#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-৩১
কোন সুগন্ধি পবিত্র, আতর নাকি আগরবাতির! আতর গায়ে মেখে নিজেকে পবিত্র পবিত্র অনুভব করা যায় কি! কিন্তু মৃত দেহকে শেষ সজ্জায় আতর লাগায় নাকি আগরবাতি জ্বালিয়ে দেয় মাথার কাছে? অর্ণব খুব দ্বিধায় জড়িয়ে আজব এক কাজ করেছিল বিয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে। কোথা থেকে আগরবাতি বের করে জ্বালিয়ে দিলো তার শোবার ঘরটাতে। সাদা শার্টটা গায়ে দিয়ে একটা আগরবাতি নিজের সারা গায়ের আশপাশটা ঘুরিয়ে নিলো। বৃষ্টিদের বাড়ি থেকে চমৎকার শেরওয়ানি, পাগড়ি আর রোলেক্সের ঘড়ি এসেছে কাল। খালুজান নিশ্চয়ই নিজের দাপট প্রকাশের জন্যই বেছে বেছে ব্রান্ডেড কালেকশনগুলো পাঠিয়েছে। সেগুলোর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে সে আলমারি থেকে বের করেছিলো মনোহারিণীর দেয়া সেই সস্তার ব্রেসলেটটা। খুব যত্ন করে হাতে পরে নিলো সেটা। ঘর থেকে বেরিয়ে অর্নিকে ডেকে বলল, বাসর সাজাবি বলে কি কোন প্ল্যান করেছিস? তার প্রশ্নে বিষ্ময়ে তাকিয়ে ছিল অর্নি কিছুক্ষণ। অর্ণব নিজেই আবার বলল, ওসব তোকে করতে হবে না বাড়ি ফিরে আমি নিজেই সব করব।
মুখে এমনটা বললেও সে যেন ভরসা রাখতে পারলো না কারো ওপর তাই বাড়ি থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে নিজের ঘরটা এই প্রথমবার লক করে বের হলো। তারা যখন বৃষ্টিদের বাড়ি পৌছুলো অর্নি তখন নিজের জোর জুলুম করে নিজের কান্না আটকে রেখেছিল। বাশার শেখ অর্ণবকে দেখে অপ্রসন্ন ভাব নিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন৷ এর মূল কারণ অবশ্য অর্ণবের গায়ের পরিচ্ছদ। শেরওয়ানি গায়ে বর বেশে উপস্থিত না হয়ে বরং সাধারণ মেহমান সেজে আসাটা একদমই পছন্দ হয়নি উনার তবুও মুখে কিছু বলেননি। মনে মনে হাসছেন এই ভেবে, এখনই ভাব দেখাও ছোড়া এরপর তোমার কলকব্জা সব নড়বে আমার ইশারাতেই।
_______
আজান হয়েছে অনেকক্ষণ হলো। জুমার নামাজটা আদায় করা দরকার এদিকে নুপুরের বাবার অবস্থাও খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না। ঘুমের ইনজেকশানের প্রভাবে অচেতন আছেন, স্যালাইন চলছে। নুপুরের সৎ মা ছেলেসহ একটু আগে হাসপাতালে পৌঁছুতেই নুপুরের আপন মামা চলে গেল এখান থেকে। রিদওয়ানও ভাবছে এই মহিলাকে একা ছেড়ে গেলে তিনি সব সামলাতে পারবেন তো! বাধ্য হয়েই হাসপাতালের মসজিদ ঘরে নামাজ আদায় করে এলো। নামাজের পর সে অর্নিকে কল দেবে বল ফোনটা হাতে নিতেই মনে পড়লো মোবাইলটা নুপুরের কাছে ছিল যা গত দু দিন একভাগ বাজলেও ওপাশ থেকে রিসিভ হয়নি৷ নিজেই অনেকরকম হিসেব কষেছে রিদওয়ান এই একটা ব্যাপার নিয়ে, নুপুর যদি কিডন্যাপ হয় তবে কিডন্যাপাররা ফোনটার কিছু একটা করে ফেলতো৷ আর যদি আল্লাহ করুন, নুপুর সুইসাইডাল কোন কিছু করে ফোনটাকে কোথাও ফেলে দেয় তবুও কেউ কি দু দিনে পেতো না সেটা? এমন আরও অনেক যুক্তি সাজিয়ে ভাবলেও কোন উত্তর মিলাতে পারেনি৷ বরং পুলিশ জানিয়েছে ফোনটার লোকেশন একবার কুমিল্লা আরেকবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার দিকে পাওয়া গেছে৷ আজ সকালে আবার লোকেশন মিলল নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকায়৷ কৌতূহল নিয়ে আবারও কল করলো রিদওয়ান সে নম্বরে আর বরাবরের মতোই হতাশ হলো। আবার এসে বসলো নুপুরের বাবার কেবিনে। মহিলার দিকে একপলক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনার কোন কাছের আত্মীয়স্বজন আছে যাকে আপনাদের সাথে রাখা যাবে!
ভদ্রমহিলা বোধহয় বুঝলেন না রিদওয়ানের কথা কেমন আজব দৃষ্টিতে তাকালেন।
– আমার বোনের বিয়ে আজ; একটু বাড়িতে যাওয়া দরকার। আমি ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ফিরে আসব ততক্ষণ এখানে আপনাদের কাছে কাউকে ডেকে নিলে বোধহয় ভাল হয়।
রিদওয়ানের কথা শেষ হতেই মহিলা জানালেন তার এক ভাই আসবে হয়ত পথে দেরি হচ্ছে। রিদওয়ান আশ্বস্ত হয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়েও আবার ফিরে এলো খাবার নিয়ে। দুপুরের মুহুর্ত পেটে খিদে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক৷ সে নিজেও ক্ষুধার্ত তাই তিনজনের জন্য খাবার নিয়ে এলো। তাদের সাথে বসেই খাবার খেয়ে বের হলো রিদওয়ান। জীবন কতোটা ভয়ংকর আজ সে যেন প্রতি সেকেন্ডে টের পাচ্ছে। মাথার ভেতর সুক্ষ্ম এক যন্ত্রণা শুঁয়োপোকার মত কিটকিট করে কামড়ে যাচ্ছে অনবরত। আচ্ছা সেদিন অর্নিতার যদি শিবলী ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়ে যেত তবে কি সে মরে যেত! মানুষ আপনজনের মৃত্যুর শোক সহজেই কাটিয়ে নিতে কিন্তু বিচ্ছেদের নয়৷ অর্নিতার শুধুমাত্র এনগেজমেন্টের কারণেই রিদওয়ান অর্ধমৃত জীবন কাটাচ্ছিলো আর আজ অর্ণব নুপুরকে ছেড়ে বৃষ্টিকে বিয়ে করছে তার কেমন লাগছে? অর্ণব তো ভালোবেসে নুপুরের ভালোবাসা দেখে কিন্তু নুপুর তো ভালোবেসেছে আগে৷ তার যন্ত্রণা লাগব হওয়ার মত নয় তাই বোধহয় মেয়েটা হারিয়ে গেছে মহাকালের অতল গহ্বরে নইলে এখনো কেন খোঁজ মিলছে না তার! পুরুষ মানুষ কাঁদে না বলেই অর্ণবের অশ্রু অদৃশ্য অথচ রিদওয়ানের এখন কাঁদতে ইচ্ছে করছে হাত পা ছড়িয়ে। একদিকে তার আদরের বোন, একদিকে বন্ধুর মত ভাই অন্যদিকে ওই অসহায় মেয়েটা যার জন্য অসীম স্নেহ আছে রিদওয়ানের অন্তরে৷ সে একটা সিএনজি নিয়ে চলে এলো বাড়িতে। বাড়ির সদর দরজা থেকেই কেউ না কেউ চেপে ধরছে, কোথায় ছিল সে দু দিন ধরে। শ্বশুরবাড়ি থাকলেও যথাসময়ে কেন আসেনি তার বউ আর সমুন্ধি সাহেব তো সেই কখন বরযাত্রী হয়ে পৌঁছে গেছে। কারোই কথার জবাব না দিয়ে সে বড় আলগোছে ঢুকে গেছে নিজের ঘরে। কারও কাছে শুনতে পেয়ে অর্নিতা এসে ঢুকেছে ঘরে। মেয়েটা কয়েক সেকেন্ড মাত্র তাকিয়ে থেকে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো রিদওয়ানের বুকে। কান্নারা বাঁধ ভাঙলো অচিরেই সেই সাথে চলল রিদওয়ানের ভারী নিঃশ্বাস। মিনিট খানেক কান্না চলার পরই রিদওয়ানের মনে হলো ঘরের দরজাটা খোলা। কান্নার শব্দ বাইরে কারো কানে গেলে হুড়মুড় করে সব এসে জড়ো হবে। এক হাতে অর্নিকে বুক থেকে সরিয়ে আগে গেল দরজা বন্ধ করতে। দরজা লাগিয়ে অর্নিকে নিয়ে বসলো বিছানায়।
-আমাদের সময় খুব খারাপ যাচ্ছে অর্নি তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। বৃষ্টি, অর্ণব, নুপুর তিনজনই আমাদের আপন খুব আপন। আমরা চাই তিন জনই খুব ভালো থাকুক কিন্তু পরিস্থিতি ভালো না আমাদের তাই না! তুই নিজেকে সামলাতে না পারলে অর্ণবকে কে সামলাবে বল তো?
রিদওয়ানের কথা শুনেই মাথা তুলে তাকালো অর্নি। সে বুঝতে পারলো না ভাইয়াকে সামলানোর কথা কেন আসছে? রিদওয়ান বোঝানোর জন্য আবার বলল, “আজ দু দিন পেরিয়ে তিন দিন চলছে। একটা মানুষ নিজে থেকে না হারালে কি এতোটা গায়েব থাকতে পারে! যদি কিডন্যাপ হতো তবে তার বাবার কাছে নিশ্চিয়ই কল আসতো। যদি রেপড অর সামথিং….. বলতে গিয়ে থেমে গেল রিদওয়ান।
” বুঝতেই পারছিস তেমন কিছু হলে নিশ্চয়ই মৃত অথবা জীবিত কোন অবস্থাতে পাওয়া যেত।”
অর্নিতার কান্নার হিড়িক বাড়লো এবার। বাইরে থেকে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। সম্ভবত কাজী সাহেব এসে গেছেন। অর্নিতাকে অনেক বুঝিয়ে বাথরুমে নিয়ে নিজেই মুখ হাত ধোয়ালো সে। ভালো করে ফোলা চোখ, মুখ মুছে বের হয়ে গেল সে ঘর থেকে। রিদওয়ান পকেট থেকে ফোনটা বের করে খাটের ওপর ফেলল। শার্ট প্যান্ট বদলে বাথরুমে ঢুকে গেল গোসলের জন্য। লম্বা একটা গোসল দরকার মন-মস্তিষ্ক দুয়েরই শীতলার জন্য। কাজী সাহেব প্রথমেই গেলেন কনের স্টেজে। বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে গেছে শুনতে পেলো অর্ণব। সে বসেছে নিচতলার বসার ঘরে। ছাদে বরের জন্য স্টেজ করা হলেও সে একটিবারও যায়নি সেখানে। এখন আশপাশে তাকিয়ে রিদওয়ানকে খুঁজতে লাগলো।
_______
বাড়ির একমাত্র মেয়ে আর নিজের একটিমাত্র বোনের বিয়ে। বড় ভাই লাপাত্তা, বাবা বিশেষ রকম ব্যস্ত তাঁর ব্যবসায় সম্পৃক্ত গণ্যমান্যদের আপ্যায়নে। তাই বাধ্য হয়েই বিয়ের গোটা আয়োজনটাকে এক হাতে সামলাচ্ছে রিমন। অমতের এই আয়োজনে সে নিজের প্রেয়সীনিকেও আমন্ত্রণ করেনি। তবুও গতকাল থেকে একটা বিচ্ছিরি অনিভূতি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। ময়না খালামনি এসেছেন তার সন্তানদের নিয়ে। ওনার মেয়েটা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে বয়স কত হবে! পনেরো,ষোলো? এমনই হবে হয়ত রিমনের মনে নেই। বলা যায়, খালামনির সাথে সম্পর্ক আলগা করায় তার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানদের নিয়ে তেমন মাথাও ঘামায়নি৷ অর্ণব ভাই আর অর্নিতাই তাদের প্রিয়’র তালিকায় সমাদৃত। কিন্তু কাল থেকে ময়না খালামনির সেই পনেরো কি ষোড়শী পুঁচকে মেয়েটা তার নাকে দম করে রেখেছে। সন্ধ্যায় হলুদের জন্য সেজেগুজে এসেই তার সামনে দাঁড়ালো, “রিমন ভাইয়া আপনি কি রঙের পাঞ্জাবী পরবেন?”
দু হাতে গোলাপের এক ডালি চেপে মাথায় তুলছিলো রিমন৷ নিচতলা থেকে ছাদে উঠতে হবে এসব নিয়ে। কাজের লোকগুলো একেকটা যাচ্ছেতাই, সেজন্য নিজেরই দেখেশুনে করতে হচ্ছে সব। এরই মাঝে খালামনির মেয়ে তামিমা এসে এমন প্রশ্ন করায় মেজাজ চড়লো। সে জবাব না দিয়ে চলে যাচ্ছিলো তখনি মেয়েটি আবারও প্রশ্ন করল।
– তা দিয়ে তোর… তোমার কি কাজ?
মেয়েটিকে তুই বলতে একটু আজব লাগল। জীবনে এই বোধহয় প্রথমবার তারা পরিচিতের মত এক বাড়িতে তাই সম্মোধন বদলে নিলো। মেয়েটি নিজের হলুদ আর গোলাপির কম্বিনেশনের ঘাগড়াটার দিকে তাকিয়ে বলল, “হলুদ পাঞ্জাবী অথবা পিংকিশ পরবেন কেমন!”
– পাঞ্জাবীই পরব না।
বিরক্তির সাথে কথাটা বলেই রিমন সিঁড়ির দিকে এগোলো। মেয়েটি আবার বলল, “আচ্ছা তবে কি টি শার্টেই থাকবেন?”
-আমি টি শার্ট পরি আর উদোম থাকি তাতে তোমার কি?
-বাড়ি ভর্তি অত মানুষের সামনে উদোম!
চোখ দুটি গোল গোল করে তাকায় তামিমা পরমুহূর্তেই চোখ বুঁজে নেয় যেন সে এখনই উদোম, উলঙ্গ দেখে ফেলেছে রিমনকে।
– আচ্ছা, একটা হলুদ টি শার্ট পরবেন প্লিজ। আমি ফটো তুলব আপনার সাথে।”
-কেন! নিজের ভাইবোনের মত কি এখন তোমারও এ বাড়িতে বিয়ে করার শখ জাগছে? পুঁচকে একটা মেয়ে নির্লজ্জের মত যখন তখন পিছু লাগছো কেন, দূর হও সামনে থেকে।
এই ছিল রিমনের কালকের সমাচার কিন্তু আজও মেয়েটা ওভাবেই পেছনে লেগে আছে। ভরা মজলিশে প্রত্যেকেই ব্যস্ত কোন না কোনভাবে আর এই মেয়ে করছে বাদড়ামি। কখনো তাকে ফোকাস করে নিজেরই ছবি তুলছে কখনো গোলাপ হাতে এসে বলছে খোঁপায় ফুলটা গুঁজে দিন তো! মাত্রাতিরিক্ত মেজাজ খারাপ হয়ে গেল এবার রিমনের। চারপাশে উপস্থিত সকলের দিকে তাকিয়ে বুঝলো মেহমানরা কিছু একটা ভেবে নিচ্ছে তাদের সম্পর্কে। রাগে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল, সামনে থেকে যাও নইলে কপালে শনি আছে মনে রেখো।
মেয়েটি শোনেনি সে কথা রিমনের পিছন পিছনই ঘুরছিলো। এক পর্যায়ে মেয়েটির হাত টেনে ধরে নিয়ে গেল মায়ের ঘরে। সেখানেহ বসা ছিলো মা আর ছোট খালামনি৷ মেজো খালামনি অবশ্য বিয়ের দাওয়াতটাই গ্রহণ করেননি তাই মায়ের ঘরে এক মেজো খালা ছাড়া তাদের সকল ভাইবোনই উপস্থিত ছিলেন৷ তামিমার হাতে ধরে রিমনকে আসতে দেখে প্রত্যেকেই অবাক হলো। সবাইকে অবাকের শেষ সীমায় পৌছে দিয়ে রিমন এবার ময়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে বসলো, ” চার সন্তানের মাঝে মাত্র দুটিকে লালন-পালন করে বড় করেছেন তাও সঠিক শিক্ষাটা দিতে পারেননি খালামনি। এর চেয়েও ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত তো আপনার বাপ-মা ছাড়া সন্তান দুটিই হয়েছে। কতোটা নির্লজ্জ হলে একটা মেয়ে নিষেধ করা সত্ত্বেও বয়সে অনেক সিনিয়র একজনের পিছু লেগে থাকে তাও আবার এমন ভরা মজলিশে! সহজ বাংলা কি এর মাথায় ঢোকে না?”
প্রতিটি শব্দে অপমান, প্রতি অক্ষরেই যেন ক্ষোভ আর ধিক্কার মিশিয়ে দিয়েছে রিমন৷ এক ঘর ভর্তি আপনজনের মাঝে বয়সে বড় একজনকে এমন আচরণ দেয়াটাও অভদ্রতা বলেই মানে রিমন তবুও কেমন যেন মেজাজ হারিয়ে বলে বসলো এসব কথা। রায়না বাক্যহারা হয়ে গেলেন নিজের ছেলের এই কথাগুলো শুনে। কিন্তু তাকে ঠিক কি বলা যায় এখন কারোই যেন বোধগম্য হচ্ছিলো না। তখনই আবার শোনা গেল বাইরে সবাই বলাবলি করছে, কাজী এসে গেছে মুরব্বিরা সবাই কোথায়?
__________
হাঁসফাঁস লাগছে ভেতরে ভেতরে। জীবনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে সে শুধুই ব্যবসার জন্য কাজ করে গেছে অথচ এখন মনে হচ্ছে তার এই প্রস্তুতিগুলো ঠিক আজকেই নেয়া দরকার ছিল। এই মুহূর্তে তার সবচেয়ে আপন কাউকে পাশে পেতে ইচ্ছে করছে। এই পার্থিব জগতে সবচেয়ে আপন কে হয়? মা! হ্যাঁ পুরো পৃথিবীতে সে আর তার বোন ছাড়া বাকি প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে বোধহয় মা মানুষটিই আপন হয়। বিয়ে পড়ানো বোধহয় শুরু হয়ে গেছে অর্নিতা কই? হঠাৎই অর্ণবের মনে হল তার এলোমেলো মস্তিষ্ককে একটু শান্তি দিতে একমাত্র আপন বোনটিকেই এখন কাছে দরকার। অর্ণবের আশপাশে এখন খুব বেশি মানুষ নেই। সকলেই গেছে কনের কাছে তাই অর্ণব যারা পাশে আছে তাদের না বলে নিজেই উঠলো অর্নিকে খুঁজতে। পেছন থেকে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করল কোথায় যাচ্ছে? সে জবাবে বলল, আসছি।
দোতলায় উঠে অর্ণব প্রথমেই গেল রিদওয়ানের ঘরে৷ দরজাটা ভেজিয়ে রাখা পর্দা সরানো। অর্ণব একবার ডাকলো অর্নি!
রিদওয়ান বাথরুম থেকেই ক্ষীণ আওয়াজ পেলো অর্নিকে কেউ ডাকছে। সে চেঁচিয়ে জবাব দিলো, অর্নি ঘরে নেই।
অর্ণব ঢুকলো সে ঘরে৷ এবার রিদওয়ানকে ডাকল, “গোসল করছিস?”
“হ্যাঁ” ওপাশ থেকে জবাব এলো৷
-কতক্ষণে বের হবি?
-মিনিট দশেক। তুই এখানে কেন?
-অর্নিকে খুঁজছি।
-ও নিচে গেছে হয়ত…. তুই যা নিচে আমি আসছি ওকেও বের করছি।
-আচ্ছা! কথাটা বলেই অর্ণব চলে যেতে পা বাড়ালো। রিদওয়ানের ফোনটা বেজে উঠল ঠিক তখনই তারস্বরে। অর্ণব ফিরে তাকালো সেদিকে। স্ক্রীণে জ্বলজ্বল করছে অর্নি নামটা। রিদওয়ানের কানেও পৌঁছেছে ফোনের টোন। সে তটস্থ হলো কে কল করলো, থানা থেকে নাতো! ওহ গড, অর্ণব আছে নাকি ঘরে? সে দ্রুত শাওয়ার অফ করে তোয়ালে হাতে বাথরুম থেকে বের হতে চাইলো ততক্ষণে কলটা রিসিভ হয়ে গেছে।
-হ্যালো অর্নি কই তুই?
ওপাশ থেকে ভেসে এলো ভারী এক পুরুষ স্বর, ব্যাড নিউজ রিদওয়ান সাহেব। এক্সট্রেমলি ব্যাড দিজ নিউজ…
অর্ণব চমকানো স্বরে বলল, “কে বলছেন?”
“আমি ইন্সপেক্টর শরাফত বলছি আপনি রিদওয়ান শেখ না?”
-আমি তার কাজিন।
-ফোন দে অর্ণব।
রিদওয়ান ফোনটা অর্ণবের হাত থেকে নেয়ার জন্য হাত বাড়ালে অর্ণব পিছিয়ে গেল। সে নিজেই আবার পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞেস করলো, ” ঘটনা কি অফিসার?”
-রিদওয়ান সাহেবকে দেয়া যাবে?
-আমাকে বলুন সে বাথরুমে আছে।
“ফোন দে অর্ণব”
অর্ণব আরেকটু পিছিয়ে পুলিশকে আবারও প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, “উনাকে বলুন নারায়ণগঞ্জে নুপুরকে পাওয়া গেছে তবে আমাদের ধারণা ঠিক, ইট ওয়াজ আ রেপ কেস। আপনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসুন। আমরা ভিকটিমকে সেখানেই নিয়ে এসেছি।”
চলবে