কুহেলিকা পর্ব-১৯

0
770

#কুহেলিকা (পর্ব-১৯)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

দিশার মনে কু ডাকতে শুরু করেছে। এতো সময় হয়ে গেছে কিন্তু আকাশ এখনো বাড়ি ফিরেনি। দিশার মনটা কেমন কেমন যেনো করছে। হাজারটা চিন্তা এসে দিশার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনো কিছুই তার ভালো লাগছে না। একটা সময় দিশা আর থাকতে না পেরে ফ্লোরে বসে বাচ্চাদের মতন কান্না করতে আরম্ভ করে। দিশা যেনো আগ থেকেই বিপদের সংকেত দেখতে পাচ্ছে। অস্থির হয়ে উঠেছে দিশার মন টা। চোখের পানি ঝর্ণার পানির ন্যায় প্রবাহিত হয়েই চলেছে। তবে আকাশের ফিরে আসার কোনো নাম নেই। দিশা আকাশের অপেক্ষায় কান্না করতে করতে ফ্লোরের উপরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে আকাশ এখনো হাইস্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। আকাশ স্বাভাবিক অবস্থাতে নেই। সে কি করছে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। হাইস্পিডে গাড়ি চালিয়ে হুট করেই রাস্তার ধারে একটা মদের দোকানে গিয়ে হাজির হয়। এরপর মদের দোকানের ভিতরে ঢুকে ছাইপাঁশ অর্ডার করে খেতে আরম্ভ করে। আকাশ শুনেছে এসব ছাইপাঁশ নাকি মানুষের বিষন্নতা বা মনের কষ্ট দূর করে। তাই আকাশ মনের কষ্ট ভুলতে এসব ছাইপাঁশ খেতে আরম্ভ করেছে। আকাশ যতোই প্রভাকে ঘৃণা করুক না কেন, প্রভাকে সে অন্য পুরুষের সাথে মেনেই নিতে পারছে না। অবশ্য যদিও আকাশের কারনে আজ প্রভা অন্যের বউ। প্রভা আকাশের কাছে এসেছিল সুযোগ চাওয়ার জন্য, কিন্তু আকাশ তাকে সুযোগটা দেয়নি। প্রভার অনৈতিক মেলামেশা আকাশের মনে প্রভাকে এক প্রকার ঘৃণিত করে তুলেছিল। আকাশ সেজন্যে প্রভাকে সুযোগ দেয়নি। কিন্তু বর্তমানে প্রভা পার্মানেন্ট অন্য কারোর হয়ে গেছে সারাজীবনের জন্য আকাশ কেন জানি সেটা মানতেই পারছে না। প্রভার বিয়ে এবং সেই ছেলের সাথে মেলামেশার কিছু ছবি দেখে আকাশের ভিতরে কালবৈশাখী নেমে এসেছে৷ উত্তর-দক্ষিণ কোনো কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। আকাশ ও কিন্তু প্রভাকে রেখে দিশাকে নিজের ঘনিষ্ট করে রেখেছে। দিশার বিষয়টা তার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রভার বেলায় সেটা অস্বাভাবিক লাগছে। আকাশ প্রভাকে নিয়ে ভাবছে আর গটগট করে ছাইপাঁশ খাচ্ছে। ছাইপাঁশ খেতে খেতে শরীরের তালগোল হারিয়ে বসে আকাশ। মাগরিব পেরিয়ে গেছে। মদের দোকানে এক বসায় তিন ঘন্টা সময় কি ভাবে কেটে গেছে আকাশ নিজেও সঠিক করে বলতে পারে না। ভরপুর ড্রিংক করে বিল চুকিয়ে গাড়িতে এসে গাড়ি স্টার্ট করে। আবারো কোনো গন্তব্য নেই আকাশের। প্রভার চিন্তা এবং ছাইপাঁশের নেশায় দিশার কথা পুরোপুরি ভুলেই গিয়েছে সে। গাড়ি স্টার্ট করে আবারো হাইস্পিডে গাড়ি চালাতে শুরু করে। গাড়ি চালিয়ে নিয়ে ব্রীজের উপরে গিয়ে গাড়ি থামায়। এটাই সেই ব্রীজ, যেই ব্রীজের উপরে মেশিন দিয়ে কয়েক টাকে টপকে দিয়েছিল আকাশ। এরপর গাড়ি থেকে নেমে ব্রীজের একপাশে চুপচাপ পাগলের মতন বসে পড়ে। প্রচন্ড বাতাস বইছে ব্রীজের উপরে। বাতাসটা বেশ মজা লাগছে আকাশের। শুরুতে ব্রীজের উপরে বসে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলেও পরবর্তীতে একাকী বকবক করতে শুরু করে। আকাশের ভিতরে হিতাহিতজ্ঞান নেই। ছাইপাঁশ খেয়ে শরীরের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে সে। একাকী বকবক করতে করতে রাত দশটা বেজে যায়। হুট করেই দিশার কথা মনে পড়ে তার। কারন ছাইপাঁশের রেষ কাটতে শুরু করেছে আকাশের। কিছুটা রেষ কাটতেই দিশার কথা মনে হয় তার। দিশার কথা মনে পড়ায় ব্রীজ থেকে উঠে গাড়ি চালিয়ে তাড়াতাড়ি করে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরে এসে দেখে দিশা ফ্লোরে মরার মতন পড়ে আছে। মাতাল আকাশ দিশাকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে ডাকাডাকি করতে আরম্ভ করে।

–‘এই দিশা উঠ। খাট থাকতে ফ্লোরে ঘুমাচ্ছিস কেন তুই?’

দিশা আকাশের কথার কোনো উত্তর দেয় না। আকাশ দিশার কাছে উত্তর না পেয়ে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে ডাকতে শুরু করে দিশাকে। আকাশ দিশাকে হাত দিয়ে কয়েকবার ঝাঁকি দিয়ে ডাকতেই দিশা লাফিয়ে উঠে পড়ে। উঠার পর আকাশকে দেখতে পেয়ে খপ করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে আরম্ভ করে। দিশা আকাশকে জড়িয়ে ধরার কিছু সময়ের মধ্যেই উপলব্ধি করতে পারে আকাশ ড্রিংক করে এসেছে। তাই দিশা আকাশকে প্রশ্ন করে,

–‘আপনি এতোটা সময় কোথায় ছিলেন?
আর আপনার শরীর থেকে মদের গন্ধ আসছে কেন?’

–‘আমায় ছাড় আগে। তারপর যা জিজ্ঞাস করার কর। আমি এমনিতে নিজের শরীর নিয়ে বিপদে আছি। তার উপরে তুই ও আমার শরীরের উপরে ঢুলে পড়েছিস। ছাড় আমাকে।’

–‘আকাশ সাহেব আমি আপনার গায়ে ঢুলে পড়িনি। আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরেছি।’

–‘লাগবে না তোর জড়িয়ে ধরা। আমার সব কিছুই কেমন যেনো অস্বস্তিকর লাগছে।’

–‘আচ্ছা এই যে নিন আপনাকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আপনি এবার আমায় বলেন যে আপনি এতোটা সময় কোথায় ছিলেন? আর মদের গন্ধ কেন আসছে আপনার শরীর থেকে?’

–‘মদ খেয়ে রাস্তায় মাতালের মতন বসে ছিলাম।’

–‘কিন্তু কেন খেয়েছেন আপনি এসব ছাইপাঁশ?
এসব খাওয়া কি ভালো বলেন?’

দিশার একের পর এক প্রশ্ন শুনে আকাশের মাথা গরম হয়ে যায়। এমনিতেই আকাশের কথা বলতে ভালো লাগছে না। তার উপরে আকাশের মতে মেয়েটা একবার তার উপরে ঢুলে পড়ছে। আবার তাকে এটা সেটা প্রশ্ন করে পেরেশান করছে। আকাশের রাগ উঠে যায় দিশার কর্মকান্ডে। রাগ দমাতে না পেরে ঠাস করে দিশার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে,

–‘এই মেয়ে তোকে এতো কৈফিয়ত দিতে যাবো কেন আমি হ্যাঁ? দ্যাখ অহেতুক প্রশ্ন করে আমার মাথা আর গরম করিস না। এমনিতেই মাথা বিগড়ে আছে। তাই অহেতুক প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে রেখে ফ্রেশ হয়ে নতুন একটা শাড়ী পড়ে আয়।’

দিশা আকাশের হাতে থাপ্পড় খেয়ে ফ্লোর থেকে উঠে একটা শাড়ী নিয়ে দেয়াল ধরে ধরে ওয়াশরুমে চলে যায়। দিশার শরীর প্রচন্ড দূর্বল হয়ে আছে না খাওয়ার ফলে। সে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। ইচ্ছে করছে আরো কিছু সময় ঘুমিয়ে থাকতে। কিন্তু আকাশের কথায় সে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে শাড়ী পড়ে বেরিয়ে আসে। আকাশ দিশাকে দেখে পুরো মাতাল হয়ে যায়। এমনিতেই সে বাস্তবে মাতাল হয়ে আছে। তার উপরে দিশাকে শাড়ীটাতে বেশ হেব্বি লাগছে। দিশা শাড়ী পড়ে এসে আকাশের কাছে দাঁড়ায়। দিশা আকাশের সামনে এসে দাঁড়াতেই আকাশ দিশাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার উপরে ফেলে। এরপর দিশার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিশার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করতে আরম্ভ করে। দিশা একদম চুপচাপ শুয়ে আছে। আকাশকে সে ভালো-মন্দ কিছুই বলছে না। তবে ভিতরে ভিতরে তার বেশ ভালো লাগছে আকাশের স্পর্শ। কিন্তু সেটা সে আকাশের সামনে দেখায় না বা আকাশকে বুঝতে দেয় না। সে দেখতে চায় আকাশ তাকে পুরোপুরি ভাবে স্পর্শ করার পর আকাশের রিয়াকশনটা কেমন হয়। আকাশ দিশার শরীরের সিক্রেট পার্ট গুলোতে একে একে স্পর্শ করতে থাকে। কিছু জায়গায় ঠোঁট দিয়ে চুমু খাচ্ছে। কিছু জায়গায় হাত দিয়ে স্পর্শ করছে। আকাশের স্পর্শে দিশার শরীরে এক প্রকার কারেন্ট উৎপন্ন হচ্ছে। খনে খনে দিশার শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে যেনো কেউ একজন বৈদ্যুতিক লাইন দিশার শরীরের সাথে কানেক্টে করে দিয়েছে। আকাশ দিশার শরীরে স্পর্শ করতে করতে দিশার শরীর থেকে সমস্ত বস্ত্র সরিয়ে ফেলে। এরপর দিশার সাথে সে সে পুরোপুরি ভাবে ঘনিষ্ট হয়। দিশা খুশিতে আত্মহারা। আকাশ দিশাকে নিজের কাছে টেনে নেওয়ার পর দিশাকে জড়িয়ে ধরে সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল বেলায় আকাশের ঘুম ভাংতেই দেখে সে দিশাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। কারোর শরীরেই কোনো কাপড়-চোপড় নেই। আর দিশা তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। রাতের ঘুমে আকাশ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু দু’জনের শরীরে কোনো প্রকার জামাকাপড় দেখতে না পেয়ে সে দিশাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘দিশা তুমি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?
আর আমাদের দু’জনের একজনের শরীরেও কাপড় নেই কেন?’

–‘ভুলে গেছেন আপনি সব?’

–‘মানে?’

–‘মানেটা আপনিই মনে করার চেষ্টা করেন, যে রাতের বেলায় কি হয়েছিল।’

দিশার কথায় আকাশ ভাবতে থাকে রাতের বেলায় কি হয়েছে। কিছুটা সময় ভাবতেই রাতের সমস্ত ঘটনা তার মনে পড়ে যায়। রাতের ঘটনা মনে পড়তেই হুট করে সে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় দিশাকে ছেড়ে দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। আকাশের সাথে সাথে দিশাও শোয়া থেকে উঠে বসে। আকাশ উঠে বসা মাত্রই দিশার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। আকাশের অদ্ভুত ভঙ্গিমা দেখে দিশা আকাশকে প্রশ্ন করে,

–‘আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?’

দিশার কথায় আকাশ কোনো উত্তর না দিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় উল্টো আকাশ দিশাকেই প্রশ্ন করে,

–‘দিশা কে তুমি? আমি কিন্তু গতকাল কিছু একটা উপলব্ধি করেছি। কিন্তু আমি তখন তোমায় কিছুই বলতে পারিনি আমার শারীরিক ভারসম্য ঠিকঠাক না থাকায়।’

দিশা আকাশের কথা শুনে হাসতে আরম্ভ করে।
দিশার হাসি দেখে আকাশ আবারো দিশাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘দিশা আমি তোমার কাছ থেকে কিছু জানতে চেয়েছি। কে তুমি?’

দিশা এবার হাসতে হাসতে বলে,

–‘আমি কে মানে আমি দিশা।’

–‘তুমি দিশা সেটা আমিও জানি। কিন্তু গতকাল তোমার সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার পর আমি জানতে পেরেছি তুমি কোনো প্রস্টিটিউট না। তুমি ভার্জিন একটা মেয়ে। তুমি যদি প্রস্টিটিউট হতে তাহলে তুমি কখনোই ভার্জিন থাকতে না।’

–‘হ্যাঁ আমি কোনো প্রস্টিটিউট নই। এবং আমাকে এর আগে কখনো কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি। আপনিই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ,যে কি আমার কুমারিত্ব ভেঙ্গেছেন।’

দিশার কথায় আকাশ পুরোপুরি চমকে উঠে। চোখ বড় করে অবাক দৃষ্টিতে আকাশ দিশাকে প্রশ্ন করে,

–‘তাহলে কে তুমি দিশা? আর তুমি পল্লীতে থাকার পরেও ভার্জিন কি করে?’

–‘আপনি সত্যিই সমস্ত রহস্য জানতে চান?’

–‘হুম আমি সত্যিই সমস্ত রহস্য জানতে চাই।’

–‘ঠিক আছে তাহলে শুনুন……

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে