছিলো আর এইরকম একটা টেডিবিয়ার দেখে ইনানকে কিনে দিতে বলেছিলো কিন্তু ইনান মাথা টোকা মেরে বলেছিলো
“এই বুড়ি বয়সে এতো বড় টেডিবিয়ার দিয়ে কি করবি?নিজেকে কি এখনো গুলুগুলু বাবু ভাবিস!”
সামু রাগে দুঃখে আর কিছু না কিনেই চলে এসেছিলো, তখন ইনানকে নিজের মনের কথা জানায়নি তাই তাদের সম্পর্ক ভালো ছিলো তাই প্রায়ই তাকে বাইরে ঘুরাতে নিয়ে যাওয়ার বায়না ধরতো আর ইনান নিয়ে যেতো। সামু ভাবতেই পারেনি ইনানের এই টেডির কথা মনে থাকবে। সামু চুপ করে তাকিয়ে আছে ইনানের দিকে সেইসময় ইনান ওর হাতের দিকে ইশারা করলো, প্রথমে না বুঝলেও পরে বুঝলো যে ফোন ধরতে বলছে। এই কয়দিন ইনান ফোন দিলেও ও ফোন ধরেনি বরং সাইলেন্ট করে রেখেছিলো। ও দেখতে চেয়েছিলো ইনান ঠিক কতোবার ফোন দিতে পারে, ভেবেছিলো দিতে দিতে বিরক্ত হতে থেমে যাবে কিন্তু ইনান সময়ে সময়ে ফোন দিয়েছে যদিও ও ধরেনি।
কিন্তু এখন কথা বলা দরকার তাই ফোন উঠালো তারপর ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো
“কি সমস্যা! এতো রাতে কি নাটক শুরু করেছেন?”
ইনান সামুর কন্ঠের তোয়াক্কা করেনি বরং মুচকি হেসে বললো
“এই টেডিবিয়ারটার কথা মনে আছে?আজ মার্কেটে দেখে কিনে এনেছি আর এখন নিয়ে আসলাম তোর জন্য”
“আমি কোন বাচ্চা নই যে টেডিবিয়ার দেখলেই মন গলে যাবে, আপনার এই বৃথা চেষ্টা বন্ধ করুন।রাত বিরাতে তামাশা না করে চলে যান প্লিজ।”
বলেই সামু বারান্দার দরজা লাগিয়ে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো
“তুই রুমে গিয়ে সুয়ে পড়, এটা আমাদের জন্য না। রং ঘরে চলে এসেছে”
সুপ্তি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রুমে চলে গেলো, যা ভয় পেয়েছে তাতে আর দেখা সম্ভব নয়। সুপ্তি যেতেই সামু সোফায় বসে বসে প্রহর গুনতে থাকলো আর ঠিক মিনিট দশেক পর বারান্দার দরজায় টোকা পড়লো। সামু মুখে হাসি ফুটে উঠলো, ও জানতো ইনান এতোসহজে চলে যাবে না।চেহারায় কঠোরতা ফুটিয়ে দরজা খুলে বললো
“কি সমস্যা?”
“তুই জানতি আমি আসবো তাই টোকা দেয়ার সাথে সাথেই খুলেছিস তাইনা?”
“কে বলেছে আপনাকে? আমি শুতে যাচ্ছিলাম মাত্র কিন্তু আপনি টোকা দিলেন তাই খুললাম”
“তুই কি করে জানলি আমিই আসবো? অন্যকেউও তো হতে পারতো!”
“এতো রাতে চোরের মতো আপনি ছাড়া আর কে আসবে? এতোটুকু কমনসেন্স আছে আমার”
“সেই আমি ছাড়া আর কারো সাহস আছে নাকি?মেরে হাত পা ভেঙে দিবো বুঝলি! যাইহোক এই নে তোর টেডিবিয়ার”
বলেই কাঁধে ঝুলানো টেডিবিয়ারটা সামুর হাতে দিতে দিতে বললো
“আমি মন গলাতে আসিনি বুঝলি, মনে হলো একবার চেয়েছিলি তাই তাই আবদার পুরণ করি। এটার নাম কি জানিস?’গুলুগুলু বাবু’!”
বলেই ইনান হেসে দিলো, সামু রেগে গিয়ে টেডিবিয়ারটা ফেলেদিলো তারপর বললো
“লাগবে না আমার। আপনি এখন আসতে পারেন”
ইনান কিছু বললো না, হুট করে সামু আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। সামু ছাড়াতে চাইলে আরেকটু শক্ত করে ধরে বললো
“নড়িস না, এভাবে একটু থাকতে দে। আমি তোকে কামড়াবো না বুঝলি!”
ইনান আস্তে সামু ছেড়ে দিয়ে বারান্দার দিকে এগুলো, সামু ইনানকে মেইন দরজা দিয়ে যাওয়ার কথা বলবে ভাবছে কারণ তিনতলা থেকে নামছে যদি কিছু হয়?বলার আগেই ইনান নেমে গেলো অনেকটুকু। হঠাৎ করেই কিছুটা আওয়াজ হলো, নিচে তাকিয়ে দেখে ইনান চিৎ হয়ে পড়ে আছে। সামুর কষ্ট লাগলো আবার হাসিও পেলো। ইনান উঠে চুলে হাত দিয়ে বোকা হেসে হাটা শুরু করলো। নিশ্চিত কোমরে ব্যাথা পেয়েছে!
“ঠিক আছে, কে বলেছিলো তিনতলায় উঠতে? হিরো হওয়ার শখ হয়েছে!”
সামু ঘরে ঢুকে টেডিবিয়ার টা উঠিয়ে নিলো তারপর জড়িয়ে ধরে বললো
“নাম কি রাখলো! গুলুগুলু বাবু,এটা কোন নাম?”
বলেই দিলো এক ঘুষি তারপর নিজেই হেসে দিলো। ও সবসময় এমন একটা সম্পর্কই চেয়েছে যেখানে পাগলামি থাকবে সাথে অনেক ভালোবাসা কিন্তু পায়নি। আর যখন হাল ছেড়ে দিলো তখন সেটা আবার ফিরে এলো! এতো সহজে ইনানকে মেনে নিবে ও, ছোট বেলা থেকে তার পেছনে ঘুরেছে কিন্তু পাত্তা পায়নি তাই এতো সহজে তাকে কি করে মেনে নিবে? আগে নাকানিচোবানি খাওয়াবে তারপর মেনে নেয়ার কথা ভাববে। ইনানকে সামুর মুল্য বুঝতে হবে আর সবচেয়ে বড় কথা রুশিকে ভুলতে হবে। ও জানে এটা এতো সহজ নয় কিন্তু সর্বক্ষণ যদি ওর কথাই ভাবে তাহলে রুশি ভাবির কথা ভাবার টাইম কই পাবে?
সামু খুশি মনে টেডিবিয়ার কোলে জড়িয়ে রুমে চলে এলো। আজকে একটা শান্তির ঘুম হবে ওর,মনের উপর থেকে অনেক বড় বোঝা নেমে গেছে। কেউ আসলে ঠিকই বলে
“যা তোমার তা তোমারই থাকবে, সে যেখানে থাকুক না কেনো দিনশেষে তোমার হবে”
তাই ইনান যদি ওর হয় তবে ওরই থাকবে, অন্যকারো হবে না বরং ওর জন্য অপেক্ষা করবে।আর যদি এতোটুকু সহ্য না হয় তবে ধরে নিবে সে কখনো ওর ছিলোই না।
#চলবে