গাঁইয়া_বউ।তৃতীয়_পর্ব।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
ছোট্ট একটা মেয়ে সারাবাড়ী দৌড়াচ্ছে।
~অনু ওই অনু!
থাম থাম।আর কত দৌড়াবো তোর পেছনে বলতো?
~ছোট মানুষ,দৌড়াচ্ছে একটু দৌড়াক না।
~আচ্ছা যাও,তুমিও ওর পেছন পেছন দৌড়াও।আমি আর পারবোনা।আমার রান্না বান্না আছে।
~নানু ভাই আমি আসছি তোমার পিছু পিছু।তোমার নানীমা তো বুড়ি হয়ে গেছে তাই আর পারেনা দৌড়াতে।
~কি আমি বুড়ি হয়ে গেছি?নিজের দিকে তাকান।চুল সাদা হতে শুরু করেছে।
~তাতো একটু আকটু হবেই,দুদিন পর নাতনী বিয়ে দেবো।এখনো কি আমাকে ইয়াং থাকতে বলো?
~আচ্ছা আমি যাই রান্না ঘরে,
তুমি তোমার নাতনী সামলাও।
নানু ভাই নানু ভাই,আস্তে।
পড়ে যাবে তো।
~কিচ্ছু হবেনা আমার নানাভাই।ভুউউউউউম!
~এবার ভুম করে আমার কাছে চলে আসো তো।
~ভুউউউউউউম!আমি এসে গেছি নানাভাই।
~এইতো আমার নানাভাই এসে গেছে।এবার চলো ঘরে যাই।নানীমা নইলে বকবে।
~আচ্ছা চলো।
অনু!
অপূর্ব আর অর্নার মেয়ে।
ওর এখন ৬ বছর বয়স।
দেখতে ঠিক মায়ের মত হয়েছে।সেই চোখ,সেই নাক,সেই চুল।শুধু মায়ের মত শান্ত হয়নি।হয়েছে একদম দুরন্ত।
৬ বছর বয়সেই সে পুরো বাড়ী মাথায় করে রাখে।
নানা নানীকে একটু শান্তিমত বসতেও দেয়না।
ঘুমানোর মুহূর্ত ছাড়া সারাক্ষণ সারা বাড়ী চঞ্চলতায় মাতিয়ে রাখে।
এ বছরই স্কুলে ভর্তি হয়েছে অনু।
স্কুলেও সে দূরন্ত।মায়ের ঠিক উলটো।
দাদা দাদু বলেছেন ওর বাবাও নাকি ছোট বেলায় এমন দুরন্ত ছিলো।হয়তো বাবার দুরন্তপনাটা পেয়েছে।
~তুই কি একটুও চুপ করে বসতে পারিসনা?
~তুই কি একটুও চুপ করে বসতে পারিস না?
~দেখো আবার মুখে মুখে তর্ক করে,ভেঙচি কাটে।
~তর্ক কি নানাভাই?নানু কি বলে?
~তর্ক হচ্ছে কথার অপর পিঠে আবার একই কথা বলা।যেটা বড় দের সাথে সাথে বলতে হয়না,বড় দের মুখে মুখে বলতে হয়না।তুমি গুড গার্ল না?
~ইয়েস!
~এইতো আমার লক্ষী নানুভাই।আর কখনো নানীমার মুখে মুখে ভেঙচি কাটবেনা ঠিকাছে?
~আচ্ছা।
নানুভাই,
কি নানু ভাই?
~দেখো কারা এসেছেন।
~ইয়াহু আমার দাদু ভাই আর দাদীমা এসেছে।
~কেমন আছো দাদু ভাই?
~আমি ভালো আছি,তোমরা কেমন আছো?আমাকেতো ভুলেই গেছো।দেখতেই আসোনা।
~না দাদুমনি,ভুলিনি।তোমার দাদাভাই একটু অসুস্থ ছিলেন।তাই আসতে পারিনি।
~দাদা দাদুকে তোমার লেখা দেখাও নানুভাই।
~এই দেখো দাদাভাই,এই দেখো দাদু ভাই,আমি লিখেছি।
~বাহ আমার দাদু মনি কত সুন্দর করে লিখেছে।
~আমি কিন্তু পড়তেও পারি।
~পড়ে শোনাও তো একটু।
~অ আ ই ঈ, A B C D…
~বাহ্ অনেক সুন্দর হয়েছে।
এই দেখো আমরা তোমার জন্য স্কুল ব্যাগ,আর কত কিছু নিয়ে এসেছি।
~থ্যাংক ইউ।
~অনু খুব জ্বালায় আপনাদের তাইনা?
~আরে না!ও আছে বলেই আমরা ভালো আছি।ওর মুখ দেখেইতো বেঁচে আছি।
তারপর বলুন আপনারা কেমন আছেন?
~এইতো ভালো আছি।
~অপূর্ব কেমন আছে?
~অপূর্ব….
হ্যাঁ আছে ভালোই।
অপূর্ব অর্নাকে মেনে নিতে পারেনি আর।ওর কখনোই মনে হয়নি অর্না ওর যোগ্য।
ওর ডেলিভারির দিনও অপূর্ব এসে পৌছায়নি।
অপূর্ব ওর অফিসের মালিকের মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে।
খুব ভালো আছে ওরা।অপূর্বের বউ মনা দেখতে খুবই সুন্দরী।
স্মার্ট,স্টাইলিশ,
অপূর্বের যেমনটা পছন্দ।
অপূর্বের বউ টপস আর প্লাজো পরে,
যা অপূর্বের খুবই পছন্দ।
অর্নাতো ছিলো গাঁইয়া বউ,
যে কিনা সারাক্ষণ শাড়ী পরেই থাকতো।
খোঁপায় ফুল।
এমনটা কোন ছেলেরই বা পছন্দ হতে পারে।
আর মনার চুল কি সুন্দর স্ট্রেট করা,কালার করা।
দেখলেই শান্তি।
মনা স্টাইলিশ হলেও ওর মন টা ভালো।কখনোই কোন মানুষকে ও ছোট করে দেখেনা।
অপূর্বের বাবা মাকেও মনা খুব সম্মান করে।
প্রায়ই বলে চলে আসুন আমাদের বাসায়।
খালি বাড়ীতে কি করবেন।
কিন্তু অপূর্বের মা বাবা যান না।
কারণ অপূর্ব ওর শশুড় বাড়ীতে থাকে।
যেটা ওর বাবা মায়ের একদমই পছন্দ না।
অপূর্বের কাছে জীবন মানেই হৈহোল্লা,
মাস্তি,ঘুরাঘুরি।ইঞ্জয়।
ওয়াইফকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঘুরা,
লং ড্রাইভে যাওয়া।
খিদে পেলে বাইরে থেকে অর্ডার করে কিনে খাওয়া।
শপিং,আড্ডা,ফান।
এভাবেই চলছে অপূর্ব আর মনার জীবন।
দুপুরের খাবার খেয়ে অনু আর অনুর নানা নানু,দাদা দাদু সবাই ঘুরতে বের হয়।
সবাই আজ ঘুরবে।
অনুকে ওর দাদা দাদু,নানা নানু খুব ভালবাসে।
অপূর্বর আদর ভালবাসা না পেলেও অনু ওর দাদা দাদুর যথেষ্ট আদর পেয়েছে।
অনুর নানা নানুর সাথেও ওর দাদা দাদুর খুব ভালো সম্পর্ক।
অনু আর সবাই পার্কে ঘুরছে,
হঠাৎ করেই পার্কে অপূর্বের সাথে দেখা।
অপূর্বের মা সবাইকে দূরে দাঁড় করিয়ে রেখে অপূর্বের সাথে গিয়ে কথা বলে।
~কিরে তুই এখানে?
~হ্যাঁ মনাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি।
~তুমিও ঘুরতে এসেছো?
~হ্যাঁ তোর বাবা আর অর্নার মা বাবার সাথে।
~কিছু খাবে?
~না,বউ মাকে নিয়ে একদিন সময় করে বাসায় আসিস।
~আচ্ছা আসবো,তোমরাও এসো।
মনা এখনো আসছেনা কেন!
~আরে মা,আপনি এখানে?কেমন আছেন?
~এইতো মা!ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
~এইতো আলহামদুলিল্লাহ্।
~এত দেরি হলো কেন?
~আর বলোনা,আমিও আইসক্রিম কিনতে গেছি,আর একটা পিচ্চি মেয়েও আইসক্রিম কিনতে গেছে।কত যে কিউট মেয়েটা।
আমি আমাকে আইসক্রিম তাড়াতাড়ি দিতে বলেছি বলে,আমাকে বলে কি।
তুমি তো বড়,তুমি আবার আইসক্রিমও খাও?
মেয়েটাকে দেখেই কোলে তুলে নিলাম।
ওর সাথে কথা বললাম একটু তাই দেরি হয়ে গেলো।
~ও আচ্ছা।
~বউ মা আমি তাহলে আসি।তোমার বাবা ওই দিকে অপেক্ষা করছে।
বাসায় এসো একদিন সময় করে অপূর্বকে নিয়ে।
~আসবো মা।আপনিও বাবাকে নিয়ে আসবেন।
~আচ্ছা আসি।
~দাদু ভাই দাদু ভাই কোথায় গিয়েছিলে তুমি?তুমি জানো আমি আর নানীমা তোমাকে রেখে এখন আইসক্রিম খেয়ে নিয়েছি।
~একা একাই খেলে।আমি রাগ করেছি।
একা একা খাইনিতো,নানীমাকেও দিয়েছি হি হি।
~তোমার দাদাভাই আর নানা ভাই কোথায়?
~উনারা একটু ওই দিকে হাঁটছেন।
আমি আর নানীমা আইসক্রিম কিনতে গিয়েছিলাম।
~ওই তো তোমার নানাভাই আর দাদা ভাই,চলো যাই।
তারপর তারা সবাই মিলে ঘুরে বাসায় চলে যান।অনুর দাদা দাদুও ওখান থেকেই উনাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান।
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অনু ওর নানীমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
ওর নানাভাই ওর আঙুল টেনে দিচ্ছে।
~আজ কত মজা হলো তাইনা নানীমা?
~হ্যাঁ খুব মজা হয়েছে।
~আজ যদি আমার আম্মু আমাদের সাথে থাকতো কতই না ভালো লাগতো তাইনা নানা ভাই?আমরা আরো বেশি বেশি মজা করতে পারতাম তাইনা?
অনুর কথা শুনে অনুর নানা ভাই আর অনুর নানীমা চুপ হয়ে গেলেন,
আর অতল এক ভাবনার সাগরে হারিয়ে গেলেন.
চলবে…