#ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
গল্পের নামঃপ্রয়োজন পর্বঃ ০২
লেখায়ঃ তানিয়া তানু
___আপা আমার না একটা প্রেমিক প্রয়োজন। এনে দিতে পারবি?
ওর এই কথা শুনে আমার কী বলা উচিত? তা আমি ভেবে পাচ্ছি না। এইটুকু মেয়ের প্রেমিক কিসের জন্য প্রয়োজন হতে পারে? তা জানার জন্য কৌতুহলী হয়ে বললাম,
__”বেবলি, তোর হঠাৎ বাজারের আলু-পটল কেনার প্রয়োজন হলো কেন?”
__”আপা, আমি কখন তোর কাছে আলু-পটল চাইলাম। আমি তো প্রেমিক চেয়েছি।”
__কিন্তু বোন, তুই যেভাবে আমার কাছে চাইছিলি সেটা দেখে যে কেউ বলবে কোনো জিনিস চাইছিস। তা হঠাৎ করে এই প্রয়োজন কেন তোর?
___পড়শী আন্টির মেয়ে শানু আপার না আছে।
___তো
__জানিস, শানু আপা লুকিয়ে লুকিয়ে কী সুন্দর করে আস্তে আস্তে কথা বলে! কন্ঠটা কি মধুর! জিজ্ঞেস করায় বলেছিল ও নাকি প্রেমিকের সাথে কথা বলে। দেখ আপা, তুই তো জানিস, আমি ফোনে সুন্দর করে নরম গলায় কথা বলতে পারি না। গলাটা কেমন জানি মোটা। একটা প্রেমিক থাকলে নিশ্চয় শানু আপার মতো পারবো। দিবি এনে।
হায়! এই মেয়ে বলে কী! কন্ঠ নরম করার জন্য প্রেমিক প্রয়োজন।
__এই আপা বল না এনে দিবি।”ওর ধাক্কায় ফিরে এলাম বাস্তবে। ওর থেকে রেহাই পাবার জন্য বললাম,
__এমাসের বেতনটা পেয়েই আমার মিষ্টি বোনটার জন্য একটা নয় দুইটা প্রেমিক আনবো। এবার খুশি!
ওর সারা মুখে হাসির ঝলক যেন উপচে পড়ছে। হাসিমুখ নিয়ে দুহাত মেলে নাচতে নাচতে বললো,
_আহা! কী আনন্দ আকাশে বাতাসে! আমার আপা আমার জন্য দুইটা প্রেমিক আনবে।”
__”বেবলি একটা” বলেই ঢুকে পড়লাম বাসায়।মায়ের রুম থেকে সেলাই মেশিনের শব্দ হচ্ছে। মা এখন কাপড় সেলাইতে ব্যস্ত। আমি রুমে ঢুকেই ব্যাগটা সেরে চলে গেলাম কলতলায়। হাত-মুখে পানির ঝাপটা দিতেই শুনতে পেলাম মা আবারো ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে। মায়ের এই একটা বদ অভ্যাস। কষ্ট হলেই চিল্লিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেন। রুমের কাছে গিয়েই শুনতে পেলাম। বলছেন,
___আমার হয়েছে মরন জ্বালা। কবে যে মরবো তাও ঠিক নেই। প্রতিদিনই বলি এই দুনিয়া থেকে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাও। কিন্তু না! তিনি আমাকে না নিয়ে পড়শীর সেই জোয়ান পোলাটারে নিয়ে গেলেন। আরে আল্লাহ, তোমার যদি মরা মানুষ প্রয়োজন হয় তবে আমারে নিলেই তো হতো। কেন বুড়ির একমাত্র পোলাটারে নিলে। বুড়িকে দেখলেই কষ্ট হয়। একমুঠো ভাতের জন্য আজ মানুষের দোরগোড়ায় সারাদিন ঘোরে। এক সময় এই বুড়িই ভিক্ষা দিত। আজ কি হল! তোমার কাছ থেকেই শিখতে হয় কীভাবে মরার উপরে খাড়ার ঘা দিতে হয়?
__আহ! বিবি, এবার থামো তো। একটু ধৈর্য ধরো।
__কষ্টটাতো তুমি করো না আমি করি। সারাদিন তো হুকা হাতে নিয়ে বসে থাকো। আর আমায় দেখো আমি মেশিন নিয়ে থাকি। কার কষ্ট বেশি হবে তোমার না আমার? কিন্তু তুমি আমার কষ্টটা বুঝলে না। প্রয়োজনেই ব্যবহার করে গেলে।
বাবার আর কোনো কথা শুনা গেল না। মা আঁচলে চোখ মুছে আবারো বলা শুরু করতে চাইলেই আমি রুমে ঢুকে পড়ি। আমায় দেখে মা। বললেন,
__তুই কখন এলি?
__এইমাত্র
__খেয়েছিস
__না একটু পড় খাবো।
__ একটু পড় কেন? সেই যে সকালে ভাত খেয়েছিলি আর কোনো কিছু খেয়েছিস?
__ছাত্রীর মা চা-বিস্কুট দিয়েছিলো।
__ও ফকিন্নি, কঞ্জুষ মহিলা তরে কী দিব? নিজেই তো হাত পেতে আনে।
_উফ, মা। এইসব বলো না তো। আচ্ছা তোমার কী হয়েছে আমায় বলো। এভাবে চিৎকার চেঁচামিচি করছিলে কেন?
__ কী আর বলবো বল? আত্মীয় হলে একটা কথা হতো। কিন্তু ওরা আমার পড়শী। তাই বলে এক গাদা কাপড় এনে দিয়ে সেলাই করতে চায় বিনে পয়সায়। পড়শি বলেই শার্টের বোতাম, জামা ছেঁড়া বিনে পয়সায় সেলাই করা যায়। তাই বলে পুরো থ্রী পিস বিনা পয়সা। টাকা চাইলেই নিজের একশ একটা প্রয়োজন দেখায়। কেন টাকা কি আমার প্রয়োজন হয় না। ওদের কী বুদ্ধিশুদ্ধি হয়নি!
ওরা এমনই। তাই মাকে সান্ত্বনা দিতে বললাম,
__এদের কথা ভেবে কী হবে? ওদের মাথায় ঘিলু কম। তুমি ওসব ভেবো না। হঠাৎ করে এইভাবে অসময়ে এর জন্যই চেঁচামেচি করছিলে বুঝি।
__এর জন্য নয়রে। দেখ না। ভুলে উল্টোভাবে সেলাই করে ফেলেছি। এতক্ষণ ধরে সেলাই খুলেই যাচ্ছি। কিন্তু শেষই হচ্ছে না। ইশ, আমার যদি একটা ছেলে থাকতো। তবে আমায় এতো কষ্ট করতে হতো না। ছেলেই সংসারটা চালাতো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
বাগ্নী পাড়ায় এক মা ছেলেকে টাকা দিতে না পারায় খুন হয়েছে ছেলের হাতে। ছেলে এখন পলাতক।
মা ছেলে মাকে কীভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দেখো।কী বিচ্ছিরি চেহেরা হয়েছে! নাও দেখো।
এই বলেই বেবলি মায়ের হাতে খবরের কাগজটা বাড়িয়ে দিল। বাবাও বললনে, বিবি, মায়ের অবস্থাটা দেখো। মা এই খুন-টুন দেখতে পারেন না। তিনি খুব ভয় পান। তাই মুখ ফ্যাকাসে করে আপনমনে চললেন রান্নাঘরের দিকে।
__এই স্মৃতি এইটা আট বছর আগের সেই কাগজটা তাই না? বাবা বেবলিকে বলল।
__হ্যাঁ বাবা।
__ছেলের কথা বললেই আমিও এই কাগজটা পড়ে শুনাতাম। কী বেকুব দেখ! কাগজটা যে সেটাই চিনলো না।
বেবলি হাসি দিয়েই চলে গেল বাইরে। মেশিনের উপর পড়ে থাকা কামিজটা নিয়ে বসে পড়লাম ভুল সেলাইগুলো খুলতে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে চারটা বাজে। আল্লাই জানে এই সেলাই খুলতে কতক্ষণ সময় লাগবে?
বেবলি দেখ তো দরজায় কে কড়া নাড়ছে। এই অসময়ে আবার কে এলো? মায়ের কথা শুনেই আমিও ভাবতে লাগলাম কে এলো? কোনো আত্মীয় নেই আমাদের। তাই তাদের আসাও কোনো উপায় নেই। পড়শিরা খুব বেশী আসে না। তবে কী কাপড়ের নিতে পড়শি এলো?
আপা তোমার,,,,,,
চলবে„„„„
গত পর্বের লিংকঃ https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/944213982675988/?app=fbl