Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সিজন ২এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সিজন ২ পর্বঃ ০৪(শেষ পর্ব)

এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সিজন ২ পর্বঃ ০৪(শেষ পর্ব)

এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সিজন ২ পর্বঃ ০৪(শেষ পর্ব)
– আবির খান

বাবাঃ নেহাল আর নিশি আজ এই প্লেনেই অস্ট্রেলিয়া গিয়েছে।

মাঃ নেহালের বাবা…আমার নেহাল কই????? আল্লাহ আমার নেহাল আমার বউমা?? নেহাল?????? কান্না করতে করতে।

বাবাঃ আমার ছেলে…আমার বউমা…আমার সব শেষ। সব আমার দোষ। আমিই ওদের পাঠিয়েছি। অনেক কান্না করছে।

মাঃ আল্লাহ আমার নেহাল কি দোষ করলো?? হে আল্লাহ আমার ছেলেকে আমার বউমাকে ফিরিয়ে দেও। ওরা তো তোমার সবচেয়ে ভালো বান্দা। কেনো ওদের….নিচে পরে যায়।

বাবাঃ নেহালের মা….নিজেকে সামলাও ভেঙে পরো না। ওর কিচ্ছু হয়নি। ও হাজার মানুষের সাহায্য করে। তুমি দেখো মহান আল্লাহ তায়ালা ওকে সাহায্য করবেই।

হঠাৎই নেহালের বাবার ফোনটা বেজে উঠে। নেহালের বাবা দৌড়ে ফোনের কাছে যায়। আর ফোনে দেখে আননোন নাম্বার। তবে অস্ট্রেলিয়ান নাম্বার। নেহালের বাবা তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে অনেক ভয় নিয়ে।

বাবাঃ হ্যালো কে??

নেহালঃ বাবা আমি নেহাল। আমরা এইমাত্র এসে পৌঁছালাম।

নেহালের বাবা ঠাস করে সোফাতে বসে পরলেন। এই পৃথিবীতে এখন তার চেয়ে খুশি কিংবা সুখী আর কেউ নেই।

বাবাঃ নেহালের মা নেহাল ফোন দিয়েছে।

নেহালের মা উঠে দৌড়ে নেহালের বাবার কাছে চলে যায়। আর ফোনটা হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়।

মাঃ বাবা নেহাল…তুই ঠিক আছিস?? তোর কিছু হইছে?? আমার বউমা?? তোরা কই?? সুস্থ আছিসতো??? একনাগাড়ে বলে গেলেন অস্থির হয়ে।

নেহালঃ মা মা, আমরা একদম ভালো আছি। আপুদের বাসায় এখন আমরা। কিন্তু তোমাদের কি হয়েছে এতো কাঁদছো কেনো???

মাঃ তোরা যে প্লেনটায় যাচ্ছিলি সেটাতো সমুদ্রে পরে গিয়েছে।

নেহালঃ কিহহহ??? আশ্চর্য হয়ে।

মায়ের কাছ থেকে ফোন নিয়ে বাবা লাউডে দিলেন,

বাবাঃ হ্যাঁ নেহাল তোরা বাঁচলি কিভাবে বাবা??

নেহালঃ বাবা-মা, তাহলে সত্যিই বলতে হবে আজ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।

মাঃ কিভাবে বাবা??

নেহালঃ মা আমরা যখন প্লেনে উঠি নিশি তখন অনেক ভয় পাচ্ছিলো। তা দেখে কেবিন ক্রুরা মজা করছিলো। তাই আমি ওদের সাথে রাগারাগি করে অন্য এয়ারলাইনস এ অস্ট্রেলিয়া এসে পরি। আর ওরা দেরিও করছিলো।

বাবাঃ নেহাল সত্যিই আজ আল্লাহ তায়ালা তোদেরকে বাচিঁয়েছে। শুকরিয়া আদায় করিস। আমরাতো টেনশনে মরেই যাচ্ছিলাম। বাবা আসার সময় তোরা প্রাইভেট জেটে আসবি। আমি ব্যবস্থা করে দিবো।

নেহালঃ আরে বাবা টেনশন নিওনা। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।

মাঃ নিশি কেমন আছে??

নেহালঃ অনেক ক্লান্ত। বসে আছে আমার সামনে কথা বলবে??

মাঃ দে একটু।

নিশিঃ আসসালামু আলাইকুম মা।

মাঃ অআলাইকুম আসসালাম। নিশি তুই ভালো আছিসতো?? তোর শরীর ঠিক আছে??

নিশিঃ মা আমি ভালো আছি তবে আপনাকে এমন লাগছে কেনো??

নেহালঃ আমি বলবো নে তোমাকে।

নিশিঃ আচ্ছা।

মাঃ তোরা সাবধানে থাকিস আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস।

নিশিঃ আচ্ছা মা আপনি টেনশন করেন না। আমি সব খেয়াল রাখবো।

মাঃ আচ্ছা।

মা ফোন রেখে দেয়।

নিশিঃ আচ্ছা মায়ের কি হলো এভাবে কাঁদছিলেন কেন??

নেহালঃ কি বলবো তোমাকে। মহান আল্লাহ তায়ালা আজ আমাদের বাচিঁয়েছেন।

রূপাঃ কিভাবে বাঁচালোরে নেহাল?? মানে কি হয়েছে?? (নেহালের বড় বোন)

নেহালঃ নিশি আমরা যে প্লেনটা ছেড়ে দিয়েছিলাম না, ওই প্লেনটা নাকি সমুদ্রে পরে গিয়েছে।

নিশিঃ কিহহহ!!! বলো কি??

রূপাঃ কি বলিস ভাই!! সত্যিই তাহলে আল্লাহ তোদেরকে বাচিঁয়েছে।

নেহালঃ হ্যাঁরে বোন আসলেই।

রূপাঃ ভাই তাহলে তোরা ফ্রেশ হয়ে আস আমি খাবার দিচ্ছি।

নেহালঃ আচ্ছা।

রূপাঃ নিশি তোমাকে কিন্তু আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। তুমি অনেক সুন্দর। একদম পরীর মতো।

নিশিঃ আপু আপনিও।

রূপাঃ কেনো নেহাল ও বুঝি তোমাকে পরী বলে।

নেহালঃ হ্যাঁ রে আপু। হা হা।

রূপাঃ হা হা। তোরা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।

রূপা চলে গেলো।

নেহালঃ চলো…

নিশিঃ কই??

নেহালঃ কেন ফ্রেশ হতে।

নিশিঃ মানে একসাথে??

নেহালঃ জ্বি হ্যাঁ। এখানে হানিমুনে আসছি। একা একা থাকতে নাকি??

নিশিঃ আরে আরে কি করছেন। আমার সুরসুরি লাগেতো।

নেহালঃ লাগুক চলো।

নেহাল আর নিশি একসাথে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

খাবার টেবিলে,

সুমনঃ কি শালাবাবু আসতে নাকি অনেক বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেলে???

নেহালঃ হ্যাঁ দুলাভাই। সবই ওই মহান আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা। তিনি এই যাত্রায় বাচিঁয়েছেন।

সুমনঃ যাক ভালো। তা কাল আমার গাড়িটা নিয়ে যেও। নিশিকে পুরো অস্ট্রেলিয়া ঘুরিয়ে দেখিও। ও মজা পাবে।

নেহালঃ আচ্ছা দুলাভাই।

নিশিঃ আপু ভাইয়া আপনারাও চলেন সাথে।

নেহাল নিশিকে চিমটি দিলো।

নিশিঃ উহহহ।

সুমনঃ বোকা মেয়ে, আমরা সাথে গেলে শালাবাবু রোমাঞ্চ করবে কি করে!! হাহা। মজা করে।

রূপাঃ একদম ঠিক বলেছো। তোমরা ঘুরো ইনজয় করো। আমরা কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না। মজা করে।

নেহালঃ না আপু তোরা জয়েন করতে চাইলে করতে পারিস। ফরমালিটির জন্য বলল।

সুমনঃ কি শালাবাবু সত্যিই জয়েন করবো নাকি?? রসিকতা করে।

নেহালঃ না মানে। ইতস্ততভাবে।

সুমনঃ হাহা। মজা করছি। সবই বুঝি শালাবাবু। হাহা

রূপাঃ হাহা।

নিশি অনেক লজ্জা পাচ্ছে।

এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেহাল আর নিশি ওদের রুমে চলে যায়।

নিশি ৩০ তলা বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।শহরটা একদম অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। রাতের বেলার হওয়া আর সাথে অনেক রঙবেরঙের আলোর খেলা দেখা যাচ্ছে। নিশি মুগ্ধ হয়ে বাতাস খাচ্ছে আর এসব দেখছে।

হঠাৎ নেহাল নিশিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। নিশির পেটের সামনের দিকটায় নেহাল হাত বুলাচ্ছে আর নিশি কেমন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে।

নেহালঃ কেমন লাগছে এখানে??

নিশিঃ সত্যি বলবো??

নেহালঃ হ্যাঁ বলো।

নিশিঃ আমার না আমার প্রিয় দেশটাই ভালো লাগে। সেখানে সবাই একসাথে। কিন্তু এখানে সবাই সবার মতো চলে।

নেহালঃ হুম। আচ্ছা মন খারাপ করো না। এখানে কদিন ঘুরে আর হানিমুনটা করে দেশে চলে যাবো।

নিশিঃ উহহ সুরসুরি লাগে তো। আচ্ছা এই হানিমুনে কি করে??

নেহালঃ দেখবা কি করে??

নিশিঃ হুম। আরে আরে কোলে নিচ্ছেন কেনো??

নেহালঃ হানিমুনে কি করে তা করে দেখাবো তাই। হাহাহ।

নিশিঃ আপনিও না। অনেক দূষ্ট।

এভাবে নেহাল আর নিশির অনেক ঘুরাঘুরি, পাগলামি,মজা, আনন্দ আর নিজেদের আরো বেশি আপন করে নেওয়ার মাধ্যমে ওদের হানিমুন শেষ হয়।

আজ প্রায় ১৫ দিন পর নেহাল আর নিশি ঢাকাতে ফিরছে। নেহালের বাবা-মা অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে ওদের জন্য। কত দিন হয়েছে দেখে না।

সকাল ১০.২৩ মিনিটে ওরা এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসলো। বাবা মাকে এতোদিন পর দেখে সবারই চোখ অশ্রুতে ভরে যায়। এরপর সবাই বাসায় চলে যায়।

এভাবে আরো অনেক দিন কেঁটে গেলো। হঠাৎ একদিন নেহাল অফিসে কাজ করতে ছিলো। ওর ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠে।

নেহালঃ হ্যালো??

মাঃ নেহাল তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। বউমা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরছে। তোর বাবা ডক্টরকে খবর দিয়েছে সে আসছে তুইও তাড়াতাড়ি আয়।

এ কথা শুনার পর নেহাল যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। শরীরের সব শক্তি কেমন জানি মুহূর্তেই হারিয়ে গেছে। নেহাল তাও কোনো রকম গাড়িটা নিয়ে বাসায় পৌঁছে পাগলের মতো উপরে দ্রুত চলে যায়। নেহাল দেখে ডক্টর বসে আছে। সবার মন বিষন্ন।

নেহালঃ আমার নিশি?? ওর কি হয়েছে?? সবাই এমন করছো কেন??

নেহাল দ্রুত নিশির কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।

নেহালঃ কি হয়েছে তুমি এভাবে আমার দিকে চেয়ে আছো কেন?? দেখো আমার অনেক ভয় করছে। বলো কি হয়েছে তোমার?? ওর কি হয়েছে ডক্টর??

ডাক্তারঃ শুধু বলবো এখন থেকে ওনার বেশি বেশি খেয়াল রাখতে হবে। ওনার সাথে সবসময় থাকতে হবে। কারণ কিছু মাস পর…

নেহালঃ কি??

সবাই চুপ।

নেহালঃ প্লিজ কেউ বলো। না হলে আমি মরে যাবো টেনশনে।

নিশিঃ বাবুটা কানটা দেও একটা কথা বলবো।

নেহাল তাড়াতাড়ি কানটা এগিয়ে দেয়।

নিশিঃ কিছু মাস পরে তুমি বাবা হতে চলছো৷

নেহালঃ এটা কোনো কথা আমি কিছু মাস পরে বাবা হতে চলছি। আরে তোমার কি হয়….. কিইইই?? আমি বাবা হতে চলছি??? মানে তুমি??

নিশি অনেক লজ্জা পাচ্ছে।

মাঃ হ্যাঁ রে বাবা। তুই বাবা হবি, ও মা হবে আর আমরা দাদা দাদি।

নেহালঃ কি বলো সত্যি নিশি??

নিশিঃ হুম। লজ্জামাখা মুখ নিয়ে।

নেহালঃ হুররেএএএএএ। আমি বাবা হবো। বাবা আমিও তোমার মতো বাবা হবো। আমিও তোমার মতো আমার ছেলে মেয়েকে লালন পালন করবো। ইয়েএএএ। অনেক খুশি হয়ে।

বাবাঃ ইনশাআল্লাহ বাবা৷ আল্লাহ তোর ইচ্ছা কবুল করুক।

মাঃ আমিন।

নেহালঃ বাবা ১০০০ জন গরীবকে আজই খাওয়াবো। আমার বাবু আসছে। আমার বাবুটা আমাকে আরেকটা বাবু দিবে। হুররেএএএএএ।

সবাই নেহালের এত্তো খুশি আর আনন্দ দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। আর নিশি শুধু মুগ্ধ হয়ে নেহালের কান্ড দেখছে। কতটা ভালোবাসে নেহাল ওকে নিশি তা বুঝতে পারছে।

ডাক্তারঃ নেহাল কাল নিশিকে নিয়ে আমার চেম্বারে এসো। কিছু টেস্ট আর চেক আপ করতে হবে।

নেহালঃ অবশ্যই ডক্টর। বাবা আমি কিন্তু আর নিশিকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। সারাদিন ওর সাথে থাকবো। আপনি অফিস দেখেন প্লিজ।

নিশিঃ আহ এতো অস্থির হইয়ো না। বাবা এখন কি অফিস দেখবে তুমিই দেখো। এখানে মা আছে বাবা আছে। তারা আমার খেয়াল রাখতে পারবে।

নেহালঃ না না। আমি শুধু তোমার কাছেই থাকবো। তোমার বিন্দু মাত্র অযত্ন কিংবা ক্ষতি আমি হতে দিবো না। নিশিকে জড়িয়ে ধরে।

বাবামা নেহালের কান্ড দেখে ডক্টর সহ হাসছে।

বাবাঃ আচ্ছা সমস্যা নাই। অফিসের ব্যবস্থা আমি করবো নে। তুই বউমাকে দেখিস।

নেহালঃ হ্যাঁ। আমি কোনো ভাবেই ওকে এখন একা রাখতে পারবো না। কারণ আমি পড়েছি, এ সময়ে একা থাকা ঠিক না। তাই আমি সারাদিন থাকবো ওর কাছে।

নিশির চোখে মুখে বিশ্ব জয়ের খুশি। এতো ভালোবাসাপূর্ণ স্বামীকে পেয়ে নিশির জীবন আজ ধন্য।

এরপর শুরু হয় নেহালের স্পেশাল কেয়ারিং। সেকি কেয়ার। মনে হচ্ছে নিশি নিজেই একটা বাচ্চা। সময়মতো খাবার, ঔষধ, গোসল করা, বাইরে যাওয়া, হাঁটাহাঁটি, কথা বলা সবটাই যেনো নেহালকে ঘিরে নিশির।

ডাক্তার বলেছেন ৪০ সপ্তাহ পর নিশির বাবু হবে। কিন্তু ভাগ্যে হয়তো অন্য কিছুই ছিলো নিশির। মাত্র ৩৮ সপ্তাহেই নিশির অবস্থা ধীরে ধীরে অনেক খারাপ হতে থাকে। শরীরে পানি চলে আসে। পুরো শরীর ফুলে যায়। হাত মুখ ব্যাথায় লাল হয়ে যাচ্ছে।

নেহাল নিশির এই কষ্ট আর সহ্য করতে পারছে না। সারাটাদিন পাগলের মতো কান্না করে। নিশির দিকে তাকালেই শুধু কাঁদতে থাকে। নেহালের বাবা মা কোনো ভাবেই নেহালকে শান্ত করতে পারছেনা। নেহাল সারাদিন নিশির পাশে জায়নামাজ বিছিয়ে বসে আল্লাহর কাছে কাঁদতে থাকে।

কিন্তু একদিন রাতে অন্ধকার নিস্তব্ধতা ভেঙে নিশির প্রচুর পরিমানে পেইন উঠে। মানে ওর এখন ডেলিভারি করতে হবে ইমিডিয়েটলি। সময়ের আগেই প্রসব ব্যাথা উঠেগেছে নিশির।

ডাক্তারঃ নেহাল কিভাবে বলবো আমরা জানি না। তবে নিশির অবস্থা প্রচন্ড খারাপ। যে অবস্থায় আছে মা কিংবা শিশুর যেকোনো একজনকে বাঁচাতে পারবো আমরা।

কয়েকশত ভারি বুলেট এসে যদি কারো বুকে আঘাত হানে তাহলে যে ব্যাথা অনুভব হবে তার চেয়েও একশত গুন বেশি ব্যাথা অনুভব হচ্ছে নেহালের। নেহালের পৃথিবী ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। চারদিকে মানুষগুলোকে কেমন জানি লাগছে। নেহালের বাক শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে৷ নেহাল নিথর শরীর নিয়ে নিশির কাছে কোনো রকম যায়। নিশির জ্ঞান আছে। মুখে অক্সিজেন লাগানো। চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। একটা অশ্রুতে আছে একটা বিশাল সাগর পরিমাণ কষ্ট। নিশি আস্তে আস্তে নেহালের দিকে তাকায়। ওরা কিছুক্ষন একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। হয়তো এই শেষ দেখা। হয়তো আর হবে না কোনোদিন চোখাচোখি। হয়তো এই শেষ ওদের ভালোবাসার।

নিশি শরীরের সব শক্তি এক করে নেহালে কে হাত দিয়ে ইশারা করে নিচে নামতে বলে। নেহাল নিশির কাছে ওর মুখটা নিয়ে চায়। নিশি কোনোরকম অক্সিজেন মাস্কটা সরিয়ে বলে,

নিশিঃ আমার সন্তানটাকে বাঁচাও। ও এ পৃথিবীটা দেখেনি।

বলেই নিশি অজ্ঞান হয়ে যায়। নেহাল অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে পাগলের মতো দৌড়ে ডাক্তারকে ডেকে আনে। ডাক্তার ইমিডিয়েটলি নিশিকে অপারেশন রুমে নিয়ে যায়। নিশির সিজার করতে হবে। কারণ নরমাল ডেলিভারি আর সম্ভব নয়।

ডাক্তারঃ নেহাল আমার নিজেরই প্রচুর কান্না আসছে। নিশির বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী হয়তো যেকোনো একজন বাঁচবে নাহয় দুজনই….

নেহালঃ দুজনই কি ডাক্তার???

ডাক্তারঃ বাঁচবে না।

নেহাল আর নিতে পারে না। ঠাস করে পরে যায়। নেহালের বাবা-মা নেহালকে এসে ধরে। তারা দুজনই পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করছিলেন। নেহালকে স্যালাইন দিয়ে অন্য এক কেবিনে শুইয়ে দেওয়া হয়। নেহালের হৃদস্পন্দন ও ধীরে ধীরে চলছে। নেহালের কাছে বসে নেহালের বাবা-মা কুরআন শরীফ পাঠ করছেন জোরে জোরে। আল্লাহ ছাড়া এই তিনটা মানুষকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না।

নেহাল হঠাৎ দেখছে, সে একটা অন্ধকার জায়গায়। চারদিকে কোনো আলো নাই। শুধু কালো আধার। নেহাল মনের অজান্তেই সেই আধারের দিকে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে দূরে একটা জায়গায় আলো দেখতে পায়। নেহাল সেই আলোর দিকে এগিয়ে যায়। নেহাল এগোচ্ছে আর আলোটাও কেমন বেড়ে যাচ্ছে। নেহাল আলোটার অনেক কাছে এসে পরেছে।

নেহাল দেখে, ওর নিশি একটা ফুটফুটে বাচ্চা হাতে বসে তার সাথে খেলা করছে। নেহাল ওদেরকে দেখে খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায়। কিন্তু ওদের কাছে যেতে পারছে না। হঠাৎই নিশি নেহালের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

নিশিঃ কি সুন্দর না আমার বাবুটা?? ঠিক তোমার মতো হয়েছে।

বলেই আলোটা নিভে ঘোর কালো অন্ধকার হয়ে যায়। নেহাল নিশি বলে চিৎকার দিয়ে উঠে আর সেই সাথে নেহালের জ্ঞান ফিরে আসে আর নেহাল নিশি বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে পরে হাত বাড়িয়ে।

নেহাল দেখে ও একটা কেবিনে। হাতে স্যালাইন দেওয়া। নেহালের চিৎকার শুনে নেহালের বাবা-মা দৌড়ে আসে। নেহাল ওর বাবা-মাকে দেখে বলে,

নেহালঃ বাবা আমার নিশি?? অনেক কাঁদতে কাঁদতে।

বাবাঃ বাবারে তোর এতো ভালো কাজ, এতো মানুষকে সাহায্য করা, তোর সততা সবকিছুর প্রতিদান মহান আল্লাহ তায়ালা দিয়েছে রে। তোর নিশি আর ছেলে দুজনেই এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আর ভালো আছে। তুই গত ৪ ঘন্টা যাবত অজ্ঞান। নিশি তোর কথা বারবার জিজ্ঞেস করছে।

নেহাল ঠাস করে হাত থেকে স্যালাইন খুলে ফেলে। এরই মধ্যে ডাক্তার নেহালের কাছে এসে পরে।

ডাক্তারঃ আরে আরে দাঁড়াও হাত দিয়ে রক্ত পরছেতো। নিশি দেখলে ভয় পাবে।

ডাক্তার নেহালের হাতে কোনো রকম ব্যান্ডেজ করে দেন। নেহাল উঠে দৌড়ে নিশির কাছে যায়।

নিশির কেবিনের দরজার সামনে নেহাল দাঁড়িয়ে আছে। নিশি নেহালের দিকে তাকিয়ে আছে আর নেহাল নিশির দিকে। নিশি অঝোরে কেঁদে দেয় নেহালকে দেখে। নেহালও কেঁদে দেয় নিশিকে দেখে। নেহাল দৌড়ে গিয়ে নিশিকে বুকে জড়িয়ে ধরে। আর সেকি কান্না। এ যে হারিয়ে ফেলেও ফিরে পাবার খুশির কান্না।

নেহালঃ আমার বুকটা ফাকা করে আমাকে একা করে চলে যাচ্ছিলে না। আমাকেও সাথে নিতে। কান্না জড়িত কণ্ঠে।

নিশি নেহালের মুখটা চেপে ধরে।

নিশিঃ আর বলো না এসব। এই যে আমি আছি। এখনতো আমরা আছি তোমার সাথে। ওই যে দেখো। কান্না জড়িত কণ্ঠে।

নেহাল ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়। আর দেখে ঠিক স্বপ্নে যে রকম বাচ্চাটাকে দেখেছিলো ঠিক অবিকল সেরকম দেখতে। নেহাল কাঁদতে কাঁদতে ওর বাবুকে জীবনে প্রথম কোলে তুলে নেয়। নেহাল হাসছে আর কাঁদছে।

নিশিঃ জানো আমি চলেই যেতে নিয়ে ছিলাম। কিন্তু সে সময় একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমি দেখি, অন্ধকার একটা জায়গায় তুমি আর ঠিক ওর মতন অবিকল দেখতে একটা বাচ্চা নিয়ে অনেক আলোর মধ্যে বসে আছো। তুমি আমাকে বললে, নিশি ছেলেটা আমার একদম তোমার মতো হয়েছে। বলেই সব অন্ধকার হয়ে যায়। আর তুমি হারিয়ে যাও। আমি তোমাকে চিৎকার করে ডাক দেই আর আমার জ্ঞান ফিরে আসে আর আমি বেঁচে যাই।

নিশির কথা শুনে অবাক হয়ে নেহাল তাকিয়ে আছে।

নেহালঃ দেখো নিশি আমার লোম সব দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কারণ আমি নিজেও একি স্বপ্ন দেখেছি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের অনেক ভালোবাসেন নিশ্চয়ই। তাই তিনি আমাদের বারবার বাচিঁয়ে দিচ্ছেন। নিশি আসো, আজ থেকে বাকিটা জীবন সম্পূর্ণ আল্লাহ আর তার প্রিয় নবীর কথা মতো জীবন যাপন করি।

নিশিঃ ইনশাআল্লাহ।

>>>>>সমাপ্ত<<<<< জীবনে প্রতিটা মুহূর্তে ওই মহান আল্লাহ তায়ালার সাহায্য আর রহমতের প্রয়োজন রয়েছে। তাই সবসময় তাকে খুশি রাখার চেস্টা করুন। কোনো ভুল হলে মাফ করবেন। পুরো গল্পটা অর্থ্যাৎ সিজন ১ & ২ কেমন লেগেছে তা জানিয়ে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করুন। এতোটা সময় ধরে এতো ভালোবাসা আর সারার জন্য আপনাদের মানে আমার প্রিয় পাঠকদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। সবসময় এভাবে সাথে থাকবেন, ধন্যবাদ। ?❤

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

2 মন্তব্য

Leave a Reply to Mahmdul উত্তর বাতিল

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ