#কুহেলিকা (পর্ব-১১)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
আকাশ দিশাকে গাড়ি করে এনে পল্লীর সামনে নামিয়ে দিয়ে সে বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি টেনে চলে যায়। এদিকে দিশা গাড়ি থেকে নামতেই একটা সুট বুট পড়া লোক দিশার পিছু নেয়। লোকটা দিশার দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার পিছু পিছু হাঁটতে আরম্ভ করে। দিশার এতো কিছু খেয়াল নেই। সে আপন মনে হাঁটতে থাকে। কিন্তু দিশার ধারণাতেও নেই, যে কোনো এক নরপিশাচ অসাধু মতলব নিয়ে তার পিছু নিয়েছে। দিশা হাঁটতে হাঁটতে নিজের বাসস্থানে গিয়ে পৌঁছাও। আর দিশার দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকানো লোকটা কিছু সময় দিশার পিছু নিয়ে পরবর্তী দিশার পিছু করা ছেড়ে দেয়। কারন সে এই পল্লীর নিয়ম কানুন সম্পর্কে বেশ ভালো করেই অবগত। সে জানে কোনো রমণীর সাথে পার্সোনাল ভাবে সময় কাটাতে হলে তাকে আগে পল্লীর সর্দারনীর সাথে কথা বলতে হবে। তাই সে কিছু সময় দিশাকে অনুসরণ করে পল্লীর সর্দারনীর কাছে চলে যায়। পল্লীর সর্দারনী লোক টাকে দেখে জিজ্ঞাস করে,
–‘সাহেব এই অসময়ে আপনি এহানে? আপনি তো আইলে রাতের বেলায় আহেন। কিন্তু আজ অসময়ে এহানে আইলেন যে?’
–‘আজ আমার কোনো কাজকর্ম নেই। তাই এই অসময়ে চলে এসেছি শারীরিক খিদে মিটাতে।’
–‘আচ্ছা যাক আইছেন ভালোই করছেন। আপনি একটু বইয়া অপেক্ষা করেন। যারা রুমে নাই আমি তাগোরে ডাইকা আনার ব্যবস্থা করতাছি। এরপর আপনার যারে ইচ্ছা তারে লইয়া রুমে যাইয়েন।’
–‘না আজ কোনো মেয়েকে ডেকে আনার দরকার নেই। আমি পল্লীতে আসার সময় একটা মেয়েকে দেখেছি। আমার তাকে হলেই চলবে।’
–‘সাহেব কোন মাইয়ারে দেখছেন?’
–‘যাকে দেখেছি তার নাম তো আমি জানি না। তবে মেয়েটা খুব অল্প বয়সী। তার গায়ে পড়নে একটা শাড়ী ছিল। আমি যখন পল্লীর ভিতরে আসার জন্য গাড়ি থেকে নামি, তখনি দেখি সে বাহির থেকে পল্পীর ভিতরে ঢুকছে। আমি মেয়েটাকে বেশ কিছু সময় অনুসরণ করেছি। মেয়েটা এসে আপনার বাসা থেকে দু’টো বাসা পরেই একটা বাড়িতে ঢুকেছে। আমার তাকে চাই। আজ তার সাথেই সময় কাটাবো আমি।’
–‘সাহেব আমি বুঝতে পারছি আপনি কার কথা কইছেন। মাইয়াটার নাম হইলো দিশা। কিন্তু সাহেব ক্ষমা করবেন আমারে। আমি সেই মাইয়ারে আপনার কাছে দিতে পারুম না।’
–‘দিতে পারবেন না মানে কি?’
–‘মানে হইলো সেই মাইয়ারে কারোর লগে দেওয়ার অনুমতি নাই আমার।’
–‘কিসের অনুমতির কথা বলছেন বুঝলাম না! আপনিই পল্লীর সর্দারনী। আপনি আবার কার অনুমতিতে চলেন? আপনার থেকেও বড় কেউ আছে নাকি এখানে?’
–‘না সাহেব আমার থেইকা বড় এহানে আর কেউ নাই। কিন্তু সেই মাইয়ারে আমি কোনো মতেই আপনার লগে রুমে দিতে পারুম না।’
–‘কিন্তু কেন?’
–‘কারন পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সেই মাইয়ারে একজন অনির্দিষ্ট সময়ের লাইগা নিজের কইরা রাখছে। তাই সেই মাইয়ারে আমি কারোর লগেই দেই না।’
–‘দেখুন আমার সেই মেয়েকেই লাগবে। কে কতো টাকা দিয়েছি আমি জানি না! আমার সেই মেয়েকে লাগবে মানে সেই মেয়েকেই লাগবে। আমি দরকার হয় টাকার এমাউন্ট বাড়িয়ে দিব। কিন্তু আমার সেই মেয়েকেই চাই।’
–‘সাহেব আপনি এমাউন্ট বাড়ান আর যাই করেন, সেই মাইয়ারে আমি কোনো ভাবেই রুমে দিতে পারুম না। আপনি অন্য মাইয়া দেখেন।’
–‘যদি সেই লোক থেকে ডাবল টাকা দেই, তাহলেও কি আপনি সেই মেয়েকে আমার সাথে দিবেন না?’
–‘ডাবল টাকা মানে সাহেব?’
–‘ডাবল মানে দশ লাখ টাকা দিব আমি।’
পল্লীর সর্দারনী সেই লোকের মুখে দশ লাখ টাকার কথা শুনে হিচকিচ করতে শুরু করে। কারন তার শুধু টাকা চাই। সে এই ধান্দা করেই টাকার জন্য। টাকার কাছে তার নীতি কোনো মাইনে রাখে না। তবে আকাশ ও তাকে কম টাকা দেয়নি। এই লোকের আগে আকাশ দিশাকে তার থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছে। এজন্য পল্লীর সর্দারনী দোটানায় পড়ে যায়। কি করবে সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না! একজন পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে দিশাকে নিজের নামে বুকিং করে রেখেছে। আরেকজন তাকে দিশার জন্য দশ লাখ টাকা অফার করছে। বেশ চিন্তায় পড়ে যায় পল্লীর সর্দারনী। লোকটার কথার উত্তর না দিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে কি করবে সে। এমন সময় সুট বুট পড়া সেই লোকটা পল্লীর সর্দারনীকে বলে,
–‘কি হলো কথা বলছেন না যে? ভালো মন্দ একটা তো বলুন।’
–‘সাহেব আসলে আমি টাকার লাইগাই সব করি।
আমার কাছে টাকাই সব। টাকার থেইকা বড় কোনো কিছুই নাই আমার কাছে। কিন্তু কথা হইলো সেই বেডায় জানতে পারলে তো আমার উপরে রাইগা যাইবো।’
–‘তাহলে কি আমি না বলে ধরে নিব?’
–‘সাহেব আমার মাথায় কাজ করতাছে না আমি কি করমু এহন! এতো গুলা টাকা হাত ছাড়া করতে মন চাইতাছে না। আরেক দিকে ঐ বেডার লাইগা ভয় ও লাগতাছে।’
–‘দেখুন আপনার দোটানায় আমি পড়তে চাচ্ছি না। আপনি নিজের দোটানায় পড়ে খামোখা আমার সময় নষ্ট করছেন। তাই আমি চলে যাচ্ছি। আপনার দোটানাকে আমি না বলেই ধরে নিলাম।’
–‘সাহেব না…না আপনি যাইবেন না। সেই মাইয়ারে আমি আপনার লগে রুমে দিমু, কিন্তু….
–‘কিন্তু কি?’
–‘সে আমনের লগে কাজ করতে রাজি হইবো কিনা সেটা আমি বুঝতেছি না। কারন সেই বেডার লগে মাইয়ার বেশ খাতির জমছে। বেডায় মাইয়ারে গাড়িতে কইরা লইয়া ঘুইরা বেড়ায়।’
–‘সে আপনি আমার উপরে ছেড়ে দিন। আমি সেই মেয়েকে সামলে নিব। আপনি খালি আমায় সেই মেয়ের কাছে নিয়ে চলুন।’
–ঠিক আছে সাহেব চলেন আমার লগে। আর টাকা আমার ব্যাংকের একাউন্টে মাইরা দেন।’
–‘টাকা চলে যাবে। আপনি আমায় আগে সেই মেয়ের কাছে নিয়ে চলুন। বেশ উত্তেজিত হয়ে আছে শরীর। নিজের উত্তেজনা টাকে আগে শান্ত করি।’
–‘চলেন আমি আমনেরে দিশার কাছে লইয়া যাইতেছি।’
পল্লীর সর্দারনী লোকটাকে নিয়ে দিশার কাছে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়। লোকটা যেতে যেতেই পল্লীর সর্দারনীর একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। পল্লীর সর্দারনী লোকটাকে নিয়ে দিশার রুমে পৌঁছে দিয়ে সে রুমের বাহিরে চলে আসে। লোকটা দিশার রুমে ঢুকে দিশাকে দেখতেই মাতাল হয়ে যায়। রুমে ঢুকে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই কাপড় খুলতে খুলতে দিশার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অপরদিকে দিশা লোকটাকে আপত্তি জানায় সে তার সাথে কাজ করবে না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। লোকটা দিশার দিকে ক্রমশ এগিয়েই চলেছে। তার দরকার শুধু দিশার শরীর। দিশার শরীর চিবিয়ে না খেলে তার এই উত্তেজনা যেনো কখনোই কমবে না। আসলে বলে না, কুকুর চিনে না মানুষের পাত, আর উত্তেজনা বুঝে না জাতকুজাত। লোকটার মধ্যেও ঠিক একই রকমের উত্তেজনা জেগেছে। দিশা যে তাকে আপত্তি করছে সেই দিকে লোকটার কোনো খেয়াল এই নেই। তার দরকার শুধু দিশার শরীর। দিশার কচি শরীরটাই যেনো তার উত্তেজনা কমানোর এক মাত্র মাধ্যম। লোকটার ক্রমশ এগিয়ে যাওয়া দেখে দিশা চিল্লাতে শুরু করে। কিন্তু লোকটা থামবার কোনো নাম নেই। সে দিশার খুব নিকটে চলে গিয়েছে। দিশা দেয়ালের এক কোনায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার পবিত্র শরীরকে কোনো ভাবেই অপবিত্র করতে চাচ্ছে না। বহু কষ্টের বিনিময়ে কারোর ছোঁয়া লাগিয়ে দিশা নিজের শরীরকে বিশুদ্ধ করেছে। এই বিশুদ্ধ শরীরে সে আর কোনো দাগ লাগতে দিবে না। কিন্তু লোকটা তার খুব নিকটে চলে গিয়েছে। দানবের মতন দেহ টাকে কি করে আটকাবে সেটাই বুঝে আসছে না দিশার! কোনো উপায় না পেয়ে দেয়ালের সাথে জড়সড়ভাবে দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে শুরু করে। দিশার চিৎকার শুনতে পেয়ে রুমের বাহির থেকে পল্লীর সর্দারনী দৌড়ে দিশার রুমে প্রবেশ করে। দিশা পল্লীর সর্দারনীকে দেখে বলে,
–‘আমি আমার উনিকে ছাড়া এই শরীরে আর কাউকেই স্পর্শ করতে দিব না। খালা আপনি দয়া করে এই লোক থেকে আমাকে বাঁচান।’
দিশার কথা শুনে পল্লীর সর্দারনীর মন হুট করে ঘুরে যায়। সে লোকটাকে সরে আসতে বলে দিশার সামনে থেকে। কিন্তু লোকটা পল্লীর সর্দারনীর কথায় কর্ণপাত করে না। সে নিজের লালসা মিটিয়েই শান্ত হবে। লোকটার উন্মাদের মতন আচরণ দেখে পল্লীর সর্দারনী দৌড়ে গিয়ে দিশার সামনে দাঁড়ায়। এরপর লোকটাকে বলে,
–‘সাহেব দিশারে আমি আপনার লগে কোনো মতেই দিমু না। আপনি চইলা যান। আপনার টাকা আমি আপনার একাউন্টে ফিরাইয়া দিতাছি। আমার টাকার দরকার নাই। হইতে পারে আমি নিষিদ্ধ নগরীর সর্দারনী, কিন্তু আমার মধ্যে একটু হইলেও সততা থাকা উচিৎ। শুরুতে আমি প্রলোভনে পইড়া গেছিলাম। তবে এহন আমি সুস্থ মস্তিষ্কে আছি। তাই এই মাইয়ার লগে আপনারে আমি কোনো মতেই কাম করতে দিমু না।’
লোকটা এতোটাই উন্মাদ হয়ে গেছে, যে সে পল্লীর সর্দারনীর কথা শুনে তাকে হুমকি দিয়ে বলে,
–‘দেখুন আমায় রাগতে বাধ্য করবেন না। তাহলে কিন্তু আপনার জন্যেও খারাপ হবে বিষয়টা। আমায় যদি না করার হতো তাহলে শুরুতেই করতেন। টাকার প্রলোভনে পড়ে এই মেয়ের কাছ অব্ধি নিয়ে এসেছেন, এখন আবার বলছেন ওর সাথে কাজ করতে দিবেন না। কি মগের মুল্লুক নাকি সব কিছু? সরে যান ওর কাছ থেকে। আমি মাঝপথ থেকে ফিরে যাওয়ার মতন লোক নই।’
–‘টাকার লোভে পড়াটাই আমার ভুল হইছে। আর আমি এর লাইগা ক্ষমা চাইতাছি আপনের থেইকা। আপনি দয়া কইরা ওর কথা মাথা থেইকা ঝাইড়া ফালান। আমি আপনার টাকা আপনারে ফেরাইয়া দিতাছি।
লোকটা চলে যেতেই নারাজ। সে দিশার সাথে কাজ করেই এখান থেকে যাবে। কিন্তু পল্লীর সর্দারনী তার পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায়িছে। তাই সে রেগে গিয়ে পল্লীর সর্দারনীকে দিশার সামনে থেকে টান দিয়ে সরিয়ে দিশার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। লোকটার এমন আচরণে দিশা চোখ বুঝে বিকট আওয়াজে একটা চিৎকার মারে। কারন তার শরীরে আবারে দাগ লাগতে চলেছে। সে তার শরীর টাকে একজনের নামে লিখিত করে দিয়েছে। তার শরীরটা এখন একজনের আমানত। সে এই আমানতের বরখেলাপ কখনোই করবে না। কিন্তু বর্তমানে এই অসাধু লোকটা তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে সর্বত্র হাতিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায় লেগেছে। এই বুঝি তার সব শেষ….
চলবে….