কাঠগোলাপ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব তেইশ
?
ন্যামিয়ানের সব কথা শুনে ধ্রুভ বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে,কেও তার মাইন্ড কন্ট্রোল করতে চায়??আশ্চর্যজনক লাগছে এই ভেবে এতোদিন সে এটা বুঝতে পারলো না??তাকে কেও ইচ্ছা করে মানসিক অসুস্থ করতে চায়??কে সে??ন্যামিয়ান স্থির চোখে তাকিয়ে আছে।।
“হাও ক্যান আই বিলিভ অন ইউ মিস ন্যামিয়ান? ” ধ্রুভ শান্ত কন্ঠে বললো।।
ধ্রুভের এমন প্রশ্নের অপেক্ষাই ছিলো ন্যামিয়ান, সে জানে ধ্রুভ এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে এবং ধ্রুভ এরকম কিছুই তাকে জিজ্ঞেস করবে..ধ্রুভের এমন প্রশ্ন শুনে সে স্মিত হাসলো।।
“ইটস মিসেস ন্যামিয়ান.. আমি বিবাহিত আর আপনি যে আমার কথা বিলিভ করবেন তা আমি জানতাম..এইটা দেখুন?” ন্যামিয়ান কথাটা বলে ধ্রুভের দিকে ফাইলটা এগিয়ে দিলো।।
ফাইলটা হাতে নিয়ে ধ্রুভের চোখ লাল টকটকে হয়ে গেছে..এখানে ন্যামিয়ানের বলা প্রতিটা কথায় সত্যি আর তার প্রমানসহ।।
“এইখানে আপনার ব্লাড টেস্ট যা O+..সেদিন আপনার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমি নিয়ে গেছিলাম..আপনার ব্লাডে যে দ্রব্য পাওয়া গেছে,সেই দ্রব্য ওই মেডিসিনেও পাওয়া গেছে..অর্থাৎ আপনার মাইন্ড কন্ট্রোল করে কেও সেটা অন্য কাজে লাগাতে চাইছে!!” ন্যামিয়ান জবাব দিলো।।
“বাট দ্যা বিচ আই মিন স্মিথ আমার মাইন্ড কন্ট্রোল কিজন্য করবে??আমি যতদূর মনে পরছে আমি ওই কুকুরের মতো বেজন্মার কোন ক্ষতি করি নি!!” ধ্রুভ রাগে চিবিয়ে কথাগুলো বললো।।
“কেন করতে চায় সেটা আমি জানি না মিস্টার ধ্রুভ,একটা কমন কারন হতে পারে আপনি লন্ডনের সবচেয়ে বড় রিচ পারসোন,আপনার প্রোপার্টির জন্যও করতে পারে..তবে আশ্চর্যজনক বিষয় আরেকটা এখানে??!” ন্যামিয়ান বললো।।
“হোয়াট!!” ধ্রুভ ভ্রু কুচকে বললো।।
“আমার কাছে সারপ্রাইজিং এটা যে এই মেডিসিন আমার খুব কাছে কেও পরিচিত একজন বানাতো!!” ন্যামিয়ান চিন্তিত স্বরে বললো।।
“ত?” ধ্রুভ ভ্রু কুচকে বললো।।
“কিন্তু ও ত আর পৃথিবীতে নেই তাহলে কিভাবে সম্ভব এটা বানানো কারন এটা ও ছাড়া কেও বানাতে পারে না, ও কাওকে এটার দ্রব্য গুলো কি কি লাগে বলে যায় নি!!”ন্যামিয়ান জবাব দিলো।।
” এক্সপ্লেইন!!”
“আমি, আমার স্বামী আর আমাদের দুজনের একটা বন্ধু জাপানের একটা ল্যাবে কাজ করতাম একসাথে..এটা যদিও দশ বছর আগের কথা..আমরা তিনজন তিন ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ছিলাম,আমি মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করেছি..আমার স্বামী মানসিক রোগীদের কি ওষুধ লাগবে এই বিষয়ের আর আমাদের বন্ধুটা কিভাবে মেডিসিন বানাতে হয় এই বিষয়ে পড়াশোনা করছিলাম..আমাদের বন্ধু যেটা ছিলো খুব স্বার্থপর ছিলো,আমাদের মাঝেমধ্যে মনে হতো ও আমাদের সাথে স্বার্থের জন্য মিশছে আবার আমার এইও মনে হতো যে ও আমার স্বামীর খুব হিংসাও করে.. আমার স্বামীর খুব নাম ডাক ছিলো ওই ল্যাবে..একদিন দেখি দুই বন্ধুর মধ্যে খুব ঝগড়া,আমি তখন ল্যাবে ইন করছিলাম কিন্তু ঝগড়া শুনে আমি দরজার আড়াল হয়ে দাড়িয়ে গেছিলাম..বুঝার চেষ্টা করছিলাম কি হচ্ছে এখানে।।
#ফ্ল্যাশব্যাক,
” তুমি এইভাবে কারো ক্ষতি করতে পারো না বব!!আমি এটা হতে দিবো না!!তুমি ওরকম মেডিসিন তৈরি করছো আগে থেকে সন্দেহ করছিলাম তুমি যে সেটা বানিয়ে ফেলেছো আমি আজ না দেখলে জানতাম না!!”ন্যামিয়ানের স্বামী হার্বাট স্মিথ বলছে।।
“তুমি আমাকে হিংসা করো এইজন্য চাও না আমি দুনিয়াতে ফেমাসিটি অর্জন করি!!তুমি সবসময় আমার থেকে এগিয়ে ছিলে এখন যখন দেখছো আমি তোমার থেকে বেশি ভালো কিছু বানিয়ে ফেলেছি তখন তুমি আমাকে বাধা দিচ্ছো!!” বব উত্তর দিলো।।
“এটা কোন ভালো আমি চোখে দেখি না,তুমি মানুষ আর প্রানীর মাইন্ড কন্ট্রোল করে তাকে মেরে ফেলতে চাইছো..একটা নিষ্পাপ খরগোশের উপর এক্সপেরিমেন্ট করে এখন তাকেও মেরে ফেললে..আমি বেঁচে থাকতে তা হতে দিতে পারি না!!” স্মিথ চিল্লিয়ে বললো।।
“আমি গোটা দুনিয়াকে নিজের মুঠোই আনতে চাই!!!তুমি আমার পথে দাড়াবে না!!তোমাকেও জানে শেষ করে দিব!!আমার সাথে সাথ দাও, দুজন মিলে গোটা দুনিয়া রাজ করি!!” বব ভিলেনি হাসি দিয়ে বললো।।
“তোমার এই হিংসা তোমাকে নিয়ে একদিন ডুববে!!আমি মানুষের সেবা করতে চাই,তাদের মারতে চাই না!!ওটা আমাকে দিয়ে দাও!!” স্মিথ বলেই হাত বাড়ালো ববের দিকে।।
“কখনো না!!” বব বললো।।
স্মিথ আর বব সেই মেডিসিনের কেমিক্যাল নিয়ে টানা হিচড়া করতে লাগলো ল্যাবের মধ্যে..এক সময় দুজনের হাত টানা হিচডা করতে করতে ঘেমে থাকার ফলে ববের হাত পিছলে যেয়ে ল্যাবের একটা এক্সপেরিমেন্টের উপর পরে যায়,দুম করে বিস্ফোরণ হয়..সমস্ত ল্যাব সেন্টার ধোয়াই ভরে গেছে,আগুন লেগে গেছে..স্মিথ ও পুড়ে যেতো যদি সেদিন ন্যামিয়ান তাকে ওই মুহূর্তে টেনে নিয়া আসতো..ন্যামিয়ান যখন দেখলো অবস্থা বেগতিক হয়ে যাচ্ছে,ল্যাব পুড়ে যাচ্ছে..এখন না গেলে স্মিথ ও পুড়ে যাবে তখন সে হ্যাচকা টান দিয়ে স্মিথ কে ল্যাব থেকে বের করে নিয়ে আসে।।
সেদিনের ঘটনা ওই তিনজনের মধ্যে ছিলো শুধু জাপানবাসী জেনে ছিলো ল্যাবের বিস্ফোরণ ঘটায় একজনের প্রানহানী হয়েছে..ন্যামিয়ান আর স্মিথ বুঝে ছিলো সেটা ববের লাশ ছিলো,তারা তাকে দেখতে গেলে সেই লাশ পুড়ে ঝাঝড়া হয়ে গেছিলো।।
#বর্তমান,
“সেই ঘটনার পর আমরা জাপান ছেড়ে দি,চলে আসি ক্যানাডাতে..ক্যানাডাতে এসে আমরা এক বছরের মধ্যে বিয়েও করে ফেলি..আমার স্বামীর নতুন করে ট্রান্সফার হয় লন্ডনে তখন,আমার হচ্ছিলো না ট্রান্সফার তখন আমি কানাডাতেই থাকি..আমার স্বামী ট্রান্সফার হয় কারন লন্ডনের কোন ছেলের ছোটবেলাতে অতিরিক্ত মানসিক সমস্যাই আছে,তাকে ট্রিটমেন্ট করার জন্য স্মিথকে ডাকা হয়েছে..ওই ছেলের চিকিৎসা করার দুই বছরের মাথায় আমার স্বামী গায়েব হয়ে যায়,শুনেছি রোড এক্সিডেন্টে খাদে গাড়ি পরে যেয়ে বনের হিংস্র প্রানী তার লাশ খেয়ে নিয়েছে..রোডে শুধু তার গাড়ি পাওয়া গেছিলো তাকে পাওয়া যায় নি..স্মিথ চলে যাওয়া আজ সাত বছর হয়ে গেলো,কিন্তু আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় ও কোথাও না কোথাও বেচে আছে..আমার স্বামী খুব ভালো সাইকোলজিস্ট ছিলেন..তিনি মানুষের সেবা করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতেন,অথচ এই সাত বছর ধরে তিনি নেই আর আমি নিঃসঙ্গতায় জীবন কাটাচ্ছি!!” ন্যামিয়ান কথাগুলো বলে চোখের জল মুছলো।।
সব শুনে ধ্রুভের মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে গেলো,কি হচ্ছে এইসব..সে অন্তত কিছু জিনিস ভালোমতো ক্লিয়ার হয়েছে,এর শুরু যে করেছে শেষ এই আশরিক আলফাজ ধ্রুভই করবে।।
চলবে?
গঠনমূলক মন্তব্য করু,আপনাদের মন্তব্যে পরের পর্ব নির্ভর করছে..রহস্য খুলতে শুরু করেছে,পাশে থাকুন এইভাবে..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।