কলঙ্ক পর্ব-১৮

0
1520

#কলঙ্ক
#১৮তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক



মেম চেয়ার থেকে উঠে এসে আমায় অবাক করে দিয়ে বললেন,’চলো।’
আমি ভয়ে ভয়ে মেমের পেছনে পেছনে হাঁটতে লাগলাম।
মেম আমায় নিয়ে গেলেন আমার রুমেই। তারপর যে মেয়েকে আমার সিটখানা দেয়া হয়েছিল সেই মেয়েকে আলাদা একটা রুমে ব্যবস্থা করে দিয়ে আমার সিট আমায় ফিরিয়ে দিলেন তিনি। তারপর যাওয়ার সময় মেম পাংশু মুখে বলে গেলেন,’কাল আমার সাথে একবার দেখা করো তুমি!’
আমি ঘাড় কাঁত করে ভয়ে ভয়ে বললাম,’জ্বি আচ্ছা মেম।’

মেম চলে যাওয়ার পর এলিজা বললো,’আপু ফিরে এসেছেন। খুব ভালো লাগছে আপনাকে দেখে!’
আমি এবার এলিজাকে বললাম,’এলিজা,পিয়া হোস্টেলে আছে রে?’
এলিজা বললো,’আছে।’
‘ও আমার বিষয়ে খুব প্রচার প্রসার করেছে তাই না?’
‘এটা বলতে হয় আপু!আমি তো আপুর সাথে এখন কথাই বলি না!’
‘কেন?কথা বলিস না কেন?’
‘সে আমায় বলেছিল আপনার নামে মিথ্যে বানিয়ে এর ওর কাছে বলতে।আমি বলিনি। এই জন্য সে রাগ। একদিন আমায় অনেক বকাঝকাও করেছে। বলেছে আপনি নাকি আমায় অনেক টাকা পয়সা দিয়ে গিয়েছেন।টাকা পয়সা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়ে গিয়েছেন!’
আমি ওর কথা শুনে মৃদু হাসলাম।হাসি ছাড়া কী বা করার আছে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একটা মেয়ের মন মানসিকতা এতোটা খারাপ হতে পারে তা আমি ভাবতেও পারি না!
এলিজা এবার বললো,’আপু, কদিন আগে প্রভোস্ট মেম পিয়া আপুকে ইচ্ছে মতো বকেছে!’
‘কেন?’
‘তা জানি না। তবে শুনেছি আপনার নামে কী যেন বলতে গিয়েছিলো মেমের কাছে এই জন্য বকেছে!’
‘ওহ।’
তারপর এলিজা বললো,’আপু শুনেন, আপনি আর ভেঙে পড়বেন না। এবার মনে সাহস রাখুন। ইউনিভার্সিটির সবাই যে আপনাকে খারাপ ভাবছে এমন না কিন্তু! অনেকেই আপনার জন্য আফশোস করছে।ওরা বলছে,যা‌ ঘটেছে তা তো আপনার ইচ্ছাই ঘটেনি। আপনি বরং ভোক্তভোগী। সুতরাং আপনার তো পালিয়ে বেড়াবার প্রয়োজন নাই!’
‘কারা বলেছে এইগুলো?’
‘আপনার অনেক বন্ধু বান্ধব।’
‘আচ্ছা।’
এলিজার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে খুব ভালো লাগছে।মেমের বিষয়টা শুনে কেমন সন্দেহ হচ্ছে।মেম যদি কদিন আগে পিয়াকে এ নিয়ে বকাঝকাই করেছেন তবে আজ আমায় এভাবে কথা বললেন কেন? আমার সাথে এমন কঠোর আচরণ করলেন কেন?
আমি এবার এলিজাকে বললাম,’এলিজ,তুই একটা কাজ কর তো!’
এলিজা বললো,’কী করতে হবে বলুন আপু।’
‘তুই তো পিয়ার সাথে কথা বলিস না অনেকদিন ধরে।আজ একটু কথা বলে আয়। পিয়াকে ডেকে নিয়ে আয়।বল গিয়ে তূর্ণা আপু আপনাকে ডাকছেন। জরুরী কথা আছে!’

এলিজা চেয়ার থেকে উঠে পিয়ার ঘরের দিকে গেল। এবং মিনিট পাঁচেক পরই পিয়াকে নিয়ে এলো।পিয়া এসে মোলায়েম হেসে বললো,’কিরে কী খবর? কেমন আছিস?’
আমি হেসেই বললাম,’খারাপ না!’
‘তা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বিয়ে টিয়ে করে ফেলেছিস নাকি?’
‘না।’
‘ওহ।আর তোকে বিয়েটা করবেই বা কে?যা ঘটিয়েছিস!’
আমার শরীর রাগে কাঁপতে থাকে।আমি তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলি,’পিয়া, আমার বিয়ে নিয়ে তোর এতো টেনশন কিসের রে!যেন আমায় নিয়ে আমার চেয়ে তোর বেশি টেনশন!’
পিয়া চুপ করে রইলো।গাল ফোলা ফোলা করে রেখেছে। আমার কথাটা তার পছন্দ হয়নি।
পিয়া এবার রাগের গলায় বললো,’আমায় কেন ডেকেছিস বল! অপমান করার জন্য?’
‘অপমান আমি করছি না।তুই করছিস।আর ডেকেছি অপমানের জন্য নয়।’
‘তবে কিসের জন্য ডেকেছিস?’
আমি দ্রুত ব্যাগ খুলে ব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে ওর দিকে বাড়িয়ে বললাম,’তোর পাওনাটা নে।’
পিয়া ভীষণ রকম অবাক হয়ে বললো,’আমার পাওনা মানে?তুই আবার কবে আমার কাছ থেকে ধার করেছিলে!’
আমি মৃদু হেসে বললাম,’ধার কর্য কিছু না!’
‘তবে?’
‘পাওনা।’
‘কিসের পাও না?’
পিয়া চমকে উঠে গিয়ে বলে।
আমি ওর হাতটা ধরে ওর কাছে জোর করে টাকাটা ধরিয়ে দিয়ে বলি,’তুই যে আমায় কাজ করে দিলি সেই পাওনা।জনে জনে আমায় নিয়ে প্রচার প্রসার করলি এতে তোর কষ্ট হয়েছে তো অনেক।শ্রম দিয়েছিস।শ্রমের মূল্য।হাদিসে আছে, শ্রমিকের ঘাম শুকাবার আগে তার পাওনা বুঝিয়ে দাও।আমি অবশ্য একটু দেরি করে ফেলেছি।এর জন্য আমি দুঃখিত!’
পিয়া রেগেমেগে একেবারে আগুন হয়ে উঠলো। তারপর টাকাটা আমার দিকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে ছুঁড়ে মারলো।
তারপর একরকম চিৎকার করে উঠলো।
বলতে লাগলো,’তুই আমায় এভাবে অপমান করলি !এর বদলা আমি নিয়েই ছাড়বো!’
আমি হাসি।হি হি হি করে হাসি। তারপর ওর দু গালে দুটো শক্ত চড় বসিয়ে দিয়ে বলি,’তোকে চড় দিয়েছি।নে এর বদলাটাও নে!’
পিয়া যেন স্বপ্ন দেখছে এসব।নিজেকেই নিজে বিশ্বাস করতে পারছে না!
সে একরকম কেঁদে ফেললো। তারপর বললো,’এর ফল ভয়াবহ হবে কিন্তু!’
আমি বললাম,’কী করবি তুই?যা করেছিস এরচেয়ে ভয়াবহ আর কী হতে পারে?গুন্ডা দিয়ে আমায় রেফ করাবি?খুন করাবি?রেফ তো আমি আগে থেকেই হয়ে আছি।সবাই জানে এটা।আর মনে মনে অনেক আগেই খুন হয়ে গেছি। এখন আমি এসবের তোয়াক্কা করি না। সুতরাং তোকে নিয়ে তুই ভাব।আমায় এসব ভয় ডর দেখিয়ে লাভ হবে না!’
পিয়া আমার মুখ থেকে এমন উদ্ধত ভঙ্গীর কথা শুনে ভীষণ ভীষণ অবাক হয়।
সে এসব বিশ্বাস করতে পারে না। আবার কেন জানি আমায় আঘাত করতেও পারছে না। হয়তোবা তার সাহসে কুলিয়ে উঠছে না কিছুতেই!
সে একবার হাত মুঠো করছে। আবার খানিক পর সেই মুঠো ছেড়েও দিচ্ছে।
আমি এবার ওকে বললাম,’শোন, টাকাটা ফ্লোর থেকে উঠিয়ে নিয়ে চলে যা।আমি আবার একটু টায়ার্ড।জার্নি করে এসেছি। তাছাড়া চাকর বাকরদের সাথে অত কথা বলাও উচিৎ না।এতে ওদের সাহস বেড়ে যায়।আর শোন, আগামীকাল থেকে আবার কাজে নেমে পড়। আবার প্রচার কর। এখন আরেকটু বাড়িয়ে ছাড়িয়ে বলিস।এতে তোর লাভ হবে।টাকা একটু বেশি করে দিবো তোকে!’
পিয়া কথাটা শুনে একবার আমার দিকে লাল এবং বড় বড় চোখ করে তাকায়। তারপর ফুঁস ফুঁস করতে করতে আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়।
ও চলে যাওয়ার পর এলিজা দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসে। তারপর হি হি হি করে সে হেসে উঠে। আমিও হাসি। দুজন মিলে হাসতে হাসতে একেবারে ভেঙে খান খান হয়ে যেতে থাকি আমরা। হয়তোবা সে রাতে আমাদের হাসির শব্দ শুনে শত্রুদের মনে ভয় ঢুকে যায়।দূরে ঢাকা পড়া আলোর পর্দা ছিঁড়ে যায়। তারপর শুধু ভোরের অপেক্ষা।অন্ধকারের পর যে ফিরে আসে আলোর ভোর সেই ভোরের কথাই বলছি। এলিজা ঘুমিয়ে পড়ে।আর আমি বসে বসে এই অন্ধকারেই জানলা ধরে পূর্ব দিকে তাকিয়ে থাকি।অপেক্ষা করি আলো ফোটার জন্য।আমি জানি আলো ফুটতে আর খুব দেরি নেই!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে