কাঠগোলাপ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব পনেরো
?
“একটা কথা জিজ্ঞেস করি??” রাহি চোখমুখ খিচে বললো,ধ্রুভ তখনো রাহির কাধে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ঠেকিয়ে রেখেছে।।
“উম?” ধ্রুভ রাহির কাধে নিজের ওষ্ঠদ্বয় রেখেই আওয়াজ করলো।।
কখনো কোন ছেলের সংস্পর্শে রাহি আসে নি আর না ধ্রুভ কোন মেয়ের সংস্পর্শে এসেছে..দুইজন দুজনের কাছে নতুন অনুভূতির অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হচ্ছে..রাহির কাছে অস্বস্তিকর লাগছে এরকম কাছে আসাটা কিন্তু ধ্রুভের কাছে ততটায় তার জন্য শান্তিপ্রিয় হয়ে উঠছে তার মীরার কাছে নিজেকে বিলীন করা।।
“আপনি কিভাবে আমার পাসপোর্ট এতো দ্রুত করলেন?” রাহি আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করলো,ধ্রুভ এমনিতেও তার কাধে নিজের ঠোটের লাগিয়ে রেখে কথা বলে রাহির নিঃশ্বাসকে গলার কাছে আটকে রেখে দিয়েছে।।
“আই উইল টেল ইউ বাট আই নিড সামথিং ফ্রম ইউ?” ধ্রুভ কাধে আরেকটা কামড় দিয়ে বললো।।
“কিছু জিজ্ঞেস করলেই আপনার কিছু না কিছু চায়,এখন মনে হচ্ছে জিজ্ঞেস করে বিপদে পরেছি??” রাহি বিড়বিড়িয়ে বললো।।
“স্টপ টকিং টু ইউরসেল্ফ মীরা!!” ধ্রুভ ভ্রু জোড়া খুচকে বললো।।
“আচ্ছা?কি লাগবে বলুন?আমার কাছে কিছুই নেই আপনাকে দেয়ার জন্য?” রাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।।
“আই নিড ইউ!!তোমার আত্নার সাথে আমার আত্নার শিরায় শিরায় মিলিয়ে দিতে চায় তোমাকে,প্রতি পশম যেন তোমাকে দেখে কাটা দিয়ে উঠে!!তোমার ঠোট উল্টানোর ভাবটা আমার মনের এদিক সেদিক করে দেয়!!তোমার চোখের পানি দেখলে আমার হৃদয়ের মাঝে রক্তক্ষরণ হয়!!আমি তোমাতে হারাতে চাই!!তোমার মাঝে এতোটা মিশে যেতে চাই আর তোমাকেও নিজের সাথে পিষে ফেলতে চাই!!” ধ্রুভ রাহির কানে কেমন হিসহিসিয়ে বলছে।।
“পিষে ফেলতে চাই!!” কথাটা শুনে রাহি এক প্রকার আতকে উঠে,বড়বড় চোখ করে তাকায় সে..এরকম মিশ্রিত ভালোবাসা কথা শুনে হুট করে মাঝখান দিয়ে ঘূর্নিঝড়ের মতো বাতাস দিলে ত অবাক হবেই।।
“মা…মানে!!” রাহি এক প্রকার তোতলে বললো।।
“রিল্যাক্স মীরা!!” ধ্রুভ একটু মুচকি হেসে বললো,হাসিটা একটু রহস্যজনক লাগলো।।
“আমাকে তুমি বলে ডাকতে হবে,আর আমি যা বলবো তা শুনতে আর তা অক্ষরে অক্ষরে তোমাকে পালন করতে হবে??” ধ্রুভ শ্বাস ফেলে রাহির আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,রাহির কাছে ধ্রুভের এগোনো টা ভড়কে দিলো যখন তখনি ধ্রুভ তাকে তার দিকে টেনে শক্ত করে তার কোমর ধরলো।।
“কি..কি করছেন??ছাড়ুউউন??” রাহি আবারও তোতলে বললো।।
“উম!!!আগে তুমি বলো!!” ধ্রুভ রাহির নাকে নিজের নাক ঘষে বললো।।
“এই..এইভাবে হুট করে তুমি বলতে পারি না আমি!!আ…আমি চেষ্টা করবো!!” রাহি আমতাআমতা করে বললো।।
ধ্রুভের মাথায় দপ করে মনে হচ্ছে আগুন জ্বলে গেলো,সে রাহিকে বেডে শুইয়ে তার উপর নিজের সমস্ত ভর দিয়ে উঠলো,রাহির হাত দুটোকে নিজের হাতের মাঝে শক্ত করে নিয়ে নিলো..ধ্রুভের এমন হুট করে এরকম কাজ করাতে রাহি অনেক ভড়কে গেছে,বুকটা দুরুদুরু করছে..হার্টবিট খুব জোরে চলাচল করছে।।
“তোমাকে পারতেই হবে,তুমি বলে ডাকতেই হবে!!আই ওয়ান্ট ইউ অনলি মীরা!!তোমার কোনকিছুর ভাগ আমি জিরো% ও কাওকে দিতে চাই না!!” ধ্রুভের আওয়াজ টা কেমন করে কড়া ভাবে বললো।।
একে ত ধ্রুভের ভর রাহির উপর,তার উপর ধ্রুভের হুট করে বিহেভিয়ার চেঞ্জ হওয়া রাহিকে বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছে..সংযত করছে নিজেকে বারবার,তাই ধ্রুভের অস্তিত্বের সাথে যে মীরা মিশে আছে অর্থাৎ সে মিশে আছে এটাতে তার সন্দেহ নেয়..তার সবকিছুতে মীরাকে দরকার,না পেলে যে দুনিয়া ঝাজড়া করে দিবে তাতেও কোন সন্দেহ নেই।।
“আচ্ছা তুমি করে বলবো!!” রাহি ধ্রুভের মেজাজ ঘুরানোর জন্য বললো।।
“দ্যাটস লাইক মাই মীরা!!” ধ্রুভ বলেই রাহির বুকের উপর থেকে তার ওড়না টান মেরে নিচে ফেলে দিলো,রাহির বুকের উপর মাথা দিলো ধ্রুভ..রাহি চোখ মুখ কামড়ে শুয়ে আছে,এখন কিছু করলে বিপদ ডেকে আনা হবে।।
“তোমাকে যখন সেদিন আমি রাস্তায় দেখি,যেটা আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে তুমি নিচে পরে গিয়েছিলে,তখনি আমার শিরা দন্ডতে হালকা শীতল স্রোত বয়ে গেছিলো..তোমার শরীর থেকে সেইম স্মেল টা পেয়েছিলাম যেটা আমি প্রতিনিয়ত স্বপ্নে পেতাম..আর এই স্মেল টা তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে,একটা ঘরে ভুল করে ঢুকে গিয়েছিলাম মামার বাড়ি যেয়ে তখন এই স্মেলটা পেয়েছিলাম..পাগলের মতো হন্য হয়ে তোমাকে খুজেছি কিন্তু পাই নি,পরে যখন তোমার দেখা পেলাম..আমার মীরা কে পেলাম তখন সবকিছু মনে হচ্ছে পেয়ে গেছি..কিন্তু তোমার কাছে গেলে তুমি আমাকে ভয়ে দুরে সরিয়ে দিতে,পরে ডাক্তার স্মিথ এসে আমাকে নিয়ে যায় বেহুশ করে..এই নিয়ে তার সাথে অনেক দফা ঝগড়াও হয়েছে সেইদিন!!” ধ্রুভ এক নাগাড়ে বললো।।
“এরপর লন্ডন থেকে তোমার ব্যাপারে খোজ নেয়া শুরু করেছি..তোমার ইউনিভার্সিটি থেকে তোমার ছবি আর সার্টিফিকেট আমি এক সপ্তাহের মাঝে কালেক্ট করি,সবকিছু জমা দিয়ে পাসপোর্টের কাজ শুরু করে দি আর বাকি ছিলো তোমার ফিঙ্গার প্রিন্ট যেটা তোমার সাথে প্রথম মিটে তোমার বেহুশ অভস্থায় নিয়ে নি..আর এতো জলদি পাসপোর্ট আর ভিসা করা এই আশরিক আলফাজ ধ্রুভের কাছে চুটকির মতো..চোখের সামনে প্রকাশ না করতেই আমার সমস্ত জিনিস হাজির হয় আর সেখানে তুমি আমার লাইফ মীরা??আমার লাইফকে আমি আমার কাছে থেকে আর কতদিন দূরে সরিয়ে রাখবো??তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি ইভেন এ পিষে ফেলতেও পারি??এন্ড ইউ হ্যাভ টু একসেপ্ট দ্যাট..ইউ হ্যাভ টু উইথ মি,ইউ ওয়ান্ট অর নট”ধ্রুভ কাছে কানের কাছে নিজের নিঃশ্বাস গুলো ছেড়ে বললো।।
রাহি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ধ্রুভের এমন কথা শুনেছে,লাইফে সে এরকম কম ঝটকায় খেয়েছে..কি করে পারে উনি??।।
“তোমাকে আমার কাছে থাকতে হবে,আমার পাগলামি তোমার প্রতি সেটা তোমাকে মানতে হবে,আমার ভালোবাসাতে তোমাকে পিষে ফেলতে চাই আর যে আমাদের মাঝখানে আসবে তাকে পিষে ফেলবো আমি এন্ড মার্ক মাই ওয়ার্ডস” ধ্রুভ কথাটা বলে রাহির কামিজের নিচে হাত ঢুকালে,রাহি জোর চিৎকার দেয়।।
“প্লি..প্লিজ!!আই এম নট প্রিপেয়ার ফর দিস!!গিভ মি সাম টাইম!!” রাহি ভয়ে হরবর করে বললো।।
ধ্রুভ শ্বাস ফেললো কিন্তু হাত সরালো না কোমর থেকে,কামিজের নিচ থেকে হাত বের করে রাহি কোমরের হালকা চাপ দিলো।।
“এখন ফ্রেশ হও..কাবার্ডে সব ড্রেস রাখা আছে,নিয়ে যাও?তোমার বডি ইন্টারনালে যা লাগে সেটাও আছে!!আই থিংক আমার অনুমান করা তোমার বডি শেইপ অনুযায়ী জিনিস নিতে ভুল হবার কথা নয়!!”ধ্রুভ রাহির গলায় হালকা কামড় দিয়ে বললো।।
রাহি একে ত লজ্জা পেয়েছে ধ্রুভের এমন বেশরম কথা,কিভাবে বলছে ইন্টারনাল জিনিসের কথা..অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হলো আর রইলো কামড়??যখন সুযোগ পাচ্ছে তখনি কামড় দিচ্ছে,গলার ভোকাল কর্ডটা কেমন তড়কা করে উঠছে ধ্রুভের স্পর্শ পাওয়াতে।।
ধ্রুভ রাহির উপর থেকে উঠে তাকে দাড় করিয়ে,কাবার্ডের কাছে দাড় করালো রাহিকে।।
” ইউ হ্যাভ টুয়েন্টি মিনিটস!!সো স্টার্ট!!” ধ্রুভ কথাটা বলে রাহির কাছ থেকে সরে নিচে চলে গেলো দরজা লাগিয়ে।।
রাহি ওইভাবে থম মেরে রয়েছে,হুট করে বাবাকে খুব মনে পরছে..কি করছে,কেমন আছে??সব মিলিয়ে বুকের ভেতর দলা পাকিয়ে কান্না আসছে তার..বুকের ভেতর টা হু হু করে উঠছে,রুমে ত ফোন নেয় যে বাবাকে ফোন করবে..চোখের কোনের এক পাশে পানি জমেছিলো,তা মুছে নিলো সে..কাবার্ড খুলে দেখলো সব তার টেস্ট অনুযায়ী পোষাক কিন্তু নাইটি??সেটা বের করে সামনে এনে দেখলে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়।।
“এতো ছোট কিভাবে??” রাহি দেখে তা চোখমুখ কুচকে নাইটিটা কাবার্ডের ভেতরে চালিয়ে,জামা আর তোয়ালে নিয়ে চলে গেলো।।
শাওয়াররুমটাও চোখ ধাধানো..ফ্লোর চকচকে গ্লাস স্কিন,বাথটাব গোল করে..বাথটাবের সামনে থাই গ্লাস দিয়ে সুইমিংপুল..বিশাল আয়নাও আছে,সিংকটাও কেমন ঝকঝক করছে..এইসব চকচকে জিনিস দেখে রাহির নিজের কাছে নিজেরে কালো লাগছে এদের কাছে,সাবধানে পা ফেলে ঝর্না ছেড়ে দিলো, যেহেতু তার বাথটাবে গোসল করে অভ্যাস নাই তাই না ইউজ করায় বেটার..পিছলে পরে না যায় এইজন্য সাবধানে পা ফেলছে সে।।
ঝর্নার পানি সারা শরীর বেয়ে পরছে সেই সাথে রাহির চোখ দিয়ে অশ্রুও বেরিয়ে পরছে,চোখগুলো আজ ভীষণ ক্লান্ত..একদিন কত কি হয়ে গেলো,কাল এই সময় বাবার সামনে ছিলো আর আজ এই সময় বাবার কাছ থেকে কত শত হাজার মাইল দুরুত্বে দূরে..গোসল করতে করতে দরজার ঠকঠক আওয়াজ তার ধ্যান ভাঙলো,তাড়াহুড়ো করে ঝর্না বন্ধ করলো।।
“মীরা??এতোক্ষন কি করছো??ঠিক আছো??ওপেন দ্যা ডোর মীরা??” এই বলে ধ্রুভ দরজা ধাক্কাচ্ছে।।
“শান্তিতে কি গোসল করাও যাবে না??এই কেমন অদ্ভুত লোকের পাল্লায় পরলো সে??” রাহি মনে মনে ভাবছে।।
রাহি কোনমতে জামাটা পরে বের হলো,চুল এখনো রাহির কামিজের নিচে আছে,ভিজা চুলে পুরা পিঠ ভিজে যাচ্ছে..কিন্তু তার এই মুহূর্তে দরজার ওপাশের মানুষকে থামানো টা জরুরি,এই তাড়াহুড়োর মাঝে তার একটা জিনিস খেয়াল করতে মিস হলো না তা হলো জামা এতো পার্ফেক্ট সাইজ তা গায়ে সেট হয়ে আছে মনে হচ্ছে জামাটা তার জন্য করা হয়েছে..ইন্টারনালের ফিটিংস গুলাও পার্ফেক্ট..অবাকের উপর অবাক হতে তার ক্লান্তি এসে গেছে,তার বুঝা যাওয়া উচিত ছিল তার কপালে আল্লাহ এমন একজনকে সেট করেছে যে তার ভাবনার গহীনের সব কাজ করে ফেলে।।
রাহি তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে আসলো জামা পরে তোয়ালে গায়ের উপর জড়িয়ে নিয়েছে,ধ্রুভ এতোক্ষন উত্তেজিত হয়ে ছিলো এখন তার মীরাকে বের হতে দেখে কেমন শান্ত হয়ে গেলো এক নিমিষে,রাহির দিকে ধ্রুভের যখন পরলো সে একটা শুকনো ঢোল গিললো..তার মীরাকে তার কাছে সবচেয়ে বেশি স্নিগ্ধ লাগছে এখন।।
চলবে?