কুহেলিকা পর্ব-২২

0
775

#কুহেলিকা (পর্ব-২২)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

–‘আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পরেও প্রেমিকের উপরে অবৈধ মায়া হচ্ছে বুঝি? শোন তোর আকাশকে মরতেই হবে। আমার কাজে বাঁধা দিতে আসলে তোকেও তোর প্রেমিকের মতন মে/রে মাটির নিচে চাপা দিয়ে দিব। আজ দু’বছর ধরে তোর অবৈধ প্রেমিককে মারার জন্য পাগলের মতন এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। এবার তাকে মরতেই হবে। সময় এসে গেছে গেছে তার উপরে যাওয়ার।’

ফারহানের কথা শুনে প্রভা পুরো চমকে উঠে। আকাশের উপরে ফারহানের কিসের এতো ক্রোধ, যার জন্য ফারহান আকাশকে মা/রার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রভা কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। প্রশ্নবোধক চাহনিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি ফারহান পৈচাশিক ভাবে হাসতে আরম্ভ করে। প্রভা রীতিমতো আরো অবাক হয়ে যায় ফারহানের শয়তানি মার্কা হাসি দেখে। বিস্মিত হয়ে ফারহানের দিকে দৃষ্টিপাত করে তাকিয়ে আছে। প্রভার আশ্চর্যান্বিত চাহনি দিকে ফারহান বলে উঠে,

–‘কিরে অবাক হচ্ছিস বুঝি আমার নতুন রূপ দেখে? শোন এখনো তো কিছুই দেখিস নি। এই অল্প টুকু দেখে এভাবে চমকে গেলে হবে নাকি? তোর তো এখনো অনেক কিছু দেখা বাকি এবং অনেক কিছুই শোনা বাকি।’

–‘ফারহান মানে কি এসবের?’

প্রভার প্রশ্নে ফারহান প্রভার গলা ছেড়ে দিয়ে বলে,

–‘মানে টা সত্যিই জানতে চাইছিস তুই?’

–‘হুম আমি মানেটা জানতে চাই। তোমার সাথে আকাশের কিসের এতো শত্রুতা?’

–‘তাহলে শোন বলছি। তুই যখন আমার সাথে মেলামেশা করেছিস তখন হয়তো খেয়াল করেছিস আমার পিঠে অনেক গুলো সেলাইয়ের দাগ?’

–‘হুম দেখেছি।’

–‘তোর প্রিয় আকাশ আজ থেকে দু’বছর আগে আমার পিঠে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিল। আমি সেই থেকেই সঠিক সময়ের সন্ধানে বসে আছি।’

–‘আকাশ তোমায় কেন ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিল?’

–‘তুই তো ইতিমধ্যে জেনেই গেছিস আমার মেয়ের নেশা বেশি। আমি মেয়েদের সাথে অবৈধ রংতামাশায় লিপ্ত হই। আজ থেকে দু’বছর আগে একটা মেয়ের সাথে প্রেমের নাটক করে তাকে ব্যবহার করেছিলাম। তখন তোর প্রিয় আকাশ ছিল নাম করা মাস্তান। আমি মেয়েটাকে ব্যবহার করে ছেড়ে দেওয়ায় সেই মেয়েটা গিয়ে তোর অবৈধ প্রেমিককে বিচার দেয়। তখন তোর প্রেমিক ছেলেপেলে নিয়ে এসে আমায় অনেক মারধর করে। এবং আমার শরীরের অনেক কয় জায়গায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে। ছুরির আঘাত শুধু আমার পিঠেই নয় শরীরের আরো অনেক অংশেই রয়েছে। আমি সেদিন কোনোমতে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়েছি। আর পালাতে পালাতে নিয়ত করেছি এই আকাশের বাচ্চাকে আমি দুনিয়া থেকেই বিতারিত করবো। আর সেই থেকেই পিছনে লাগি তোর আকাশের। তবে কোনো ভাবেই তোর আকাশকে কিছু করতে পারছিলাম না। বেশ চেষ্টা চালিয়েছি তোর আকাশকে মারবার, কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। তবে আমি পরাজিত হতে মোটেও রাজি নই। সেজন্য বুদ্ধি করে নতুন ফন্দী এঁটেছি। সর্বপ্রথম প্ল্যান মোতাবেক তোকে আকাশ থেকে দূরে সরিয়ে নিজের ইচ্ছে মতন ব্যবহার করেছি।
যাতে করে তোর আকাশ কষ্ট পেয়ে ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু জানো/য়ার টা কষ্ট পেয়েছে ঠিক কিন্তু ভেঙ্গে পড়েনি। তাই এবার প্রথমে দিশাকে শেষ করবো। তারপর তোর আকাশের বুকে পাড়া দিয়ে তার গলা শরীর থেকে
কে/টে আলাদা করে ফেলবো। এরপরেই পূর্ণ হবে আমার বদলা নেওয়া।’

ফারহানের কথা শুনে প্রভার শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। ফারহান তাকে কখনোই ভালোবাসেনি। তাকে শুধুমাত্র শিকার ধরবার আহার্য হিসেবে ব্যবহার করেছে। প্রভার চোখের কোণে পানি চলে এসেছে। কি করবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। ফারহানের ফাঁদে পা দিয়ে সে কতো বড় ভুল করে এখন হারে হারে টের পাচ্ছে। ফারহানের জন্য সে তার ভালোবাসার মানুষ টাকে ধোঁকা দিয়েছে। যেই মানুষ টাকে সে একটা সময় অনেক বেশি ভালোবাসতো, সেই মানুষটার মনে সে আঘাত করেছে। যেই মানুষটা শুধু তার জন্যই গুন্ডামি মাস্তানি সব কিছু ছেড়ে দিয়েছে, সে সেই মানুষটার সাথেই বেঈমানী করে অন্য পুরুষের সাথে বিছানায় গিয়েছে। প্রভার চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে এখন। চোখের পানি গুলো ঝর্ণার পানির ন্যায় টুপটুপ করে পড়ছে। আকাশের জন্য ভিষণ খারাপ লাগছে প্রভার। অন্যদিকে আবার ফারহানের উপরে জঘন্য পরিমাণে রাগ উঠছে তার। ইচ্ছে করছে ফারহানের গলা চিপে ধরে তাকে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দিতে। ভয়ানক রকমের অস্বস্থি লাগছে প্রভার। চোখের পানিতে প্রভার চেহারা পুরো ভিজে গেছে। ফারহান তার সুন্দর জীবনটা পুরো তসনস করে দিয়েছে। এখন প্রভার জীবনের কোনো আর মাইনে নেই। তার জীবনটাকে পুরোপুরি গেম বানিয়ে দিয়েছে ফারহান। হতাশায় ভুগতে শুরু করেছে প্রভা। এতো কিছুর পরেও প্রভা অকপটে ফারহানকে জিজ্ঞাস করে,

–‘এই জঘন্য গেমটা কি করে খেলতে পারলে ফারহান তুমি? তোমার থেকে কোনোদিন ও আমি এমটনা আশা করিনি। তুমি আমার জীবনটা পুরো শেষ করে দিলে।’

–‘আরেহ তোর জীবন শেষ করলেও তো তোকে নিজের বউ বানিয়েছে। তবে আকাশকে তো পুরোপুরি মেরেই ফেলবো।’

–‘ফারহান কখনোই তুমি এমনটা করতে পারবে না। আমি থাকতে আকাশের গায়ে একটা নখের আঁচড় ও আমি লাগতে দিব না। আকাশের কিছু করতে হলে তোমার আগে আমাকে শেষ করতে হবে।’

–‘প্রভা আমি ক্ষুদার্ত পশু। আমি এখন সামনে যা পাবো তাই গিলে খাবো। কোনো কিছুই দেখার সময় নেই এখন আমার কাছে। অহেতুক আমার সামনে আসিস না। না হয়তো কোনো কারন ছাড়াই তোর প্রাণ যাবে।’

–‘জীবন তো এমনিতেও শেষ। এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। যার সাথে কোনো কারন ছাড়াই বেঈমানী করে তাকে কষ্ট দিলাম, তার প্রায়শ্চিত্তে না হয় প্রাণ টাই যাবে।’

প্রভার কথা শুনে ফারহান রেগে গিয়ে প্রভাকে ধাক্কা দিয়ে আবার মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে,

–‘তোর আকাশ কোনো ভাবেই বাঁচবে না। সে আমার সাথে বাদে আমার চাচার গায়েও হাত উঠিয়েছে দিশা নামক মেয়েটার কারনে। সেদিন পল্লীতে গিয়ে আমার চাচা দিশাকে চাওয়ায় তোর আকাশ নাকি আমার চাচার গায়ে হাত উঠিয়েছে। তাই চাচা বললো যতো টাকা লাগবে লাগুক, কিন্তু আকাশকে মরা চাই। সেজন্য তোর আকাশকে তো কোনো ভাবেই ছাড়া যাবে না। একজন নয় দু’জনের বদলা নিব আমি তার উপরে। নিজের ভালো চাস তো আমার রাস্তায় আসবি না। না হয়তো তোর অবস্থাও ভয়াবহ হবে। চললাম আমি এখন। এভাবেই মাটিতে ছিটকে পড়ে থাক।’

ফারহান প্রভাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তাকে একা রেখে চলে যায়। অপরদিকে ফারহানের কথা শুনে প্রভার বুঝতে বাকি নেই ফারহানের পুরো গুষ্টির মানুষজন একই ধরনের। সবাই শরীর খেকো। নারীদের শরীর খাওয়ার তাড়না তাদের পুরো গুষ্টির মানুষেদের মধ্যেই বিরাজমান। চাচা এবং ভাইয়ের ছেলে সবাই এক ঘাটের মাঝি। তবে যাই হবে হোক প্রভা আকাশের কোনো ক্ষতি হতে দিবে না। তার জীবনটা তো ফারহান শেষ করে দিয়েছে। কিন্তু সে চাইলে আকাশকে বাঁচাতে পারে। সেজন্য সে শক্তি যুগিয়ে মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়। এরপর একটা গাড়ি ঠিক করে আকাশের বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়। আর মনে মনে ভাবতে থাকে,

–‘আমি গিয়ে সমস্ত সত্যি বলে দিব আকাশকে। আমি চাই না আকাশের কোনো ক্ষতি হোক। আমি প্রতারকের পাল্লায় পড়ে আকাশের সাথে বেঈমানী করেছি। মানুষটা এমনিতেই কষ্ট পেয়েছে আমার আচরণে। এর উপরে ফারহান যদি তার কোনো ক্ষতি করে বসে তাহলে তো বেশ খারাপ হবে। নাহ আকাশকে গিয়ে ফারহানের সমস্ত সত্যি বলে দিব। আমি জানি আমায় হয়তো কখনো আকাশ মাফ করবে না। তবে আমার জন্য যদি আকাশের প্রাণটা বেঁচে যায়, তাহলে সে সুন্দর একটা সংসার গড়তে পারবে দিশার সাথে। আর আমারো পাপের বোঝাটা কমবে।’

প্রভা আকাশের বিষয়ে ভাবতে ভাবতে আকাশের বাসায় গিয়ে হাজির হয়। আকাশের বাসায় পৌঁছে কলিংবেল বাজানোর পাশাপাশি জোরে জোরে দরজার বাড়ি দিয়ে আকাশকে ডাকতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ ডাকার পর দিশা এসে দরজা খুলে। দিশা দরজা খুলতেই প্রভা দিশাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘দিশা আকাশ কোথায়?’

–‘কেন উনাকে দিয়ে আপনার কাজ কি? আর আপনি কি কারনে আবার এখানে এসেছেন? দেখুন আপনি এখান থেকে চলে যান। না হয়তো উনি এসে আপনাকে দেখলে বেশ রাগারাগি করবে। প্লিজ আপনি চলে যান।’

–‘দিশা আমি চলে যাবো। আমি এখানে থাকার উদ্দেশ্যে আসিনি। আমি আকাশকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি। কথা গুলো বলেই আমি চলে যাবো। তুমি প্লিজ আকাশকে ডেকে দাও। না হয় আমাকে ওর কাছে নিয়ে চলো।’

প্রভার কথায় দিশা কিছু বলতে যাবে এমন সময় আকাশ পিছন থেকে এসে দিশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–‘দিশা আমাদের বাড়ির দরজায় বেঈমানটা দাঁড়িয়ে আছে কেন?’

–‘আপনার সাথে নাকি কি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।’

–‘দিশা এই সব বিশ্বাসঘাতকের কথা কখনোই বিশ্বাস করতে নেই। সে তোমার আর আমার সুন্দর সম্পর্কটাকে ভাংতে এসেছে। দরজা লাগিয়ে দাও বেঈমান টার মুখের উপরে। এমন বেঈমানের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা, চেহারাটা দেখার পর্যন্ত ইচ্ছে নেই। দরজা লাগাও তুমি জলদি।’

আকাশের কথায় দিশা প্রভার মুখের উপরে দরজা লাগিয়ে দেয়। প্রভা দরজার বাহির থেকে বেশ করবার আকাশকে মিনতি করে তার সাথে একটু কথা বলতে, কিন্তু আকাশ তার সাথে কথা না বলে দিশাকে নিয়ে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে নিজেদের মতন কথাবার্তা বলতে থাকে। এভাবেই পুরোটা দিন কেটে গেছে। পরেরদিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে আকাশ দিশাকে বলে,

–‘দিশা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’

–‘কি সারপ্রাইজ? ‘

–‘আজ নয় আগামীকাল বলবো।’

–‘আচ্ছা।’

–‘শুনো এখন আমি অফিসে চলে গেলাম। তুমি সাবধানে বাসায় থেকো। আর ওয়ারড্রবের মধ্যে আমার একটা পুরাতন ফোন আছে। যেটাতে আমারি একটা সিম লাগানো না। ফোনটা ওয়ারড্রব থেকে বের করে নিজের কাছেই রেখো। আমি যেনো কোনো কারনে ফোন দিলে তোমায় পাই।’

–‘আচ্ছা। আর শোনেন আপনিও সাবধানে যাবেন।

আকাশ দিশাকে বাড়িতে রেখে গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। খুশি মনে গাড়ি ড্রাইভ করছে আকাশ। আজ বাদে কাল সে দিশাকে নিজের করে নিবে। এরপর দিশার সাথে সুন্দর একটা সংসার গড়বে সে। প্রভাকে নিয়েও সে একই স্বপ্ন দেখেছিল, কিন্তু প্রভা তার সমস্ত স্বপ্নকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। তবে যাক বর্তমানে প্রভার অভাব পূরণ করতে দিশা তার লাইফে চলে এসেছে। এখন তার আর কোনো পিছুটান নেই। দিশাকে নিজের করে বাধাহীন ভাবে সে সামনে এগিয়ে যাবে। দিশা আর নিজের বিষয়ে ভাবতে ভাবতে আকাশ অফিসে পৌঁছে যায়। অফিসে পৌঁছে কেবিনে বসে নিজের মতন কাজকর্ম করতে আরম্ভ করে। ঘন্টা-দুয়েক যেতেই অফিসের ম্যানেজার এসে আকাশকে বলে,

–‘স্যার একটা মেয়ে আপনার সাথে কথা বলার জন্য অফিসের বাহিরে বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অফিসের দারোয়ান তাকে বেশ কয়বার আপনার সাথে দেখা করবার কারন জিজ্ঞাস করেছে, কিন্তু মেয়েটা দারোয়ানের কথার কোনো উত্তর না করে বার বার একটা কথাই বলছে, সে নাকি আপনার সাথে দেখা করে আপনাকেই কারনটা বলবে।’

–‘আচ্ছা কেবিনে পাঠিয়ে দিন।’

–‘ঠিক আছে স্যার।’

ম্যানেজার কেবিন থেকে বেরিয়ে মেয়েটাকে কবিনে পাঠিয়ে দেয়। আকাশ মেয়েটাকে দেখা মাত্রই রেগেমেগে চেয়ার থেকে উঠে পড়ে। কারন মেয়েটা আর অন্য কেউ নয় মেয়েটা হচ্ছে প্রভা। আকাশের চরম রাগ হচ্ছে প্রভাকে দেখে। রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে প্রভাবে বলে উঠে,

–‘এই নির্লজ্জ মেয়ে লোক, এতোকিছুর পরেও আমার অফিসে কি করছিস তুই? তোর কি শরম লজ্জা বলতে কিছু নেই নাকি?’

–‘আকাশ তুমি আমাকে যা খুশি বলো, কিন্তু অনুরোধ আমার কথাটা একবার শান্ত মাথায় শোনো। তোমার সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আমার।’

–‘কিসের এতো গুরুত্বপূর্ণ কথা তোর আমার সাথে?’

–‘আকাশ ফারহান তোমাকে প্রাণে মেরে ফেলবার প্ল্যান সাজিয়েছে। আর তার সাথে দিশার ও ক্ষতি করবে বলে ঠিক করে নিয়েছে।’

–‘মানে কি?’

–‘মানে হলো আকাশ দু’বছর আগে নাকি সে কোনো এক মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ব্যবহার করায় সেই মেয়ে নাকি তোমায় বিচার দিয়েছিল। যার দরুন তুমি নাকি ছেলেপেলে সঙ্গে নিয়ে তাকে মেরেছো এবং সাথে ছুরি দিয়েও নাকি তার শরীরে আঘাত করেছিলে। ফারহান সেই থেকেই সে তোমার পিছু নিয়েছে। সে তোমার পিছু করতে করতে প্ল্যান সাজিয়ে আমাকে তোমার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এখন তার নেক্সট প্ল্যান হচ্ছে তোমাকে মেরে ফেলা এবং তার সঙ্গে দিশার বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করা। আকাশ আমি ফারহানের আসল উদ্দেশ্য গতকালকেই জানতে পেরেছি। তুমি প্লিজ সাবধানে থেকো। এবং দিশাকেও সামলে রেখো।’

–‘কিহহ তার মানে এটাই সেই ছেলে যাকে আমি দু’বছর আগে মেরেছিলাম। কিন্তু আমি তাকে সেদিন দেখেও চিনতে পারলাম না কেন!

–‘আকাশ অনেকদিন হয়ে গেছে দেখে হয়তো ফারহানের চেহারা তুমি ভুলে গেছো।’

–‘হ্যাঁ সেটাই হবে। তবে শোন ফারহান যদি আমার সাথে লাগতে আসে তাহলে এবার তার মৃত্যু নিশ্চিত আমার হাতেই হবে। এবার আর সে আমার হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে না।’

–‘আকাশ আমিও চাই শয়তান টা তোমার কোনো ক্ষতি না করুক। বরং তুমিই তাকে একটা সাজা দাও। কিন্তু কথা হচ্ছে দিশাকে তুমি পুরোপুরি ভাবে সুরক্ষায় রেখো। আমার তো ভাগ্য খারাপ। কিন্তু আমার মতন ভাগ্য যেনো দিশার না হয়। অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমার সাথে সংসার করবো। তবে শয়তানের পাল্লায় পড়ে সেটা আর করা হলো না। তাই আমি মন থেকে চাই দিশাকে নিয়ে তুমি সামনে এগিয়ে যাও। আর মেয়েটাকে সব সময় ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখো। না হয়তো শয়তান টা যে কোনো সময় দিশার কোনো ক্ষতি করে দিবে। শয়তানটার কোনো বিশ্বাস নেই।’

প্রভার মুখে দিশার কথা শুনে আকাশ চমকে উঠে। কারন সে দিশাকে একা বাড়িতে রেখে এসেছে। আকাশ তাড়াতাড়ি বাসায় রেখে আসা তার পুরোনো ফোনে কল লাগায়। রিং পড়ছে কিন্তু দিশা ফোন রিসিভ করছে না। দিশা ফোন রিসিভ না করায় আকাশের ভয় লাগতে শুরু করে। আকাশ আবারো কল করে তার পুরোনো ফোনে। এবার দিশা ফোন রিসিভ করে। দিশা ফোন রিসিভ করতেই আকাশ দিশাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘দিশা কি করছো তুমি?’

দিশা আকাশের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে,

–‘পরে এসে কথা বলছি আপনার সাথে। কেউ একজন বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজার কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছে। আমি দেখে আসছি কে এসেছে। তারপর এসে আপনার সাথে কথা বলবে।’

দিশার কথা শুনে আকাশ চেঁচিয়ে বলে উঠে রুম থেকে এক কদম ও বের না হতে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আকাশ কিছু বলে শেষ করার আগেই দিশা ফোন রেখে দিয়ে চলে গেছে দরজায় কে এসেছে দেখার জন্য। এদিকে আকাশের গলা পুরোপুরি শুঁকিয়ে গেছে। বুকের ভিতরে ধুপধুপ করছে তার। কারন আকাশ আগ থেকেই আন্দাজ করে নিয়েছে ঘরের দরজায় কে এসে দাঁড়িয়ে আছে…..

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে