#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-৫
রাতভর ঘুম নামেনি দু চোখের পাতায় কখনো এ পাশ কখনো ওপাশ করে রাত কেটে গেল অর্ণবের। সকাল সকাল হাঁটতে বেরিয়ে বাজার করলো কিছু৷ ব্যাগ ভর্তি সবজি আর মাছ এনে সে ডেকে তুলল দাদীকে। ফজর পড়ে ঘুমিয়ে পড়া দাদীর নিত্য নিয়ম। এদিকে রক্তের চিনির মাত্রার আধিক্য তাঁকে দিনকে দিন কাবু করছে চরমভাবে। হাঁটাচলা মুশকিল বলে নিয়ম করে দু বেলা ইনসুলিন তার আসল ঔষধে পরিণত হয়েছে। দাদীর ঘুম ভাঙিয়ে উঠোনের এক কোণে এনে বসিয়ে দিল চেয়ার পেতে। রুজিনা খালাও ততক্ষণে মাছ কাটার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
-কি কি মাছ আনলি ভাই?
– তুমিই দেখো কি কি আছে বলেই অর্ণব মাছের ব্যাগ উপুড় করলো বড় এক ঝুড়িতে।
-ওমা! এত বড় চিতল মাছ! আর ওইগুলান কি?
ছোট ছোট পাঁচমিশালি মাছ দেখালেন ছোটদাদী।
-আমি তো সবগুলার নাম জানি না তুমি দেখে বলো তো!
অর্ণব মিটিমিটি হেসে দাদীকে বলল। দাদীও খুব মন দিয়ে দেখলেন। গ্রামের মানুষ তিনি সেই ছোট থেকেই মাছ ধরা, কাটা-বাছা সবই জানেন।চোখের দৃষ্টি এখনো যথেষ্ট থাকায় সময় লাগল না চিনতে। তিনিই একে একে বললেন, ট্যাংরা, বেলে, বাইন, ছোট টাকি আর কিছু ছোট চিংড়ি। দাদী অবশ্য নামগুলো বলল সব আঞ্চলিক ভাষায়৷ তাই চিংড়ির নাম ইছা মাছ শুনে অবাক হলো খুব। এর আগে হয়ত কখনো মাছ নিয় অত মাথা ঘামায়নি বলে জানে না অথবা ছোট থেকে ঘরের ঘরণী মা মানুষটা ছিল না বলেই অনেক কিছু জানা নেই তার। যে ঘরের কত্রী না থাকে সে ঘরের বাচ্চারা এর চেয়েও সাধারণ অনেক কিছুই জানতে পারে না। মন খারাপ হয় না অর্ণবের তবে ভাবুক হয় সে এমন ছোট বড় অনেক কিছু জানতে পেরে। রুজিনা খালার মাছ কাটার এখনো অনেক বাকি। নাশতার আয়োজনে বেশ ঢিল হবে বোঝা যাচ্ছে। এদিকে বাড়িতে আজ অনেকগুলো মানুষ তাই নাশতার জন্য সহজ কোন ব্যবস্থা করা দরকার। দাদীর কাছে অনুমতি নিয়ে অর্ণব আবার বের হলো৷ অর্নি যাবে কলেজে, রিমন, রিদওয়ান আর খালু যাবে অফিসে তাই তাদের নাশতা পরোটা, সবজি আর ডিমের ব্যবস্থা করলো। দাদী শক্ত খাবার খুব একটা খান না বলেই ঘরে থাকে পাউরুটি, দুধ আর কলার ব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে তাই নিশ্চিত থাকা গেল৷ সকাল আটটার আগেই নাশতার আয়োজন সম্পন্ন হলো সেই সাথে ঘটল সকলের ঘুমের সমাপ্তি৷ নয়টার মধ্যেই পুরুষেরা সকলে চলে গেল নিজ নিজ গন্তব্যে।
অর্নির মধ্যে তাড়া নেই কলেজে যাওয়ার অথচ ভাইয়া বলে গেল, তোর বান্ধবীকে ট্রিট দিয়ে দিস। হাতে গুঁজে দিয়েছিল হাজার টাকার একটা নোট। রাতে ভাইয়ার সাথে কিছুটা মনোমালিন্য থাকায় ভাইয়া তাকে কিছু কথা বলেছে, কিছু বিষয় খুব সহজ করে বুঝিয়ে দিয়েছে। অর্নি বুদ্ধিমতী তাই অল্প কথাতেই বুঝতে পেরেছে কিন্তু ট্রিট দেয়াটা কি নুপুরের জন্য প্রশ্রয় হয়ে যাচ্ছে না! ভাইয়ের কথার সারমর্ম কালই টের পেয়েছে অর্নি৷ নুপুর তার ভাইয়াকে খুব পছন্দ করে এজন্যই বোধবয় সামনাসামনি পড়লে লজ্জাতেই পালায়। অর্নির মন ভালো হয়ে যায় ভাইয়ার কথা ভাবতে গিয়ে। কচ্ছপ গতিতে তৈরি হয় কলেজে যাবার জন্য। বৃষ্টি আপু আজ ইউনিভার্সিটিতে যাবে না বলে এ বাড়িতেই থাকবে খালার সাথে। দুপুর, রাত খাওয়া শেষে পরেই ফিরবে সবাই রিদওয়ান ভাইদের বাড়ি।
______
রাতভর ঘুমের আভাস মাত্র ছিল না দুটি চোখে নুপুরের৷ কাল সন্ধ্যায় এক ঝাঁক বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ছাদে বসে কেক কেটেছে, চকলেট বিলিয়েছে তারপরই বাচ্চাদের নিয়ে কিছু চাপার জোর প্রমাণ করে বেলুন ফুলিয়ে একসঙ্গে সব ফুটো করেছে। বেলুন ফাটানোর ফটাস ফটাস শব্দে নুপুরের সৎ মা কয়েকদফা ধমকেও গেছেন তাকে। মহিলা তাকে সব সময় বকেন না তবে মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলে নাক-মুখ কুঁচকে দু কথা শোনাতে ছাড়েন না। ইদানীং আবার মাথায় ঢুকেছে বিয়ের পীড়া তাই একটু বেশিই রুক্ষ আচরণ করেন৷ কে বা কারা খুঁচিয়ে গেছেন এই বলে, ‘নুপুরের যে গায়ের রঙ দাম থাকতেই বিয়ে দাও৷ নইলে বাড়িঘর বেঁচেও তাকে পার করতে পারবে না।’
এ কথা শোনার পর থেকেই মহিলা কারণে অকারণে ক্ষেপে উঠেন৷ নুপুর একটুও কষ্ট পায় না এ নিয়ে। তাই কালকের বকাঝকাও কানে না তুলে হল্লা করেছে রাত আটটা পর্যন্ত। এরপর বাচ্চাগুলোকে বিদায় দিয়ে অনেক রাত অবধি বসে ছিল ছাদে। কালো আকাশ, ঝিরিঝিরি বাতাস আর বাতাসে বকুলের ঘ্রাণে মাতাল হয়ে ভেবেছে অর্ণবকে নিয়ে। বহুদিন পর ফাঁকা হৃদয়ে এক ঝাঁক শঙ্খচিলের ডানা মেলা দিন এসেছে অর্ণবকে দেখে। ফরফরানি আওয়াজ তোলা প্রজাপতির মত নুপুরের বুকেও বাজে ধড়ফড়ানি আওয়াজ। কল্পনায় বিভোর হয়ে অনেকটা রাত কাটিয়ে যখন ঘরে ঢুকলো তখন পেল অর্নির ফোনকল। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এসেছিল চমৎকার একটি বাক্য, ‘তুই কি ভাইয়াকে পছন্দ করিস?’
বান্ধবীর এমন প্রশ্নে রক্তিম হলো নুপুরের গাল। মনে মনে লজ্জায় নুইয়ে পড়ললেও বান্ধবীর সামনে ঠাট রেখে বলল, ‘ধ্যাত কি বলিস এগুলা? ওরকম ভিলেন সুরত কেউ পছন্দ করে নাকি!
মুখের কথায় মনের কথার মিল কোথাও নেই। অর্নি আবার জানতে চাইলো, গিফট যে দিলি….
-ওরে গাধী, তুই আমার বান্ধবী তোর ভাইয়ার জন্মদিন ভাবলাম হয়ত দাওয়াত করবি না মানে গিফট দেখে হয়ত করবি৷ কিন্তু কি বলতো আমার মন্দ কপাল দাওয়াত তো পেলামই না উল্টো ঝাড়ফুঁক দিয়ে দিলো জল্লাদটা।
শেষের বাক্যটা বিড়বিড়িয়ে বলেই প্রসঙ্গ বদলে ফেলল নুপুর। অর্নি এমনিতেও খুব একটা ঘাটে না তাকে। দু বান্ধবী আরও কিছু গল্প শেষে ফোন রাখলেও নুপুরের চোখে ঘুমের দেবীর দেখা মেলে না। তার ফলস্বরূপ সকালের ঘুম ভাঙলো অতি বিলম্বে। এই দের দুরস্ত ঘুমের দরুণ নাশতা বিনা কলেজে এসে পৌঁছুলো সে। টানা তিনটে ক্লাসের পর ক্যান্টিনে এলো নুপুর, অর্নি৷
_______
দিনরাত পরিশ্রম; বাক্যটা পরিপূর্ণ রূপ পেয়েছে অর্ণবের জীবনে। ছোটখাটো একটা ব্যবসা ছিল বাবার সময়ে। সে ব্যবসা অনেকগুলো বছর ছোট দাদা নজের মত করে আগলে রেখেছেন শুধুই প্রয়োজনের খাতিরে৷ তাতে লাভ থাকলে অধিক লাভ শব্দটা জায়গা নেয়নি৷ নেওয়ার সুযোগও ছিলো না। তিনি নিজের কারবারও করতেন বলে মোটামুটি লাভের ওপর টিকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন সময় বদলেছে, বদলেছে উত্তরসূরী আর তার চিন্তাধারা৷ অর্ণব ব্যবসাটাকে বড় করতে চায় আর তার জন্য মূলধনের পরিমাণটাও হবে বড়। লোন ছাড়া সে ব্যবস্থা তার নেই এদিকে লোনের জন্য তার জমিজিরাতের কাগজপত্রেরও দরকার আছে৷ আজ সকাল সকাল অফিসে এসে প্রথম মিটিং ছিল উকিল সাহেবের সাথে। বড় খালুর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা, নিজস্ব উকিলও আছে। অর্ণবের সহায়তার জন্য তাই খালুই এগিয়ে আছেন৷ লাখ পঞ্চাশের লোনের জন্য বড়রকম একটা সম্পত্তির প্রমাণ দিতে হবে ব্যাংককে। আর সেই প্রমাণ হলো কারখানার জায়গার দলিলপত্র। অর্ণব নিজেও ভেবেছে এভাবেই লোন নেবে কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো সম্পত্তির কাগজপত্রে। একটা সপ্তাহ ধরে কোট-কাচারি করেও সে তাদের সম্পত্তির অরিজিনাল কোন কপি উদ্ধার করতে পারেনি৷ দাদুরা বেঁচে নেই, বাবাও বেঁচে নেই। বড় দাদার ছেলেরা আছেন কিন্তু তারা অর্ণবকে এটা সেটা বলে কথা ঘুরিয়ে নিচ্ছে। আজ দুপুরে বাড়িতে খাওয়ার আয়োজন তাই আজও একটু ঢিল দিতে হচ্ছে এ ব্যাপারে। এদিকে মনের ভেতর অর্নির বিয়েটা নিয়েও ভাবনা আছে। জীবনের এই রঙ বেরঙের, ভাবনা -পরিকল্পনায় জড়িয়ে গিয়ে কান্না পায় অর্ণবের। তার শক্তপোক্ত বুকের ছাতিতে হাহাকার বাসা বেঁধে আছে গোপনে৷ বাবার শক্তি না থাকলে জীবনটা কত যে অসহায় তা একমাত্র এতিমরাই বোঝে আর প্রশান্তির নিঃশ্বাসও একমাত্র মা থাকলেই নেয়া যায়৷ জীবনের সকল জটিল সমীকরণ এইটুকু বয়সেই অর্ণবকে ষাটোর্ধ বৃদ্ধার ন্যায় নুইয়ে দেয়। শুধু মাত্র বোনের মুখটি কল্পনা করে সে পুনরায় মাথা উঁচায়। উকিলকে বিদায় করে টুকটাক কাজ এগিয়ে নিলো সে। দুপুরে সবাই তার বাড়ি যাবে খেতে তাই আগেই বের হওয়া চাই। পথিমধ্যে আবার দই কিনবে বলে ভেবে রাখলো সে। কথা ছিল রাতেই খাবে কিংবা খালামনি তাড়া দিলো বাড়িতে নাকি কাজ আছে।
দিনের মধ্যভাগে সূর্যের তেজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সকল রান্না করলো ছোট দাদী। দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল বলে উঁচু টুলে বসে বসে রান্না করেছেন তিনি৷ আর তার সহকারী গগ কাজ করেছে রায়না বেগম। রুজিনা খালা ততক্ষণে ঘরদোর ঝাড়াপোছ করে নিয়েছেন৷ বৃষ্টির একা সময় খুব একটা ভাল কাটছেনা বলে চুপটি করে চলে গেছে দোতলায় অর্ণবের ঘরে। অনেকটা দ্বিধা আর ভয় নিয়েই পুরো ঘরটাকে দেখলো। গোছালো, পরিপাটি একটা যার এপাশ, ওপাশ কোথাও যেন এক ছিটে ধূলো নেই৷ সাদা রঙের বহু পুরনো ফ্যাকাশে দেয়ালের একপাশে একটি মাত্র ফটোফ্রেম। একপাশে বহু বছরের পুরনো একটা স্টিলের আলমারি পাশেই একটা বছর কয়েক আগের কেনা ওয়্যারড্রোব। খাটটাও বেশ পুরনো আর বারান্দার দরজার কাছাকাছি থাকা টেবিলটাও৷ নতুন বলতে এ ঘরে একটা ছোট্ট সিন্দুকের মত লকার। বৃষ্টির হঠাৎ মনে হলো এ ঘরটা যদি তার হয়ে যায়! কত কি দিয়ে সাজাবে সবটা। নিঁখুত হাতে আসবাব থেকে শুরু করে দেয়ালের রংটা অবধি বদলে নেবে। সেই সাথে বদলে দেবে অর্ণব ভাইকে৷ আপনমনে আগামী সাজানোয় ব্যস্ত বৃষ্টি টের পেলো ঘরের মানুষের উপস্থিতি৷ অর্ণব বাড়ি ফিরে সোজা নিজের ঘরে ঢুকতেই চমকে গেল ভীষণ।
-তুই এখানে?
ভরাট স্বরের গম্ভীর প্রশ্ন অর্ণবের। বৃষ্টি তৎক্ষনাৎ কোন জবাব খুঁজে না পেয়ে মাথা নোয়ালো। তারপরই বলল, ‘তোমার ঘর ঝাঁড়ু দিতে এসেছিলাম।’
-কেন?
-রুজিনা খালা ব্যস্ত তাই।
-দিতে হবে না তুই যা। আর শোন অর্নিকে কল করিস তো কখন আসবে?
অর্ণব ঝটপট মুখ হাত ধুয়ে নিচে নামতেই দেখলো খালু, রিদওয়ান, রমন সবাই ফিরে এসেছে। তাই আর দেরি না করে একসাথে খেতে বসলো৷ এরই মাঝে খবর নেওয়া হলো অর্নির ফিরতে আরেকটু দেরি তাই আর কেউ অপেক্ষার করলো না। খাওয়ার মাঝেই পুরুষগুলো তুলে দিলো কাজের কথা। রায়না বেগম বিরক্ত হলেও মুখে কিছু বলতে পারলেন না। বৃষ্টি মায়ের মুখের ভাব টের পেতেই প্রসঙ্গ বদলাতে তুলে দিলো শিবলীর কথা।
-আম্মু মেজো খালামনির না আসার কথা!
এই এক কথাতেই প্রসঙ্গ ঠেকলো অর্নির বিয়েতে। আট সদস্যের টেবিলটাতে উপস্থিত সকলের পাঁচ জনেতখন চারজনের মাঝেই উত্তেজনা, আগ্রহ পরবর্তী পরিকল্পনায়। রিদওয়ান শুধু নিশ্চল রইলো আলোচনার মাঝে। যা হবে সব দেখে যাবে তার বলার কিছু নেই, করার কিছু নেই। কথায় কথায় অর্ণব বলে দিলো বিয়ের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো সে একদম চায় না৷ কথাটা রিদওয়ানের কানে এমন ঠেকলো, বিয়েটা সে শিবলী ভাইয়ের সাথেই চায় না! রিদওয়ান নিজেই নিজের এমন ভাবনায় ঠোঁট চেপে হাসি আটকালো। আজকাল সে সব কিছুতেই বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় প্রদর্শন করে। কিংবা এই মুহূর্তে এমন কিছু একদমই কাম্য নয়। নিজেকে সামলাত দ্রুত হাতে খাবার গিলতে লাগল। বেশি সময় তাকে এই গিলে ফেলার অভিনয়ে থাকতে হয়নি। ভাগ্যিস ফোনটা এসেছিল! কল এটেন্ডের বাহানায় সে টেবিল ছেড়ে একটু দূরে গেল। ফোন রিসিভ করে গলার স্বর নিচু করে প্রথমেই প্রশ্ন করল, ‘কি সমস্যা খালামনি? বলেছি না তোমাকে আজ কল দিও না!
ওপাশের ব্যক্তিটি জবাব দিতেই রিদওয়ানের রাগ হলো খুব৷ সে আগের চেয়েও বেশি উত্তেজিত স্বরে বলক উঠলো, ‘কালকেও বারংবার ভিডিও কল করেছ আজ আবার! অর্ণব টের পেলে ভীষণ ঝামেলা করবে কিন্তু।’
রিদওয়ানের কথা আমলে নিলো না ওপাশের মানুষটি৷ আবারও অনুরোধ করলো অর্ণবকে দেখবে বলে। রিদওয়ান শুনলো না সে কথা উল্টো জবাব দিল, এখন কেন এত দেখতে ইচ্ছে করে? যখন দেখার কথা তখন তো দেখলে না! যখন তার দূর্বল কাঁধ জড়িয়ে ধরার কথা তখন কোথায় ছিলে? এখন তো সে তোমায় ছাড়া থাকতে জানে ফিরে আসছ বলো তো!’
অভিযোগের মত করে মুখের ওপর শুনিয়ে দিল রিদওয়ান। কালও রাতে তাকে ফোন করে আবদার করেছিলো ময়না ছেলে-মেয়েকে একটু চোখের দেখা দেখবে বলে। রিদওয়ান অনেক বার বারণ করেও শেষ পর্যন্ত ভিডিও কলে যুক্ত করেছে অর্ণবের মাকে। বিপদে পড়ে আজকাল একটু বেশিই মায়া জন্মেছে সন্তানের প্রতি! হাহ! আদিখ্যেতা লাগে রিদওয়ানের কাছে এমন মায়া। ঠুনকো এমন ভালোবাসা। মায়েরা কি এমন হয়! কই তার মা’তো কখনো স্বার্থ খুঁজতে তাদের কষ্ট দেয়নি৷ তবে খালামনি কেন পারলো না একটু গুছিয়ে, মানিয়ে থেকে যেতে! অর্ণব, অর্নির জীবনে তাদের মায়ের দরকার নেই এমনটাই মনে করে রিদওয়ান। সে আর সুযোগ দিতে চায় না খালামনিকে কোন সদ্ব্যবহার করার। আর তিনি যে অবস্থায় আছেন সে খবরটাও অজানা থাক অর্ণব, অর্নর কাছে।
চলবে