কুহেলিকা পর্ব-২৪(অন্তিম-পর্ব)

0
1314

#কুহেলিকা (অন্তিম-পর্ব)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

আকাশ দিশাকে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তারকে ডেকে আনতে চলে যায়। কিছু সময় পর ডক্টরকে সাথে নিয়ে ফিরে আসে। ডাক্তার এসেই সর্বপ্রথম দিশার হাতের পালস চেক করে। এরপর দিশার নিশ্বাস চলছে কিনা সেটা জানার জন্য দিশার নাকের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে চেক করার পর মলিন সুরে আকাশকে বলে,

–‘রোগী আর বেঁচে নেই। আরো মিনিট পাঁচেক আগেই রোগী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। আপনারা রোগীকে নিয়ে আসতে আসতেই রোগী পথের মধ্যেই মারা গিয়েছে। দুঃখীত আমায় ক্ষমা করবেন। এখন আর কিছু করার নেই আমার।’

ডাক্তারের কথা শুনে আকাশ পুরোপুরি পাথর হয়ে গিয়েছে। মাথার উপরের আসমানটা যেনো তার উপরে ভেঙ্গে পড়েছে। কলিজাটা ভয়ানক ভাবে মোচড়াতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে যেনো কোনো ভয়ানক জন্তু তার কলিজাটাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। নিশ্বাসটা ক্রমাগত অবিচল হয়ে আসছে। ডাক্তার এই মাত্র এটা কি শুনালো আকাশকে। আকাশ একদম অপ্রস্তুত ছিল ডাক্তারের মুখে এমন কথা শোনার জন্য। চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে শুরু করেছে। পা দু’টো হার মেনে আকাশের সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। আকাশ হাঁটু ভাজ করে ধপাস করে ফ্লোরের উপরে বসে পড়ে। দুনিয়াটা যেনো খুব সামান্য লাগছে আকাশের কাছে। ইচ্ছে হচ্ছে দুনিয়া থেকে নিজের পরিচয় টাও মুছে দিতে। কি করবে সে আর বেঁচে থেকে এই দুনিয়ায়। তার তো প্রয়োজন ছিল শুধুই দিশাকে, কিন্তু দিশা তো তাকে ছেড়ে চিরতরের জন্য চলে গেছে। আকাশ দিশার কথা ভেবে পাগলের মতন কাঁদতে কাঁদতে নিজে নিজে বলে,

–‘দিশা তুমি বুঝলে না। আমার তোমাকেই দরকার ছিল। তুমি ব্যতীত আমার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। গোটা দুনিয়ার সমস্ত কিছু এক পাশে রেখে আরেক পাশে তোমায় দিয়ে দাঁড়িপাল্লা করলে আমি নিতান্তই তোমাকে বেছে নিব। কিন্তু সেই তুমিই আমাকে রেখে পাষাণের মতন চলে গেলে। এখন আমার কি হবে। তোমায় পেয়ে অনেকটা সামলে উঠেছিলাম। তবে এখন তোমার নিষ্পত্তিতে আমি পুরোই ধ্বংস হয়ে যাবো। আমি পুরো শেষ।’

আকাশ প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ে। দুনিয়ার সমস্ত হতাশা যেনো আকাশের উপরে এসে হানা দিয়েছে। হতাশার কারনে নিজের অজান্তেই পাগলের মতন করছে আকাশ। আকাশের পাগলামি দেখে প্রভা দৌড়ে গিয়ে আকাশের সাথে ফ্লোরে গিয়ে বসে। এরপর নিজের বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে থাকে,

–‘আকাশ যা হয়েছে ভুলে যাও দয়া করে। উপর ওয়ালার লিখনে এই পর্যন্তই ছিল দিশার সাথে তোমার সফর। যখনি দিশার সময় ফুরিয়ে গেছে, তখনি উপর ওয়ালা দিশাকে উপরে নিয়ে গেছে। তাই প্লিজ পাগলামি না করে নিজেকে সামলে নাও। তুমি হাজার কাঁদলেও কি দিশা ফিরে আসবে বলো?’

প্রভার কথার উত্তরে আকাশ প্রভাকে বলে,

–‘হুম যা হয়েছে আমি সবটাই ভুলে যাবো। আমার কাছে ভুলবার মতন বিশেষ একটা ঔষধ আছে। সেটা খেলে সব কিছু সামলে নিতে পারবো। আর আমার নিজেকে সামলে নেওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন। না হয়তো দিশার স্মৃতি গুলো আমায় জীবিত লাশ বানিয়ে দিবে। মেয়েটা শেষ সময়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল তার হাতে বেশি সময় নেই। আমি যেনো তাকে নিজের বুকে আগলে রাখি। সে আমার বুকে মাথা রেখে আমার সাথে শেষ কিছুটা সময় হাসিখুশি ভাবে কথা বলে কাটাতে চায়। কিন্তু আমি তার শেষ কথা গুলো রাখতে পারিনি। তাকে হসপিটালে নিয়ে আসার জন্য তড়িঘড়ি করেছি। আর অন্যদিকে মেয়েটা আমার বুকের মধ্যেই ম/রে পড়ে রয়েছে। আমি কতোটা পাষাণ, যে একজন মৃত ব্যক্তির শেষ আশা টুকু জেনেও তা পূর্ণ না করে তাকে জোরপূর্বক হসপিটালে নিয়ে এসেছি। আমি তো চাইলে পারতাম দিশার শেষ চাওয়া গুলো পূর্ণ করতে। কিন্তু আমি তা না করে নিজের মনগড়া সব কিছু করেছি। মেয়েটার সাথে সেই প্রথম যেদিন দেখা হয়েছে, আমি সেদিন থেকেই নিজের সবকিছু তার উপরে চাপিয়ে দিয়েছি। সে পল্লীর মেয়ে বলে কখনো নিজেকে বড় মনে করেনি। সব সময় নিচু হয়ে থাকতো। সব সময় নিজেকে বিনয়ী করে রাখতো। আমার একটা কথা মুখ দিয়ে বের হওয়ার আগেই সেটাকে পালন করার জন্য দিশা মরিয়া হয়ে উঠতো। মনে হতো যেনো দিশা আমার কেনা গোলাম। অথচ দিশা চাইলে দুনিয়া কাঁপাতে পারতো। সত্তার দেওয়া তার কাছে অপরূপ সুন্দর একটা চেহারা ছিল। ওর বয়সী মেয়েরা আট দশটা ছেলেকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানোর ক্ষমতা রাখে। সেখানে দিশা আমার মতন পাষাণের জন্য পাগল ছিল। তার থেকেও বড় কথা দিশা নিষিদ্ধ নগরীতে থাকলেও দিশা শরীর ছিল একদম পবিত্র। শরীরে একটা কলঙ্কের দাগ ও ছিল না। দিশার ভার্জিনিটি আমি নষ্ট করেছি। দিশার সতিত্ব সর্বপ্রথম আমিই ভোগ করেছি। আর সর্বশেষ এসে মেয়েটা আমার কারনেই নিজের প্রাণ হারিয়েছে। দিশা কোনো এক কথার মারফতে বলেছিল, বাহিরের দুনিয়াটাতে শরীরের পাশাপাশি প্রাণের ও কোনো নিশ্চয়তা নেই। পল্লীতে শরীরের বিসর্জন ঘটলেও প্রাণের একটা নিশ্চয়তা আছে। আজ তার সেই কথাটা সত্যি হয়েছে। মেয়েটাকে আশ্বাস দেখিয়ে বের করে আনলাম পল্লী থেকে, আর শেষমেশ কিনা তাকে দুনিয়ার বুক থেকেই বিতারিত হতে হলো।’

–‘আকাশ দিশার স্মৃতিকে ভুলে যাও প্লিজ। ওর কথা যতো মনে করবে ততোই তোমার যন্ত্রণা প্রসারিত হবে।’

–‘হুম দিশার সমস্ত স্মৃতিকে আমি ভুলে যাবো। একদম চিরতরে ভুলে যাবো। না হয়তো দিশার স্মৃতি গুলো আমাকে আজীবন যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। তুই আমার থেকে একটু দূরে সর। আমি নিজেকে সামলে নিচ্ছি।’

আকাশের কথায় প্রভা আকাশকে ছেড়ে দেয়। প্রভা আকাশকে ছেড়ে দিতেই আকাশ নিজের কোমর থেকে মেশি/ন বের করে নিজের গলায় চে/পে ধরার জন্য মেশি/নটা গলার দিকে এগোতে থাকে। পাশ থেকে প্রভা আকাশের কর্মকান্ড দেখে খপ করে আকাশের হাত থেকে মেশি/নটা কেঁড়ে নিয়ে আকাশকে আবারো নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। প্রভার এমন আচরণে আকাশ প্রভাকে প্রশ্ন করে,

–‘কিরে তুই আমায় নিজেকে সামলে নিতে দিবি না?
কিরে আমায় দিশার স্মৃতি গুলো ভুলতে দিবি না?’

–‘আকাশ এসব কি করতে যাচ্ছিলি তুই হ্যাঁ?
মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? এভাবে নিজেকে শেষ করে দিয়ে কে নিজের স্মৃতিকে ভুলে?’

–‘আমি ভুলি। প্রভা আমার আর শক্তি নেই নিজেকে সামলে নেওয়ার। তাই নিজেকে শেষ করে দেওয়াটাই সমাধান।’

–‘আকাশ একদম বাজে কথাবার্তা বলবি না। তুই নিজেকে শেষ করে দিলেই সব কিছুর সমাধান হবে না। একটা খু/নি বুক ফুলিয়ে জমিনে ঘুরে বেড়াবে, আর তুই একজনের বিরহে নিজেকে শে/ষ করে দিবি, এমন পাগলামোর কোনো মানেই হয়না। আকাশ একবার ভালো করে তাকিয়ে দ্যাখ তোর ভালোবাসার মানুষের লাশটার দিকে। কতোটা ভালোবাসলে দিশা জন্য তুই নিজের জীবন দিতে যাচ্ছিস। অথচ তোর সেই ভালোবাসার মানুষটাকে ফারহান নামক জা/নোয়ারটা কতোটা যন্ত্রণা দিয়ে মে/রেছে৷ আকাশ নিজেকে শেষ করে দেওয়াটা সমাধান না। নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে কিছু কর এতেই তোর মঙ্গল। এভাবে কায়ারের মতন নিজেকে শেষ করে দিলে দিশাও অনেক বেশি কষ্ট পাবে। আকাশ আমি তোর সাথে বেঈমানী করেছি। তবে আমি কথা দিচ্ছি আমি তোকে পুরোপুরি সঙ্গ দিয়ে নিজের প্রায়শ্চিত্ত করবো। তবে তুই সমস্ত আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে বের করে ফারহানের একটা ব্যবস্থা কর। সে আমার আর তোর জীবন পুরোপুরি ধ্বং/স করে দিয়েছে। তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। ভয়ানক যন্ত্রণা দিয়ে মা/রবি তুই তাকে। দিশাকে সে যেভাবে কষ্ট দিয়ে মে/রেছে, আমি চাই তুই তার থেকেও হাজার গুন বেশি কষ্ট দিয়ে মা/রবি ফারহানকে। ওর
মৃ/ত্যুতে যেনো আট-দশটা মানুষ এমনিতেই শুধরে যায়। আর সাথে ওর চাচা টাকেও মৃ/’ত্যুর ঘাট অব্দি পৌঁছে দিয়ে আসবি।’

প্রভার কথা শুনে আকাশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়। প্রভা ঠিকই বলেছে। নিজেকে শে/ষ করে দেওয়াটা সব কিছুর সমাধান নয়। সমাধান হচ্ছে বেঁচে থেকে দিশার খু/নির উপরে বদ/লা নেওয়া। আকাশ প্রভার কথা মতন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে ভাবতে থাকে,

–‘হ্যাঁ প্রভা ঠিকই বলেছে। আমার ভালোবাসার মানুষটাকে ফারহান নিরীহ ভাবে মে/রেছে। আমি তাকে শে/ষ না করে নিজেকে শে/ষ করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম এতোটা সময়। নাহ আমি নিজের নয় ফারহানের দিন-তারিখ ঠিক করবো। আমার দিশাকে যেভাবে মে/রে/ছিস তার চেয়েও ভয়ানক ভাবে
মা/রবো তোকে আমি। একটু ধৈর্য ধর ফারহান। খুব জলদিই তোর দিন-তারিখ ঠিক করবো। আগে প্রিয় মানুষটার শেষ ক্রিয়াধারা করে আসি।’

আকাশ নিজেকে সামলে নিয়ে দিশার লাশ সঙ্গে বাড়ি ফিরে আসে। এরপর নিজের মা-বাবা এবং আরো কিছু লোকজনকে খবর দিয়ে দিশার লাশের শেষ ক্রিয়াধারা করে। দিশাকে যখন আকাশ মাটিতে দাফন করছিল, তখন আকাশের বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছিলো। কিন্তু ফারহানের উপরে ব/দলা নেওয়ার জন্যই সে কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিয়েছে। না হয়তো হসপিটালেই সে নিজেকে শে/ষ করে দিতো। বুকে পাথর চা/পা দিয়ে দিশাকে আঁধার কবরে রেখে এসেছে আকাশ৷ বুকের ভিতরটা কি পরিমাণ খাঁখাঁ করছে আকাশের সেটা একমাত্র আকাশ এই জানে। আকাশ ভেবে কুল পাচ্ছে না, যেই মেয়েটা ঠিকঠাক মতন নিজেকে সামলে রাখতে জানতো না, সেই মেয়েটা একাকী আঁধার কবরে থাকবে কি করে। যেই মেয়ে টা তার জন্য এতোটা পাগলামি করতো, সে আজ তাকে ছেড়ে একা রাত কাটাবে কি করে। দিশার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে দিশাকে নিয়ে সে হাজার রকমের ভাবনা চিন্তা করছে। ভাবতে এক পর্যায়ে ফুফিয়ে বলে উঠে,

–‘কলিজারে আমার উপরে ভরসা করে তুমি পল্লী ছেড়ে এসেছিল। কিন্তু আমি তোমার সেই বিশ্বাসটা রাখতে পারিনি। তুমি আমায় প্রায় বলতে পল্লীতে প্রাণ হারাবার ভয় নেই। পল্লীটাই তোমাদের জন্য সুরক্ষিত জায়গায়। কিন্তু সেই তুমিই আমার ভরসায় বাহিরের দুনিয়ায় কদম ফেলেছো। আর আমি কি করলাম তোমায় প্রা/ণে মে/রে ফেললাম। তোমার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা শেষ করে দিয়ে তোমায় মৃত্যুর পর্যটক বানিয়ে দিয়েছি। এখন তুমি মাটির নিচে বসবাস করবে। এখন তুমি মাটির নিচের বিষয় বস্তু গুলাকে দেখে বেড়াবে। উপরে আসার সমস্ত রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেছে তোমার। কলিজারে আমি জানি না তুমি আমায় ক্ষমা করবে কিনা। তবে বিশ্বাস করো আমিও তোমায় খুব বেশি ভালোবাসতাম। তোমার জন্য বাবার মুখে মুখে তর্ক করেছি। তোমার জন্যই আমি বাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। আমার সব কিছুর একটাই লক্ষ্য মাত্রা ছিল, সেটা হলো তুমি। কিন্তু ফারহান নামক শ/য়/তানটা তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছে। আমি এর- ব/দলা ওর থেকে অবশ্যই নিব। তবে কবরে শুয়ে থাকা হে প্রিয়তমা, তুমি আমায় মাফ করে দিও।’

আকাশ দিশার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দিশা থেকে মাফ চেয়ে চোখের পানি মুছে বাসায় চলে আসে। আকাশের বাবা-মা সবাই আকাশকে বলে তাঁদের সাথে
বাড়িতে ফিরে যেতে। তবে আকাশ বলে দেয় সে একাই এই বাড়িতে থাকবে। আকাশের কথায় আকাশের বাবা-মা আর কিছু না বলে চুপচাপ নিজেদের বাড়িতে ফিরে যায়। আকাশের বাবা-মা চলে যেতেই আকাশ পূর্বের পরিচিত একজনকে ফোন করে কথাবার্তা বলে। দু-চার মিনিট কথাবার্তা বলে ফোন কেটে দুই ঘন্টা বাসায় বসে থাকে। দুই ঘন্টা পর ফোনে একটা ম্যাসেজ আসতেই আকাশ গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। বেশ অনেকটা সময় গাড়ি ড্রাইভ করে একটা নির্জন অন্ধকার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। বাড়িতে পৌঁছাতেই একজন ব্যক্তি আকাশকে বলে উঠে,

–‘ভাই অমানুষের বা/চ্চা দু’টোকেই ধরে এনে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছি।’

–‘ঠিক আছে ভিতরে চল দেখছি। আর আমি যা যা বলেছি সব রেডি করে রেখেছিস তো?’

–‘হুম ভাই সব রেডি আছে।

আকাশকে ভাই ডাকা ব্যক্তিটাকে সঙ্গে নিয়ে আকাশ অন্ধকার বাড়ির কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করে। কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখে তার দুই শিকারকে চেয়ারের উপরে বেঁ/ধে রেখেছে তার ছোট ভাই টা। যার নাম হচ্ছে রিফাত। বহু বছর আগ থেকেই রিফাত আকাশের হয়ে কাজ করে। সে কয়েকজন ছেলেপেলেকে সঙ্গে নিয়ে ফারহান এবং তার চাচাকে উ/ঠিয়ে এনে চেয়ারের সাথে বেঁ/ধে রেখেছে। আর পাশের একটা চেয়ায়ের উপরে আকাশের কথা মতন একটা টুলবক্স রেখে দিয়েছে। আকাশ ফারহান এবং তার চাচার একদম সামনা-সামনি একটা চেয়ার টেনে বসে। দু’জনেই অচেতন। আকাশের রিফাতকে বলে তাঁদের শরীরে পানি মে/রে তাঁদেরকে জাগ্রত করতে। আকাশের কথা মতন রিফাত দু’জনের গায়ে পানি ঢেকে তাদেরকে জাগ্রত করে। দু’জন জাগ্রত হয়ে আকাশকে দেখে অবাক হয়ে যায়। ফারহান আকাশকে দেখা মাত্রই চেঁচিয়ে বলে উঠে,

–‘তোর বাহাদুরি এখনো কমেনি? তোর প্রিয়তমার মৃত্যু দেখেও কি তোর হৃদয় কাঁপেনি ভ/য়ে? এতো কিছুর পরেও কোন সাহসে তুই আমাদেরকে লোক দিয়ে উঠিয়ে এনেছিস? এখনো সময় আছে নিজের ভালো চাস তো আমাদেরকে মুক্ত কর। না হয় তোকেও তোর প্রেমিকার মতন ভয়ানক মৃত্যুদন্ড দিব।’

আকাশ ফারহানের কথার কোনো উত্তর করে না। চুপচাপ টুলবক্স থেকে কস্টেপ বের করে ফারহানের এবং তার চাচার মুখে লাগিয়ে দেয়। এরপর ছোট একটা কাটার বের করে ফারহানের শ/রীরে গণহারে আঁকতে আরম্ভ করে। ফারহান সজোড়ে চেঁচাচ্ছে, কিন্তু আকাশ না থেমে তার কাজ চালিয়ে যায়। ফারহানের পুরো শরীর কাটার দিয়ে ক্ষ/ত বানিয়ে রিফাতকে দিয়ে লবন-মরিচ আনিয়ে ফারহানের সারা গা/য়ে মেখে দেয়। তারপর টুলবক্স থেকে বড় একটা চাইনিজ কু/ড়াল বের করে সেটা দিয়ে কু/পিয়ে ফারহানের দু’টো হাত শরীর থেকে আ/লাদা করে ফেলে। ফারহান আকাশের আচরণে ষাঁড়ের মতন চেঁচাতে আরম্ভ করে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আকাশ একে একে চাইনিজ কু/ড়ালটা দিয়ে ফারহানের পা দু’টো ও হাঁটু থেকে কু/পিয়ে
আ/লাদা করে ফেলে। এরপর হাত-পা চারোটা এক জায়গায় করে রিফাতকে বলে,

–‘রিফাত বড় কড়াইয়াতে তেল গরম করেছিস?’

–‘জ্বি ভাই করে রেখেছি। পাশের রুমেই দু’জন মিলে দুই ঘন্টার উপরে তেল গরম করছে বড় কড়াইয়াতে।’

–‘ঠিক আছে এই দুটোকে সেখানে নিয়ে চল। আর হাত-পা গুলো একজনকে এসে ঐ রুমে নিয়ে যেতে বল।’

–‘ঠিক আছে ভাই।’

আকাশের কথা মতন রিফাত ফারহান এবং তার চাচাকে অন্য একটা রুমে নিয়ে যায়। ফারহানের শরীর থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছে। আরেকজন এসে ফারহানের কা’/টা হাত-পা গুলা নিয়ে যায়। অন্য রুমে নিয়ে যাওয়ার পর আকাশ ফারহানের সামনেই তার হাত-পা গুলা তেলের কড়াইয়ার উপরে ছেড়ে দেয়৷ মিনিট দুয়েক যেতেই ফারহানের হাত-পা তেলের উত্তাপে একদম পুড়ে কালো হয়ে যায়। আকাশ রিফাতাকে ইশারা করে বলে পোড়া জিনিস গুলা কড়াউয়া থেকে নামাতে। আকাশের ইশারা মতন রিফাত কড়াইয়া থেকে পো/ড়া হাত-পা গুলো নামিয়ে ফেলে। পো/ড়া হাত-পা গুলো কড়াইয়া থেকে নামাতেই আকাশ ফারহানকে উ/ঠিয়ে নিয়ে সোজা ফুটন্ত তেলের উপরে ছেড়ে দেয়। ফারহান সাথে সাথে একটা বিকট আওয়াজে চিৎকার মারে। ফারহানের চিৎকার শুনে ফারহানের চাচার কলিজা পুরোপুরি শুঁকিয়ে গেছে। চেহারা ভয়ে কুঁচকে আছে। ফারহানের চাচার ভীত চেহারা দেখে আকাশ বলে উঠে,

–‘দ্যাখ তোর ভাই পুতের অবস্থা। প্রাণ হারানোর পাশাপাশি তেলের উত্তাপে পুড়ে কালো হয়ে গেছে। এখন তোর পালা। এই রিফাত কড়াইয়া থেকে
জা/নোয়ার টার দে/হ নামিয়ে এবার এই বেটাকে
তে/লের উপরে ছাড়৷’

আকাশের কথা শুনে ফারহানের চাচা মিনতি করতে শুরু করে আকাশের কাছে। কিন্তু আকাশ তো মিনতি শুনবার মতন লোক হয়। ফারহানের চাচাকেও ফারহানের মতন তেলের কড়াউয়ার মধ্যে ছে/ড়ে দেয় রিফাত এবং তার সাথের একজন মিলে। ফারহানের চাচাও মিনিট কয়েকের মধ্যে পু/ড়ে ছারখার হয়ে গেছে। প্রা/ণ যাওয়ার পাশাপাশি শরীরের সমস্ত গোস্তো ঝলসে গেছে ফারহানের চাচার। দু’জনকে ভয়াবহ মৃ/ত্যু দি/য়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসে নির্জন জায়গাটা থেকে আকাশ। গাড়ি টেনে বাড়িতে এসে পৌঁছায়। নিজের রুমে শুয়ে দিশার কথা ভাবতে থাকে। দিশার কথা ভাবতেই আকাশের মনটা ছটফট করতে শুরু করে। কারন দিশার মৃত্যুর প্র/তিশো/ধ নেওয়ার জন্য না হয় সে সাময়িকের জন্য দিশাকে ভুলে খুনিদেরকে মা/রবে বলে প্রতিক্ষা করে বসে ছিল। কিন্তু এখন তো তার প্র/তিশো/ধ পূরণ হয়েছে। এখন কি নিয়ে বাঁচবে সে। মাথায় কাজ করছে না আকাশের। চোখের পানি ছেড়ে বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করে আকাশ। কিছুক্ষণ পর সে হুট করেই বিছানা ছেড়ে উঠে চোখের পানি মুছে নিয়ে একটা ব্যাগে কাপড় চোপড় গুছিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। আর যাওয়ার আগে ঘরের দরজায় একটা চিঠি রেখে যায়। একদিন পর প্রভা আকাশের সাথে দেখা করতে এসে দরজার সামনে আকাশের রেখে যাওয়া চিঠিটা সে দেখতে পায়। প্রভা চিঠিটা পড়ে কান্না করতে করতে আকাশের বাসায় গিয়ে আকাশের মা-বাবার হাতে চিঠিটা দেয়। আকাশের বাবা চিঠিটা খুলতেই চিঠিতে লিখে যাওয়া কথা গুলো তিনি দেখতে পায়। আকাশের বাবা চিঠিটা পড়তে আরম্ভ করে..

–‘চিঠিটা কার হাতে গিয়ে পৌঁছাবে আমি জানি না! তবে আমার বিশ্বাস এটা আমার বাবার হাতে গিয়েই পৌঁছাবে। তাই বাবাকে সম্মোধন করেই বলছি। প্রিয় বাবা-মা তোমরা আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি আর কখনো বাড়ি ফিরবো না। সব কিছু ছেড়ে অজানা এক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে পড়েছি। বিশেষ করে বাবা তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও। তোমার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা আমি শেষ করে দিয়েছি। কয়দিন আগে তুমি আমার নামে অফিসের সমস্ত কাগজপত্র উইল করে দিয়েছো। কিন্তু আমি কাউকে কিছু না বলে দূর পথের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছি। বাবা তুমি তোমার সমস্ত সম্পত্তির নতুন করে কাগজ বানিয়ে ছুটকির নামে করে দিও। আমার টাকা পয়সা দুনিয়াদারীর কোনোই প্রয়োজন নেই। আমার দুনিয়া ছিল যেই মানুষটা, সেই মানুষটা অন্ধকার কবরে শুয়ে দিন কাটাচ্ছে। আর আমি কিনা দালান বাড়িতে থেকে ভালো মন্দ খেয়ে সময় কাটাবো। বাবা আমি কখনোই এমনটা করতে পারবো না। মেয়েটা আমার উপরে বিশ্বাস করে পল্লী ছেড়ে আমার সাথে থাকতে এসেছে। কিন্তু শেষমেশ আমার কারনেই তাকে পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে। বাবা আমার চাই না আর কিছু। একে একে দু’বার আঘাত পেয়েছি। প্রভাকে ভালোবেসে প্রতারণার শিকার হয়েছি। দ্বিতীয়ত দিশাকে ভালোবেসে তাকে নিজের কাছে আগলে রাখতে পারিনি। উল্টো তাকে নিজের হাতেই দাফন করে এসেছি। মেয়েটা শুধু আমার উপরে বিশ্বাস করে ঠকেছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতোদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন পাগলের মতন রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াবো। আমার পাগলিটা আঁধার কবরে একা থাকতে পারবে না। প্রচন্ড কষ্ট হবে তার একা থাকতে। তাই আমিও রাস্তাঘাটে ঘুরে বেরিয়ে একা থেকে দিশার কষ্টটা উপলব্ধি করবো। তোমরা আমার আর কখনো খোঁজ করো না। আমি একা থাকতে চাই। আর আমি যেখানেই থাকি না কেন সব সময় তোমাদের কথা স্মরণ রাখবো। ভালো থেকো তোমরা সকলেই।

ইতি
আকাশ
আকাশের বাবা-মা আকাশের চিঠিটা পড়ে কান্না করতে আরম্ভ করে। সাথে প্রভাও অনুশোচনায় ভুগে মরছে। তার জন্যই সব কিছু হয়েছে। সে যদি ফারহানের ফাঁদে পা না দিতো, তাহলে আজ আকাশের এই দূর্দশা হতো না। আর কখনোই দিশা মরতো না। কারন সে ঠিকঠাক থাকলে আকাশ কখনোই দিশা পর্যন্ত পৌঁছাতো না। চোখের পানি ছেড়ে পাগলের মতন কাঁদতে শুরু করে প্রভা। কিন্তু কেঁদে আর লাভ কি। নিজের একটা ভুল পদক্ষেপ নিজের পাশাপাশি বাকি আরো কয়েকটা মানুষের জীবন শেষ করে দিতে পারে। সেজন্য সবাই কোনো কিছু করার আগে সাবধান। যা করবেন ভেবেচিন্তে করবেন।

সমাপ্তি….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে