গাঁইয়া_বউ।পর্ব_৫
তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
অর্না অর্নার বাবা মাকে জবের সু খবর টা জানায়।
আর সবাই মিলে শহরের পথে রওনা দেয়,
নতুন জীবনের সন্ধানে।
অনুর জীবন গড়তে।
আর ওই দিকে অয়ন অপেক্ষায় আছে অর্নাকে স্বাগতম জানাতে।
অর্নার কলেজের বান্ধবী অর্নার জন্য বাসা ঠিক করে রাখে।
অর্না সবাইকে নিয়ে ওই বাসায় উঠে।
সেদিন ঘর গোছাতে গোছাতেই সারাদিন লেগে যায়।
পরের দিন অর্না অয়নের সাথে দেখা করে।
অয়ন ওকে অফিসের সব কিছু বুঝিয়ে দেয়।
আর বলে তুমি চাইলে আজ থেকেই জয়েন করতে পারো।
-থ্যাংক ইউ অয়ন ভাইয়া।
-আবার ভাইয়া?এত ভাইয়া ভাইয়া করতে হবেনাতো।আর এত ধন্যবাদও দিতে হবেনা।
তো কোথায় উঠেছো?
-এইতো সামনেই উঠেছি।
-একাই?
-না,মা বাবা আর অনুকেও নিয়ে এসেছি।
-খুব ভালো করেছো।একদিন অনুর সাথে খেলতে যাবোনে।আর শোনো,অনুকে তাহলে এখানে ভালো একটা স্কুলে ভর্তি করে দিও।
-হ্যাঁ সেটাই ভাবছি।
সেদিনের মত অফিস শেষ করে অর্না বাসায় চলে আসে।
পরের দিন সকালে অর্নাকে ফোন দিয়ে অয়ন বাসার ঠিকানা নিয়ে অর্নাদের বাসায় চলে আসে।
এসেই অনুর সাথে কথা বলে,আর বলে চলো আজ তোমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেবো।
অয়ন আর অর্না গিয়ে অনুকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়।
অর্না অফিস করছে,
অয়নও অর্নাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে।
দুজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
অয়ন এখন মাঝে মাঝে অর্নাকে বাসায় পৌছে দেয়।
যদিও অর্না বারণ করে,তবুও কে শোনে কার কথা।
অয়ন মাঝে মাঝেই অর্নাদের বাসায় যায়।
-আন্টি আমি যে আপনাদের বাসায় মাঝে মাঝে অনুর সাথে খেলা করতে চলে আসি আপনারা তো কিছু মনে করেন না?
-না বাবা,কি মনে করবো।
তুমি এসে ওকে সময় দাও,আমার আর তোমার আংকেলের সাথে গল্প করো,আমাদের বরং ভালোই লাগে।
তুমি এসো মাঝে মাঝে বাবা।কোন সমস্যা নেই।
অয়ন অর্নাদের সবাইকে নিয়ে প্রায়ই ছুটির দিনে ঘুরতে বের হয়।
অর্না রাজি না হলেও,অনু শেষমেস রাজি করিয়েই ফেলে।
-আচ্ছা আন্টি,অর্নাকে আপনারা বিয়ে দেন না কেন?এভাবে কি আর জীবন চলবে?
-কি আর বলবো বাবা,একবার ওর জীবন টা নষ্ট করেছি।তাই আর সাহস পাইনা।তাছাড়া কয়েক বার বলেছি,
ও কোন কথাই বলেনি।তাই ওর উপর ছেড়ে দিয়েছি।
-আচ্ছা।অর্নার আর ওর স্বামীর কি ডিভোর্স হয়ে গেছে?
-হ্যাঁ।তুমি জানোনা?অর্না বলেনি?
-না ডিভোর্স এর কথা কিছু বলেনি।
-অনুর বাবা যখন ২য় বিয়ে করে তখন অর্নাকে ডিভোর্স দেয়।আর অর্নাও পেপারে সই করে দেয়।একটা ঝুলন্ত সম্পর্ক বয়েই বা কি করতো বলো বাবা?
-আচ্ছা আন্টি আপনি কোন চিন্তা করবেন না।অর্নার জীবনে দেখবেন খুব ভালো কেউ একজন আসবে।যে কিনা অর্নার চোখে কোন দিন জল আসতে দিবেনা।
মুখে সব সময় হাসি ফুটিয়ে রাখবে।
-তাই যেন হয় বাবা,তাই যেন হয়।
একদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার সময় হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি।
বৃষ্টি দেখে অর্না দৌড়ে গিয়ে খোলা রাস্তায় ভিজতে শুরু করে।
আর অয়ন বলতে থাকে,
অর্না ঠান্ডা লেগে যাবে,জ্বর এসে যাবে।ভিজোনা বলছি।
-আরে একবার ভিজেই তো দেখুন।
অয়নও অর্নার সাথে ভিজতে থাকে বৃষ্টিতে।
আর হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠে,অর্না দৌড়ে গাড়ীতে উঠতে যেতে থাকে।
আর তখনি অয়ন অর্নার হাত টা টেনে ধরে বলে,
আমার সাথে সারাটা জীবন বৃষ্টিতে ভিজবে?
-কি বলছেন এসব?
-বিয়ে করবে আমায়?
-আপনি কি বলছেন আপনি জানেনতো?
-আমি যা বলছি সজ্ঞানে বলছি।আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।
আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি,বিয়ে যদি করতেই হয় তবে তোমাকেই করবো।
-এ হয়না।কোথায় আপনি আর কোথায় আমি।তাছাড়া আমি একজন ডিভোর্সি।আমার একটা মেয়েও আছে।কিভাবে সম্ভব?
-আমি যদি অনুকে ওর বাবার আদর দেই?তাহলেও কি তুমি অমত করবে?
আমি চাই মেয়েটা বাবার আদর, ভালবাসা পাক।
-হাত টা ছাড়ুন প্লিজ।বাসায় যেতে হবে।
-এই হাত আমি আরেক বার ধরার জন্য ছাড়লাম। আবার যখন ধরবো,কোন দিন ছাড়বোনা।ছাড়ার জন্য ধরবোনা।
-আম্মু আম্মু এসেছো?
-হুম মা এসেছি।আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।পুরো ভিজে গেছো বৃষ্টিতে।
পরের দিন সকালে,
-আম্মু একটা কথা বলি?(অনু)
-বলো মা,
-সবার বাবা আছে আমার বাবা নেই কেন আম্মু?মুসকান,পূজা সবাই ওদের আব্বুকে নিয়ে আসে স্কুলে।ওদের আব্বু এসে ওদের স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে যায়।
কিন্তু আমার আব্বু কেন নাই?
পাশে দাঁড়ানো অনুর নানা নানু কথা গুলো শোনে অনুকে ডেকে নিয়ে যায়।
অর্না আর সেদিন অফিসে যায়না
তাই অয়নই ওদের বাসায় চলে আসে।
-আন্টি আংকেল আমি আপনাদের একটা কথা বলতে চাই।
-হ্যাঁ বলো বাবা।
-আমি অর্নার আর অনুর দায়িত্ব নিতে চাই।অর্নাকে স্ত্রীর মর্যাদা আর অনুকে বাবার স্নেহ দিতে চাই।এখন আপনারা যদি অনুমতি দেন তবে আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আপনাদের বাসায় আসবো।
-আমাদের কোন আপত্তি নেই বাবা।শুনছিস রে অনু।তুই না বলেছিলি তোর বাবা নেই কেন?তোর আব্বু নেই কেন?এই তো তোর বাবা।
-সত্যিই তুমি আমার বাবা?
-হ্যাঁ আম্মু আমিই তোমার বাবা।
-মারে তুই আর অমত করিস না।
দেখ অনু অয়নকে কিভাবে আপন করে নিয়েছে,আর অয়নও কিভাবে অনুকে আপন করে নিয়েছে।
-ঠিকাছে,তোমরা যা ভালো মনে করো।
সবাই অনেক খুশি হয়।
অয়নের মা নেই।বাবাকে আর বোনকে জানায় ও একটা মেয়েকে ভালবাসে।আর ওকেই বিয়ে করতে চায়।
ওর বাবা অসুস্থ তাই দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য গেছেন অয়নকে অফিসের দায়িত্ব দিয়ে।সাথে ওর বোনও গেছে।
অয়নের বাবা আর বোন তো খুশিতে দিশেহারা।যেই ছেলে বলেছে জীবনে বিয়ে করবেনা,সেই ছেলে নিজে বিয়ে করতে চাইছে।
তাই অয়নের বাবা অয়নকে বলে দেয়,তুমি বিয়ের আয়োজন করো আমরা পৌছে যাবো বিয়ের দিন।
অয়নের বাবা ভাবেন,যদি ছেলের মত আবার পালটে যায়,তাই বিয়ের আয়োজন করতে বলে দেয়।
বিয়ের আয়োজন করা হয়।
কিন্তু অয়নের বোন বাবা বিয়ের সময় এসে পৌছতে পারেনা,অর্নার বাসায়।
তাই অয়নকে ওর বাবা বলে দেন তুমি বউ নিয়ে বাসায় চলে এসো আমরা বাসায় অপেক্ষা করছি তোমাদের জন্য।
অনু ওর মায়ের থেকে নানীমার জন্য বেশি পাগল।সেই জন্য অনু ওর নানীমায়ের কাছেই আজ থেকে যায়।আর বলে সকালে নানীমা আর নানাভাইকে নিয়ে তোমাকে আর বাবাকে আনতে যাবো।
অর্না বিদায় নিয়ে অয়নের সাথে ওদের বাসায় চলে যায়।
বাসায় গিয়ে দাঁড়াতেই অয়নের বোন এসে গেইট খোলে।
আর অর্নাকে দেখেই একটা হাসি দেয়।
আর হঠাৎ ই একটা গ্লাস ভাঙার শব্দ হয়।
অর্না তাকায় সেদিকে,আর অয়ন তাকিয়ে দেখে ওর বোন জামাইর হাত থেকে পানির গ্লাস টা ফ্লোরে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
চলবে…