কাঠগোলাপ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব চৌদ্দ
?
প্লেন ল্যান্ড করলো লন্ডন শহরে..রাহির ধ্রুভের বুকের সাথে মাথা দিয়ে কখন ঘুমিয়ে পরেছে নিজেও জানে না,ধ্রুভ তার মাথাটাকে এতো শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছিলো যে পরে চাইলেও নড়তে পারে নি সে।।
এনাউন্সমেন্টের তীব্র আওয়াজে যখন রাহি ধড়ফড়িয়ে উঠলো তখন ধ্রুভ দাঁত মুখে খিচে নিয়েছিলো।।
“ব্লাডি বিচ!!ভয় পেয়ো না মীরা,এইতো আমি!!দাড়াও কে এতো জোরে এনাউন্সমেন্ট করলো ওকে দেখে আসছি!!” এই বলে ধ্রুভ উঠতে গেলে,রাহি তার হাত ধরে থামিয়ে দেয় তাকে যে এখানেও নামতে নামতে সিন ক্রিয়েট না হয়ে যায়।।
“প্লিজ যাবেন না!!আর উনাদেরও ত দোষ নেয় কারন তাদের কাজই এটা!!আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম আর আমার একটু আওয়াজে ধড়ফড়ানো টা ছোটবেলা থেকে!!আচমকা আমি কোনকিছু নিতে পারি না!!” রাহি জানানলো ছোট উত্তরে।।
“রিল্যাক্স মীরা!!ইউ ডোন্ট নিড টু এক্সপ্লেইন ইউরসেল্ফ টু মি!!আই নো এভ্রিথিং এবাউট ইউ!!বাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট লেট এনিওয়ান টু হার্ট ইউ” ধ্রুভ হিসহিসিয়ে বললো।।
“যেমন আচমকা আপনিও এসেছেন,এসে নিয়ে এসেছেন আপনার দেশে,এইটাও যে আমি মানতে পারছি না আশরিক আলফাজ ধ্রুভ!!” রাহি বিড়বিড়িয়ে বলছিলো কথাগুলো।।
ধ্রুভ রাহির হাত ধরে টেনে নিয়ে নামছে,সব আস্তে আস্তে এয়ারপোর্টের সব কাজ সেরে দুজন বের হলো যখন,এয়ারপোর্টের সামনে বিশাল এক মার্সিডিজ দাড়িয়ে আছে..মার্সিডিজের পাশে কালো পোষাক পরা বিভিন্ন গার্ড দাড়িয়ে আছে,রাহির কিছু আনতে দেয় নি ধ্রুভ…ধ্রুভ রাহিকে নিয়ে তার আলিশান মার্সিডিজের মাঝে বসলো,তথাপি সে বুঝালো নিজে ড্রাইভ করবে..গাড়ি চালাতে শুরু করলো ধ্রুভ,তার এক হাতের ভাজে রাহির আরেক হাত গুজে দিয়েছে..রাহি সিটে হেলান দিয়ে দিয়েছে,মাথাটা কেমন বিশ্রিভাবে ব্যাথা করছে তার।।
বাংলাদেশ,
রুবেলের হাতে তার মেয়ের রেখে যাওয়া শেষ চিঠি..জ্ঞানে এসে যখন রুবেল নিজেকে নিজের বাড়িতে ফিরে পেলো তখন বেশ অবাক হয়েছিলো পরক্ষনে রাহির কথা মনে হতেই উনি হন্তদন্ত হয়ে রাহির রুমে গেছিলেন কিন্তু খুজে পানি নি…পুরো বাড়ির প্রতিটা রুম তিনি বারবার খুজছিলেন এই ভেবে যে তার মেয়ে ছোটবেলার মতো হয়তো লুকোচুরি খেলছে..রাহি এইভাবে লুকাতো আর রুবেল তাকে খুজে বের করতো কিন্তু আজ তার মেয়ে সত্যি বাস্তব লুকোচুরি খেলতে চলে গিয়েছে।।
এতো খুজেও যখন রুবেল রাহিকে পেলো না তখন ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে ডাইনিং এর চেয়ারে নিজের শরীর টা এলিয়ে দিলো..গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তখন সে জগ থেকে পানি ঢেলে,পানি নেয়ার সময় তার পকেট থেকে একটা কাগজ পরে যায়..পানির গ্লাস টা রেখে সে কাগজ টা খুলে, চেয়ারে বসলো তা পড়ার জন্য।।
চিঠিটা পড়া শুরু করে উনি যত নিচের দিকে যাচ্ছে তত উনার ভেতরটা ডুকরে কেদে উঠছে..যখন শেষ হলো তখন তার মনে হচ্ছে বুকের উপর কেও হাজারমনের পাথর বসিয়ে দিয়েছে,পুতুল পুতুল খেলতো বলে তার নাম রুবেল রেখেছিলো পুতুলকন্যা আর সেই তার ঘরের পুতুলকে অন্য ঘরে কেও নিয়ে চলে গেলো..রাহির যে মিছেমিছি শান্তনা ছিলো রুবেল বুঝতে পারছে,কোথায় যাবে?কিভাবে খুজবে তার পুতুলটাকে??তবে তার আত্নবিশ্বাস তার পুতুলকন্যা যেখানেই থাকুক না কেন তার সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করবে,আল্লাহ তার প্রতি এতোটা নির্দয় হবে না…চিঠিটা বুকে নিয়ে রুবেল চিল্লিয়ে কাদঁতে পারছে না।।
কথায় আছে না,”পুরুষ মানুষ কাদেঁ না কিন্তু বাবারা কাদেঁ”।।
লন্ডন,
গাড়ি যেয়ে থামলো লন্ডনের সবচেয়ে ধনী এলাকা কেনসিংটনে… কেনসিংটনে প্যালেসের সামনে এসে ধ্রুভ থামালো তার গাড়ি।।
রাহি চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় তার বাবার শুকনো মুখটা ভেসে উঠলো..তার বাবা অফিস থেকে ফেরা সময় রোদে কেমন ঘেমে বাড়ি ফিরে,তখন রাহি দৌড় দিয়ে তার বাবার জন্য পানি এনে দিতো..বাবা আর মেয়ের সংসার টা ছিলো একদম ছোট আর গুছানো..সুখের অন্ত ছিলো না,হুট করে একটা তুফান এসে সব ঝাঝড়া করে দিলো..বুকের পাশটা কেমন চিনচিনে ব্যাথা করছে,কই এতোকিছুর মধ্যেও সামিরের স্মৃতি একটুও তাড়া দেয় নি তাকে।।
রাহি চোখ অবস্থায় বুঝলো সে শুন্য ভাসছে,ঝট করে চোখ খুলে দেখলো ধ্রুভ তাকে কোলে করে নিয়ে বিশাল বাড়ির দরজা দিয়ে ভিতরে দিকে এগোচ্ছে..চারিদিক কি ঝলমলে পরিবেশ আর শান্ত,কোন হৈচৈ নেয়..রাহি নামার ছটপট করলে ধ্রুভ তার দিকে তাকায়,ধ্রুভের এমন তাকানোটায় রাহিকে আটকে দেয় সবকিছু করতে।।
“আসলে আমার মাইগ্রেইন সমস্যা আছে,জার্নি ক্যারি করতে পারি না!!আপনি নামান আমি হাটতে পারবো না!!” রাহি মিনমিন করে বললো।।
ধ্রুভ কিছু বললো না বাড়ির মেইন দরজা দিয়ে ভিতরে রাহিকে কোলে করে নিয়ে গেলো,ভিতরে ঢুকে রাহি প্রথমে যা অনুভব করলো তা হলো বাড়ির লিভিংরুমের ভেতরটা ভীষণ ঠান্ডা,এসি মনে হয় ফুল পাওয়ারে দিয়ে রেখছে..আশপাশে দেখে রাহির অবাক হলো না কারন ধ্রুভের এটিটিউড আর রেহেনা ফুফির কথাতে বুঝে ছিলো ধ্রুভ অনেকবেশি রিচ..ঘরের প্রতিটা জিনিস এক্সপেন্সিভ, দেয়ালে টাঙ্গানো বিভিন্ন সুন্দর পোট্রের্ট.. চারদিকে কত নামীদামি শো-পিসের কারুকার্য…কিন্তু বাড়ির ভিতর কাওকে দেখা গেলো না,এতো বাড়িতে সে কি তাহলে একা থাকে??উনি যেরকম করে মেরে যদি তাকে এই বাড়ির কোনখানে গুম করে রেখে দেয়??বিভিন্ন প্রশ্নের হুমড়ি খেয়ে পরছে রাহির মাথায়।।
ধ্রুভ রাহিকে কোলে করে সিড়ি বেয়ে একটা দোতালা রুমের ঘরে নিয়ে বেডে বসালো,সিড়ি বেয়ে যখন রাহিকে নিয়ে উঠছিলো ধ্রুভ তখন রাহি বলেছিলো কষ্ট হবে তার,নামিয়ে দিতে কিন্তু সে শুনে নি।।
“তোমার ওজন ৫৯ কেজি..আর আমি প্রতিদিন টু হান্ড্রেড পুশ আপ করি,৫কেজি করে ডাম্বল উঠায় আর নামায়..এমন অনেক ভারী কিছু আমি জিমে উঠিয়েছি সে তুলনায় তুমি কিছু না..আর তোমাকে সেখানে তুলতে আমার কষ্ট হবে??তুমি আমার মীরা!!তোমাকে কষ্ট যেন ছুতে না পারে সেটার দিকে আমি সবসময় খেয়াল রাখবো!!কষ্ট হতো তোমাকে না পেতাম যদি!!সাত বছর ধরে শুধু তোমাকে আমাকে স্বপ্নে পেয়েছি,তোমাকে না ছুতে পারার অসুখ আমাকে প্রতিদিন একটু একটু করে জ্বালিয়ে কষ্ট দিতো কিন্তু এখন তোমাকে পেয়েছি!!আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লুজ ইউ,আই নিড ইউ এভ্রি সিঙ্গেল মোমেন্ট ইন মাই লাইফ!!” ধ্রুভ হিসহিসিয়ে বলে রাহির কাধে একটা চুমু দিয়ে দিয়ে কুটুস করে একটা কামড় দিলো।।
একে ত ধ্রুভের হিসহিসিয়ে কথা রাহির শরীরের পশমের উপরে কাটা দিয়ে উঠে,আর এখন যা করলো তাতে সে শক যেমন হয়েছে তেমন নতুন আলাদা অনুভূতির সাথে দেখাও পেয়েছে..রাহি শক্ত করে বিছানার চাদর খামচে ধরে নিয়েছে।।
অনুভূতি কখন কার জন্য কোন সময় কিভাবে তৈরি হয় আমরা কেও জানি না।।
চলবে?