#কুহেলিকা (পর্ব-২০)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
–‘হ্যাঁ আমি কোনো প্রস্টিটিউট নই। এবং আমাকে এর আগে কখনো কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি। আপনিই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ,যে কিনা আমার কুমারিত্ব ভেঙ্গেছেন।’
দিশার কথায় আকাশ পুরোপুরি চমকে উঠে। চোখ বড় করে অবাক দৃষ্টিতে আকাশ দিশাকে প্রশ্ন করে,
–‘তাহলে কে তুমি দিশা? আর তুমি পল্লীতে থাকার পরেও ভার্জিন কি করে?’
–‘সমস্ত রহস্য আপনি জানতে চান?’
–‘হুম সমস্ত রহস্যই আমি জানতে চাই।’
–‘ঠিক আছে তাহলে শুনুন। আমার ডাক নাম তো আপনি জানেন এই। তবে আমার আসল নাম হলো প্রিয়তী। প্রিয়তী নামে আমায় সচরাচর কেউ ডাকে না। সবাই আমাকে দিশা নামেই চিনে। আমি কিন্তু ছোট থেকে পল্লীতে বড় হইনি। আমার বয়স যখন নয় কি দশ তখন মা আমাকে উনার একটা পরিচিত ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সাত-আট বছর আমি উনার কাছ থেকেই মানুষ হয়েছি। বেশ ভালো ছিল উনি, কিন্তু উনার বউটা ছিল একদম উনার বিপরীত। সব সময় আমার পিছনে এটা সেটা নিয়ে লেগে থাকতো। আমার সাথে ঝামেলা করতো। ঘরের মধ্যে আমার কারনে উনাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝেও ঝামেলা হতো। তাই লোকটা মানে মামাটা আমায় মায়ের কাছে চলে যেতে বলে। রোজ রোজ ঝামেলার থেকে চলে যাওয়াটাই ভালো ছিল। আমি চেয়েছিলাম অন্য কোথাও চলে যাবো, কিন্তু গত বছর মায়ের অসুস্থতার জন্য আবার আমাকে এই নিষিদ্ধ নগরীতে ফিরে আসতে হয়েছে। আমি এখানে এসে বেশ কয়েকমাস মায়ের সেবাযত্ন করেছি। তবে মা আর সুস্থ হয়নি। চলে গেছেন উপর ওয়ালার কাছে। মা মারা যাওয়ার পর আমি আবারো এই পল্লী থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই, কিন্তু কই যাবো কি করবো এসব ভেবে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। তখন পল্লীর সর্দারনী আমাকে বলে এই নিষিদ্ধ নগরীতে দেহের বিসর্জন হলেও প্রাণের একটা নিশ্চয়তা আছে। বাহিরের দুনিয়ায় দেহের পাশাপাশি প্রাণ টাও নাকি নিয়ে নেয়। তাই তিনি আমাকে পরামর্শ দেয় এখানে থাকতে। পল্লীর সর্দারনীর কথা মতন আমি পল্লীতেই থেকে যাই। কয়েক মাস আমি পল্লীতে থেকে নিজের গা বাঁচিয়ে রেখেছি। তবে আর কতোদিন। এভাবে বসে থাকলে তো আর হবে না। পেট চালানোর জন্য উপার্জন তো করতে হবে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমিও এসব কাজে নামবো। পল্লীর সর্দারনীর সাথে কথা বলে নেমে গেলাম খদ্দের সন্ধানে। পল্লীর রমণীরা একটা কথা ভেবেই নিজেকে শান্ত রাখে। শরীরের হোক বিসর্জন। টাকা হোক উপার্জন। টাকা কামাই করতে হলে শরীরের বিসর্জন দিতেই হবে। তাই নেমে গেলাম দেহ টাকে খদ্দের হাতে তুলে দিতে। আর সেদিন এই আপনার সাথে আমার দেখা।’
–‘তার মানে তুমি আমার আগে কারোর সাথেই এসব করোনি? আমিই তোমার প্রথম কাস্টমার হতে চলেছিলাম?’
–‘কারোর সাথেই করিনি। আর আপনিই আমার প্রথম কাস্টমার ছিলেন, কিন্তু আপনি সেদিন আমার সাথে চুক্তি করেননি। এসে কথাবার্তা বলে চুমু একে দিয়ে টাকা পাঁচশ গুঁজে দিয়েছেন হাতে। আপনার সেই প্রথম স্পর্শে আমি পুরো পাগল হয়ে ছিলাম। আপনার পরে চাইলে আমি কাস্টমার ধরতে পারতাম। কিন্তু আপনার স্পর্শ পাওয়ার পর কারোর সাথেই রুমে যেতে ইচ্ছে হয়নি। মনটা শুধু আপনার জন্য বেকুল হয়ে ছিল। সেই সময়টাতে আপনার কথা ভেবে নিজেকে সামলে রেখেছিলাম। আমার মন চাইছিল না আপনি বাদে অন্য কারোর সাথে কিছু করতে। আমি আপনাকে আমার কল্পনার রাজ্যের রাজা বানিয়ে দিয়েছিলাম। একান্তই বসে আপনার কথা ভাবতাম। কিন্তু উপর ওয়ালার কি লীলাখেলা আপনি পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে আমাকে একদম আপনার নামে করে নিয়েছেন। আমার সেদিন খুশিতে দুনিয়াদারী অন্য রকম লাগছিল। আমি মনে মনে একজনের উপরে আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম, আর সে আমাকে টাকা দিয়ে একদম নিজের নামেই করে নিলো। কেমন যে লাগছিল সেদিন আমি আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না। আসলে একটা কথা কি, পুরুষের প্রথম স্পর্শে নারীর মনে গভীর ভাবে একটা দাগ কেটে যায়। যেটা কারোর কারোর আজীবন মনে থাকে। আবার কারোর কারোর দু’চার বছর মনে থেকে তারপর সেটা উঠে যায়। তবে সবার ক্ষেত্রেই বেশ লম্বা সময় দাগটা মনে থাকে। আপনার স্পর্শ আমি বেশ গভীর ভাবে অনুভব করেছি।’
দিশার কথা শুনে আকাশ আশ্চর্য হয়ে যায়। অবাক দৃষ্টিতে নিশ্চুপ হয়ে চোখ বড় বড় করে দিশার দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশ দিশার হিসাব-নিকাশ মেলাতে পারছে না। অপরদিকে দিশা আকাশের নিশ্চুপ হয়ে থাকা দেখে আকাশকে জিজ্ঞাস করে,
–‘কি হলো চুপচাপ হয়ে গেলেন যে?’
–‘না এমনিতেই। আচ্ছা দিশা তোমার কাছে আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে।’
–‘কি প্রশ্ন?’
–‘তোমার বলা সমস্ত কথাই বুঝলাম, কিন্তু আমি যেদিন এই পল্লীতে প্রথম এসেছিলাম, সেদিন তুমি আমার সাথে একদম প্রফেশনাল হয়ে কথাবার্তা বললে কি করে? সেদিন তো ফিল্ডে তোমার প্রথম দিন ছিল। আর তাছাড়া পল্লীর রমণীরা যখন আমায় নিয়ে এটা সেটা বলছিল, তখন তুমি তাদেরকে ধমক দিয়ে বলেছিলে আমি তোমার স্বামী। আমায় নিয়ে আর একটা কথা বললেও পুরো পল্লী তুমি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে। তোমার এক ধমকে সবাই চুপ হয়ে আমার রাস্তা ক্লিয়ার করে দিয়েছিল। তোমার সেই দিনের ক্ষমতা দেখে মনে হয়েছে তুমি ঐ সমস্ত রমণীদের লিডার। যে ভাবে বড় গলায় ধমক দিয়েছিলে তুমি ওদের সবাইকে। এক ধমকে সবাই সোজা হয়ে গিয়েছিল। এখন এখানে আমার প্রশ্ন হলো তুমি এসব কিছুতে না থাকা সত্বেও ঐ সমস্ত রমণীদের উপরে দাপট খাটিয়েছো কি ভাবে?’
–‘আকাশ সাহেব প্রথমত আমি এই পল্লীতে থেকে পল্লী সম্পর্কে বেশ ভালো ভাবে অবগত হয়ে গেছি। কাস্টমারের সাথে প্রফেশনাল ভাবে কথাবার্তা না বললে তারা কম টাকা দিতে চায়। তাই আপনার সাথে একদম পাকাপোক্ত প্রস্টিটিউটের মতন কথা বলেছিলাম। দ্বিতীয়ত আমি তাদের কোনে লিডার নই। তবে ধমক দিতে পেরেছি অন্য একটা কারনে। নিষিদ্ধ নগরীতে যেই মেয়েটা ভার্জিন থাকে এবং প্রথম কাজের জন্য মাঠে নামে, তাকে পল্লীর সবাই সম্মান দেয় সেই দিন। তার উপরে কেউ কোনো কথা বলে না। তাই আমি তাদেরকে ধমক দিয়েছিলাম। এই নিয়মটা বহুকাল আগ থেকেই নগরীতে চলে আসছে।’
আকাশ পুরোপুরি বোবার মতন হয়ে যায় দিশার মুখে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে। খুশিতে ভিতরটা উতলা হয়ে উঠেছে আকাশের। শরীরের পশম কাটা দিয়ে উঠেছে৷ কি করবে ভেবে উঠতে পারছে না। অজানা এক খুশিতে আকাশের ভিতরটা ভরে উঠেছে। ইচ্ছে করছে দিশাকে কোলে তুলে নিয়ে পুরো বাড়ি নেচে বেড়াতে। উত্তেজনাটা আর ধরে রাখতে পারছে না আকাশ। দিশার হাত চেপে ধরে দিশাকে বলে,
–‘দিশা তোমায় কোলে নিলে তোমার কোনো আপত্তি আছে কি?’
–‘আমার সব কিছুই আপনার নামে করে দিয়েছি। আপনার যা ইচ্ছে হয় করুন। তবে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন।’
–‘কি প্রশ্ন? ‘
–‘সমস্ত সত্যি এবং আমি ভার্জিন হওয়ায় আপনি বেশ খুশি হয়েছেন তাই না? আর তার জন্যই আমাকে কোলে নিতে চাচ্ছেন? আচ্ছা আমি যদি এমমটা না হতাম তখন কি এমনটা করতেন? তখন কি আমায় নিয়ে আপনার মন এতোটা আনন্দিত হতো?’
–‘দিশা আমি খুশি হয়েছি ঠিক তবে তোমায় নিয়ে আমি আনন্দিত সব সময়ই ছিলাম। আমি যখন জানতাম না তুমি ভার্জিন এবং তোমার জীবনে কিছু রহস্য আছে। আমি তখন ও তোমায় নিজের কাছে টেনেছি। দিশা আমি খুশি হয়েছি ঠিক তবে স্পেশাল করে তোমার শরীর নিয়ে আমার কোনো আকর্ষণ নেই। যদি থাকতো তাহলে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলতাম বহু আগেই। এখনো আমার সাথে বসে থাকা হতো না তোমার। আমি তোমার সম্পর্কে জানতাম তুমি নগরীর এক রমণী। তুমি টাকার জন্য মানুষের সাথে বিছানা শেয়ার করো। আমি তোমার বিষয়ে জেনেই তোমাকে এনেছি। কিন্তু এখনকার যেই সত্যি গুলো তুমি আমার সামনে প্রকাশ করলে, তাতে করে আমি আনন্দিত হয়েছি ঠিক তবে তুমি আমার থেকে আগের মতোই প্রায়োরিটি পাবে। তোমার সত্যি যেনে তোমায় আগের চেয়েও বেশি প্রায়োরিটি দিব সেটা হবে না। কারন সেটা করলে পল্লীর সেই আগের দিশাকে অপমান করা হবে।’
দিশা আকাশের কথা শুনে হাসতে হাসতে আকাশকে বলে,
–‘আচ্ছা হয়েছে এবার থামুন। আর আপনার যা করতে ইচ্ছে হয় করুন।’
আকাশ দিশাকে কোলে করে নিয়ে ওয়াশরুমে নামিয়ে দেয়। এরপর দু’জনে মিলে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। ফ্রেশ হওয়ার পর আকাশ বাহিরে চলে যায় নাস্তা আনার জন্য। আর দিশা চুলোয় চা বসায়। আকাশ বাসার সামনের দোকান থেকে নাস্তা কিনে কিছু সময়ের মধ্যে বাসায় ফিরে আসে। এদিকে দিশার ও চা করা শেষ। এরপর দু’জনে বসে নাস্তা শেষ করে। আকাশ নাস্তা শেষ করে দিশাকে বলে,
–‘একটা শাড়ী পড়ে চটাচট রেডি হয়ে নাও।’
–‘কেন কোথায় নিয়ে যাবেন আমায়?’
–‘অফিসে নিয়ে যাবো তোমায় আজকে সঙ্গে করে। এবার যাও কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নাও।’
–‘আচ্ছা।’
দিশা রেডি হতে শুরু করে৷ দু’জনের রেডি হওয়া শেষ। দু’জনে মিলে গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। অফিসে পৌঁছে আকাশ দিশার হাত ধরে দিশাকে অফিসে নিয়ে যায়। অফিসের সমস্ত কর্মচারী অবাক আকাশের সাথে কোনো মেয়েকে দেখতে পেয়ে। অফিসের সবাই জানে আকাশ এখনো সিঙ্গেল। বিয়েসাদী হয়নি এখনো আকাশের। সেজন্যই সবাই অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ দিশাকে নিয়ে সোজা কেবিনে চলে যায়। এরপর দিশাকে বসিয়ে রেখে কি ভাবে সে কাজ করে সেসব দেখাতে শুরু করে। দিশা চুপচাপ বসে আকাশের কাজকর্ম দেখছে। আর আকাশ দিশাকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজের কাজ করছে। বারোটা বেজে গেছে। মাঝে আকাশের পি.এ এসে দু’জনের জন্য চা দিয়ে গেছে। আকাশ কাজকর্ম গুছিয়ে দিশাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পুরো অফিস ঘুরে দেখাতে থাকে দিশাকে। বিশাল বড় অফিস। দিশার ভিতরটা কেমন যেনো দলা পেকে যাচ্ছে। মনে মনে সে মানুষ টাকে চায়, কিন্তু মানুষটা তো বিশাল অর্থসম্পদের মালিক। কোথায় সে একটা পতিতার মেয়ে। আর কোথায় আকাশ একটা কোম্পানির মালিক। তার সাথে কখনোই দিশার যায় না। মন টা ছোট হয়ে আছে দিশার। পাশ থেকে আকাশ দিশার দিকে তাকাতেই বুঝে ফেলে দিশা নিজেকে ছোট মনে করছে। তাই আকাশ দিশার হাত শক্ত করে চেপে ধরে দিশাকে বলে,
–‘নিজেকে ছোট মনে করার কিছুই নেই। অভ্যাস করে নাও সব কিছুর। মানুষের জীবন সব সময় এক রকম যায় না দিশা। মাঝেমধ্যে দালানবাড়ির লোকদেরকেও ফুটপাতে খেয়ে পেটের খিদে মিটাতে হয়। আবার মাঝেমধ্যে নিচু জায়গার মানুষদের ও ফাইভ স্টার হোটেলে খেয়ে দিন কাটাতে সময়। সময় পরিবর্তনশীল। তোমার জীবনেও পরিবর্তন এসে গেছে। এখন থেকে এসব কিছুকে অভ্যাস করে নাও। এবার চলো বাকি টুকু ঘুরিয়ে দেখাই তোমাকে। তারপর দু’জনে মিলে রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে যাবো।’
আকাশের কথায় দিশার নার্ভাসনেসটা কিছুটা কমে যায়। কিছুটা সাহস পায় সে আকাশের কথায়। আকাশ দিশাকে অফিসের বাকি অংশটুকু ঘুরিয়ে দেখায়। এরপর দিশাকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে চলে যায়। রেস্টুরেন্টে গিয়ে রেস্টুরেন্টের বাহিরে খোলা মেলা জায়গায় একটা টেবিলে বসে দু’জনের জন্য খাবার অর্ডার করে। রেস্টুরেন্টের কর্মচারী দু’জনের খাবারের অর্ডার কেটে চলে যায়। কর্মচারী চলে যাওয়ার পর দিশা আর আকাশ নিজেদের মতন কথাবার্তা বলছে। এমন সময় হুট করেই কেউ একজন পিছন থেকে দৌড়ে তাদের সামনে এসে পানি জাতীয় কিছু একটা দিশার মুখের মধ্যে ছুঁড়ে মারে। দিশা সাথে সাথে চোখে মুখে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে কান্না করতে আরম্ভ করে। দিশার মুখটা জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। দিশার মনে হচ্ছে যেনো তার চেহারায় ফুটন্ত আগুনের লাভা এনে কেউ নিক্ষেপ করেছে। দিশার কান্না শুনে আকাশের কলিজাটা ধুকপুক ধুকপুক করছে। অপরিদকে কেউ একজন আকাশ আর দিশার করুন অবস্থা দেখে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে….
চলবে….