#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-২৮ (ক)
ভাগ্য পরিবর্তন হয় এ কথাটা বরাবরই অর্ণব মন থেকে মানতো, মানে। বাবার ডুবতে থাকা ব্যবসার ভাসমান রূপ,অর্নির সাথে শিবলীর জায়গায় রিদওয়ানের বিয়ে এগুলোই তো চমৎকার প্রমাণ। তার আর নুপুরেরও ভাগ্য নিশ্চয়ই পরিবর্তন হবে কোন একভাবে কোন এক রকম করে। দাদীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে সে কিছু সময় বসেছিলো বাড়ির পেছনের খোলা জায়গায়। নিজের সাথে বোঝাপড়ার নিমিত্তে বসে থাকলেও কিছুই বুঝতে পারলো না শেষ অবধি। মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগলো তারপর মনে হলো এত ভেবে কি করবে! নুপুরের তো বাগদান হয়ে গেছে। অন্যকারো হবু বউকে নিয়ে এত ভাবার মত কচি বয়স কি তার এখনও আছে? নেই তো! আসলেই মন তার অপরিপক্ক নয় তাই রাতটা সে দিব্যি কাটিয়ে দিলো অফিসের টুকরো কাজ করে। পরেরদিন নিয়মমাফিক জীবন শুরু অফিস বাড়ি। সারাদিনে দু বার দাদীর খোঁজ, অর্নির সাথে কথা কেটে গেল আরও একটা দিন। অপরদিকে নুপুরেরও কেটে গেছে সময় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। সে ঘুম তার এমনি এমনি আসেনি। বাবার ঔষধের বক্সে থাকা বহু পুরাতন পাতায় পড়ে থাকা দুটো ঘুমের ট্যাবলেট গিলে নিয়েছিলো সকালের নাশতার পর। কে জানে সে দুটোর ডেট আছে কি নেই? তার তো শুধু জানার কথা ওগুলো হলো ঘুমের বড়ি ব্যস গলায় দিয়ে দিলো। তারপর থেকেই দিনটা কখন ফুরিয়ে গেল টের পায়নি নুপুর। এরই মাঝে সৎ মা বুঝি ডেকেছিলেন বার কয়েক দুপুর বেলায়, ফোন বেজেছিলো, তুতুন বসেছিলো কানের কাছে কিছু বলেছিলোও তাকে। কোন কিছুই ঠিকঠাক যেন কানে পৌঁছায়নি। এই সন্ধ্যে লগ্নে ঘুম ভাঙলেও মাথাটা হয়ে আছে ভার। মনে হচ্ছে কেউ বুঝি এক মণ পাথর চাপিয়ে দিয়েছে মাথার ওপর। ঘুমের রেশ কিছুতেই কাটছে না। গোসল করা দরকার কথাটা ভাবতেই কাপড়চোপড় নিয়ে ঢুকলো গোসলখানায়। শাওয়ার ছেড়ে নিচে দাঁড়াতেই গা কেঁপে উঠলো ঠান্ডা পানির ঝাপটায়। ধীরে ধীরে মস্তিস্কও সচল হতে লাগলো এবার। নজরে পড়লো হাতের আঙ্গুলে থাকা আংটিতে। চকচকে সোনার কারুকার্য শোভিত পাঁচ আনার সুন্দর এই আংটি তো শুধু আংটি নয়। এক নতুন জগতের সাথে তৈরি হওয়ার সন্ধিপথ এই আংটি, খুব কাছের হৃদয়ের ঠিক গভীরে বসবাস করা এক গোমরামুখো মানবের উচ্ছেদকারী এই আংটি। ঠান্ডা পানিতে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল মনে হতেই কাপড় পাল্টে বেরিয়ে এলো নুপুর। গামছাতে চুল পেঁচিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে চায়ের পানি বসিয়ে তুতুনকে দেখছিলো কোথায় আছে ভাইটা৷ তখনই সামনে পড়লো ছোট মা৷ আজকাল তিনি নামাজি হয়েছেন খুব৷ মাত্রই মাগরিবের নামাজ শেষ করেছেন বোধহয় তাই মাথায় এখনো হিজাব পেচানো। তাকে এড়িয়ে নুপুর রান্নাঘর ছাড়তে চাইছিলো তা আর হলো না। মহিলা পেছন থেকেই বলে বসলেন, এই চেহারায় এইবার চা পাতি খাওয়া বাদ দেও। পোলার মায় যাইতে যাইতে কইয়া গেছে বিয়ার আগেই গায়ের রঙডা আরেকটু ফিরাইতে।
নুপুর ঘাড় ফিরিয়ে জানতে চাইলো, রঙ ফিরাতে বলতে কি বোঝাইছে?
-আরেকটু পরিষ্কার হইতে কইছে। চিন্তা করন লাগতো না মার্কেটে ফর্সা হওনের ক্রিম পাওয়া যায় দুইটা আনাইয়া দিমুনে।
-রঙ ফেরানোর সাথে চা খাওয়ার কি সম্পর্ক?
-চা খাইলে রাইত জাগবা না ঘুমাইলে কাইল্লা চেহারা আরো কাইল…..
নুপুর আর কথা শেষ করতে দিলো না ছোট মাকে। সে ততক্ষণে রান্নাঘরে ঢুকে চুলো নিভিয়ে পুনরায় ফিরে গেছে নিজের ঘরে। তা দেখেই মুখ বাঁকালেন ছোট মা… হু, আজাইরা দেমাগ দেখানের জায়গা পায় না ছেড়ি। যেই না চেহারা!
____
আবেগ, অনুভূতিতে জীবন চলে না এই সহজ বাক্য অর্ণবকে ছোট থেকেই বুঝতে হয়েছে। এখনো এর থেকে পিছপা হওয়ার কারণ ছিলো না বলেই সে মনে করে সামনে এগিয়েছে। নুপুরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তবে তাই হোক নুপুর অন্যকারো ঘরণী হয়েই থাক। অর্ণব আর যেচে যোগাযোগ করেনি তার সাথে। মনের সাথে যুদ্ধে বরাবরই সে সিংহপুরুষ এবারেও তাতে পিছিয়ে পড়বে কেন! ব্যবসায়িক কাজে মনোনিবেশ মুশকিল লাগলেও চেষ্টায় কমতি নেই ঠিক সে মুহূর্তেই এলো খালুজানের ফোনকলটা। সালাম,কুশলাদির বিনিময় শেষে বড্ড শীতল গলায় তিনি প্রশ্ন করলেন, আমার মেয়েটাকে বিয়ে করতে কি সমস্যা অর্ণব?
-বেয়াদবি নেবেন না খালু, আমি অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসি সে কথা জেনেও আপনি বৃষ্টিকে আমার হাতে দিতে চাইছেন? আপনার কি মনে হয় না আমি তাকে অসুখী করব?
– এই যে তোমার উপলব্ধিটা আছে এটাই যথেষ্ট তোমাদের সুখের একটা সংসার হতে। তুমি শুধু হ্যা বলো অর্ণব বাকিটা উপরওয়ালা ঠিক করে দেবেন।
নিজের প্রেমকে পাওয়ার আগে হারিয়ে ফেলার দুঃখটা অর্ণবকে কতটুকু ছুলো সে ব্যাপারে কেউই অবগত রইলো না। নুপুরদের বাড়ি থেকে ফেরার দিন চারেক বাদেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেল অর্ণব, বৃষ্টির। কিভাবে কি হলো সে কথার ধার দিয়ে গেল না কেউ বলা ভালো, অর্ণবই যেতে দেয়নি। খালুজানের সাথে কথা শেষ করে বাড়ি ফিরে দাদীকে জানালো, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে আমার বিয়ে অর্নিকে বলে দিও ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতে।
দাদী কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলেনই তখন আবার বলল, বৃষ্টির সাথে বিয়ে৷ এ নিয়ে কোন আপত্তি বা বাড়তি কথা না হোক । বড় দাদার বাড়িতে দাওয়াত করে দিও দাদী আমি অফিসে দু’জনকে বলব।
সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে বিয়ের তারিখ! অর্নিতা অবাক হয়ে তাকায় রিদওয়ানের দিকে। তার একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে অথচ সে দাওয়াত পেল এই মাত্র। অবাক হয়েছে রিদওয়ানও যখন দাদী ফোন করে বলল, আগামী মঙ্গলবার বউ নিয়া আইসো ভাই আমার নাতির বিয়া।
-কি বলছেন দাদী।
– তোর বাপ জিতছে ভাই। বৃষ্টির লগে আমার নাতির বিয়া হইবো দাওয়াত রইলো।
রিদওয়ান ঢাকা থেকে আজই ফিরেছিল চট্টগ্রামে। অর্নি তখনো হলে। হাতের ছুটি ফুরিয়ে আসছে অথচ নিজেরা ইচ্ছেমত সময় কাটানো তো দূর পারিবারিক অশান্তি কাটিয়ে একত্রে একটু সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছে না। রায়না টের পাচ্ছিলো ছেলেটা মানসিক বিপর্যস্ততা তাই আজ ভোরে জোরেই পাঠিয়ে দিলেন চট্টগ্রামে। অর্নিকেও জানিয়ে দিলেন প্রস্তুত থাকতে রিদওয়ান এলেই যেন কোন হোটেলে ওঠে তারা। দুজনে সবেই এসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলো হোটেল রুমে। অমনি দাদীর কল এলোমেলো করে দিলো আবারও মুহূর্ত তাদের। কোথাও কি একটু শান্তির দেখা মিলবে না? রাতে কথা হলো অর্ণবের সাথে। এবার আর তর্কবিতর্ক নয় ; মুখের ওপর দু চার প্রশ্নে অর্নি জেনে নিলো ভাইয়ের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের কারণ। অর্ণবও ভণিতা ছাড়াই বলে দিলো, বয়স হয়েছে বিয়ে করতেই হবে। নুপুরকে করতাম গিয়েছিলাম প্রস্তাব নিয়ে তার বাবা আগেই কোথাও কথা দিয়ে ফেলেছেন।
-তাই বলে বৃষ্টি আপুকে করবে?
-সমস্যা কি? সব তো জানে সে। এডজাস্ট করতে অসুবিধা কম হবে।
-আমি একবার কথা বলি নুপুরের সাথে?
-বিয়ের দাওয়াত দিতে চাইলে অবশ্যই করবি। খবরদার… এর বাইরে অন্য কিছু না।
শেষ বাক্যের কাঠিন্যতায় চমকে উঠেছিল অর্নিতা। ভাইয়ার কণ্ঠস্বর যেন ধারালো তলোয়ার। একটুও আর বুঝতে বাকি নেই ভাইটার অন্তরে ঠিক কতোটা আঘাত লেগেছে। অর্নি আর এক মুহূর্তও থাকতে চাইলো এ শহরে। এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গেল নিজের স্বপ্নের পড়াশোনার কথা। রিদওয়ান মানতে না চাইলেও পরের দিন ঠিক জোর করেই সে ঢাকায় ফেরার বন্দোবস্ত করিয়ে নিলো। একটা ক্লাস মিস না দেওয়া মেয়েটা একটা সপ্তাহের জন্য তৈরি হয়ে গেল ঢাকায় ফিরবে। রিদওয়ান অনেক বুঝিয়ে একটাদিন রেখে পরেরদিন সত্যিই ফিরে গেল ঢাকায়। পরপর লম্বা জার্নি এবার অসুস্থ করে দিলো তাকে। ঢাকায় ফিরে অর্নি শ্বশুর বাড়ি গিয়ে রাতটা থাকলো। পরের দিন সকালের নাশতা নিজেই তৈরি করলো সে। খেতে বসে বাশার শেখ আজ বেশ আনন্দিত গলায় কথা বললেন সকলের সাথে। অর্নির বিয়ের পর থেকে তাকে এক প্রকার উচ্ছিষ্টের মত এড়িয়ে চলছিলেন আজ আর তা করলেন না বরং নিজ থেকেই বললেন, খুশি হলাম তোমরা আগেই বাড়ি এসেছো বলে। ও হ্যা তোমাদের রিসেপশনের ব্যাপারটার করা হলো না তাড়াহুড়ায়। অর্ণব হুট করেই প্রস্তাব গ্রহণ করলো তাই আপাতত অল্পতে বিয়েটা সেরে ফেলছি তোমরা আবার এ নিয়ে মনে রাগ পুষে রেখো না।
অর্নি মাথা নিচু রেখে শুনলো পুরো কথা। ভাবছিলো সে যা বলতে চায় তা এখনই বলবে কি বলবে না! বাশার শেখ তার আগেই আবার বললেন, তোমাদেরটাও করব। রিমনের বিয়ের সময় একসাথেই করে ফেলব রিসেপশনটা।
-আমার বিয়ে আসছে কোথা থেকে আব্বু?
বাবার কথা শুনে খাওয়ার মাঝেই কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো রিমন। অর্নি বুঝলো তার যা বলার সে এখন কিছুতেই বলতে পারবে না। বাবা ছেলের কথার মাঝে থাকার তার প্রয়োজনও দেখছে না সে তাই ডাইনিং স্পেস ছেড়ে চলে গেল দোতলায় রিদওয়ানের ঘরে। এ বাড়িতে পা রাখার ইচ্ছেটা তার অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল বাবা সমতূল্য খালুজানের অপমানজনক কথাগুলোর পর থেকেই। তবুও এলো মনে মনে কিছু পরিকল্পনা করে ঠিক ছেলের বউ হয়েই। ঘরে ঢুকে বিছানায় তাকাতেই চোখে পড়লো ঘুমন্ত রিদওয়ানকে। বিছানায় ঠিক পাশ ঘেঁষে বসে আলতো হাতে রিদওয়ানের চুল টেনে দিলো। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই ঘুম হালকা হয়ে গেলো তার। একটু সময় নিয়ে ডেকে উঠলো, অর্নি!
-হু বলো।
-উঠে গেছিস?
-অনেক আগেই।
-গোসলও করে ফেলেছিস?
– সেই কখন?
-এটা তো ভারী অন্যায়।
উপুর হয়ে শুয়ে ভারী স্বরে থেমে থেমে বলছে রিদওয়ান। অর্নি মুচকি হাসলো।
– অন্যায় কেন?
-নতুন বউরা বরকে ছাড়া গোসলে যায় না।
-আমি নতুন বউ?
– পুরনো হয়েছিস নাকি!
-বিয়ের তো বছর হলো।
-সংসার তো হয়নি।
– ভুল হয়ে গেছে মশাই।
-তা এত জলদি কেন উঠেছিস?
-শ্বশুরবাড়িতে বেলা করে ঘুমানো যায় বুঝি!
-তোর শ্বাশুড়ি তো মহৎ প্রাণ দেরি করলে কিছুই বলবে না।
-তবুও উঠলাম একদিনের সংসারের জন্য।
এ পিঠ হয়ে শুলো রিদওয়ান। চোখের ঘুম কেটে গেছে তার। চোখ ঘষে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ।
-একদিনের সংসার বলতে!
-কাল আমি চলে যচ্ছি বাপের বাড়িতে।
শোয়া থেকে এবার উঠেই বসলো রিদওয়ান। কি বলছে তার বউটা এসব!
-মানে!
-আমার ভাইয়ের বিয়ে। বাড়িতে আয়োজন করার মত কেউ নেই তাই আমি ওখানেই থাকব। তোমারও তো বোনের বিয়ে তুমি এখানেই থেকো।
-এই সিদ্ধান্ত কখন নিলি?
-কাল রাতেই।
হতাশ চোখে তাকালো রিদওয়ান। এ কি বলছে অর্নিতা। অবিশ্বাস্য লাগছে কথাগুলো। অর্নিতা বলছে এসব!
-খালামনিকে এখনো বলিনি। রাতে খালু এলে জানিয়ে দেব।আর…
-আর কিছু বলিস না।
-নুপুরের সাথে একটিবার দেখা করব কাল। তুমি কি যাবে সাথে?
এ পর্যায়ে ভীত হলো রিদওয়ান। অর্নিতা কি রেগে আছে কারো ওপর? নুপুরের ওপর! দেখা করে কি ঝগড়া করবে মেয়েটার সাথে? এজন্যই কি চাইছে সেও সাথে যাক। অসম্ভব! এই মেয়ে তো ঝগড়া করতেই জানে না। উফ, রাতটা যত মধুর কেটেছিল সকালটা ঠিক ততোটাই এখন তিক্ত ঠেকছে। এত বিতৃষ্ণা কেন তার জীবন ভর্তি!
_____
-ওই লম্বা ভাইয়াটা কি আবার আসবে আম্মু?
-কোন ভাইয়া?
-ওই যে স্ট্রবেরি আর দামী সব ফল নিয়া আসছিলো যেই ভাইয়াটা।
আইসক্রিম চাটতে চাটতে মাকে প্রশ্ন করছে তুতুন। পাশেই বসে আইসক্রিম খাচ্ছে নুপুর। একটু আগেই গলির মাথায় পাঁচ টাকা করে কুলফি, মালাই দেখে নুপুরের কাছ থেকে টাকা নিলো তুতুন। নিজের জন্য কিনতে গিয়ে বোনের জন্যও আনতে ভোলেনি। সেই আইসক্রিম নিয়েই দু ভাই বোন সোফায় বসেছে পা গুটিয়ে। ছোট মা তাদেরই পাশে কুরুশ-কাঁটায় ব্লাউজের হাতা বুনছিলেন। তুতুনের কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে তাকায় নুপুর। বাড়িতে সেদিন মেহমান এলো মিষ্টি নিয়ে সাথে ছিলো কয়েক পদের ফল। তুতুন বোধহয় সেগুলোর কথাই বলছে কিন্তু ভাইয়াটা কে? যে পাত্র এসেছে ওই ব্যাটা তো দেখতেই বুইড়া। তুতুন মায়ের জবাবের অপেক্ষায় না থেকে আবার বলল, ওই ভাইয়ার গোঁফ না পুরাই তামিল নায়কের মত।
গোঁফ! ছ্যাৎ করে যেন উঠলো অন্তরটা। কি বলল তুতুন? ওই লোকের তো গোঁফ ছিল না। কে এসেছিলো সেদিন বাড়িতে?
চলবে
#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-২৮(খ)
রাতে ঘুমানোর আগেই কলটা এলো অর্নিতার। নিজের আংটিবদলের খবরটা তো প্রিয় বান্ধবীর জানার অধিকার আছে ভেবেই সকল মন খারাপকে পাশে সরিয়ে কলটা ধরলো নুপুর।
-কি খবর বান্ধবী কেমন আছো?
-আমি যেমনই হোক তুই নিশ্চয়ই খুব ভালো আছিস তাই নারে!
অর্নিতার কথার ধরণেই বোঝা গেল রেগে আছে মেয়েটা।
-হ্যাঁ, এই তো ভালো…
-এজন্যই আর খোঁজ নিচ্ছিস না আমাদের।
-নিতাম। একটু ব্যস্ত ছিলাম।
-হু তাতো অবশ্যই। সকাল বিকাল হবু বরকেও নিশ্চয়ই সময় দিতে হয়!
-তেমন কিছু না।
-কাল একটু দেখা করতে পারবি? বাইরে।
একটু সময় নিয়ে তারপর নুপুর জবাব দিলো ‘হ্যা’। তাতেই যেন অর্নিতার রাগ চড়া হলো। সে এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলে বসলো, সমস্যা হলে তোর হবু বরের কাছেও না হয় অনুমতি চেয়ে নেব কি বলিস?
এ পর্যায়ে এসে চমকে গেল নুপুর। এত রাগ! কি করেছে নুপুর? পরমুহূর্তেই মনে পড়লো তুতুনের কাছ থেকে একটু আগেই জানতে পারা ঘটনা। অর্ণব এসেছিলো সাথে ছিলো বৃদ্ধা তারমানে দাদী! নুপুর নিজের ফোন থেকে অর্ণবের একটি ফটো দেখাতেই তুতুন জানালো, হ্যা এই ভাইয়াটাই এসেছিলো৷ তবে কি তারা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল আর বাবা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন! ঠিক সেকারণেই বোধহয় অর্নিতার এত ক্ষোভ, এত রাগ তার ওপর। হতাশামিশ্রিত নিঃশ্বাস ফেলে নুপুর জানিয়ে দিলো কাল সে আসছে দেখা করতে৷ কাল নুপুর নিজেদের ভেতরকার সকল অভিমানের পলেস্তরা খসিয়ে নতুন প্রলেপে বন্ধুত্বটা রাঙিয়ে আসবে। অর্ণবকে তার পাওয়া হবে না এ জীবনে তাই বলে কি বোনের মত বান্ধবীকে হারাতে দেবে! কক্ষনো না।
_______
যেমনটা অর্নি ভেবেছিলো তেমন কিছুই হয়নি। সকালে নিজের মত কথাগুলোও সবাইকে বলতে পারেনি রিমন আর খালুর বিয়ে নিয়ে আলাপ শুরু হওয়ায়। অর্নি আজ নাশতার টেবিলে বসেও যখন দেখলো খালুজান আর রিমন ভাই বিয়ে নিয়ে প্রায় তর্কযুদ্ধে লিপ্ত তখন বৃষ্টি আপুও পিছিয়ে নেই। তবে তাদের কথাবার্তার এক পর্যায়ে এসে অর্নির মনে হলো এ পরিবারে তিনটে মানুষ বড্ড জেদি আর আপন স্বার্থে তৎপর। তারা কিছুতেই এক চুলও স্বার্থহীন আপোষ করতে রাজি নয় তবে রিমন ভাইকে যতটা অর্নি চিনতে পেরেছে তাতে স্পষ্ট রিমন ভাই বিবেচক এবং যথেষ্ট দায়িত্ববান মানুষ। বাড়ির বাকি দুই সদস্য খালামনি আর তার একান্ত ব্যক্তিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এরা দুজন ভীষণ কোমল হৃদয়ের আর আপনজনদের প্রতি অনুগত। এতোটাই যে তারা আপনজনদের জন্য নিজের নিঃশ্বাসটাকেও আটকে রাখতে প্রস্তুত। অথচ দিনশেষে এই দুজনই ভোগে কাছের মানুষের অবহেলা,নিগ্রহ। এ বাড়িতে অর্নি তার বর্তমান অবস্থানের জন্য কিছুটা ভিন্ন আচরণ পাচ্ছে এখন তাই সেও কিছুটা পরিবর্তিত আচরণ করছে। আজও তার বাড়ি যাওয়া হলো না বলে রিদওয়ানকে বলল, কাল বাড়ি চলে যাব। তুমি নিশ্চয়ই এখানে থাকবে?
কথাটা প্রশ্ন কম যেন জবাবই শোনালো সে। অনলাইনেই কিছু জরুরি ইমেইল চেক করছিল রিদওয়ান। ছুটি তার শেষের দিকে। অর্নিকে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়নি কাগজপত্রেই মূল ঝামেলা তা নিশ্চিত হয়ে এখন এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করছে। সে চাইছে অর্নি তার ডাক্তারি পড়া বিদেশেই কোথাও কমপ্লিট করুক। অর্নির একটা ব্যবস্থা হয়ে গেলেই সেও মুভ করবে অর্নির কাছে। কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না। এদিকে অর্নির বলা কথাও তার কানে ঢুকেনি।
-কি হলো কিছু বলছো না যে!
-কিছু বললি? রিদওয়ান প্রশ্ন করলো।
“তুমি শুনতে পাওনি?”
– আবার বল।
” আমি কাল বাড়ি যাব তুমি এখানে থেকো।”
-কেন?
“বিয়ের আর দু দিন বাকি৷ বাড়িতে দাদী একা একা কি করবে?”
রিদওয়ান এবার ফোন ছেড়ে অর্নির মুখের দিকে তাকালো। ফর্সা মুখটাতে মেদুর ছায়া পড়েছে। চিন্তার রেখা তার কপাল জুড়ে স্পষ্ট। চশমার আড়ালে চোখদুটোও ভারী বিষন্ন। মায়া হলো খুব রিদওয়ানের। এতটুকু বয়সেই কত ঝঞ্জাট পোহাতে হচ্ছে কখনো তার কারণে কখনোবা তার বোনের কারণে। বৃষ্টির জেদ বাড়াবাড়ি হয়ে উঠেছে এবার আর অর্ণব সব জেনেবুঝে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে। নুপুরদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া থেকে বৃষ্টিকে বিয়ে করতে রাজী হওয়া পর্যন্ত সবটাই রিদওয়ানের জানা। অর্ণবের সাথে তার সম্পর্ক ভাই কম বন্ধুত্বটাই বেশি। সে ভেবেছিল কিছু একটা করে বৃষ্টিকে বোঝাবে অর্ণব তার জন্য সঠিক পাত্র নয়। বোনটা বড্ড গোঁয়ার শুনলোই না কিছু। এখন অর্নির কথা শুনে সে ভাবছে শেষ একবার বাবার সাথে কথা বলবে। বাবাই একমাত্র ব্যক্তি যে পারে বৃষ্টিকে বোঝাতে। অর্নিকে বলল, আমিও যাব তোর সাথে।
পরেরদিন সকালের নাশতায় বাবার পাশে রিদওয়ান বসে আছে। টেবিলে নাশতা সাজাচ্ছে অর্নিতা খালামনি তখন রান্নাঘরে। আজ নাশতায় রিমন আর বৃষ্টির দেখা মিলল না। বাশার শেখ নাশতার প্লেট সামনে নিতে নিতেই ছেলেকে প্রশ্ন করলেন, কি বলবে?
নাশতার টেবিলে উপস্থিত ছেলেকে উশখুশ করতে দেখেই বুঝতে পারলেন কিছু বলতে চায় ছেলেটা। রিদওয়ানও সময় নষ্ট না করে বলল, বৃষ্টির বিয়েটা অর্ণবের সাথে দেয়া ঠিক হচ্ছে না।
– কার সাথে দিলে ঠিক হতো ওই যে ওই ছেলে কি যেন নাম যে ক’বছর আগে তোমার বোনকে এড়িয়ে গেল?
-ওই ছেলেটার আর্থিক অবস্থার আমাদের চেয়ে খারাপ বলে ভয়ে এড়িয়েছিল বৃষ্টিকে। আর আব্বু ছেলেটাকে আপনি ভয় দেখিয়েছিলেন।
-আর সেও ভয় পেয়ে চলে গেল! অমন ছাগলের কলিজা নিয়ে আসা ছেলের কাছে মেয়ে তুলে দেব আমি?
-সে কথা বলছিনা আমি কিন্তু অর্ণবও বৃষ্টির জন্য সঠিক চয়েজ নয়।
অর্নি চুপচাপ পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। সে শুনছে খালু আর রিদওয়ানের কথা তার বলার কিছু নেই।
বাশার শেখ আবার বললেন, “তুমি দেশে এসেছো বোনের বিয়ে খেতে, ছুটি কাটাতে তাতেই মন দাও। আমার মেয়ের বিয়ে নিয়ে না ভাবলেও চলবে।”
– ওকে, তাই হবে তবে বলে রাখছি যা করছেন মোটেই তা ভালো হচ্ছে না। মেয়ের চোখের জল আজীবন সয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন আব্বু।
কথাটা শেষ করেই রিদওয়ান উঠে পড়লো। নাশতা আর করা হলো না তার। সে নিজের ঘরে যেতে যেতে অর্নিকে বলে গেল, আধঘন্টার মধ্যে তৈরি থাকবি তোকে ও বাড়ি রেখে আসব।
বাশার শেখ কানেই নিলেন না ছেলের কোনো কথা। অর্নিকে বললেন, “তুমি কি আজ ও বাড়ি চলে যাচ্ছো?”
-জ্বি খালু, দাদীর পক্ষে একা বিয়ের আয়োজন করানোটা মুশকিল…
-ও আচ্ছা যাও তবে। আর কিছু কাজে সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমাকে জানিয়ে দিও লোক পাঠিয়ে দেব। তুমি একা আর কি কি করতে পারবে!
________
সকাল সকাল যাবে বললেও খালামনির সাথে টুকটাক কাজ করতে গিয়ে দুপুর হয়ে গেল অর্নির। কথা ছিল নুপুরের সাথে দুপুরে দেখা করবে তাই বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই একটিবার কল করলো নুপুরকে। সে জানালো চলে আসছে অর্নির বলা লোকেশনে। রিদওয়ান সঙ্গে যেতে চাইলে অর্নিতা বলল, ” তুমি ভাইয়ার সাথে শপিংয়ে যাও। ভাইয়ার জন্য কেনাকাটা শেষ করো ততক্ষণে আমি নুপুরের সাথে কথা বলে চলে আসব।”
রিদওয়ান চমকে গেল অর্নিতার কথার ধরণে। স্বতঃস্ফূর্ত কণ্ঠস্বরে বলে চলছে কথা। হুট করেই যেন ভারী গম্ভীর হয়ে গেল মেয়েটা। তার মনের অবস্থাটাও বোঝে রিদওয়ান তাইতো সেও সাপোর্টিভ আচরণ করছে। আলতো করে কাঁধ ছুলো অর্ধাঙ্গিনীর।
– তুই রেগে আছিস নুপুরের ওপর কিন্তু ভেবে দেখছিস না মেয়েটা কোন পরিস্থিতিতে আছে। একটিবার নিজেকে অর্ণবের বোন নয় শুধুমাত্র নুপুরের বান্ধবী হয়ে চিন্তা কর ওই মেয়েটার কথা। তার কতোটা কষ্ট হচ্ছে ভালোবাসার মানুষকে ফিরিয়ে দিতে।
অর্নিতা একেবারে চুপচাপ গাম্ভীর্যে ডুবে আছে যেন রিদওয়ানের কোন কথাই তার কর্ণগোচর হয়নি। হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে রিদওয়ান আবারও বলল, তুই নিজেকে দিয়েই ভাব যখন তোর বিয়ে ঠিক হলো শিবলী ভাইয়ের সাথে….
-আমার মা-বাবা নেই সে কথা ভুলে যেওনা। আমরা বড় হয়েছি অন্যের ছায়ায় তাই মুখে জোর, মনে সাহস ছিল না।
চোখজোড়ায় উষ্ণ জলের আভাস অর্নিতার। তাকে আর ঘাটিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তে দিতে চায় না রিদওয়ান তাই প্রসঙ্গ পাল্টে দিল।
-দুইটা বাজতে চলল, খিদেও পেয়েছে। জলদি চল আমি তোদের সাথে লাঞ্চ করব তারপর যাব অর্ণবের কাছে।
অর্নি শুনলো সে কথা। তৈরি হয়ে বের হলো দুজনে। তাদের একসাথে বের হতে দেখে বৃষ্টি উচ্ছ্বসিত হলো। যাক বাবা, অর্নিটা তবে এই বিয়ে নিয়ে আপত্তি তুলছে না নইলে বিয়ের শপিংয়ে যাবে কেন! যত শত্রু তার নিজের মায়ের পেটের ভাই দুটোই এমনই ভাবনা বৃষ্টির মনে।
_______
“শাড়ির আঁচল ছড়ায়া ধরো। নেও খোঁপায় ফুলডাও দেও” বলেই ছোট মা হাতে থাকা গাঢ় লাল গোলাপটা এগিয়ে দিলো। হবু বরের সাথে দেখা করবে আর সাজবে না তা কি করে হয় এমনটাই ছোট মায়ের কথা। সৎ মায়ের খেতাব পাওয়া মহিলাটি নুপুরকে ভালবেসে এমন কিছু বলছে না বরং ঘাড় থেকে বোঝা নামানোর চিন্তায় তার সাজ নিয়ে চিন্তিত। এমনেই গায়ের রঙের জন্য এই মেয়ের পেছনে যৌতুক লাগবে বলে শুনতেই মনে মনে ক্ষোভ পুষছে। নুপুরের মন মানছে না শাড়ি গায়ে নিতে। সেতো অন্য একজনের নামে নিজেকে সাজায় রোজ সেখানে অপরিচিত পুরুষের জন্য সাজটা তার সহ্য হচ্ছে না। তার গোঁফওয়ালা জল্লাদমুখো মানুষটা তাকে চাইতে এসেছি। আহ্ তার ভাগ্য! যাকে ভালোবেসে পাগলামিতে ডুবাতে চেয়েছিল তাকে পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল। ছোট মায়ের সাজ নিয়ে আদিখ্যেতা কাঁটার মত ফুটছে গায়ে। খোঁপায় দিতে চাওয়া ফুলটাকে সরিয়ে দিতে চাইলো নুপুর।
-ফুল লাগবে না।
-কইলেই হইলো নাকি! পোলা আসবো সাথে ভাবী, বোনরাও থাকব। পাগলের বেশে গেলে কথা হইবো খুব পরে তোমার বাপে খোঁটা আমারেই দিব। সৎ মা বইলা কথা।
মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে নুপুরের এদিকে সময়ও থেমে নেই। অর্নিতা নিশ্চয়ই চলে এসেছে এতক্ষণে। তারওপর ওই বুইড়া লোক সময় দিয়েছে তিনটার তাতে সময় কতটুকু পাবে অর্নির সাথে কথা বলার! ঘড়ির কাটা দুই পেরিয়ে গেছে ভাবতেই তাড়াহুড়োয় বের হলো নুপুর। একা একা হবু বরের সাথে দেখা করতে যাওয়াটা খারাপ দেখায়। বাবা বলেছে ছোট মাকে সঙ্গে নিতে। নুপুর সে কথার ধার ধারেনি, ছোট মাও বিশেষ পাত্তা দেয়নি এ বিষয়ে। তাতেই সুযোগটা মিলল অর্নির সাথে দেখা করার। বাড়ির গেইট পেরিয়ে রিকশা পেতেই তাতে চড়ে বসলো নুপুর। হাতের পার্সে ফোনটাও নিতে ভুলে গেছে সে। অর্নির বলা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে পৌঁছুতেই বেজে গেল দুইরা চল্লিশ। আর মাত্র বিশ মিনিট হাতে। এতটুকু সময়ে সব কথা বলা হবে তো অর্নিকে! গুছিয়ে বলতে হবে অনেক কথা, বোঝাতে হবে সে ফেরায়নি তার মনপুরুষটিকে। সেতো জানতোই না মানুষটা তার দোরে কড়া নেড়েছিলো তাকে আজন্মকালের সঙ্গী করতে। যার জন্য অন্তরকূপে ভালোবাসার তরল জমা তাকে ফেরাবে এমন সাধ্য নুপুরের আছে নাকি! অর্নি বিশ্বাস করবেতো তাকে? কে জানে তারা ভাই বোন তাকে ভুল বুঝে দূরেই না সরে যায়! আর ভাবতে ইচ্ছে হলো না নুপুরের। রিকশা থেকে নেমেই সে আঁচল টেনে পিঠ ঢেকে নিলো। খোঁপার চুলগুলোও এলোমেলো হয়ে গেছে বাতাসে, কাজলটাও বোধহয় ছড়িয়ে গেছে চোখের নিচে। হাতে ফোনটা নেই অর্নিকে কি করে জিজ্ঞেস করবে সে এসেছে কিনা! ভেতরে ঢুকেই দেখা যাক! কয়েক পা এগিয়ে রেস্টুরেন্টের কাঁচের দরজাটা টেনে ধরতেই থমকে গেল নুপুর। থমকে গেছে ওপাশেও একটি মানুষের পা। হঠাৎ শিরশিরে এক হাওয়া বয়ে গেল দুজনের মধ্যিখানে। তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে হঠাৎ ছলছলে জলের প্রাপ্তি টের পেল নুপুর। আজ কতকটা দিন সে তৃষিত ছিল এই মুখটা দেখার জন্য! ঠিক কতকটা দহন হয়েছিলো তার ভেতর-বাহিরে! সামনের মানুষটারও কি একই অনুভূতি! নাহ্ ভ্রম সব। এইতো সরে গেল সামনে থেকে মানুষটা। দু কদম পিছিয়ে ডেকে উঠলো অর্নিতাকে, “খাবার অর্ডার দে অর্নি খেয়ে আবার বিয়ের শপিংয়েও যেতে হবে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেল। রিদওয়ান এক কাজ কর তো বৃষ্টিকে কল দিয়ে বল চলে আসতে। হবু বউকে ছাড়া শপিং ভালো লাগে নাকি!”
চলবে